(রুমান্টিক এলার্ট,অতিরিক্ত রুমান্টিক গল্প পছন্দ না তারা দূরে থাকুন)
#তুই_আমার_আসক্তি
#পর্ব_৮
#লেখিকা_তাসনিম_তালুকদার_বুশরা
কপি করা বিশেষ ভাবে নিষিদ্ধ ❌
সকালের কোমল আলো রুমের জানালা দিয়ে ঢুকতেই নেহারের চোখ অজান্তেই খোলে গেল। বিছানার ওপর তার ছোট্ট বউটি গভীর ঘুমে, মাথা তার বুকের ওপর গুঁজে রেখেছে। নেহারের ভেতর এক অদ্ভুত শান্তি ভরে উঠলো।
হালকা হাসি দিয়ে সে আস্তে করে স্নেহার কপালে ঠোঁট স্পর্শ করলো।
তারপর নেহার তাড়াতাড়ি করে উঠে দাঁড়ালো। চোখে এখন দিন শুরু হওয়ার উদ্দীপনা, আজকে বন্ধ দের মজি দেখাবে। শালারা ওর সংসারে আগুন ধরাতে চাই..?
নেহার ধীরে ধীরে স্নেহার রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমের দিকে গেলো। সোজা ওয়াশরুমে পৌঁছে সে জল ছুঁড়ে মুখ ধুয়ে নিলো, ঠান্ডা পানি তার চোখ ও মনকে সতেজ করে তুললো। বাইরে বৃষ্টির ভেজা বাতাস এখন নেই, বরং হালকা সূর্যের আলো যেন নতুন দিনের সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে।
একটু পর নেহার পুরো রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো। ধীরে ধীরে চেয়ার টেনে বসলো। তার চোখে শান্তি আর হালকা হাসি—গত রাতের আবেশ এখনো হৃদয়ে ভাসছিল।
মৌসুমী খান: রান্নাঘর থেকে গরম গরম খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে এগিয়ে এলো।তারপর নেহার কে দিতে দিতে বললো, কিরে বাবা, কথা বলেছিস স্নেহার সাথে? কি বলেছে, চলে যাবে নাকি এখানে থাকবে?
নেহার: খাবারের কাটা হাতের মাঝে ঠেস দিয়ে বললো—মা, স্নেহা কোথাও যাবে না। পরীক্ষা কিছু দিন পর। এখন কিসের বাড়ি যাওয়া।
মৌসুমী: খান চোখ কুঁচকে বললোজেদ ধরেছে যে, তুই! বল তো, তোকে কি বলছে?
নেহার: ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি ধরে বললো,
বলবে কি আর? যাবে না, তাই বলছে।
ঠিক সেই মুহূর্তে স্নেহা হেলেদোলে নিচে এলো। নেহার ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে চেয়ার টেনে তাকে বসিয়ে দিলো। চোখে লজ্জার মিশ্রণ।
মৌসুমী খান: স্নেহা কেও খাবারে প্লেট নিয়ে এগিয়ে এসে বললো—কিরে মা, তুই কি বাড়ি যাবি?
স্নেহা: একবার নেহারের দিকে তাকালো, নেহার নিজেই শান্তভাবে খাচ্ছিলো।না, মামি,হালকা কণ্ঠে বললো।
মৌসুমী খান: স্বস্তির নিঃশ্বাসে নিয়ে—আচ্ছা, তাহলে পরীক্ষা শেষ হলে একবারে ঘুরতে যাবে। ঠিক আছে?
