তারে আমি চোখে দেখিনি পর্ব-০৪

0
98

#তারে_আমি_চোখে_দেখিনি
#পর্বঃ০৪
#লেখিকা_সাম্মী_ইয়াসমিন

ডাইনিং টেবিলে বসে সবাই নিজেদের মতো খাওয়া দাওয়া করছে। দীপ্তি ব্রেডে বাটার লাগিয়ে প্রাপ্তির প্লেটে দেয়। সকালে হালকা নাস্তা পছন্দ করে প্রাপ্তি। দীপ্তি যতদিন এই বাড়িতে থাকে ততদিন সে নিজের হাতে প্রাপ্তির সব কাজ করে। দীপ্তির পাশে বসে চুপচাপ পরোটা খাচ্ছে সজীব। খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে একবার করে দীপ্তির দিকে তাকাচ্ছে। দুই বোনকে নিজের সন্তানের মতো আগলে রাখে দীপ্তি।

অপর পাশের চেয়ারে বসেছেন মারুফ সাহেব। খাওয়া বাদ দিয়ে তিন মেয়েকে দেখে যাচ্ছেন তিনি। দীপ্তি ওদের বড় বোন হলেও সবসময় দুই বোনের সাথে মায়ের মতো আচরণ করে। একটা প্লেটে পরোটা আর ডিম ভাজি নিয়ে বড় মেয়ের দিকে এগিয়ে দেন মারুফ সাহেব। নরম কন্ঠে বলেন,

—“দীপ্তি আম্মু! তুমিও খেয়ে নাও। খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো।”

দীপ্তি নির্বিকার! বাবার কথা যেনো তার কানেই যায়নি। প্রাপ্তির প্লেটে বাটার লাগানো ব্রেডটা রেখে উঠে সুপ্তির কাছে আসে। সুপ্তির পাশের খালি চেয়ারে ধুপ করে বসে পড়ে। সুপ্তি মাত্রই পরোটার মাঝে ডিম ভাজি দিয়ে রোল বানিয়ে সেটাতে বড়সড় একটা কামড় বসাতে যাচ্ছিলো। এমন সময় দীপ্তি পরোটার রোলটা মুখের সামনে থেকে ছো মেরে নিয়ে নেয়। প্লেটে রেখে একটু করে ছিরে সুপ্তির মুখের সামনে ধরে।

সুপ্তি বোকার মতো তাকিয়ে আছে। বড় বোনের কাজ কর্ম কিছুই ওর বুঝে আসছে না। দীপ্তি চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই সুপ্তি চুপচাপ পরোটা মুখে পুরে নেয়। আস্তে আস্তে চিবাতে থাকে। নাতনীর দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিজের ছেলের দিকে তাকান কামরুল রহমান। মারুফ সাহেব শুকনো মুখে বসে আছেন। খাবারের একটা দানাও এখনো তার পেটে পড়েনি। এবার ঘুরে নাতনীর দিকে তাকিয়ে একবার গলা খাঁকারি দেন কামরুল রহমান। নাতনিকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

—“দীপ্তি দিদি ভাই!”

দাদুর ডাকে চোখ তুলে তাকায় দীপ্তি। স্বাভাবিক কন্ঠে বলে,

—“জ্বি দাদু।”

—“তোমার বাবা কিছু বলেছে শুনতে পাওনি? তোমাকে খেতে বললো তো।”

—“খিদে নেই দাদু, পরে খাবো আমি।”

—“কেনো দিদি ভাই? অনেক বেলা হয়ে গেছে। বাবা তোমার জন্য খাবার বেড়ে দিলো তো।”

—“এখন খাবো না আমি। আমার সত্যি খিদে নেই।”

কথাটা বলেই উঠে দাঁড়ায় দীপ্তি। আর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত পায়ে উপরে চলে যায়। ভ্রু কুঁচকে একবার সবার দিয়ে তাকায় সজীব। মারুফ সাহেব মাথা নিচু করে বসে আছেন। দিলারা বেগমও শুকনো মুখে শ্বশুরের প্লেটে ভাত বেড়ে দিচ্ছে। এদিকে প্রাপ্তি সুপ্তিও চুপ। সবার মুখের দিকে একবার নজর বুলিয়ে উঠে দাঁড়ায় সজীব। মুখে চমৎকার হাসি নিয়ে খাবারের প্লেট হাতে তুলে নেয়। মারুফ সাহেবর দিকে তাকিয়ে বলে,

