#তার_শহরের_মায়া 😍
#পার্ট_৩৪
#Writer_Liza_moni
লক্ষী সোনা রাগ করে না,, একটু হাসো প্লিজ,, ভাল্লাগে না আর হবে না করছি যে প্রমিসড,,,,
.
.
অনু কে রুমে আসতে দেখেই অসহায় মুখ করে গানটা গাইলো তূর্য।অনু সে দিকে পাত্তা দিলো।ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। তূর্য মাথায় হাত দিয়ে অনুর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,,,
মেয়েরা যে একটু বেকা টাইপের কেন যে ভুলে গেছিলাম,,,? জীবনে ও আর এমন ভুল করতাম না।
.
.
সকাল আটটা বাজে।অনু নাস্তা বানিয়ে সব ডাইনিং টেবিলে সাজিয়ে রেখেছে।আজ নাকি জুঁই এর পরীক্ষা আছে। বাড়িতে ও কিছু সমস্যা থাকার জন্য তূর্যর বাবা মা চলে যাবেন। তূর্য এখন যেহেতু আগে থেকে অনেক টা সুস্থ,, সেহেতু তারা তাদের বাড়ি ঘর ফেলে আর কত দিন এই ঢাকায় থাকবেন,,,
অনু তার শ্বাশুড়ি মায়ের কাছে গিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে বললো,, তোমার ছেলের ঔষধ খাওয়ার সময় হয় গেছে।সুপ টা খাইয়ে ঔষধ টা খাইয়ে দিবা মা,,?
তূর্যর মা মুচকি হেসে অনুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,,
এখন আমি না হয় খাইয়ে দিলাম,, দুপুরে তো তোকে দিতে হবে,,, তখন কী আর এমন অভিমান করে থাকবি?
মা তোমার ছেলে কী এটা ঠিক করেছে বলো? তুমি জানো,,যখন আমি রুমে গিয়ে ঐ দৃশ্য দেখেছিলাম তখন আমার কেমন লেগেছিল? আমার মনে হয়েছিল,,কেউ জেনে এক টানে আমার কলিজা ছিঁড়ে ফেলছে। আমার মুখ দিয়ে কথা বের হতে ভুলে গেছিলো। এমন টা কী সহ্য করার মতো ?বলো,, তুমি পারতা তোমার স্বামী কে অন্য কেউ ভাত খাইয়ে দেওয়ার দৃশ্যটা হজম করতে? একটা বাইরের মেয়ে,, আমার তো এখন ও রাগ লাগতেছে,,,
ওরে আমি যাওয়ার সময় আচ্ছা মত বকে দিবো। জীবনে ও যেন আর কোনো মেয়ের হাতে খাওয়া তো দুরের কথা কোনো মেয়ের মুখের দিকে ও যেনো তাকাতে দশবার চিন্তা করে।
তুই আর রাগ করে থাকিস না।রাগ করে থাকলে তো দূরত্ব বাড়বে সোনা।
অনু তূর্যর মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,,
আল্লাহ যা কেড়ে নেয় তার থেকে ও বেশী ভালো কিছু দেন। আমি অনেক ভাগ্য বান যে তোমাদের মতো শ্বশুড় শ্বাশুড়ি পেয়েছি।
তূর্যর মা অনুর পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,,
আমার ও তো একটা মেয়ে আছে।ওর ও তো বিয়ে হবে পরের ঘরে তো আমার মেয়ে ও যাবে।আমি ও তো আমার মা বাবা কে ছেড়ে তোর শ্বশুড়ের বাড়িতে এসেছি। তুই ও আমার মেয়ের মতো। ভুল করলে শাসন করবো,বকবো,, আবার নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসবো,,,,
তুমি অনেক বেশি ভালো মা। কথা দিচ্ছি,, আমি আমার নিজের মায়ের মতই তোমাকে ভালোবাসবো।সম্মান করবো।মাঝে মাঝে রাগ ও ঝাড়বো।বকতে পারবা না কিন্তু,,,
পাগলী মেয়ে। তূর্যর মা অনুর কপালে চুমু খেয়ে বললো,, তূর্যর সাথে আর রাগ করে থাকিস না সোনা। রুমে গিয়ে দেখ কেমন দেবদাস হয়ে গেছে।
তোমার ছেলের সাথে আমি অতো তাড়াতাড়ি কথা বলবো না ।তোমার ছেলেকে আগে ওর কাজের শাস্তি পেতে হবে। না হলে ওর খবর তো আজকে আছে। আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে অন্য একটা অপরিচিত মেয়ের হাতে ও খেয়েছে,,ওর দাঁত যদি আমি না ভাঙছি তাহলে আমার নাম ও অনুমেঘা না।
.
