তার শহরের মায়া পর্ব-৩০

0
845

#তার_শহরের_মায়া 😍
#পার্ট_৩০
#Writer_Liza_moni

সোফায় বসে মুখে হাত দিয়ে হাসছে তূর্য। মনে হচ্ছে হাসতে হাসতে মরেই যাবে।অনু রুম থেকে রেগে এসে তূর্যর সামনে দাঁড়িয়ে কোমরে হাত দিয়ে চোখ কট মট করে তাকিয়ে আছে।

তূর্য তো হাসতে হাসতে শেষ। সামনে তাকিয়ে অনু কে দেখে চোখ যে কঠোর থেকে বের হয়ে আসবে,,,
ভেজা চুলে , কোনো রকম শাড়িটা গায়ে পেঁচিয়ে রেখেছে অনু।
বাহির থেকে এসে ফটাফট একটা শাওয়ার নেয় অনু।
তূর্য একটু রান্না ঘরে ছিল। হঠাৎ রুমে এসে দেখে অনু একটা তোয়ালে গায়ে জড়িয়ে বাথ রুম থেকে বের হচ্ছে। সামনে তাকাতেই তূর্য কে দেখে একটা চিৎকার দিয়ে উঠে অনু।

ধাম করে বাথ রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে তূর্য কে ইচ্ছে মতো বকতে থাকে অনু। তূর্য অনুর মুখের রিয়েকশন দেখে হাসতে হাসতে সোফায় গিয়ে বসে।
.
.
একদম হাসবেন না। তখন হঠাৎ করে আপনাকে দেখে কলিজা শুকিয়ে গেছিলো আমার। ভালো করে আপনার মুখ না দেখার জন্য কে না কে ভেবে বসেছিলাম আমি।যদি ভালো করে দেখতাম যে ওটা আপনি তাহলে কী ওত জোরে চিৎকার দিতাম?

তূর্যর চোখের দৃষ্টি নেশাতুর। তূর্য সোফা থেকে উঠে এক পা এক পা করে অনুর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। তূর্য কে হঠাৎ এগিয়ে আসতে দেখে ঘাবড়ে গেল অনু।এক পা এক পা করে পিছিয়ে যেতে যেতে বললো,,

মাঝে মাঝে আপনার কী হয় বুঝি না আমি।অনুর পিঠ গিয়ে দেয়ালে ঠেকলো। তূর্য অনুর খুব কাছে।অনুর নাকের সাথে নিজের নাক লাগিয়ে নেশাকাক্ত কন্ঠে বললো,,

আমাকে যদি তখন ভালো করে দেখতে তাহলে কি করতা শুনি?সেই ভাবেই বের হয়ে আসতা?

অনুর চোখের পাতা কাঁপছে। বুকের মাঝে ধক ধক করছে। চোখ বন্ধ অনুর। চোখ বন্ধ অবস্থায় বললো,,

আপনি আমার হাসব্যান্ড। তেমন করে আপনার সামনে আসলে কি হতো? কিছুই না।

কলিং বেল বেজে উঠায়

তূর্য বিরক্ত হয়ে অনু কে ছেড়ে দিয়ে বললো,,
রুমে গিয়ে শাড়ি ঠিক করে পড়ে আসো। দরজা বন্ধ করবা বুঝছো।এই সময় মাহির আর তনু ভাবিই আসছে।যাও,,,

অনু একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো। জোর বাঁচা বেঁচে গেছি।

তূর্য গিয়ে দরজা খুলে দিল। দরজার ওপাশে সত্যি মাহির আর তনু দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু মাহিরের হাতে মিষ্টির প্যাকেট।

আসো,, ভেতরে আসো,,
তূর্য, মাহির আর তনু কে ভেতরে যেতে বলে দরজা বন্ধ করে দিল।মাহিরের মুখের ভঙ্গিমা বোঝা যাচ্ছে না। খুশি ও না, মলিন ও না।

তনু সোফায় বসতে বসতে বললো,,
অনু কোথায় তূর্য?

রুমে আছে। আসবে এখনই।
তূর্য মাহিরের দিকে তাকিয়ে বললো,, মিষ্টি কীসের জন্য?

