তিক্ততার সম্পর্ক পর্ব-৩৭+৩৮

0
2004

#তিক্ততার_সম্পর্ক
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ৩৭

বৃষ্টি যেনো আজ থামার নামই নিচ্ছে না। চারদিকে মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আছে আকাশ। বিরতি দিয়ে দিয়ে বৃষ্টি ঝরে পরছে। জানলা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে ইমা, বাইরে মুশলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। ইয়াদ আজ সাইটে গেছে কনস্ট্রাকশনের কাজ কতদূর এগিয়েছে সেটা নিজে দেখার জন্য। ইমা টেনশনে আছে যদি কোনোমতে বৃষ্টিতে ভেজে তাহলে ইয়াদের কী অবস্থা হবে ? বিকেলেই ফোনে জানিয়েছিলো ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গেছে। ফোন অফ পেলো যাতে ইমা চিন্তা না করে। তাতে কী আর চিন্তা থেমে থাকে ? ইমা ভেবে পাচ্ছে না এই বৃষ্টির দিনেই কেনো যেতে হবে সেখানে।

আসবো ভাবি ?

ইমা দরজার দিকে তাকিয়ে বললো, হ্যাঁ আপু আসো।

ইয়ানা রুমে ঢুকে বললো, ভাবি তুমি খেয়ে নাও, ভাইয়া আসলে পরে খেয়ে নিবে।

ইয়ানা জানে ইমা ইয়াদকে রেখে খাবে না তবু প্রতিদিন খাওয়ার সময় জিজ্ঞেস করতে আসে।

না আপু তোমরা খেয়ে নাও, আমি উনার সাথে খেয়ে নিবো।

ইয়ানা আর কিছু না বলে মুচকি হেঁসে বের হয়ে গেলো। ইয়ানার আর কোনো চিন্তা নেই নিজের ভাইয়াকে নিয়ে। তার খেয়াল রাখার মানুষ ইয়ানা নিজেই খোঁজে দিয়েছে। ইয়ানা ডিনার করে রুমে গিয়ে দেখে তার ফোনটা বেজে চলেছে বিরতিহীন ভাবে। হাতে নিয়ে দেখলো রেহানের নাম্বার। কোনো রিয়াকশন ছাড়াই রিসিভ করে কানে ধরলো।

ডিনার করেছো ?

ইয়ানা ছোট করে উত্তর দিলো, হুম।

গুড এবার চুপচাপ ঘুমিয়ে যাও। একদম ফোন ঘাটবে না এখন, বুঝতে পেরেছো ?

ইয়ানা এবারও আগের মতো উত্তর দিলো, হুম।

গুড গার্ল, এবার ফটাফট ঘুমাও, গুড নাইট।

গুড নাইট।

ইয়ানা ফোন কেটে ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলো। সেদিনের পর বেশ কিছুদিন কেটে গেছে ইয়ানা এখনো নিজের সিদ্ধান্ত কাউকে জানায়নি। তবে রেহান প্রতিদিন তিন বার ফোন করে ইয়ানার খোঁজ খবর নেয় আর ইয়ানা শুধু হুম আর নাতে উত্তর দেয়। ইয়ানা ফোন রিসিভ না করলে দিতেই থাকে কিন্তু অনেকবার ফোন দেওয়ার পর যখন ইয়ানা রিসিভ করে তখন একবার জিজ্ঞেসও করে না এতো লেট কেনো হলো রিসিভ করতে। আগে রেহানের সাথে যতটা ফ্রি ছিলো এখন তার থেকে কয়েকগুণ বেশি আনইজি ফিল করে কথা বলতে। সেদিনের পর রেহান ইয়ানাকে বিয়ে নিয়ে কিছুই বলেনি আর না কাউকে বলতে দিয়েছে। তবে ইয়ানা এখন আরমানের থেকে হয়তো রেহানকে নিয়ে বেশি চিন্তা ভাবনা করে। ফোনটা পাশে রেখে ধপাস করে শুয়ে পড়লো ইয়ানা।

৩৬.
ডান হাতে মাথার ভেজা চুল ঝাড়তে ঝাড়তে বাসার ভেতরে ঢুকলো ইয়াদ। ইমা ডাইনিং টেবিলে বসে ছিলো গালে হাত দিয়ে। ইয়াদকে দেখে উঠে দ্রুত এগিয়ে এলো ইয়াদের দিকে।

ব্যস্ত গলায় বললো, একি আপনি ভিজলেন কীভাবে ?

