#তার_শহরের_মায়া 😍
#পার্ট_২৯
#Writer_Liza_moni
অনু তূর্যর কাছ থেকে সরে এসে বললো,,
রিফা, কেয়া,শুভ, শাকিল এদের গুলো একটু দেখুন তো।
তোমার ফ্রেন্ড না না বিশ্বাসঘাতক ফ্রেন্ড গুলোর রেজাল্ট দেখতাম আমি?
আরে একটু দেখেন না কেমন রেজাল্ট করেছে।
আচ্ছা রোল নম্বর বলো,,,
অনু বোর্ড পরীক্ষার রোল নম্বর বললো। তূর্য এক জন,একজন করে দেখতে লাগলো। প্রথমে রিফারটা দেখলো,,,
রিফা মেয়েটা দুই বিষয়ে ফেল করেছ।
অনু অবাক হলো না।
তার পর দেখলো শুভরটা।
শুভ ও দুই বিষয়ে ফেল।
কেয়া, শাকিল ও সেম।
আচ্ছা ওরা চারজন কীসে ফেল করেছে ?
ইংরেজি আর পদার্থ বিজ্ঞান।
জানতাম আমি। চার জন এই দুই বিষয়ে কাঁচা। আগে আমার থেকে দেখে লিখে পাশ করে আসতো।অনু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।এমনটা হবার কথা ছিলই।
কলিং বেল বেজে উঠায় অনু বিছানা থেকে নেমে চলে গেল দরজা খুলে দিতে। দরজা খুলে দেখে তনু চিন্তিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাড়াহুড়ো করে ঢুকে গিয়ে বললো,,
আজ তো তোর রেজাল্ট দেওয়ার কথা? দিয়েছে রেজাল্ট? দেখেছিস কত পয়েন্ট পেয়েছিস?
অনু তনুর হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসিয়ে দিল। তূর্য রুম থেকে বের হয়ে এসে দেখে দুই বোন সোফায় বসে আছে। তূর্য ও এগিয়ে গেল।
আমি ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েছি। তনুর চোখ কপালে। পরিক্ষার আগে অনুর উপর যা গেছে তাতে এত ভালো রেজাল্ট করা একদম সম্ভব ছিল না।মন মানসিকতা খারাপ থাকলে পড়ায় মন বসে না।তনু খুশিতে অনু কে জড়িয়ে ধরলো।
আমি যে কতটা খুশি হয়েছি তুই বুঝতে পারবি না। আমার বোন এত ভালো রেজাল্ট করছে আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না।
উহু উহু,, হালকা কাশি দিয়ে টি শার্টের কলার ঝাড়ি দিয়ে তূর্য দুই জনের উদ্দেশ্যে দেখতে হবে না বউটা কার,,?😎
তনু হাসলো।আর অনু কিছু টা লজ্জা পেল।তনু মাহির কে ফোন করে বললো,,
আসার সময় পাঁচ কেজি বালুসা মিষ্টি নিয়ে আসবা।
কেন?এত মিষ্টি দিয়ে কী করবা তুমি?
আমার জন্য না।অনুর জন্য। দুলাভাই যখন হইছো তখন শালির জন্য মিষ্টি কিনে আনলে কী সমস্যা হবে?
মাহির স্তব্ধ হয়ে গেছে। তার মানে অনু সত্যি প্রেগন্যান্ট।আর এখন মিষ্টি বিলাবে? মনে মনে বললো মাহির।
আচ্ছা আনবো। এখন অফিসে আছি। রাখছি।
মাহির কল কেটে দিয়ে মোবাইল টেবিলের উপর ছুড়ে মারলো। মাথায় হাত দিয়ে চেয়ারে বসে পড়লো।
আমি বিয়ে করেছি আজ এত দিন আমার বউ এখন ও প্রেগন্যান্ট হয়েনি আর অনু,,,
বিয়ে বিড় করে বললো মাহির।
.
আরে ভাবি তুমি মাহির কে কেন বলতে গেলে? আমার বউ ভালো রেজাল্ট করেছে আমি সবাইকে মিষ্টি খাওয়াবো। মাহির না,,, একটু ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো তূর্য।
মাহির তো আনুর দুলাভাই হয়।ও মিষ্টি কিনে আনলে সমস্যা কি?