মাহির জোর পূর্বক হেসে বললো,,
কেন আবার জানিস না,,? তুই বাবা হবি, আমি কাকা হবো,, আবার খালু ও হবো এর জন্যই।

তূর্য হাসলো,,, সাথে তনু ও,,,

রুম থেকে বের হতে হতে অনু বলে উঠলো,,
আপনি ভুল ভাবছেন দুলাভাই। আজকে আমার রেজাল্ট দিয়েছে।
তার জন্যই মিষ্টির কথা বলেছে আপু আপনাকে।

মাহির অবাক হয়ে তনুর দিকে তাকালো। তনু দাঁত কেলিয়ে বললো,, অনু সে দিন মজা করে ছিল।আসলে ও প্রেগন্যান্ট না। ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে পাশ করেছে বলেই মিষ্টি আনতে বলছি।

মাহির বোকা বোকা চাহনিতে সবার দিকে একবার তাকিয়ে বললো,, ভালো।

মাহির তুই মিষ্টি গুলো নিয়ে যা।

সেকি কেন?ভ্রু কুঁচকে বললো তনু।

ভাবি এগুলো তোমাদের আত্নীয় স্বজনের মধ্যে বিলিয়ে দাও।অনু আর আমি কেউ মিষ্টি খাই না।

হ্যাঁ আপু। উনি ঠিক বলছে। তুই তো জানিস আমি মিষ্টি তেমন পছন্দ করি না।

তনু মুখ মলিন করে বললো আচ্ছা ঠিক আছে।

মাহিরের রাগ হলো। মাহির জানে অনু মিষ্টি পছন্দ করে।বালুশা মিষ্টি একটু বেশি পছন্দ করে। কিন্তু এখন মিথ্যা কথা বলছে।

মাহির কিছু না বলে মিষ্টির প্যাকেট গুলো নিয়ে রাগ দেখিয়ে চলে গেল।

তোর দুলাভাই মনে হয় রাগ করছে।

আরে না।রাগ করে নাই। তুই গিয়ে বুঝিয়ে বলিস।

আমি ও যাই।না হলে রেগে গিয়ে মিষ্টি গুলো ও ফেলে না দেয়।

হুম আপু যা।

তনু ও চলে গেল মাহিরের পিছনে পিছনে।
তনু রা চলে গেলে অনু দরজা বন্ধ করে দিয়ে তূর্যর দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললো,, আমি কিন্তু মিষ্টি খুব পছন্দ করি।পরে ভাবিয়েন না যে আমি সত্যি মিষ্টি পছন্দ করি না।

তূর্য অনুর হাত ধরে টান মেরে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললো,,
আমি ও জানি তোমার মিষ্টি পছন্দ।ফ্রিজ খুলে দেখে
আসো যাও,, তোমার জন্য আইস্ক্রিম আর মিষ্টির প্যাকেট এর অভাব নেই।যত ইচ্ছা খাও।

আপনি কি মিষ্টি খান না?

তূর্য শয়তানি হেসে বললো,,
হুম খাই তো,, তবে ময়রার তৈরি করা মিষ্টি না।

অনু ভ্রু কুঁচকে বললো তাহলে?

তূর্য অনুর ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে বললো, তাহলে ,, দেখবা কোন মিষ্টি?

অনু না বুঝে বোকার মত করে বললো,, হুম দেখবো

তূর্য অনুর ঠোঁটে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দিতেই অনুর চোখ কঠোর থেকে বের হয়ে আসবে। চোখ গুলো কে বড় বড় করে স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।নড়া চড়া ভুলে গেছে সে।

পাঁচ মিনিট পর তূর্য অনু কে ছেড়ে দিয়ে ঠোঁট মুছে বললো ,,
এই মিষ্টি যত খাই তত আর ও বেশি খেতে ইচ্ছে করে। সুগার ফ্রি। অন্য রকম এক অনুভূতি ।

তূর্য মুচকি হেসে রুমে চলে গেল।আর অনুর মাথার উপর দিয়ে গেছে সব কিছু।সে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।
দুই মিনিট স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার পর নিজের মাথায় নিজে গাট্টা মেরে মুচকি হেসে রান্না ঘরে চলে গেল। রাতের খাবার গরম করার জন্য।

.
তূর্য রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছে অনু কখন তার হবে? কখন সে অনুকে নিজের করে পাবে?

শুনছেন খাবার গরম করে ফেলেছি। খেতে আসুন।

তূর্য বিছানা থেকে উঠে ডাইনিং টেবিলের ওখানে গেল।অনু টেবিলে খাবার সাজিয়ে বসে আছে। তূর্য চেয়ার টেনে বসে অনুর উদ্দেশ্যে বললো,,
তুমি এক প্লেট খাবার বারলে কেন?