ইয়াদ দুষ্টুমি করে বললো, বাইরে লেবুর জুস পরছে আকাশ থেকে সেগুলো দিয়েই ভিজে গেছি।

ইমা এগিয়ে গিয়ে নিজের শাড়ীর আঁচল দিয়ে ইয়াদের মাথার চুল মুছিয়ে দিতে দিতে বললো, কী দরকার ছিলো এই বৃষ্টির মধ্যে সেখানে যাওয়ার ? অন্যদিন গেলে কী হতো ?

ইয়াদের মুখে কথা নেই। সে ব্যস্ত কপাল কুঁচকে তার মাথার চুল মুছিয়ে দিতে দিতে শাসন করতে থাকা মেয়েটাকে দেখতে। কতটা চিন্তিত তাকে নিয়ে, এটুকুতেই এতটা অস্থির হয়ে গেছে।

ইমা বিরক্তি নিয়ে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বললো, কী হলো আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি আপনাকে ? এমনভাবে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন, মনে হচ্ছে নতুন কোনো প্রজেক্টের প্রেজেন্টেশন শো করা হচ্ছে আমার মুখে।

ইমা তখনো ইয়াদের চুল মুছতে ব্যস্ত আর ইয়াদ আমতা আমতা করে বললো, কী জিজ্ঞেস করেছো ?

ইমা আবারও বললো, আজ না গিয়ে অন্যদিন গেলেও তো হতো।

ইয়াদ ইমার দিকে দৃষ্টি রেখে বললো, কিছু প্রবলেম হয়েছিলো তাই যাওয়াটা প্রয়োজন ছিলো।

ইমা সরে গিয়ে বললো, ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি খাবার দিচ্ছি।

ইমার সরে যাওয়া ইয়াদের ভালো লাগলো না। ইয়াদের ইচ্ছে করছিলো ইমার কোমর জড়িয়ে নিজের কাছে টেনে নেওয়ার কিন্তু কোথাও একটা জড়তা কাজ করছে। অনেক সময় চলে গেছে দূরত্ব বজায় রাখতে রাখতে, এখন সহজেই সেটা পরিবর্তন করতে পারছে না। ইমা কিচেনের দিকে চলে গেলে আর ইয়াদ দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে রুমের দিকে পা বাড়ালো।

সিঁড়ির কাছে পা রাখতেই ইমা কিচেন থেকে উঁকি দিয়ে চেচিয়ে বললো, একদম শাওয়ার নিবেন না বলে দিলাম। শুধু হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিবেন।

ইয়াদ বিরক্ত হয়ে বললো, ইমা সারাদিন অফিসে কাজ করেছি আর বাইরেও গিয়েছিলাম এখন শাওয়ার না নিলে ভালো লাগবে না।

ইমা কড়া গলায় বললো, সকালে শাওয়ার নিয়েছেন তো, কতবার নিতে হয় শাওয়ার ? আর অফিসে ছিলেন তো কী হয়েছে ? এমনভাবে বলছেন, যেনো অফিসে আপনি কুড়াল দিয়ে কাঠ কেটে এসেছেন। এসি রুমে বসে কাজ করে আবার শাওয়ার নিতে হয় ? চুপচাপ গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে আসুন। এমনই বৃষ্টিতে মাথা ভিজিয়ে এসেছেন এখন আবার শাওয়ার নিয়ে জ্বর বাঁধানোর ধান্দা ?

ইয়াদের নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে, কেনো সে অসুস্থ হয়েছিলো ? এই মেয়ে এখন তাকে দিনে একবারের বেশি শাওয়ার নিতে দেয় না। বৃষ্টি থাকতে পারে তো রুমে বসিয়ে রাখে, ব্লাংকেট দিয়ে মুড়িয়ে। ইমাটা দিন দিন ওভার সেনসিটিভ হয়ে যাচ্ছে ইয়াদের বিষয়ে। ইয়াদ জানে এখন যদি ইমার বারণ করা সত্ত্বেও সে শাওয়ার নেয় তাহলে সারারাত ইমার বকবক শুনতে হবে। তাই রুমে গিয়ে শুধু হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে দিলো। নিচে এসে দেখলো ইমা এখনো কিচেনে আছে। ইয়াদ ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো কিচেনের দিকে। ইমা ইলিশ মাছ ভাঁজছে কোমরে শাড়ীর আঁচল গুজে দিয়ে, একপাশের মেদ বিহীন পেটটা দৃশ্যমান, চুলগুলো হাত খোঁপা করা তার জন্য ঘাড়ের দিকটাও দৃশ্যমান। ইয়াদের এখন খুব ইচ্ছে করছে ইমার খোলা পেটে হাত রেখে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিতে। কিন্তু ইয়াদের পা আঁটকে আছে সে এগুতে পারছে না। ইমার হঠাৎ মনে হলো তার পেছনে কেউ আছে আর তাই ফট করে ঘুরে তাকালো।

