তার শহরের মায়া পর্ব-৩৭

0
858

#তার_শহরের_মায়া😍
#পার্ট_৩৭
#Writer_Liza_moni

ফজরের আযান দিয়েছে আর ও কিছুক্ষণ আগেই।চার দিকে আলো ফুটছে সবে। রাতে জানালা খোলা থাকায় তূর্যর রুমে আলো হাতছানি দিচ্ছে।
তূর্যর বুকের মাঝে গুটি শুটি মেরে শুয়ে আছে অনু। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সে। তূর্যর ঘুম ভেঙ্গে যায়। চোখ মেলে দেখে অনু তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।
অনুর ঘুমন্ত মুখটা দেখে তূর্যর চোখ জুড়িয়ে গেল।অনু কে দেখে মনে হচ্ছে ,,কত দিন পর শান্তিতে ঘুমাচ্ছে।

তূর্য অনুর কপালে চুমু খেলো।অনু নড়েচড়ে উঠে আবার ও ঘুমিয়ে পড়লো।
তূর্য মুচকি হেসে অনুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ডাক দিল,,,

মেঘুপাখি,,উঠো সকাল হয়ে গেছে। নামাজ পড়বা না?
মেঘুপাখি,,,,

অনু ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো,, আরেকটু ঘুমাইনা প্লিজ?

আযান দিয়েছে তো। নামাজ পড়বা না? চারদিকে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে ,, সূর্য উঠে গেলো বোধ হয়,,

তাইলে আর সময় নাই। ঘুমিয়ে থাকেন।

তূর্য হাসলো।
.
সকাল আটটার দিকে অনুর ঘুম ভাঙ্গলো।পাশে ফিরে দেখে তূর্য নেই।
এমন সময় তূর্য ওয়াস রুম থেকে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হয়ে আসলো,,,

অনু কে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মিষ্টি হেসে বললো,,গুড মর্নিং মাই সুইট ওয়াইফ।
উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও।

অনুর কেমন কেমন জানি লাগছে তূর্যর সাথে কথা বলতে। লজ্জা লাগছে খুব।

তূর্য অনুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে রান্না ঘরে গেল।

তূর্য কে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে দেখে অনু কাভার্ড থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াস রুমে চলে গেল।
.
অনু ওয়াস রুম থেকে বের হয়ে বেলকনিতে গেলো।
চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ে পিঠ ভিজে গেছে।
তূর্য রুমে এসে দেখে অনু নেই।

মেঘুপাখি,,

আমি বেলকনিতে,,

তূর্য বেলকনিতে গিয়ে দেখে অনুর চুলের পানিতে পিঠ ভিজে শেষ।
তুমি চুলের পানি মুছে নাওনি কেন?

আলসি লাগছে।

তূর্য মুচকি হেসে রুমে গিয়ে তোয়ালে নিয়ে এসে অনুর চুল মুছে দিতে লাগল।
চুলের পানিতে তোমার পিঠ পুরোই ভিজে গেছে। এমন করলে ঠান্ডা লাগবে না।

তূর্য চুল মুছে দিয়ে অনু কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিল।অনুর মাথা নিচু।সে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে। তূর্য অনুর মুখের সামনের চুল গুলো কানের পিছে গুজে দিয়ে বললো,,
তোমার কী লজ্জা লাগছে আমার দিকে তাকাতে?

অসভ্য লোক।জানে ও আমার লজ্জা লাগছে আর এই লোক জিজ্ঞেস করছে,,
অনু মুখে কিছু বললো না।

খুব ক্ষুদা লাগছে। আমি রান্না ঘরে গিয়ে কি বানাবো বুঝতে না পেরে কিছু না বানিয়ে চলে আসছি।

আরে আগে বলবেন তো,, আমি যাচ্ছি,,,,
সেমাই খাবেন,,?লাচ্ছা সেমাই বানাতে সময় লাগবে না,,

