তিথি পর্ব-১২

0
380

তিথি – ১২

সকালে ঘুম থেকে উঠেই আশিকের প্রথম কাজ হলো পুরো বাসা সিসিটিভি সার্ভিলেন্সের আওতায় আনা। ও বুঝে গেছে তিথি নামের মেয়েটা অনেক আঁটঘাট বেঁধেই এই বাসায় এসেছে, সহজে একে কাবু করা যাবে না। পুলিশে খবর দিয়েও লাভ হবে না, তাতে ও নিজেই ফাঁসবে, এখন সবখানেই নারীঘটিত ব্যাপারগুলো খুব স্পর্শকাতর। এখানে ফাঁসলে একসময় হয়তো সঠিক প্রমাণাদি দিয়ে বেরিয়ে আসা যাবে কিন্তু ততদিনে ইমেজের কেল্লা ফতে হয়ে যাবে। তার চেয়ে এই ভালো, সব প্রমাণ যোগাড় করে এই মেয়েটাকে হাতেনাতে ধরিয়ে দেওয়া।
আশিক অফিস যাবে না আজ। চার ক্যামেরার সিসিটিভি সেট আনিয়েছে ও। প্রবেশপথে একটা, রান্নাঘরে একটা, বেডরুমের লবিতে একটা লাগানোর পরে তিথি যে রুমটা দখল করেছে সেই রুমে একটা ক্যামেরা সেট করতে গেলে বিপদ হলো। তিথি আবারও নিজের পক্ষে নিয়ে নিলো সবটা। ক্যামেরা সেট করতে তো দিলোই না আরো সুন্দর করে নাকি স্বরে সবাইকে শুনিয়ে বলল,
—- ‘সোনা, আশিক সোনা আমার, সিসিটিভি কি কেউ বেডরুমে লাগায় কখনো? এমন ভাব করছ, যেন আমার কিছু দেখতে তোমার বাকি আছে! হুহ! তোমার মোবাইলেই তো কয় জিবি আছে কে জানে? ছিঃ। আর এমনিতেও তো আমি তোমার, আমার সব তোমার, এরজন্য কি এইসব ক্যামেরা দরকার বলো? ছিঃ অন্য কেউ যদি দেখে ফেলে? না না আমার ঘরে কোনো ক্যামেরা লাগবে না।’

আশিকের চোখগুলো বিস্ময়ে খুলে আসার উপক্রম হয়েছিল তখন। সবকিছুই ওর হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে!

*****

তিথি খুব করে ভাবছে কিছু একটা। ভেবে ভেবে ক্লান্তি আসছে শুধু, কোনো সমাধানে আসা যাচ্ছে না। এমন একটা হিজিবিজি অবস্থা! একটা কানাগলির শেষ মাথায় আটকে গেছে ও, যেখান থেকে পেছনে ফেরার উপায় নেই! সামনে যাওয়ার রাস্তাটাও অটল কঙ্ক্রিট দিয়ে আটকে দেওয়া – ডানে বাঁয়ে কোথাও কোনো রাস্তা নেই। তিথিরও আজ কোথাও যাওয়ার নেই। এক্ষুনি আশিক এসে হয়তো ঘাড় ধরে বাড়ি থেকে বের দেবে, তারপর কোথায় যাবে ও? নিঃশব্দ কান্নায় চোখের কোল ভিজে যেতে থাকে।

আশিক তখন এসেছে তিথির সাথে একটা হেস্তনেস্ত করতে। ঘরে ঢুকেই নব চেপে দরজার লক আটকে দিয়েছে। খট করে একটা শব্দ হলো। আনমনে চোখ তুলে তাকালো তিথি। একটা মূহুর্ত হয়তো, আশিকও তাকিয়ে থাকল। ক্লান্ত, শুকনো, বাসি ফুলের মতো নেতানো যেন তিথি। আশিকের কেমন যেন লাগল। বুকের কোনো এক তারে যেন সূক্ষ্ম সুর বেজে উঠল। কিন্তু ওই এক মূহুর্তই। ওকে দরজা লক করতে দেখে তিথি তড়াক করে খাটের উপর উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল আর তারও চেয়ে ক্ষীপ্র গতিতে ব্যাগে রাখা ছুরিটা হাতে তুলে নিয়ে এলো।

—- ‘এই, এই, তুমি দরজা কেন লাগালে? ভালো হবে না বলছি, খুলে দাও, এক্ষুনি খুলে দাও? আমি কিন্তু চিৎকার করব।’