অনেক সমস্যা। মাহির মিষ্টি আনলে সেগুলো তুমি তোমার শ্বশুড় বাড়ির মানুষ কে খাই ও।
তনু দাঁত কেলিয়ে বললো,,
তাহলে তো তোমরা ও আমার শ্বশুড় বাড়ির মানুষ।অনু তো আমার জা ও হয়।
অনু বিরক্ত হয়ে সেখান থেকে উঠে রুমে চলে গেল। বিছানার উপর থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে মায়ের কাছে ফোন করে বললো তার রেজাল্টের কথা।
অনুর মা খুশিতে কান্নাই করে দিলেন। তার আদরের ছোট মেয়ে এত ভালো রেজাল্ট করেছে তার যেন খুশি , আনন্দ উপচে পড়ছে।
বাবার সাথে কথা বলার সময় বাবা শুধু প্রান খুলে দোয়া করলেন। তিনি ও মেয়ের রেজাল্টের কথা শুনে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছেন।মা বাবার সাথে কথা বলা শেষ করে মোবাইল রেখে পাশে তাকাতেই দেখে তূর্য শার্ট গায়ে দিচ্ছে।অনু ভ্রু কুঁচকে বললো
কোথায় যাচ্ছেন এখন?
রেস্টুরেন্টে যাবো।আজ সারা দিন তোমাকে নিয়ে ঘুড়বো।কুইক রেডি হয়ে নাও।
অনু চোখ ছোট ছোট করে ড্রইং রুমের দিকে তাকালো।তনু নেই কোথাও।
অনু তূর্যর দিকে এগিয়ে এসে বললো,,আপু কোথায়?
চলে গেছেন। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও তো।লান্স আজ রেস্টুরেন্টে করবা।আজ ঘুরে বেড়ানো হবে শুধু।বউকে ট্রিট দিবো এত ভালো রেজাল্ট করার জন্য।
আজকে তুমি যা চাইবে তাই পাবে। শুধু মুখ ফুটে বলে দেখো।
সত্যি মা চাইবো তাই দিবেন?
তূর্য অনুর দিকে এগিয়ে এসে অনুর দুই কাঁধ ধরে বললো,, সত্যি দিবো।
অনু তূর্যর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,,আজ কিছু চাইবো না।সময় হলে চেয়ে নিবো।
ঠিক আছে। আমি বাইরে গেলাম তুমি তৈরি হয়ে নাও। তূর্য রুমের বাইরে চলে গেল।অনু তূর্যর শার্টের সাথে মিলিয়ে কাভার্ড থেকে একটা কালো রঙের শাড়ি বের করে পড়ে নিল।কানে ঝুমকা কালো পাথরের। চোখে গাঢ় করে কাজল দিলো।চুল খোলা। কোমর অব্দি ছড়িয়ে পড়লো চুল গুলো। ঠোঁটে হালকা গোলাপি রঙের লিপস্টিক দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে বের হয়ে আসলো। তূর্য সোফায় বসে বসে ফেসবুকে স্ক্রল করছিল।
চলুন,,অনুর কথায় অনুর দিকে তাকিয়ে থমকে গেল তূর্য।কালো রঙের শাড়িতে কী মায়াবী লাগছে তার বউকে। তূর্য কয়েকটি হার্ট বিট মিস করলো। তার পর বুকের বাঁ পাশে হাত রেখে পড়ে যাওয়ার ভান করে বললো,,মে মর যাইগি,,,
অনু হাসলো। তারপর তূর্যর কাছে গিয়ে বললো,,ঢং করবেন না তো।
চলুন,,
তার পর দুইজনে মিলে বের হয়ে আসলো।রিক্সায় পাশাপাশি বসে আছে দুই জন। তূর্যর হাত উসখুশ করছে অনুর হাত ধরার জন্য।অনু তা দেখে মনে মনে হাসলো। নিজেই তূর্যর হাত ধরলো। তূর্য অবাক হলো ভীষণ। তার থেকে ও বেশী খুশি হয়েছে। মুচকি হাসলো।
.
