#তার_শহরের_মায়া 😍
#পার্ট_১৫
#Writer_Liza_moni
বাসের জানালার পাশে বসে উদাসীন ভাবে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে অনু। তার পাশে একজন বয়স্ক মহিলা বসে আছেন। তার পেছনে বসে আছেন তার হাসবেন্ড। দুইজনেরি মোটামুটি অনেক বয়স হয়েছে।
অনু সকালে কিছু্ না খেয়েই বের হয়ে আসছে। এখন সকাল ৭ টা বাজে। হালকা ক্ষিদা লেগেছে তার।
অনু ব্যাগ খুঁজে দেখতে লাগলো কিছু আছে কিনা খাওয়ার মত।গাড়ি এখন থামবে না।অনু ব্যাগে ভালো করে খুঁজে ২ প্যাকেট কেক পায়।কেক গুলো দেখে অনু মুচকি হাসে।
গতকাল যে কিনে ছিলাম আর খাওয়া হয়নি। ভালোই হলো।কেক নিয়ে খাওয়া শুরু করে অনু। খাওয়া শেষে ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে পাশে তাকাতেই দেখলো মহিলাটা ঘুমিয়ে আছেন। পেছন থেকে তার হাসবেন্ড এক হাত তার মাথার পাশে দিয়ে রেখেছেন।যেনো ঘুমের ঘোরে পরে না যায়।
তা দেখে অনু মুচকি হেসে পাশ ফিরে পানি খেয়ে বোতল রেখে আবার ও বাইরের দিকে চোখ রাখলো অনু।
অনুর মন বলছে আরেক বার এই বুড়ো বুড়ির দেকি তাকানোর জন্য। মনের ডাকে সায় দিল সে।পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে মাহিলার মাথাটা তার স্বামীর হাতের সাথে ঠেস দিয়ে আছে। মহিলা কি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছেন।
অনু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বললো কয়জনের ভাগ্যে জোটে এমন ভালোবাসা?নব্বই দশকের মানুষদের ভালোবাসা ছিল খাঁটি ভালোবাসা।অন্যের মনের অনেক দাম ছিল তাদের কাছে।তারা মন থেকে ভালোবাসতে জানে। একজন মানুষকে এক এক রুপে ভালোবেসেছেন।
নব্বই দশকের সব কিছুই ছিল ভেজাল মুক্ত। সাথে মানুষের মন ও।তাই তো তাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়েছে।কয় জনই বা পারে সত্যি ভালোবাসতে ঠিক নব্বই দশকের মানুষদের মত।
ইসস আমি যদি এই আধুনিক যুগে জন্ম না হয়ে নব্বই দশকের যুগে জন্ম হতাম।এই আধুনিক যুগে তো মন ভাঙ্গা , মানুষের বিশ্বাস নিয়ে খেলা করা ফ্যাশেন। এখন আর সত্যি কারের ভালবাসা তেমন খুঁজে পাওয়া যায় না। অনেক ভাগ্য লাগে সত্যি কারের ভালবাসা খুঁজে পাওয়ার জন্য। আমি ওতো ভাগ্যবান না। তাদের দলে আমি নেই।
অনু এই সব ভেবে আবার ও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাইরের গাছ গাছালি দেখায় মনোযোগ দিলো।
.
মা দেখো আমি এখন আসতে পারবো না। আবার ও একটা কেস আছে। অনেক প্যারায় আছি। তুমি আর বিয়ের কথা বলে আমাকে প্যারা দিও না তো।
হতচ্ছাড়া,বেক্কেল পোলা। আমি বিয়া করাইতে চাইতাছি তো তাই তুই আকাশে উঠছোস?তোরে আকাশ থেকে কেমনে নিচে নামাতে হয় তা আমার খুব ভালো করেই জানা আছে।
ভালোই তো তাহলে।
তুই আসবি কিনা বল?
আসুম না।
তুই আসবি না তো আমি তাইলে মেয়ের ১৪ গোষ্ঠী নিয়া ঢাকায় যামু আমারে ও চিনিস না।
আরে আম্মু এই সব কী আবাল তাবল বকতাছো?
তুই তাইলে বিয়ে করবি না?
তা কখন বললাম?
তাইলে বিয়ে করবি?
সেটাই বা কখন বলছি?
হতচ্ছাড়া তোরে সামনে পাইলে জুতা পিটা করতাম। ভাগ্য ভালো যে আমার সামনে নাই তুই। সামনের মাসের ৪ তারিখে তোর বিয়ে। আমি আজকেই বিয়ের তারিখটা মেয়ে পক্ষ কে জানিয়ে দিবো।
আজ ২৩ তারিখ আর ৪ তারিখেই বিয়ের ডেট ঠিক করে ফেললা?
