তার শহরের মায়া পর্ব-১৯

0
905

#তার_শহরের_মায়া 😍
#পার্ট_১৯
#Writer_Liza_moni

সকালে তুর্যর আগে অনুর ঘুম ভাঙ্গলো। বিছানা থেকে নেমে হাই তুলতে তুলতে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে সময় দেখে অনুর চোখ বড় বড় হয়ে গেল। আটটা বাজে সবাই এখন কী ভাববে?এত বেলা হয়ে গেছে।

অনু ব্যাগ থেকে একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াস রুমে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর চুল মুছতে মুছতে বের হয়ে এসে সোফার দিকে চোখ পড়ল। তূর্য এখন ও ঘুমিয়ে আছে।অনু ধীর পায়ে তূর্যর দিকে এগিয়ে গেল।

তূর্য গুটি শুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে।
এতো লম্বা মানুষ, শরীর ও মাশাআল্লাহ। এই সোফায় ঘুমুতে পারে।বাহ্।

এই যে শুনছেন?
অনেক বেলা হয়ে গেছে উঠুন। একটু পরেই সবাই ডাকা ডাকি শুরু করবে।

তূর্য নড়েচড়ে আবার ও ঘুমিয়ে গেল।

কী প্রানীরে বাবা?অনু তূর্যর কাঁধ ধরে ঝাকুনি দিতেই চোখ মেলে তাকায় তূর্য। ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো কি হয়েছে মা এতো সকালে ডাকছো কেন?

আরেএএএএএ আমি কী আপনার মা লাগি নাকি?বউ লাগি আপনার।

তূর্য চোখ ছোট ছোট করে তাকালো অনুর মুখের দিকে। ঘুম ঘুম কন্ঠেই বললো ও বউ আরেকটু ঘুমাতে দেন না প্লিজ।

অনু থমকালো। তূর্যর ঘুম ঘুম কন্ঠা মাহিরের থেকে ও মারাত্মক।অনু ধীর কন্ঠে বললো সাড়ে আটটা বাজে। একটু পরেই ডাকতে আসবে। উঠুন।

তূর্য শোয়া থেকে উঠে বসলো। চোখ ডলে অনুর দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললো আপনি এত সকালে গোসল করেছেন কেন?

আপনি না সিআইডি অফিসার। ভালো করে চিন্তা করে দেখুন।

আমাদের মাঝে তো কিছুই হয়নি।

অনু চোখ গরম করে তূর্যর দিকে এক নজর তাকিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল হালকা আঁচড়ে নিলো। ভেজা চুল তো আর বেঁধে রাখা যায় না।তার চেয়ে বড় কথা মাহির কে এই ভেজা চুল দেখাতে হবে তো।

তূর্য কিছুক্ষণ থম মেরে বসে রইলো। তার পর উঠে এসে অনুর পেছনে দাঁড়িয়ে আয়নায় অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো
আপনি খুব চালাক। আমাদের সম্পর্কটা যে ঠিক হয়নি তা যেন কেউ বুঝতে না পারে তার জন্য এই সিদ্ধান্ত?

বুঝতে পেরেছেন তাহলে?
আপনাকে সিআইডি অফিসারেই মানায়।

অনু হালকা গয়না পরে আর হালকা সেজে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। গোসল করে আসুন। আমাদের মাঝে যা আছে তা আমাদের মাঝেই থাক।অন্যরা জানলে কষ্ট পাবে।

তূর্য কিছু বললো না।

অনু শাড়ির আঁচল টেনে মাথায় ঘোমটা দিয়ে দরজার কাছে এগিয়ে যেতেই তূর্য ডাক দিল।

শুনুন,,

অনু পেছন ফিরে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকায়।

না কিছু না।
অনু বাইরে চলে গেল।

আমার বউটা হেব্বি কিউট। তনু ভাবির চেয়ে ও। বুদ্ধিমতী ও। ধন্যবাদ মাহির।অনু কে আমার জন্য ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য। ছেড়ে গেলি বলেই তো আমি ওরে পেয়েছি।
তূর্য মুচকি হেসে এক হাত দিয়ে মাথার চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে কাভার্ড থেকে ট্রাউজার আর গেঞ্জি নিয়ে ওয়াস রুমে চলে গেল।
.
.
অনু রুম থেকে বের হয়ে সিঁড়ি বেয়ে নামার সময় মাহিরের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল।অনু নামছে মাহির উপরে যাচ্ছে।অনুর মুখের কাছের চুল থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। চুলের পানি গুলো অনু ইচ্ছে করেই ভালো করে মুছেনি।