আশিক একটু নার্ভাস হলো। কিন্তু নিজেকে সামলে নিলো তৎক্ষনাৎ। তারপর হেসে ফেলে বলল,
—- ‘ছুরি তোমার হাতে আর চিৎকারও তুমিই করবে বলছ? তাহলে কর চিৎকার।’
এটুকু বলেই সুর পালটাল। একটু গলা চড়িয়ে বলল — ‘বাবা, এই দেখো কত মাফ চাইছি, কিছুতেই মাফ করছে না। এই যে আমি পায়ে ধরলাম, এই
যে কান ধরে ওঠাবসা করছি। তিথিসোনা, সোনা আমার, মাফ করে দাও প্লিজ।’
আশিক এবার তিথির দেখানো পথে হাঁটল ওকে জব্দ করার জন্য।

তিথি বিপর্যস্ত হলো।

এখন তিথির চিৎকার কেউ আমলে নেবে না। সবাই ভাববে অভিমানী প্রেমিকা পোষ মানছে না তাই চিৎকার করে রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে। রাগের পথ ধরেই আসবে অনুরাগ!

আশিক গলা নামিয়ে ফিসফিস করে বলল, তুমি যে কেউ না তা আমিও জানি তুমিও জানো। তুমি মিথ্যা বলছ, সেটা আমিও জানি তুমিও জানো। তোমার বিশেষ উদ্দেশ্য আছে সেটা আমিও জানি তুমিও জানো। কিন্তু সেই উদ্দেশ্যটা কী সেটা শুধু তুমি জানো, আমি জানি না। এটা কি ঠিক, বলো তিথিসোনা? এখন আমি হাতেপায়ে ধরে তোমাকে বিয়ে করতে রাজি করাবো, আমাদের বিয়ে হয়ে যাবে তারপর ক্যামেরা ছাড়াই আমি তোমার সবকিছু দেখে নেবো, ভালো হবে না বলো? ঢিংচাক ব্যাপার হবে একটা। আর যদি তুমি বিয়েতে রাজি না হও তবে সহজে বাড়ি থেকে বেরোতে পারবে না, সোজা শ্রীঘরে যেতে হবে।’

তিথি অবাক হয়ে গেল। এই গোবেচারা দেখতে ছেলেটা মোটেও বেচারা ফেচারা কিছু না, বরং জিনিস একটা। আর আসলেই তো তিথির ভাগ্যনিয়ন্তা এখন এই ছেলেটা। আশিক ঘুরে এসে দরজা হাট করে খুলে দিলো তারপর আবার পিছনে গিয়ে তিথির হাত ধরে টেনে বিছানা থেকে নামিয়ে নিয়ে এসে ছুরি ধরা হাতটা ছুরিসহই ঘুরিয়ে নিয়ে তিথিকে নিজের দিকে টানল। আশিক তিথির পেছনে, ওর দুই হাত দিয়ে তিথির দুই হাত তিথির পেটের কাছে শক্ত করে ধরল। তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
—- ‘সোনা ময়না, এখন দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আমাদেরকে যে দেখবে সেই ভাববে আমি তোমাকে আদর করছি। হালকা একটু মিষ্টি আদর। একটু পরেই আমাদের বিয়ে হবে। তখন আমি তোমাকে গাঢ় আদর দেব। সারারাত ধরে আদর দেব, তাই এই হালকা আদরে এখন কেউ কিছু মনে করবে না ।’
তিথির চুলের খুলে আসা খোঁপাতে নাক ঘষল আশিক, লম্বা শ্বাস নিয়ে ঘ্রাণ নিলো চুলের গোছায় আর তারপরে ঘাড়ের কাছে কানের পেছনে আলতো করে ফুঁ দিলো অনেকটা সময় নিয়ে। কানের ডগায় ঠোঁট ছোঁয়ালো।
জেদ করে তিথিকে আলিঙ্গনে নিয়েছে আশিক, তিথি নিজেকে শক্ত করে ফেলেছে সাথে সাথে, রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছে, আশিকের হাতের ভেতরে পেলব হাতদুটো কঠিন করে মুঠো করে ফেলেছে। সেই শক্তকঠিন মানবীর মাঝে তলিয়ে যেতে থাকল আশিক। মনে হচ্ছে হারিয়ে যাবে, পালস রেট কমে গেছে একেবারেই, দুয়েকটা বিট মনে হয় গ্যাপ পড়ছে, হার্ট বিভ্রান্ত হয়ে রক্তসঞ্চালন বন্ধ করে দিতে চাইছে, ডুবে যাচ্ছে মনে হচ্ছে ওর।
তিথির মুঠো শক্ত করে চেপে রাখা আশিকের হাত ছুঁয়ে দিচ্ছে তিথির শাড়িগোঁজা তলপেট। নেশা ধরে যাচ্ছে ওর! তিথিকে শায়েস্তা করতে গিয়ে আশিক নিজেই শায়েস্তা হয়ে যাচ্ছে, অদ্ভুত এক রিনরিনে মাদকতা ছড়িয়ে পড়ছে আশিকের সারা শরীর জুড়ে।