তুই ছুটি নিয়ে ১ তারিখ চলে আসবি। নাইলে তোর অবস্থা খুব খারাপ হবে কিন্তু মনে রাখিস।
ইউ আর জিনিয়াস মা।যা ইচ্ছা তাই করো। কিচ্ছু বলবো না আমি। রাখছি।
মাকে আর কিছু বলতে না দিয়েই কল কেটে দিল তূর্য।
টেবিলের উপর হাতের কনুই রেখে মাথার চুল টানছে সে।মা যে আমার বিয়ে নিয়ে কি শুরু করেছে ভাল্লাগে না।
.
ফেনীতে এসে বাস থামে।অনু বাস থেকে নেমে একটা দোকান থেকে দুটো সিঙাড়া ,সস আর একটা দই নিয়ে আসার সময় কারো সাথে ধাক্কা লেগে হাত থেকে দইটা পড়ে যায়।
এই তা।একটু সাবধানে হাঁটতে পারেন না। এত তাড়া হুরা করে হাঁটার কি দরকার বুঝি না।
সরি মিস। আমার একটু দরকারি কাজ থাকায় দ্রুত হাঁটছিলাম। আপনি দুই মিনিট অপেক্ষা করুন আমি আপনার ক্ষতি পূরণ দিয়ে দিচ্ছি।
বলেই ছেলে টা দই কিনার জন্য দোকানের ভেতরে চলে গেল।
চিকন একটা ছেলে। লম্বায় ৫.৭ হবে। মুখে কোনো দাড়ি নেই।কাধে একটা ব্যাগ আছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে অল্প বয়সী ছেলে।
ছেলেটা দই নিয়ে এসে অনুর হাতে দিয়ে বললো আসি আপু।অনু কিছু না বলে গাড়িতে উঠে এসে নিজের সিটে গিয়ে বসলো।
ওমা একি ওনারা কোথায় গেলেন? পাশে সেই মানুষ দুজন কে দেখতে না পেয়ে অনু পাশের সিটের এক মহিলা কে জিজ্ঞেস করলো
আচ্ছা আপু এইখানে যে বৃদ্ধ ,বৃদ্ধা বসে ছিলেন তারা কোথায়?
ওনারা তো নেমে গেছেন।
ওহ। হয়তো ওনাদের বাড়ি এখানে কোথাও হবে ভেবে অনু আর মাথা ঘামালো না। চুপ চাপ সিঙাড়া আর দই খাওয়ায় মন দিল।
গাড়ি ছেড়ে দিবে এমন সময় একটা ছেলে উঠে আসে বাসের মধ্যে।সব সিটে মানুষ আছে। শুধু অনুর পাশের সিটে কোনো মানুষ নাই।এই সিটটা খালি দেখে ছেলেটা কাঁধের ব্যাগ বাসের ড্রয়ারে রেখে বসে পড়লো।
পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ মেলে তাকালো অনু।
মাথা ব্যথা করায় চোখ বন্ধ করে বসে ছিল। পাশে তাকাতেই অনু ভ্রু কুঁচকালো। তখনকার ছেলেটা।কানে হেডফোন লাগানোয় ব্যস্ত।
অনুর দিকে চোখ পড়তেই ছেলেটা অবাক হয়ে বললো আপনি?
হুম আমি। এতো অবাক হওয়ার কি আছে ভাই?
না এমনিতেই। আপনার বাড়ি কি খাগড়াছড়ি?
হুম।
অনেক সুন্দর একটা জায়গা।পাহাড় আর পাহাড়। আমি তো সেখানে বেড়াতে যাচ্ছি।
অনু কিছু বললো না। ছেলেটা বেশী বকে।যা অনুর পছন্দ না।
ছেলেটা আবার ও বললো
আমি সিয়াম। আপনি?
অনু ছেলেটার দিকে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল কি সে পড়ো তুমি?
বাহ্ এক বারেই তুমি?
যেটা জিজ্ঞেস করছি সেটা বলো।
ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। তুমি?
আমি অনার্সের পরিক্ষা দিয়েছি এই সপ্তাহে।
ছেলেটা মুখটাকে ফেকাসে করে বললো আপনাকে দেখে এতো বড় মনে হয় না আপু।
হুম সেটা আমি ও জানি।
আপনি খুব সুন্দর।
অনু কিছু বললো না। মোবাইলে কল আসায় অনু ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে স্ক্রিনে তনুর নাম্বার দেখে বিড়বিড় করে বললো আবার ও হাজার টা মিথ্যা কথা বলতে হবে।
অনু তুই নাকি খাগড়াছড়ি চলে যাচ্ছিস?