ইয়াদকে দেখে অবাক হয়ে বললো, আরে আপনি এখানে কী করছেন ? আপনি গিয়ে বসুন আমি এখনই আসছি। সব সাজিয়ে দিয়েছি এখন শুরু মাছটা হয়ে গেলেই কমপ্লিট।

ইয়াদ থতমত খেয়েও নিজেকে সামলে নিলো, তুমি এখন মাছ ভাজছো কেনো ?

ইলিশ মাছ গরম গরম ভাজা ভালো লাগে তাই এখনই ভেজে দিচ্ছি। আগে করে রাখলে খেয়ে তৃপ্তি পেতেন না।

ওহ্,,,, তো আর কতক্ষণ ওয়েট করতে হবে ? পেটে ফুটবল ম্যাচ হচ্ছে ক্ষুধায়।

ইমা পেছন ঘুরে কোমরে হাত দিয়ে নাক ফুলিয়ে বললো, লেট করে বাসায় আসার সময় ক্ষুধা কোথায় থাকে ? বাড়ি আসলে তখন এক মিনিট সহ্য হয় না।

ইয়াদ ঢোক গিলে বললো, ঠিক আছে তুমি আসো আমি গিয়ে বসছি।

ইয়াদ মানে মানে কেটে পড়লো ইমার সামনে থেকে আরো কিছু শোনানোর আগেই। চেয়ার টেনে বসে পরলো ইয়াদ, সামনে খাবার সাজানো। ভুনা খিচুড়ি, গরুর মাংস কশা, মুরগির মাংস ঝোল, সালাত আর দেখতে দেখতে ইমা ইলিশ মাছ ভাজা নিয়ে এসে টেবিলে রাখলো।

প্লেটে খাবার দিয়ে বললো, যেটা ভালো লাগে খান।

ইয়াদ কোনটা দিয়ে খাবে বুঝতে পারছে না। বৃষ্টির দিনে খিচুড়ি মানেই আলাদা স্বাদ। ইয়াদ খেতে গিয়ে থেমে গেলো।

কী হলো না খেয়ে বসে রইলেন কেনো ?

ইয়াদ পাশে বসে থাকা ইমার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললো, তুমি খেয়েছো কিছু ?

ইমা মুচকি হেঁসে বললো, খেয়ে নিবো আপনার পরে, আপনি আগে খান তো।

ইয়াদ এখনো সহজভাবে কথাটা জিজ্ঞেস করতে পারে না। তবে আজ ইয়াদের অন্যকিছু ইচ্ছে করছে কিন্তু কীভাবে বলবে ভেবে পাচ্ছে না।

আমতা আমতা করে বললো, পরে না আজ তুমিও আমার সাথেই খেয়ে নাও।

ইমা বেশ অবাক হলো ইয়াদের কথা শুনে সাথে খুশিও। নিজের অনুভূতি আড়াল করে বললো, আপনি খেয়ে নিন চুপচাপ।

ইয়াদ কথা না বাড়িয়ে এক চামচ খাবার ইমার সামনে ধরলো। এবার বিস্ময়ে চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম ইমার। ইয়াদ তাকে নিজ হাতে তুলে খাইয়ে দিতে চাইছে ? ইমা নিজের হাতে নিজেই একটা চিমটি কাটলো। না স্বপ্ন না, সে ঠিকই দেখছে।

কী হলো হা না করে ড্যাব ড্যাব করে তাকাচ্ছো কেনো এভাবে ?

না মানে আমি কী স্বপ্ন দেখছি নাকি সেটা চিন্তা করছি আর কী ?

বাজে না বকে হা করো চুপচাপ।

ইমা কথা না বাড়িয়ে খাবারটা মুখে নিলো। ইয়াদ নিজেও খেতে লাগলো আর ইমাকেও খাওয়াতে লাগলো। তবে ইমা পুরোটা সময় ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে ছিলো ইয়াদের দিকে। এতে ইয়াদের অস্বস্তি হলেও ইমাকে বুঝতে দেয়নি।

আচ্ছা আপনি এর আগে কখনো কাউকে খাইয়ে দিয়েছেন ?