তিথির আপাদমস্তক শিরশির করে উঠল। শুধু আশিকের স্পর্শে না ওর কথাগুলোও ভীত করে তুলেছে তিথিকে। ও কাঁপতে থাকল থরথর করে। এমন কাঁপুনি দেখে এবার আশিকেরও যেন এক ঝটকায় নেশা কেটে গেল। চোর, ডাকাত যাই হোক না কেন, তিথি পূর্ণযৌবনা নারী। নারীজাতিকে অসহ্য মনে হলেও কখনো শারীরিকভাবে অপদস্ত, অপমান করার কথা ভাবেও না আশিক। তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিলো ও তিথিকে।
ছাড়া পেতেই তিথি ধপ করে বিছানায় বসে পড়ল আর হাউমাউ করে কেঁদে দিলো দুহাতে মুখ ঢেকে। এই এতখানি অপমান ওর আগেকার সব কষ্টগুলোকে আবার জাগিয়ে দিল। সেই কবে থেকে একটার পর একটা করে কান্নার উপলক্ষ জমা হচ্ছেই শুধু!
আশিক এবার পড়ল বিপদে। বিব্রত আর মহা বিপর্যস্ত মনে হলো নিজেকে। রাগের বশে তিথির সাথে যা করেছে, যা করতে যাচ্ছিল তাতে নিজেকে ওর পটেনশিয়াল রেপিস্ট মনে হচ্ছে। আদৌতে মেয়েদের ক্ষতি বা উপকার কোনোটাই করার ইচ্ছে নেই ওর। মেয়েদের কাছ থেকে নিজের সবরকম সংস্রব এড়িয়ে চলাই ওর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। মেয়ে মানেই ছলাকলা জানা ভীষণরকম ন্যাকা, ছলনাময়ী, মিথ্যেবাদী, অহংকারী, স্বার্থপর, লোভী, পাষাণী, ঝগড়ুটে এইসব নানাবিধ নেতিবাচক বিশেষণের অধিকারী।
সেই মেয়েরা যে এরকম পলকা, ছুঁয়ে দিলেই নেই হয়ে যেতে পারে, এটা আশিকের ধারণাতেই ছিল না। ও অপরাধীর মতো গুটিয়ে গেল। একেবারে ভুলে গেল তিথি গতরাত থেকে কীভাবে ওকে প্যারা দিচ্ছে। তিথির কান্না থামছে না দেখে দুইহাত উঁচু করে আত্মসমর্পণ করার ভঙ্গিতে বল,
—- ‘ওকে ওকে তুমিও ডান, আমিও ডান। কান্নাকাটি বন্ধ করো প্লিজ। আব্বা এসে পড়বে। আবার কিন্তু আমাদের বিয়ে নিয়ে পড়বে। এবারে কিন্তু বিয়েটা হয়েই যাবে। আমি তো তোমার কোনো ক্ষতি করিনি। তোমাকে আমি চিনিই না। তবে আমার সাথে এগুলো কেন করছ তুমি? কীসের শত্রুতা তোমার সাথে আমার?’

তিথির খুব করে মনে হলো এই ছেলেটাকে হয়তো সব বলা যায়। কানাগলি পার করার সারথী করা যায়। আর কোনো উপায়ও তো নেই আর। নাক ফুলিয়ে, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না বন্ধ করে সবটা যখন বলতে যাবে তখন ওর খেয়াল হলো বুকপকেটে রাখা আশিকের মোবাইলের দিকে, ভিডিও রেকর্ডিং, ভয়েস রেকর্ডিং অন করা। আচ্ছা, তিথিকে ইমোশনাল করে জবানবন্দি নেওয়া হচ্ছে? এতটা বোকা তো তিথি না। সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাতে দেয়নি তাই এই উপায়? কান্না বন্ধ করে তিথি বলল,
—- ‘আশিক, এইসব নাটক বন্ধ করো এখন। আর ভালো লাগছে না। রাগ করেছ আমার সাথে? তাই এমন করছ? আসো, রাগ ভাঙিয়ে দেই? আমিও তোমাকে একটু আদর করে দেই।’
বলতে বলতে এবার ও নিজেকে আশিকের খুব কাছাকাছি নিয়ে গেল, চোখে চোখ রেখে মিশিয়ে দিলো নিজেকে আশিকের সাথে। কাজললেপা চোখের দিকে তাকিয়ে আশিকের নিঃশ্বাস আবার ঘন হতে শুরু হলো, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে মনে হচ্ছে, চোখ বুজে যেতে লাগল ওর …
বৈরাগী হতে পারে কিন্তু শারীরিক অনুভূতিশূন্য মহামানব তো নয় আশিক, কিছুক্ষণ আগের অনুভূতিটা ফিরে আসছে আবার ওর … আবার ডুবতে শুরু করল ও… মাথা ঝিমঝিম করতে লাগল….

