তারে আমি চোখে দেখিনি পর্ব-০২

0
101

#তারে_আমি_চোখে_দেখিনি
#পর্বঃ০২
#লেখিকা_সাম্মী_ইয়াসমিন

চিন্তিত ভঙ্গিতে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আছেন মারুফ রহমান। মেয়ে দুটোকে নিয়ে খুব চিন্তা হচ্ছে তার। একজন হুট করেই কাউকে কিছু না বলে কোথাও চলে গেছে। আর অপরজন তাকে খুঁজতে গিয়ে সেও বেপাত্তা হয়ে গেছে। দুই মেয়ে সুস্থ্য ভাবে বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছেন না তিনি। নজর ঘুরিয়ে তাকান পাশের সোফায় বসে থাকা নিজের বাবার দিকে। হাত দিয়ে লাঠি ধরে সেই হাতের সাথে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছেন তিনি। নাতনীদের চিন্তায় তারও প্রেশার বেড়ে গেছে।

হাতে ট্রে নিয়ে রান্নাঘর থেকে ড্রয়িংরুমে আসেন দিলারা বেগম। ট্রে টা টি-টেবিলের ওপর রেখে লেবুর শরবতের গ্লাসটা শ্বশুরের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলেন,

—“লেবুর শরবতটা খেয়ে নিন বাবা। আপনার প্রেসার অনেক বেড়ে গেছে। এতো চিন্তা করবেন না। সুপ্তি গেছে তো। ও ঠিক প্রাপ্তিকে নিয়ে বাড়ি ফিরবে।”

ছেলের বৌয়ের দিকে একনজর তাকান কামরুল রহমান। চিন্তত স্বরে বলেন,

—“আমার প্রাপ্তি দিদি ভাই না আসা পর্যন্ত আমি কিচ্ছু খাবো না বৌ মা। শরবতটা রেখে দাও।”

শ্বশুরের জেদি কন্ঠ শুনে হতাশার নিশ্বাস ছাড়েন দিলারা বেগম। তার শ্বশুর এক কথার মানুষ। একবার যেটা না করবে সেটা তাকে দিয়ে কিছুতেই করানো যায় না। তাই ব্যার্থ চেষ্টা না করে গ্লাসটা টেবিলে রেখে দেন। স্বামীর পাশে গিয়ে বসে দড়জার দিকে অধীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকে মেয়েদের বাড়ি ফেরার আশায়।

কিছুক্ষণ পরে ড্রয়িংরুমে আগমন ঘটে বাড়ির দুই কন্যার। বৃষ্টিতে ভিজে দু’জনেরই নাজেহাল অবস্থা। দিলারা বেগম দৌড়ে রুমে চলে যান মেয়েদের জন্য তোয়ালে নিয়ে আসতে। এদিকে দুই নাতনিকে চোখের সামনে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়েন কামরুল রহমান। লাঠিতে ভর দিয়ে উঠে দাড়িয়ে শাসনের কন্ঠে বলেন,

—“এসব কেমন ছেলেমানুষী প্রাপ্তি দিদি ভাই। কাউকে না বলে কোথায় চলে গেছিলে তুমি? জানো আমাদের কত চিন্তা হচ্ছিল!”

—“আজকাল তোমরা একটু বেশিই চিন্তা করছো না দাদু? আগে তো আমাকে নিয়ে এতো চিন্তা করোনি।”

উঠে দাঁড়ান মারুফ সাহেব। মেয়ের কাছে এসে মাথায় হাত রেখে চিন্তিত সুরে বলেন,

—“আগে তো সুপ্তি সবসময় তোমার সাথে থাকতো আম্মু। তাই চিন্তা কম হতো। এখন যে তুমি একা একা এদিক সেদিক যাও সেজন্য চিন্তা বেশি হয়। তাছাড়া আজকাল লোকজন অনেক খারাপ হয়ে গেছে। কারো ক্ষতি করতে কেউ দুবার ভাবে না। গতকাল আমাদের পাশের পাড়ার একটা মেয়েকে খু*ন ক*রা হয়েছে। টিভিতে দেখাচ্ছিলো তাকে। এজন্য চিন্তা হচ্ছিলো। এমন ছেলেমানুষী কেউ করে আম্মু।”