ইয়াদ একটু চমকালো ইমার প্রশ্নে, তবে সেটা ইমা বুঝতে পারার আগেই উত্তর দিলো, হ্যাঁ।

ইয়াদের মুখে হ্যাঁ শুনে ইমার খাবার গলায় আঁটকে হেঁচকি উঠে গেলো। ইয়াদ ব্যস্ত হয়ে ইমাকে পানি খাইয়ে দিয়ে মাথায় আর পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।

ধমক দিয়ে বললো, সাবধানে খেতে পারো না একটু, এখন ঠিক লাগছে ?

ইমার মুখ মলিন হয়ে আছে ইয়াদের হ্যাঁ শুনে। ইয়াদের কথার উত্তর দিচ্ছে না। ইয়াদ তা খেয়াল করে মনে মনে হাসলো।

ইয়াদ ইমাকে পানি খাওয়াতে খাওয়াতে বললো, ইয়ানা অনেক সময় আমার উপর রাগ করে না খেয়ে বসে থাকতো। তখন ওর রাগ ভাঙিয়ে নিজের হাতে খাইয়ে দিতাম।

ইমা বড়বড় চোখ না তাকালো ইয়াদের দিকে তা দেখে ইয়াদ মুচকি হেঁসে উঠে চলে গেলো। ইমাও মুচকি হাঁসলো ইয়াদের দিকে তাকিয়ে। নিজের মাথায় একটা চাটি মেরে টেবিল গুছাতে লাগলো, সে কী কী ভেবেছিলো। ইমার বিশ্বাসই হচ্ছে না আজ ইয়াদ তাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিয়েছে। ইমা সব গুছিয়ে রুমে চলে গেলো খুশি মনে। ইয়াদ বেডে বসে ল্যাপটপে কিছু একটা করেছে মনোযোগ দিয়ে।

সারাদিন অফিসে কী করেন, বাসায় এসেও কাজ করতে হয় ?

অফিসে বসে হট হট নাইকাদের আইটেম সং দেখি, তাই বাসায় এসে কাজ করতে হয়।

ইয়াদের কথা শুনে ইমা রাগে ফুসফুস করতে লাগলো। দুম করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল আঁচড়াতে লাগলো। ইমা রাগে চুল আঁচড়ানোর বদলে টেনে টেনে ছিঁড়ছে।

চুলের উপর রাগ না ঝেড়ে যার উপর রাগ উঠেছে তার উপর ঝাড়লেই পারো। শুধু শুধু নিরীহ চুলের উপর কেনো অত্যাচার করছো ?

ইমা রাগে ফুসফুস করতে করতে বললো, আমার চুলের সাথে আমার যা ইচ্ছা তাই করবো, তাতে আপনার কী হ্যাঁ ?

ইয়াদ হাসি মুখে বললো, আমার অনেক কিছু। সেটা তুমি বুঝতে পারলে চুলগুলোর উপর অত্যাচার না করে যত্নে রাখতে।

ইমা ভ্রু কুঁচকে তাকালো ইয়াদের দিকে। ইয়াদ ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে রেখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।

ইমা রেগে বললে, আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কেনো, অফিসে গিয়ে হট হট মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকুন।

ইয়াদ মুচকি হেঁসে উঠে ইমার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো। ইমার হাত থেকে হেয়ার ব্রাশটা নিয়ে চুল আঁচড়ে দিতে লাগলো। ইমার মুখটা হা হয়ে গেলো ইয়াদের কাজে।

ইয়াদ দুষ্টুমি করে বললো, খাবার খাওয়াতে আসিনি এমন হা করে বসে আছো। চুপচাপ সামনের দিকে তাকিয়ে বসো।

ইমা কয়েকবার চোখ পিটপিট করে বললো, এই দেখুন না, আমি মনে হয় পাগল হয়ে যাচ্ছি। কী সব ভুলভাল দেখছি সেই কখন থেকে।

ইয়াদ কিছুই বললো না চুপচাপ নিজের কাজ করতে লাগলো। ইয়াদ বেশ ইনজয় করছে ইমার এমন রিয়াকশন দেখে। আগে জানলে এমনটা আরো অনেক আগেই করতো ইয়াদ। ইমার হা করে তাকিয়ে আয়নায় ইয়াদের প্রতিচ্ছবি দেখছে। ইয়াদ সুন্দর করে বেনি করে দিলো। ইয়াদ বেনিটা ইমার হাতে দিলে ইমার হা আরো কয়েকগুণ বড় হয়ে গেলো।

অবাকের চরম পর্যায়ে গিয়ে বললো, আপনি এতো সুন্দর বেনি কীভাবে করতে জানেন ?

