#তুই_যখন_ছুঁয়ে_দিলি_মন
কলমে: নিতু সরকার
(৩৭)
সন্ধ্যে সাত টা। রিদিমা ঘুমন্ত সায়ন কে জাগিয়ে মুখ ধোয়াচ্ছিল তখনই ফোনটা শব্দ করে বেজে উঠলো। রিদিমা তাড়াতাড়ি সায়ন কে কোলে তুলে বেরিয়ে এসে ফোন রিসিভ করল। আননোন নম্বর দেখে ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে এক নারী কন্ঠ ভেসে এলো,
“ তাহলে কি সিদ্ধান্ত নিলে?”
রিদিমা অবাক হলো প্রশ্ন টা শুনে। মনে মনে ভাবলো, কে এই মহিলা! কিসের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলছে! তাই পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে বলল,
“ হ্যালো, কে আপনি?”
“ এর মধ্যেই ভুলে গেলে? আমি মধুপ্রিয়া।”
রিদিমা এবার রেগে গেল। মনে পড়লো কিছুক্ষণ আগের সেই বিস্তর আলাপন। সমরের কাটাছেঁড়া অতীতের ভুলে ভরা কাহিনী। সেই ছোট্ট বাচ্চাটার কথা যার শৈশব মা থাকতেও কেটেছে মাতৃত্বের বিহনে। রিদিমা মনের মাঝে জমা সমস্ত রাগ গুলোকে পুঞ্জীভূত করে নিলো। দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
“ শুনুন মিস্ মধুপ্রিয়া আমি আপনাকে কিছুতেই সায়নের সাথে দেখা করিয়ে দিতে পারবো না। তার চেয়ে আপনি বরং এক কাজ করুন। ওর বাবার সাথে যোগাযোগ করুন। উনি পারমিশন দিলে তো আর কোনো সমস্যা নেই।”
বলেই ঠাস্ করে কল কেটে দিলো। সায়ন রিদিমার কোলে এতক্ষণ পেট চেপে বসে ছিল। রিদিমা ফোন রাখতেই বলল,
“ ও মামুনি আমি পটি যাবো।”
পটি হতেই ফ্রেশ করিয়ে রিদিমা সায়ন কে গুছিয়ে নিচে নেমে এলো। মিসেস চিত্রা ওদের দেখে বললেন,
“ কি ব্যপার দাদুভাই আজকাল আমাকে যে একটুও মনে পড়ে না তোমার। সব সময় দেখি মামনির সাথে চিপকে থাকো।”
সায়ন কুচি কুচি দাঁত গুলো বের করে হেসে রিদিমার এক হাত জড়িয়ে ধরে বলল,
“ আমার মামুনি ভালো মামুনি তাই আমি মামুনির সাতে তাকি।”
রিদিমা মিসেস চিত্রা দুজনেই সায়নের কান্ড দেখে হেসে ফেলল। রিদিমা সায়নের মাথায় হাত বুলিয়ে গালে চুমু খেতেই সেও একটা আদর লাগিয়ে দিলো রিদিমার গালে। মিসেস চিত্রা সায়নের প্রতি রিদিমার এই ভালোবাসা টুকু দুনয়ন ভরে দেখলেন। মনে মনে ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বললেন,
“ হে রাধামাধব, তুমি আমার পরিবার কে সব রকম কুদৃষ্টি থেকে দূরে রেখো।”
তন্মধ্যে চুমকি রান্নাঘর থেকে ডাক পাড়লো,
“ মা, দাদাভাই এর কফি টা তো দিয়ে আসা হলো না।”
মিসেস চিত্রা তাড়াতাড়ি কফির মগ টা রিদিমার হাতে তুলে দিয়ে বলল,
“ মা যাও তো ছেলেটা কে এটা দিয়ে এসোতো। সেই কখন চেয়েছে। এখনও দিয়ে আসতে পারলাম না।”
রিদিমা কফির ট্রে টা হাতে নিয়ে বলল,
“ উনি কোথায়?”
