#তার_শহরের_মায়া 😍
#পার্ট_৩৩
#Writer_Liza_moni
অনু কে কান্না করতে দেখে তূর্য মুখের খাবার টা ফেলে দিল।অনুর চোখের আড়ালে।
অনুর রাগে গা জ্বলছে।
কি হচ্ছে কী এখানে?অনুর ধমক শুনে মাধবী ঘাবড়ে গেল।
অনু মাধবীর সামনে দাঁড়িয়ে রাগি কন্ঠে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,
অন্যের হাসবেন্ড কে খাইয়ে দেওয়ার অধিকার কে দিয়েছে আপনাকে? লজ্জা লাগে না? একটা মেয়ে হয়ে আরেক মেয়ের জামাইয়ের দিকে নজর দিতে? আপনার মানসিকতা পরিবর্তন করুন।এত নিচ কোনো মেয়ে হতে পারে তা আপনাকে না দেখলে বুঝতাম না।
তুমি এটাকে নেগেটিভ মাইন্ডে নিচ্ছো কেন?এক লোকমা খাবার মুখে তুলে খাইয়ে দিলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যায়?
(মাধবী)
এক লোকমা কেন?এক গ্লাস পানি দেওয়ার জন্য ও আমি আছি। তার বিয়ে করা বউ আছে। আপনি বাহিরের মেয়ে অপরিচিত মেয়ে। আপনার কোনো অধিকার নেই আমার হাসব্যান্ড কে মুখে তুলে খাইয়ে দেওয়ার।
দুঃখিত। তুমি এতটা রিয়েক্ট করবা জানলে এই ভুল করতাম না। মাধবী সেখান থেকে চলে গেল।
তূর্য অবাক চোখে অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটার রাগী চোখ মুখ দেখে অবাক হচ্ছে।অনু এত জেলাস ?বাপরে,,,,
অনু তূর্যর দিকে এক নজর তাকিয়ে সেখান থেকে চলে গেল। কিচ্ছু বললো না।
.
.
মাধবী কে যাওয়ার সময় অনু একটা কথাই বললো,,
নেক্সট টাইম আমার হাসব্যান্ড থেকে দূরে থাকবেন। আপনি তাকে পছন্দ করতেন ঠিক আছে। কিন্তু সে বিবাহিত।তার দিকে অন্য দৃষ্টিতে তাকালে চোখ তুলে ফেলবো।এই সবে আমার ভয় নাই। আপনি যেমন সি আই ডি। আমি ও তেমন সিআইডি অফিসার এর বউ। ফালতু মেয়ে।
সবাই অনুর মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে রইল।অনু কেন এত রেগে মাধবী কে এই সব কথা বলছে তা কেউ বুঝতে পারলো না। মাধবী মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল।
অনু মে তাকে সবার সামনে এই ভাবে অপমান করবে বুঝতে পারেনি সে।
কী হয়েছে ভাবি? মাধবী কে এই সব কথা কেন বলছেন? কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল রবিন।
অনু চোখ গরম করে শুধু এক দৃষ্টিতে মাধবীর দিকে তাকিয়ে আছে।
মিসেস তূর্য,,কী হয়েছে বলো,,,
কী করেছে মাধবী?
জামাল উদ্দিন চৌধুরী অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো।
অনু এক নজর তাদের সবার দিকে তাকিয়ে ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো।
একটা কথা বলি,,
কিছু মনে করবেন না ।
একটা মেয়ে কখনো সহ্য করবে না,,তার স্বামীর বাড়ি, তার অসুস্থ স্বামীকে দেখতে এসে অন্য একটা বাহিরের মেয়ে তার স্বামী কে মুখে ভাত তুলে খাইয়ে দিতে।এত সাহস কই থেকে পায় সে,,? এই সব কোন ধরনের ভদ্রতামি? এই সব কী ঠিক? আমার বেড রুমে বসে আমার উদ্দেশ্যে বলে,, আমার হাসব্যান্ড এর সাথে তার পার্সোনাল কথা আছে,,যা আমার সামনে বলা যাবে না। আমি রুমের দরজা যেনো টেনে দিয়ে তাদের একা কথা বলতে দি।এই সব কেমন সভ্যতামি?
ছিঃ। মাধবী আমি তোমাকে ভালো মনে করতাম। তুমি যে এত নিচ,,ছি ছি।
মাধবী অনুর কাছে মাফ চাও।
রাগী কন্ঠে বললো জামাল উদ্দিন চৌধুরী।
মাধবীর চোখে পানি চিকচিক করছে।সবার কাছে এখন সে খারাপ হয়ে গেল।সবার কাছে চাইলে ও আর ভালো হতে পারবে না। নিজের ভুলের জন্য নিজেই এখন সবার কাছে খারাপ হয়ে গেছে।
মাধবী অনুর দিকে তাকিয়ে বললো,, আমাকে মাফ করে দাও বোন। এমন ভুল আর জীবনে ও হবে না।এত অপমান হবো এই কারনে জানলে আমি কখনো এমন করতাম না।
.