ইয়াদ আবার পেছনে গিয়ে বেডে বসে বললো, ইয়ানা স্কুলে পড়ার সময় আমিই বেনি করে দিতাম ওর চুলে। আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে আর নিজের খেয়াল নিজেই রাখতে শিখে যায়। এখন এই বেনি নিয়ে গবেষণা না করে ঘুমাতে এসো অনেক রাত হয়ে গেছে।

ইয়াদ আর ইমা এখন এক বেডেই ঘুমায় মাঝে কোলবালিশ দিয়ে। এতোটুকুই উন্নতি হয়েছে তাদের সম্পর্কের।

ইমার হঠাৎ অন্য কথা মাথায় এলো আর আমতা আমতা করে বললো, আপনাকে একটা কথা বলতে চাইছি কিছুদিন ধরে।

ইয়াদ ল্যাপটপ কোলে নিয়ে বসে বললো, কী কথা বলো ?

ইমা শাড়ীর আঁচল আঙ্গুলে পেঁচাতে পেঁচাতে বললো, আমি একবার গ্রামে যেতে চাই। মায়ের কবরটা একবার দূর থেকে দেখতে চাই।

ইয়াদের হাত থেমে গেলো ইমার কথা শুনে। মা শব্দটা শুনেই মনে পরে গেলো রুবিনার কথা। দুদিন আগেই দিসারের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। ইয়াদ ইশানকে যেতে বলেছিলো কিন্তু ইশান স্পষ্ট বলেছে, সে ঐ লোকের কেউ হয় না। মনিকাও দিসারের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে আর দিয়ার দিসারকে নিয়ে কোনো হেলদোল নেই। সে তার নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত। লাশ কেউ না নেওয়ায় বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দিসারের খবর জানার সময় রুবিনার খরবও জেনেছে। রুবিনার অবস্থা আগের থেকে একটু ভালো। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেলে তারও ফাঁসি কার্যকর করা হবে খুব তাড়াতাড়ি। ভাবতেই বুক ছিঁড়ে দীর্ঘ শ্বাস বেড়িয়ে এলো ইয়াদের।

কী হলো, কী এতো ভেবে যাচ্ছেন ? যেতে দিবেন একটু, আমি কথাকে সাথে নিয়ে চলে যাবো।

ইয়াদ নির্বিকার গলায় বললো, না।

চলবে,,,,

#তিক্ততার_সম্পর্ক
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ৩৮

ইয়াদ নির্বিকার গলায় বললো, না।

ইমা অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো ইয়াদের দিকে আর কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, কিন্তু কেনো ?

ইয়াদ কাজ করতে করতে বললো, কথাকে নিয়ে যেতে হবে কেনো ? আমি নিয়ে যাবো তোমাকে আর দু-তিনদিন পর।

ইমা অবাক হয়ে মৃদু চিৎকার দিয়ে বললো, কীহ্ ?

ইয়াদ কানে হাত দিয়ে বললো, ইশ এভাবে কেউ চিৎকার করে ? এখনই কানের বারোটা বেজে যেতো আমার।

ইমা ইয়াদের কথা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে বললো, সত্যি যাবেন আপনি ?

ইয়াদ ল্যাপটপে দৃষ্টি রেখে মুচকি হেঁসে বললো, হুম তবে শর্ত আছে।

ইমার মুখ মলিন হয়ে গেলো শর্তের কথা শুনে, থমথমে গলায় জিজ্ঞেস করলো, কী শর্ত ?

ইয়াদ ল্যাপটপ রেখে ইমার দিকে তাকিয়ে বললো, সকালে নিয়ে যাবো আবার সন্ধ্যায় চলে আসবো। একদম থাকার বায়না করবে না।

ইমা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো, আমার ভাগ্য সবার মতো নয়। কার কাছে থাকবো ? থাকার মতো কেউ তো নেই আমার। অন্য সবার মতো রাগ করে বাবার বাড়ি যাওয়ার হুমকিও কখনো দিতে পারবো না আপনাকে। সেই ভাগ্যই আমার নেই।

কথা বলতে বলতে ইমার গলা ধরা এলো। ইয়াদ মাথা নিচু করে ফেলেছে ইমার কথা শুনে। পরক্ষণে উঠে গিয়ে ইমার সামনে দাঁড়ালো আর ইমার মাথা পেঁচিয়ে জড়িয়ে ধরলো। ইয়াদ জড়িয়ে ধরার সাথে সাথে ইমা ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো।

ইয়াদ শান্ত গলায় বললো, হুশ একদম কাঁদবে না। তোমার আমি আছি আর আমার তুমি আসো। আমিও তো শশুর বাড়ির জামাই আদর পাবো না, তাই বলে কী কাঁদছি নাকি ?

