তারে ভালোবাসি বলে পর্ব-১৮+১৯

0
377

#তারে_ভালোবাসি_বলে
#পর্বঃ১৮
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
অয়ন দেখতে পেলো অনুর কেবিনে অনুর সাথে দিব্ব। দিব্বর উপস্থিতি অয়নের মনের মধ্যে অনেক গুলো প্রশ্ন সৃষ্টি করলো। অয়ন কেবিনের ভিতর দ্রুত প্রবেশ করলো। অয়নের উপস্থিতে অনু আর দিব্ব ভিশন চমকে যায়। দিব্ব অয়নকে দেখে চোখ বড় করে ফেলে। অয়ন অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে দিব্বকে উদ্দেশ্য করে বলল

— তুই এখানে কেনো? অনুর কেবিনে তুই কেনো এসেছিস?

দিব্ব ভয়ে কাঁপছে। অয়নের অগ্নি দৃষ্টি দেখে দিব্ব আঁচ করে ফেলেছে খুব খারাপ কিছু তার জন্য অপেক্ষা করছে। দিব্ব অয়নকে উদ্দেশ্য করে আমতো আমতো করে বলতে লাগলো

— অয়ন ভাইয়া আমি ভূল করে….

অয়ন দিব্বকে কোনো কথা বলার সুযোগ দিলো না। অয়ন দিব্বর শার্টের কলার চেপে ধরে ফিসফিস করে বলল

— তোর মতো নির্লজ্জ লোক আমি দুটো দেখিনি। তোকে সাবধান করে দিয়েছিলাম যে তোর এই নির্লজ্জ বেহায়া চেহারাটা আমায় দেখাবি না। আমি চাই না আমার আশে পাশে তোর ছায়া পরুক। তুই শুনিসনাই। কত সাহস তোর আজ দেখবো আমি।

অয়ন দিব্বকে মারতে লাগলো। থাপ্পড়ের পর থাপ্পড় দিয়ে যাচ্ছে অয়ন। দিব্ব কিছু বুঝতে পারছে না। মার খাওয়া ছাড়া তার কোনো উপায় নেই। কারন বিপরিত আঘাত করতে একটা সুযোগ প্রয়োজন। অয়ন দিব্বকে সেই সুযোগ দিচ্ছে না। ঈশা অনেকটা সময় চুপচাপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। আসলে অয়নের রাগ সম্পর্কে ঈশার ধারনা অনেক আগে থেকেই আছে। রাগ শান্ত না হলে ও থামবে না‌। দিব্বর অবস্থা ভিশন খারাপ। ঈশা এসে অয়নের হাত ধরে চিৎকার করে বলতে লাগলো

— অয়ন প্লিজ ছেড়ে দাও ওকে। একটা অমানুষকে মেরে হাত নষ্ট করো না তুমি। প্লিজ

অয়ন অগ্নি দৃষ্টিতে ঈশার দিকে তাকিয়ে কাঁপা গলায় বলল

— ঈশা তুমি জানো না ও একটা নর্দমার কীট। ওকে তো আজ আমি মেরেই ফেলবো।

ঈশা করুন কন্ঠ স্বর নিয়ে বলল

— অয়ন আমি চাই না এসব। আমি চাই না আর কোনো ঝামেলার মাঝে তুমি জড়িয়ে পরো। একটু শান্তিতে থাকতে চাই আমরা। প্লিজ অয়ন ছেড়ে দাও ওকে। আমার জন্য ছেড়ে দাও প্লিজ।

অয়ন দিব্বর কলার ছেড়ে দিলো। দিব্ব মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যায়। অয়ন ঈশার দিকে থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো আর রাগি কন্ঠে বলে উঠল

— ড্যাম ইট। শোন দিব্ব বার বার ঈশা তোকে বাঁচাতে আসবে না। ফার্দার যদি আমি তোকে আমাদের আশে পাশে দেখি তবে সেই দিন হবে তোর শেষ দিন। মাইন্ড ইট