.
তূর্য রুমে বিছানায় শুয়ে শুয়ে হাঁসফাঁস করছে।অনুর যখন রাগ উঠে ও তখন কথা বললে আওয়াজ বড় হয়ে যায়।অনুর সব কথা শুনতে পাচ্ছে তূর্য।
আমি ও না। আমি বুঝতে ও পারলাম না ইসসস মেঘুপাখিকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম। কেন যে মাধবীর হাতের ভাত মুখে নিলাম,,,ধেততত
.
.
অনু কিছু না বলে সেখান থেকে চলে গেল। মাধবীর সাথে কথা বলতে ও রাগে ফেটে যাচ্ছে ও।এত পরিমাণ রেগে আছে।
জামাল উদ্দিন চৌধুরী সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মুখ মলিন করে চলে গেল। গাড়িতে মাধবীর সাথে কেউই কথা বলেনি।সবাই মাধবী কে এভয়েড করেছে। মাধবীর জন্য পাগল হওয়া রবিন ও মাধবীর দিকে ফিরে ও তাকায়নি।এতে মাধবীর নিজেকে নিজের কাছে খুব ছোট মনে হয়েছে।
.
.
সবাই চলে গেলে অনু রুমে গেল। তূর্য এতক্ষণ চাতক পাখির মতো অনুর আসার অপেক্ষায় পথ চেয়ে ছিল।অনু রুমে ঢুকতেই তূর্য এক নাগাড়ে বলতে লাগলো,,
সরি মেঘু পাখি। রিয়েলি রিয়েলি সরি। আমি ওর হাতে খাইনি। আমি খাবার গুলো ফেলে দিয়েছি। বিশ্বাস করো,, তোমাকে জেলাস করানোর জন্য শুধু মুখে তুলে ছিলাম। না হলে আমি কখনও মুখে ও তুলতাম না। রুমে ও থাকতে দিতে না।
অনু যেনো তূর্যর কথা কানেই নিলো না।লাইট অফ করে দিয়ে পাশে এসে শুয়ে পড়লো। রাতের খাবার অনু খায়নি।
পাশ ফিরে ড্রিম লাইটের আলোয় আবছায়া দেয়ালের দিকে তাকিয়ে আছে অনু। তূর্য সরি বলে বলে এক সময় চুপ হয়ে গেল। ঔষধ এর পাওয়ারে বেশিক্ষণ জেগে থাকতে পারলো না।অনু সারা রাত এক পাশ ফিরে ঘুমিয়ে ছিল। ভুল করে ও তূর্যর দিকে ফিরেনি সে।
মাঝরাতে ঘুমের মধ্য তূর্য অনু কে জড়িয়ে ধরতে চাইলে ও অনু সরে গেছে।
.
.
সকালে অনুর আগে তূর্যর ঘুম ভেঙ্গে যায়। চোখ মেলে অনু কে সেই রাতের মতো পাশ ফিরে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে নিজের কাছে নিজেকে অপরাধী মনে হলো। নিজের মনেই ভাবলো,,
এমন টা না করলেও পারতাম। নিশ্চয় অনু খুব কষ্ট পেয়েছে। কেন যে জেলাস করতে গেলাম? ধুর সব আমারই দোষ।
ঘুম থেকে উঠে তূর্য কে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে কোনো রকম রিয়েকশন করলো না অনু। বিছানা থেকে উঠতে গেলে তূর্য অনুর শাড়ির আঁচল ধরে টান দিয়ে বললো,,,
সরি বউ। এমন ভুল আর কোনো দিন হবে না। এখন থেকে সব মেয়েদের থেকে দূরে থাকবো। শুধু তুমি ছাড়া। তোমাকে আর জেলাস করতে চাইবো না।
অনু টান মেরে আঁচলটা তূর্যর হাত থেকে ছাড়িয়ে ওয়াস রুমে চলে গেল।ফ্রেশ হয়ে এসে নামাজ পড়ে নিলো।সবে ৫ টা ৪৩ বাজে। নামাজ পড়ে অনু বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। মুখের কোনো হাব ভাব নেই। না মলিন আর না খুশি। কেমন একটা খাপ ছাড়া ব্যাপার। তূর্য রুম থেকে অনু কে ডাক দিল,,,
বউউউ ও বউউ,,, কথা কও না প্লিজ,,,,, জীবনে ও আর এমন ভুল হবে না। আমি মুখ ধুবোতো।আসো না প্লীজ।মেঘুপাখি সোনা বউ,,আদুরি বউ,,লক্ষী বউ,,, আমি মরে গেলে ও এমন ভুল হবে না।প্লীজ মাফ করে দাও।ক্ষমা করা মহৎ গুণ।প্লীজ বউটা মাফ করে দাও,,,
অনু পাত্তা দিল না। আগের মতই সকালের শহর দেখছে সে। সকালের এই ঢাকা শহর দেখতে ব্যাস্ত অনু।অন্য দিকে পাত্তা দেওয়ার টাইম নাই।
এত ডাকার পর ও যখন অনুর কোনো সাড়া পেল না তখন তূর্য শোয়া থেকে উঠে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে অনুর পাশে এসে দাঁড়াল।অনু তাকালো না।
বেলকনির গ্রিলে অনুর হাত। তূর্য অনুর হাতের উপর নিজের হাত রেখে বললো,,
মেঘুপাখি প্লিজ মাফ করে দাও।আই এম রিয়েলি সরি।আর জীবনে ও এমন ভুল হবে না।বিশ্বাস করো আমাকে,, আমি আর কখনো তোমার সাথে এমন করবো না।I promise I will never do anything that hurts you again.I don’t want to jealous of you anymore Believe me, I’m going to make you jealous I was with. Believe me honey wife aduri wife lakshi wife will never make such a mistake again.Please talk once Anumegha,,,,
তূর্যর কন্ঠে অপরাধীর আভা।সে সত্যিই চায়নি। ভুল করে অনু কে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে।
অনু তূর্যর হাতের নিচ থেকে নিজের হাত সরিয়ে সেখান থেকে রান্না ঘরের দিকে চলে গেল। তূর্য হতাশ হয়ে অনুর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা যে বড্ড অভিমানী।তা কী করে ভুলে গেছিলাম আমি।
.