“ আছে উপরেই।”
রিদিমা কফির মগ টা নিয়ে উপরে চলে এলো। নিজেদের রুম টা একবার দেখলো দরজা খুলে। সেখানে সমর কে না পেয়ে বাকি দুটো রুমের দিকে এগুলো। প্রথম রুমটা চেক করে না পেয়ে একদম শেষের মাথার থাকা রুমটার দরজায় নক করল। ওপাশ থেকে সমরের কন্ঠ ভেসে এলো,
“ কে?”
“ আমি! কফি এনেছিলাম!”
“ চল্লিশ মিনিট আগে চেয়েছিলাম আর এনেছো এখন! কি আর করার, যাগ্গে বাদ দাও। ভেতরে এসো।”
রিদিমা কাঁধ দিয়ে দরজা ঠেলে খুলতেই চমকে থ হয়ে গেল সমর কে দেখে। একটা হাঁটু পর্যন্ত হাফ প্যান্ট পরে খালি গায়ে পুশ আপ করছে লোকটা। সারা পিঠ ঘামে ভিজে জবজব করছে। রিদিমা আস্তে ধীরে রুমের ভেতরে এসে দাঁড়ালো। সমর পুশ আপ শেষ করে তখন সবে উঠে দাঁড়িয়েছে। তার চোখ গেল রিদিমার মুখের দিকে। দেখলো মেয়েটা ড্যাব ড্যাব করে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। সমর ওর দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,
“ কি ব্যাপার ম্যাডাম, কি দেখছেন ওভাবে?”
রিদিমা নজর সরিয়ে কফির মগ টা বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“ আপনার কফি!”
সমর উফ্ বলে কপালে আঙুল স্লাইড করতে করতে বলল,
“ নাহ্ আর পারলাম না।”
বলেই শান্ত পায়ে হেঁটে এলো রিদিমার দিকে। এতো কাছ থেকে সমরের বুকের পেশীর ভাঁজ আর হাতের ফুলে ফেঁপে ওঠা মাসল গুলো দেখে মনে মনে শিহরিত হলো রিদিমা। নিজের অজান্তেই হাত পায়ের শিরা গুলোতে রক্ত জমাট বেঁধে ঝিম ধরে গেল। আর তাতেই অল্প বিস্তর কেঁপে উঠলো রিদিমা। সমর ওর একদম কাছে এসে দাঁড়ালো। নত করে রাখা মুখ টাকে আঙুল দিয়ে উপরে উঠিয়ে বলল,
“ লুক অ্যাট মি রিদিমা।”
রিদিমা আস্তে আস্তে নজর তুলে তাকালো। সমর রিদিমার চোখে চোখ রেখে বলল,
“ কি বললে এই মাত্র আবার বলো।”
রিদিমার ভ্রূ তে ভাঁজ পড়লো সমরের কথায়। সমরের গমগমে কণ্ঠে বলা কথাটা শুনে ভাবনায় পড়লো আচ্ছা সে কি কিছু ভুল বলেছে! সমর ওকে চুপ করে থাকতে দেখে আবার বলল,
“ কি হলো বলো!”
