#তীব্র_প্রেমের_নেশা (১৬)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
_________________
গায়ে হলুদ ভালোই ভালোই কেটে গেলো। আমি নিচে যাইনি তেমন একটা। তীব্রও জোড় করেনি৷ তাকে কাল যে পরিমানে কনফিউজড করেছি তাতে তার ধারণা আমি নিশ্চয় পা’গল হয়ে গেছি৷ আমার নাকি মাথার তা’র ছি’ড়ে গেছে। উনার কথা ভেবেই আমার হাসি পায়। কতদিন একসাথে থাকা হবে তা তো জানি না তবে যে ক’দিন আছি সেই ক’দিন না হয় একটু তানহা আর তীব্রকে জ্বালিয়েই যাই। ভাবতে ভাবতেই নিজের সাজগোজ শেষ করলাম। কালো রঙের লেহেঙ্গা পড়েছি। চুল ছেড়ে দিয়ে হালকা করে সেজে নিয়েছি। তীব্র নিজেও কালো পাঞ্জাবি পড়েছে। আমি লেহেঙ্গা ধরে ধীরে ধীরে নিচে নামলাম। পুরো বাড়িতে মেহমান গিজগিজ করছে। বড় মামির অনেক আত্মীয় এসেছে। এর মাঝে এক ছেলে আছে। এই ব’জ্জাত ছেলের দৃষ্টি আমার মোটেও ভালো লাগে না৷ কিছু তো গড়বড় আছেই। আশে পাশে তাকিয়ে তিহাকে খুঁজলাম। তিহা আর মিলি একে অপরের সাথে চিপকে থাকে আর কোথায় কোথায় যায় তা বোধহয় নিজেরাও জানে না৷ আমার খোঁজার মধ্যেই বিপ্লব আর মুন্না দৌড়ে আসে আমার কাছে। মুন্না দাঁত বের করে বলে,
‘ভাবি আপনি তীব্র ভাইয়ের বউ না হলে আপনারে নিয়ে ভেগে যেতাম।’
ওর কথায় আমার মুখ হা হয়ে গেলো। ভ্রুদ্বয় কিঞ্চিত কুঁচকে বললাম, ‘বয়স তোমার ১৬ ও না আর তুমি আসছো ভেগে যেতে! তীব্র শুনলে তোমার ঠ্যাং ভে’ঙে হাতে ধরিয়ে দেবে।’
‘আরেহ ভাবি! আপনি কোথায় আমাকে সাপোর্ট করবেন তা না করে আসছেন তীব্র ভাইকে বিচার দেওয়ার কথায়! ছিঃ ভাবি ছিঃ। আপনার কাছে থেকে এটা আশা করিনি।’
ওর কথার ধরণ শুনে ফিক করে হেঁসে উঠলাম। পাশ থেকে বিপ্লব সাবধানী কন্ঠে বললো, ‘খবরদার ভাবী ওর কথায় গলে যাবেন না৷ আপনি তীব্র ভাইকে বলে দিবেন। সাক্ষী হিসেবে আছি আমি।’
মুন্না সাথে সাথেই বিপ্লবের মাথায় গাট্টা মা’রে। দুজনে একে অপরের সাথে মা’রা’মা’রি করতে শুরু করেছে৷ কোনো রকমে ওদের থামিয়ে বললাম, ‘আরেহ নিজেদের মধ্যে ঝামেলা করতে হয় না। আমাকে বলো তোমাদের তীব্র ভাই, তিহা, মিলি ওরা সবাই কোথায়?’
‘তীব্র ভাই ব্যস্ত। নানাভাই ওকে কি যে কাজ দিয়েছে আর তিহা আপু, মিলিপু সবাই ওদিকে। ওহ ভাবী! ভাইয়া বলেছে আপনাকে সাবধানে থাকতে। ওই যে তানহা আপুর খালাতো ভাই আসছে না হাবিব! ওর থেকে দুরে থাকতে বলছে।’
আমি মুখটা গোল করে ‘চ’ এর মতো শব্দ করে ‘ওকে’ বললাম৷ এরপর চলে আসলাম তিহা আর মিলিকে খুঁজতে। এই মেয়ে গুলো যে কোথায় হারিয়ে যায় আল্লাহ মালুম। ওদের খুঁজতে খুঁজতে সামনে পড়লো হাবিব। আমাকে দেখে ৩২ টা দাঁত বের করে হাসে। হ্যাংলা, পাতলা গড়নের হাবিবের হাসি একদম খারাপও না। আমি তাকে এড়িয়ে চলে আসতে নিলে বলে,
‘কাউকে খুঁজছো প্রানেশা?’
