#তারপর_একদিন
লেখনীতেঃ রিধিমা জান্নাত রূপা
অন্তিম পর্ব
.
“বাবা, তুমি?”
কথাটা বলে সিতারার পানে তাকাতে ভুলল না নির্ঝর। সিতারা কটমট চোখে তাকায়। যেন এক্ষুনি ছেলেটাকে চিবিয়ে খাবে। তার কথাটা একটু শুনলে কি হতো? মানুষটার জন্যই এভাবে ওকে লজ্জায় পড়তে হলো শ্বশুরের সামনে।
দুপুরের লগ্নে হঠাৎই শ্বশুর শ্বাশুড়ির আগমন ঘটে। দরজা খুলে শ্বশুর শ্বাশুড়িকে দেখে বড্ড অবাক হয় সিতারা। অবাক হয়ে কথা বলতে ভুলে যায়। ওর শ্বাশুড়ি যখন বলে, “হা কইরা দাঁড়াইয়া আছ কেন বউ? আমাদের কি ঢুকতে দিবা না?”
তখনই যেন মেয়েটার হুস আসে। সালাম দিয়ে ভেতরে নিয়ে আসে শ্বশুর শ্বাশুড়িকে। এরপর নির্ঝরের কথা জানতে চাইলেই বলে, অফিসে আছে। এহসান তালুকদার তা শুনে বলে, “নির্ঝরকে তাড়াতাড়ি আসতে বলিও বউমা। আর হ্যাঁ! আমরা যে এসেছি, সেটা বলার দরকার নেই। আসলেই দেখবে।”
শ্বশুরের কথা ফেলে না সিতারা। অক্ষরে অক্ষরে তা পালন করে, তাদের হঠাৎ আগমনের খবর না জানিয়ে আসতে বলে নির্ঝরকে। কিন্তু মানুষটা যে ওর তাড়াতাড়ি আসতে বলায় অন্যকিছুই ভেবে ফেলবে, তা ঘুনাক্ষরেও টের পায় নি। বুঝতে পারে নি ওকে নিয়ে মানুষটার এত উদ্বিগ্নতা। ভালো-লাগা কাজ করলেও এই মুহুর্তে লজ্জায় চাপা পড়ে গেছে। চুপ করে নির্ঝরের পাশ থেকে সামান্য সরে এসে দাঁড়িয়ে রইল ও।
নির্ঝর সিতারার থেকে নজর ফিরিয়ে ফের বাবার পানে তাকাল। পিছনে দাঁড়ানো মায়ের দিকেও একবার নজর বুলিয়ে নিলো। এহসান তালুকদার ছেলের কথার জবাবে বলে উঠলেন, “কেন, খুশি হও নি আমাদের দেখে?”
“আসলে, বাবা.. হঠাৎ করে এসেছ তো, তাই..!”
“ছেলের বাড়িতে কি না বলে আসা যাবে না?”
“যাবে না কেন! কিছু না জানিয়ে এসেছ, তাই আর কি!”