“ আআপনার কফফই……”
কথাটা শেষ করার আগেই একজোড়া রুক্ষ ওষ্ঠ পিষে দিলো রিদিমার পাতলা নরম অধর দুটো কে। সাথে সাথেই হাত ফসকে ট্রে সমেত কফির মগ টা ঠাস্ করে আছড়ে পড়লো ফ্লোরে। সমর রিদিমা উভয়েই হকচকিয়ে গেল সিরামিকের কাপ ভাঙার শব্দে। তবে সমর দমে গেল না। এক হ্যাঁচকা টানে রিদিমাকে সরিয়ে আনলো কফি পড়া নোংরা জায়গা টা থেকে আর তারপর আবারো মত্ত হলো নিজের কাজে। বেচারী রিদিমাকে দেওয়ালের সাথে আটকে একপ্রস্থ তাণ্ডব চালিয়ে তারপর ছেড়ে দিলো। ততক্ষণে মেয়েটা ঘন ঘন শ্বাস ফেলে হাঁপাচ্ছে রীতিমত। সমর নিজেও তখন জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে। সে রিদিমার বুকের উপর থেকে শাড়িটা টেনে নিজের ঠোঁট দুটো মুছতে মুছতে বলল,
“ এবার বলো কি যেন বলছিলে।”
রিদিমা এবার আর সমর কে সুযোগ দিলো না।
বুকের মাঝে জোর ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে
“ অসভ্য একটা।”
বলেই ছুটন্ত হরিণীর ছুটে পালিয়ে গেল। সমর রিদিমার ওই ছুটে পালানো দেখে শব্দ করে হেসে ফেললো। ঠোঁটে আঙুল স্লাইড করতে করতে বিড় বিড় করে বলল,
“ কাঠবিড়ালি একটা।”
*
সকাল সাড়ে ছয়টা। প্রত্যুষের সোনালী রোদের সাথে এক ঝকঝকে দিনের শুরু। ব্যাস্ত হাতে টেবিল গোছাচ্ছে চুমকি। রান্না ঘরে ও লেগেছে রাজ্যের ব্যস্ততা। ঠিক তখনই চুমকির ফোন টা শব্দ করে বেজে উঠলো। হাত ধুয়ে কল টা চেক করতেই শিউরে উঠলো চুমকি। সাথে সাথে আড়ালে গিয়ে রিসিভ করে চাপা সুরে বলল,
“ হ্যালো।”
ওপাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠল,
“ কাজ কতদূর?”
“ কককাজ? কিসের কাজ!”
ওপাশ থেকে ধমকে উঠলো মানুষটা। তেজে ঝলসে ওঠা কণ্ঠে বলল,
“ আমার মনে হচ্ছে তোকে মনে করিয়ে দিতে হবে নতুন করে!”
চুমকি কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
“ দেখুন আমাকে দিয়ে এসব কাজ হবে না। বিশ্বাস করুন। আআআমি এসব…”
“ চোপ! আমি না শুনতে মোটেও অভ্যস্ত নই। তুই কাজটা করবি আর এটাই ফাইনাল। নয়তো আমি তোর কি হাল করবো বুঝতেই পারছিস।”
ফোনটা কেটে গেল চুমকির। অথচ তার রেশ থেকে এখনও বেরিয়ে আস্তে পারলো না বেচারী। ওদিকে তাওয়ার ওপর রাখা পরোটা পুড়ে ইতিমধ্যে ধোঁয়া বের হতে শুরু করে দিয়েছে। মিসেস চিত্রা নিজের ঘরে ছিলেন। ধোঁয়ার গন্ধ নাকে ভেসে আসতেই ব্যতিব্যস্ত হয়ে ছুটে এলেন। দেখলেন চুমকি ব্যস্ত হয়ে গ্যাস অফ করছে। তিনি সাথে সাথেই কড়া গলায় ধমকে উঠলেন,
“ কি রে, তোর ধ্যান কোথায় আছে!”
চুমকি ভয়ে আতঙ্কে তখনও দিশেহারা অবস্থা। সে বলল,
“ মা আমার না হঠাৎ খুব মাথা ঘুরাচ্ছে। তাই…!”
মিসেস চিত্রা সাথে সাথে রাগ ভুলে ব্যস্ত হলেন। তাড়াতাড়ি তার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,
“ কি বলছিস। কখন থেকে এসব হলো?”
চুমকি একথার জবাব দিলো না। শুধু মাথা ঘোরার অভিনয় করে কোনোমতে নিজের ঘরে ঢুকে দোর চাপাল।
___
কেটে গিয়েছে মাঝ খানে বেশ কয়েকটা দিন। আজ রিদিমার রেজাল্ট বেরিয়েছে। খুব ভালো না হলেও একেবারে মন্দ হয় নি। ফার্স্ট ক্লাস হয় নি তবে ভালো পার্সেন্ট এসেছে। এতে রিদিমা অখুশি হলেও সমর আর মিসেস চিত্রা খুব খুশি। আজ রিদিমার রেজাল্ট উপলক্ষে বেশ আয়োজন করা হয়েছে বাড়িতে। সমর আজকে তাই অফিস থেকে ফিরেছেও তাড়াতাড়ি। মিসেস চিত্রা সেই সুযোগে ছেলের কাছে এলেন। চোখ মুখ ভীষন সিরিয়াস বানিয়ে বললেন,
“ কি রে বাবু তোর বুদ্ধিশুদ্ধি কবে হবে বলতো?”