আমি যেনো আকাশ থেকে পড়লাম। প্রথমত আমাকে ঠিক মতো চেনে কি না সন্দেহ তারওপর আবার আমাকে তুমি আর নাম ধরে বলছে! বিরক্তি নিয়ে পেছন ফিরে তাকালেও হাসি হাসি মুখ করে বললাম,
‘তীব্র আপনার বড় নাকি ছোট ভাইয়া?’
হাাবিব মুখ কালো করে বলে, ‘আমাকে ভাইয়া কেনো বলছো? আর তীব্র আমার বড়। কেনো বলো তো! কি হয়েছে?’
‘বড় ভাইয়ের বউকে আপনি এবং ভাবী বলে সম্বোধন করতে হয় ভাইয়া। এটা বোধহয় আপনার জানা নেই।’
হাবিব মুখ বাঁকায়। লোকটার স্বভাব আমার মোটেও ভালো লাগছে না। চলে আসতে নিলে চোখে পড়ে খানিকটা দুরে দাঁড়ানো তীব্রর দিকে। ব্যাস আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। হাবিবের দিকে তাকিয়ে হেঁসে লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিতে বললাম,
‘অবশ্য আপনি আমাকে শুধু প্রানেশা বললেও আমি মাইন্ড করবো না।’
হাবিব যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পেলো। দুপা এগিয়ে আসলো আমার দিকে। উনার আকস্মিক এগিয়ে আসাতে চমকে দুপা পিছিয়ে গেলাম৷ হাসার চেষ্টা করে বললাম,
‘কাছে আসছেন কেনো ভাইয়া? দুরে থাকুন।’
হাবিবের আমার দিকে এগিয়ে আসাতেই তীব্র ছুটে আসে। লোকটার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। চোয়াল শক্ত করে বলে, ‘কি হচ্ছে এখানে?’
হাবিব ভয়ে থতমত খায়। তাার চোখ দেখেই বুঝলাম সে ভালো মতোই ভয় পায় তীব্রকে। কিন্তু এতক্ষণ ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। আহারে বেচারা হাবিব! সে আজ ধো’লাই খাবে তা আমি ভালো মতোই বুঝলাম। এখানে ফারদিন ভাই থাকলে এখানেই হাবিবের গলা টি’পে দিতো। হাবিব আমতা আমতা করে বললো,
‘ভা-ভাবির সাথে একটু আলাপ করছিলাম ভাই।’
তীব্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, ‘শেষ?’
হাবিব ‘হ্যাঁ’ বলেই দৌড় দেয়। ওর দৌড় দেওয়া দেখে আমি পিছন থেকে দুবার ডেকে হেঁসে উঠলাম। পেট চেপে হেঁসেই যাচ্ছি। তীব্র আমাকে টেনে সোজা করে। রাগী স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
‘ওর সাথে এতো হেঁসে হেঁসে কথা বলতে কে বলছে?’
আমি উনার হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম, ‘কেউ বলতে হবে! আমার কি নিজের ইচ্ছা নাই?’
তীব্র সাথে সাথেই চেপে ধরে। হাত টেনে নিয়ে আসে একটা ফাঁকা জায়গায়। তারপর দাঁতে দাঁত চেপে শক্ত করে কোমড় আঁকড়ে ধরে। আমি বড় বড় চোখ করে তাকালাম উনার দিকে। উনি বললেন,
‘হাবিবের থেকে দুরে থাকো। আমি ছাড়া সবার ক্ষেত্রেই তোমার নিজ ইচ্ছে চলবে না। কথাটা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নাও!’
আমি উনার থেকে ছুটার চেষ্টা করেও যখন ব্যর্থ হলাম তখন ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটিয়ে বললাম, ‘কেনো? আপনাকে একটা অন্য মেয়ে জড়িয়ে ধরতে পারে, আপনি তার হাতে মেহেন্দি দিয়ে দিতে পারেন আর আমি কারো সাথে সামান্য কথা বললেও আপনার গায়ে লাগে!’
তীব্র এতোটাই অবাক যে তার হাত আলগা হয়ে যায়। আমি তার থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিলাম। অন্যদিক থেকে ‘বর এসেছে’ শব্দ আসছে৷ সেদিকে পা বাড়িয়ে বললাম,
‘যার সাথে বি’চ্ছেদই ঠিক করে রেখেছেন তাকে নিয়ে এতো না ভাবলেও চলবে আপনার। আপনি তো আমাকে ভালোবাসেন না! আর ভালোবাসতে না পারলে আমার ওপর অধিকারও দেখাতে আসবেন না।’
পেছন ফিরে তীব্রর মুখ দেখিনি। বাঁকা হেঁসে চলে আসলাম৷ হয় তীব্রকে আজীবন নিজের করে পাবো নয়তো হারাবো। আমার এতো লুকোচুরি আর ভালো লাগছে না। ভালোবেসে কেনো এতো কষ্ট পেতে হবে আমার? আমি তো শুধু ভালোই বেসেছি। সে ‘ভালোবাসেও’ বলে না আবার ‘ভালোবাসে না’ তাও বলে না। এবার কোনো না কোনো একটা তাকে নিজের মুখেই বলতে হবে। ব্যাস!