দিব্ব মুখ ফেটে রক্ত পরছে। দিব্ব ফ্লোর থেকে মাথাটা তুলে অনুর দিকে তাকালো। অনু দিব্বর দিকে তাকিয়ে না সূচক মাথা নাড়ল। অয়নের দৃষ্টির আড়ালে। দিব্ব বাঁকা হেঁসে অনেকটা কষ্ট করে ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়ালো। অয়ন চিৎকার করে বলতে লাগলো

— নাউ গেইট লস্ট।

দিব্ব বাঁকা হাসি দিয়ে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল

— মিস্টার অয়ন চৌধুরী খুব শীঘ্রই আমাদের দেখা হবে। আর তখন না হয় আমি নিজের শরীরের আঘাতের জবাবটা নিয়ে নিবো।

দিব্বর রহস্য জনক কথার মানে অয়ন বুঝতে পারলো না। অয়ন দিব্বর দিকে অগ্রসর হতেই অয়নকে বাধা দিলো ঈশা আর অনু। অনু অয়নের হাত ধরে রেখেছে। অনু আনমনে ভাবছে

— দিব্ব যদি নিজেকে বাঁচানো জন্যর আমার নাম বলে দিতো! তবে আমার সব শেষ হয়ে যেতো। এতো কষ্ট করে যে প্লান আমি তৈরি করেছি তা এক মিনিটের মধ্যে শেষ হয়ে যেতো। আর অয়নকে আমার পাওয়া হতো না। ধন্যবাদ দিব্ব। আমাকে এই সময়ে সাহায্য করার জন্য।

অনু আনমনে কথা গুলো বলছে অয়ন এক ঝটকায় অনুর হাত থেকে নিজের হাত সরিয়ে দিলো। অনু অয়নের এমন ব্যবহারে বিব্রত হয়ে যায়। তবে কি অয়ন সবটা বুঝতে পেরে গেছে? ভাবছে অনু। অনু অয়নের থেকে কয়েক পা পিছিয়ে গেলো। অয়ন অনুর দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। অনুকে এই দৃষ্টি ভয় পেতে বাধ্য করছে। অয়ন অনুর দিকে এগিয়ে এসে চাপা গলায় বলে উঠলো

— এই রাস্কেলটা এখানে কেনো আসলো? আর ওর সাথে তোমার কি সম্পর্ক? কোন উদ্দেশ্যে দিব্ব তোমার কাছে এসেছে? তবে কি তোমার সাথে দিব্বর অনেক আগে থেকে পরিচয় ছিলো? তোমরা দুজন এক হয়ে এসব করেছো?

অনু চোখ বড় বড় করে আছে। তবে কি কয়ন আঁচ করে ফেলেছে অনুর প্লান? কি করে এখন অয়নকে ম্যানেজ করবো? সত্যি তো বলা যাবেই না। অয়নের কথাতে বোঝা যাচ্ছে আমার আর দিব্বর কোনো কথাই ও শুনতে পায়নি। কিছু একটা করতে হবে আমায়। কথা গুলো মাথার ভিতর ঘুরছে অনুর। অনুর এমন নিরবতা অয়নের রাগকে আরো কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিলো। অয়ন চিৎকার করে অনু কে উদ্দেশ্য করে বলল

— এই স্টুপিট গার্ল। আন্স্যার মি। কি সম্পর্ক তোমাদের।

অনু অয়নকে আর রাগাতে চাচ্ছে না। অয়নের রাগ সম্পর্কে অনুর কিছুটা ধারনা তৈরি হয়ে গেছে এই কয় দিনে। অনু ভাবছে এখনি সময় পরিস্থিতি বিগরে যাওয়ার আগে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। অনু ভয় না পেয়ে একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে। নিজের মুখে একটু হতাশা এনে তার বিদ্যমান নাটক শুরু করলো আবার অনু অয়নকে বলল

— সত্যিটা জানতে চাও তুমি?

