(রুমান্টিক এলার্ট,অতিরিক্ত রুমান্টিক গল্প পছন্দ না তারা দূরে থাকুন)
#তুই_আমার_আসক্তি
#পর্ব_১৭
#লেখিকা_তাসনিম_তালুকদার_বুশরা
কপি করা বিশেষ ভাবে নিষিদ্ধ ❌
রাত তখন এগারোটার মতো। চারদিক নিস্তব্ধ, যেন পুরো পৃথিবী ঘুমিয়ে আছে। নেহার গাড়িটা বাড়ির সামনে থামাতেই দূরের কুকুরের হালকা ডাক শোনা গেল। নেহার আস্তে করে গেট খুলে ভেতরে ঢোকে, আলো জ্বালায় না শুধু চাঁদের আলোয় বাড়িটা কেমন অচেনা লাগছিল ।
নেহা সোজা স্নেহার রুমের দিকে এগিয়ে যায়। দরজা আধখোলা, ভেতরে হালকা আলো জ্বলছে। স্নেহা তখন গভীর ঘুমে ডুবে মুখে শিশুর মতো প্রশান্তি। তার নিঃশ্বাসের হালকা ওঠানামা নেহার বুকের ভেতর এক অদ্ভুত শান্তি ছড়িয়ে দেয়।
নেহা চুপচাপ ওয়াশরুমে গিয়ে মুখটা ধুয়ে আসে। তারপর ধীরে ধীরে স্নেহার পাশে এসে বসে পড়ে। কিছুক্ষণ শুধু তাকিয়ে থাকে যেন বছরের পর বছর এই মুখটাই দেখার অপেক্ষায় ছিল সে। অথচ বিকেলে বেরিয়েছে বাড়ি থেকে।
স্নেহার কপালে ঝরে পড়া ছোট ছোট চুলগুলো নেহা আঙুলের ডগায় আলতো করে সরিয়ে কানের পেছনে গুঁজে দেয়। স্নেহার ঠোঁটে এক টুকরো হাসি ফুটে ওঠে ঘুমের মধ্যেই। নেহার বুকটা কেমন হালকা লাগে, আবার ভারীও।
নেহার হাত বাড়িয়ে স্নেহার মাথাটা নিজের বুকে টেনে নেয় খুব ধীরে, খুব যত্নে।
স্নেহা হঠাৎ নিজের গায়ে কারো উষ্ণতা অনুভব করে। চোখের পাতা আস্তে খুলে দেয়। ম্লান আলোয় নেহার মুখটা স্পষ্ট দেখা যায়। একচিলতে হাসি খেলে যায় তার ঠোঁটে।এসেছেন? ঐ দিকের খবর কী?নেহার হেসে উত্তর দেয়,সব ঠিক আছে। একটু কাজ ছিলো আবার অফিসে গেছিলাম সুহা দের বাড়ি থেকে বেরিয়ে তাই দেরি হলো।
স্নেহা ধীরে মাথা নাড়ে, যাই হোক, ওদের বিয়েটা হয়ে গেলে মনে হয় সবাই শান্তিতে থাকবে।
হুঁ,ছোট করে উত্তর দেয় নেহার।
ঘরের ভেতর কিছুক্ষণ চুপচাপ নীরবতা। বাইরে বাতাসে জানালার পর্দা দুলছে, আর ঘড়ির টিকটিক শব্দ যেন সময়কেও ধীরে করে দিয়েছে।
নেহার স্নেহার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। চোখে জমে থাকা ভালোবাসা তার গলার স্বরেও নরম হয়ে আসে।জান, আমার না খুব ইচ্ছে করছে তোমাকে একটু আদর করি।
স্নেহা মৃদু হাসে, চোখ নামিয়ে বলে,এখন আর মন চাইলেও হবে না মিস্টার। এখন আমার গর্ভে আপনার সন্তান সাবধানে থাকতে হবে।
নেহার হাসে, কিন্তু সেই হাসির মধ্যে শিশুর মতো মায়া মেশানো।সত্যি বলছি, জান শুধু একটু আদর করবো, লিমিট ক্রস করবো না। প্রমিজ।
স্নেহা নেহার চোখের দিকে তাকায়। সেখানে এমন এক ভালোবাসা, এমন এক মমতা যা অস্বীকার করা যায় না। ধীরে ধীরে সে হাত বাড়িয়ে নেহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে আপনি কখনোই ভালো হবেন না।
নেহার মুচকি হেসে বলে আমি কখনোই ভালো হতে চাই না জান।
তারপর হঠাৎ নেহার স্নেহার ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয় আর স্নেহা চোখ বন্ধ করে অনুভব করতে থাকে। তারপর তারা একে অপরের সাথে মিশে যায় অতপর আরো একটি সুন্দর রাত।
