তারে ভালোবাসি বলে পর্ব-১৪+১৫

0
365

#তারে_ভালোবাসি_বলে
#পর্বঃ১৪
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
অয়ন অনেকটা কষ্ট করে বসতেই নার্স অয়নকে বলল

— স্যার আপনার কি কিছু চাই?

অয়ন কথা বলার চেষ্টা করছে তবে কথা বলতে পারছে না। কষ্ট হচ্ছে ভিশন। অয়ন অনেকটা কষ্ট করে থেমে থেমে বলল

— আমাকে এখানে কে নিয়ে এসেছে বলতে পারেন? আমার সাথে একটা মেয়ে ছিলো। ও কোথায়?

নার্স অয়নের কথার জবাবে বলে

— জ্বি স্যার আপনি ম্যাডামের কথা বলছেন! ম্যাডাম একটু বাহিরে গিয়েছে। আমি কি তাকে ডেকে দিবো?

অয়ন নার্সের উদ্দেশ্য হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। নার্স দৌড়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। অয়ন নিজের চেষ্টায় বিছানার উপর দিকে হেল দিয়ে বসে। চোখ জোড়া রক্ত বর্ণ। কপালে ব্যান্ডেজ। ঠোঁট জোড়া শুকিয়ে গেছে তার। উজ্জ্বল বর্ণের চেহারাটা আজ ফ্যাকাসে। বেঁচে আছে এটাই অনেক।

অয়ন ঠিক করে বসা মাত্রই কোথা থেকে যেনো কেবিনে দৌড়ে অনু চলে আসে। অনু অয়নকে বসে থাকতে দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। নার্সের থেকে অয়নের সুস্থতার কথা শুনে অনু ছুটে চলে আসে অয়নের কাছে। অনু হাঁপাতে হাঁপাতে অয়নকে বলল

— তুমি ঠিক হয়ে গেছো?

অয়ন অনুকে দেখে খুশি হয় ঠিক তবে অতটাও না। অয়নের চোখ জোড়া দেখে স্পষ্ট যে এই চোখ জোড়া এখন তার প্রিয় মুখটি দেখার জন্য ব্যাকূল হয়ে আছে। অয়ন অনুর পানে দৃষ্টিপাত করে মৃদু হেসে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে। অনু একটু থেমে আবারও বলতে শুরু করে

— জানো অয়ন আমরা কতটা চিন্তার মধ্যে ছিলাম! বিধাতার কাছে তোমার সুস্থতার জন্য ফরিয়াদ ছাড়া আর কিছুই করার ছিলো না আমাদের। তোমার বাবা মা তো তোমার জন্য পাগল প্রায় হয়ে যাচ্ছিল। ওনাদের যে কি করে সামলেছি আমি তা শুধু আমি জানি। তুমি সুস্থ আছো এটা তারা শুনে যে কতটা খুশি হবে তা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না।

অনুর কথার মাঝে নার্স কেবিনে প্রবেশ করলো। অয়ন অনুর দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নার্সের দিকে দৃষ্টিপাত করে অনেকটা কষ্ট করে থেমে থেমে বলল

— আপনি কি ম্যাডামকে বলেছেন আমি তাকে দেখতে চাই?

নার্স অনুনয়ের কন্ঠে বলল

— জ্বি স্যার, বলেছি।

অয়ন একটু বিষন্ন দৃষ্টিতে বলল

— যদি বলে থাকেন তবে সে আসলো না কেনো? কোথায় ও?

অয়নের কথাটা শুনে অনু ভিশন অবাক হলো। কোন ম্যাডামের কথা বলছে অয়ন? আমি তো ওর সুস্থতার কথা শুনে দৌড়ে চলে এলাম। আর কাকে খুঁজছে অয়ন?