মাহির অনুর দিকে কেমন করে যেন তাকালো।অনু ডোন্ট কেয়ার ভাব করে নিচে নেমে আসলো। মাহির উপর থেকেই অনুর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

মনে মনে একটা কথাই ভাবছে মাহির
যে মেয়েটা তার সাথে দেখা হলেই চোখ ভিজে যেতো সে মেয়েটা এখন তাকে দেখলে ডোন্ট কেয়ার ভাব ধরে। কতটা বদলে গেছে অনু।

অনু কে দেখতে পেয়ে জুঁই এসে জড়িয়ে ধরলো।কী ভাবি কেমন ঘুম হয়েছে?

খুব ভালো।

সেকি অনু তোর তো কাল রাতে ঘুম না হওয়ার কথা ছিল।

কেন?

তনু অনুর কানে কানে বললো
কেমন আদর করেছে‌ আমার দেবর ?

আপুইইইই ভুলে যাবি না তুই আমার বড় বোন লাগিস।

বড় বোন সেটা বাড়িতে গেলে। এখন তোর জা লাগি।

তনু মা অনু কে আর লজ্জা দিও না।দেখো লজ্জায় কেমন মুয়ে গেছে।

ফুফু মনি তোমার ছেলের বউ এমনিতেই একটু লজ্জাবতী গাছের মতো। ছুঁয়ে দেওয়ার আগেই লজ্জায় মুয়ে যায়।

অনু তনুর হাতে চাপ দিয়ে বললো একটু চুপ কর না বইন। আমি তোর ছোট বোন লাগি।

অনু মা এ দিকে আসো তো বলে তূর্যর মা তার রুমে চলে গেল।
অনু তনুর মুখের দিকে তাকালো।

যা কিছু দিবে হয় তো।

অনু মাথা নাড়িয়ে তূর্যর মায়ের কাছে চলে গেল।

তূর্যর মা আলমারি খুলে একটা বক্স বের করে অনুর হাতে দিল। তার পর কলা পাতা রঙের একটা মসলিন শাড়ি বের করে বিছানায় রাখলেন।অনু কে বসতে বলে তিনি ও বিছানায় বসলেন।

অনু বসলো।বক্সটা তূর্যর মায়ের হাতে দিল।

তিনি বক্সটা খুলে এক জোড়া কানের দুল বের করে অনুর হাতে দিলেন।

এইটা আমার ছেলের বউয়ের জন্য। তার পর চিকন একটা চেন বের করে অনুর গলায় পরিয়ে দিলেন।

সিম্পল জিনিস সব সময় অনুর পছন্দের। কানের দুল গুলো ও সিম্পলের মধ্যে।

পছন্দ হয়েছে?

ভীষণ।অনু তূর্যর মাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি আপনাকে আম্মু আর তুমি বলে ডাকি?

অবশ্যই। আমি তো তোর মায়ের মতই।

মতো না।মা হতে হবে।যেমন জুঁই এর মা।

তূর্য মা অনু কে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো
আমি তোর মতই একটা মেয়ে চেয়ে ছিলাম। ছেলের বউ না।
.
.
তূর্য গোসল করে বের হয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছতে লাগলো। মাথায় শয়তানি বুদ্ধি উদয় হলো তার। মাহির কে একটু জ্বালানো যাক।তিন বছর রিলেশন যখন করেছে মায়া তো একটু হলেও হয়েছে।

তূর্য গলা উঁচু করে অনু কে ডাকতে লাগলো।
অনুমেঘা
অনুমেঘা
আমার ঘড়িটা কোথায় রাখছেন?

একটু এদিকে আসুন তো।

সে সময় মাহির তূর্যর রুমে আসলো।
মুখটাকে গম্ভীর করে বললো
তুই তো নাকি বিয়েই করতে চাস নাই তাহলে এখন বউকে ছাড়া আর কাউকে খুঁজিস না কেন?