আমার তো খুব ভালোলাগে লাচ্ছা সেমাই। কিসমিস একটু বেশি করে দিও,,

অনু চলে গেল রান্না ঘরে। চুলায় দুধ গরম করে,বাদাম ভেজে নিলো।

তূর্য বিছানায় বসে বসে মোবাইল টিপছে। তূর্য কখন পুরোই সুস্থ।আর দুই দিন রেস্ট নেওয়ার পর কাজে জয়েন করবে।এই দুই দিন শুধু বউয়ের সাথে রোমান্স করা হবে,,,😁

অনু কিছুক্ষণ পর দুইজনের জন্য সেমাই আর দুই কাপ কফি বানিয়ে রুমে নিয়ে গেল।

দেখে খুব টেস্ট হবে মনে হচ্ছে। বলেই খাওয়া শুরু করে দিল তূর্য।
অনু হাসলো,,,,
.
.
বিকালে তনু অনুর হাত ধরে ওর রুমের বেলকনিতে নিয়ে যায়।

কীরে এখানে আনলি কেন?

তনু অনুর চুল টেনে দিয়ে বললো,,
আমার প্লেন মত কাজ করেছিস তো? তূর্য কে আপন করে নিয়েছিস?

অনু লাজুক হেসে বললো,, তুই আমার বড় বোন হয়ে এই সব জিজ্ঞেস করতে লজ্জা লাগছে না?

শুন তোর বোন পড়ে এই ক্ষেতে তোর ভাবি হই।তাই অবশ্যই জানতে পারি।

হুম নিয়েছি। বাঁধা দিইনি।
তনু অনু কে জড়িয়ে ধরে বললো,,এই বার যখন লজ্জা ভেঙ্গে গেছে তখন তাড়াতাড়ি সুখবর যেন পাই,,, খালামনি যেন হই,,,

.
তূর্য কাজে জয়েন করলো আজ,,
চলে গেছে ঘন্টা খানেক আগেই,,

অনুর মোবাইলে কল আসায় অনু রুমে এসে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে তনু কল করেছে।অনু ভ্রু কুঁচকালো।
আপুর তো কিছু লাগলেই আমার কাছে চলে আসে। তাহলে আজ হঠাৎ কল দিল কেন?

অনু কল রিসিভ করে বলতে শুরু করল,,
কীরে আপু তুই হঠাৎ কল দিলি কেন?এমন তো তুই করিস না,,,

তনু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তার পর অনুর উদ্দেশ্যে বললো,, একটু পরেই মাহির অফিসে চলে যাবে,,,
তোর সাথে আমার কথা আছে,,,

কীসের কথা হঠাৎ তোর কন্ঠ এমন শোনা যাচ্ছে কেন?

শোন ১১ টার দিকে সামনের যে রেস্টুরেন্ট আছে সেখানে গিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করবি,,
বলেই তনু কল কেটে দিল।

হ্যালো আপু,হ্যালো,,
আরে কল কেটে দিল কেন?কী হয়েছে ওর হঠাৎ?ও কি সব জেনে গেছে?
অনুর মনে হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
.
.
রেস্টুরেন্টে মুখোমুখি হয়ে বসে আছে অনু আর তনু। তনুর চোখ মুখের অবস্থা দেখে অনুর কাছে ঠিক মনে হচ্ছে না। চোখ মুখ ফোলা তনুর।

তনু আর অনু চুপ করে বসে আছে।
নিরবতা ভেঙ্গে অনু বললো,,
কী হয়েছে আপু তোর?তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?কী হয়েছে বল আমাকে?

তনু অনুর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। কিছু বললো না। হঠাৎ অনুর হাত ধরে তনু বললো,,
আমার চোখের দিকে তাকিয়ে একটা সত্যি কথা বলবি,,?

অনুর বুকের মাঝে ধক করে উঠলো।
হুম বলবো,,,

তনু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো,,
তোর আর মাহিরের সম্পর্ক ছিল ? মিথ্যা বলার চেষ্টা করবি না,,,

যে ভয়টা পাচ্ছিলাম ঠিক সেটাই হলো,,,

অনু কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,,
হুম তিন বছরের সম্পর্ক ছিল।

আমার আর মাহিরের বিয়ের সময় আমাকে বলিসনি কেন যে মাহির কে তুই ভালোবাসিস?

