#তার_শহরের_মায়া 😍
#পার্ট_২৪
#Writer_Liza_moni
মাহিররা চলে গেছে প্রায় আধা ঘন্টা আগে। তূর্য অনুর রুমে গিয়ে শুয়ে আছে। শুধু শুধু শুয়ে থাকতে বোরিং লাগছে তূর্যর।
বউটা থাকলে ও কথা বলা যেতো। কিন্তু সে তো নিজের কাজে ব্যস্ত। তূর্য বালিশের নীচ থেকে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে তার মোবাইলের টাচ স্ক্রিনটা ফেটে গেছে।দাগ পড়ে গেছে।
তূর্য ভ্রু কুঁচকে মোবাইল অন করলো। মোবাইল তো ঠিকই আছে। আমার হাত থেকে পড়ে তো আর এমনটা হয় নি। তাহলে ,,,
এমন সময় অনু শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে রুমে এসে তূর্য কে মোবাইল নিয়ে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো,,
“আরে আপনি আমার মোবাইল কেন নিছেন?”
“তূর্য নড়েচড়ে বসে বললো তোমার মোবাইল আমি নিলে দোষের কি?”
“দোষের কি মানে,,,?”
“আমার বউয়ের মোবাইল আমি দেখতে পারি না?”
“না আমি তা বলিনি।”
তূর্য অনুর দিকে মোবাইলটা বারিয়ে দিয়ে বললো
দেখো এটা আমার মোবাইল। তোমার টা না।
অনু মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখে আসলেই এটা তার মোবাইল না।
অনু নাক ধরে দাঁত দিয়ে জিভ কেটে মুখটাকে বাচ্চাদের মত করে বললো সরি। আসলে রাতে আমার হাত থেকে পরে মোবাইল টা পরে গিয়েছিল। আরেকটা সরি। আমি মনে করেছিলাম ওটা আমার ফোন।
অনুর সরি বলার স্টাইল দেখে তূর্য হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে।
তূর্যর হাসি দেখে অনু থমকে গেল। তূর্য হাসলে মে তার এক গালে টোল পরে তা আজ দেখলো অনু।কী সুন্দর লাগে।সব সময় মুচকি হাসে বলে বুঝা যায় না।
অনু মুগ্ধ চোখে দেখছে তূর্যর হাসি। খুব কম ছেলেরা হাসলে তাদের গালে টোল পড়ে।
অনু তূর্যর দিকে তাকিয়ে আনমনে বলে উঠলো ইসসস কী কিউট হাসি।
তূর্য হাসিয়ে থামিয়ে অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো
মেঘুপাখি কী দেখো এই ভাবে?
অনু মুখটাকে মলিন করে বললো
কই কিছু না তো।
অনু সেখান থেকে এসে বেলকনিতে গেলো। বেলকনিতে আজ ফুলের মিষ্টি গন্ধে মৌ মৌ করছে।অনু বড় করে একটা নিঃশ্বাস নিলো। তার লাগানো সব পর্তুলিকা ফুল ফুটেছে আজ। হলুদ, গোলাপি, সাদা, কমলা রঙের সহ আরও।
হলুদ,লাল, হালকা গোলাপি রঙের গোলাপ ও ফুটেছে।মাধবি লতা গাছে ও থোকা থোকা ফুল ফুটেছে।
অনুর মন খারাপ হওয়ার আগেই ভালো হয়ে গেছে।
তূর্য ও বেলকনিতে এসে দাঁড়ায়।তার দিকে এতো এতো ফুল দেখে ভীষণ আনন্দ হলো তার। তূর্য ও ভীষণ গাছ প্রেমি। তবে সেটা ফুল গাছ। কোনো আগাছা না।
যাক আমার মতই একটা ফুল গাছ প্রেমি বউ পেয়েছি।
অনু তূর্যর দিকে তাকিয়ে বললো
আপনি গাছ প্রেমি,,,?