অয়ন চরম বিরক্তি নিয়ে বলল

— আমি মিথ্যে পছন্দ করি না। আর তোমার সাথে কোনো মজা আমি করছি না। যাস্ট টেলমি ট্রুথ রাইট নাউ।

অনু আবারও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো আর‌ বলল

— সত্যিটা বলতে চাচ্ছি না আমি।

— সত্যিটা বলতেই হবে তোমায়।

— আমি চাই না ঈশা আর তোমার মাঝে আবার দূরত্ব তৈরি হোক। বিশ্বাস করো অয়ন আমি দিব্বকে এখানে ডেকেছি আর দিব্বকে বলেছি আমার সাথে দেখা করতে। আমাদের মাঝে এখনও গভীর কোনো সম্পর্ক রয়েছে। বিশ্বাস করো আমায় সব দোষ আমার। তুমি প্লিজ আমার কথা বিশ্বাস করো।

অনুর কথা শুনে এটা স্পষ্ট যে অনু দিব্বকে এখানে আসতে বলেনি। তবে কি অনু ঈশার দোষ নিজের কাঁধে নিচ্ছে? থ হয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে অয়ন। অনুর কথা শুনে ঈশার মাথার উপর যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। ঈশা অনুকে উদ্দেশ্য করে বলল

— মানে? কি বলতে চাচ্ছো তুমি? পরিস্কার করে বলো।

অনু একটু মুচকি হেসে বলল

— আমি কি বলবো? বলে দিলাম তো সব। আমি চাই তোমরা সুখি হও। অয়ন আমি ভিশন খারাপ একটা মেয়ে। তোমাদের সাথে আমি থাকতে চাই না। আমি চলে যাবো অনেক দূরে। প্লিজ অয়ন আমাকে ভূল বুঝেছো না। আমি সত্যি চাই না তুমি তোমার ভালোবাসার মানুষের থেকে আবার দূরে থাকো।

অয়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে

— অনু প্লিজ সব টা বলো আমায় প্লিজ।

— পারবে তো সহ্য করতে?

— হুম

— তবে শোনো ঈশা দিব্বকে এখানে ডেকেছে। এই কথা আমি না দিব্ব আমাকে বলেছে। আমি তো এই ছেলেকে চিনি না পর্যন্ত। আর আমার চেনার কথাও না সেটা তুমি ভালো করেই জানো। ঈশা তোমাকে বাড়ি পাঠিয়ে একান্তে দিব্বর সাথে সময় কাটাতে চেয়েছে। তাই তোমাকে ঈশা বাড়িতে চলে যেতে বলেছে। অয়ন দিব্বর কোনো দোষ ছিলো না। তুমি অকারণেই দিব্বকে আঘাত করেছো।

অনুর কথা শেষ হতেই ঈশা অবাক চোখে তাকালো অনুর দিকে। এসব কি বলেছ অনু? ঈশার মাথায় ঢুকছে না কিছু। ঈশা অনুর দিকে কৌতুহল পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল

— অনু এসব কি বলছো তুমি? আমি‌ দিব্বকে এখানে আসতে বলেছি মানে কি? অয়ন বিশ্বাস করো এই মেয়েটা মিথ্যে বলছে সব। আমি কাউকে এখানে আসতে বলিনি। ট্রাস্ট মি

অনু কর্কশ গলায় বলল

— আমি মিথ্যে বলছি না। এসব কথা দিব্বি এসে আমায় বলেছে। তাও তোমাকে খুঁজে না পেয়ে। আমার মিথ্যে বলে লাভ কি?

ঈশা অয়নের দিকে তাকালো। অয়ন পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। ঈশা অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল

— অয়ন বিশ্বাস করো দিব্ব মিথ্যে বলছে। আমি দিব্বকে এখানে আসতে বলি নাই। এমনকি আমার সাথে ওর কোনো যোগাযোগ কখনও ছিলো না‌। অয়ন প্লিজ আমাকে বিশ্বাস……..

