তার শহরের মায়া পর্ব-১৮

0
958

#তার_শহরের_মায়া 😍
#পার্ট_১৮
#Writer_Liza_moni

কবুল বলার পর বড়রা সবাই অনু আর তূর্য কে একসাথে বসিয়ে দেয়। তূর্যর মা অনু কে বউ হিসেবে পেয়ে অনেক খুশি। মাহির তনুকে খাবারের সময় পাহারা দিচ্ছিল। তনুর খাওয়া শেষ হলে মুচকি হেসে তনুর হাত ধরে তূর্যর কাছে এগিয়ে যায়।

তূর্যর পাশে অনু কে দেখে চোখ যেনো কঠোর থেকে বের হয়ে আসবে। তনুর হাত ছেড়ে দিয়ে মাহির অনুর দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে।অনু কে তূর্যর বউ হিসেবে দেখার জন্য মাহির একদমই প্রস্তুত ছিল না। ভীষণ অবাক হয়েছে সে।

অনু মাহির কে চোখ বড় বড় করে তাকাতে দেখে দাঁত কেলিয়ে চোখ মারলো।

মাহির থতমত খেয়ে চোখ নামিয়ে নিল।

আর মাহিরের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো মিস্টার দুলাভাই আমাকে যতটা না কষ্ট দিয়েছেন এই কয়েক মাসে, আমি যত কষ্ট পেয়েছি সব কিছু সুদে আসলে ফেরত দিবো। আমি কখনোই ভুলবো না আপনার জন্য আমি দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত কান্না করেছি। আমার কাছে জীবনের মানেটাই হারিয়ে গিয়েছিল। আমাকে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন না? এখন আপনি তৈরি হোন।

তূর্য অনুর দিকে তাকিয়ে বললো নিজের জামাই থাকতে অন্যের জামাইয়ের দিকে নজর না দিলেই হয়।

অনু দাঁত কটমট করে তূর্যর দিকে তাকালো।

তূর্য মুখটা কে বাচ্চাদের মত করে বললো
না মানে আমার কলিজা জ্বলে তো। আমি ও কিন্তু অনেক কিউট আছি মাহিরের থেকে।

কী বললেন এই মাহির কিউট?😂
ছুঁচোর মতো দেখতে লাগে ওরে। কেমনে যে ভালোবাসিলাম এরে?

অনুর কথাটায় তূর্য বেশ মজা পেলো।
.

যাওয়ার সময় অনু মাকে জড়িয়ে ধরেছিল শুধু। কান্না করেনি। তবে কষ্ট হচ্ছিল খুব। তবু ও চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়েনি।
বাবা মা অনু কে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করেছেন।

পুরোটা সময় মাহির একটা ঘোরের মাঝে ছিল। এখন ও সেই ঘোর থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি।

.
রজনীগন্ধা আর লাল গোলাপ দিয়ে সাজানো হয়েছে তূর্যর রুমটা। কিছুক্ষণ আগেই জুঁই এবং তার কিছু কাজিনরা মিলে অনু কে তূর্যর রুমে বসিয়ে দিয়ে গেছে। ওরা চলে যাওয়ার পর অনু বসা থেকে উঠে তূর্যর রুমটা দেখতে লাগলো।

এমন সময় তূর্য রুমে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করে দিল। তূর্য কে দেখে অনু্র কেমন জানি নার্ভাস ফিল হচ্ছে। কিন্তু তা সে প্রকাশ করতে চাইলো না। স্বাভাবিক ভাবেই জিজ্ঞেস করলো

তানিশার জায়গায় আমাকে দেখে আপনি অবাক হোননি কেন?

তূর্য বিছানায় বসতে বসতে বললো
আমি কী বোকা? আমাকে দেখে কী বোকা মনে হয়?

তা কখন বললাম?

কাজী সাহেব যখন আপনার নাম, বাবার নাম বলেছিলেন তখনই তো বুঝতে পেরেছি। একজন সিআইডি অফিসার কে বোকা বানানো এত সহজ না।

আপনি সিআইডি অফিসার?

আমার কথায় কী ডাউট লাগে?