রেস্টুরেন্টে গিয়ে দুপুরের খাবার খেলো তারা।
চলুন না নদীর পাড়ে যাই,,,অনুরোধি কন্ঠে বলল অনু।
তূর্য মুচকি হেসে বললো হুম চলো,,
দুই জনে মিলে নদীর পাড়ে বসে আছে পাশাপাশি। এমন সময় সাত বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে এসে অনুর শাড়ির আঁচল ধরে টান মেরে বলে,,
একটা বেলি ফুলের মালা নাও না গো,,আজ সারাদিনে একটা মালা ও বেঁচা হয়নি।
তূর্য আর অনু ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকালো। তার পর তূর্য হাতের ইশারায় মেয়েটাকে ডেকে এনে তাদের মাঝখানে বসিয়ে দিল।
অনু মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,,
কি নাম তোমার ?
সৃষ্টি,,,
বাহ্ খুব সুন্দর নাম তো।
আমার মায় খুব অসুস্থ।আমনেরা যদি একটা মালা কিনতেন আমি অন্য দিকে যাইতাম।
তূর্য মেয়েটার হাত থেকে একটা বেলি ফুলের মালা নিয়ে বললো,,দাম কত পিচ্চি?
২০টাকা দিলে হইবো।
তূর্য মুচকি হেসে মানি ব্যাগ থেকে ১০০ টাকার নোট বের করে মেয়েটার হাতে দিল।
আমার কাছে তো ভাংতি নাই।
তূর্য মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,, এই সব টাকা তোমার বাবু।রেখে দাও।
মেয়েটার চোখে মুখে আনন্দ উপচে পড়ছে। খুব খুশি মনে মেয়েটা চলে গেল অন্য দিকে।
অনু তূর্যর এমন কাজে মুগ্ধ হয়ে গেছে। মাহিরের কাছেও একবার এমন একটা বাচ্চা মেয়ে ফুল নিয়ে এসে ছিল। মাহির নাক ছিটকে মেয়েটাকে তাড়িয়ে দিয়ে ছিল।আর তূর্য?
অনু তূর্যর মুখের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল। তূর্য মুচকি হেসে অনুর দিকে তাকিয়ে বললো,,কী দেখো এতো?
অনু আনমনে বলে উঠলো,,
আপনি এতো ভালো কেন?
তূর্য হাসলো। দরিদ্রতার জন্যে মানুষ কত কিছুই না করে।এই মেয়েটাকে দেখো,,, যে বয়সে তার স্কুলে পড়ার কথা, খেলাধুলা করার কথা সে বয়সে ফুল বিক্রি করছে। আমাদের থেকেও ওরা বেশি বুঝে বাস্তবতা সম্পর্কে। ওদের সাথে খারাপ ব্যবহার তারাই করে যাদের সঠিক শিক্ষার অভাব।যারা মানুষ কে মানুষই মনে করে না।
আমি ভাই ওদের দলের না। সত্যি বলতে কি জানো?
আমি সব সময় নিজেকে অন্য রকম করে গড়ে তুলতে চেয়েছি। অন্যদের থেকে আলাদা করে।
আপনি সত্যি অন্যদের থেকে আলাদা। একদম আমার মনের মত।দাঁত কেলিয়ে বললো অনু।
তূর্য হাসলো শুধু। হাতের মধ্যে ফুলের মালা টা নড়েচড়ে দেখতে লাগলো।
অনু নিজের বা হাত তূর্যর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,,
আমার জানা মতে তো আর কেউ নেই আমি ছাড়া। এই ফুলের উপর দাবি করতে। তাহলে এখন এটা আমার। পড়িয়ে দেন হাতে।
তূর্য মুচকি হেসে অনুর হাতে ফুলের ছোট মালাটা পেঁচিয়ে দিল।
অনুর এমন বিহেব দেখে তূর্য খুব বেশি খুশি।অনু যে সব কিছু ঠিক ঠাক করে নেওয়ার চেষ্টা করছে তা বুঝতে পারছে তূর্য। তূর্য অনুর চোখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে মনে মনে বললো,,
মেঘুপাখি আমি তোমাকে ভালবাসি। কিন্তু মুখে বলবো না।যত দিন না তুমি আমাকে এসে জড়িয়ে ধরে বলবে,,
ভালোবাসি তূর্য। ভীষণ ভালোবাসি।
আমি অপেক্ষা করবো। আমি জানি তুমি ও একদিন আমাকে ভালোবাসবে। ভীষণ ভালোবাসবে। মাহির নামক কালো অতীত তোমার জীবন থেকে মুছে দিবো আমি। আমার ভালোবাসার রঙে।
.