.
তূর্যর মা তূর্য কে সুপ টা খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দিল। তূর্য মুখটা কে বাংলার পাঁচ করে বসে আছে বিছানায়।
শুন তূর্য,,
আমার যতটুকু মনে হয় অনু ও তোকে ভালোবাসতে শুরু করে দিয়েছে। তুই মেয়েটা কে শুধু শুধু কষ্ট দিচ্ছিস। মেয়েটা কে এই ভাবে জেলাস না করলে ও পারতি।শুন,, ভুলে ও যদি কোনো মেয়ের দিকে তাকাইছোস তোর চোখ তুলে ফেলবে বলছে।সাবধানে থাকিস।চার দিক শান্তশিষ্ট মানে কিন্তু ঝড়ের পূর্বাভাস।
.
.
সকাল ১০ টার দিকে তূর্যর মা বাবা আর জুঁই চলে গেল।বাড়িটায় এখন কেমন জানি সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। তূর্য মাথার উপরে সেলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে।ফ্যানের গট গট আওয়াজ শুনে বিরক্ত হচ্ছে তূর্য।অনুর কোনো সাড়া শব্দ পাচ্ছে না। রান্না ঘর থেকে ও কোনো শব্দ আসছে না। তূর্যর কেমন অসহ্য লাগছে।অনু যে এত পরিমাণ রেগে থাকবে বুঝতে ও পারলাম না।সব আমার দোষ ধেতত,,,
কোথায় ফাঁকা বাড়ি,,বউয়ের সাথে একটু রোমান্স করবো আর সেখানে বউকে রাগিয়ে দিয়ে বসে আছি,,, জীবন বিফল,,,
.
.
অনু ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে হাঁটু ভাঁজ করে সোফায় বসে আছে। ইচ্ছে করছে ওর তূর্যর মাথার চুল গুলো টেনে ছিঁড়তে।
তূর্য হালকা কেশে গলা উঁচু করে অনু কে ডাকতে লাগলো,,,
মেঘু পাখিইইই কোথায় তুমি,,? একটু এই দিকে আসবা?আসার সময় ফ্রিজ থেকে আচার নিয়ে আসি ও তো,,,,
অনু সোফায় বসে তূর্যর কথা শুনতে লাগলো। আচার এর কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে বিড় বিড় করে বললো,, এই ব্যাটায় আবার আচার খাবে কেন?বাবু হবে নাকি,,?
কথাটা বলে অনু নিজে নিজেই হাসতে হাসতে শেষ।
তূর্য অনুর হাসির আওয়াজ পেয়ে মনে মনে বললো,,কী এমন বলছি যে হাসছে,,? তূর্য একটু ভালো করে ভেবে দেখলো সে আচারের কথা বলেছে।সে যত টুকু শুনেছে কোনো মেয়ের যখন বাবু হবে তখন সে হঠাৎ হঠাৎই আচার খায়।
নিজের মাথায় নিজে গাট্টা মেরে মুচকি হাসলো তূর্য।অনু নিশ্চয় এই কারনে হাসতেছে,,যাক তবু ও হাসছে,,,
অনু সোফা থেকে উঠে রান্না ঘরে গেল।ফ্রিজ খুলে দেখে প্রায় পাঁচ বয়াম আচার।এত আচার নিশ্চয় আম্মু আনছে,,,নাতি নাতনির শখ জাগছে,,,
অনু এক বয়াম আমের আচার এনে তূর্যর পাশে রেখে আসার সময় তূর্য অনুর হাত ধরে টান মেরে নিজের বুকের উপর ফেলে দেয়।
অনুর মুখের সামনে থেকে চুল গুলো কানে গুজে দিয়ে বললো,,সরি বউ,, আর এমন ভুল হবে না।
অনু নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করলো। কিন্তু পারলো না। তূর্য এক হাত দিয়ে অনুর পিঠ জড়িয়ে ধরে আছে।
অনু তো মনে মনে ঠিক করেছে কাল সকাল অব্দি তূর্যর সাথে একটা কথা ও বলবে না।
প্লীজ বউটা এই ভাবে কথা বলা বন্ধ করে দিও না।ভাল্লাগে না আমার তোমার সাথে কথা না বললে।প্লীজ বউটা,, সোনা বউ, আদুরি বউ,লক্ষী বউ মেঘু পাখি প্লিজ 🥺🥺
অনু জোর করে তূর্যর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রান্না ঘরে চলে গেল। দুপুরের খাবার রান্না করার জন্য।
তূর্য অনুর এই কথা বন্ধ করে দেওয়া মেনে নিতে পারছে না। নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে। কেন যে এমন একটা ভুল করলো সে,,,?