ইয়াদের কথা শুনে ইমা কান্নার মাঝেই ফিক করে হেঁসে দিলো তা দেখে ইয়াদ স্বস্তি পেলো। ইমাকে ছেড়ে দুগালে হাত রেখে বৃদ্ধাঙ্গুলি নিয়ে চোখ মুছে দিলো আলতো করে।

তবে তুমি চাইলে রাগ করে ফার্মহাউসে চলে যেতে পারো তারপর আমি গিয়ে তোমার রাগ ভাঙিয়ে নিয়ে আসবো।

ইমা ভ্রু কুঁচকে ইয়াদের দিকে তাকালো। এই হয়তো একমাত্র ব্যক্তি হবে, যে নিজের বউকে বলে দিচ্ছে রাগ করে কোথায় যাবে। ইমার তাকানো দেখে ইয়াদ বোকার মতো হাসলো। হাসিটা তীরের মতো বিঁধল ইমার মনে। ইয়াদকে হাঁসলে আরো কয়েকগুণ বেশি সুন্দর লাগে দেখতে।

ইমা হঠাৎ বলে উঠলো, আপনি একদম হাসবেন না কারো সামনে।

ইয়াদ অবাক হয়ে বলে উঠলো, কেনো, আমার হাসি কী খুব বাজে দেখতে লাগে ?

ইমা মুখ কুঁচকে বললো, ঠিক বলেছেন, আপনি হাসলে মনে হয়ে,,,

কী মনে হয় ?

ইমা আমতা আমতা করে বললো, কিছু না, হাসবেন না কারো সামনে। শুধু আমার সামনে হাসবেন।

ইয়াদ কিছু না বলে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো ইমার দিকে। ইমা এদিক ওদিক তাকিয়ে দৃষ্টি লুকানোর চেষ্টা করলো। তা দেখে ইয়াদ হা হা করে হাসতে লাগলো। ইমা এবার মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে রইলো ইয়াদের দিকে।

ইয়াদ হাসি বন্ধ করে বললো, এভাবে তাকিয়ে থাকতে হবে না গিয়ে শুয়ে পড়ো অনেক রাত হয়েছে।

ইয়াদ ইমাকে ছেড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো আর ইমা সেদিক কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বেডে চলে গেলো। ইয়াদ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ইমার পাশে শুয়ে পরলো মাঝে কোলবালিশ রেখে।

ইমা হতাশ গলায় বললো, আমি তো কথাকে বলেছি যেদিন যাই সেদিন এখানে চলে আসতে।

ইয়াদ ঘুরে ইমার দিকে তাকিয়ে বললো, ঠিক আছে এতে প্রবলেম কোথায় ? ইয়ানা একা থাকবে বাসায়, ওর সাথে থাকবে সারাদিন।

ইমা খুশি হয়ে বললো, এটা তো ভেবেই দেখিনি।

এখন আর ভাবতে হবে না ঘুমাও চুপচাপ।

ইয়াদ হাত বাড়িয়ে সাইড টেবিলের লাইট অফ করে দিলো আর এখন শুধু ডিম লাইট জ্বলছে। ইয়াদ চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো কিন্তু ইমা বারবার এবার ওপাশ করছে।

ইয়াদ চোখ বন্ধ করেই বললো, কী হলো ইঁদুরের মতো নড়াচড়া করছো কেনো ?

ইমা মলিন গলায় বললো, ঘুম আসছে না।

ইয়াদ কিছু না বলে উঠে কোলবালিশ সরিয়ে হেলান দিয়ে বেডে বসলো ইমার কাছে গিয়ে। ইমা বড় বড় চোখ করে তাকালো ইয়াদের দিকে। ইয়াদ ইমাকে একটু কাছে টেনে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। ইমা বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে ইয়াদের দিকে।

চোখ বড় বড় করার জন্য মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি না, চোখ বন্ধ করে ঘুমাও।