অয়ন কান্না ভেজা কন্ঠে ঈশাকে আকুতিতে সুরে বলল

— ব্যাস ঈশা। চুপ করো। এই পৃথিবীতে সবাই তোমার বিরুদ্ধে মিথ্যা বলছে। একা তুমি যে সত্যি বলছো। তাই না? আচ্ছা দিব্ব কি করে জানলো তুমি এখানে আছো? একটুকু বলে দাও আমায়। বিশ্বাস করো আমার আর কোনো কথা থাকবে না‌।

— বিশ্বাস করো অয়ন আমি এসবের কিছুই জানি না।

— ঠিক আছে।

* অয়ন কেবিন থেকে হনহন করে বেরিয়ে যায়। ঈশা ফ্লোরে উপর হাঁটু গেড়ে বসে পরে। প্রচুর কান্না পাচ্ছে তার। কেনো বার বার অয়নের কাছে সে ভূল‌ প্রমানিত হয়? অয়ন কি করবে? যা দেখেছে তাই বিশ্বাস করেছে। আমি কি করবো এখন?

* ঈশা কিছু ভেবে পাচ্ছে না। অনু মনে মনে হাসছে। অনু ভাবছে

— পরিস্থিতি এমন ভাবে সামলে নিয়েছি যে সাপ ও মরবে লাঠিও ভাঙবে না। এই বার ঈশা তোমার কি হবে? অয়নের মনে এই বার আমি জায়গা তৈরি করবো। ওর স্ত্রী হয়ে অয়নকে নিজের করে নিবো। ইশশশশ কত দিনের স্বপ্ন আমার। তবে ঈশা এসে নষ্ট করে দিতে চাইলেও পারেনি। এই স্বপ্ন পূরণ হবেই।

ঈশা ফ্লোর থেকে উঠে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। ঈশা কেবিন থেকে বেরোতেই দেখতে পায় অয়ন গাড়িতে বসে আছে। ঈশা অয়নের গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। অয়ন চুপ করে তাকিয়ে আছে গাড়ির সামনের দিকে। ঈশা কান্না করছে আর বলছে

— অয়ন আমাকে বিশ্বাস করো তুমি আমি এই সবের কিছুই জানি না। তারপরেও যদি বিশ্বাস না হয় তো আমার আর কিছু‌ বলার নেই। আমি চলে যাচ্ছি আর কখনও এই মুখ তোমায় দেখাবো না।

ঈশা চোখ মুছে ফেললো। অয়নের ভিতর কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। মুখ ভার করে বসে আছে অয়ন। ঈশা অয়নকে নিরভ থাকতে দেখে বুঝে নিলো অয়ন এবার ও তাকে ভূল বুঝেছে। ঈশা গাড়ির দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে চলে আসলে লাগলো। অয়ন ঈশার চলে যাওয়া উপলব্ধি করে বাঁকা হাসলো। অয়ন পিছন থেকে ঈশাকে……………….

#চলবে………..………….

#তারে_ভালোবাসি_বলে
#পর্বঃ১৯
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
অয়ন পিছন থেকে ঈশাকে বলে উঠলো

— কথা ছিলো কেউ কখনও কাউকে ছেড়ে যাবো না। সেটা কি ভূলে গেলে?

অয়নের কথাটা শুনে ঈশা অবাক হয়ে যায়। অয়নের কথায় ঈশার দেহে প্রান ফিরে এলো। ঈশা অবাক চোখে অয়নের দিকে তাকালো। ঈশার চোখ জোড়া বলে দিচ্ছে যে সে এখন প্রচন্ড বিভ্রান্তের মধ্যে আছে। অয়ন একটু শান্ত গলায় বলল

— গাড়িতে আসো।

ঈশা এখনও অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন অয়ন এবার একটু ধমকের সুরে বলে উঠলো

— এখানে আসতে বলেছি না আমি?

ঈশা বাধ্য মেয়ের মতো অয়নের কথা মতো গাড়িতে উঠে বসলো। অয়ন ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— আমার মধ্যে কি নাই যে জন্য দিব্বকে দরকার পরে তোমার?