ঘুড়ে দাঁড়ায় প্রাপ্তি, বাবার থেকে মুখ ঘুড়িয়ে নিয়ে বলে,

—“তোমরা তো এমন ভাবে বলছো যেনো আমি কোনো ছোট বাচ্চা। নিজে নিজে চলার ক্ষমতা নেই আমার। তোমরাই তো বলো আমি আর পাঁচজন মেয়ের মতোই। তাদের আর আমার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তোমরাই তো বলতে কারোর ওপর নির্ভর না করতে। তাই তো নিজে চলতে শিখছি। একা চলতে শিখছি। তাছাড়া দাদাভাই আমাকে একা চলতে শিখিয়েছে।”

ততোক্ষণে রুম থেকে দুইটা টাওয়াল নিয়ে আসেন দিলারা বেগম। একটা সুপ্তির হাতে ধরিয়ে দিয়ে অন্যটা দিয়ে প্রাপ্তির মাথা মুছে দিতে দিতে বলেন,

—“অতো কথা বুঝি না আমি। একদম বাবা আর দাদুর মুখে মুখে তর্ক করবি না। বাবা আর দাদু যা বলছে তোর ভালোর জন্যই বলছে।”

—“মা, আমি তর্ক কখন করলাম?”

—“সে যেটাই হোক। এমন আর করা চলবে না। আজকাল সমাজে অপকর্ম অনেক বেশি বেড়ে গেছে। তাই কোথাও গেলে সুপ্তিকে নিয়ে যাবি। না হলে তোর বাহিরে যাওয়া বন্ধ। আর এটাই আমার শেষ কথা।”

হতাশার নিশ্বাস ছাড়ে প্রাপ্তি। তার পরিবার তাকে একটু বেশিই ভালোবাসে। এজন্য শাসনের ভাগটাও প্রাপ্তিরই বেশি। উপায় না পেয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। ধীর কন্ঠে বলে,

—“বেশ! তাই হবে।”

—“হুম, এবার দুই বোন ঘরে গিয়ে চেঞ্জ করে আয় তাড়াতাড়ি। ঠান্ডা লেগে জ্বর এলো বলে।”

___________________

রাত নয়টার দিকে বাসায় প্রবেশ করে অর্পন। ডাইনিং টেবিলে সন্ধ্যা বেগম বসে ছিলেন। অর্পন এসেই ব্যাগটা সোফায় রেখে তার মাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

—“এখানে একা একা বসে আছো যে মা! বাবা কোথায়? বাবা আসেনি? আর অঙ্কন?”

ছেলের কথা শুনে পেছন ঘুরে তাকান সন্ধ্যা বেগম। উঠে দাড়িয়ে ছেলের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলেন,

—“তোর বাবার আজ আসতে একটু দেরি হবে বললো। আর অঙ্কন ওর রুমে আছে।”

এগিয়ে এসে অর্পনের পুরো শরীরের জামাকাপড় ভেজা দেখে সন্ধ্যা বেগম উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলেন,

—“এভাবে ভিজলি কি করে বাবু? ভেজা শরীর শুকানোর পথে। তাড়াতাড়ি জামা কাপড় পাল্টে আয়। ঠান্ডা লেগে যাবে তো।”

—“চিন্তা করো না মা, কিছুই হবে না। তুমি খাবার রেডি করো আমি আসছি। খুব খিদে পেয়েছে।”

কথাগুলো বলেই বড় বড় কদম ফেলে দোতলায় চলে যায় অর্পন। ইউনিফর্ম খুলে সোজা শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে পড়ে। বেশ লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে রুমে এসে দেখে তার মা খাবার রুমে নিয়ে এসেছে। টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে অর্পন বলে,

—“এতো কষ্ট করার কি দরকার ছিলো মা? আমি নিচে গিয়ে খেয়ে আসতাম। তোমার যে হাঁটুতে ব্যথা সেটা কেনো বারে বারে ভূলে যাও তুমি?”