সমর ল্যাপটপের ব্যাগটা সোফায় রাখতে রাখতে বলল,
“ কেন কি করেছি আমি?”
“ এটাই তো সমস্যা কিছুই করিসনি তুই!”
“ সমর সোফায় বসে গা এলিয়ে দিতে দিতে অবাক হয়ে বলল,
“ মানে ?”
মিসেস চিত্রা ছেলের পাশে বসে ফিস ফিসে গলায় বললেন,
“ তোর মনে হয় না এবার অন্তত একটা অনুষ্ঠান করে আত্মীয় স্বজনদের জানানো উচিত তোর বিয়ের ব্যাপার টা।”
“ কেন সবাই কে জানানো হলো। আবার নতুন করে কেন জানাতে হবে?”
মিসেস চিত্রা রেগে মেগে বললেন,
“ তোর কি বোধ বুদ্ধি কম। বুঝিস না কেন এটা তোর দ্বিতীয় বিয়ে হলেও মেয়েটার তো প্রথম বিয়ে। ওর একটা শখ আহ্লাদ আছে না!”
সমর ভ্রূ কুঁচকে শুনলো। মিসেস চিত্রা আবারো বললেন,
“ তাছাড়া তোর আগের বিয়েতে আমরা সেভাবে কোনো আয়োজনই করতে পারিনি। এবারও যদি না করি তাহলে কেমন দেখায় না বল।”
সমর সবটা বুঝে মাথা নেড়ে বলল,
“ ঠিক আছে তাহলে তুমি প্ল্যান করো তোমার টিম নিয়ে। আমি বাকিটা সামলে নেবো।”
বলেই উঠতে নিলো। ঠিক তখনই ফোনটা বেজে উঠলো পকেটে। সমর সেটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো পরমার কন্ঠস্বর,
“ হ্যালো আপনি প্লীজ রিদিমা কে নিয়ে একটু সিটি হাসপাতালে আসতে পারবেন! আসলে মায়ের আবার হার্ট এ্যাটাক হয়েছে।”
*
সিটি হাসপাতালের ইমারজেন্সি ভবনের করিডোরে দাঁড়িয়ে রিদিমা আর সমর। তাদের পাশেই মুহ্যমান হয়ে বসে তপন বাবু। পরমা বাবার পাশে দাঁড়িয়ে ওড়নায় বার বার চোখ মুছছে। কাঁচের দরজার ফাঁক গলিয়ে দেখা যাচ্ছে ওই দূরে স্টিলের খাতের উপর অক্সিজেন মাস্ক পরে ঘুমিয়ে আছে মনিকা। রিদিমা মুখে আঁচল চেপে ডুকরে কেঁদে উঠলো। সমর তাকে একহাতে আগলে রেখে পরমা কে জিজ্ঞেস করল,
“ এসব কখন হলো?”
পরমা চোখ মুছে ভাঙা গলায় বলল,
“ আজ সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ।”
“ এসব আগে থেকে টের পান নি।”
“ আসলে আমি তো কাছে ছিলাম না তাই।”
বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
“ তাছাড়া সুনুর বিয়ে হয়ে যাবার পর থেকেই মা একদম ভেঙে পড়েছিল। সব থেকে বেশি ভেঙে পড়েছিল তৃপ্তীশ এর সত্যিটা জানার পর। মা খুব আফসোস করতো জানেন? কেন যে জেদ দেখিয়ে মেয়েটাকে কষ্ট দিতো সেসব ভেবে ভেবে।”
বলেই রিদিমার দিকে তাকালো। বোনের হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় পুরে কাতর কন্ঠে বলল,
“ সুনু বোন আমার, প্লীজ বাবা মা কে ক্ষমা করে দে। দেখ ওরা সেদিন যা কিছু করেছিলে আমি মানছি ভুল ছিল। কিন্তু ওনারাই বা কি করতেন তুই বল। চোখের সামনে ওসব ছবি দেখলে কারই মাথার ঠিক থাকে..”