ঈশা আবারও অবাক হলো। ঈশা মাথাটা নিচু করে বলল

— বিশ্বাস করো অয়ন আমি এসবের কিছু জানি না। তুমি ছাড়া অন্য‌ কাউকে আমি কখনও কল্পনা করতে পারি না। একটু তো ভরসা রাখো আমার উপর।

অয়ন এবার মুখ চেপে রাখতে পারলো না। অয়ন হেসে ফেললো। অয়নের হাসি দেখে ঈশা বুঝতে পারছে না অয়ন পাগলের মতো হাসছে কেনো? কি হয়েছে অয়নের? ঈশার অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল

— এভাবে হাসছো কেনো? আমি কি কোধ জোকস বলেছি?

অয়ন হাসি বন্ধ করে বলল

— উহু জোকস না। আমি তোমায় ভরসা করি। তবে একজনের নাটক দেখছিলাম আর কি।

— মানে? কার নাটক দেখছিলে তুমি?

— সেটা তোমায় কেনো বলবো?

— কেনো কেনো? আমি তোমার সব কথা জানতে পারি না! আমার কি সেই অধিকার নাই?

— আছে কিন্তু এখন বলা যাবে না। সময় আসুক সবটা‌ বলবো তোমায়।

ঈশা এবার অভিমান নিয়ে বলল

— তবে কেবিনে আমায় অবিশ্বাস করে ছিলে‌ সেটা কি নাটক ছিলো?

— হুম

অয়নের হ্যাঁ শুনে ঈশার প্রচন্ড রাগ উঠে যায়। ঈশা অয়নের বুকে কিল ঘুষি মারতে মারতে বলল

— কিহহহ? আমাকে কষ্ট দিতে, আমাকে কাঁদাতে খুব ভালো লাগে তোমার!

অয়ন হাস্যজ্বল চেহারায় ঈশাকে থামিয়ে বলল

— আচ্ছা আচ্ছা সরি ভূল হয়ে গেছে আমার।

— হবে না। এতো বড় অপরাধ আর সামান্য সরি। উহু আমার অন্য কিছু চাই।

— ওমা অন্য কিছু! আচ্ছা অন্য কি চাই?

— জানি না তবে চাই।

* ঈশার কথা শেষ করতেই অয়ন গাড়িটা সাইডে ব্রেক করলো। ঈশা সিট‌ ব্যল্টটা খুলে নিলো। অয়ন ঈশার চোখ বরাবর দৃষ্টিপাত করে বলছে

— কি লাগবে তোমার?

ঈশা অয়নের দিকে একটু এগিয়ে এসে বলল

— জানি না।

অয়ন ঈশার ঠোঁট বরাবর দৃষ্টিপাত করলো। থেমে থেমে মৃদু কেঁপে উঠছে ঈশার ঠোঁট। অয়ন নিঃশব্দে ঈশার ঠোঁট জোড়া নিজের দখলে নিয়ে নিলো। পরম অনুভূতির আবেশে একে অপরকে ভালোবাসা দিচ্ছে। কিছু মূহূর্ত কিস করার পর অয়ন আলতো করে ঈশার ঠোঁট জোড়া ছেড়ে দিলো। ঈশা চোখ বন্ধ করে আছে। অয়ন ঈশার কপালে একটা লম্বা চুমু দিলো। ঈশা অয়নের ঠোঁটের পরম স্পর্শে কেঁপে উঠল আবারও। অয়ন ঈশার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল

— হয়েছে বাকিটা রাতে বাসায় গিয়ে বুঝাবো কেমন।

ঈশা অয়নের দিকে লজ্জা মাখা চোখে তাকিয়ে অয়নের কাঁধের উপর মাথা রাখলো। অয়ন গাড়িটা পুনরায় স্টার্ট করলো। অয়ন গাড়ি ড্রাইভ করেছে আর ভাবছে।