“তোমার মা হঠাৎ করেই তোমাকে আর বউমাকে দেখতে চাইছিল। তাই এভাবে না জানিয়ে আসা।”
আসল কথাটা এগিয়ে গেলেন এহসান তালুকদার। নির্ঝরের বিয়ের সময় তিনি বেশ বুঝতে পেরেছিলেন, বিয়েতে মত ছিল না ছেলেটার। সিতারাও মত দিয়েছিল শুধুমাত্র তার চাচার জন্য। দু’জনের বয়সেরও ব্যাবধান অনেকটা। সব মিলিয়ে চিন্তিত ছিলেন তিনি, ছেলে-মেয়ে দু’টো একে অপরকে মেনে নিতে পেরেছে কি-না। সংশয়ে ছিলেন ওদের সংসার জীবন নিয়ে। এজন্যই হঠাৎ না বলে কয়ে চলে আসেন ওদের পর্যবেক্ষণ করতে।
যথেষ্ট বিচক্ষণ মানুষ এহসান তালুকদার। এতটুকু সময়েই ওনার বুঝতে অসুবিধা হয় নি যে—ছেলেমেয়ে দু’টো একে অপরকে মেনে নিতে পেরেছে। তাতেই যেন সন্তুষ্ট হলেন এহসান তালুকদার, কোন এক বোঝা যেন মাথা থেকে নেমে গেল তার। ছেলেকে আর কিছু বলে বিভ্রান্তিতে ফেলতে চাইলেন না। ডাইনিং রুম থেকে সরে যেতে চাইলেন।
এদিকে নির্ঝরও প্রত্যুত্তরে নির্ঝর আর কিছু বলতে পারল না। বাবাকে ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করে মায়ের কাছে গেল। ওর মা আবেগি হয়ে পড়লেন ছেলেকে দেখে। খানিক্ষন জড়িয়ে ধরে রেখে ছাড়লেন। মা’কে উদ্দেশ্য করে, “আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি, মা!”
বলেই সিতারার দিকে তাকাল। এরপর গম্ভীর কণ্ঠে বলল, “সিতারা, রুমে আসো তো। একটু দরকার ছিল।”
ছেলেটা আর দাঁড়াল না। চলে গেল নিজেদের রুমে। এদিকে সিতারা এতক্ষণ নিশ্চুপে দাঁড়িয়ে ওদেরই দেখছিল। নির্ঝর চলে যেতেই ও নড়েচড়ে দাঁড়াল। শ্বাশুড়ি বলে উঠল, “দ্যাখো বউ, ছেলেটার কি লাগে। ডেকে গেল তো।”
আর দাঁড়াল সিতারা। সায় জানিয়ে ছুটল রুমের দিকে। ওরা যেতে নির্ঝরের মা মুচকি হাসলেন। এ যেন ছিল এক স্বস্তির হাসি।
.
সিতারা রুমে আসতেই দেখল—নির্ঝর ওর গায়ের শার্টটা খুলে ছুড়ে ফেলল বিছানায়। ও এগিয়ে আসতে আসতে সুধাল, “কিছু লাগবে আপনার?”
“হু, লাগবে!”
“কি লাগবে? আপনি…”
“তোমাকে!”
দাঁড়িয়ে যায় সিতারা। পিটপিট চোখে তাকায়। কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই নির্ঝর বলে উঠে, “বাবা মা এসেছে, আমাকে তখন বলো নি কেন?”
“আব্বা জানাতে না বললেন। বললেন—বাসায় ফিরলেই দেখতে পাবেন, তাই…”
“তাই আমাকে জানানোর প্রয়োজন করলে না!”
“আসলে, আমি তো ভেবেছিলাম…”
“কি ভেবেছিলে? দ্যাখো সিতারা, আমি তোমার হাসবেন্ড, এটা আমাদের সংসার! সংসারের ছোটখাটো সব বিষয়ে জানার রাইট আমার আছে, তাই না?”
“হু!”
ছোট্ট করে জবাব দিয়ে নিশ্চুপ হয়ে যায় সিতারা। পিটপিট চোখে তাকায় নির্ঝরের পানে। বোঝার চেষ্টা করে, মানুষটার রেগে যাবার কারণ। উঁহু! পারল না। বুঝতেই পারল না ও নির্ঝর আসলেই রেগে আছে কি-না। সামান্য সময় নিয়ে সুধাল, “আপনি আমার উপর রেগে যাচ্ছেন কেন?”
“তোমার মনে হচ্ছে আমি রেগে যাচ্ছি তোমার উপর?”