ইমা ইয়াদের ধমক শুনে সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেললো। ইয়াদ তা দেখে মুচকি হেঁসে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। অনেকটা সময় পর ইয়াদ খেয়াল করলো ইমা ঘুমিয়ে পড়েছে। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে ইমার ঘুমন্ত মুখের দিকে। হঠাৎ ইয়াদের মনে অদ্ভুত ইচ্ছে জাগলো আর সে নিজেকে আটকাতে পারলো না ইচ্ছেটা পূরণ করা থেকে। ইমার কপালে গভীরভাবে ঠোঁট ছুইয়ে দিলো। একসময় সেও ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিলো। ফজরের আযান কানে আসতেই ইমার ঘুম ভেঙে গেলো। নড়াচড়া করতে গিয়ে ব্যর্থ হলে ধীরে ধীরে চোখ খোলে তাকালো। চোখ খোলে ইমা অবাক হয়ে গেলো। ইয়াদের বুকে শুয়ে আছে সে আর ইয়াদ তাকে দু’হাতে আঁকড়ে জড়িয়ে ধরে আছে। হঠাৎ লজ্জা ঘিরে ধরলো ইমাকে। ইয়াদের সাথে লেপ্টে শুয়ে আছে ভাবতেই গা শিউরে উঠে গালদুটো রক্ত লাল রং ধারণ করলো। নিজেকে না ছাড়িয়ে ইয়াদের বুকে আবার মুখ লুকালো সে। এক অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছে ইমার মনে। এই প্রথম ইয়াদের এতো কাছে এসেছে ইমা। আযানের ধ্বনি তীব্র হলে মনে হলো তার উঠে যাওয়া উচিত কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও ইয়াদের থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারলো না তাই ধীরে ধীরে ডাকতে লাগলো ইয়াদকে।

এই যে শুনছেন আযান হয়েছে, উঠুন।

ইমার ডাকে ইয়াদ তো উঠলোই না উল্টো আরো শক্ত করে জড়িয়ে নিলো ইমাকে। ইমা এবার পড়লো মহা বিপদে। উপায় না পেয়ে ইয়াদের বুকে টুস করে চিমটি কেটে দিলো। ইয়াদ আহ্ বলে ছোট করে চিৎকার করে চোখ খুলে ফেললো। ইমা ইয়াদের বুক থেকে মাথা উঁচু করে ইয়াদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।

ইমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো, এটা কী হলো ?

ইমা লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে বললো, আযান হয়েছে সেই কখন, নামাজ পড়বো না আমি ?

তো পড়ো গিয়ে, আমাকে কেনো চিমটি কাটছো, আমি কী তোমাকে ধরে রেখেছি ?

নিজের দিকে ভালো করে তাকান তাহলেই বুঝতে পারবেন কেনো চিমটি কেটেছি।

ইয়াদ ভালো করে খেয়াল করতেই ইমাকে ছেড়ে দিলো। একবার মাথা চুলকে উল্টো ফিরে শুয়ে পড়লো আবার।

আবার ঘুমানোর জন্য শুয়ে রইলেন কেনো ? উঠে মসজিদে জান তাড়াতাড়ি। আপনি আগে ওযু করে এসে মসজিদে যান আমি পরে করছি।

ইয়াদ তাও না উঠলে ইমা তার হাত ধরে টানতে লাগলো৷ ইমার যে শক্তি সে কী আর এই হাতিকে টেনে তুলতে পারবে। ইয়াদ তা দেখে দুষ্টু হেঁসে উঠে বসলো।

এই শক্তি নিয়ে আমাকে তুলতে আসছে, জল ফড়িং একটা।

ইয়াদের কথা শুনে চোখ ছোট ছোট করে তাকালো ইমা। ইয়াদ মুচকি হেঁসে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো। ইয়াদ মসজিদের জন্য বের হয়ে গেলে ইমা রুমেই নামাজ পড়ে নিলো। ইয়াদ এখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজই মসজিদে গিয়ে আদায় করে আর ইশানও। ফজরে দু’ভাই একসাথে মসজিদ যায় আর মসজিদ থেকে এসে এক্সারসাইজ করে ইয়াদ আর ইশান একসাথেই। ইমা ব্রেকফাস্ট রেডি করে সাথে ইয়ানা হেল্প করে। ইয়ানা ভার্সিটি যায় না অনেকদিন হলো। ভেবেছে শুধু এক্সাম দিবে সময় মতো। সামনেই এক্সাম তাই আজ ভার্সিটি যাবে ঠিক করেছে। সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট করে নিলো। ইশান ভার্সিটি চলে গেলো, আর ইয়াদ অফিসে যাওয়ার সময় ইমাকে সাথে নিয়ে গেলো ভার্সিটিতে পৌঁছে দিবে বলে। ইয়ানার ক্লাস পরে তাই সে একটু পরে যাবে।

৩৭.
ইয়াদ ড্রাইভ করছে আর ইমা পাশে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। কারো মুখে কথা নেই, চুপচাপ বসে আছে দু’জনেই। আজই প্রথম ইয়াদ ইমাকে ভার্সিটি পৌঁছে দিতে যাচ্ছে। ইয়াদ একটু পর পর ইমার দিকে তাকাচ্ছে তবে ইমা একবারও ইয়াদের দিকে তাকাচ্ছে না। সকালের কথা মনে পরলেই লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছে সে।

নিরবতা ভেঙে ইয়াদ বললো, আজ কতদিন পর ভার্সিটি যাচ্ছো ?