এত প্রশ্ন করেন কেন উফফ।অনু গিয়ে তুর্যর পাশে বসলো।
আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে। শান্ত দৃষ্টিতে তূর্যর দিকে তাকিয়ে বললো অনু।

তূর্য অনুর দিকে তাকিয়ে বললো হুম বলুন।

আমি জানি না আপনি আমার সম্পর্কে কতটুকু জানেন।আমি হুট করে বিয়ে করতে চাইনি। বিয়ের কথা আমি আর ও পরে চিন্তা করেছি। কিন্তু আজ যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল বিয়েটা না করে আমার উপায় ছিল না।বাধ্য হয়ে বিয়েটা করতে হয়েছে। আমার জীবনে অনেক কিছু ঘটে গিয়েছে। ছেলেদের বিশ্বাস করতে এখন আমার ভীষণ ভয় হয়। আসলে বিশ্বাসটা আসে না।
আমি দেখেছি স্বার্থের জন্য মানুষ কে বদলে যেতে। বন্ধু বান্ধবের মত বিশ্বস্ত মানুষ গুলো কে ও ঠকাতে দেখেছি আমি। দিনের পর দিন ভালোবাসার অভিনয় করতে ও দেখেছি আমি।

অনু ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো।তার পর আবারও বলতে শুরু করলো
আপনি যেহেতু আমার স্বামী সেহেতু আপনার সব কিছু জানার অধিকার আছে।তিন শব্দের কবুল বলার পর আপনাকে আমার স্বামী হিসেবে মানতেই হবে। আমার একজনের সাথে তিন বছরের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সে আমার ভালোবাসা নিয়ে গেমস খেলেছে। ঠেকিয়েছে আমাকে।
অনু চুপ করে গেলো। কথা গুলো বলতে তার ভালো লাগছে না। তবুও তূর্য কে তার সব বলে দেওয়া উচিত। সম্পর্কের শুরুটা যেমন করেই হোক না কেন সম্পর্কটা তো গড়েই গেছে।

তূর্য স্বাভাবিক ভাবেই অনুর কথা শুনছে। কোনো রিয়েকশন করলো না সে।
অনুর মুখ দেখেই সে বুঝতে পারছে যে অনুর কথা গুলো বলতে ভালো লাগছে না।

তূর্য অনুর দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো ফ্রেশ হয়ে আসেন । এই ভারি শাড়ি গয়না পরে থাকতে কষ্ট হচ্ছে না?

তূর্যর কথায় অনু অবাক হলো ভীষণ। লোক টা কে যেমন ভেবেছিলাম তেমন নয়। না জানি ফিউচারে কেমন হবে?

অনু মাথা নাড়িয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে গয়না গুলো সব খুলতে লাগল। তূর্য এক নজরে অনুর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো

আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি অনু। মাহির আপনার সাথে যা করেছে তা আমি আমার সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে ভুলিয়ে দিব।ওর দেওয়া কষ্ট হয় তো আপনি কোনো দিন ও ভুলবেন না। কিন্তু আমি আমার ভালোবাসার চাদরে আপনাকে জড়িয়ে রাখবো। তখন আপনি নিজেই বলবেন মাহির আপনার সাথে ওমনটা করেছে বলেই আমাকে পেয়েছেন। আপনাকে কখনো কষ্ট পেতে দিবো না আমি। আপনার ভাঙ্গা মনকে আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে জুড়ে দিবো।প্রমিস।

তূর্য উঠে ওয়াস রুমে চলে গেল ফ্রেশ হওয়ার জন্য।
কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে এসে টাওয়াল দিয়ে হাত মুখ মুছতে মুছতে অনুর উদ্দেশ্যে বললো আমি বাইরে যাচ্ছি। আপনি ফ্রেশ হয়ে এসে শাড়ি টা বদলে নিন।

অনু তূর্যর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর ওয়াশ রুমে চলে গেল।ফ্রেশ হয়ে এসে ব্যাগ খুলে দেখে সেখানে সব শাড়ি। শাড়ি ছাড়া কিছুই নেই। শাড়ি পরতে মোটামুটি পারে অনু।ওতো সুন্দর হয় না। কুচি এলোমেলো হয়ে যায়। একটা শাড়ি নিয়ে রুমের দিকে তাকিয়ে দেখে তূর্য নেই। দরজা বাইরে থেকে বন্ধ।অনু তবু ও এগিয়ে গিয়ে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেয়।যদি তূর্য চলে আসে শাড়ি পরার মাঝে।তাই রিস্ক নিলো না।

শাড়ি পরে বিছানায় বসতেই দরজায় টোকা পড়লো।অনু দরজা খুলে দিয়ে দেখে তূর্য দাঁড়িয়ে আছে।

আমাকে কী বিশ্বাস করা যায় না?