অনু লাজুক হেসে বললো,, আপনি খাইয়ে দিবেন।

তূর্য অবাক হলো ভীষণ। কিছুক্ষণ চুপ করে অনুর দিকে তাকিয়ে থাকার পর মুচকি হেসে অনু কে নিজের পাশে এসে বসতে বললো।

অনু ও মুচকি হেসে তূর্যর পাশে গিয়ে বসলো।

তূর্য অনু কে খাইয়ে দিয়ে,,নিজে ও খেয়ে নিল। তার পর অনু সব গুছিয়ে রেখে রুমে চলে গেল।

তূর্য আগে থেকেই শুয়ে শুয়ে মোবাইলে কারো সাথে কথা বলছে।

আচ্ছা ঠিক আছে স্যার,, আমি কালকে সকাল সকাল চলে আসবো।

তোমাকে ছাড়া কেউ যেতে চাচ্ছে না তূর্য।কারো শাহসে কুলাচ্ছে না এই গ্যাং কে ধরতে।

বুঝতে পারছি স্যার। আমি পৌঁছে যাবো।

ঠিক আছে তূর্য। রাখছি। গুড নাইট।

ওকে স্যার গুড নাইট।
.
অনু বিছানার বালিশ ঠিক করে লাইট অফ করতে করতে বললো,,
কালকে সকালে কী খুব তাড়াতাড়ি চলে যাবেন অফিসে?

হুম। একটা গ্যাং কে ধরতে হবে।তাই সকাল সকাল বের হতে হবে।

অনু তূর্যর পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ল। তূর্য অনুর হাত ধরে টান দিয়ে নিজের বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে অনুর চুলের মাঝে মুখ গুজে দিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,,
আচ্ছা মেঘুপাখি তুমি আমাকে তুমি করে কখন বলবা?
তোমার মুখে আপনি আপনি শুনতে শুনতে এখন আর আমার ভাল্লাগে না।

অনু বড় করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো। তারপর বললো,,
আমি তো আপনাকে কখনোই তুমি করে বলবো না।

তূর্য অভিমানী কন্ঠে বললো,,
কেন? তুমি তে কী এলার্জি আছে?

অনু তূর্যকে জ্বালানোর জন্য বললো,,
আপনাকে আপনি করে বলতেই আমার ভাল্লাগে।

তোমাকে আর কিছু বলবো না তুমি ঘুমাও।

অনু দাঁত কেলিয়ে বললো,, আপনি কী সারা রাত জেগে আমাকে পাহারা দিবেন?

দিলে দিলাম তোমার কী? আমি আমার বউকে পাহারা দিবো। তুমি ঘুমাও।
.
.
সকালে তুর্য অফিসে চলে যাওয়ার পর অনুর খুব একা লাগছিলো বলে তনুর কাছে গেলো।
তনু তখন নাস্তা বানাচ্ছে।তাই অনু গিয়ে সোফায় বসলো।

তনু হঠাৎ অনু কে ডাক দেয়।অনু উঠে যাওয়ার সময় কেউ একজন অনুর হাত ধরে টান মেরে রুমে নিয়ে যায়।

অনু রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগে মাহির অনুর মুখে হাত দিয়ে বললো,,
আওয়াজ করবা না।

আপনার সাহস তো কম না? আপনি কোন সাহসে আমার হাত ধরেন? কোন সাহসে ?

শান্ত হও অনু। তুমি তখন মিথ্যা কথা কেন বলছো?
আমি জানি তোমার মিষ্টি খুব পছন্দ। তাহলে কেন মিথ্যা কথা বলছো?

আপনার আয়ের টাকায় একটা দানা খাওয়ার ইচ্ছা ও আমার নেই। আমার হাসব্যান্ড এর এনাফ টাকা আছে।এ রকম হাজার প্যাকেট মিষ্টি সে আমাকে কিনে দিতে পারে। আপনার কিনে আনা কিছু মুখে দিতে ও আমার রুচিতে বাধে।

আর একটা কথা শুনে রাখুন,,
আমি এখন আপনার ভাইয়ের বউ।নেক্সট টাইম আপনি আমার হাত ধরার মতো ভুল করবেন না।তা না হলে আপনার কপালে শনি আছে।দেখে নিয়েন।

অনুর রাগে গা রিরি করছে। ইচ্ছে করছে সব ভেঙ্গে ফেলতে।অনু নিজের ফ্ল্যাটে চলে গেল।

কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকার পর অনু এক গ্লাস পানি হাতে নিলে ওর মোবাইলে কল আসে।অনু গ্লাসটা হাতে নিয়েই মোবাইল নিলো।স্ক্রিনে তূর্যর নাম্বার দেখে অজান্তেই খুশি হলো অনু।
কল রিসিভ করে কানে ধরে পানি এক ঢোক গিলতে গেলে ওপাশ থেকে ভেসে আসা কথাটা শুনে অনুর হাত থেকে গ্লাসটা নিচে পরে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেল।

কানের মধ্যে শুধু বাজতে লাগলো,,
তূর্য স্যারের বুকে গুলি লেগেছে। অবস্থা খুব খারাপ। আমরা তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। আপনি তাড়াতাড়ি আসুন,,,,,

অনু পাথর হয়ে বসে পড়লো,,, একটা শকের মধ্যে চলে গেছে অনু। চোখ থেকে অনবরত পানি গড়িয়ে পড়ছে,,,

চলবে,,,, 🍁