“ থাক এখন ওসব কথা।”
সমর পরমা কে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“ ডাক্তার কখন এসেছিলেন?”
“ কিছুক্ষণ আগে।”
“ কি বলেছেন?”
“ মায়ের মিনি কার্ডিয়াক আরেস্ট হয়েছে। হার্টে অক্সিজেন কম যাওয়ায় এমন টা হয়েছে। ডাক্তার বলেছেন পেশেন্ট যেন আর এক মুহূর্তও টেনশন না করে। নাহলে এর পরের বার মেঝর কার্ডিয়াক এরেস্ট হলে বাঁচানো মুশকিল হয়ে যাবে।”
রিদিমা মায়ের কন্ডিশন শুনে ভয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো। ছুটে গিয়ে কাঁচের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মুখ চেপে কাঁদতে লাগলো। সমর রিদিমার কাঁধে হাত রেখে বলল,
“ শান্ত হও রিদিমা। কিচ্ছু হবে না আন্টির। দরকার হলে আমি ওনাকে আরও ভালো হাসপাতালে ট্রান্সফার করিয়ে নিয়ে যাবো।”
রিদিমা সমরের দিকে তাকালো হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। মনের কষ্টে তার বুকটা ফেটে যাওয়ার যোগাড়।
“ এসব আমার কারণে হয়েছে। আমি যদি সেদিন বাবা মা ক্ষমা করে সব কিছু মিটমাট করে নিতাম তাহলে এসব কিচ্ছু হতো না।”
বলেই পাশে বসা তপন বাবুর কাছে ছুটে এসে বাবার কোল জড়িয়ে বসলো রিদিমা। বাবার হাত দুটো চেপে ধরে বলল,
“ বাবা প্লীজ আমায় ক্ষমা করে দাও। আমি ইচ্ছে করে তোমাদের সাথে বেয়াদপি করেছি। প্লীজ ক্ষমা করে দাও।”
তপন বাবু নিজেও কেঁদে ফেললেন। আদরের মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে কাঁপা হাতে আদর করতে করতে বললেন,
“ মা রে, আমার মা তুই আর ক্ষমা চাসনে। তুই শুধু এই অভাগা বাপ মা দুটো কে ক্ষমা করে দিয়ে বুকে ফিরে আয় মা। বুকে ফিরে আয়।”
চলবে…
#তুই_যখন_ছুঁয়ে_দিলি_মন
পর্ব:৩৮
মনিকা আজ সকালেই ডিসচার্জ পেয়েছে। সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ সমরের গাড়িটা গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই পাড়া প্রতিবেশীরা সব ছুটে এলো দেখতে। ঠিক তখনই রিদিমা আর পরমা দুই বোন মাকে আগলে নিয়ে বেরিয়ে এলো গাড়ি থেকে। ওদিকে ওরা নামতেই গাড়ি থেকে বেরোলো সমর আর দীপ্ত। বাড়ির বড় জামাই আর ছোট জামাই কে একসাথে দেখে ইতি মধ্যে সবার মধ্যে ফিসফাস গুঞ্জন শুরু।
তপন বাবু আজ আর যাননি। কাজের বউ টাকে দিয়ে বাড়ি ঘরদোর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করাচ্ছিলেন। স্ত্রী কে নিয়ে দুই মেয়ে দুই জামাই বাড়িতে ঢুকতেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলেন একেবারে। আপ্লুত কন্ঠে বলে উঠলেন,
“ আরে বাবারা এসো এসো।”
সুতপা আজ সকাল থেকেই এবাড়িতে। সবার আসার খবর পেয়ে রান্না বান্না সামলাচ্ছিল। অসুস্থ বোন টাকে দেখে চোখ মুছতে মুছতে এগিয়ে এলো। কান্না ভেজা হাসি হেসে বলল,
“ নে আর তো চিন্তার কোন কারণ নেই। তোর ছোট মেয়ে তোকে ক্ষমা করে তোর কোলে ফিরে এসেছে।”
মনিকা দুইহাতে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলেন রিদিমার কপালে। মাথায় হাত বুলিয়ে অসুস্থ কণ্ঠে বললেন,
“ আমি আমার মেয়েটার উপর অনেক অন্যায় করেছি। যার শাস্তি ঈশ্বর আমাকে কড়ায় গণ্ডায় বুঝিয়ে দিয়েছেন। আজকের পর থেকে আমার মেয়েটা কষ্ট পাক এমন কোনো কাজ আমি আর কক্ষনো করবো না। আমাকে ক্ষমা করে দিস মা!”