“হু! হচ্ছে তো।”
সিতারার জবাবে মুচকি হাসল নির্ঝর। সামান্য এগিয়ে এসে আলতো করে সিতারার মুখখানা দু’হাতের মাঝে আগলে নিলো। বলল, “রেগে যাচ্ছি না। বিয়ের পর এই প্রথম বাবা মা আমাদের বাসায় এলেন। আসার পর নিশ্চয়ই তুমি অপ্রস্তুত হয়েছিলে! ঠিক তেমন আমিও হয়েছি। তখন আমাকে বললে তো একটা প্রস্তুতি নিতে পারতাম। তাছাড়া…”
“তাছাড়া?”
“তুমি আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে সিতারা। এভাবে হঠাৎ তোমার কলে কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, জানো? তোমার কিছু হলে আমার কি হতো, বলো?”
“কি আর হতো, সেই তো দেবদাসের মতো কোন এক চন্দ্রমুখীর সাক্ষাৎ পেতেন।”
মুচকি হেসে বলল সিতারা। নির্ঝরের চোখ দু’টো ভীষণ শান্ত, কিন্তু গম্ভীর। সিতারা ওর হাত দু’টো গাল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, “এসব ছাড়ুন এখন। আগে ফ্রেশ হয়ে আসুন, যান তো।”
চলে যেতে চাইলেই নির্ঝর ওর হাত ধরে ফেলল। টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরল আলগোছে। বলল, “হাজার চন্দমুখী আসলেও আমার পারুর মতো কখনো কেউ হতে পারবে না।”
থামে নির্ঝর। সেকেন্ডের মতো সময় নিয়ে ফের বলে, “উঁহু! আমার সিতারার মতো কখনো কেউ হতে পারবে না।”
আচমকাই সিতারার হাত পা যেন অবস হতে থাকল। শরীর ছেড়ে দিয়ে লুটিয়ে পড়তে চাইল মাটিতে। কিন্তু পড়ল না, নির্ঝর ওকে ধরে রেখেছে। হঠাৎ এমনটা হবার কারণ ও বুঝতে পারছে না, আচমকা বুকের ভেতর উথাল-পাতালের কারণ ধরতে পারছে না। সিতারা শান্ত, নীরবে পড়ে রইল নির্ঝরের বুকে। এরপর নিজেকে কিঞ্চিৎ স্বাভাবিক করার চেষ্টা করল। দু’হাতে নির্ঝরের বাহু ঠেলে সরে আসতে চাইল। উঁহু! পারল না। সামান্য সরে আসতেই নির্ঝর ওর কোমর জড়িয়ে ফের কাছে টেনে নিলো, আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল সিতারাকে। আস্তে করে বলল, “থাকো না এভাবে, খানিকক্ষণ!”
সিতারা সরে আসার চেষ্টা করল না। ঠোঁটে বিস্তার হাসি নিয়ে নির্ঝরের বুকে মুখ ঘেঁষল। বলল, “আপনি কি আমাকে ভালোবেসে ফেললেন নির্ঝর?”
সহসায় জবাব দিলো না নির্ঝর। সামান্য সময় নিয়ে বলে উঠল, “ভালোবাসা কি, সেটা আমি জানি না। কিন্তু, কাউকে হারানোর ভয়ে হৃদপিণ্ড কেঁপে ওঠার নাম যদি ভালোবাসা হয়, তবে তাই!”
.
.