—“আসলে দীপ্তি সকালে বললো ওর নাকি খেতে ইচ্ছা করছে না। আমিই জোর করে নিচে নিয়ে এসেছিলাম। সমস্যা নেই আমি খাবার নিয়ে যাচ্ছি, ওর যখন ইচ্ছে করবে খেয়ে নিবে। আপনি খেয়ে নিন বাবা।”

কথাটা বলেই সিড়ি দিয়ে দোতলায় চলে যায় সজীব। রুমে ঢুকে দেখে দীপ্তি আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে। আয়নায় একবার সজীবের দিকে তাকিয়ে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে দীপ্তি।

খাবারটা টেবিলে রেখে এগিয়ে আসে সজীব। দীপ্তিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,

—“এতো সাজুগুজু কেনো করছো বৌ? তোমার রুপে তো সেই নয় বছর আগেই আমি ঘায়েল হয়ে গেছি। এখন কি আমাকে একেবারে মেরে ফেলতে চাও? এই রুপের আগুন যে আমাকে পুড়িয়ে ফেলছে।”

মুচকি হাসে দীপ্তি, উল্টো ঘুরে সজীবের মুখোমুখি দাড়িয়ে বলে,

—“নয় বছর পার হয়ে যাচ্ছে বিয়ের বয়স। চুল পেকে বুড়ো হয়ে যাচ্ছো। এখনো এসব কথা বলো, তোমার লজ্জা করে না?”

—“লজ্জা! বৌয়ের কাছে আবার কিসের লজ্জা? তুমি জানো না, বৌয়ের সামনে লজ্জা পেতে নেই। তাহলে পুরুষ পুরুষ ফিলিং আসে না।”

—“হয়েছে তোমার? আর তুমি এখানে কি করছো? তোমার তো কোথাও বেরোনোর কথা। যাও নিজের কাজে যাও।”

মুচকি হাসে সজীব। দীপ্তির কাধ ধরে এনে সোফায় বসিয়ে খাবারের একটা লোকমা তুলে বলে,

—“যাবো তো অবশ্যই! অনেক জরুরি কাজ যেতেই হবে। তবে তার আগে নিজের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব যে পালন করা বাকি। তোমাকে পুরোটা খাবার খাইয়ে তারপর আমি যাবো।”

—“আমি খাবো না সজীব।”

—“ভেবে দেখো! তুমি না খেলে আমি কোথাও যাবো না। তাহলে আমার গুরুত্বপূর্ণ কাজও হবে না। ফলাফল বাড়ি ফিরলে মা ভূমিকম্প শুরু করবে। এখন তুমি ভেবে দেখো কোনটা ভালো হবে।”

হতাশার নিশ্বাস ছাড়ে দীপ্তি। শ্বাশুড়িকে সে কোনো মতেই রাগাতে চায় না। তাই বাধ্য হয়ে খাওয়া শুরু করে। খাওয়ানোর ফাঁকে সজীব প্রশ্ন করে,

—“আচ্ছা দীপ্তি, আমি একটা জিনিস লক্ষ্য করেছি। আমাদের বিয়ের পর থেকেই দেখছি তুমি বাবার সাথে কথা বলো না। আজও তাই করলে। কিন্তু কেনো?”

এই পর্যায়ে খাওয়া থামিয়ে দেয় দীপ্তি। মুখের হাসি যেনো নিমেষেই গায়েব হয়ে গেছে। ধীর কন্ঠে জবাব দেয়,

—“বাবা মেয়ের মধ্যে তুমি আসছো কেনো? এটা আমরা বাবা মেয়েই বুঝে নেবো। এই মামলায় তোমার পদক্ষেপ নিষিদ্ধ।”

সজীবও আর কিছু বলে না। দীপ্তিকে খাইয়ে খালি প্লেট নিয়ে নিচে নেমে আসে সজীব। ডাইনিং টেবিলে বসে সবাই সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। সজীব হাসি মুখে নেমে এসে বলে,

—“কি! সবাই এভাবে তাকিয়ে কেনো? চিন্তা নেই, দীপ্তিকে খাইয়ে তারপর নিচে এসেছি। আসলে ওর শরীরটা ভালো না তাই এভাবে উঠে রুমে চলে গেছে। একটু রেস্ট করলেই ঠিক হয়ে যাবে। আর প্রাপ্তি, সুপ্তি তোদের হলে চল। আমি একটা কাজে বের হচ্ছি তোদের কলেজে নামিয়ে দিয়ে চলে যাবো।”

