তারে আমি চোখে দেখিনি পর্ব-০১

0
132

#তারে_আমি_চোখে_দেখিনি
#সূচনা_পর্ব
#লেখিকা_সাম্মী_ইয়াসমিন

—“স্যার, ফরেনসিক রিপোর্ট এসে গেছে।”

—“কি এসেছে রিপোর্টে?”

—“স্যার, মেয়েটাকে রে*প করে তারপর শ্বাস রোধ করে মে*রে ফেলা হয়েছে। মৃত্যুর সময় দুপুর দুইটা থেকে তিনটার মধ্যে। আর…..”

—“আর?”

—“আর, মেয়েটা প্রেগনেন্ট ছিলো।”

হাতে রাখা ছোট্ট টেনিস বলটা শক্ত করে মুঠো করে নেয় অর্পন। চোয়াল শক্ত হয়ে আছে তার। চোখ দুটো থেকে যেনো আগুন ঝড়ছে। অর্পনের চেহারার এমন ভয়ঙ্কর পরিবর্তন দেখে দু কদম পিছিয়ে যায় কনস্টেবল রহিম। ভয়ে তার হাত, পা কাঁপছে। তবে ভয় শুধু সে একা পাচ্ছে এমনটা নয়। ভয় পাচ্ছে সেখানে উপস্থিত সবাই। অর্পনের প্রতি সবার আকাশ সমান ভয়। এই থানার যিনি প্রাক্তন এস আই ছিলেন তিনি কিছুদিন আগে অবসরে গেছেন। তবে অবসরে যাওয়ার আগে স্পেশাল রিকুয়েষ্ট করে অর্পনকে এখানে নিয়ে আসেন তার জায়গায়। অর্পনের শক্ত ব্যক্তিত্ব, তীঘ্ন বুদ্ধিমত্তা, অসাধারণ বিচক্ষণতা আর ব্যাপক সাহসীকতার জন্য এস আই দিদার সাহেব তাকে খুব পছন্দ করেন। তাই তো স্পেশাল রিকুয়েষ্ট করে অর্পনকে এখানে নিয়ে এসেছেন। যাতে তার অসম্পূর্ণ কাজগুলো অর্পন সম্পূর্ণ করতে পারে। এই কয়েকদিনে অর্পনের রাগের সাথে সবাই পরিচিত হয়ে গেছে। তাই কম বেশি সবাই ভয় পায় তাকে।

আগুন দৃষ্টিতে বলের দিকে তাকিয়ে অর্পন কনস্টেবলকে জিজ্ঞেস করে,

—“এই কেসটার বিষয়ে আর কি কি ইনফরমেশন পাওয়া গেছে?”

কনস্টেবলের পা কাপছে। অর্পনের শান্ত গলার আওয়াজও তার কাছে বাঘের গর্জনের মতো লাগছে। বুকে সাহস জুগিয়ে কনস্টেবল কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,

—“স্যার, তেমন কোনো ইনফরমেশন তো পাওয়া যায়নি। খু*নি খুবই চালাক। কোনো প্রমান রেখে যায়নি। তবে……..”

—“কথা সম্পূর্ণ করুন রহিম সাহেব। আধা আধুরা কথা আমার পছন্দ নয়।”

অর্পনের কড়া কন্ঠ শুনে পকেট থেকে রুমাল বের করে কপালের ঘাম মোছে রহিম। তারপর ফের বলতে শুরু করেন,

—“স্যার, খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি লা*শ*টা যে নদীর পাড়ে ফেলা হয়েছিলো সেখানে প্রতিদিন একটা মেয়ে বসে থাকে। গাছপালা থেকে একটু দূরেই বসার জন্য বেঞ্চ বসানো আছে। মেয়েটা সেখানে আসে প্রতিদিন। হতে পারে সে কিছু দেখেছে।”

ভ্রু কুঁচকে যায় অর্পনের। চোখ মুখ তার এখনো শক্ত। শক্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,

—“মেয়েটার বিষয়ে কোনো ইনফরমেশন পেয়েছেন? তাকে পাবো কিভাবে?”