অয়নের কথার জবাবে নার্স উত্তর দিলো

— স্যার ম্যাম তো আপনার পাশেই বসে আছে।

অয়ন নার্সের কথায় চরম বিরক্তি প্রকাশ করে বলল

— আমি অনুর কথা বলছি না। ঈশা ম্যাডামকে ডেকে দিন। ঈশাকে বলুন অয়ন দেখা করতে চায় তার সাথে। এখন মানে এখনি।

অয়নের কথার প্রতিউত্তরে নার্স কিছু বলার আগেই অনু অয়নের দিকে তাকিয়ে বলল

— ঈশা এখানে নেই অয়ন। ও তোমাকে ছেড়ে অন্য কারো সাথে চলে গেছে।

অনুর কথা শুনে অয়নের মাথার উপরে যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। অয়ন অপ্রস্তুত হয়ে বলল

— মানে? কি সব বলছো কি তুমি? ঈশা কন্য কারো সাথে মানে?

— হ্যাঁ, আমি সত্যি বলছি। তুমি জানো এই এক্সিডেন্ট কে করিয়েছে বা কেনো করিয়েছে? শুনলে অবাক হয়ে যাবে তুমি। এই সব নিয়ে পরে আমারা কথা বলবো। আগে তুমি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠো।

— না আমি এখন শুনতে চাই। অনু প্লিজ আমাকে বলো সবটা।

অনু একটু থেমে অয়নের কাছে থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করলো

— ঈশা তোমাকে খুন করতে এই এক্সিডেন্ট করিয়েছে। ওর সাথে দিব্বর সম্পর্ক আছে। ঈশা চাইতো তোমার উপর প্রতিশোধ নিতে। তুমি ওকে যা যা অপমান করেছো তার জবাবে ঈশা এটা করেছে। তোমাকে মৃত্যুর মুখে ফেলে ঈশা দিব্বর হাত ধরে নিজের সুখ খুঁজে নিয়েছে। ঈশা একটা দু মুখো সাপ। মানুষ চিনতে তুমি ভূল করেছো অয়ন। ঈশা সময় ও সুযোগ বুঝে তোমাকে ছোবল মেরেছে।

অনুর কথা গুলো সরাসরি অয়নের বুকে গিয়ে বিধলো। চোখ বেয়ে না চাইতেও জল গড়িয়ে পড়লো। অয়ন একটু রহস্য জনক হাসলো। অতঃপর অনুকে উদ্দেশ্য করে বলল

— তাই না? প্রথমত তোমার কথা আমি বিশ্বাস করতে পারলাম না। আর ২য়ত আমি নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে ভূল মানুষকে আপন করি নি। ঈশা যদি একটি বার বলতো আমার জীবনটা ও চায়। বিশ্বাস করো আমি হাসি মুখে মৃত্যু বরন করতাম। ওর এই এক্সিডেন্টের নাটক করার কোনো প্রয়োজন নেই। তবুও যদি তোমার কথা সত্যি হয়। তবে আমি ওকে নিজের করে না পেলে অন্য কারোর হতে দিবো না। এর জন্য আমাকে যদি দিব্বকে মেরে ফেলতে হয় তবে আমি তাই করবো।

অয়ন কথাটা বলেই বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো। অনু অয়নের হাত জোড়া শক্ত করে ধরে ফেললো

— কোথায় যাচ্ছো তুমি? তুমি এখনও সুস্থ না। প্লিজ অয়ন এখন যেনো না। আগে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে নাও। তারপর না হয় যেও।

— আমি ঠিক আছি। হাত ছাড়ো আমার।

— না ছাড়বো না। অয়ন তুমি এভাবে যেতে পারো না।

— ছাড়ো!