ইমা বাইরের দিকে তাকিয়েই বললো, হিসার করিনি আর ভার্সিটি না গেলেই বা কী হয় ?

কী হয় মানে ? ক্লাস না করলে পরীক্ষায় পাশ করবে কীভাবে ?

পড়াশোনা করে কী করবো ? বিয়ে হয়ে গেছে এখন মন দিয়ে ঘর সংসার করবো ? আপনার জন্য এই পড়াশোনা করতে হচ্ছে।

ইয়াদ অবাক হয়ে বললো, তোমার নিজের কোনো স্বপ্ন নেই ?

ইমা ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বললো, হ্যাঁ ছিলো, ছোটবেলায় ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম কিন্তু ভাগ্যের দোষে সাইন্সে পড়তে পারলাম না। এখন এসব পড়াশোনার কোনো ইচ্ছে নেই। চাকরি করবো না তো পড়াশোনা করে কী করবো ?

তুমি চাইলে জব করতে পারো তবে আমাদের অফিসের কেবল মাত্র একটা পোস্ট ?

কোন পোস্টে ?

আবরার হামিদ ইয়াদের পারসোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে জয়েন করতে পারেন। সবসময় আমার চোখের সামনে ঘোরাঘুরি করবে।

ইমা মুখ ভেংচি কেটে বললো, লাগবে না আপনার জব আমার, আমি বাসায়ই ঠিক আছি। অনার্স শেষ করে আর পড়বোই না আমি।

সে দেখা যাবে এখন নামো তোমার ভার্সিটি চলে এসেছে। ক্লাস শেষ হলে অপেক্ষা করো আমি এসে নিয়ে যাবো।

ইমা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। ইমা নেমে যেতেই ইয়াদ চলে গেলো। ইমা ক্লাসের দিকে পা বাড়ালো। এদিকে ইয়ানা রেডি হয়ে এসে, ফোনের দিকে তাকিয়ে গাড়িতে বসে পড়লো। ড্রাইভারকে যেতে বললেও গাড়ি চালাচ্ছে না দেখে বিরক্তি নিয়ে সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো।

রেহান ভাইয়া তুমি এখানে ?

রেহান মুচকি হেঁসে বললো, আজকের জন্য তোমার ড্রাইভার আমি।

ডাক্তারি ছেড়ে আপনি আবার ড্রাইভার হলেন কবে থেকে ?

তোমার যখন যেটা প্রয়োজন হবে আমি সেটাই হয়ে যাবো। এখন তুমি বলো তোমার এই আপনি আর তুমির জগাখিচুরি কবে বন্ধ হবে ?

এতো বছরে যেহেতু বন্ধ হয়নি আর ভবিষ্যতে বন্ধ হবে বলে মনে হয় না।

তোমাকে নিয়ে আর পারা যায় না। এখন তাড়াতাড়ি সামনে এসে বসো।

কেনো, আজ না আপনি আমার ড্রাইভার তাহলে আমি সামনে যাবো কেনো ?

ঠিক আছে না আসতে চাইলে এসো না। তাহলে এক কাজ করো ড্রাইভারের ড্রেসটা নিয়ে এসো সেটা পরে নেই। নাহলে এতো হ্যান্ডসাম মানুষকে কেউ ড্রাইভার মনে করবে না।

থাক ড্রাইভারের ড্রেস আনতে হবে না আমিই বরং সামনে এসে বসছি।

ইয়ানা কথা না বাড়িয়ে সামনের সীটে এসে বসলো আর রেহান মুচকি হেঁসে গাড়ি চালাতে শুরু করলো।

আজ ভার্সিটি যেতে হবে না। অনেক দিন একসাথে ঘুরাঘুরি করা হয় না আজ সারাদিন ঘুরবো।

কিন্তু আমি তো অনেকদিন হলো ভার্সিটি যাই না।

রেহান সামনের দিকে তাকিয়ে বললো, আমার বউয়ের এতো পড়াশোনা না জানলেও চলবে।

বউ শব্দটা শুনে চমকে ইয়ানা পাশে তাকালো, রেহানের ঠোটের কোণে তখনো হাসি ঝুলে আছে আর ইয়ানার মনে দু-টানা।

চলবে,,,