এই দেখুন ফুচকা। চলুন না ঝাল ঝাল ফুচকা খাই,,
তুমি ঝাল খেতে পারো না।বমি করে ভাসাই দিবা।ঝাল ছাড়া খাইতে পারলে খাও।
অনু মুখটাকে মলিন করে বললো,,ঝাল ছাড়া ফুচকা মজা আছে নাকি? কেন যে ঝাল খাইতে পারি না। ধুর।
তূর্য কিছুটা সামনে এগিয়ে গিয়ে দুটো হাওয়া মিঠাই এনে একটা অনুর হাতে দিল।অনু হাওয়াই মিঠাই দেখে খুশি হলো খুব।
অনেক ধন্যবাদ। অনেক দিন পর হাওয়াই মিঠাই খাবো।ইয়েএএএ।
অনুর খুশি দেখতে লাগলো তূর্য। মেয়েটা কে হাসলে খুব সুন্দর লাগে।মন খারাপ এই মেয়েকে মানায় না।
.
গোধূলি বেলায় পাশাপাশি হাঁটছে অনু আর তূর্য।অনু তূর্যর দিকে নিজের হাত এগিয়ে দিয়ে বললো বউয়ের হাত ধরছেন না কেন? আপনার যে বউ আছে সেটা ঐ মেয়ে গুলো কে দেখান। দেখুন কী করে তাকিয়ে আছে আপনার দিকে। চুল ঠিক করছে। লাজুক হাসছে। এগুলা কি?
তূর্য অনুর রাগ দেখে হাসলো খুব।তার পর অনুর হাত ধরে এক টান দিয়ে নিজের একদম কাছে নিয়ে এসে মেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,,
আমার আদরের বউ। তার সামনে আমার দিকে এইভাবে তাকিয়ে না থাকলেই হয়। না হলে আপনাদের খবর বানিয়ে ফেলবে,,,
মেয়ে গুলোর মধ্যে একজন বলে উঠলো,,
ইসসস প্রেম করার আগেই ছ্যাঁকা।
আরেকটা মেয়ে বলে উঠলো,, আপনাদের খুব সুন্দর মানিয়েছে ভাইয়া,আপু।
তূর্য অনুর দিকে তাকালো।দেখলে তো,, সবাই বলে তোমার জন্য তূর্যই পারফেক্ট। মাহির না,,,,,
অনু ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে তূর্যর হাত ধরে বললো,,মালাই চা খাবো,,,
তূর্য সামনের একটা টং দোকানে গিয়ে বসলো। দুই কাপ মালাই চা দুজনে ফিনিশ করে দিয়ে সন্ধ্যার ব্যাস্ত শহরের রিক্সায় উঠে বসলো। সন্ধ্যার ব্যাস্ত শহরের দিকে তাকিয়ে অনু তূর্যর কাঁধে মাথা রাখলো। চোখ বন্ধ করে মনে মনে বললো,,
আমি আরেক বার এই শহরের মায়ায় পড়তে চাই। তবে আমার এই শহরে কোনো অতীত থাকবে না। থাকবে শুধু আমার জীবনে লাল, নীল, হলুদ,বাহারি রঙ নিয়ে আসা মানুষটা। শুধু তার শহরের মায়ায় জড়িয়ে নিবো আমি আমাকে।আর আমার এই শহরে অন্যকারো প্রবেশ নিষেধ।
চলবে,,,,, 🍁