অয়ন এক ঝটকায় সরিয়ে দিলো অনুকে। অনুর থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কেবিন থেকে হনহন করে বেরিয়ে যায় অয়ন। অয়ন হাসপাতালের সামনে নিজের গাড়িটা দেখে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। গাড়ির সামনে যেতেই অয়ন দেখতে পায় গাড়িতে ড্রাইভার বসে আছে। অয়ন ড্রাইভারকে নির্দেশ দিলো গাড়ি থেকে নেমে যেতে। ড্রাইভার গাড়ি থেকে নামতেই অয়ন গাড়িতে উঠে বসলো। গাড়ি স্টার্ট করে বেরিয়ে যায় সে হাসপাতাল থেকে। স্টেয়ারিং ধরে নিজে ড্রাইভ করছে বিধায় অয়নের বুকের বাম পাশ থেকে চুইয়ে চুইয়ে ব্লাড বেরিয়ে পরছে। অয়ন তা উপলব্ধি করতে পারলো। কিন্তু তাকে যেতেই হবে ঈশার কাছে। সেটা যে কোনো মূল্যেই হোক না কেনো। শরীরের আঘাতের থেকেও অয়নের বুকের আঘাতটা বেশি যন্ত্রণা দায়ক।

* অয়ন অনেকটা কষ্ট করে গাড়ি ড্রাইভ করে ঈশার বাড়ির সামনে এসে পৌঁছায়। গাড়ি থেকে নেমে অয়ন ঈশার বাসায় চলে আসে। অয়নকে এই অবস্থায় দেখে ঈশার বাবা মা বিচলিত হয়ে পরে। অয়নকে উদ্দেশ্য করে বিচলিত কন্ঠে ঈশার বাবা বলল

— অয়ন তুমি এই অবস্থায় এখানে কেনো এসেছো?

অয়ন একটু বাঁকা হেঁসে জবাব দিলো

— ভয় নেই আংকেল আমি ঠিক আছি। ঈশাকে একটু ডেকে দিন প্লিজ!

ঈশার কথা অয়নের মুখে শুনে ভিশন রাগ হলো ঈশার বাবার। ঈশার বাবা রাগি কন্ঠে বলল

— এতোটা নির্লজ্জ তুমি! ঈশাকে কেনো চাই? আর কত কষ্ট দিবে মেয়েটাকে? এখন কি তুমি অপমান করে এসেছো? তোমার পরিবার কি কম ছিলো নাকি? আমাদের একটা আত্নসম্মান আছে। বেরিয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে। আর কখনও আসবে না তুমি।

— আংকেল প্লিজ আমার পরিবার কি করেছে তা আমি জানি না। তবে দয়া করে আমাকে ঈশার সাথে একটি বারের জন্য হলেও দেখা করতে দিন। প্লিজ!

— না তা হবে না। মেয়েটা আমার একটা জিবন্ত লাশের পরিনত হয়েছে। আমি চাই না তোমাকে দেখে ও আবার কষ্ট পাক। তোমার অবস্থা মোটেও সুখকর নয়। চলে যাও বাবা তুমি। আমার মেয়েটাকে একটু একা থাকতে দাও।

* অয়ন আর কিছু বললো না। আসলে কি বলবে সে? সত্যিই তো ঈশা আমার জন্য বার বার কষ্টের সমূক্ষীন হয়েছে। অয়ন একটু থেমে হনহন করে ঈশার রুমের দিকে চলে যায়। ঈশার বাবা মা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল অয়নের দিকে। অয়ন ঈশার রুমের সামনে আসতেই দেখতে পেলো ঈশা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ বেয়ে পরছে অজস্র নোনা জল। অয়ন ঈশার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি ঠোঁটে এনে বলল

— তুমিও কি তারিয়ে দিবে আমায়?

ঈশার বাকরুদ্ধ। কোনো জবাব তার মুখে নেই। আজ ঈশার কথা গুলো চোখের জল হয়ে জবাব দিচ্ছে অয়নের প্রতিটা প্রশ্নের। অয়ন ঈশার চোখের দিকে তাকিয়ে অনুভব করছে ঈশার অতিবাহিত করা এই দিন গুলো কতটা কষ্টের ছিলো। ঈশা অয়নের দিকে এগিয়ে আসছে। অয়ন চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। ঈশা অয়নের কাছে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অয়নকে। চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে ঈশা। মনের ভিতর যত কষ্ট, অভিমান, অভিযোগ, রয়েছে তার। আজ সব প্রকাশ করে মনটা হালকা করতে হবে তাকে। ঈশার কাঁদতে কাঁদতে বলছে অয়নকে

— কেনো আসছো তুমি? সবাই বলে আমি নাকি তোমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছি। আমি নাকি রাস্তার মেয়ে। প্রতিশোধ নিতে আমি তোমাকে… চলে যাও আমি সব কিছু মেনে নিয়েছি। আর কখনও আসবে না তুমি। চলে যাও অয়ন প্লিজ!