সজীবের ডাক শুনে দুই বোন উঠে দাঁড়ায়। ব্যাগ কাঁধে নিয়ে এগিয়ে যায় সুপ্তি। সজীব প্রাপ্তির হাত ধরে দড়জার দিকে এগিয়ে যায়।

______________

ভার্সিটির গেটের সামনে এসে বাইক থামায় অর্পন। পড়নে তার কালো জিন্স আর শার্ট। চুলগুলো জেল দিয়ে স্যাট করা। বাইক থেকে নেমে সানগ্লাসটা চোখে পড়ে নেয়। আজ আর ইউনিফর্ম পড়ে আসেনি। কারণ ইউনিফর্ম পড়ে আসলে অপরাধীরা বুঝতে পেরে সতর্ক হয়ে যাবে। আজকের সুযোগ কোনোমতেই হাতছাড়া করতে চায় না অর্পন। বাইকের আয়নায় একবার নিজেকে পরোখ করে নেয়। নাহ্, কোনো এঙ্গেল থেকেই তাকে পুলিশ মনে হচ্ছে না।

বাইকের আয়নায় নিজেকে পরোখ করার সময় হঠাৎ কিছু একটা দেখে থমকে যায় অর্পন। একটানে সানগ্লাসটা খুলে ঘুরে পেছনে তাকায়। দেখে অর্পনের বয়সী একটা ছেলে প্রাপ্তির হাত ধরে এগিয়ে আসছে। অর্পনের নজর দুজনের ধরে রাখা হাতের দিকে। হাতে হাত রেখে দুজন এগিয়ে আসছে ভার্সিটির দিকে। প্রাপ্তির মুখে চমৎকার হাসি। দেখেই বোঝা যাচ্ছে লোকটা প্রাপ্তির খুব কাছের। তবে ঠিক কতটা কাছের? কি সম্পর্ক দুজনের মধ্যে? বুকের ভেতর ধুকপুক করছে অর্পনের। নিজের হৃৎস্পন্দনের আওয়াজ যেনো নিজেই শুনতে পাচ্ছে। কিন্তু কেনো? এমন কেনো হচ্ছে?

ঘুরে দাড়ায় অর্পন। হতে পারে এটা তার কোনো আত্মীয়। মেয়েটা অন্ধ তাই হয়তো হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যেখানে নিজের বোনকে হাত ধরতে দেয় না সেখানে এই ছেলেকে কেনো ধরতে দিলো? হোক সে আত্মীয় কিন্তু বোনের চেয়ে কি বেশি আপন? নিজের মনেই যুদ্ধ করে চলেছে অর্পন। কোনো ছেলেকে প্রাপ্তির হাত ধরতে দেখে মস্তিষ্ক যেনো এলোমেলো হয়ে গেছে। সব চিন্তা বাদ দিয়ে শুধু প্রাপ্তি নামটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

মনের সাথে যুদ্ধে হেরে গিয়ে আবার পেছন ঘুরে তাকায় অর্পন। প্রাপ্তির হাত ধরে রাখা ছেলেটাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে। ছেলেটা সাদা রঙের একটা শার্ট পড়েছে। সাথে নীল রঙের জিন্স। তার চোখেও সানগ্লাস। হাইট মোটামুটি ভালোই তবে দূর থেকে অর্পন যতটুকু আন্দাজ করতে পারছে তাতে অর্পনের চেয়ে উচ্চতা একটু কমই হবে। গায়ের রঙ অর্পনের মতোই ফর্সা। বয়স আনুমানিক অর্পনের থেকে তিন থেকে চার বছরের বড় হবে। তবে দেখতে বেশ সুদর্শন।

নিজের কাজে নিজেই হতবাক অর্পন। পেছনে ঘুরে শক্ত হয়ে দাঁড়ায়। বিড়বিড় করে বলে,

—“এসব কি ভাবছি আমি? কেনো ভাবছি? ছেলেটা যেই হোক না কেনো তাতে আমার কি? হতে পারে তার বিশেষ কেউ।”

বিশেষ কেউ কথাটা আবার মস্তিষ্ক দখল করে নেয় অর্পনের। ছেলেটা কি আসলেই তার বিশেষ কেউ?” ভাবনার মাঝেই একটা অটো এসে থামে অর্পনের কাছে। অটো থেকে নামে রহিম। তার সাথে সাথে নেমে আসে আরো দুজন কনস্টেবল। তবে সবাই আজ ইউনিফর্ম বিহীন সাধারণ পোশাকে এসেছে। অর্পনকে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতে দেখে কনস্টেবল রহিম ডেকে ওঠে,

—“স্যার, এভাবে পাথরের মতো দাড়িয়ে আছেন কেনো?”