তূর্যর খুব হাসি পাচ্ছে। কিন্তু সে হাসলো না।

আরে বলিস না।কাল রাতে ওরে বলছি ঘড়িটা হাত থেকে খুলে দিতে। দিছে কিন্তু কোথায় যে রাখছে পাচ্ছি না।

তুই গোসল করেছিস?

ওমা গোসল করবো না কেন? তুই কি ভুলে গেলি নাকি কাল আমাদের বাসর রাত ছিল।

না ভুলিনি। এমনিতেই জিজ্ঞেস করলাম।

.
আমার ছেলেটা বিয়েই করতে চায়নি।আর এখন বউকে চোখে হারাচ্ছে।যা মা দেখে আয় কেন ডাকছে।

অনু লাজুক হেসে তূর্যর রুমের দিকে চললো।ঢং
ওনার ঘড়ি কী আমি রেখেছি না কি যে খুঁজে পাচ্ছে না।

অনু রুমে এসে দেখে মাহির আর তূর্য কথা বলছে। তূর্য হাসলে ও মাহির খুব গম্ভীর।

কী হয়েছে দুলাভাই? আপনার মন খারাপ মনে হয়?মন খারাপ কেন?আপু কী সব জেনে গেছে?

জানতে দিলেই তো জানবে। মাহির এটা বলে রুম থেকে বের হয়ে গেল।অনু তো হাসতে হাসতে শেষ।

কী হয়েছে এতো হাসছেন কেন?

না এমনিতেই।এই ভাবে ষাঁড়ের মত চিল্লিয়ে ডাকছিলেন কেন? বাড়িতে যে মেহমান আছে সেই খবর নাই?

তূর্য মুচকি হেসে মাথা চুলকিয়ে বিড় বিড় করে বললো এত সুন্দর বউকে একা ছাড়তে কলিজায় লাগে।

অনু ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো তূর্যর মুখের দিকে।কী বিড় বিড় করছেন?

কিছু না তো। আমার ঘড়িটা পাচ্ছি না। একটু খুঁজে দেন তো।

অনু ড্রেসিং টেবিলের উপরে তাকিয়ে সে দিকে এগিয়ে গেল।ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে ঘড়িটা নিয়ে তূর্যর হাতে দিয়ে বললো নাকের জন্য কী চোখে দেখেন না?
লম্বা মানুষের নাক ও লম্বা থাকে।

তূর্য মুচকি হেসে মনে মনে বললো আপনার জন্যই তো দেখতে পেয়ে ও না দেখার ভান করে ডাক দিলাম।

নিচে আসুন।সবাই নাস্তা করার জন্য ডাকছে।
অনু আর তূর্য রুম থেকে বের হতে যাবে এমন সময় জুঁই এসে নাস্তার ট্রে অনুর হাতে দিয়ে বললো
মা বলেছে ঘরেই খাওয়ার জন্য। নিচে অনেক মানুষ।

অনু রুমে এসে বিছানায় বসে লুচি আর গরুর মাংস ভুনা খাওয়া শুরু করে দিল। অনেক ক্ষিদা পেয়েছে তার।

একা একা খাচ্ছেন কেন?

আপনি ও খান।
তূর্য ও বসে পড়লো খাওয়ার জন্য। খাওয়া শেষে তনু এসে অনুর হাতে কিছু শাড়ি দিয়ে বললো বউ ভাতের জন্য যেটা মন চায় সেটা পরে নিস।পার্লার থেকে মেয়েরা এসে সাজাবে।

১১ টার দিকে পার্লারের মেয়েরা এসে অনু কে সাজানো শুরু করে দিল। তূর্য একটা লাল খয়েরী রঙের পাঞ্জাবি ফতুয়া পরেছে।

অনু কে ও তূর্যর সাথে মেচিং করে শাড়ি পরানো হয়েছে।কাপল পিক তুলার সময় তূর্য অনু বিভিন্ন ধরনের পোস দিয়েছে। বিয়েটা একবার হয়।যেমন করেই হোক না কেন?বিয়েতো হয়েছে।

মাহির সারাটা সময় এক জায়গায় দম মেরে বসে ছিল শুধু। তনুর সাথে দুয়েকটা কথা বলেছে। কেমন জানি লাগছে তার। বলতে পারছে না কাউকে।

চলবে,,,, 🍁