ঈশা কথা গুলো বলছে আর কাঁদছে। অয়ন আলতো করে ঈশার কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো। ঈশা এখনও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। ঈশাকে দেখে বোঝাই যাচ্ছে অয়নকে আর হারাতে চায় না সে। সারা জীবন এভাবে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায় ঈশা। অয়ন ঈশাকে শান্ত করে বলে

— হয়েছে তো। আর কাঁদতে হবে না। শার্ট ভিজে গেছে আমার।

— হুমমম

— উফফফফ লাগছে বুকে এখন তো ছাড়ো। পরে না হয় আবার জরিয়ে ধরো।

* অয়নের কথাতে ঈশা ভিশন লজ্জা পেয়ে গেলো। ঈশা অয়নকে ছেড়ে দিতেই ইশারা চোখে পরলো অয়নের বুক থেকে রক্ত বের হচ্ছে। ঈশা প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল

— এই রক্ত বের হচ্ছে তোমার বুক থেকে। তুমি এখানে কিভাবে এসেছো?

— বিচলিত হতে হবে না তোমায়। এটাতো সামান্য একটা ক্ষত। বুকের মধ্যে আরও অনেক বড় ক্ষত হয়ে আছে। সেটার রক্তক্ষরণ কি তোমার চোখে পরে না?

— অয়ন ফাজলামো করো‌ না। হসপিটালে চলো এখনি।

— উহু যাবো না। আগে আমার সাথে তোমার মেতে হবে।

— কোথায় যাবো আমি?

— আমার বাড়িতে।

— সম্ভব না অয়ন। এতো অপমানের পরে আমি ওবাড়িতে মেতে পারবো না।

— আমার জন্য ও না।

— না। আমি ভালোবাসি তোমায় কিন্তু তোমার সাথে থাকতে চাই না।

— মানে? কি বলছো তুমি?

— সত্যি বলছি অয়ন। আমাদের ভাগ্যে পূর্ণতা নেই। আছে শুধু যন্ত্রণা। আমি চাই না আমার জন্য তোমার ক্ষতি হোক। তুমি আমার থেকে দূরে থাকলে ভালো থাকবে। আর আমি এটাই চাই।

— কি করে ভাবতে পারলে আমি তোমার থেকে দূরে থাকলে ভালো থাকবো? কি হয়েছে? কি জন্য আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছো তুমি? বলো

* ঈশা অয়নকে সেই ফোন কলের কথা বলল। অয়ন ঈশার কথা শুনে অবাক হয়েছে ঠিক তবে তাছিল্য কর হাসি দিয়ে সে ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— ২০২১ সালেও একটা ফোন কলের উপর ভরসা করে নিজের ভালোবাসার বিসর্জন দিচ্ছো তুমি! সত্যি অবাক করার কথা।

— সামান্য কল না। এটাই সত্যি। অয়ন আমি চাই না তোমার কিছু হোক। প্লিজ তুমি চলে যাও। প্লিজ

— সরি। আমি একা যেতে আসিনি। আমার সাথে তুমিও যাবে। জোড় করে নিতে পারবো না আমি। সো প্লিজ নিজে থেকে চলো।

— অয়ন

ঈশাকে থামিয়ে দিয়ে অয়ন চিৎকার করে বলল

— যদি এখনও আমার সাথে না তাও তবে সত্যি বলছি আমার আর কোনো খবর তুমি পাবে না। এখান থেকে যাবার পর আমার মৃতদেহ ছাড়া আর কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। এবার তোমার ইচ্ছে।

— অয়ন এসব কি….