স্নেহা চোখ নামিয়ে হেসে বললো—
আচ্ছা।
নেহার খাওয়া শেষ করে হালকা স্বরে স্নেহা কে বললো, তাড়তাড়ি খা ইউনিভার্সিটি যেতে হবে।
স্নেহা চুপচাপ খাবার খেতে লাগলো। ধীরে ধীরে সকালটা ঘরে ভরে উঠলো, হালকা আলো আর খাবারের গন্ধে। বাতাসে যেন নতুন দিনের সম্ভাবনা আর আনন্দ ভেসে আসছে, আর নেহারের চোখে কেবল তার ছোট্ট বউ, শান্তভাবে বসে থাকা, যেন এই সকালটাকেই সম্পূর্ণ করে তুলেছে।
~~
ইউনিভার্সিটির পুরোনো অশ্বত্থ গাছটার তলায় অদ্ভুত এক দৃশ্য। চারপাশে ভিড় জমেছে কৌতূহলী শিক্ষার্থীদের, কারণ সবাই অবাক হয়ে দেখছে ইমরান আর আশিক দু’জনকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে নেহার।
আশিক: মুখটা একেবারে ইনোসেন্ট ফেইজ বানিয়ে ফুঁপাতে ফুঁপাতে বললো,দোস্ত, আর কতোক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখবি বল তো? সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি। পা ব্যথা করে মরছি তো।
ইমরানও: পাশে থেকে গলা মিলিয়ে বললো,
হ্যা দোস্ত, একদম দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। এবারের মতো মাফ করে দে। আর কোনোদিন এমন ফাজলামি করবো না, পাক্কা প্রমিজ।
কিন্তু নেহারের মুখ গম্ভীর, চোখে রাগের ঝিলিক। কণ্ঠে দৃঢ়তা মিশিয়ে বললো,
নেহার: তোদের জন্য আমার না হওয়া সংসারে আগুন লেগে গেছিলো। জানিস কতো কষ্টে স্নেহার রাগ ভাঙিয়েছি আমি? শালা তোদের কি আর কোনো কাজ নেই? কেনো বারবার আমার সংসারের পিছে লেগে থাকিস?
গাছতলায় এখনো কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে ইমরান আর আশিক। তবুও দু’জনের মুখে চালাকি হাসি।
আশিক: ঠোঁট উল্টে বাচ্চাদের মতো মুখ করে বললো,আমরা সিঙ্গেল তো। কি করমু? কেউ পাত্তা দেয় না আমাদের।
এই কথার মাঝেই ইমরান আশিকের পেটে কনুই দিয়ে গুতো মারলো, চোখ টিপে বললো,
ইমরান: হুদাই কথা বলিস না। আমাকে অনেক মেয়ে পাত্তা দেয়, বাট আমি করি না বিয়ে।
নেহার: সাথে সাথেই খেপে উঠে বললো,
তো করেই ফেলল!
ইমরান: গম্ভীর গলায় সাফাই গেয়ে বললো,
আমার এখনো বয়স হয়নি রে ভাই। আমি এখনো ছোট।
আশিক: হেসে কটাক্ষ করে বললো,আহা গো সোনা! চলো তোমাকে ফিটার কিনে দেই। খাবি? যে বয়সে বউয়ের ফিটার খাওয়ার দরকার, সেই বয়স না হোক—এমনি এমনি ফিটার খাবি।
ইমরান: মুখে লজ্জা লজ্জা ভাব নি বললো,চুপ শালা! তুই একটা অশ্লীল।
আশিক কিছু বলতে যাবে তখন নেহার বলে,
নেহারের কড়া স্বরে, দাঁড়িয়ে রইল, কপাল ভাঁজ করে বন্ধুদের দিকে চেয়ে বলল—
নেহার: তোদের আমি শাস্তি দিচ্ছি। আর আমি সিরিয়াস কথা বলছি তোরা ওরকম জগড়া শুরু করছিস?