— অনুর কথা যদি একমিনিটের জন্য সত্যি ভাবি আমি। তবেও প্রশ্ন থেকে যায় দিব্ব ঈশাকে কল করলো কি করে? অনুর হাত কাটা আর হাসপালে আসা পর্যন্ত সারাক্ষন ঈশা আমার সাথে ছিলো। এক সেকেন্ডের জন্য ও ঈশা কোথাও যায়নি আমাকে ছেড়ে। তা হলে কল করলো কি করে? আর দিব্বকে আসতেই বা বলল কি করে? আর ঈশা দিব্বকে পছন্দ করে‌ না। এটা আমি খুব ভালো করেই জানি। তাছাড়া ঈশা যদি দিব্বকে ভালোবাসতো তবে আমার অনুপস্থিতিতে দিব্বর সাথে ঈশা থাকতে পারতো। আমার জন্য পাগল হয়ে যেতো না। তবে কি অনুর কথা গুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ছিলো? দিব্বর সাথে অনুর আগে থেকেই চেনা জানা আছে? কেনো জানি অনুর সাথে দিব্বর কোনো পরিচয় আছে সেটা মনে হচ্ছে।

* অয়নকে গভীর ভাবনায় মগ্ন থাকতে দেখে ঈশা প্রশ্ন করে বসলো অয়নকে

— অয়ন ভাবছো কি?

অয়ন একটু কেঁপে উঠল ঈশার কথায়। অয়ন ঈশা কে বলল

— উহু কিছু না তো। কি ভাববো আমি?

— হুম। জানো আমার মনে হচ্ছে এই দিব্ব আমাদের সাথে কোনো‌ গেইম খেলছে। ও আমাদের মাঝে দূরত্ব তৈরি করতে চায়।

— শুধু কি তাই? দিব্ব একা না। আরো অনেকে চায় আমাদের দূরত্ব। তবে আফসোস সেটা না আমি হতে দিবো‌ আর না তোমায় দূরে যেতে দিবো। আমি কিছুটা হলেও আঁচ করতে পারছি কি হতে চলেছে।

— অয়ন কি হতে যাচ্ছে? আমায় ও বলো প্লিজ।

অয়ন একটু বিরক্ত নিয়ে ঈশা কে বলল

— ঈশা, সব কিছুতেই তোমার তারা। একটু ধৈর্য ধরো আমি তোমার থেকে কখনও কিছু লুকাইনি। আর কখনও লুকাবোও না।

— হুম। কিন্তু আমার যে তোমায় নিয়ে ভয় হয়।

— ভয় পেয়ো না। আমার কিছু হবে না। তুমি আছো তো আমার পাশে।

— হুম সব সময়।

অয়ন ঈশা কে নিয়ে বাসায় আসে। ভোর প্রায় হয়ে এসেছে। ঈশা অয়ন রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলো। প্রচুর ঘুম পাচ্ছে দুজনের। অয়ন বিছানার উপর বসে ঈশার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কিছু সময়। ঈশা চুল গুলো ঠিক করে বাঁধছে। অয়নের কাছে বরাবরই তার স্ত্রী পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সুন্দরী নারী। তাই নিজেকে এই সুন্দরীর থেকে দূরে রাখা বা নিজেকে কন্ট্রোল করা দায়। অয়ন ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— ভোর তো হয়ে এসেছে। এখন কি না ঘুমালে নয়?

ঈশা ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল বাঁধছে। অয়নের কথার বিপরীতে চিরনি টা রেখে ঈশা অয়নের দিকে তাকিয়ে বলল

— তো না ঘুমিয়ে কি করবে?

— কি আর করবো? কিছু না ঐ এমনিই বললাম আর কি।

— ওহহহ।

অয়ন মুখটা ভারি করে বসে আছে। ঈশা অয়নের দিকে এগিয়ে আসতেই বুঝতে পেলো অয়ন অভিমান করেছে। ঈশা অয়নের দু গাল ধরে আলতো করে টেনে বলল

— না ঘুমালে কাল কাজ করবো কি করে হুম? কিত্তু বুঝে না!

অয়ন অভিমান করা ছেড়ে দিয়ে মৃদু হেসে ঈশাকে এক টানে কোলে বসিয়ে নিলো। ঈশা অয়নের চোখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আসলে পড়ার চেষ্টা করছে অয়নের চোখের ভাষা। ঈশা অয়নের চোখের ভাষা বুঝতে পারে। অয়নের চোখে স্পষ্ট। আজ ঈশাকে কাছে পেতে চায়। অয়ন ঈশার কপালে চুমু দিয়ে বলল

— জোর না করলে কি কাছে আসা যায় না? খুব কি ক্ষতি হয়ে যায় নিজের ইচ্ছেতে কাছে আসলে?