— শাট আপ। আমি চলে যাচ্ছি। লাশ দেখতে চাইলে চলে এসো।

* অয়ন ঈশার সামনে থেকে চলে আসতে লাগলো। ঈশা ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে অয়নের দিকে। পিছন থেকে ঈশা অভিমানী সূরে বলতে লাগলো

— ওই মিস্টার এতো রাগ কেনো? আসছি তো আমি। যা হবার এক সাথে দেখে নিবো।

অয়ন পিছন ফিরে মুচকি হেসে বলল

— চলুন তা হলে। আপনি পরে দেখবেন আমি আগে দেখবো।

✒️ ঈশা অয়নের হাত ধরে নিজের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। অয়ন ঈশাকে নিয়ে চলে আসে অয়নের বাড়িতে। অয়ন বাড়িতে আসতেই ভিশন চমকে যায়। অয়নের বাবা মা আর অনু অয়ন আর ঈশাকে এক সাথে দেখে ………………

#চলবে…………………..

#তারে_ভালোবাসি_বলে
#পর্বঃ১৫
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
অয়নের বাবা মা আর অনু। অয়ন আর ঈশাকে এক সাথে দেখে ভিশন অবাক হয়ে গেলো। অনু যে ঈশাকে দেখে বেশ বিরক্ত তা তার চেহারায় স্পষ্ট। অয়নের বাবা অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল

— অয়ন এসব কি? তুই হাসপাতাল থেকে এভাবে চলে আসলি কেনো?

অয়ন ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল

— যদি ওভাবে না‌ যেতাম তবে কেউ একজন আমার জন্য ছটপট করতে করতে পাগল হয়ে যেতো। তাই চলে গেছি।

অয়নের মিষ্টি সুর কারো মন গলাতে পারলো না। অয়নের বাবা একটু থেমে বলল

— এসবকে পাগলামি বলে অয়ন। তুই নিজের কথা একটি বার চিন্তা করলি না? তোর যদি কিছু হয়ে যেতো! তখন আমাদের কি অবস্থা হতো? তুই অন্য দের কথা ভাবিস ঠিক তবে আমাদের কথা না।

অয়নের ভিশন অৎভূত লাগলো তার বাবার বলা কথাটা। অন্য কেউ মানে? বাবা অন্য কাউকে বোঝাতে কাকে মেন করছে? ঈশা অয়নের বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। অয়ন তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— অন্য কেউ বলতে তুমি কাকে বোঝাতে চাচ্ছো বাবা? ঈশা অন্য কেউ নয়। ঈশা

অয়নকে বাকি কথা বলতে দিলো না তার বাবা। উনি হাস্যজ্বল চেহারা নিয়ে বললে

— তুই ঈশাকে দেখতে চাস এটা বললেই তো হতো। আমরা ওকে নিয়ে আসতাম। তুই নিজে কেনো অসুস্থ হয়ে ওদের বাড়ি গিয়েছিস? তোর যদি কিছু হয়ে যেতো তখন? আমাদের তোকে নিয়ে ভিশন চিন্তা হয়।

অয়ন তাচ্ছিল্য কর হাসি দিয়ে বলল

— তাই না বাবা আমি কি দেখতে চাই? কাকে দেখতে চাই? সেটা কি তোমরা জানতে না? আর তোমরা ওর বাড়ি গিয়ে নিয়ে আসতে! যদি তাই হতো না বাবা বিশ্বাস করো কষ্ট করে আমাকে যেতে হতো না। তোমরা থাকার পরেও ঈশাকে ডিপ্রেশনের মধ্যে দিন কাটাতে হয়েছে। ঈশার পরিবারকে অপমান সহ্য করতে হয়েছে। হুমমম তোমরা ছিলে তারপরেও। আমাকে নিয়ে অযথা চিন্তা কেনো করো তোমরা? উহু আর করতে হবে না।

অয়নের কথার বিপরীত জবাবে তার বাবা বেশ কর্কশ গলায় বলল

— তখনকার পরিস্থিতি আমাদের বাধ্য করেছে ঈশাকে অপমান করতে। ঈশা তোর এক্সিডেন্টের জন্য দা….

