#তার_শহরের_মায়া 😍
#পার্ট_১১
#Writer_Liza_moni
পড়ন্ত বিকেল। আকাশটা আজ অনেক সুন্দর। সূর্যের তাপ নেই তেমন। গাছের ডালে কয়েক টা পাখির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত চার পাশ।মেসের ছাদের এক কোনায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনু। মনটা তার তেমন ভালো নেই। ভালো থাকবেই বা কি করে? নিজের কাছের মানুষ গুলোর এই প্রতারনা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না সে। কেন জানি তনুর কথা খুব মনে পড়ছে আজ। ছোট বেলায় কতো ঝগড়া হতো দুই বোনের। কিন্তু কখনো এই ভাবে কথা বন্ধ করে দেয়নি কেউ।অনু একটু জেদি।সব সময় তনুই ওর রাগ ভাঙাতো। তনুর উপর শুধু শুধু রাগ করে থাকাটা বোকামি।
অনু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এখন আর খুব সহজে চোখ থেকে পানি বের হয় না। শুধু বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।
মোবাইলের ভাইব্রেশনের শব্দে ভাবনা থেকে বের হয়ে আসে। মোবাইলের স্ক্রিনে তনুর নাম্বার দেখে অজান্তেই মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। এতো সময় ধরে তো তনু কেই খুব মিস করছিল।তাই তনুর ফোন দেখে খুশিই হলো।
অনু কল রিসিভ করে কানে ধরে চুপ করে আছে।
এই দিকে অনু যে কল রিসিভ করেছে সেই খুশিতে তনুর মন ভালো হয়ে গেল। এতক্ষণ ধরে মেয়েটা কেন এমন বদলে গেলো সেই বিষয়ে নিয়ে মন খারাপ করে বসে ছিল তনু।
তনু মুচকি হেসে বললো
কেমন আছিস বোন?
অনুর মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। কেমন যেনো ইতস্তত বোধ হচ্ছে।
কিরে অনু কথা বলবি না আমার সাথে? তোকে ভীষণ মনে পড়ছে রে। তূর্যর সাথে কেন আসিস নি ? তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
অনু তা ও কিছু বললো না। চুপ করে তনুর কথা শুনতে লাগলো।
কি হয়েছে তোর? আমি কী কোনো ভুল করেছি? আমার উপর কেন রেগে আছিস?অনু এই অনু বোন আমার প্লিজ একটু কথা বল না।এই ভাবে চুপ করে থাকিস না।
সরি আপুনি। মিনমিনে গলায় বললো অনু।
আসলে আমি একটু ব্যাস্ত ছিলাম তাই তোকে কল করতে পারিনি।
গতকাল রাতে আমার ফোন কেন ধরিসনি?
আসলে মোবাইল আমার কাছে ছিল না।আর আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
তুই তো আগে এমন ছিলি না অনু। আগে তুই যতো ব্যাস্তই থাকতি না কেন আমি কল দিলে তুই ১ মিনিট হলে ও কথা বলতি। তাহলে এখন কী হয়েছে তোর?
কিছু হয়নি ঠিক আছি আমি।
আচ্ছা তুই যে একটা ছেলের কথা বলতি তার সাথে কি কিছু হয়েছে তোর?
তনুর বলা কথাটা শুনে অনুর বুকের মাঝে ধক করে উঠলো।
” সেতো আর আমার নেই রে আপু।সে যে তোর হয়ে গেছে।সারা জীবনের জন্য তোর হয়ে গেছে।”
মনে মনে কথা গুলো বলে গোপনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল অনু।
বিয়ে হয়ে গেছে তার।
সেকি। কখন বিয়ে হয়েছে তার? তোদের এতো দিনের সম্পর্ক এই ভাবে শেষ করে দিলো?বেইমান একটা।বিয়ে করেছে কবে?
জানি না।বাদ দে।ভাল্লাগছে না।
ছেলেটার নাম টা যেনো কী ছিল?
বাদ দে।নাম জেনে এখন আর কী হবে?যা হবার হয়ে গেছে। এখন আর এই বিষয়ে কিছু জানতে চাইস না প্লিজ।
এই জন্য মন খারাপ তোর? এতো দিনে বুঝলাম।ভুলে তা বেইমান টাকে। নিজের মতো করে নিজেকে গড়ে তুল।যেন এক দিন তোকে কষ্ট দেওয়ার জন্য আফসোস করতে করতে শেষ হয়ে যায়।
হুম।
বোন শোন!
হুম বল।শুনছি।
ভার্সিটি থেকে আসার সময় আমাদের বাড়িতে আসিস। তোকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে।বাড়ি থেকে আসার সময় তো আমার সাথে একটা কথা ও বলিসনি।
“আমি চাইলে ও তোর বাড়িতে যেতে পারবো না রে আপু। আমার ও তো তোকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। খুব দেখতে ইচ্ছে করছে আমার ভালোবাসার মানুষটির সাথে তুই কতটা সুখে আছিস? তোদের সংসার টা কেমন সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়েছিস? দেখতে ইচ্ছে করছে ভীষণ আমার ভালোবাসার মানুষটি তোকে সত্যি কতোটা ভালোবাসে। কিন্তু আমি চাইলে ও পারবো না। তোকে দেখলে আমার কলিজাটা ছিঁড়ে যায় অসহ্য যন্ত্রণায়।”
চেষ্টা করবো।যদি পারি আর কি। সামনে পরীক্ষা একটু তো ব্যাস্ত।
মাহির এতক্ষণ পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিল। বেলকনিতে থেকে তনুর কথার আওয়াজ পেয়ে উঠে এসে দেখে তনু মোবাইলে কারো সাথে কথা বলছে। মাহির তনু কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো
কার সাথে কথা বলছো জান?
