তারে আমি চোখে দেখিনি পর্ব-০৫

0
93

#তারে_আমি_চোখে_দেখিনি
#পর্বঃ০৫
#লেখিকা_সাম্মী_ইয়াসমিন

প্রাপ্তির দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে অর্পন। মনের সন্দেহ যেনো যাচ্ছেই না, বরং সময়ের ব্যবধানে আরো বেশি করে মনে জেঁকে বসেছে। এরই মাঝে হঠাৎ অর্পনের মনে হয় কেউ ওদের অনুসরণ করছে। দূর থেকে কেউ ওদের দিকে নজর রাখছে। সন্দিহান চোখে একবার চারিদিকে নজর বুলায় অর্পন। কিন্তু কাউকে তেমন চোখে পড়ছে না। জায়গাটা আপাতত ফাঁকা। এখন সবার ক্লাস চলছে তাই হয়তো। চারিদিকে একবার নজর বুলিয়ে প্রাপ্তির দিকে তাকায় অর্পন। কন্ঠে সন্দেহ নিয়ে প্রশ্ন করে,

—“আপনি তো চোখে দেখতে পান না। তাহলে এখানে আসলেন কিভাবে? তাও একা?”

ভ্রু কুঁচকে যায় প্রাপ্তির। অর্পনের এতো এতো প্রশ্ন প্রাপ্তির কাছে ঠিক ভালো লাগছে না। ভ্রু কুঁচকে রেখেই জবাব দেয়,

—“আপনি কি আমাকে সন্দেহ করছেন?”

—“করতেই পারি। পুলিশের কাজই সবাইকে সন্দেহ করা। হোক সে আপন বা পর।”

—“তো আপনার মনে হয় আমি কোনো অপরাধ করেছি?”

—“হতেও পারে। কারণ ইভা নামের মেয়েটার মা*র্ডা*র কেসের সাথে আপনি প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ দুই ভাবেই জড়িত। তাহলে আপনাকে সন্দেহ করাটা স্বাভাবিক নয় কি?”

—“দেখুন অফিসার! একটা অন্ধ মেয়ের পক্ষে কাউকে খু*ন করা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়।”

—“কিন্তু তাদের সাহায্য করা তো সম্ভব।”

স্তব্ধ হয়ে যায় প্রাপ্তি। পুলিশেরা যখন জেরা করে তখন একটা বিষয়ের নাড়ি নক্ষত্র বের করে ফেলে। সেটা প্রাপ্তি খুব ভালো করেই জানে। এজন্য পুলিশ কেস থেকে সবসময় নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু না চাইতেই এই কেসটার সাথে যে এতো বাজে ভাবে জড়িয়ে যাবে সেটা প্রাপ্তি কল্পনাও করেনি। এখন এই বিষয়টা নিয়ে যে ঠিক কতটা হেনস্তা হতে হবে সেটা ভাবতেই প্রাপ্তির ধৈর্যের সব বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। একটা ছোট্ট দম নিয়ে প্রাপ্তি বলতে শুরু করে,

—“দেখুন অফিসার! আপনাকে আমি কিভাবে বোঝাবো সেটা বুঝতে পারছি না, কিন্তু এই কেসের সাথে আমার কোনো কানেকশন নেই। না আমি অপরাধীদের চিনি, আর না ইভা নামের সেই মেয়েটাকে। আর নদীর পাড়ের ঘটনাটা সম্পূর্ণ কাকতালীয়। এতে আমার কোনো হাত নেই। আমি তো এমনিতেই মাঝে মাঝে সেখানে গিয়ে বসে থাকি। আর রইলো আমার একা এই বাগানে আসার কথা। তাহলে শুনুন, আমার চোখের দৃষ্টি শক্তি হারানোর পর আমার পরিবার আমাকে কখনো দূর্বল হতে দেয়নি। তারা আমাকে একা চলতে শিখিয়েছে। কদম গুনে আমি চেনা সব জায়গায় একা যেতে পারি। আর বিগত কয়েক বছর আমি এভাবেই কদম গুনে চলাফেরা করে আমার আশপাশ নিজের আয়ত্ত করে ফেলেছি। আমাকে সন্দেহ করা বন্ধ করুন। আর প্লিজ, আমাকে ফলো করা বাদ দিন। আমি কোনো পুলিশ কেসে জড়াতে চাই না।”