— ব্যস বাবা হয়েছে। ঈশা আমার এক্সিডেন্টের জন্য দায়ী। এটাই তো বলবে তুমি? তবে শুনো ঐ দিন এক্সিডেন্ট টা কাকতালীয় ছিলো। তার সম্পর্কে না ঈশা অবগত আর না আমি। আর আমি বুঝতে পারছি না তোমরা কার কথায় এতো বড় অভিযোগটা ঈশার উপর চাপিয়ে দিয়েছো?

অয়নের কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনু অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল

— অয়ন যা হয়েছে তা ভূল বোঝাবুঝি মাত্র। তোমার অসুস্থতার আমরা নিজেদের মাথা ঠিক রাখতে পারিনি। তাই ঈশাকে দোষ দিয়েছি। এখন ভূল বোঝাবুঝির অবসান করে সব কিছু সুধরে নিতে হবে।

অনু হাসি মুখে কথাটা বললেও অনুর মনের মধ্যে অন্য কাছু কাজ করছে। পরিস্থিতি অনুর বিপক্ষে চলে গিয়েছিলো। সবাই যদি অয়নের সামনে অনুর নামটা বলে দিতো তবে অয়ন অনুকে এখানে আর থাকতে দিতো না। অনু সেটা চায় না। সেই জন্য হাসি মুখে অয়ন আর ঈশাকে মেনে নিতে হলো তাকে। ঈশা অয়নের হাতটা শক্ত করে ধরে আছে। ঈশা কল্পনাও করতে পারেনি যে অয়ন তার জন্য তার পরিবারের বিরুদ্ধে পর্যন্ত যেতে পারে। অয়ন ঈশার মায়াবী চোখ জোড়ার দিকে তাকিয়ে ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— তো তোমার কোনো সমস্যা নেই তো আমাকে বিয়ে করতে?

ঈশা লজ্জা পেয়ে অয়নের চোখে দিক থেকে নিজের চোখ নামিয়ে নেয়। অয়নের বাবা ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— ঈশা মা আমাদের উপর তোমার কি কোনো অভিযোগ আছে?

ঈশা ছলছল চোখে বললো

— না আংকেল আমার কোনো অভিযোগ নেই। আপনি আমার গুরুজন অবশ্যই যেটা ভালো মনে করছেন আপনি। তাই করেছেন।

— হুম, ওকে তাহলে ঈশার বাবা, মা কে খবরটা দিয়ে দেই! কি‌ বলো অনু?

অনু মুখে কিছু বলল না শুধু হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। অয়ন ঈশাকে নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে। দুজনের একান্তে কিছু কথা আছে। এখন সেই কথা তো আর সবার সামনে বলা যায় না। অয়ন ঈশাকে রুমে নিয়ে এসে দরজাটা বন্ধ করে দিলো। ঈশা তো চমকে যায় অয়নের কান্ড দেখে। ঈশা আমতো আমতো করে অয়নকে বলল

— এএএই, কি করছো এসব? দরজা কেনো বন্ধ করছো?

অয়ন একটু বাঁকা হেঁসে ঈশার প্রশ্নের জবাবে বলল

— তোমার যাতে করে লজ্জা না লাগে তাই দরজা বন্ধ করলাম।

— মানে? এই কোনো প্রকার ফাজলামি করবা না তুমি। আমি কিন্তু আত্নরক্ষা করতে জানি।

— ও বাবা তাই নাকি। দেখাও তো তোমার আত্নরক্ষার টেকনিক।

কথাটা বলতেই অয়ন ঈশার হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে ঈশাকে। অয়ন দুহাতে শক্ত করে চেপে ধরে আছে ঈশার কোমর। দুজনের মাঝে বিন্দুমাত্র দূরত্ব নেই। ঈশা বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে অয়নের চোখ বরাবর। অয়ন মৃদু হেঁসে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে

— আত্নরক্ষে শেষ!