তোকে কে বললো?
মা বলেছে। সত্যি নাকি?
হুম। আর ২ ঘন্টা পরেই পৌঁছে যাবো।
তোকে বলে ছিলাম আমার সাথে দেখা করার জন্য। তুই আসলি না।
মন খারাপ করিস না। কিছু দিন পরেই তো বাড়িতে আসবি বেড়াতে। তখন না হয় দেখা করবো।
তুই খুব স্বার্থপর অনু।
তনুর কথায় অনু মুচকি হেসে বললো
আমি স্বার্থপর না। খোঁজ নিয়ে দেখ তোর আশে পাশের মানুষ গুলোই স্বার্থপর।
তুই আর আগের মতো নেই। বদলে গেছিস।
সময়ের সাথে সাথে সবাই বদলায়। আমাকে ও বদলাতে হয়েছে।আর ও বদলানো বাকি আছে। কিছু মানুষই বদলে যাওয়ার জন্য বাদ্ধ করেছে।
তোর সাথে কথা বলাই বেকার।
কথা বলিস না। আমি কী বলেছি তোকে কথা বলতে?
ফাজিল মাইয়া। একবার তোরে পাই কানের নিচে মারমু।দেখে নিস।
দেখবোনি। এখন বাসে আছি। রাখছি।বায়।
অনু কল কেটে মোবাইল ব্যাগে ভরে নিল। পাশে তাকিয়ে দেখলো ছেলেটা উপন্যাস পড়ছে। নীল দর্পণ বইটি।
গল্প পোকা।অনু আবার ও বাইরের দিকে চোখ রাখলো।
.
তূর্য অফিসের কাজে ধানমন্ডি ১১এ গিয়ে ভাবলো অনুকে একটু জ্বালাবে।অনুর মেসের সামনে এসে দাড়াতেই একটা মেয়ে এসে বললো
অনুমেঘা কে খুঁজছেন?
হ্যাঁ। আপনি কি করে বুঝলেন?
একটু আগেই আপনার বয়সী এক লোক এসে অনুমেঘাকে খুঁজে গেছেন।
ওহ।অনুমেঘা কোথায় ?
সে তো আজ সকালেই বাড়িতে চলে গেছেন। ওনার পরিক্ষা শেষ।তাই চলে গেছেন।
ওহ। তূর্য মুখটা কে মলিন করে যেতে যেতে ভাবলো আমার বয়সী কে আবার অনু কে খুঁজবে ? মাহির নাকি?হতে ও পারে।
এখান থেকে চলে যাবে। একটু বলে গেলেও তো হতো।
তূর্য আর মাথা ঘামালো না।
.
.
.
বাস এসে খাগড়াছড়ি স্টেশনে থেমেছে মিনিট দুই এক হবে।যাত্রীরা সবাই নামার জন্য উঠে দাঁড়িয়েছে।অনু বাসের ড্রয়ার থেকে ট্রলি ব্যাগটা বের করে বাস থেকে নেমে আসলো।বাস থেকে নামতেই একটু দূরে বাবাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুচকি হেসে এগিয়ে গেল।
এতো দিন পর মেয়ে কে দেখতে পেয়ে বুকে জড়িয়ে নিলেন। অনেক দিন পর আমার সুনশান বাড়িটা আবার হইহুল্লোড়ে মেতে উঠবে। আমার ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরে এসেছে।
অনু মুচকি হেসে বাবার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো সিএনজি ভাড়া করোনি?
করেছি তো আয় আমার সাথে।
অনু বাবার পেছনে পেছনে হাঁটতে থাকে।মেইন রোডের সামনে এসে দেখে একটা সিএনজি দাঁড়িয়ে আছে।
ড্রাইবার টা অনুকে দেখে বললো
কেমন আছো অনু মা?
আলহামদুলিল্লাহ চাচা। আপনি কেমন আছেন?
তোমাগো দোয়ায় ভালাই আছি।
অনু বাবার সাথে সিএনজি তে উঠে বসে।
.
.
বাড়িতে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে বললো কেমন আছো আম্মু ?
এতো দিন ভালো ছিলাম না তোর চিন্তায়। এখন ভালো আছি।যা আগে ফ্রেশ হয়ে নে। অনেক দূর থেকে জার্নি করে এসেছিস।
অনু মুচকি হেসে নিজের রুমে চলে গেল। হিজাব খুলে বিছানায় ছুড়ে মেরে ওয়াস রুমে চলে যায়। হাত মুখে পানি দিয়ে রুমে এসে টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছে ফ্যান অন করে দিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।
আহ কী শান্তি,,,,🙃
চলবে,,,,, 🍁