এতোক্ষণে হুশ ফেরে অর্পনের। হুট করেই পেছনে তাকায়। কিন্তু পেছনে প্রাপ্তি বা ওই ছেলেটা কেউই নেই। ভাবনায় পড়ে যায় অর্পন,” তাহলে কি ভূল দেখলাম?” কনস্টেবল রহিমের দিকে তাকিয়ে বলে,

—“আচ্ছা রহিম সাহেব! আমি দেখতে কেমন?”

অর্পনের এমন উদ্ভট প্রশ্নে থতমত খেয়ে যায় রহিম। আমতা আমতা করে বলে,

—“মানে?”

—“মানে আমাকে কেমন লাগে? কোনো মেয়ে কি আমাকে দেখলে পছন্দ করবে?”

রহিমের পা কাঁপছে। ভয় ভয় মন নিয়ে থেমে থেমে বলে,

—“জ্বি স্যার! আপনি অনেক সুদর্শন যুবক। আপনাকে দেখলে যে কোনো মেয়ে পছন্দ করে ফেলবে। শুধু আপনার রাগ দেখে কেউ বলার সাহস পায় না।”

—“তাহলে ঠিক আছে। এখন চলুন কাজে লেগে পড়ি।”

কথাটা বলেই ভার্সিটির ভেতরের দিকে হাটা দেয় অর্পন। রহিম কিছুক্ষণ বোকার মতো তাকিয়ে থাকে। কয়েক সেকেন্ড ওভাবেই তাকিয়ে থেকে পরে অর্পনের পেছন পেছন ছোটে।

_________________

ভার্সিটির ভেতরে ঢুকে প্রাপ্তির ক্লাসের সামনে এসে দাড়িয়েছে তিনজন। সজীব প্রাপ্তিকে উদ্দেশ্য করে বলে,

—“তোর ক্লাসের সামনে আছি এখন প্রাপ্তি। নব্বই ডিগ্রি পেছনে ঘুরে এগারো পা এগোলেই ক্লাসের দড়জা পাবি। যেতে পারবি তো?”

মুচকি হাসে প্রাপ্তি। হেসে জবাব দেয়,

—“তুমিই তো আমাকে একা চলা শিখিয়েছো দাদাভাই। এখন নিজেই নিজের শিক্ষার ওপর সন্দেহ করছো?”

—“একদম না, আমি তো এমনিই বলছিলাম। আচ্ছা ক্লাসে যা তোরা আমি এখন বেরোবো। আমার একটু জরুরি কাজ আছে।”

দুজনকে ক্লাসে দিয়ে সজীব পকেট থেকে ফোন বের করে। তারপর কাউকে ফোন দিতে দিতে সেখান থেকে চলে যায়।

_____________

ভার্সিটির পেছন দিকে বাগান সাইডে দাড়িয়ে আছে অর্পন। সানগ্লাসের পেছনের সুক্ষ নজর তার চারিদিকে বিচরণ করছে। ড্রা*গ*স নিয়ে তাদের এখানেই আসার কথা। বিগত কয়েক মাস ধরে এই জায়গাতেই লেনদেন চলছে তাদের। কোনোভাবে একজনকে হাতে পেলে তাদের গোড়া পর্যন্ত খুঁজে বের করতে বেশি সময় লাগবে না।

চারিদিকে নজর বুলাতে গিয়ে হঠাৎ অর্পনের নজরে পড়ে প্রাপ্তি। সে ধীর পায়ে এদিকেই এগিয়ে আসছে। প্রাপ্তিকে আসতে দেখে ভ্রু কুচকে যায় অর্পনের। প্রাপ্তি এখানে আসছে কেনো? তাও একা। চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয় অর্পন। আশেপাশে কেউ নেই। তারপর প্রাপ্তিকে অনুসরণ করে ওর পেছন পেছন হাঁটতে থাকে। কিছুদূর গিয়ে পায়ের গতি থামিয়ে দেয় প্রাপ্তি। একদম স্থীর হয়ে দাড়িয়ে যায়। প্রাপ্তিকে থেমে যেতে দেখে অর্পনও হাটা থামিয়ে দেয়। ভ্রু কুঁচকে চারিদিকে একবার চোখ বুলায়। বাগানের মাঝামাঝি এসে দাড়িয়েছে প্রাপ্তি। জবাফুলের গাছ থেকে একটা ফুল ছিড়তে ছিড়তে খুব স্বাভাবিক কন্ঠে প্রাপ্তি বলে,

—“আমার পিছু কেনো নিয়েছেন অফিসার? আমি যা যা জানতাম সব তো বলেই দিয়েছি। তাহলে আমার পেছনে কেনো ঘুরছেন?”

