#তার_শহরের_মায়া 😍
#পার্ট_২৩
#Writer_Liza_moni
অনুর ইচ্ছে করছে তূর্য কে কিছুক্ষণ ইচ্ছে মতো বকা দিতে।
কী দরকার ছিল বৃষ্টিতে ভিজার? তখন মুখ বড় করে কী বলে ছিল,,
“বৃষ্টিতে ভিজলে আমার জ্বর আসে না। বৃষ্টিতে ভিজতে আমি অভ্যস্ত। ঢং হুঁ 😏”
এখন কার জ্বর আসছে শুনি? কোনো কথা বললে সেটা শুনতে চাইবে না।
অনু তূর্যর মাথায় জল পট্টি দিচ্ছে আর বিড় বিড় করে ওকে বুকে যাচ্ছে।রাত প্রায় আড়াইটা বাজে।সবাই ঘুমিয়ে আছে।চার দিক কেমন নিস্তব্ধ। রুমের জানালা দিয়ে শো শো করে বাতাস আসছে। আবহাওয়ার এই একটা বদ অভ্যাস যখন তখন পরিবর্তন হবে।
অনু বিরক্ত হয়ে উঠে জানালা বন্ধ করতে যাবে এমন সময় বিদ্যুত চলে গেল।
ধেত,,,বিপদ আসলে সব এক দিক থেকেই আসে।এই অন্ধকারের মাঝে এখন মোমবাতি পাবো কোথায়? আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।অনু ধীর পায়ে অন্ধকারের মধ্যে হাত দিয়ে খুঁজে বিছানার পাশে এসে বালিশের নিচ থেকে মোবাইল নিয়ে টর্চ জ্বালালো।
জানালা বন্ধ করতে গেলে অনেক জোরে বর্জ্য পাত হয়।অনুর ভয়ে হাত থেকে মোবাইলটা নিচে পড়ে যায়।অনু বুকে থুতু দিয়ে নিচ থেকে মোবাইলটা হাতে নিলো। মোবাইল ভালো করে দেখে দেখলো কিছু হয়নি।শুধু উপরের গ্লাস টা ভেঙ্গে গেছে।
অনু জানালাটা বন্ধ করে তূর্যর পাশে গিয়ে বসলো। পানি পিপাসা পেয়েছে ভীষণ।ভয় পেয়ে ছিল তখন খুব।
অনু বসা থেকে উঠে টেবিলের উপরে রাখা জগ থেকে পানি গ্লাসে ঢেলে ডগডগ করে খেয়ে নিল। শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ মুছে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে মোমবাতি বের করে আগুন ধরানোর জন্য রান্না ঘর থেকে গ্যাস লাইট আনার জন্য চলে গেল।তার দিকে কেমন ঘুটঘুটে অন্ধকার। এতো দিন ইচ্ছে মতো গরম পরায় এখন ভীষণ বৃষ্টি হচ্ছে।
অনু রান্না ঘরে গিয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে আসার সময় চোখ পড়লো তনু আর মাহিরের রুমের দিকে। দরজা খোলা।অনু আশে পাশে তাকানোর সময় ড্রইং রুমের দিকে চোখ গেলো। সেখানে সোফায় কাউকে শুয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে গেল অনুর।অনু একটু এগিয়ে গিয়ে দেখলো সোফায় হাত পা ছড়িয়ে মাহির ঘুমিয়ে আছে।
এই লোক এখানে ঘুমাচ্ছে কেন?বউ কে ছেড়ে তো নাকি এক রাত ও থাকতে পারে না। তাহলে এখানে ঘুমায় কেন?
অনু তনুর রুমের দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখলো তনু বিছানার মাঝে শুয়ে আছে। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
অনু এদের মধ্যে কী হয়েছে তার আগা গোড়া কিছুই বুঝলো না।তাই আর মাথা ঘামালো না।তার মাথা তার ব্যাথা। আমার কী?