অর্পন নির্বিকার ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছে। নজর তার প্রাপ্তির পুরো মুখে বিচরণ করছে। প্রাপ্তির ঠোঁটের নিচে বাম পাশে একটা ছোট্ট তিল আছে। তিলটা চোখে পড়তেই সেখানে নজর আটকে যায় অর্পনের। মেয়েটার মধ্যে কিছু তো আছে যা শক্ত ব্যক্তিত্বের অর্পনকে এলোমেলো করে দেয়। সামনে আসলেই অর্পন সব কথা গুলিয়ে ফেলে।

অর্পনকে চুপ থাকতে দেখে প্রাপ্তি পেছনে ঘুরে সামনের দিকে হাটা দেয়। কদম গুনে গুনে সামনে এগিয়ে যেতে থাকে। পেছনে দাড়িয়ে অর্পন দেখে যাচ্ছে প্রাপ্তির কদম গুনে চলা। চোখে না দেখেও কেউ এতটা কনফিডেন্সের সাথে কিভাবে চলতে পারে? তাও একা। আশ্চর্য হয়ে যায় অর্পন। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বিড়বিড় করে বলে,

—“আপনি চান বা না চান মিস প্রাপ্তি, কিন্তু জড়িয়ে তো আপনি পড়েছেন। এই কেসের সাথে না হলেও অন্য কিছুর সাথে।”

প্রাপ্তি যাওয়ার পর থেকে প্রায় ঘন্টা পার হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ড্রা*গ*স নিয়ে যাদের আসার কথা তারা এখনো আসেনি। কিন্তু খবর অনুযায়ী তাদের দশটায় এখানে আসার কথা ছিলো। কনস্টেবলদের বিভিন্ন জায়গায় কাজে লাগিয়ে দিয়েছে অর্পন। তারাও এখনো অপরাধীদের কোনো হদিস পায় নি। বাগানের চিকন রাস্তায় অর্পন অনবরত পায়চারি করছে আর এসব ভেবে চলেছে। কোনো ভাবে কি তারা অর্পনদের আসার খবর জানতে পেরেছে? কিন্তু কিভাবে জানলো? এখানে যে পুলিশ আসবে সে খবর তো কেউ জানে না। অর্পন তো ইউনিফর্মও পড়ে আসেনি যে তারা পোশাক দেখে বুঝবে। তাহলে কে দিলো তাদের এই খবরটা? কোনো ভাবে প্রাপ্তি নয় তো?

প্রাপ্তির নাম মনে পড়তেই মস্তিষ্ক জ্বলে ওঠে অর্পনের। প্রাপ্তি কি কোনো ভাবে অর্পনকে ধোঁকা দিচ্ছে? তাছাড়া ক্লাস চলাকালীন সময়ে সে এই বাগানে কেনো এসেছিলো? এখানে তার কি কাজ থাকতে পারে? হাজারো প্রশ্নের ভীড়ে দিশেহারা হয়ে গেছে অর্পন। ঘুরেফিরে সন্দেহের তীর ঘুরে যাচ্ছে প্রাপ্তির দিকে। কিন্তু প্রাপ্তি কোনো অপরাধী সেটা মন মানতে চাইছে না।

পকেট থেকে ফোনটা বের করে রহিমের নাম্বারে ডায়াল করে অর্পন। রিসিভ হতেই বলে,

—“বাগান সাইডে চলে আসুন। এখানে ভালো করে নজর রাখুন। আমার অন্য একটা কাজ আছে, সেখানে যাচ্ছি।”

একদমে কথাগুলো বলে ফোন কেটে পকেটে রাখে অর্পন। সানগ্লাসটা চোখে পড়তে পড়তে চলে যায় ভার্সিটির গেটের দিকে।