________
বিয়েটা ভালোই ভালোই মিটে গেলো। শোভার বিদায় শেষে আমি হাই তুলতে তুলতে নিজের রুমের দিকে এগোচ্ছিলাম সে সময় টান পড়ে লেহেঙ্গার ওড়নাতে। কাঁধের ওড়না চেপে পেছনে তাকাতেই চোখে পড়ে হাবিবকে। ওর হাতে আমার ওড়নার অংশ। আঁতকে উঠলাম আমি। তীব্র নিচে। বাকি সবাইও নিচে। বড় মামিকে সামলাচ্ছে। আমার শরীর খাারাাপ লাগছিলো বলে আমি চলে এসেছিলাম কিন্তু এখানেই যে এমন পরিস্থিতিতে পড়বো তা ভাবতেও পারিনি। পিটপিট করে কিছুক্ষণ হাবিবের দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম,
‘কি ধরনের অসভ্যতা এটা হাবিব ভাই? আমি কিন্তু আপনার ভাবী হই। ওড়না ছাড়ুন।’
হাবিব দাঁত বের করে ওড়না ছাড়ার বদলে ওড়নাতে ধরে টান দেয়। আমি হুমড়ি খেয়ে লেহেঙ্গা তে বেঁধে নিচে পড়ে যাই। হাটু আর হাত ধরে আর্তনাদ করে উঠি। হাবিব শ’য়তানী হাসি হেঁসে আরেকবার টান দিতেই পিনের জন্য ওড়নার সাথে সাথে টপটাও খানিকটা ছিড়ে যায়। মুহুর্তেই সকল ব্যাথা ভুলে হাত দিয়ে চেপে ধরলাম। দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
‘দেখেন হাবিব ভাই ভালো করে বলছি আমার ওড়না ছাড়ুন। তীব্র যদি এসে দেখে আপনি আমার সাথে বে’য়া’দ’বি করতেছেন তাহলে কিন্তু আপনার বাপেরও ক্ষমতা নাই আপনাকে বাঁচাবে।’
হাবিব বি’চ্ছিরি রকমের হাসি হেঁসে বা’জে ভঙ্গিতে বলে, ‘ভাবী আপনার বর তো এখন তানহার সাথে। মনে হয় না এতো সহজে তানহা তাকে ছাড়বে আর রইলো বাকি আপনার কথা! আপনাকে দেখলেই তো আমার…’
উনার খারাপ ইঙ্গিত বুঝতে সময় লাগলো না আমার৷ গা গুলিয়ে উঠলো। কোনো রকমে উঠে দাঁড়ালাম। উনার দৃষ্টি তখনও দেহের ভাজে ভাজে। আমি ওড়না ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললাম,
‘আমি কিন্তু চিৎকার করবো!’
‘ভাবী একটু তো বুদ্ধিমতী হোন! একে তো নিচে বক্সের আওয়াজে কেউই কিছু শুনতে পাবে না আর তাছাড়া আপনি চিৎকার করলেই যেনো আমি আপনাকে করতে দিবো! বায় দ্যা ওয়ে এসব চিৎকার চেচামেচি ছাড়ুন। আমি কিন্তু আপনাকে দারুণ মজ….’
ঘৃ’নায় গা গুলিয়ে উঠলো মুহুর্তেই। কথা শেষ করতে না দিয়েই গায়ের সমস্ত শক্তিতে থা’প্প’ড় বসালাম হাবিবের গালে। হাবিব রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আমার হাত মুড়িয়ে ধরলো। সমস্ত শক্তি দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করে তিহা, তীব্রকে ডাকলাম। কিন্তু এই বক্সের সাউন্ডে আমার শব্দ গুলো নিচে পর্যন্ত যাচ্ছে না। হাবিব রেগে হাত দিতে থাকে আমার টপে। মুহুর্তেই দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। বার বার প্রার্থনা করছিলাম তীব্র আসুক। কেউ না কেউ আসুক। কিন্তু কেউ আসেনি। এসময় বক্স বাজানোটা ভীষণ আশ্চর্য লাগলো আমার কাছে। বুঝলাম আটঘাট বেধেই নেমেছে জা’নো’য়া’রটা। নিজেকে এতোটাই অসহায় লাগতে শুরু করলো যে একপর্যায়ে ক্লান্তিতে গলা দিয়ে আওয়াজ বের হওয়াই বন্ধ হয়ে গেলো। হাবিবের শক্তির সাথে না পেরে শব্দ করে কান্না করে উঠলাম। সেই মুহুর্তেই একটা মেয়েলী কন্ঠে ভেসে আসলো,
‘কি হচ্ছে এখানে?’