তালুকদার বাড়ির দোতলার নির্ঝরের ঘর। অস্থির চিত্তে ঘরের মাঝে পায়চারি করছে নির্ঝর। মেজাজ তার ভীষণ খিটখিটে। ভীষণ রাগ হচ্ছে ওর সিতারার উপর। মেয়েটা যেন গ্রামে এসে সাপের পাঁচপা দেখেছে। কিছুতেই ওকে পাত্তা দিচ্ছে না। এসেছে দু’দিন হলো। প্রথমদিনে একটু-আধটু নাগালে এলেও আজ সে ধরাছোঁয়ার বাইরে। বাড়িতেই নেই। সকাল সকাল চলে গেছে বাপের বাড়ি। বিকেল গড়িয়ে গেছে, এখনও ফেরার নাম নেই। চোখের সামনে ঘুরঘুর করা মেয়েটাকে সারাদিন চোখের সামনে না দেখে ভীষণ অস্থির লাগছে ওর।
গ্রামে এসেছে ওরা দু’দিন হলো। সেবার বাবা মা চলে আসার পর থেকেই সিতারাও জেদ ধরে বসে—গ্রামে আসবে বলে। নির্ঝরের অফিসের ছুটি না থাকায় সপ্তাহ তিনেক পর আসে। এখানে আসার পর থেকে শ্বাশুড়ির সাথেই সারাটা সময় কাটে সিতারার। আজ তো চাচা চাচীকে দেখবে বলে তাদের বাড়িতেই চলে গেল।
নিজের ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে এলো নির্ঝর। মায়ের কাছে একবার খোঁজ নেওয়া উচিত সিতারার। কথাটা ভাবনায় রেখেই নিচে নেমে এলো। সোজা রান্নাঘরে, মায়ের কাছে। সিতারা কখন আসবে, জিজ্ঞেস করতেই নির্ঝরের মা জানালেন—আজ আসবে না সিতারা। এহসান তালুকদারকে জানিয়েছে, আজ ওখানেই চাচা চাচীর কাছে থাকতে চায় মেয়েটা।
নির্ঝরের অস্থিরতার মাত্রা বাড়ল, রাগ অধিক হলো। সেই সাথে আফসোসও কম হলো না। সিতারা যাবার সময় বার বার বলেছিল, ওকেও যেতে। কিন্তু নির্ঝর যায় নি। এখন আফসোস হচ্ছে, মেয়েটার সাথে গেলেও পারত। আবার সিতারা ওর মোবাইলও নিয়ে যায় নি, যে কল করে আসতে বলবে।
রাগ ও বিরক্তি নিয়ে ফের নিজের রুমে চলে এলো। সময় কাটানোর জন্য নিজের ল্যাপটপ নিয়ে বসল, তবে খুব একটা সুবিধা করতে পারল না। সন্ধ্যা পেরিয়ে যখন রাতের আঁধার নামল, তখন আর নিজেকে সামলাতে পারল না ছেলেটা। সিতারাকে যেন ওর কাছে পেতেই হবে। মনের উপর থেকে দ্বিধা কাটিয়ে বেড়িয়েই পড়ল নির্ঝর। তালুকদার বাড়ির পুরানো, বাবার সঙ্গে থাকা সেই বিশ্বস্ত লোকটির থেকে জেনে নিলো সিতারার চাচার বাড়ির ঠিকানা। এরপর বেড়িয়ে পড়তেও সময় নিলে না।
পূর্ণ চাঁদের আলো। যেন ভরা পূর্ণিমা। চাঁদের আলোয় চারদিকটা আলোকিত হয়ে আছে। তাতে গ্রামের মেঠো পথেও হাটতে অসুবিধা হচ্ছে না নির্ঝরের। কয়েকটা জমির আইল ডিঙিয়ে মাটির রাস্তায় উঠে নির্ঝর, এরপর বড়সড় এক দিঘির মতো পুকুর। পুকুরের পাড় পেরিয়ে সামান্য হাঁটলেই সিতারাদের বাড়ি। এমনটাই বলেছিল লোকটা। নির্ঝর ঠিক সেভাবেই এগুলো। পুকুরের পাড় পেরিয়ে সামান্য যেতেই একটা ছোটখাটো বাড়ি নজরে এলো। আশেপাশে নানান গাছপালায় ভরপুর। রাস্তা থেকে বাড়ির খোলা জায়গায় উঠতেই সামনে দেখল, কেউ আসছে ওর দিকেই। নির্ঝর দাঁড়িয়ে গেল। সামান্য এগিয়ে আসতেই বুঝল এক ছেলে ও এক মেয়ে হারিকেন জ্বালিয়ে আসছে। আরও একটু যখন সামনে এগিয়ে এলো, তখনই মেয়েটার মুখখানা স্পষ্ট হলো নির্ঝরের কাছে। আস্তে করে বলে উঠল, “সিতারা!”
