তুই আমার আসক্তি পর্ব-১৩

0
2

(রুমান্টিক এলার্ট,অতিরিক্ত রুমান্টিক গল্প পছন্দ না তারা দূরে থাকুন)

#তুই_আমার_আসক্তি
#পর্ব_১৩
#লেখিকা_তাসনিম_তালুকদার_বুশরা

কপি করা বিশেষ ভাবে নিষিদ্ধ ❌

অবশেষে আজ থেকে শুরু হলো পরীক্ষা। সকাল থেকেই নেহার মুখ গম্ভীর, চোখ দুটো বইয়ের পাতায় আটকে আছে। গত কয়েকদিন ধরে সে যেন খাওয়ারও ঠিক মতো সময় পায়নি, শুধু পড়াশোনা আর পড়াশোনা। অন্যদিকে স্নেহা একেবারেই উল্টো যতক্ষণ নেহার চোখ খোলা থাকে, ততক্ষণ সে কম্বল টেনে ঘুমিয়ে কাটিয়েছে।

স্নেহার যুক্তি একটাইযখন জামাই এতো ভালো পড়াশোনা করছে, তখন আমাকে আবার কষ্ট করে পড়তে হবে কেন?

নেহার অসংখ্যবার তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে।
কিন্তু স্নেহা সে কথায় পাত্তাই দেয়নি। কেবল হেসে উড়িয়ে দিয়েছে।

অবশেষে দু’জন মিলে তৈরি হয়ে বেরিয়ে গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পথে। আকাশে রোদ ঝলমল করছে, বাতাসে একধরনের অজানা উত্তেজনা। পরীক্ষার চাপের সাথেই যেন আনন্দের রং মিশে আছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এসে দেখে, ইমরান, আশিক আর সুহা দাঁড়িয়ে আছে। তাদের দেখে স্নেহা চোখ টিপে এগিয়ে গেল সুহার দিকে।

স্নেহা: কি রে বান্ধবী, প্রিপারেশন কেমন? স্নেহা জিজ্ঞেস করল দুষ্টু হাসি দিয়ে।

সুহা: মাথা চুলকাতে চুলকাতে একরকম বিরক্ত ভঙ্গিতে বলল—ঐ আর কি! কোনো রকম।

নেহার: ঠোঁট বাঁকিয়ে, মুচকি হেসে যোগ করল—হ্যাঁ হ্যাঁ, তোমার আবার কত ভালো প্রিপারেশন হবে তা ভালো করেই জানা আছে। স্নেহার বান্ধবী না, ছক্কি দলের।

সুহা: ঠোঁট ফুলিয়ে বলল আরে ভাইয়া আমরা মেয়ে মানুষ এতো পড়াশোনা করে কি করব? শেষে তো সংসার আর বাচ্চা-কাচ্চাই সামলাতে হবে।

ইমরান: ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে গম্ভীর সুরে উত্তর দিল আজাইরা কথা বাদ দাও। যদি দেখি খারাপ রেজাল্ট করেছো, তাহলে সোজা এক রিকশাওলার সাথে বিয়ে দিয়ে দেব।

সুহা: এবার সত্যিই গাল ফুলিয়ে মুখ বাঁকালো তাহলে কি আপনি রিকশা চালাবেন? ছ্যাহ! এতো পড়াশোনা করে এরকম কাজ করবেন নাকি..?

তার কথা শুনে আশিক হেসে লুটোপুটি খেতে লাগল। মজা করে বলল এই প্রথম সুহা ভাবি তোমার কথা আমার কাছে ভালো লাগলো। হ্যাঁ.রে ইমরানকে চাকরি কেউ দিবে না, ওকে রিকশা চালাতে হবে।

ইমরান চোখ লাল করে আশিকের দিকে এগিয়ে এল। মনে হলো আরেক মুহূর্ত দেরি হলে ঘুষি কষিয়ে বসবে। কিন্তু তার আগেই নেহার কড়া গলায় বলে উঠল হয়েছে এবার। চুপচাপ চলো, পরীক্ষার টাইম হয়ে গেছে।

নেহারের কথার পর আর কেউ বাড়াবাড়ি করল না। সবাই ধীরে ধীরে এগোতে লাগল পরীক্ষার হলে দিকে। তবে ইমরান আর আশিকের চোখে চোখে তখনো এক অঘোষিত যুদ্ধ চলছিল
কেউই পিছু হটার মানুষ নয়।

~~

অবশেষে পরীক্ষার শেষ দিন। ক্লান্ত কিন্তু স্বস্তির হাসি মুখে নিয়ে নেহার আর স্নেহা বাড়ির ভেতরে ঢুকল। দরজা পেরোতেই চোখে পড়ল, ড্রয়িংরুমে অতিথি বসা। সোফায় গম্ভীর ভঙ্গিতে বসে আছেন জসিম সৈয়দ আর তার স্ত্রী ওহি সৈয়দ। রিনির মা-বাবা।

নেহার ভদ্রতার খাতিরে এগিয়ে গেলো তাদের সঙ্গে কথা বলতে। স্নেহা, যেহেতু তাদের ভালো করে চেনে না, নিঃশব্দে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো।

নেহার: বিনয়ের সাথে অভিবাদন জানিয়ে সামনের সোফায় বসল।আঙ্কেল, আজকে আসবেন জানতাম না। কেমন আছেন?