~~
বিকেলের নরম আলো রুমে ঢুকে পড়েছে, আর সুহার চোখে কৌতূহলের মিশ্রণ। সে একটু উত্তেজনায়, একটু লাজুক ভঙ্গিতে স্নেহার দিকে এগোলো।
সুহা: হালকা কণ্ঠে বললো, চোখে আনন্দের ঝিলিক।স্নেহা,জানিস আজকে আমাদের বাড়িতে ইমরান ভাইয়ার মা এসেছিলেন। আর আমাদের বিয়ে নিয়ে কথা হলো। আগামী শুক্রবারই আমাদের বিয়ে হবে। তবে সুহার চোখে কিছুটা দ্বিধা, মুখে লাজুক হাসি, তবে আমাকে এই বাড়িতেই রাখবে ইমরান ভাইয়া। ইমরান ভাইয়া বললো, চাকরিতে প্রথম মাসের বেতন পেলে একটা ভালো বাসা বাড়া নিবে তারপর আমরা একসাথে থাকবো।
স্নেহা: একটু থমথম করে বসলো, চোখ বড় করে সুহার দিকে তাকাল। স্নেহার মুখে অবচেতনে এক মৃদু হাসি ফুটলো।ওহ! এটা তো সত্যিই অনেক ভালো খবর রে, জান। তুই কেমন লাগছে? সে ধীরে ধীরে জিজ্ঞেস করলো, কৌতূহল আর আনন্দের মিশ্রণে।
সুহার চোখে আনন্দের ঝিলিক, মুখে উচ্ছ্বাসের হালকা লাজ। সে গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে বললো,
আমি তো অনেক বেশি খুশি, স্নেহা। এই দিনের জন্যই তো আমি এতদিন অপেক্ষা করছিলাম আর অবশেষে, ফাইনালি এই দিনটা আসছে। ভাবতেই কেমন যেন অসীম আনন্দে ভরে যাচ্ছে!
স্নেহা হালকা হেসে চোখে মিষ্টি সতর্কতার ছাপ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,হু তবে বিয়ের পর আবার আমাকে ভুলে যাস না, জান?
সুহা হাতে মুখ ঢাকা দিয়ে হেসে বললো, কি যে বলিস না! তুই তো জানিসই, তকে আমি কিভাবে ভুলবো আরে! তুই তো আমার বুকে সবসময় থাকবে,বান্ধবী। তোর জায়গা তো আমার হৃদয়ে চিরকালই নিরাপদ।
স্নেহা চোখ বেঁধে একবার তীক্ষ্ণ ভ্রু উঁচু করলো। হয়েছে, আর নাটক করতে হবে না।
সুহা হেসে কাঁধ উঁচু করে বললো,আমি নাটক করি না, বান্ধবী। এটা হয়তো তুই বুঝিস না, তবে তোর বেবি অবশ্যই বুঝবে, হুহ্।
তারপর সুহা হালকা লাফ দিয়ে স্নেহার পেটে মুখ ঠেকিয়ে ফিসফিস করে বললো,কি? আমাকে বুঝবে না তুমি..?
স্নেহা একটু অবাক হয়ে তাকালো, লাজুক হেসে।
সুহা আরও ঘনিষ্ঠ কণ্ঠে বললো, শুনো, তোমার মা হয়তো আমাকে পুরোপুরি বুঝতে পারেনি, কিন্তু তোমাকে তো বুঝতেই হবে। আর হ্যাঁ আমি ঠিক করেছি, মায়ের থেকে খালামনি তোমাকে বেশি আদর করবে।বুঝলে..?
স্নেহা হেসে উঠলো, তার চোখে খেলাধুলোর মতো ঝিলিক। সুহার এই বাচ্চামুখ দেখে তার মন যেন আরও মৃদু হয়ে গেল।
সুহা উঠে দাঁড়িয়ে, একটি ছোট্ট শাসনাধিন ভঙ্গিতে বললো,আর দেখিস, হাসিস না বেডি! ও আমাকে বেশি ভালোবাসবে, ঠিক আছে?
স্নেহা কৌতূহল ও মৃদু বিদ্রুপ মিশিয়ে হাসি দিয়ে বললো,বাসলেই হলো। যে
সুহা স্নেহার দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে, মনে মনে নিজেকে খুশির ঢেউয়ে ভাসাচ্ছিল। বিকেলের নরম আলোতে দু’জনের মধ্যকার এই খুনসুটি আর উচ্ছ্বাস ঘরের কোণে কোণে মিশে যাচ্ছিল, যেন সময় নিজেই থেমে গেছে।
চলবে……!