অনু রুমে এসে দেখে তূর্য কাঁপছে অনবরত। দুইটা মোটা কম্বল গায়ে দিয়ে দেওয়ার পর ও এতো কাঁপছে।
অনু মোমবাতি টা বিছানার পাশের টেবিলে রেখে তূর্যর কপালে হাত দিয়ে দেখলো অনেক গরম। হাত পুড়ে যাচ্ছে অনুর।
তূর্য কাঁপছে তো কাঁপছে। বাইরে বৃষ্টি পড়ছে তার ফলে ঠান্ডা লাগছে অনুর ও।অনু কী করবে কিছু বুঝতে না পেরে বিছানায় বসে পড়লো। তূর্য কে কাঁপতে দেখে অনু কম্বলের নিচে শুয়ে পড়ল। তূর্য কে জড়িয়ে ধরে। তূর্যর গায়ের তাপে অনু ঘেমে গেছে পুরো।
তার পর ও তূর্য কে ছাড়লো না। সেই ভাবেই জড়িয়ে ধরে রইলো।
.
.
সকালে তুর্যর আগে ঘুম ভেঙ্গে যায়। বুকের উপর ভারি কিছু অনুভব হয়।জ্বর এখন ও আছে তার। গায়ের উপর থেকে কম্বল সরিয়ে অনু কে তার বুকের উপর দেখে ভীষণ অবাক হলো।অনু তূর্য কে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।যেন ছেড়ে দিলেই তূর্য হারিয়ে যাবে।
তূর্য মুচকি হেসে অনুকে জড়িয়ে ধরলো। মনে মনে জ্বর কে অনেক ধন্যবাদ জানালো।
.
নয়টার দিকে অনুর ঘুম ভাঙ্গলো। ঘুম থেকে উঠে নড়তে না পেরে গলা উঁচিয়ে দেখে তূর্যর বুকের মাঝে ঘুমিয়ে আছে। তূর্যর নিঃশ্বাস অনুর মুখের উপরে আঁচড়ে পরছে। তূর্য ঘুমিয়ে আছে দেখে অনু তূর্যর কপালে হাত দিয়ে দেখে জ্বর এখন ও কমেনি।
অনু তূর্যর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো। ঘড়ির কাঁটা জানান দিচ্ছে যে,,সে এখন সাড়ে নয়টার পথে যাচ্ছে।
অনু মাথার চুল গুলো খোঁপা করতে করতে ওয়াস রুমে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে এসে টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে তূর্য দিকে তাকিয়ে দেখলো তূর্য অনুর দিকে তাকিয়ে আছে। মুচকি হেসে।
অনু তূর্যর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো
এতো অসুস্থ থাকার পর ও আপনার মুখের এই মুচকি হাসিটা যায় না কেন?সব সময় আপনাকে মুচকি হাসতে দেখি।
মুচকি হাসি দেওয়া আমার অভ্যাস হয়ে গেছে।শত কঠিন পরিস্থিতিতে ও আমি মুচকি হাসতে পারি।আর মুচকি হাসা সুন্নাত।
অনু বিড় বিড় করে বললো আপনাকে এই মুচকি হাসিটাতেও অনেক কিউট লাগে।এই হাসিটা আপনাকে ভীষণ মানায়।
কী বিড় বিড় করো?
কিছু না। উঠুন, উঠে ফ্রেশ হয়ে আসেন। আমি আপনার জন্য সুপ রান্না করে নিয়ে আসতেছি।
অনু রুম থেকে বের হয়ে রান্না ঘরে চলে গেল। তূর্য আস্তে আস্তে শোয়া থেকে উঠে বসলো।জ্বরে ধরেছে তাকে।প্রায় দেড় বছর পর এই ভাবে জ্বর আসছে তার।
জ্বরটাকে তার লাকি মনে হচ্ছে।জ্বর আসছে বলেই বউয়ের এতো সেবা পাচ্ছে সে।
উঠে ওয়াশ রুমে চলে গেল ফ্রেশ হওয়ার জন্য।
.
.
অনু রান্না ঘরে যেয়ে দেখে তনু মুখটাকে গম্ভীর করে কিছু একটা রান্না করছে।
কী রান্না করিস আপু?
গাজরের হালুয়া।
মাহিরের জন্য যে গাজরের হালুয়া রান্না করছে তা বুঝতে বাকি নেই অনুর। এই হালুয়া মাহিরের অনেক পছন্দের।অনু ও আগে অনেক বার মাহিরের জন্য এটা রান্না করে নিয়ে গিয়েছিল।অনু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
তূর্য্য জন্য সুপ রান্না করতে করতে বললো
কী রে বোন,,, তুই আজ এতো চুপ চাপ কেন?