জসিম: সৈয়দ মুখ ভরে হাসলেন।আরে নেহার বাবা! আঙ্কেল না বলে এবার থেকে বাবা বলার অভ্যাস করো।

নেহার: চোখ কুঁচকে অবাক হয়ে তাকালো।
মানে?

ওহি: সৈয়দ হালকা গলায় হেসে উঠে শান্তভাবে বললো মানে খুব সোজা। আমরা এসেছি তোমার আর আমাদের মেয়ে রিনির বিয়ের কথা পাকাপাকি করতে।

এক মুহূর্তে চারপাশ নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। নেহারের বুকের ভেতর ধক করে উঠলো, মাথার ভেতর অগণিত প্রশ্নের ঝড় বয়ে গেল।

নেহার এক ঝলক তাকালো আফজাল খানের দিকে। বাবা স্রেফ মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন। সেই নীরব ইঙ্গিতই যেনো নেহারের বুকের ভেতর হাজার টন ওজন চাপিয়ে দিলো। চাইলে কি এখন না বলতে পারে? একেবারেই না। তা হলে সেটা সরাসরি বেয়াদবির শামিল হবে। নেহার বুঝলো তাকএ খুব দ্রুতই তাঁকে জানাতে হবে সে ইতিমধ্যেই স্নেহাকে বিয়ে করেছে।

ঠিক তখনই ওহি সৈয়দ মিষ্টি গলায় বললেন আমাদের রিমি তো সারাদিন শুধু নেহার নেহার করে। মেয়েটা তোমাকে ভীষণ ভালোবাসে। তাই আজকে আর দেরি না করে চলে এলাম।

কথাগুলো যেনো নেহারের বুকের ভেতরে ছুরি চালালো। স্নেহার মুখটা ভেসে উঠলো তার মনের পর্দায়। অসহায়ভাবে হালকা হাসি দিয়ে নেহার বললো,

নেহার: আচ্ছা আপনারা বসুন, আমি আগে ফ্রেশ হয়ে আসছি।

মৌসুমী খান: সঙ্গে সঙ্গেই যোগ করলেন হ্যাঁ বাবা তুই আগে ফ্রেশ হয়ে আয়। আর স্নেহা মা-কে একবার ডাকিস তো। ও থাকলে সবারই ভালো লাগবে।

স্নেহার নাম উচ্চারণ হতেই নেহারের বুক কেঁপে উঠলো। যাকে সে জীবনের সঙ্গী বানিয়েছে, সেই কি এখন এই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে বসতে পারবে? কখনোই না।

নেহার কোনো উত্তর না দিয়ে শুধু মাথা নাড়ল। অথচ ভেতরে ভেতরে বুক ফেটে যাচ্ছিলো। ঠিক তখনই চোখ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সিঁড়ির দিকে উঠলো

আর সেখানেই নেহারের দৃষ্টি থমকে গেল।

উপরে দাঁড়িয়ে আছে স্নেহা। চোখদুটো কেমন কাচের মতো স্থির, ঠোঁট কাঁপছে, অথচ একটাও শব্দ বেরোচ্ছে না। নেহার ভেবেছিলো, ও হয়তো অনেক আগেই চলে গেছে নিজের রুমে। কিন্তু না মেয়েটা সব শুনে ফেলেছে।

নেহারের বুকের ভেতর ধক করে উঠলো। নিশ্চয় মেয়ে টা আবার কষ্ট পাবে আবার ভেঙে পড়বে।

আতঙ্কে আর দেরি না করে নেহার তাড়াহুড়ো করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো। কিন্তু এর মধ্যেই স্নেহা যেন নিজের সমস্ত শক্তি জড়ো করে হঠাৎ ঘুরে দাঁড়ালো। চোখে জল জমে আছে, অথচ কোনো শব্দ নেই।

এক মুহূর্ত পরেই ও দৌড়ে নিজের রুমে ঢুকে দরজাটা জোরে বন্ধ করে দিলো।

সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এলো নেহারের। দরজার আড়ালে হয়তো স্নেহার বুক ভেঙে কান্না ঝরছে এই ভেবে তার ভেতরটা ছিঁড়ে যাচ্ছিলো।

চলবে……