সাথে সাথে ছেড়ে দিলো আমাকে হাবিব। ওর হাত থেকে ছাড়া পেয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিলাম। মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। সামনে দাঁড়ানো তানহা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
‘তুমি ওর সাথে কি করছিলে প্রানেশা?’
আকাশ থেকে পড়লাম যেনো। অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে তাকিয়ে রইলাম। আমি কি করছিলাম মানে! তানহা তো স্পষ্টই দেখলো হাবিব অ’সভ্য’তামো করছিলো তবুও আমাকে জিজ্ঞেস করছে! চোখ থেকে পানি গড়ানো বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যেই তানহার পিছু পিছু এসে দাঁড়ায় তীব্র, তিহা, মিলি, মুন্না, বিপ্লব। হাবিব ওদের আসতে দেখেই নাটক শুরু করলো। অবুঝের মতো তানহাকে বলল,
‘তানহা তীব্রর বউ-ই তো তখন আমাকে বললো বিদায়ের পর যখন ফাঁকা হবে তখন ওর রুমে আসতে। কিন্তু রুমে যাওয়ার আগেই যে এসব হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি।’
আমি কখন ওকে এসব বললাম? আমার গলা দিয়ে আওয়াজ আসাই বন্ধ হয়ে গেছে। তীব্র ততক্ষণে আমার দিকে তাকিয়েছে। তিহা আর মিলি এসে আমাকে ধরে বললো, ‘কি হয়েছে ভাবী?’
আমি কোনো উত্তর দেওয়ার আগেই তানহা বললো, ‘তোর ভাবী আর কি বলবে! আমি বলছি কি হয়েছে! যা ঘটেছে তা তো আমার সামনেই ঘটলো। তোর ভাবী হাবিবের সাথে চিপকে ছিলো। ছিঃ ছিঃ আমার তো বলতেই ঘৃ’ণা হচ্ছে। তীব্র দেখো তোমার বউয়ের কান্ড!’
আমি মুহুর্তেই ভাঙা গলায় বললাম, ‘উল্টা পাল্টা কথা কেনো বলতেছো তানহা? হাবিব তো জো…’
‘তুমি কি বলতেছো প্রানেশা? তুমি তো নিজেই আসলে আমার কাছে।’
আমি বলার মতো ভাষা পেলাম না। মাথা নত করে নিলাম। ঠোট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টাই রইলাম। তীব্র কি বলে সেটাই শুনতে চাই আমি। পাশ থেকে তিহা বললো,
‘তানহা আপু আমার ভাবী ওমন মানসিকতার নয়। ভাবীকে আমি আরো আগে থেকে চিনি তাই সে কি করতে পারে কি পারে না তা আমি ভালো করেই জানি। আর এই হাবিব ভাইয়া আপনার চোখের দিকে তাকালেই তো লু’চ্চা লু’চ্চা লাগে আপনি আবার ভাবীর নামে বদনাম দিচ্ছেন! মেয়ে মানুষের জু’তার বারি খায়ছেন?’
হাবিব ফুঁসে ওঠে। যা তা বলতে থাকে। তানহা তাকে থামিয়ে আমাকে কয়েকটা বি’শ্রি ভাষায় গা’লি দিয়ে বললো, ‘খুব বড় বড় কথা বলছিস ভাবীকে নিয়ে! তোর ভাবী কি তা তো নিজের চোখেই দেখলাম। হাবিবকে সি’ডি’উস করেই তো এতোকিছু করেছে! ন’ষ্টা মেয়ে মানুষ কোথাকার!’
রাগে, ঘৃণায় গা ঘিন ঘিন করে উঠলো। এতক্ষণ চুপ থাকলেও এবার চুপ থাকলাম না। দু পা এগিয়ে গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে থা’প্প’ড় বসালাম তানহাকে। তানহা তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায়। রাগে ঘনঘন শ্বাস পড়ছে আমার। তানহাকে থা’প্প’ড় দেওয়ায় হাবিব ছুটে আসে। আমার দিকে হাত বাড়াতেই তীব্র ওর বুক বরাবর লা’থি দিয়ে আমার দিকে তাকায়। আমি অবাক চোখে তার দিকে তাকাতেই দেখলাম তার ঠোঁটের কোণে অদ্ভুত হাসি। আমাকে কাছে টেনে এক হাতে আগলে নিয়ে ফু দিলেন সামনে থাকা চুলে। তারপর হিসহিসিয়ে বললেন,
‘এই থা’প্প’ড়টা আর দু সেকেন্ড পরে দিলেই তোমার গালে পড়তো। অপরাধ না করেও ওরা এতো তোমাকে কথা শুনাচ্ছিলো আর তুমি চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলে! ইচ্ছে তো করছিলো তোমাকে ধরেই থা’প্রাই।’
হাবিব বুকে ব্যাথা পাওয়ায় চোখ মুখ খিচে নিচে পড়েছিলো। মুন্না আর বিপ্লবকে তীব্র কিছু ঈশারা করতেই তারা ওকে নিচ থেকে তুলে আমার সামনে দাঁড় করায়। তীব্র আমার চোখে চোখ রেখে বলে,
‘তোমার দিকে তাকানো, তোমাকে করা সকল খারাপ স্পর্শের জবাব দাও ওকে। তিহা, মিলি কি করে জু’তা দিয়ে মা’রতে হয় জানিস তো! নাকি শিখিয়ে দিবো!’