ছেলের কথা শুনে সন্ধ্যা বেগম মুচকি হাসেন। দুই ছেলে মাকে যেনো চোখে হারায়। ছেলেদের এতো ভালোবাসা দেখে সন্ধ্যা বেগমের রোগ যেনো অর্ধেক সেরে যায়। তিনি মুচকি হেসে এগিয়ে আসেন। অর্পনের কপালে হাত রেখে জ্বর চেক করতে বলেন,

—“আমার ছেলের খিদে পেয়েছে আর আমি হাঁটু ব্যথার কথা চিন্তা করে চুপচাপ বসে থাকবো? তোর মাকে এমন ভাবিস তুই? আর তাছাড়া, এসব সার্ভেন্ট দিয়ে গেছে আমি কিচ্ছু করিনি।”

অর্পন আর কথা না বাড়িয়ে সোজা সোফায় গিয়ে বসে। হাতের ইশারায় মাকে ডেকে পাশে বসায়। এক লোকমা খাবার তুলে মায়ের মুখের সামনে ধরে। সন্ধ্যা বেগম জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মায়ের চোখের ভাষা বুঝতে পেরে অর্পন বলে,

—“অঙ্কন রাত নয়টার মধ্যেই খাওয়া দাওয়া শেষ করে। কারণ ও হেলথ নিয়ে খুবই সচেতন। সেটা আমি জানি। ভবিষ্যৎ ডাক্তার কি না। বাবা রাতে দেরি করে আসবে মানে সেও বাহিরে থেকে খাবার খেয়ে আসবে। বাকি রইলাম আমি আর তুমি। আর আমি এটাও খুব ভালো করে জানি যে তোমার এক ছেলেকে না খাইয়ে তুমি আগেই খেয়ে নেয়ার মতো মানুষ না। তাই চুপচাপ হা করো। আমিও খাবো, সাথে তুমিও খাবে।”

ছেলের দিকে সন্তুষ্ট চোখে তাকিয়ে আছেন সন্ধ্যা বেগম। দুই ছেলেকে নিয়ে তার আকাশ সমান গর্ব। ছেলে দুটো গম্ভীর হলেও বাবা মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে খুবই সচেতন। সন্ধ্যা বেগম আর কথা না বাড়িয়ে ছেলের হাতে খেতে থাকেন।

খাওয়া শেষে খাটের ওপর বসে কেসের ফাইলগুলো দেখছে অর্পন। যে মেয়েটা খু*ন হয়েছে তার বিষয়ে তেমন কোনো ইনফরমেশন এখনো পাওয়া যায়নি। আর সবচেয়ে আশ্চর্য বিষয় হলো মেয়েটা খু*ন হওয়ার আজ দুদিন হচ্ছে কিন্তু এখনো তার পরিবার কোনো মিসিং কেস করেনি। আর কিছু না হোক অন্তত নিউজ চ্যানেলে দেখেও তো তার পরিবার পুলিশের কাছে আসতে পারতো। শত চেষ্টা করেও কোনো রাস্তা দেখছে না অর্পন। কেসটা যতটা সহজ ভেবেছিলো, কেসটা ঠিক ততটাই কঠিন। সবটা অগোছালো এলোমেলো লাগছে। ভাবনার মাঝেই হঠাৎ অর্পনের ফোন বেজে ওঠে। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে কনস্টেবল রহিম ফোন করেছে। ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরেই অর্পন বলে,

—“কোনো খবর পেলেন?”

—“জ্বি স্যার। আমি কিছু লোক লাগিয়ে দিয়েছিলাম মেয়েটার নাম ঠিকানা বের করতে। তারা এই মাত্র ফোন দিয়ে কিছু ইনফরমেশন দিয়েছে। মেয়েটার নাম ইভা। মেয়েটা বিবাহিত ছিলো। স্বামীর সাথে এখানে থাকতো। আর সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো গত দুই দিন ধরে মেয়েটার স্বামীও নিখোঁজ। তাকেও কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।”

—“মেয়েটা বা তার স্বামীর পরিবার?”