তূর্য মুচকি হেসে বললো
হুম।
আপনার বাড়িতে তো কোনো গাছ দেখলাম না।মানে বেলকনিতে।
আমি তো বেশির ভাগ সময় ঢাকায় থাকি।এখানে তো খুব কম সময় থাকা হয়।তাই এখানে কোনো গাছ লাগাইনি।যত্ন নেওয়ার মতো কেউ নেই।ঢাকায় আমি যে বাসায় থাকি সেখানে অনেক গাছ পাবে।
আপনার শরীর আগে থেকে ভালো আছে তো?জ্বর কমেছে?
তূর্য কপালটা বারিয়ে দিয়ে বললো
নিজেই দেখে নাও।
অনু একটা ঢোক গিলে তূর্যর কপালে হাত রেখে দেখলো শরীর তেমন একটা গরম না।জ্বর কমেছে ।
কী দেখলা?
ভালো হয়ে গেছেন।
হুম।
.
.
রাতের দিকে তনু কল করে বলে দিয়েছে তারা পৌঁছে গেছে।
অনু বিছানায় বসে বসে হাতের নখ কামড়াচ্ছে। তূর্য একটু বাইরে গিয়েছিল। বাড়িতে এসে অনুর রুমে গিয়ে দেখে অনু আনমনে কিছু ভাবছে আর তার গান হাতের নখ কামড়াচ্ছে।
ছিঃ ছিঃ মেঘুপাখি কী খবিস তুমি? তূর্য নাক ছিটকে বললো।
অনু তূর্যর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বললো
আমি আবার কী করলাম?
খবিস বললেন কেন?
এতো বড় হয়ে তুমি হাতের নখ কামড়াচ্ছো?
অনু হাতের দিকে তাকালো। আসলে আমি যখন খুব টেনশনে থাকি তখন ডান হাতের নখ কমড়াই।এটা আমার খুব বাজে অভ্যেস।
তূর্য অনুর পাশে এসে বসলো।অনুর দিকে তাকিয়ে বললো
কী হয়েছে মেঘুপাখি? কীসের টেনশন করছো তুমি?
অনু মুখটাকে মলিন করে বললো আর তিন দিন পর আমার পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে। খুব টেনশন হচ্ছে। না জানি কেমন রেজাল্ট করবো। পরীক্ষার কয়েক মাস আগে যা গেছে আমার উপর দিয়ে। না জানি কেমন ফলাফল আসবে।
তূর্য মুচকি হেসে অনুর কাঁধে হাত রেখে তার দিকে ফেরালো। তার পর অনুর ডান হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো
নিজের উপর বিশ্বাস আছে তোমার,,?
হুম।
তুমি তো পরীক্ষাটা খুব ভালো করেই দিয়ে ছিলে। তোমার যেহেতু নিজের উপরে বিশ্বাস আছে সেহেতু ভেবে নাও তুমি খুব ভালো রেজাল্ট করবে। চিন্তা করিও না।
আচ্ছা একটা কথা বলবো?
হুম অবশ্যই। বলো,,
আমি তখন যে বলে ছিলাম তনু আপুদের সাথে এক ফ্লাটে থাকবো বলেছিলাম আপনি কি রাগ করেছেন?
তূর্য মুচকি হেসে বললো
না তো।রাগ করবো কেন? আমি তো মিরপুরেই থাকতে চেয়েছিলাম। সেখান থেকেই আমার অফিস কাছে হয়। কিন্তু কোনো ফ্লাট ভাড়া পাইনি।তাই বনানীতেই থাকছি।
.
.
অনু নতুন জামাই কে নিয়ে খেতে আয়। অনেক রাত হয়ে গেছে।
মায়ের ডাকে অনু তূর্যর উদ্দেশ্যে বললো,,
মা খেতে ডাকছে। চলুন,,,
তূর্য আর অনু চলে গেল খাবার খাওয়ার জন্য।
.