.
অনু রান্না ঘরে যাওয়ার সময় তূর্যর মাকে দেখে বললো,,
মা,, তুমি কী একটু কষ্ট করে উনাকে মুখ ধুতে সাহায্য করবা? আমি নাস্তা বানিয়ে নিচ্ছি।যাও না প্লিজ,,,
তূর্যর মা বুঝলেন।অনু তূর্যর উপরে রেগে আছে।অবশ্য রেগে থাকাটাই স্বাভাবিক। মেয়েটা নির্লজ্জের মত ভাত খাইয়ে দিবে আর তূর্য খেয়ে নিবে,,?এটা কেমন কথা?
মা অনুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,,শুন মা আমি জানি তুই ওর উপরে রেগে আছিস। রেগে থাকাই স্বাভাবিক। তুই যে দৃশ্য দেখেছিস সেটা কোনো মেয়েই সহ্য করতে পারবে না। আমি তূর্য কে বকে দিবো।
অনু কথাটা এড়িয়ে গিয়ে বললো,,মুখ ধুইয়ে একটা গ্যাসটিকের ঔষধ খাইয়ে দিও। আমি উনার জন্য সুপ বানাতে গেলাম।অনু সেখান থেকে চলে গেল।
তূর্যর মা অনুর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।যাক মেয়েটা তূর্য কে মেনে নিয়েছে। তিনি তূর্যর রুমে গিয়ে দেখলেন ওয়াস রুমের দরজা খোলা আর পানি পড়ার শব্দ আসছে। তিনি উঁকি দিয়ে দেখলেন তূর্য নিজে নিজে মুখ ধোয়ার চেষ্টা করছে। পায়ের জন্য ঠিক মত দাঁড়াতে ও পারছে না। তিনি গিয়ে সাহায্য করলো। মুখ ধুয়ে তূর্য কে এনে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বললো,,,
এত দিন তোকে নিজে কিছু করতে হয়নি।অনুই সব করেছে।আমাকে ও কিছু করতে দেয়নি।দেখলি তো মেয়েটাকে রাগিয়ে দিয়ে শুধু শুধু কষ্ট পাচ্ছিস এবং অনু কে ও কষ্ট দিচ্ছিস।
কে বলছে তোরে মেয়েটার হাতে খাইতে? তুই এমন হলি কবে থেকে তূর্য?
মা,, এমন করে বলছো যেন আমি মেয়েটার হাতে খাবার খাই উল্টাই ফেলছি? আমি তো অনু কে জেলাস করানোর জন্য এক লোকমা খাবার মুখে নিছি।খাই ও নাই।ফেলে দিছি।
আমরা সব সময় যেটা চোখে দেখি সেটা কিন্তু সত্যি হয় না।
জেলাস করানোর কী আছে ? কোনো মেয়ে চাইবে তার স্বামী কে অন্য একটা বাহিরের মেয়ে এসে খাইয়ে দিতে,,,?অনু কে যদি বাহিরের অন্য কোনো ছেলে এসে যদি খাইয়ে দেয় তোর কেমন লাগবে?
তূর্য চুপ করে রইলো।
তার পর মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,,আর এমন ভুল হবে না।প্লীজ অনু কে কথা বলতে বলো,,,ও কথা না বললে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।রাত থেকে আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিছে। জীবনে ও আর ওরে জেলাস করানোর চেষ্টা ও করবো না। কথা দিচ্ছি,,,
But please tell me to forgive once, and I will not make such a mistake, if he dies.
চলবে,,,, 🍁