রাস্তার অপর পাশে চায়ের দোকান থেকে এক কাপ চা নেয় অর্পন। রাস্তার উল্টো দিকে দাড়িয়ে চা খেতে খেতে গেইটের দিকে নজর রাখে। ভার্সিটিতে কে কে ঢুকছে আর কে কে বের হচ্ছে সেটাই নিজের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষন করে চলেছে অর্পন। এরই মাঝে অর্পনের নজরে আসে প্রাপ্তি। সে ধীর পায়ে কদম গুনে গুনে রাস্তার দিকে এগিয়ে আসছে। সাথে একটা মেয়ে আছে অবশ্য। হয়তো ক্লাস ফ্রেন্ড হবে। প্রাপ্তিকে দেখে চোখের সানগ্লাস খুলে ফেলে অর্পন। বিড়বিড় করে বলে,

—“এই মেয়ের নিজেকে বিপদে ফেলা কোনো সখ নাকি? ধুলোবালির মতো চারিদিকে গড়াগড়ি খায়। চোখে দেখতে পায় না তবুও পুরো পৃথিবী ঘুরে বেড়ায়। আর বলে সে নাকি কোনো পুলিশ কেসে জড়াতে চায় না। এভাবে গুটি গুটি পায়ে নিষিদ্ধ জায়গায় বারে বারে গেলে সন্দেহ তো ওকেই করবো তাই না। আশ্চর্য!”

চায়ের কাপটা পাশে রেখে রাস্তা ক্রস করে ওপাশে যায় অর্পন। ভ্রু কুঁচকে আশপাশে একবার নজর বুলিয়ে নেয়। সুপ্তি সবসময় ওর সাথেই থাকে কিন্তু আজ সুপ্তি নেই। প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে আসতে থাকে অর্পন। প্রাপ্তির কাছাকাছি আসতেই হঠাৎ কোথা থেকে যেনো ঝড়ের গতিতে একটা প্রাইভেট কার চলে আসে। প্রাপ্তির কাছাকাছি আসতেই দড়জা খুলে প্রাপ্তির হাত ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে ভেতরে নেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু প্রাপ্তির ছোটাছুটির জন্য পুরোপুরি ভেতরে নিতে পারে না।

চোখের পলকে কি ঘটে গেলো কেউ সেটা বুঝতেই পারছে না। ঘটনাটা বুঝে আসতেই প্যান্টের পকেট থেকে নিজের রি*ভা*ল*বা*র টা বের করে অর্পন। ফাঁকা গু*লি চালিয়ে হিংস্র কন্ঠে গর্জে উঠে গাড়ি থামাতে বলে। কিন্তু গাড়ি থামার বদলে স্পিড আরো বেড়ে যায়। রি*ভা*ল*বা*র টা হাতে নিয়ে গাড়ির পেছনে ছুটতে থাকে অর্পন। কিন্তু গাড়িটা ততোক্ষণে অনেকটা দূরে চলে গেছে। চলন্ত গাড়ির সাথে দৌড়ানো মানে শুধু নিজের এনার্জি শেষ করা। তাই ছোটা বন্ধ করে দাড়িয়ে পড়ে অর্পন। দক্ষ হাতে নিশানা লাগায় গাড়িটার চাকায়। ট্রিগার চাপতেই বিকট আওয়াজে চাকা ব্লা স্ট হয়ে গাড়ির গতি কমে যায়।

ততোক্ষণে অর্পন দৌড়ে গাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছে। বিপদে পড়ে গেছে বুঝতে পেরে প্রাপ্তিকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যায় লোকগুলো।

ধাক্কা খেয়ে হুড়মুড়িয়ে রাস্তায় পড়ে যায় প্রাপ্তি।চলন্ত গাড়ি থেকে পাকা রাস্তায় পড়তেই হাতে পায়ে বেশ কয়েক জায়গায় আঘাত লাগে প্রাপ্তির। ব্যথায় আর্তনাদ করে ওঠে। প্রাপ্তির আর্তনাদ শুনে গাড়ির দিকে ছোটা থামিয়ে দেয় অর্পন। দৌড়ে চলে আসে প্রাপ্তির কাছে। হাঁটু মুড়ে বসে ব্যাস্ত কন্ঠে বলে,

—“মিস প্রাপ্তি! আপনি ঠিক আছেন?”