গতকাল রাতে দেখে ছিলাম দুলাভাই সোফায় শুয়ে ছিল তাও ড্রইং রুমে। তোদের মধ্যে কী কিছু হয়েছে?
তনু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো
ছোট খাটো একটা বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়।
কী বিষয় জানতে পারি?
হুম।ওর অফিস থেকে ফোন আসছিলো। আগামীকাল থেকে নাকি অফিসে জয়েন করতে হবে। আমি বললাম আর তিন চার দিন ছুটি নেওয়ার জন্য। কিন্তু ও আমার কথা শুনেনি। আজকেই নাকি ঢাকা ফিরে যাবে।
এই জন্য রাগ করছোস ?
তনু অনুর দিকে তাকিয়ে বললো
ঢাকায় গেলে আবার ও বন্দি থাকতে হবে।বাড়ি থেকে বের হলেই বয়স্ক কিছু মহিলা প্রশ্ন ছুড়ে মারে
বিয়ের এতো দিন হয়ে গেলো এখন ও বাচ্চা নিচ্ছো না কেন?
এমন হলে কেমনে হবে? তুই ওনাদের বলে দিতে পারিস না যে , তোদের যখন সময় হবে তখন বাচ্চা নিবি।আর বাচ্চা হলে ওনারা কী এক বেলা সবাই কে সিন্নি খাওয়াবে ?আজব তো।
তনু আর কিছু বললো না।
সুপ কার জন্য আবার?
আমার এক মাত্র গুনোধর জামাইয়ের জন্য।
কী হয়েছে ওর ?
আর বলিস না আপু। গতকাল রাতে যে বৃষ্টিতে ভিজে, গায়ে ভিজা কাপড় নিয়ে নিয়ে বসে ছিল যার ফলে ঠান্ডা লেগে গেছে।আর এখন জ্বর আসছে। শরীরে হাত দেওয়া যাচ্ছে না। এতো জ্বর।
সেকি। তুই ওকে সুপটা খাইয়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যা।
অনু তূর্যর জন্য সুপটা বাটিতে ঢেলে নিয়ে বললো আমার কাছে ঔষধ আছে। সেটা খাইয়ে দেখি।
.
.
তূর্য জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। জানালা খুলে দিয়ে দেখলো তার দিকে কেমন সতেজ হয়ে আছে। বৃষ্টি পড়ায় হয়তো তাদের এতো সতেজতা।
অনু সুপ নিয়ে রুমে এসে দেখে তূর্য একমনে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।
এই যে এখানে আসুন।সুপটা খেয়ে ঔষধ খেয়ে নিন।
তূর্যর মুখে সেই মুচকি হাসি। চোখ মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে যে তার ভালো লাগছে না। তার উপরে ও এই মুচকি হাসিটা আছেই মুখে।
তূর্য ভদ্র ছেলের মতো সুপটা খেয়ে ঔষধ খেয়ে নিল।
রেস্ট করুন। বলে অনু বাটি নিয়ে চলে গেলো।
দুপুরে দিকে তনু আর মাহির ঢাকা যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নিল। মাহির চাইলেই আর ও কিছু দিনের ছুটি নিতে পারতো। কিন্তু সে তা করেনি।কারন এখানে থাকতে চাইছে না সে।
তূর্য ঔষধ খাওয়ার পর একটু ভালো হয়েছে। সবাই মিলে তনু আর মাহির কে বিদায় জানাতে ড্রইং রুমে এসে হাজির।অনু শয়তানি হেসে মাহির কে উদ্দেশ্যে করে বললো,,,
দুলাভাইইইইই কিছু দিন পর তো আমরা ও ঢাকায় ফিরে যাবো। আপনার ভাইয়ের কাজের সুবাদে।তো আমি বনানীতে থাকবো না। থাকতে চাই না আর কি। আপনি আপনাদের ফ্লাটের রুম খালি পেলে আমার আর আপনার ভাইয়ের জন্য বাঁড়া নিয়েন তো।
মাহির মুখটা কে গম্ভীর করে উত্তর দিল
আচ্ছা।
তূর্য দেওয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে অনুর করলাম কান্ড দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।
অনু তূর্য কে মুচকি হাসতে দেখে একটা চোখ টিপ মারলো।তা দেখে মাহিরের কাশি উঠে গেছে। বেচারা কাশতে কাশতে শেষ।
চলবে,,,, 🍁