তিহা আর মিলি বাঁকা হেঁসে নিজেদের পা থেকে জু’তো নিয়ে প্রথমে নিজেরাই গালের ওপর বসিয়ে দিলো। এরপর তীব্র আমার দিকে তাকাতেই আমি উন্মাদের মতো মা’রতে থাকলাম হাবিবকে। এক পর্যায়ে মা’রতে মা’রতে নিচে বসে পড়লাম। ডুকরে উঠলাম। তীব্র ব্যস্ত পায়ে এসে নিজেও হাটু মুড়িয়ে বসে আগলে নিলেন। উনার পাঞ্জাবি আঁকড়ে বুক ভাসিয়ে কাঁদতে থাকলাম। আজ আমার সাথে যা হয়েছে তা একটা মেয়ের কাছে কত বড় ধাক্কা তা বোধহয় শুধু একটা মেয়েই অনুভব করতে পারে। একসময় কাঁদতে কাঁদতেই সেন্স হারিয়ে লুটিয়ে পড়লাম তীব্রের বুকে।
চলবে..
#তীব্র_প্রেমের_নেশা (১৭)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
__________________
(নোট পড়ার অনুরোধ রইলো)
নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ব্ল্যাঙ্কেট মুড়িয়ে শুয়ে রইলাম। কিছু চেঞ্জও করিনি। বিষয়টা অদ্ভুত ভাবেই মনে দাগ কেটে গেছে। চোখ বন্ধ করলেই জা’নো’য়া’রটার মুখ ভেসে আসছে। তখনকার সেই স্পর্শ গুলো মনে পড়তেই গা গুলিয়ে উঠছে। হুট করেই ব্ল্যাঙ্কেট টানায় মাথার ওপর থেকে সরে যায়। আমি চোখ মুখ কুঁচকে তাকালাম তীব্রর দিকে। তীব্র শান্ত কন্ঠে বললেন,
‘চেঞ্জ করবা না? এতো ভারী লেহেঙ্গা নিয়ে ঘুমাতে পারবে না তো। ওঠো!’
‘যান তো আপনি৷ আমাকে একা থাকতে দেন। বিরক্ত লাগছে।’
‘একা থাকতে চাও ভালো কথা। উঠে আগে চেঞ্জ করে এসো।’
আমি উত্তর না দিয়ে ব্ল্যাঙ্কেট আবার টেনে নিলাম। অন্যপাশ হয়ে শুতেই উনি ফের বললেন, ‘নিজে চেঞ্জ করবা নাকি করিয়ে দিবো?’
আমি তবুও উনার কথা পাত্তা দিলাম না। চুপচাপ শুয়ে রইলাম। মিনিট খানেক বাদেই উনি ঝড়ের গতিতে ব্ল্যাঙ্কেট সরিয়ে কোলে তুলে নিলেন৷ আতঙ্কে উনার টি-শার্ট আঁকড়ে ধরলাম। উনি বাঁকা হেঁসে বললেন, ‘আমাকে দিয়ে চেঞ্জ করিয়ে নিবে এটা বললেই তো পারো বউ। শুধু শুধু এতো আকার ইঙ্গিতের কোনো মানে আছে!’
‘আশ্চর্য তো! আমি কখন বললাম এসব? নামান আমাকে।’
‘উহু৷ একবার যখন আমি দায়িত্ব নিয়েছি তখন তো আর আমি ছাড়ছি না। বায় দ্যা ওয়ে যদি চেঞ্জ করাতে গিয়ে রোমান্সের ফিলিংস চলে আসে তাহলে কিন্তু সম্পূর্ণ দায় তোমার।’
আমি হাত পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে বললাম, ‘খবরদার না। নামান আমাকে!’