—“তেমন কোনো ইনফরমেশন তো পাইনি তবে এটুকু জানতে পেরেছি যে মেয়েটার নাম প্রাপ্তি। আর আমার জানা মতে সে প্রতিদিন বিকালে সেখানে আসে। তাহলে যে কোনোদিন বিকেলে গেলেই হয়তো পেয়ে যাবো। মেয়েটা আমাদের কেসটা সল্ভ করতে অনেক সাহায্য করতে পারে স্যার।”

হাত উল্টো করে ঘড়ির দিকে একবার তাকায় অর্পন। এখন বিকাল পাঁচটা বেজে বারো মিনিট। মানে এই সময় মেয়েটার সেই নদীর পাড়ে থাকার কথা। মাথার মধ্যে কথাগুলো সাজিয়ে হুট করেই উঠে দাঁড়ায় অর্পন। অর্পনকে হঠাৎ করে উঠতে দেখে ভয়ে কিছুটা কেঁপে ওঠে কনস্টেবল রহিম। অর্পন রিভালবারটা হাতে নিয়ে বলে,

—“তাহলে দেরি কিসের, চলুন। যাওয়া যাক সেখানে।”

বলেই হাটা দেয় অর্পন। কয়েক কদম গিয়ে থেমে যায়। পেছন ঘুরে বলে,

—“আর আমাকে একটু কম ভয় পাবেন। কারণ আপনি আমার বড় ভাইয়ের মতো। আর তাছাড়া আমি কঠোর শুধুমাত্র অপরাধীদের জন্য, সমাজ সেবকদের জন্য নয়, এখন চলুন।”

কথাগুলো বলেই সামনের দিকে হাটা দেয় অর্পন। চোখে তার সানগ্লাস। সিল্কি চুলগুলো বাতাসে দুলছে। সুঠাম দেহে ইউনিফর্মটা আটশাট হয়ে লেপ্টে আছে। সুঠাম দেহী, সুদর্শন এই অফিসারকে দেখে যে কেউ প্রেমে পড়ে যাবে। কিন্তু তার রাগের আগুন দেখে কেউ আর সামনে আগানোর সাহস পায় না।

________________

রাস্তার পাশ দিয়ে ক্ষিপ্র গতিতে হেটে যাচ্ছে সুপ্তি। চোখে তার গোল ফ্রেমের চশমা। নজর তার হাতের ফোনের দিকে। তাড়াহুড়ো করে হাঁটছে আর কি যেনো বিড়বিড় করছে। এক পর্যায়ে পায়ের গতি থেমে যায় তার। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,

—“কি! আজ তোরাও শত্রুতা শুরু করলি। দেখেছিস আজ কোনো রিকশা পাইনি তাও বৃষ্টি পাঠাচ্ছিস। আমাকে অসুস্থ করতে চাস? খবরদার বলে দিলাম, এখন বৃষ্টি আসা চলবে না, মানে চলবে না। আমি বাসায় যাবো তারপর যত খুশি বৃষ্টিরা এসে নাচানাচি করিস। কিন্তু এখন একদম না। না হলে কিন্তু তোদের খবর আছে।”

কথার মাঝেই টুপটাপ কয়েক ফোটা বৃষ্টির কণা গোলগাল মুখের ওপর পড়ে। বৃষ্টির ফোটা মুখে পড়তেই সুপ্তি দেয় এক দৌড়। কারণ সে বুঝে গেছে তার এই হুমকি ধমকি অন্যদের ওপর চললেও মেঘেদের ওপর চলবে না। তাই দিক বেদিক ভূলে দৌড়াতে থাকে। কিন্তু দৌড়ে বেশিদূর আগাতে পারে না। কিছুটা যেতেই সামনে কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে দু’জনেই রাস্তার ওপর পড়ে যায়। পড়েই ব্যথায় চোখ মুখ কুচকে আর্তনাদ করে ওঠে সুপ্তি। হাটুটা মনে হয় ছিলে গেলো। একই অবস্থা অপর জনেরও তবে তার মুখে কোনো আর্তনাদ নেই। আছে শুধু চোখ মুখ ভর্তি বিরক্ত। বিরক্তিকর কন্ঠে চেচিয়ে বলে ওঠে,

—“হোয়াট দা! এই মেয়ে এই! তুমি চোখে দেখতে পাওনা? অন্ধের মতো চোখ বন্ধ করে হাটছিলে কেনো?”

এমনিতেই পায়ে প্রচন্ড ব্যথা পেয়েছে সুপ্তি, তারপর সামনের ব্যক্তির কথা শুনে গায়ে যেনো আগুন ধরে গেলো। কন্ঠে দ্বিগুণ ঝাঝ নিয়ে সুপ্তি বলে,

—“আপনার সাহস তো কম নয়। অন্যায় করে আবার আমাকে কথা শোনাচ্ছেন? এই আপনি জানেন আমি কে? চেনেন আমাকে? আমি হলাম, দা ফেমাস ব্লগার সুপ্তি বিনতে রহমান। কত নাম ডাক আমার জানেন? কত শত ফ্যান ফলোয়ার আমার। আর আপনি কোথাকার কে আমাকে এসে কথা শোনাচ্ছেন। আপনাকে তো পুলিশে দেয়া উচিত। গরু কোথাকার!”