বলেছি তো এখন সহজে কাউকে বিশ্বাস করতে পারিনা।

তূর্য রুমে ঢুকে অনুর উদ্দেশ্যে বললো অযু করে আসুন।

অনু কিছু না বলে ওয়াস রুমে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর অযু করে এসে তূর্যর সাথে নামাজ পড়ে নিলো।

জায়নামাজ গুছিয়ে রেখে অনু বিছানায় গিয়ে বসলো। তূর্য বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। চাঁদের আলোয় আলোকিত চারপাশ।

রাত প্রায় ১ টা।অনু বিছানার চাদরের দিকে তাকিয়ে রইলো।লাল গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে আছে।অনু হাতের মুঠোয় কিছু পাপড়ি নিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।

এমন একটা রাত যে তার জীবনে আসবে এই কয়েক দিনে ভাবেনি সে। তূর্য রুমে এসে অনুর উদ্দেশ্যে বললো অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ুন।

অনু তূর্যর দিকে এক নজর তাকিয়ে বললো
আপনি তো তখন আমার সব কথা শুনেন নি।

তূর্য মুচকি হেসে বললো
আমাদের জীবন মাত্র শুরু হয়েছে।একে অপরকে জানার এখন ও অনেক সময় পরে আছে। আপনার মন যখন বলতে চাইবে আপনি বলিয়েন। তখন যদি আমার হাজারো কাজ থাকে তার পর ও আমি বিরক্ত না হয়ে মন দিয়ে আপনার কথা শুনবো।সারা দিন অনেক ধকল গেছে। এখন একটু ঘুমিয়ে নিন। আপনার চোখে অনেক ঘুম আসছে। দেখতে পাচ্ছি আমি। আগামীকাল সকালে আবার বউ ভাতের আয়োজন করা হয়েছে। অনেক ধকল যাবে।তাই বলছি ঘুমিয়ে নিন।

অনু তূর্য কে আজ যত দেখছে তত অবাক হচ্ছে।অনু আর কিছু না বলে মাঝখানে বালিশ দিয়ে শুয়ে পড়ল।

মাঝে বালিশ দিতে হবে না। বিছানায় আপনি ঘুমান। আমি সোফায় ঘুমাবো। আমি জানি আমাকে মেনে নিতে, বিশ্বাস করতে, ভালোবাসতে আপনার অনেক সময় লাগবে। তার আগে আমি আপনাকে ছুঁবো না। কথা দিলাম।
তূর্য মুচকি হেসে লাইট অফ করে ড্রিম লাইট জ্বেলে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ল।

সারা দিন অনেক ধকল যাওয়ায় অনু ঘুমিয়ে পড়েছে। তূর্য অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
.
.
তনু ঘুমিয়ে আছে।মাহিরের কেন জানি ঘুম আসছে না। কেমন জানি অস্থির অস্থির লাগছে। বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো সে। সিগারেটের নেশা জেগেছে তার। পকেট থেকে এক প্যাকেট সিগারেট বের করে একটার পর একটা শেষ করতে লাগলো।

ঘুম আসছে আজ।তনু কে জড়িয়ে ধরলে যার ঘুমে চোখ ভারি হয়ে আসতো তার ঘুম আসছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে ধোঁয়া ছাড়চে।

তনু পাশ ফিরে বিছানায় মাহির কে দেখতে না পেয়ে ঘুম ঘুম চোখে উঠে বসলো। কয়েক বার মাহির কে ডাকার পর ও কোনো সাড়া না পেয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো।

এতো রাতে গেল কোথায় আবার?
বেলকনিতে কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে সে দিকে এগিয়ে যায় তনু।

মাহিরের কাঁধে হাত রাখতেই মাহির চমকে উঠে পাশে তাকায়। তনু কে দেখতে পেয়ে সিগারেট বাহিরে ফেলে দিল।
তনু রাগী কন্ঠে বললো
তুমি আবার ও সিগারেট খাচ্ছো কেন?

ঘুম আসছিলো না তাই।

তাই বলে সিগারেট খাবে?

সরি।আর খাবো না।

মনে থাকে যেন।

হুম।

তনু কিছুক্ষণ মাহিরের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো সত্যি করে বলো তো তোমার কী হয়েছে? তূর্য আর অনু কে দেখার পর থেকেই তুমি কেমন যেনো সব উল্টোপাল্টা কাজ করছো।কী হয়েছে আমাকে বলো?

আরে না কিছু হয়নি।কী হবে? এমনিতেই অফিসের কাজ নিয়ে একটু টেনশনে আছি।বস ফোন করে বলেছে যেন বউ ভাতের পরই অফিসে চলে যাই।

ওহ আচ্ছা।আসো ঘুমাতে আসো। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিবো।

চলবে,,,, 🍁