আমি চাই নি তুই কষ্ট পাস।আর বিয়ের দিন যদি আমি ও সব বলতাম তাহলে সমাজে মুখ দেখানো যেতো না।সবাই বলে বেড়াতো,,
বড় বোনের স্বামীর সাথে ছোট বোনের প্রেমের সম্পর্ক। আম্মু আব্বুর সম্মান থাকতো না।আর তার চেয়ে ও বড় কথা মাহির তোকে ভালোবাসতো,,,,

তনু ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো,,,

মাহির তোকে ঠকিয়েছে,, তোর বিশ্বাস ভালোবাসা নিয়ে খেলা করেছে ঠিক যেমন
ও এখন আমার ভালোবাসা বিশ্বাস নিয়ে খেলছে,,,,
ওর জন্য তুই ভেঙ্গে গিয়েছিলি,, বেঁচে থাকার পর ও মরার মত ছিলি,,, একটু ও বুঝতে দিসনি তোর ভেতরের অসহ্য যন্ত্রণা গুলো,,,,

কথা গুলো বলতে বলতে তনু কান্না করে দিল,,,
মাহির আমাকে ও ভালোবাসে না রে অনু,,,,ওর এক কলিগের সাথে আজ এক মাস ধরে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে,,,,

তনুর কথায় যেনো অনুর মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো,,, মাহির যে এতটা নিচ সে কল্পনাই করতে পারেনি।

তনু অনুর হাত ধরে বললো,,, আমি ওর মোবাইলে দেখেছি ওদের চ্যাট গুলো,,,,ঐ যে মেয়েটাই সব বলেছে তোর আর মাহিরের কথা,,,

অনু আমি কী করবো বল না বোন,,,? তনু অনুর হাত ধরে নিজের পেটের উপর রেখে বললো,,,
অনু আমি প্রেগন্যান্ট,,,,, আমি কী করবো বল,,,,
অনু কিছু বলছিস না কেন?

অনু যেনো কথা বলতে ভুলে গেছে,,, একটা মানুষ এমন কী করে হতে পারে?
অনুর দুনিয়া যেনো থমকে গেছে,,,যে বোনের জন্য এত কষ্ট সে সহ্য করেছে সেই বোন কিনা এখন তার মতই কষ্টের ভেতরে আছে,,,?
মাহির এমনটা কেন করলো,,?

আমি আজ সকালে জানতে পারলাম আমি মা হবো,, আমার পেটে ও ছোট্ট একটা প্রান আছে,,, মাহির কে কথা টা আমি খুব স্পেশাল করে বলতে চেয়ে ছিলাম।এই খবর শুনে ও চমকে উঠতো,,, কিন্তু ও আমাকে চমকে দিয়েছে,,,,
বোন আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। মাহির আমাদের সাথে এমন কেন করলো 😭😭😭

তুই কি ভাবে জানলি যে মাহির অন্য মেয়ের সাথে জড়িয়ে আছে?

তনু হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে নিয়ে বললো,,, খুব
সকালে ও ওকে জেগে থাকতে দেখি,,মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে ও দেখি মাহিরের মোবাইলে আলো জ্বলে। সন্দেহ হলো,,,

আজ সকালে ও গোসল করতে গেলে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে ওর মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি রিয়া নামে সেভ করা নাম্বার থেকে অনেক গুলো মেসেজ,,, মেসেজ গুলো চেক না করে মেসেঞ্জারে তাই,মেসেঞ্জারে টুং টুং করে মেসেজ আসতেই থাকে,,ডাটা অন করার পর,,,
সেখানে গিয়ে দেখি মাহির আর মেয়েটার অনেক চ্যাট,,,, কোনো সাধারণ ছেলে মেয়ে এই সব মেসেজ করে না,,,, এত ঘনিষ্ঠ ওরা,,,,

অনু আমি কী করবো বল না বোন? আমি কী করে এই অমানুষটার সাথে থাকবো,,,?
ও আমার কলিজার টুকরা বোন কে ও ঠকিয়েছে,,,

চলবে,,,,, 🍁