—“এক্সকিউজ মি! কি বললে তুমি? আমি গরু? তুমি জানো আমি কে?”

ততোক্ষণে সুপ্তি চশমাটা খুজে চোখে পড়েছে। হাতের আঙুল দিয়ে ঠেলে চশমাটা ঠিক করে বলে,

—“কে আপনি ভাই? কোন ক্ষেতের মুলা? আমি তো আপনাকে চিনি না।”

—“খান গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির মালিকের ছোট ছেলে আমি। মেহরাব অঙ্কন খান। তোমার সাহস কি করে হয় আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বলার? হাউ ডেয়ার ইউ!”

অঙ্কনের কথা শুনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে সুপ্তি। এ যেনো বছরের সবচেয়ে সেরা জোকসটা এই মাত্র শুনেছে। হাসতে হাসতে বলে,

—“বোকা পেয়েছেন আমাকে? আপনি বলবেন আমি খান গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির মালিকের ছেলে আর আমি সেটা মেনে নেবো? মানে আপনি যদি এতো বড়লোক হন তাহলে পায়ে হেটে কোথায় যান? আপনার তো বড় গাড়ি থাকার কথা।”

অঙ্কনের এবার প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে। এমনিতে সে বেশি কথা বলতে পছন্দ করে না। প্রয়োজন ছাড়া ওর মুখ থেকে তেমন একটা কথা শোনা যায় না। আর এখানে সুপ্তির বাড়তি কথা শুনে অঙ্কনের এবার ধৈর্যের বাধ ভেঙে যাচ্ছে। কন্ঠে বিরক্তি নিয়ে অঙ্কন বলে,

—“হেই লিসেন চাশমিশ। তোমার সাথে কথা বলার আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। তুমি বিশ্বাস করলে করো আর না হলে না করো। চয়েস ইস ইওরস। জাস্ট বিরক্তিকর!”

কথাগুলো বলেই উঠে হনহন করে চলে যায় অঙ্কন। এদিকে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসে আছে সুপ্তি। মনে মনে ভাবে, “লোকটা কি বলে গেলো? আমাকে চাশমিশ বললো! এতবড় সাহস! বেয়াদব একটা।” মনে মনে অঙ্কনকে বকতে বকতে হাটতে থাকে সুপ্তি। এর সাথে বকবক করতে গিয়ে অনেকটা দেরি হয়ে গেছে।

_______________

গন্তব্যে এসে জিপ থেকে নামে অর্পন। কনস্টেবল রহিমকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যায় নদীর দিকে। কিছুদূর গিয়ে দেখে বড় বটগাছের নিচে একজন বয়স্ক ঝালমুড়ি বিক্রেতা তার ভ্যান নিয়ে দাড়িয়ে আছে। লোকটার দিকে আঙুল তাক করে রহিম বলে,

—“স্যার, ওই ঝালমুড়ি ওয়ালা আমাকে বলেছিলো প্রাপ্তি নামের মেয়েটার কথা।”

কনস্টেবলের দেখানো লোকটার দিকে এগিয়ে যায় অর্পন। লোকটা গাছের শেকড়ের ওপর বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলো। হঠাৎ পুলিশের পোশাক পড়া দুজনকে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে উঠে দাঁড়ায়। কিছুটা ভয়ার্ত কন্ঠে বলে,

—“কি ব্যপার স্যার? আপনারা আমার কাছে কেনো? আমি তো কোনো অপরাধ করিনি।”

লোকটা যে ভয় পাচ্ছে সেটা বুঝতে পেরে নিজের কঠিন চেহারা স্বাভাবিক করে অর্পন। লোকটাকে অভয় দিয়ে বলে,

—“ভয় পাবেন না চাচা। আমরা এসেছি কিছু ইনফরমেশন নিতে। আপনি রহিম সাহেবকে প্রাপ্তি নামের কোনো মেয়ের কথা বলেছিলেন। তার সাথেই দেখা করতে এসেছি। মেয়েটা কি আজ এসেছে? আর তাকে কোথায় পাবো?”