মোবাইলটা তুলে নিলো তিথি ওর পকেট থেকে। রেকর্ডিং বন্ধ করে খিলখিল করে হেসে উঠল। আশিক হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকল। এভাবে ধরা পড়ে যাবে ভাবেনি। চোখমুখ রাঙা হয়ে উঠেছে ওর। তিথিও এবার হাত উঁচু করে বলল,
—- ‘এবারে আমিও ডান।’
দুটো কাশি দিয়ে গলা পরিস্কার করে বলল,
—- ‘নেই তো! কোনো শত্রুতা নেই তো। কোনো মিত্রতাও নেই। তোমাকে তো আমি চিনিই না। দেখিনি জীবনেও। কালই তোমাদের কেয়ারটেকার ডাকল আশিক স্যার বলে, তখনই তো নামটা জানলাম।’

—- ‘তবে আমাকে কেন জড়াচ্ছ? ঝামেলায় ফেলছ?’ হাঁপাচ্ছে রীতিমতো আশিক।

—- ‘দোষটা তো তোমার!’

—- ‘আমার? কীভাবে? এই না তুমি বললে তুমি আমাকে চিনতে না!’

— ‘হ্যাঁ, চিনতাম না তো! কিন্তু কাল রাতে যদি একটু সাহায্য করতে আমাকে, একটু বাসস্টপ পর্যন্ত পৌঁছে দিতে তবে তো আমাকেও বিপদের হাত থেকে বাঁচার উপায় খুঁজতে হতো না আর তোমারও বিপদে পড়তে হতো না!’

—- ‘আজব কথা, তুমি যে ছিনতাই করতে আসোনি আমি বুঝব কী করে? এরকম হয় না? ছিনতাইকারী, ডাকাত, অজ্ঞানপার্টি নেই? আর একটা মেয়ে রাতে বাড়ি থেকে বেরুতে পারে, আর নিজে বাসস্টপ পর্যন্ত যেতে পারে না?’

— ‘তবুও, একটা মেয়ে যখন হেল্প চাইছে অত রাতে, তখন অন্য সব সম্ভাবনা দূরে রেখে আমাকে সাহায্য করাটা উচিত ছিল তোমার। কী হতো? যদি আমি সত্যিই ছিনতাইকারী বা ডাকাত হতাম, তবে কী হতো? বড়জোর কিছু টাকা বা মোবাইলটা খোয়া যেত তোমার।’

আশিক ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। যেন বলতে চাইছে, তিথি যে কোনো ডাকাত সেই সন্দেহ ওর এখনো আছে।

— ‘অন্যদিকে এভাবে তোমার বাসায় না ঢুকলে এমনও খবর বেরোতে পারত পত্রিকায় যে, ধর্ষিত তরুণীর লাশ উদ্ধার! সেটা কি ভালো হতো এটার চেয়ে? এই ঝামেলাটা যেটা এখন তোমার ঘাড়ে চেপে বসেছে সিন্দাবাদের বুড়োর মতো সেটা হচ্ছে তোমার শাস্তি।’

— ‘তুমি বাসস্টপে যেতে চেয়েছিলে কেন? কোথায় যাবে?’

— ‘যাওয়ার জায়গা তো নেই আমার। বাস কাউন্টারে গিয়ে বসে থাকতাম। ওখানে সারারাত মানুষ বসে থাকে। বিপদও থাকে না, মানুষের কৌতুহলও জাগে না।’

খুব করুন শোনালো তিথির কথা। আশিকের মন খারাপ করল। একটু একটু করে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে তিথির কথাগুলো। জানতে চাইল,
—- ‘তুমি বাড়ি ছেড়েছ কেন?’

—- ‘বিয়ে করব না, বলে।’

— ‘সত্যিই তোমার বিয়ে ছিল? তা বিয়ে করবে না কেন? প্রেমিক আছে? তার কাছে যাও।’
আশিক প্রশ্নটা করল ঠিকই কিন্তু কেন জানি উত্তরটা জানতে ইচ্ছে করছে না ওর।

—- ‘না। কেউ নেই।’
তিথির নাবোধক উত্তরে বড় ভালো লাগল আশিকের।

— ‘তবে পালালে কেন? বিয়েতে কি অসুবিধা? মাথায় সমস্যা আছে তোমার?’