ঈশা না সূচক মাথা নাড়ল। অয়ন ঈশাকে নিজের বুকের সাথে জরিয়ে ধরে রাখলো কিছু সময়। ঈশাও পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে আছে। এটাই তো ভালোবাসা। উহু পবিত্র সম্পর্ক এটা। অয়ন ঈশাকে বলল

— হয়েছে। এখন ঘুমাতে সমস্যা নাই। তবে আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে হবে।

— ইশশশশরে আমার বালিশ আছে তো।

— তো? বালিশ আছে বলে কি হয়েছে?

— আচ্ছা আচ্ছা তাই হবে।

আসলে অয়নের বুকে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকাটা ঈশার ইচ্ছে। তবে এখন এই কথাটা এড়িয়ে যেতে চাওয়ার মানে হলো বুঝতে দিতে চায় না ঈশা। ঈশা অয়নের বুকে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পরে। অয়ন ও ঈশাকে জরিয়ে ঘুমিয়ে পরলো।

* অনু কেবিনে বসে আছে। আজ ডিস্টার্জ হয়ে যাবে সে। ফোনটা হাতে নিয়ে দিব্বকে কল করলো অনু। দুবার কলটা বাজতেই রিসিভ হলো। অনু দিব্বকে উদ্দেশ্য করে বলল

— হ্যালো, দিব্ব কেমন আছো?

— হ্যাঁ, ভালো। শরীরটা ব্যথা করছে এই আর কি। তুমি ঠিক আছো?

— হ্যাঁ।

অনু দিব্বর সাথে কিছু সময় কথা বলল। অনু দিব্বকে জানিয়ে দিলো আজকের সব কথা। অনু খুব খুশি এই ভেবে যে অয়ন আর ঈশার মাঝে আবার দূরত্ব তৈরি করতে সে সফল হয়েছে। অনুর কথা গুলো শুনে দিব্ব ও বেশ খুশি হলো। অতঃপর আরো কিছু সময় কথা বলার পর কলটা কেটে দিলো অনু। অনু আপন মনে বলছে

— অয়নকে আর কোনো সুযোগ দেয়া যাবে না। আজ অয়নকে নিজের করে নিতে হবে। যদি আজ আমি নিরব থাকি তবে এই ঈশা আবার অয়নের হয়ে যাবে। তবে আমি থাকতে তা সম্ভব হবে না। অয়নকে নিজের করার আগে ওর প্রপার্টি নিজের করে নিতে হবে। একটা বার যদি আমি সফল হতে পারি। তা হলে অয়ন সারা জীবনের মতো আমার হবে আর ঈশার আসার কোনো সুযোগ থাকবে না।

কথাটা বলতেই অনু রহস্যময়ী হাসি দিলো‌। এই হাসি সাধারণ হাসি নয়। অনুর ভয়ংকর কিছু পরিকল্পনা করেছে অয়নকে নিজের করতে।

* সকাল হতেই ঈশার ঘুম ভেঙ্গে যায়। অয়ন এখনও ঘুমিয়ে আছে। ঈশা অয়নের দিকে তাকিয়ে আছে কিছু সময়। ছেলেদের এতো সুন্দর হতে নেই। আনমনে কথা বলল ঈশা। ঈশা অয়নের মুখের উপর উড়ে আশা চুল গুলো ঠিক করে দিলো। ঈশার স্পর্শে শিহরিত অয়ন। ঈশা অয়নের কপালে চুমু দিলো। অয়ন নড়ছে না। ঈশা মৃদু হেসে বিছানা থেকে উঠে চলে যায় ফ্রেশ হতে। অয়ন‌ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে।

ঈশা ফ্রেশ হয়ে নাস্তা বানাচ্ছে এমন সময় হঠাৎ করে……………….

#চলবে………….