.
বাড়িতে এসে মাহির বিছানায় শুয়ে শুয়ে অনুর কথা ভাবছে। তিন বছরের মধ্যে মাহির কখনো অনুর দিকে ভালো করে তাকায়নি।এই দুই দিন অনুর এত রুপ দেখে অবাক হয়েছিল। মেয়েটা এতো মায়াবী ভাবতেও পারেনি মাহির।(শালা বারো ভাতার 😤)
তনু ওয়াস রুম থেকে এসে দেখে মাহির কিছু একটা গভীর ভাবে ভাবছে।তনু ভ্রু কুঁচকে সন্দিহান দৃষ্টিতে মাহিরের দিকে এগিয়ে গেল।তার পাশে বসে চোখ ছোট ছোট করেই তনু জিজ্ঞেস করলো,,,
তোমার কী হয়েছে আমাকে খোলামেলা করে বলো তো।
মাহির এক দৃষ্টি তনুর দিকে তাকিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে বললো,,
আমার আবার কি হবে? কিছু হয়নি তো।
সত্যি কিছু হয়নি? আচ্ছা তুমি কি আমার কাছ থেকে কিছু লুকাচ্ছো?
মাহিরের বুকে ধক করে উঠলো।তনু হঠাৎ এমন প্রশ্ন করছে কেন?অনু ওকে কিছু বলেনি তো?
এমনটা মনে হচ্ছে কেন তোমার? আমি কী তোমার সাথে সব কিছু শেয়ার করি না?
না আমি তা বলিনি।
তাহলে এমন সন্দেহ করছো কেন?
তোমাকে এমন অন্য মনোষ্ক দেখেই জিজ্ঞেস করলাম। ভুল হয়েছে মাপ করো। বলে তনু গটগট করে রুম থেকে বের হয়ে রান্না ঘরে চলে গেল।
(মাহিরের ভবিষ্যতে কি হবে তা নিয়ে ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছি আমি)
.
.
বিছানায় পাশাপাশি শুয়ে আছে তূর্য আর অনু। তূর্য সেলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে।আর অনু পাশ ফিরে। মাঝে অনেক খানি ফাঁকা।
হঠাৎ অনু বলে উঠলো,,
আগামীকাল বিকেল বেলায় তো আমরা আপনাদের বাড়িতে চলে যাবো তাই না?
তূর্য অনুর দিকে তাকিয়ে বললো
হুম যেতে তো হবেই।আর কয় দিন এখানে থাকবা?
অনু মলিন কন্ঠে বললো মেয়েদের জীবন অদ্ভুত।জন্মের পর থেকেই আমাদের একটা নিয়মের মধ্যে থাকতে হয়।একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর নিজের মা, বাবাকে ছেড়ে অন্যের বাড়িতে থাকতে। মেয়েদের নিজেস্ব কোনো বাড়ি থাকে না। বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি হয় আর বিয়ের আগে বাবার বাড়ি।
তূর্য চুপ করে অনুর কথা শুনছে।
জানেন আমার একটা ইচ্ছে আছে। আমি আমার টাকায় একটা বাড়ি কিনবো।যেটা হবে আমার বাড়ি।
তূর্য মুচকি হেসে বললো
আমি তোমার ইচ্ছে পূরনে কখনো বাঁধা দিবো না। তোমার চিন্তাধারা অনেক উন্নত। তুমি নিজের সকল স্বপ্ন, ইচ্ছে পূরণ করবে।
অনু মুচকি হেসে মনে মনে বললো,,
এমন একটা লাইফ পার্টনার যদি সব মেয়েরা পেতো ইসসস। আমি বোধহয় সত্যি লাকি।
মে তূর্যর মতো কাউকে পেয়েছি। আল্লাহ যা করেন তা সত্যি ভালোর জন্য করে।
চলবে,,,, 🍁