তীব্র নামিয়ে দিলো। কিন্তু দোপাট্টাই হাত দিতেই লাফিয়ে সরে আসলাম। উনার হাত থেকে শাড়ি নিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে ছুটলাম ওয়াশরুমের দিকে। দাঁত কটমট করতে করতে বকা দিতে থাকলাম। এই সিরিয়াস সময়েও তার এমন করার কোনো মানে আছে! দীর্ঘশ্বাস ফেলে শাড়ি পড়লাম। বের হয়ে এসে দেখি আমার রুমে তিহা আর মিলি বসে আছে। তীব্র আশে পাশে কোথাও নেই। তিহা আমার কাছে এসে বললো,
‘নিচে চলো ভাবী। নানাভাই সবাইকে নিচে ডেকেছে। ভাইয়াও ওখানে আছে।’
আমি কোনো জবাব না দিয়ে মাথা নাড়ালাম। শাড়ির আঁচল টেনে মাথায় দিয়ে ওদের সাথেই নেমে আসলাম। নিচে নানাভাই, নানুমনি, বড় মামা, বড় মামি, ছোট মামা, ছোট মামি, বড় খালা, বড় আঙ্কেল, ছোট খালা, ছোট আঙ্কেল, আজাদ আঙ্কেল, তাফিয়া আন্টি, হাবিবের বাবা-মা, হাবিব, তানহা, মুন্না, বিপ্লব সবাই উপস্থিত। আমাকে দেখতেই কয়েকজন মুখ কুঁচকে নিলো। তীব্র হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বসে আছে। নানাভাই গম্ভীর স্বরে বললেন,
‘নাতবউ কি হয়ছিলো ওখানে?’
আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকালাম। এখন আবার এসব বলতে হবে আমাকে! এতোগুলো বয়সে বড় মানুষের সামনে এসব বলতে হবে! আমি চোখের পলক ফেললাম কয়েকবার। দৃষ্টি এদিক ওদিক করতেই হাবিব বললো,
‘নানাভাই ওই মেয়ে আর কি বলবে! আমারে উস্কাইয়া এসব করে আবার আমারেই মা’রছে। আপনি এসবের বিচার করেন!’
নানাভাই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেই হাবিব ফাঁকা ঢোক গিলে মাথা নত করে নিলেন। আমার দিকে তাকিয়ে ফের নানাভাই বললেন, ‘কি হলো নাতবউ!’
আমি কিছু না বলে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম। যখনই মুখ খুলতে যাবো তখনই তীব্র গম্ভীর স্বরে গটগট করে বললেন, ‘নানাভাই প্রানেশা একটা মেয়ে হয়ে নিশ্চয় তার সাথে হ্যা’রাজ’মেন্টের ঘটনাগুলো অনেক রঙচঙ নিয়ে বলতে পারবে না! তবে যে যায় বলুক আমি আমার স্ত্রীকে বিশ্বাস করি আর জানি সে কেমন! হাবিব নিজের দোষ যে আমার বউয়ের ওপর চাপাচ্ছে এটা নিশ্চয় আপনাকে আর বোঝাতে হবে না!’
তীব্রর কথা শেষ হতেই হাবিব বললো, ‘এটা তুমি বলতে পারো না তীব্র ভাই। তোমার বউয়ের চরিত্র কেমন তা তো নিজ চোখেই দেখলে! তানহাও দেখেছে। এরপরও তুমি তোমার ওই ন*ষ্টা বউয়ের হয়ে কথা বলতেছো!’
তীব্র ঝড়ের গতিতে উঠে দাঁড়ালো। হাবিবের কলার টেনে ওকে উঠিয়ে প্রথমেই কয়েকটা থা’প্প’ড় লাগিয়ে মা’রতে থাকে। আকস্মিক ঘটনায় সবাই চমকে যায়। একে একে বড়রা মিলে তীব্রকে থামানোর চেষ্টা করে। ততক্ষণে তীব্র হাবিবকে মে’রে ফ্লোরে শুইয়ে ফেলেছে। সমানে লা’থি দিচ্ছে। তীব্র মা’রছে আর উন্মাদের মতো একটাই কথা আওড়াচ্ছে, ‘আমার প্রাণকে ন*ষ্টা বলেছিস! তোর জিহ্বা টেনে ছি’ড়েই ফেলবো আজ আমি।’
অবাক হওয়ার সাথে সাথে আতঙ্কিতও হলাম। তীব্রকে সবাই মিলে কোনোমতে আটকালো। আমি ভয়ে তীব্রর কাছে যাচ্ছি না। তীব্রর এমন ভ’য়ং’কর রুপ এই প্রথম চোখের সামনে দেখলাম। সত্যি সত্যি হাবিবের জিহ্বা টেনে ধরেছিলো। একটুর জন্য সবাই ছাড়িয়েছে। নানাভাই বেশ কড়া গলায় বললেন,
‘এসব কি হচ্ছে তীব্র? বড়দের সামনে এসব কি ধরণের অসভ্যতা?’