অর্পনের অভয় দেয়া কথা শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে বৃদ্ধ। আঙুল উঠিয়ে পূর্ব দিকের একটা বেঞ্চের দিকে ইশারা করে বলে,

—“ওই যে ওখানে একটা মেয়ে বসে আছে দেখতে পাচ্ছেন। ওটাই প্রাপ্তি মা। কিন্তু কেনো বাবা? ও কি করেছে? মেয়েটা কিন্তু অনেক ভালো।”

বৃদ্ধের ইশারা অনুসরণ করে সেদিকে তাকায় অর্পন। বেঞ্চে একটা মেয়েকে দেখা যাচ্ছে। একা একা বসে আছে। অবশ্য মুখ দেখা যাচ্ছে না কারণ মেয়েটা পেছন দিক হয়ে বসে আছে। কোমর পর্যন্ত খোলা চুল পিঠ জুড়ে ছড়িয়ে আছে। সেদিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে অর্পন। দৃষ্টি মেয়েটার দিকে রেখেই বলে,

—“ভয় নেই চাচা, তাকে ধরে নিয়ে যেতে আসিনি। একটা কেসের বিষয়ে তার সাহায্য চাই এজন্য দেখা করতে এসেছি।”

কনস্টেবল রহিম অর্পনকে উদ্দেশ্য করে বলে,

—“স্যার তাহলে চলুন যাই। আকাশের অবস্থা ভালো না, যেকোনো সময় বৃষ্টি আসতে পারে।”

রহিমের কথায় সম্মতি জানিয়ে সামনের দিকে পা বাড়ায় অর্পন। পেছন পেছন আসে রহিম। কয়েক কদম যেতেই হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। বৃষ্টি দেখে রহিম দৌড়ে গাছের নিচে দাড়িয়ে বলে,

—“স্যার বৃষ্টি চলে এলো তো। তাড়াতাড়ি এখানে আসুন। না হলে ভিজে অসুস্থ হয়ে পড়বেন।”

অর্পনের দৃষ্টি এখনো মেয়েটাতে আটকে আছে। নজর সেদিকে রেখেই বলে,

—“রহিম সাহেব! এই সামান্য বৃষ্টি মাহবুব অর্পন খানকে কাবু করতে পারবে না। এতটাও নাজুক শরীর আমার নয়। পুলিশদের নাজুক হলে চলে না, তাদের যে সর্বোচ্চ কঠোর হতে হয়। না হলে দেশ রক্ষা করবো কিভাবে? অপরাধীদের শাস্তি দেবো কিভাবে? আপনি এখানে থাকুন আমি আসছি।”

কথাগুলো বলেই সামনের দিকে পা বাড়ায় অর্পন। সময়ের সাথে সাথে বৃষ্টির তীব্রতা বেড়েই চলেছে। মেয়েটার কাছাকাছি গিয়ে থমকে যায় অর্পনের পা জোড়া। কানে আসে মেয়েটার খোলা গলার মিষ্টি গানের সুর। নদীর দিকে মুখ করে দাড়িয়ে দু হাত মেলে দিয়ে বৃষ্টি অনুভব করছে আর গান গাইছে সে। মেয়েটার থেকে দশ কদম দূরে দাঁড়িয়ে তার গান শুনতে থাকে অর্পন।

“আমার একলা আকাশ,
থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে,
শুধু তোমায় ভালো বেসে!

আমার দিন গুলো সব রঙ চিনেছে
তোমার কাছে এসে
শুধু তোমায় ভালো বেসে!

তুমি চোখ মেললেই ফুল ফুটেছে
আমার ছাঁদে এসে
ভোরের শিশির ঠোঁট ছুয়ে যায়
তোমায় ভালো বেসে!

আমার একলা আকাশ……………….. ”

অর্পনের চোখ যেনো থমকে আছে মেয়েটার চুলে। ধরণীতে মাত্রই সন্ধ্যা নেমেছে। তারওপর আকাশে মেঘের আগমন ঘটায় অন্ধকার যেনো তিন গুণ বেড়ে গেছে। তাই মুখটা ভালো ভাবে বুঝতে পারছে না অর্পন। তবে তার মিষ্টি গলার আওয়াজে কান জোড়া শীতল হয়ে গেছে অর্পনের। খালি গলার গানও বুঝি এতটা সুমধুর লাগে? হ্যা, লাগছেই তো। প্রচন্ড স্রুতিমধুর শোনাচ্ছে অর্পনের কানে। গান শোনায় অর্পন এতোটাই বিভোর হয়ে গেছে যে আশেপাশের কোনো দিকে তার খেয়াল নেই। তাই তো সামনে কি হচ্ছে তাতে কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে পাথরের মতো দাড়িয়ে দেখে যাচ্ছে।

তখন সেখানে আগমন ঘটে সুপ্তির। হাঁপাতে হাঁপাতে এসেছে মেয়েটা। বৃষ্টিতে ভিজে পুরো চুপসে গেছে। প্রাপ্তির কাছে এসে দাড়িয়ে অভিযোগ সুরে বলে,

—” তুমি কি এই অভ্যাস কখনো ছাড়বে না ছোট আপি? না বলেই যেখানে সেখানে চলে যাও। জানো বাবা মা কত চিন্তা করছে। দাদুর তো প্রেশার বেড়ে গেছে। এভাবে কাউকে কিছু না বলে এখানে কেনো আসো বারবার? আমি পুরো এলাকা খুঁজতে খুঁজতে পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। শেষে এখানে এসে পেলাম তোমাকে। কি হলো? কিছু বলছো না কেনো?”