নির্ঝরের সামনাসামনি এসে সিতারাও দাঁড়িয়ে গেল। অবাক কণ্ঠে ছেলেটার সামনে দাঁড়িয়ে সুধাল, “আপনি? আপনি এখানে?”
“যাচ্ছিলাম তো শ্বশুর বাড়ি। কিন্তু তুমি এখানে কেন? এটা কে?”
পাশের ছেলেটাকে ইশারায় বোঝাল নির্ঝর। সিতারা বেশ বুঝল, ওর মতোই মানুষটা বোধহয় ওকে ছাড়া থাকতে পারছিল না। এজন্যই রাতের প্রহরে ওর জন্য ছুটছে মানুষটা। সুপ্ত নিশ্বাস ছাড়ল সিতারা। বলল, “ও আমার চাচাতো ভাই। আর আমি.. আমি তো বাড়ি যাচ্ছিলাম!”
“আচ্ছা!”
বলেই ছেলেটার সাথে টুকটাক কথা বলে। এরপর ছেলেটাকে বাড়ি পাঠিয়ে সিতারাকে নিয়ে যেতে চায়। সিতারা বলে, “আরে আপনি.. এতদূর এসেছেন, আর বাড়ি যাবেন না! ভেতরে চলুন।”
“উঁহু! অন্য কোনদিন। তুমি চলো আমার সাথে।”
বলেই সিতারার হাত ধরে ফেলে, এরপর হাটতে শুরু করে। সিতারা বলে উঠে, “আরে আস্তে চলেন তো। পড়ে যাবো তো।”
হাঁটার গতি কমে আসে নির্ঝরের। কিন্তু কঠোর হয় ওর গলার স্বর। গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠে, “আজকের পর আর বাবার বাড়িতে থাকতে চাইবে না বলে দিলাম। সারাদিন যা করার করবে, কিন্তু সন্ধ্যায় যেন আমি তোমাকে আমার চোখের সামনে দেখি।”
“কেন, থাকলে কি হবে?”
“কি আর হবে। এই রাতের বেলা হাসবেন্ডের কথা মনে হলেই তার কাছে ছুটতে চাইবে।”
“আসলে, আমি তো…”
বলতে পারল না কিছু। কথাটা তো মিথ্যে নয়। নির্ঝরকে সারাটাদিন দেখতে না পেয়ে কেমন অস্থির অস্থির লাগছিল ওর। এজন্যই তো চাচাকে নানান কিছু বুঝিয়ে ভাইটাকে নিয়ে ছুটতে চাইল শ্বশুর বাড়ি। পিটপিট চোখে তাকায় সিতারা নির্ঝরের পানে। নির্ঝর বলে উঠে, “এভাবে ইনোসেন্ট মুখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে লাভ নেই। আমার রাগ কিন্তু কমবে না।”
“আপনি সত্যি সত্যি রেগে আছেন আমার উপর/”
“হু!”
ছোট্ট জবাব নির্ঝরের। সিতারা সহসায় কিছু বলল না। ততক্ষণে ওরা পুকুরের পাড়ে উঠে এসেছে। সামান্য হাঁটতেই সিতারা এবার আবদার করে বসল, “চলুন না, পুকুরের পাড়ে গিয়ে একটু বসি!”