তীব্র যেনো দ্বিগুণ রেগে গেলো। সামনে থাকা টি-টেবিলে লা’থি দিতেই তা বিকট শব্দে ভেঙে গুড়িয়ে গেলো। রাগে চিৎকার করে বললো, ‘হাবিবের সাহস কি করে হয় আমার প্রাণকে নিয়ে বাজে কথা বলার! ওকে এতো বড় কলিজা কে দিয়েছে? আপনার বাড়িতে আমার বউয়ের সম্মানে হাত দেওয়ার সাহস করার পরও ওর সাথে ভদ্রতা নিয়ে কথা বলতেছেন আপনি! আপনারা ভদ্র হলেও আমি ভদ্র নই। ওর এই কাজের জন্য ওর শিরায় শিরায় আমি বি’ষ ঢালবো। যদি ওর রন্ধ্রে রন্ধ্রে আমি আ’গুন না জ্বা’লিয়েছি তবে আমি তাশজিদ শেখ তীব্র নই।’
কথাটা শেষ হতেই সবাই আতঙ্কিত হলো। এতোটা সময় তীব্রর শান্ত রুপ কারোরই হজম হয়নি। সবাই জানে তীব্র সম্পর্কে। হাবিবের বাবা মা তীব্রর সামনে বসে পড়ে। আর্তনাদ করে বলে,
‘বাবা আমার ছেলের ভুল হয়ে গেছে। তুমি এতো কঠিন হইয়ো না বাবা। আমাদের সন্তানহারা করো না।’
তীব্র রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করেই সরে এলেন। সরাসরি আমার হাত চেপে ধরে বললেন, ‘যে বাড়িতে আমার প্রাণকে অপবাদ সহ্য করতে হয়! আমার প্রাণের গায়ে ক’ল’ঙ্ক লেপ্টে দেওয়া হয়! যে বাড়িতে আমার প্রাণের দিকে হা’য়নার মতো তাকানো হয় সে বাড়িতে আমরা আর এক মুহুর্তও থাকবো না।’
পুরোটা সময় আমি নির্বাক। আমি কল্পনাও করিনি তীব্র এমন কিছু করবে বা বলবে! নানাভাই বাদে সবাই তীব্র ভাইকে ভয়ে ভয়ে থাকতে বললেন। যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তা কাল সকালে নিতে বললেন। কিন্তু সে তা কানে তুললেন না। আমার হাত টেনে সদর দরজা পর্যন্ত আসতেই তানহা ছুটে আসলো। দুহাতে পথ আগলে ধরে কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো,
‘তুমি এই মেয়েটার জন্য চলে যাচ্ছো তীব্র! তুমি তো ওকে ছেড়ে..’
এটুকু বলতেই যেনো তীব্রর হিং’স্রতা বাড়লো। হুট করেই তানহার গলা চে’পে ধ’রলো। তানহা বিস্ময়ে, শ্বাস আটকে যাওয়ায় চোখ বড় বড় করে ফেলেছে। আমি দ্রুত তীব্রর হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই তীব্রর বলা কয়েকটা কথা কানে আসে,
‘তোর জন্য আজ এসব কিছু হয়েছে। আমি ভালো মতোই বুঝেছি হাবিবের এতো সাহস নেই যে তীব্রর আত্মায় হাত দিবে! তোকে আমার এখনি মে’রে ঝু’লিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। ছাঁদে বলা কথাগুলো মাথায় ঢোকেনি তোর? কান খুলে শুনে রাখ! প্রাণ আমার বউ। ও শুধুই আমার। ওকে এই জন্মে কেন পরেরজন্মেও আমি ছাড়বো না।’
তানহাকে ঝাটকা মে’রে ছেড়ে দেয়। আমি ড্যাবড্যাব করে তাকালাম তীব্রর দিকে। তীব্র আমার হাত ধরে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে। পিছন থেকে বড় মামির কান্নার শব্দ পেলাম। আমার তখনও ঘোর কাটেনি। কি হলো সবটাই যেনো মাথার ওপর দিয়ে গেলো। তীব্র কি বললো এগুলো! তীব্রর হিং’স্রতার কথা ভাবলেই আমার শিরা উপশিরা কাঁপছে। তীব্র আমাকে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও বসে পড়লো। শীতের রাত। তীব্র টেনে আনায় শীতের কিছু পড়াও হয়নি। তীব্রর গায়ে জ্যাকেট। গাড়ি ছাড়তেই আমি শীতে কুঁকড়ে উঠলাম। হাবিবের বিষয়টা মাথা থেকে বেড়িয়ে এখন তীব্রর কথাগুলো চেপে বসেছে। এতো শীতের মধ্যে কাঁপতে থাকা স্বত্বেও আমি তীব্রর বলা কথাগুলোই বার বার ভাবছিলাম। ধ্যান ভাঙলো গাড়ি থামার শব্দে। আমি উনার দিকে তাকাতেই উনি বললেন,
‘তুমি বসো! আমি আসছি।’
আমি মাথা নাড়ালাম। উনি গাড়ি লক করে কোথায় যেনো গেলেন। আমি মাথাটা এলিয়ে দিয়ে বসে রইলাম। মানুষটাকে আমার গোলকধাঁধার মতো মনে হয়। যেনো পুরোটাই রহস্যের একটা বস্তা। দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। বেশ অনেকক্ষণ পর উনি আসলেন। হাতে একটা শপিং ব্যাগ। ব্যাগটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
‘ঠান্ডা লাগছে এটা মুখে বলতে কি কষ্ট হয়!’