কথার মাঝেই খেয়াল করে হাতের কনুই থেকে রক্ত পড়ছে প্রাপ্তির। হাটুর দিকের জিন্সও রক্তে ভিজে গেছে। তাই আর কোনো কথা না বলে সোজা প্রাপ্তিকে কোলে তুলে নেয়। উঠে দাঁড়াতেই খেয়াল করে প্রাপ্তি হাত পা ছেড়ে দিয়েছে। শক্ত হয়ে দাড়িয়ে পড়ে অর্পন। প্রাপ্তির মুখের দিকে তাকাতেই দেখে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। চোখ খিঁচে বন্ধ করে, “ওহ্ শিট” বলেই রাস্তায় এগিয়ে এসে একটা রিকশা থামায়।

গুলির আওয়াজ শুনে রহিম সহ বাকি কনস্টেবলরা দৌড়ে চলে এসেছে। অর্পনের কোলে প্রাপ্তিকে দেখে রহিম অবাক হয়ে বলে,

—“স্যার! কি হয়েছে মেয়েটার? জ্ঞান হারালো কিভাবে?”

—“এখন কিছু বলার সময় নেই রহিম সাহেব। আপনি এদিকটা সামলান, আমি ওনাকে হসপিটাল নিয়ে যাচ্ছি। ওনার ছোট বোন এই ভার্সিটিতেই পড়ে, এখন ক্লাসে আছে হয়তো। তাকে সিটি হসপিটালে আসতে বলবেন।”

কথাটা বলেই রিকশায় উঠে পড়ে অর্পন। সাথে সাথে রিকশা চলতে শুরু করে। কনস্টেবল রহিম দৌড়ে চলে যায় ভার্সিটির ভেতরে সুপ্তির খোঁজে।

অর্পন রিকশার একপাশে বসে নিজের পাশে বসিয়েছে প্রাপ্তিকে। মাথাটা অর্পনের বুকে। হঠাৎ অর্পন খেয়াল করে তার হৃৎস্পন্দনের গতি বেড়ে গেছে। বুকের ভেতর ধুকপুক ধুকপুক করছে। আশপাশের সবাই হয়তো শুনতে পাচ্ছে সেই আওয়াজ। কিন্তু হঠাৎ এতো জোরে শব্দ কেনো হচ্ছে? হৃদপিণ্ড আজ স্বাভাবিকের তুলনায় এতো বেশি জোরে জোরে বিট করছে কেনো? বুকে প্রাপ্তি আছে তাই। এসব কি অর্পনের বুকে প্রাপ্তির অবস্থানের জন্য হচ্ছে? একবার ঘাড় ঝুঁকিয়ে প্রাপ্তির মুখের দিকে তাকায় অর্পন। জ্ঞান হারিয়ে পুরো শরীর অর্পনের ওপর ছেড়ে দিয়েছে মেয়েটা। চোখ সরিয়ে নেয় অর্পন। বড় বড় কয়েকটা শ্বাস নিয়ে রিকশা চালকের উদ্দেশ্যে বলে,

—“একটু তাড়াতাড়ি চলুন প্লিজ। ইমার্জেন্সি কেস।”

রিকশা চালক মুখে কিছু না বলে গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেয়। এদিকে অর্পনের সময় যেনো যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে রাস্তা হয়তো বেড়ে গেছে না হলে সময় একটা জায়গাতেই থেমে আছে। বিড়বিড় করে বলে,

—“উফ… গাড়িটা কেনো আনলাম না। তাড়াতাড়ি হসপিটাল পৌঁছানো বিশেষ দরকার।”