রিদিমা মায়ের বাহুর ওমে জড়িয়ে থেকেই ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল,
“ এমন করে বলোনা মা। আমিও তোমাদের সাথে অনেক বেয়াদপি করেছি। তুমিও প্লীজ আমাকে ক্ষমা করে দিও।”
“ আহ্ কি শুরু করলে বলোতো তোমরা। বাড়িতে যে নতুন জামাই এসেছে সে খেয়াল দেখছি কারই নেই। দীপ্ত বাবা, সমর যেহেতু প্রথম এলো এবাড়িতে। ওকে তুমি একটু দেখিয়ে শুনিয়ে দাও।”
এতক্ষণ দাঁড়িয়ে মা মেয়ের ইমোশনাল দৃশ্য চুপ করে দেখছিল সমর। তপন বাবুর কথায় ধ্যান ভাঙতেই ও বলল,
“ ইটস ওকে আঙ্কেল। ব্যস্ত হবার দরকার নেই আমি ঠিক আছি।”
দীপ্ত সমরের চেয়ে বয়সে বেশ ছোট। এদিকে সম্পর্কের দিক দিয়ে বড় হওয়ায় বিপাকে পড়েছে। মাঝে মধ্যে ভুল করে দাদা ডাক টা বেরিয়ে আসছে। এই তো এবারও তেমন টা হলো। সে ডাকলো,
“ সমরদা প্লীজ আসুন।”
সমর কথা বাড়ালো না। চুপ করে ব্যক্তিত্বের সাথে গিয়ে বসলো সোফায়। পরমা আর রিদিমা ওরা মনিকা কে নিয়ে ভেতরে চলে গেল। ওদিকে সুতপা চা জলখাবার বানিয়ে নিয়ে এলো অতিথি আপ্যায়ন করতে। তপন বাবু দীপ্ত আর সমর তিনজনে মিলে বেশ কিছু কথা বার্তা হচ্ছিল। এর মধ্যে পাড়ার কয়েক বাড়ির মহিলারা এসে জড়ো হলো মনিকার সাথে দেখা করতে। ভালো মন্দ খোঁজ নেবার বাহানায় এসে দেখতে লাগলো নতুন জামাই কে। আসলে মাস খানেক আগের সেই উদ্ভট বিয়ের ঘটনা এখনও গোটা এলাকার চর্চিত বিষয়। মাঝ খানে একটু চাপা পড়েছিল বিষয়টা তবে আজ ঝা চকচকে দামী গাড়িটা এলাকায় ঢুকতেই আবারো নতুন করে শোরগোল পড়ে গেছে।
সমরের বেশ বিরক্তি লাগছিল মানুষের নজর গুলো দেখে। তাকে কেমন যেন চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে সবাই। দেখে মনে হচ্ছে মানুষ নয় তারা ক্লাউন দেখতে এসেছে। রাগে মাথার মধ্যে চিড়বিড় করছিল কিন্তু বেয়াদপি দেখিয়ে উঠে যেতে পারছিল না বেচারা। আসলে রিদিমাদের বাড়িটা একটু ঘিঞ্জি পাড়ার ভেতরে। তাই এমন লোকজনের আগমন। সমর অস্বস্তি সইতে না পেরে পকেট থেকে ফোন টা বার করে একটা মেসেজ পাঠালো ছোট্ট করে,
“ রিদিমা বাইরে এসো।”
রিদিমা মেসেজ পেতেই ছুটে বাইরে এলো। ওকে দেখে সমর উঠে দাঁড়িয়ে ঘড়ি টা দেখতে দেখতে বলল,