আশিক: ঠোঁট ফেলে একটু ছলনা করে বলল,আর কত দিবি আমাদেরকে শাস্তি? এবার তো মাফ কর, ভাই।
নেহারের চাহনিতে আঁচড়—কঠোরতা আর দায়িত্ববোধ একসঙ্গে। সে ধীরে ধীরে সুর নরম করে বলল,
নেহার: আচ্ছা, মাফ করে দিলাম। কিন্তু নেক্সট টাইম যদি তোরা এইরকম করিস, তোদেরকে ইউনিভার্সিটির সাদ থেকে ফেলে দেবো।
এই কথাগুলো বলেই সে অনড় ভঙ্গিতে হাঁটা শুরু করল, ক্যাম্পাসের দিকে পা বাড়াল। পেছন ফিরে কোনো কথা বলল না—মনে ছিলো শুধুই কর্তব্য আর সীমারেখা।
ইমরান ও আশিক হেঁটেই গেল, কিন্তু হাঁটার ফাঁকে দুজনের গোপন ফিসফিস হওয়া কটুক্তি বাতাসে মিশে গেল—শালা, এখনো বিয়ে করলাম না, তার আগেই আমাদের বউকে বিধবা বানাতে চাস? ছ্যাহ, তুই একটা মীরজাফর।”
~~
ক্যান্টিনের কোণার টেবিলটা ভরে আছে ভাজাভুজির গন্ধে, আর চারপাশে ছাত্রদের চিৎকার-চেঁচামেচি। কিন্তু সেই কোলাহলের মাঝেও স্নেহা আর সুহা যেন আলাদা এক জগতে। দু’জনের সামনে রাখা কপির কাপগুলো থেকে ধোঁয়া উঠছে, কিন্তু খাওয়ার চেয়ে যেন চুপচাপ বসে থাকার ভঙ্গি বেশি চোখে পড়ছে।
সকাল থেকেই স্নেহা খেয়াল করছে, সুহা আজ যেন অন্যরকম—চুপচাপ, অদ্ভুত এক নিস্তব্ধতায় হারিয়ে গেছে। সে মেয়েটা, যে সব সময় হাসি-ঠাট্টায় ভরিয়ে রাখে চারপাশ, আজ তার মুখে একটুও আলো নেই।
স্নেহা: কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে অবশেষে জিজ্ঞেস করল,কি হয়েছে রে সুহা? এভাবে সকাল থেকে চুপচাপ বসে আছিস কেনো? তুই তো এরকম চুপচাপ থাকার মেয়ে না।”
সুহা: মাথা নিচু করে ধীরে ধীরে বলল,বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে…।
কথাটুকু শুনেই স্নেহা চমকে উঠল। তার চোখ বড় হয়ে গেল। সুহার কণ্ঠে ভারি মনখারাপ, যেন সবটুকু প্রাণ হঠাৎ চেপে গেছে।
সুহা থেমে কিছুক্ষণ নিঃশ্বাস নিয়ে আবার বলল—
কিন্তু আমি বিয়ে করতে চাই না, স্নেহা। আমি আমি তো একজনকে পছন্দ করি।
স্নেহার: মুখ হা হয়ে গেল, কণ্ঠে অবিশ্বাস মিশে গেল। সে এগিয়ে এসে আস্তে করে সুহার হাতটা ধরে ফিসফিস করে বলল—কি বলছিস? আমাকে তো আগে বলিস নি! কে সে ছেলে? আর তোদের রিলেশনের কতোদিন হলো…?
স্নেহার চোখে তখন কেবলই বিস্ময়, আর সুহার চোখে জমে থাকা অশ্রু ঝিকমিক করছে আলো-আঁধারিতে।
সুহা: কণ্ঠে কাঁপুনি রেখে বললো,আমি যাকে ভালোবাসি, আমি জানি না সে কি আমাকে ভালোবাসে কিনা। আর তুই তো তাকে চিনিস—সে তো তূর্য ভাইয়ার বন্ধু, ইমরান ভাইয়া।
হঠাৎ করেই স্নেহার মুখ কড়া হয়ে এলো। চোখে ক্ষিপ্ত বিরূপতা, গলায় এমন এক তীব্রতা—যা বন্ধুদের জন্য তার অভিভাবকের মতো রুখে দাঁড়ানোর প্রতিজ্ঞা। সে উঠে বসে, চামচটা টেবিলে রেখে কণ্ঠে জোর দিয়ে বলল,
স্নেহা: এই কথা আগে বললি কেনো না, শালি? নাহলে কিছু একটা করা যেত। এখন কি করবো? আর তুই আমাকে আগে কিছুই বলিস নি তাই আমি কিছু করবো না।
সুহা: কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে অনুনয় করে বলল,
প্লিজ জান, কিছু একটা করো। আমি ইমরান ভাইয়া কে ছাড়া বাঁচবো না। ও ছাড়া আমার জিবনটা জানি বিথা!