ঈশা চোখ নামিয়ে নিলো। অয়ন একটা হাত দিয়ে ঈশার থুতনি টা স্পর্শ করে উপর দিকে হালকা উঠিয়ে নেয়। ঈশা চোখ বন্ধ করে আছে। অয়নের স্পর্শে ভিশন রকম দূর্বল সে। অয়ন ঈশার ঘন চুলে আলতো করে হাত রেখে ঈশার ঠোঁট জোড়ার দিকে অগ্রসর হয়। অয়নের পদক্ষেপ সর্ম্পকে কিছুটা অবগত ঈশা। ঈশার ঠোঁট জোড়া কাঁপছে। অয়ন বিলম্ব না করে নিজের ঠোঁটের সাথে ঈশার ঠোঁট জোড়া পরম আবেশে এক করে নিলো। কিছু মূহূর্ত ধরে চলল তাদের ভালোবাসার আদান‌ প্রদান। হঠাৎ করেই অয়নকে অবাক করে দিলো ঈশা। ঈশা অয়নের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ধাক্কা মেরে অয়নকে বিছানায় ফেলে দিলো। অয়ন ধপাস করে বিছায় পরে গিয়ে অবাক হয়ে যায়। তবে মনে মনে একটু খুশিও হয়। অয়ন খুশি হয় এই ভেবে যে ঈশা হয়তো তাকে আরো কিছু দিতে চায়। অয়ন অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে ঈশার পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য। ঈশা হাঁপাতে হাঁপাতে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল

— অসভ্য, ফাজিল, ছেলে একটা। এভাবে কেউ কিস করে? আল্লাহ গো আমার জীবন বেরিয়ে যাচ্ছিল প্রায়।

অয়ন মৃদু কন্ঠে বলল

— সরি। আচ্ছা আবার আসো এবার ঠিক ঠাক ভাবে করবো।

ঈশা মুখ বাঁকিয়ে বললো

— হুম, আর তো কাজ নাই আমার। ফাজিল একটা।

ঈশা দৌড়ে চলে যেতে লাগলো রুম থেকে। অয়ন বিছানা থেকে উঠতে দাড়িয়ে ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— এটা কি হলো? ধোঁকা দিলে আমায়?

— জ্বি জনাব দিলাম।

— সময় ও সুযোগ আমারও আসবে।

— দেখা যাবে।

ঈশা রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো। অয়ন আনমনে হেঁসে দিলো। অয়ন মনে মনে ভাবছে এই মেয়ে যে কিস করতে দিয়েছে এটাই আমার ভাগ্য। এর থেকে বেশি কিছু যে দিবে না তা আমি আগেই জানতাম। তবে কি করবো বলুন বোবা মনের ব্যাকূল ইচ্ছে হয় তো তাই আর কি আশা করে বসে ছিলাম। হলো না। অয়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। বাকিটা বিয়ের পর বুঝে নিবে।

— ড্যাম ইট। ওই ন্যাকা ঈশা আমার পুরো প্লানটা চপাট করে দিলো। উফফফফ গড! আমি এখন কি করবো? অয়নের‌ সাথে ঈশাকে কি করে আমি সহ্য করবো?

আনমনে অনু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে অয়নের কথা। হঠাৎ অনু লক্ষ করলো ঈশা মুখ ভর্তি হাসি নিয়ে দৌড়ে অয়নের রুম থেকে বের হচ্ছে। অনুর কাছে এই বিষয়টা মোটেও সুখকর হলো না। ভিশন কৌতুহল নিয়ে অনু অয়নের রুমের দিকে গেলো। অনু অয়নের রুমের যেতেই দেখতে পেলো অয়ন দাঁড়িয়ে আছে। অনু অয়নের চোখের দিকে তাকালো। অয়নের চোখ জোড়ায় স্পষ্ট উঁকি দিচ্ছে ভালোবাসার অনুভূতি। অনু অয়নের ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলো হালকা লিপস্টিকের দাগ। অনুর বুকটা দুমরে উঠলো। সহ্য হচ্ছে না অনুর। সে যে অয়নের ভাগ অন্য কাউকে দিতে পারবে না। অয়নের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে অনু। অয়ন ভ্রু কুঁচকে বলল

— কি হলো অনু? এখানে দাঁড়িয়ে আছো যে?