_________________

হসপিটালের করিডোরে পায়চারি করছে অর্পন। কেনো যেনো মনের মধ্যে কিছুতেই শান্তি পাচ্ছে না। প্রাপ্তিকে বুকে আগলে নেয়ার পর থেকে সেই যে ধুকপুক ধুকপুক আওয়াজ করতে শুরু করেছে সেটা এখনও থামছে না। অশান্ত গতিতে পায়চারি করতে থাকে অর্পন।

এদিকে কনস্টেবল রহিমের থেকে প্রাপ্তির খবর শোনার পর ছুটে চলে এসেছে সুপ্তি। এটুকু সময়েই কেঁদে কেটে মুখের বেহাল দশা বানিয়ে ফেলেছে মেয়েটা। হসপিটালে পা রাখতেই চলার গতি বাড়িয়ে দেয় সুপ্তি। দৌড়ে আসার সময় হঠাৎ সামনে কাউকে দ্রুত গতিতে আসতে দেখে হকচকিয়ে যায় । কিন্তু পায়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ করতে না পরে ধাক্কা লেগে যায় দুজনের। ফলাফল, টাইলসের মেঝেতে স্লিপ করে দু’জনেই পড়ে যায়। অঙ্কনের হাত থেকে ফাইলটাও পড়ে গেছে। ঘুরে ফাইনালটা হাতে নিয়ে সামনে তাকাতেই দেখে একটা মেয়ে হাতড়ে কিছু একটা খুঁজছে। চুলের জন্য মুখ দেখা যাচ্ছে না।

সুপ্তি নিজের চশমাটা খুজে চোখে পড়ে সামনে তাকাতেই দেখে অঙ্কন ওর সাথে পড়ে আছে। অঙ্কনকে দেখেই চোখ বড় বড় হয়ে যায় সুপ্তির। শেষে কি না আবার এই গরুটার সাথে ধাক্কা খেতে হলো। জগতে কি আর কোনো মানুষ ছিলো না? গরুর বদলে কোনো ছাগল হলেও তো পারতো!

এদিকে সুপ্তিকে দেখে এবার অঙ্কনের রাগ যেনো সপ্তম আসমানে উঠে গেছে। চেহারায় রাগী ভাব এনে দাঁতে দাঁত চেপে অঙ্কন বলে,

—“ইউ চাশমিশ! আমার আগেই বোঝা উচিত ছিলো, এমন বেআক্কেলের মতো কাজ তুমি ছাড়া আর কেউ করতে পারে না।”

কথাটা বলতে বলতে উঠে দাঁড়ায় অঙ্কন। সাথে উঠে দাঁড়ায় সুপ্তিও। উঠে দাড়িয়ে অঙ্কনের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলে,

—“আমারও বোঝা উচিত ছিলো, আমার আশেপাশে একটাই গরু আছে। যে যখন তখন যেখানে সেখানে ঠুকরে দেয় আমাকে। আমার পেছন পেছন এখানেও চলে এসেছেন। এই, আপনি কি আমাকে ফলো করছেন?”

ভ্রু কুঁচকে যায় অঙ্কনের। কন্ঠে বিরক্তি নিয়ে বলে,

—“নিজেকে কি কোনো দেশের প্রেসিডেন্ট ভাবো? নাকি নিজেকে মহারানী ভিক্টোরিয়া মনে করো, যে তোমাকে আমি ফলো করতে যাবো। আমার অতো বেহুদা সময় নেই।”

—“আচ্ছা…… আমার পিছু যদি নাই নেন তাহলে আপনি এখানে কি করছেন?”

—“চশমার পাওয়ার কমে গেছে নাকি? এপ্রোণ পড়ে হসপিটালে নিশ্চয়ই কেউ এমনি এমনি আসে না। আমি এখানকার ইনটার্ন ডক্টর। আর আমি এখানে নিজের কাজ করছি। এখন এটা বলো, তুমি এখানে কি করছো? এক মিনিট, তুমি আবার আমাকে ফলো করছো না তো? মতলব কি তোমার?”

চলবে?