স্নেহা কিছু বলতে গিয়েও থমকে গেলো—তাতেই ক্যান্টিনের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো তূর্য। তার সাথে ইমরান আর আশিকও এসেছে, স্বভাবসুলভ ঠাট্টা-টিপ্পণিতে মুখ পচানো হাসি আছে দুইজনের তবে তূর্যের মুখ খানা গম্ভীর।
তূর্য সোজা এসে স্নেহার সামনে বসলো। ইমরান গিয়ে বসলো সুহার একেবারে সামনে, আর পাশের চেয়ার টেনে নিল আশিক।
ইমরান চোখ মেলে সুহার দিকে তাকালো। তার দৃষ্টিতে যেন একটা নরম স্নেহ মিশে আছে। হালকা বিস্ময়ের সুরে বললো,
ইমরান: কি হয়েছে আপা? আপনি কি কাঁদছিলেন? মুখটা তো বেশ ফ্যাকাশে লাগছে।
ইমরানের কণ্ঠে এমন আন্তরিকতা ছিলো যে, তূর্য আর আশিকও একসাথে তাকিয়ে গেল সুহার দিকে। মুহূর্তেই সুহা সঙ্কোচে নিচের দিকে তাকালো। চোখের কোনে জমে থাকা অশ্রু লুকাতে চাইলো তাড়াহুড়ো করে।
সুহা: হালকা হেসে, কিন্তু কণ্ঠ কেঁপে উঠে না ভাইয়া এমনি।
আশিক চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে তারপর বললো,
আশিক:আরে আপা, বলে ফেলেন না কেনো? সমস্যা নেই। যদি পারি, নিশ্চয়ই হেল্প করবো।
স্নেহা তখন সুহার হাত চেপে ধরলো টেবিলের নিচে। তার চোখে ভরসার দৃষ্টি। কিছুক্ষণ চুপ থেকে স্নেহা সরাসরি ইমরানের দিকে তাকিয়ে বললো,
স্নেহা:ইমরান ভাইয়া আপনার কি আজকে একটু সময় হবে? আসলে সুহা আপনাকে একটা কথা বলতে চায়।
সাথে সাথেই সুহার চোখ বড় হয়ে গেল। অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকালো স্নেহার দিকে। মনে মনে বললো,এই মেয়ে কি বলছে! একদম মাথা খারাপ নাকি! তার বুকের ভেতরটা ধকধক করে কাঁপতে লাগলো।
ইমরান ভ্রু কুঁচকে তাকালো দু’জনের দিকে। হালকা গম্ভীর ভঙ্গিতে বললো,
ইমরান: হুঁ, হবে তবে এখানে বললেই তো পারো।
স্নেহা কোনোভাবেই পিছু হটলো না। দৃঢ় গলায় উত্তর দিলো,
স্নেহা:না ভাইয়া, একান্তে বলবে।
ইমরান কিছুক্ষণ চুপ থেকে ভেবে নিলো। তারপর হালকা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
ইমরান: আচ্ছা।
ঠিক তখনই হঠাৎ কোথা থেকে যেন রিমি এসে নেহারের পাশে বসলো।তারপর ঠোঁটে মিষ্টি হাসি টেনে একেবারে ন্যাকামি ভঙ্গিতে বললো
রিমি: বেবি, তুমি কেমন আছো? আজকে তো একবারও কথা হলো না তোমার সাথে।
কথাগুলো এতটাই হঠাৎ করে বলা হলো যে, পুরো টেবিলে যেন এক ঝটকা বাতাস বয়ে গেল। নেহার হকচকিয়ে রিমির দিকে তাকালো, তারপর চোখ সরিয়ে এক ঝলক স্নেহার দিকে গেল।
স্নেহার মুখ লাল হয়ে উঠেছে রাগে। ভ্রু দুটো টান টান, চোখে অগ্নি ঝরে পড়ছে যেন। নেহার স্পষ্ট বুঝলো, এবার সে পড়েছে মাইনকার চিপায়। এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়া মোটেও সহজ হবে না।
ইমরান আর আশিক একে অপরের দিকে তাকিয়ে কষ্ট করে হাসি চেপে রাখলো। দু’জনের মুখে এমন ভাব যদি এখন হাসি ফোটাই, তাহলে তূর্যে ওদের জ্যান্ত পাটিতে পুতে ফেলবে তাই চুপ রইলো।
কিন্তু ভেতরে ভেতরে তারা হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে।
স্নেহা: নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করে মুখে হাসি এনে বললো,রিমি এক কাজ করো তোমার বেবি কে আজকে একটা ফিটার সুজি আর স্যারোল্যাক কিনে দিয়ো, বাচ্চা মানুষ ভাত খেতে পারে না তো তাই আর কি বললাম…!
চলবে…..