.
.
অনু রান্না ঘরে গিয়ে হাসতে হাসতে শেষ। তূর্যর সরি বলার ভঙ্গিমা দেখে সেই কখন অনুর রাগ কমে গেছে। কিন্তু তবু ও এই পোলারে একটা শিক্ষা দিতে হবে।বলবো না কথা দেখো চান্দু কেমন মজা লাগে,,,,,,
.
.
অনু দুপুরের সব খাবার রান্না করে রুমে এসে দেখে তূর্য প্রায় বয়ামের অর্ধেক আচার শেষ করে দিছে।অনু তূর্যর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো মুখটাকে মলিন করে শুধু আচার খাচ্ছে।
অনু মনে মনে বললো,,ও আল্লাহ,,একটা মেয়ে ও মনে হয় এত আচার খায় না।
অনু তূর্যর হাত থেকে বয়ামটা কেড়ে নিয়ে রান্না ঘরে নিয়ে গিয়ে আবার ফ্রিজে রেখে দিল।
তূর্য অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সেদিকে।
কথা ও বলবে না আবার আমার মায়ের হাতের তৈরি এত মজার আচার গুলো ও খাইতে দিবে না,,,কপাল করে পাইছি একটা ধানি লঙ্কা,,,,
অনু তূর্যর রুমে এসে নিজের কাপড় নিয়ে ওয়াস রুমে চলে গেল।ঘেমে একাকার হয়ে গেছে সে। গোসল না করলে হবে না।আগে আমি গোসল করে নি,, তার পর তূর্য সাহেবের গোসলে সাহায্য করমু।
.
.
অনু গোসল করে বের হয়ে দেখে তূর্য বিছানার মধ্যে কাবাডি খেলছে,,মানে বিছানায় বসে,আর শুয়ে থাকতে থাকতে তিনি বিরক্ত। বিছানার চাদরের কোনো ঠিক ঠিকানা নেই।
তূর্য সব করছে যেনো অনু বিরক্ত হয়ে ও একবার কথা বলে,,, কিন্তু অনুর কোনো হেল দোল নাই।ও স্বাভাবিক।
উপরে অনু নিজেকে স্বাভাবিক দেখানোর চেষ্টা করলে ও ওর এখন ইচ্ছে করছে তূর্য কে কঠিন ভাষায় বকা দিতে। কিন্তু না,,সেতো কথা বলবে না,,,
আমি গোসল করবো তো নাকি ,,,?গরম লাগতেছে তো,,
অনু তূর্যর কাপড় কাভার্ড থেকে বের করে ওয়াস রুমে রেখে আসলো। তূর্যর দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। কিন্তু মুখে কিছু বললো না।
তূর্য অনুর সাহায্য ওয়াস রুমে গিয়ে গোসল করতে লাগলো। একটা সময় তূর্য ইচ্ছে করে অনুর গায়ে পানি ঢেলে দিল। তখন অনুর রাগে গা জ্বলে যাচ্ছিল। ইচ্ছে করছিল তূর্য কে সারা দিন এই ওয়াস রুমে বন্ধ করে রাখতে। কিন্তু ঐ যে কথা বলবে না।তাই অনু নিজেকে শান্ত করলো,,,
তূর্য এত কিছু করলো,,তার পর ও যখন অনুর মুখ থেকে কথা বের করতে পারলো না তখন অনুর শাড়ির আঁচল দিয়ে আঙ্গুলে পেছাতে লাগলো।ও বউ প্লিজ কথা কও,,,,
.
.
দুপুরে অনু তূর্য কে খাবার খাইয়ে দিয়ে ঔষধ খাইয়ে দেয়। কিন্তু মুখে কিছু বলে না।অনুর এই নিরবতা তূর্যর একদম ভালো লাগছে না।
তূর্য অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,,
বউ কথা কও,,,🥺🥺🥺
চলবে,,,,, 🍁