“উঁহু! এখন বাড়ি ফিরতে হবে।”
“একটুই তো! চলেন না, বসি। আমি জানি আপনার ভালো লাগবে।”
থেমে গিয়ে সিতারার দিকে তাকাল নির্ঝর। মেয়েটার চোখেমুখের সেই অজানা খুশিটা নিভিয়ে দিতে মন চাইল না। সায় জানাল। সিতারা খুশি হয়ে ওর হাত জড়িয়ে এগোলো। সান দেওয়া পুকুরের পাড়ে গিয়ে দাঁড়াতেই নজরে এলো পূর্ণ চাঁদের আলোয় চিকচিক করা পুকুরের পানি, আর জ্বলজ্বল করা সদ্য ফুটতে থাকা শাপলা ফুল। নির্ঝর তাকাল সিতারার পানে। সিতারা ঠোঁটে বিস্তার হাসি নিয়ে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। এক টুকরো চাঁদের আলো যেন মেয়েটার সেই হাসিটা আরও প্রাণবন্ত করে তুলল। মুহুর্তেই রাগ ভুলে গেল ছেলেটা। মুগ্ধ নজরে দৃষ্টি ফেলে তাকিয়ে রইল ও মেয়েটার পানে। হঠাৎই সিতারা বলে উঠল, “সুন্দর না?”
“প্রেমে পরার মতো সুন্দর!”
সিতারার দিকে তাকিয়েই বলল নির্ঝর। সিতারা বোধহয় তা বুঝতে পারল। ওর দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি কিন্তু ফুলগুলোর কথা বলছি।”
“আমিও তো আমার ফুলটাকে বুঝিয়েছি!”
“উফ্! সামনের দিকে দেখুন তো।”
মুচকি হেসে সামনে তাকাল নির্ঝর। ফের একবার সিতারার পানে তাকিয়ে বলল, “তুমি বসো এখানে। আমি একটু আসছি।”
বলেই নেমে গেল নিচের দিকে। সিতারা ডাকল ওকে, কিন্তু শুনল না। নির্ঝর নিচে নেমে, পানিতে এক পা ভিজিয়ে একটা শাপলা তুলে আনল। সিতারাকে পাড়ে বসিয়ে নিজে বসল ওর পাশে। এরপর শাপলাটা ওর কানে গুঁজে দিলো। বলল, “এবার পারফেক্ট!”
সিতারা হেসে ওর কাঁধে মাথা রাখল। নির্ঝরের চোখ জোড়া তখন অদূরে তাকিয়ে। সিতারা আস্তে করে বলে উঠল, “জানেন, আগেও এখানে কতবার এসেছি। কিন্তু, আজকের মতো কখনোই এটা শান্তি শান্তি অনুভূতি হয় নি। কেন বলেন তো?”
“সেটা তো তুমিই ভালো জানবে।”
“আপনি! আপনি ছিলেন না।”
মাথা ঘুরিয়ে সিতারার দিকে তাকাল নির্ঝর। মুচকি হাসি নিয়ে কিছু বলতে চাইলেই সিতারা বলে উঠল, “আগে তো আপনি ছিলেন না, বিশ্বস্ত আপনার এই কাঁধ ছিল না, আগলে রাখার মতো হাত ছিল না। আজ আপনি আছেন, আপনার সাথে সাথে আমার সুখ শান্তি সব আছে, সব!”
হাত ছাড়িয়ে বুকে টেনে নিলো নির্ঝর সিতারাকে। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে সুধাল, “আর তুমি.. তুমি থাকবে তো—আমার হয়ে, আমার কাছে!”
“শুধু থাকব না, আমাকে ছাড়ার অপশনও কখনো রাখব না।”
“তারপর একদিন যদি…”
“তারপর একদিন দুই থেকে আমরা তিন হবো, তিন থেকে চার!”
মুচকি হাসল নির্ঝর। দৃঢ় হলো ওর হাতের বাঁধন। নীরবতায় সময় কাটতে থাকল। আর… আর নির্জন রাতে নির্ঝর ও সিতারার ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে থাকল মিটমিট করে জ্বলতে থাকা তারা সহ আকাশের ওই বিশাল চাঁদটা, এবং পুকুরের পাড়ের সাথে সাথে ফুটন্ত ওই শাপলাগুলো।
.
.
সমাপ্ত..!