আমি উত্তর না দিয়ে ব্যাগের মধ্যে তাকালাম। লেডিস জ্যাকেট, শাল এগুলোই রাখা। আমি লেডিস জ্যাকেটটা হাতে নিতে নিতে বললাম, ‘এতোই যখন বউয়ের ঠান্ডা লাগাটা চোখে পড়ছিলো তখন হিরোদের মতো নিজের জ্যাকেটটা দিয়ে দিলেই পারতেন।’
তীব্র মুখটা গম্ভীর রেখেই বললেন, ‘হ্যাঁ হিরোর মতো ঢঙ করে জ্যাকেট দিয়ে পরে আমি শীতে ম’রি!’
‘ওমা! ছেলেদের নাকি শীত লাগে না! তাদের নাকি রক্তের তেজ বেশি তাই নাকি শীত লাগে না। তাহলে আপনার কেনো লাগবে? আপনি ছেলে না?’
তীব্র চোখ ঘুরিয়ে তাকালো আমার দিকে। ঠোঁট কামড়ে বললো, ‘এখন কি তোমাকে প্রুফ দিতে হবে আমি ছেলে নাকি না? বাই দ্যা ওয়ে সেদিন রাতের পর তো তোমার সন্দেহ করা উচিতই না।’
আমি চোখ বড় বড় করে তাকালাম। বিড়বিড় করে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম, ‘বে’হায়া, নি’র্লজ্জ! এক কথা সারাদিন বলে কি মজা পায়!’
তীব্র আমার বিড়বিড় করা দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসলেন। আমি আড়চোখে তা দেখেও ঠোঁট ফুলালাম। বাহিরে তাকিয়ে রইলাম। উনি নিজের কন্ঠস্বর স্বাভাবিক করে বললেন,
‘মুভির হিরোরা ছাড়া যে আর কেউ ওসব আজগুবি কথা বলে না তা তুমিও জানো আর আমিও। আর আমি কোনো হিরো না এটা কোনো মুভিও না মাই মিসেস।’
উনার মুখে ‘মাই মিসেস’ শুনে খানিকটা চমকে উঠলাম৷ কয়েক বার ফাঁকা ঢোক গিলে চোখ বন্ধ করে নিলাম। ফিসফিস করে বললাম, ‘আজ যা করছেন তা মুভির চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। আমার এখনো মনে হচ্ছে আমি কোনো মুভি কিংবা স্বপ্নে আছি।’
এরপর দুজনের মধ্যে আর কোনো কথা হলো না। গাড়ি চলতে থাকলো। আমি অবশ্য ততক্ষণে জ্যাকেট পড়ে নিয়েছি। রাত বাড়ার সাথে সাথে নিজের ক্লান্তিও টের পেলাম। ঘুমে চোখ দুটো বুজে আসছে। বার কয়েক হাই তুলে তীব্রকে বললাম,
‘আমরা কি সরাসরি ঢাকাতে ফিরবো?’
তীব্র ড্রাইভিং-এ মন দিয়ে বললো, ‘নাহ। আমরা এখন একটা হোটেলে থাকবো। এখানে কিছু কাজ বাকি তা শেষ করে বাড়ি ফিরবো।’
আমি ঘুমের জন্য কোনো প্রশ্ন করলাম না। তীব্র আমার অবস্থা বুঝে বললো, ‘ঘুম পেলে ঘুমোও। এখান থেকে যেতে আরো অনেকটা সময় লাগবে।’
উনার বলার সাথে সাথেই আমি ঘুমে ঢলে পড়লাম। টের পেলাম উনি টেনে নিলেন বুকে। এক হাতে জাপ্টে ধরে অন্যহাতে ড্রাইভিং করছেন। তার বুক পেয়ে আমি গুটিশুটি মে’রে ঘুমিয়ে পড়লাম। পুরোপুরি ঘুমিয়ে পড়ার আগে তার কন্ঠের দু’লাইন গান এসে কানে বাজলো,
‘তুমি আকাশের বুকে বিশালতার উপমা
তুমি আমার চোখেতে সরলতার প্রতীমা,
আমি তোমাকে গড়ি ভেঙেচুরে শতবার
রয়েছো তুমি বহুদুরে..’
চলবে..