মাহির ঘুম ঘুম কন্ঠে বলা কথাটা কানে এড়িয়ে যায়নি অনুর।সে ফোনের ও পাশ থেকে ও খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে মাহির তনুকে জড়িয়ে ধরে আছে।
মাহিরের ঘুম ঘুম কন্ঠস্বর টা অনুর ভীষণ প্রিয়।
উফফ কী করছেন?অনুর সাথে কথা বলছি তো।
অনুর কথা শোনা মাত্রই মাহির তনু কে ছেড়ে দিয়ে সোজা রুমে চলে গেল।
দুলাভাইয়ের সাথে রোমান্স কর যা।পরে বলবে জামাইয়ের থেকে কী বোন বেশি হয়ে গেছে?যা। আমি পরে তোকে ফ্রী হয়ে ফোন দিব। এখন রাখছি।
তনুকে কিছু বলতে না দিয়েই অনু কল কেটে দিল।
তনু বেলকনি থেকে রুমে এসে কোমরে হাত দিয়ে চোখ গরম করে মাহিরের দিকে তাকিয়ে বললো
শুধু আপনার জন্য আমি এতো দিন পর ও আমার বোনের সাথে একটু মন খুলে কথা বলতে পারি নাই।যখন তখন কী রোমান্স বেয়ে বেয়ে পরে?
আমি রোমান্স করলাম কোথায়? শুধু একটু জড়িয়ে ধরেছিলাম।
তনু আর কিছু না বলে মোবাইল টা ড্রেসিং টেবিলের উপরে রেখে রান্না ঘরের দিকে চলে গেল চা বানাতে। একটু পরেই সবাই চা চাইবে।
.
অনু আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।আপন মনেই বললো তোমার এতো সুখের সংসার টা যেনো নষ্ট না হয়ে যায়। খেয়াল রেখো।
.
রাতে অনু পড়তে বসেছে। এই সময় একটা মেয়ে এসে বললো অনুর পরিচিত কোনো একজন তার সাথে দেখা করতে চায়।
মেয়েটার কথা শুনে অনু ভ্রু কুঁচকালো। আমার পরিচিত কেউ আবার কে আসছে? আজব তো।
অনু বসা থেকে উঠে মেসের বাহিরে এসে দাঁড়িয়েছে।
কালো রঙের জ্যাকেট পরা একটা লোক কে দেখতে পেল। কিন্তু মুখ দেখা যাচ্ছে না তার। পেছন ফিরে আছে।
আপনি কে? কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো অনু। লোক টা পেছনে ফিরতেই অনু থমকে গেল।
ল্যাম্প পোস্টের নিয়ন আলোয় লোকটা কে খুব ভালো করেই চিন্তে পারছে অনু।
লোক টা দাঁত কেলিয়ে অনুর সামনে এসে বললো আমাকে চিনতে পেরেছো ?
লোকটাকে দেখে অনুর কেমন রিয়েকশন করা উচিত সেটাই বুঝতে পারছে না সে। এতো দিন পর হঠাৎ ওনাকে এখানে দেখে হজম হচ্ছে না অনুর।
অনু কোনো রকম তুতলিয়ে বললো
আ-প-না-কে কে-ন চি-ন্তে পারবো না রিশাদ ভাইয়া?
না এতো দিন পর দেখছো তো তাই ভাবলাম চিনতে পারছো কিনা।তো কেমন আছো অনুমেঘা?
অনু তার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে নিজে প্রশ্ন করে বসলো
আপনি আমার মেসের ঠিকানা কি ভাবে পেয়েছেন?
অনুর কথায় লোকটা মুচকি হাসলো শুধু। তোমার ঠিকানা খুঁজে পাওয়া ওতো কঠিন ছিল না।তো আমার বউ কেমন আছে?
সত্যি টা জানতে পারলে রিশাদ কেমন রিয়েকশন করবে সেটাই ভাবছে অনু।রিফার সাথে যে তার সব সম্পর্ক শেষ।
রিয়াদ ভাই আপনি এতো দিন পর এসে রিফার কথা আমাকে কেনো জিজ্ঞেস করছেন?রিফার বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নেন। আমার কাছে কী?
.
তূর্য ধানমন্ডি ১১এ যে কাজে এসেছিল সে কাজ এখনো শেষ হয়নি।অনুর মেসের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ভাবলো অনুকে একটু বিরক্ত করলে মন্দ না।
অনুর মেসের ভেতরে যাওয়ার সময় তার চোখ পড়লো রাস্তায় পাশে। সেখানে দাঁড়িয়ে অনু কোনো একটা ছেলের সাথে কথা বলছে।অনু কে ছেলেটার সাথে কথা বলতে দেখে তূর্য তাদের দিকে এগিয়ে যায়।
অনুর পাশে দাঁড়িয়ে তূর্য মুচকি হেসে বললো অনু মেম এই সময় এখানে দাঁড়িয়ে কি আমার দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলছেন?
অনু পাশ ফিরে তূর্যকে দেখতে পেয়ে দাঁত কটমট করে বললো হ্যাঁ আমার আপনার সবার দুলাভাই লাগে উনি।
চলবে,,,, 🍁