প্রাপ্তির কথা শুনে কিছুটা অবাক হয়ে যায় অর্পন। অবাকের রেশ কিছুতেই কাটছে না। তার সাথে মনে জেঁকে বসেছে তীব্র সন্দেহ। অর্পন খুবই সাবধানে নিঃশব্দে হাটছিলো। তাছাড়া প্রাপ্তি চোখে দেখে না। তাহলে প্রাপ্তির বোঝার কথা নয় যে কেউ ওর পিছু নিয়েছে। কন্ঠে সন্দেহ নিয়ে অর্পন বলে,

—“আপনি কিভাবে জানালে যে আমি আপনার পেছনে আসছি? আপনি তো চোখে দেখতে পান না।”

—“হুম চোখে দেখতে পাই না কিন্তু কানে তো শুনতে পাই। আপনি হয়তো জানেন না যে, মানুষের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়র মধ্যে যখন একটা ইন্দ্রিয় কাজ করা বন্ধ করে দেয় তখন বাকি ইন্দ্রিয়গুলোর কার্যক্ষমতা বেড়ে যায়। আমার দৃষ্টি শক্তি চলে যাওয়ার পর থেকে বাকি ইন্দ্রিয়গুলো প্রখন হয়েছে। আপনি যে পাতার ওপর দিয়ে হেটে আসছিলেন সেই আওয়াজ স্পষ্ট শুনতে পেয়েছি আমি। আর কোনো প্রশ্ন?”

—“আরও একটা প্রশ্ন আছে। আপনার পেছনে যে আমিই এসেছি সেটা আপনি বুঝলেন কিভাবে? অন্য কেউ তো হতে পারতে!”

—“আপনার সৃতি শক্তি দুর্বল নাকি অফিসার? একটু আগেই তো বললাম দৃষ্টি শক্তি হারানোর পর আমার বাকি ইন্দ্রিয় প্রখন হয়েছে। মানে আমার শোনার ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে ঘ্রান শক্তিও বেড়ে গেছে। আপনার পারফিউমের স্মেল আমার পরিচিত। আগের দুইবারও আপনি এই পারফিউমই লাগিয়েছিলেন। তাই আপনাকে চিনতে পেরেছি।”

—“মানে, আপনি আমাকে অনুভব করেছেন।”

প্রাপ্তির ছোট্ট জবাব,

—“হয়তো।”

_____________

বাগানের একপাশে শিমুল গাছের আড়ালে দাড়িয়ে আছে কেউ। দৃষ্টি তার অর্পন আর প্রাপ্তির দিকে। সেদিকে দৃষ্টি রেখেই পকেট থেকে ফোন বের করে। একটা নাম্বারে ডায়াল করে কানে ধরেই বলে,

—“বস! গন্ডগোল হয়ে গেছে। এখানে কিভাবে যেনো পুলিশ এসে গেছে।”

ওপাশের ব্যক্তি শক্ত কন্ঠে বলে,

—“হোয়াট! পুলিশ কিভাবে জানলো আমাদের কথা?”

—“জানি না বস! তবে লা*শ*টা ফেলার সময় যে মেয়েটা আমাদের দেখেছিলো সেই মেয়েটা বাগানে একটা পুলিশ অফিসারের সাথে কথা বলছে। আমার মনে হয় মেয়েটাই পুলিশকে নিয়ে এসেছে।”

ওপাশ থেকে কিছু ভাঙার আওয়াজ শোনা যায়। হিংস্র কন্ঠে অপর পাশের ব্যক্তি বলে,

—“পথের কাটা পথে ফেলে রাখতে নেই। এতে নিজের ক্ষতি হয়। মেয়েটাকে তুলে নিয়ে আয়। আমার রাস্তায় কাটা হয়ে আসার সখ ওকে খুব ভালো করে বুঝিয়ে দেবো।”

চলবে?