—“স্যার, দুজনের মধ্যে একজনের পরিবারের বিষয়েও খোঁজ পাইনি। এখানে ওরা দুই স্বামী স্ত্রী ছাড়া আর কেউ থাকতো না। দু বছর আগে তারা এখানে এসেছে। তাদের দেশের বাড়ি অন্য কোথাও।”

চিন্তায় পড়ে যায় অর্পন। কেসটা যেনো আরো ঘেটে যাচ্ছে। কপালে বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলে,

—“কাল আবার যেতে হবে সেই নদীর পাড়ে। জায়গাটা ভালো করে দেখতে হবে। হতে পারে সেখান থেকে কিছু ক্লু পেয়ে গেলাম।”

—“জ্বি স্যার।”

কথা শেষ করে ফোন কেটে দেয় অর্পন। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত তিনটা বাজে। এখন না ঘুমালে কাল আর শরীরে এনার্জি পাওয়া যাবে না। ফাইলগুলো সব গুছিয়ে আলমারিতে রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।

________________

নদীর পাড়ের সেই বেঞ্জে চুপচাপ বসে আছে প্রাপ্তি। কলেজ শেষে সুপ্তিকে নিয়ে সোজা এখানে চলে এসেছে। এই জায়গাটা প্রাপ্তিকে খুব করে টানে। প্রাপ্তির সবচেয়ে প্রিয় জায়গায় এটা।

হাতে দুটো ঝালমুড়ির প্যকেট নিয়ে বোনের পাশে বসে সুপ্তি। একটা বোনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,

—“আপি এই নাও ঝালমুড়ি খাও। তোমার সেই প্রিয় চাচার থেকে নিয়ে এসেছি।”

ঝালমুড়ির প্যকেটটা প্রাপ্তি হাতে নিতে নিতে বলে,

—“টাকা বেশি দিয়েছিস তো?”

—“হ্যা, পুরো পঞ্চাশ টাকা বেশি দিয়েছি। এবার খুশি? আমার পঞ্চাশ টাকা গচ্ছা গেলো।”

বলেই চোখ মুখ কুচকে ফেলে সুপ্তি। বোনের কথা শুনে মুচকি হাসে প্রাপ্তি। হেসে বলে,

—“শুধু টাকার কথাই ভাবলি! এই অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে যে দোয়া পেলি সেটা কি কম বড়? লোকটার কত উপকার হলো জানিস?”

—“জানি তো। কিন্তু এটা বুঝতে পারছি না তুমি ঘন ঘন এখানে কেনো আসো? কি পাও এখানে?

মুচকি হাসে প্রাপ্তি, সোজা হয়ে বসে নদীর দিকে তাকিয়ে বলে,

—“এই জায়গাটা যে আমার বড্ড প্রিয়।”

—“হুম বুঝলাম! আচ্ছা আপি তুমি একটু বসো আমি একটা পানির বোতল কিনে নিয়ে আসি। এটা খেলে তো পানি খেতেই হবে।”

কথাগুলো বলেই সুপ্তি উঠে চলে যায়। প্রাপ্তি বসে বসে ঝালমুড়ি খেতে থাকে।

লাঞ্চের পর কনস্টেবল রহিম সহ সাথে আরো চারজন কনস্টেবলদের নিয়ে সেই নদীর পাড়ে এসেছে অর্পন। লা*শ*টা এখানেই পাওয়া গেছে। তাই কোনো ক্লু পেলে এখান থেকেই পাওয়া যাবে। নদীর কাছাকাছি এসেই অর্পনের নজরে পড়ে প্রাপ্তি। নদীর দিকে মুখ করে বেঞ্চে বসে আছে। কনস্টেবলদের দাঁড়াতে বলে সামনে এগিয়ে যায় অর্পন। কোনো কথা না বলে চুপচাপ গিয়ে প্রাপ্তির পেছনে দাঁড়ায়।

পেছনে কারো আগমন অনুভব করতেই খাওয়া থামিয়ে দেয় প্রাপ্তি। ঝালমুড়ির প্যকেটটা পাশে রেখে নদীর দিকে তাকিয়েই বলে,

—“কে আপনি? এখানে কি চাই?”

প্রাপ্তির কথা শেষ হতেই ঘুরে সামনে এসে সামনে দাড়ায় অর্পন। পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় প্রাপ্তির মুখের দিকে। এর আগে শুধু চুলই দেখে গেছে অর্পন, তাই চেহারা দেখার জন্য মনে একটু কৌতূহল ছিলো। এখন দেখে সেই কৌতুহল মেটালো। তবে পেছন থেকে যেমনটা অর্পন অনুমান করেছিলো মেয়েটা তারচেয়ে একটু বেশিই সুন্দর।