—“তুই কিছু বলতে দিলে তবে তো বলবো। আমাকে বলার সুযোগ কোথায় দিচ্ছিস? আর বাবা মাকেও কি বলবো, সবসময় বেশি বেশি চিন্তা করে। দাদু তো আবার তাদের থেকেও এক লেভেল উপরে। দাদু কি বেশি অসুস্থ হয়ে গেছে?”

—“ওই একটু, প্রশার বেড়ে গেছে।”

—“আচ্ছা চল!”

বোনের কথায় সম্মতি জানিয়ে বোনের হাত ধরে সামনে এগোয় সুপ্তি। এক কদম গিয়ে হাতে টান অনুভব করে। পেছন তাকিয়ে কিছু বলবে তার আগেই প্রাপ্তি বলে,

—“আমি কি ছোট বাচ্চা যে আমাকে হাত ধরে নিয়ে যেতে হবে?”

—“কিন্তু আপি….”

—“হাত ছাড় সুপ্তি!”

বোনের জেদি কন্ঠ শুনে হতাশার নিশ্বাস ছাড়ে সুপ্তি। হাতটা ছেড়ে দিয়ে বলে,

—“বেশ চলো, দু’জনেই ভিজে গেছি। আজ পাক্কা দু’জনেরই জ্বর আসবে।”

মাথা নাড়িয়ে সামনের দিকে পা বাড়ায় প্রাপ্তি। পেছন পেছন ছোটে সুপ্তিও। অর্পনের হুশ ফেরে রহিমের আওয়াজ শুনে। রহিম দৌড়ে অর্পনের কাছে এসে বলে,

—স্যার এখানে দাড়িয়ে আছেন কেনো? মেয়েটা তো চলে গেলো।”

এতোক্ষণে সম্মতি ফিরে পায় অর্পন। রহিমের দিকে একবার তাকিয়ে আবার সামনে তাকায়। ততোক্ষণে প্রাপ্তি সেখান থেকে চলে গেছে। নিজের কাজে নিজেই হতবাক অর্পন। রহিম ব্যপারটা বুঝতে পেরে বলে,

—“কোনো ব্যপার না স্যার। আবার একদিন আসবো দেখা করতে। আপনি এখন বাসায় চলুন। না হলে আপনি এবার সত্যি সত্যি অসুস্থ হয়ে পড়বেন।”

সন্ধ্যার অন্ধকার ধরণীকে পুরোপুরি গ্রাস করে নিয়েছে। এতোক্ষণ যাও বা হালকা আলো ছিলো এখন আলোর হালকা ছিটেফোঁটাও নেই। আকাশের মেঘ পুরো ধরণীকে অন্ধকারে ঢেকে দিয়ে রাত নামিয়ে ফেলেছে। অন্ধকারে নদীর দিকে তাকিয়ে অর্পন বলে,

—“এই প্রাপ্তির সব ইনফরমেশন বের করুন। তার সাথে আমার একটা মিটিংয়ের ব্যবস্থা করুন। কেসটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সল্ভ করতে হবে। একটা বিশেষ কাজে এই থানায় এসেছি আমি। এই কেসটা সল্ভ করে আমার সেই বিশেষ কাজে মনোযোগ দিতে হবে। দেরি করা চলবে না।”

কথাগুলো বলেই রাস্তার দিকে হাটা দেয় অর্পন। গাড়িতে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে চুল গুলো হাত দিয়ে ঝাড়তে থাকে। রহিম পাশে এসে বসতেই অর্পন গাড়ি স্টার্ট দেয়। এখন উদ্দেশ্য নিজেদের বাসা। রহিমকে তার বাসায় পৌঁছে দিয়ে তারপর সে নিজের বাসায় যাবে। তবে নজর তার রাস্তার দিকে থাকলেও মাথার মধ্যে ঘুরছে প্রাপ্তি নামটা। মেয়েটা যদি কিছু দেখে থাকে তাহলে পুলিশকে জানালো না কেনো? কি কানেকশন থাকতে পারে মেয়েটার এই কেসের সাথে?

চলবে?