তিথি আশিককে বলল ভাইরাল হওয়া আর্টিস্টের নিউজ সার্চ দিতে, যাকে তার মডেল পুড়িয়ে দিয়েছে। সার্চ দিলেই কত কত পোস্ট, ছবি! বিস্মিত হয়ে আশিক বলল,
—- ‘এটা তুমি? চেনাই তো যাচ্ছে না। আর তুমি তো বিপদসংকেত একেবারে, বাপরে!’

—- ‘আমার যে ছবিগুলো ভাইরাল হয়েছিল সেগুলো আমার আপার বিয়ের সময় তোলা ছিল, পার্লার থেকে সেজে ছবি তুলেছিলাম। তাই হয়তো চিনতে পারোনি তোমরা কেউ।’

— ‘আচ্ছা, বেশ। বিয়ে থেকে পালানোর সাথে এর কি সম্পর্ক?’
আশিকের কৌতুহল বাড়ছেই ক্রমাগত। তিথিকে জানার ইচ্ছাটাও বেড়ে চলেছে।

তিথির কাছে সবটা শুনে আশিক শুধু বলল,
—- ‘এবার?’

—- ‘আমি গতরাত থেকে এই শাড়ি পরে ঘুরছি। কিছু জামা কাপড় এনে দেবে। আর যতদিন না আমি যাওয়ার ঠিকানা পাচ্ছি, ততদিন এখানেই থাকব।’

—- ‘আশ্চর্য তো। আমি কেন তোমাকে থাকতে দেবো? আমার কী দায়? নো ওয়ে!’

—- ‘একচুয়ালি, ইউ আর লিটারারি কারেক্ট। ইউ হ্যাভ নো ওয়ে। তোমার কোনো উপায় নেই। তুমি বাধ্য। আমাকে সাহায্য না করলে আমি তোমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাব। কাউকে বিয়ে করতে আমার কোনো সমস্যা নেই। যদু, মধু, কদু যেই হোক না কেন। কিন্তু যাকে ভাই বলে জানি, জানি বলছি কেন, ভাইয়া তো আমার ভাইই হয়, সে বাদে আর যেকোনো গোঁফওয়ালা ডাকুসর্দারকেও আমি বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাব। তোমাকে বিয়ে করতে আমার কোনো আপত্তি নেই। আর আমি রাজি হয়ে গেলে তোমার কোনো কথা কেউ শুনবে না। লাগবা বাজি?’

বাজির দরকার নেই। আশিক এমনিও তা জানে। সারাজীবনের নারীএলার্জি দূর হয়ে যেতে বসেছে ওর। এত কাছ থেকে নারীসঙ্গ পাওয়াও তো হয়নি কখনো। ও ফিসফিস করে বলল,
—- ‘রাজি হয়ে যাও না কেন?’
পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিলো। এভাবে নিজেকে হারিয়ে ফেলা যায় না। একটা অচেনা মেয়ের কাছে এভাবে হেরে যাবে আশিক? যদু, মধু, কদু হয়ে যাবে? আর দশটা ছেলের মতো প্রেমে পড়বে শেষে? অসম্ভব! প্রেমের টানে ওর সব বন্ধুরা কেমন ভারবাহী গাধায় পরিণত হয়েছে সে তো ও দেখেছেই। এবার ও ট্রামকার্ড ছাড়ল,
—- ‘আমি বিয়ে করতে আপত্তি করব, তোমাকে কে বলল? এমন ডানাকাটা পরি নিজে থেকে বাড়ি বয়ে এলো, কোনো ঝক্কি-ঝামেলার ব্যাপার নেই, ফ্রি ফ্রি আস্ত একটা বউ পেয়ে গেলে আমি ছাড়ব কেন? একটুখানি আদর করলাম বিনা লাইসেন্সে, পুরো আদর করার লাইসেন্স চাই এবার।’
হাসতে হাসতেই তিথির আলগা হওয়া শাড়ির কারণে অনাবৃত হওয়া কোমর পেঁচিয়ে ধরে নিজের দিকে টানল ও। একটু আগে ঠিক যেমন করে তিথি ওর বুকের সাথে মিশে গিয়েছিল তেমনি করেই তিথিকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো ও।

তিথি প্রমাদ গুণল। এই ছেলেটা মোটেও বেচারা নয়…

চলবে…
আফসানা আশা