আর একটু কাছাকাছি এসে দাড়িয়ে প্রাপ্তির মনোযোগ পাওয়ার চেষ্টা করে অর্পন। কিন্তু চোখে সানগ্লাস থাকায় প্রাপ্তি ঠিক কোন দিকে তাকিয়ে আছে সেটা বোঝা যাচ্ছে না। অর্পন পকেটে হাত রেখে গম্ভীর কন্ঠে বলে,

—“পোশাক দেখে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমি কে? আমার নাম অর্পন! পেশায় একজন পুলিশ অফিসার।”

—“সে না হয় বুঝলাম আপনি পুলিশ অফিসার। কিন্তু আমার কাছে কেনো এসেছেন জানতে পারি? কারণ আমি তো কোনো ক্রিমিনাল নই।”

প্রাপ্তির ঠাট্টা বুঝতে পেরে শক্ত হয়ে দাঁড়ায় অর্পন। কন্ঠ আরো গম্ভীর করে বলে,

—“কারণ ছাড়া নিশ্চয়ই আসিনি এখনে। আমার জানা মতে আপনি এখানে প্রতিদিন আসেন রাইট?”

—“ঠিক প্রতিদিন বললে ভূল হবে। তবে মাঝে মধ্যেই আসি। জায়গাটা আমার খুব পছন্দের।”

—“গত পরশু আপনি সন্ধ্যায় এখানে এসেছিলেন?”

—“জ্বি, এসেছিলাম। সন্ধ্যার পরে বাসায় চলে গেছি।”

অর্পন এসে প্রাপ্তির পাশে একটু দুরত্ব রেখে বসে। হাতের ইশারায় এখান থেকে প্রায় পনেরো ষোলো হাত দূরে একটা ঝোপঝাড়ের দিকে ইশারা করে বলে,

—“গত পরশুদিন ওখানে একটা মেয়ের লা*শ পাওয়া গেছে। মেয়েটাকে দুপুরের দিকে খু*ন করে সন্ধ্যায় লা*শ*টা এখানে ফেলে দিয়ে চলে গেছে। আপনি কি কাউকে দেখেছেন? অপরাধীদের চিনিয়ে দিয়ে পুলিশকে সাহায্য করুন।”

কথাগুলো বলেই অর্পন প্রাপ্তির দিকে তাকায়। প্রাপ্তির ব্যবহার কিছুটা আশ্চর্যজনক লাগছে অর্পনের কাছে। এতো কথা হচ্ছে দুজনের মধ্যে কিন্তু প্রাপ্তি একবারও অর্পনের দিকে তাকাচ্ছে না। শুরু থেকে এখনো পর্যন্ত নদীর দিকেই মুখ করে বসে আছে। প্রাপ্তির দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে অর্পন বলে,

—“কিছু দেখে থাকলে প্লিজ বলুন। কোনো ভয় নেই, আপনার কোনো ক্ষতি হবে না। আপনাকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমার। আপনি যা কিছু জানেন সবটা বলুন।”

মুচকি হাসে প্রাপ্তি। দৃষ্টি নদীর দিকে রেখেই বলে,

—“নিজের সময় নষ্ট করলেন অফিসার। এই বিষয়ে আমি আপনাকে কোনো সাহায্য করতে পারবো না। ঘটনাটা যদি আমার চোখের সামনেও ঘটে তবুও না।”

ভ্রু কুঁচকে যায় অর্পনের। ভ্রু কুঁচকে রেখেই গম্ভীর কন্ঠে বলে,

—“কিন্তু কেনো?”

—“কারণ আপনি যার থেকে সাহায্য চাইছেন সে তো চোখেই দেখে না। আমি চোখে দেখতে পাই না। যাকে এক কথায় বলা যায় অন্ধ।”

প্রাপ্তির কথা শুনে আশ্চর্য চোখে তাকায় অর্পন। যেনো প্রাপ্তির কথা বিশ্বাসই করতে পারছে না। অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে বলে,

—“আপনি কি মজা করছেন আমার সাথে?”

প্রাপ্তি হেসে বলে,

—“আপনার সাথে মজা করে আমার কি লাভ? আমি সত্যি চোখে দেখতে পাই না। বিশ্বাস না হলে নিজেই যাচাই করে দেখুন।”

কথাগুলো বলেই চোখের সানগ্লাসটা খুলে ফেলে প্রাপ্তি।

চলবে?