অয়নের প্রশ্নের জবাবে অনু নিশ্চুপ। কোনো উত্তর দিলো না। অয়ন আবারও অনুকে উদ্দেশ্য করে বলল

— অনু আমি তোমাকে কিছু বলছি। কি হয়েছে? সব ঠিক তো!

অনু মাথাটা নিচু করে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। অয়ন অনুর দিকে একটু এগিয়ে এসে বলল

— তোমাকে দেখে ভিশন আপসেট লাগছে। মন খারাপ নাকি তোমার?

অনু আর কিছু বললো না। মুখ ভারি করে চলে যায় অনু। অয়ন একটু অবাক হলো অনুর ব্যবহারে। তবে অনুকে নিয়ে ভাবার সময় অয়নের হাতে নেই। অয়নের ভাবনা এখন ঈশাকে নিয়ে। ভালোবাসার মানুষকে সারা জীবনের জন্য আপন করে পাওয়াটা সবার কপালে হয়ে ওঠে না। এতে ভাগ্য লাগে।

* অনু নিজের রুমে এসে স্থির হয়ে বসে আছে। কিছুই ভালো লাগছে না তার। মনে মনে বলেছে অনু

— অয়ন আমার মন খারাপ সেটা বুঝলে শুধু বুঝলে না আমার মন কেনো খারাপ? বুঝতে পারলে না আমার মনের অনুভূতি। যা তোমাকে নিয়ে আছে।

কথা গুলো ভাবতেই অনুর ফোনটা বেজে উঠলো। অনু ফোনটা কানে নিয়ে কিছু সময় ধরে রাখলো। অতঃপর অনু বলল

— হুম তাই হবে। যা আমি পাইনি তা ছিনিয়ে নিবো। আসছি আমি।

অনু কলটা কেটে রহস্য জনক এক হাসি দিলো। তার হাসিতে বুঝতে বাকি রইলো না নিশ্চয়ই খারাপ কিছু হতে চলেছে।

* ঈশাকে নববধূ রূপে সাজানো হলো। অসম্ভব সুন্দরী লাগছে তাকে। এতোটাই সুন্দরী লাগছে যে অয়নের চোখ ফেরানো দায়। অয়ন নিজের রুমে একদম তৈরি হয়ে বসে আছে। কিন্তু মন খারাপ ভিশন।

— এটা কি হলো? সবাই ঈশাকে নিয়ে মেতে আছে আর আমি একা একা বসে আছি। বন্ধু গুলোই হয়েছে বজ্জাতের হেড অফিস। সব গুলা ভাবী ভক্ত। এই জন্যই এদের ইনভাইট করতে চাইনি। আহহহহ আজ যদি পালিয়ে বিয়ে করতাম। কত ভালো হতো। আর ভালো! বাবা মা মানলো কেনো? ঈশাকে রিজেক্ট করলেই হতো। আমি তো পালিয়ে লাভ ম্যারেজ করার জন্য তৈরিই ছিলাম। তবে মহারানীর আদেশ। বিয়ে পারিবারিক ভাবেই করতে হবে।

আপন মনে বলছে কথা গুলো অয়ন। হঠাৎ করে অয়নের রুমে চলে আসে অনু। অনুর
চোখ দিয়ে মনে হচ্ছে রক্ত বেরিয়ে যাবে। অনুকে দেখে অয়ন বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। অয়ন কিছু বলতে যাবে এমন সময়………………..

#চলবে…………………..