“ একটা দরকারি মিটিং ছিল দুপুর দুটোর পর। আমাকে এক্ষুনি বেরোতে হবে।”
সমর চলে যাবে শুনে রিদিমার মুখটা কালো হয়ে এলো। ওদিকে তপন বাবুও উঠে দাঁড়ালেন।
“ সেকি চলে যাবে মানে? না না আজ তোমাকে কিছুতেই যেতে দিচ্ছি না।”
সমর সে বারণ শুনলো না। বরং বুঝিয়ে বলল,
“ আজ থাকা পসিবল নয় আঙ্কেল। হরিয়ানা থেকে দুজন বায়ার আসবে আজ। আমাকে সেখানে থাকতেই হবে।”
রিদিমার দিকে তাকিয়ে বলল,
“ ও থাকুক। আমি পরে আসবো।”
সমর সবার থেকে বিদায় নিয়ে এগোতেই রিদিমা ও সাথে এলো গেট পর্যন্ত। সমর গাড়ির দরজা খুলতেই রিদিমা বলল,
“ আবার কখন আসবে?”
“ ডোন্ট ওরি আমি মাঝে মাঝেই আসবো। আপাতত মাকে সময় দাও। মায়ের সুস্থতা এই মুহূর্তে বেশি দরকারি।”
রিদিমা মাথা নাড়লো। সমর ওর মাথায় আলতো হাত বুলিয়ে বেরিয়ে গেল। রিদিমা ঘরে ফিরতেই পরমা ওকে টেনে নিয়ে গেল রুমে। দরজা আলতো করে ভেজিয়ে দিয়ে বলল,
“ এই সুনু উনি তোকে মেনে নিয়েছে রে।”
“ হুঁ।”
পরমা খুশি হয়ে বলল,
“ তুই মেনে নিয়েছিস তো ওনাকে!”
রিদিমা ভ্রূ কুঁচকে বলল,
“ আশ্চর্য! মেনে না নেওয়ার কি আছে এখানে?”
“ না মানে বিয়েটা যেভাবে হলো।”
পরমার কথায় বিরক্ত হয়ে রিদিমা বলল,
“ তোহ! এটা কি বাংলা সিরিয়াল নাকি! বিয়ে যখন হয়েছে মানবো না কেন!”
পরমা বোনের মেজাজ দেখে আর কথা বাড়ালো না। ও দরজা খুলে বেরিয়ে গেল। রিদিমা সেদিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সেদিন যদি এবাড়ির একটা মানুষ ও ওর পাশে দাঁড়াত তাহলে হয়তো এই বিয়েটা হতোই না। তবে রিদিমা মনে মনে ঈশ্বর কে ধন্যবাদ জানায় আজকাল। যতো কাহিনী করেই বিয়েতে হোক না কেন এতো ভালো একটা মানুষকে সে যে জীবন সঙ্গী হিসেবে পেয়েছে সেটা তার ভাগ্যই বলতে হবে।
কথায় কথায় কানে ভেসে এলো গুঞ্জন রিদিমার বর নাকি পাড়ার সেরা হয়েছে। যেমনি দেখতে সুদর্শন তেমনি পয়সাওয়ালা। কেউ কেউ তো এও বলে ফেলল, এমন এক ছেলের বাপ পাত্র হিসেবে পেলে চোখ বন্ধ করে মেয়ে দেওয়া যায়।
পাশের বাড়ির মিসেস দাস তো কথায় কথায় বলেই ফেললেন,
“ যাই বলো মনিকা দি তোমার ছোট জামাই কিন্তু সেই হয়েছে। তবে মেয়ের চাইতে বয়স টা একটু বেশি। কিন্তু পাশাপাশি দাঁড়ালে শিব দুর্গার জুঁটি মনে হয়।”
মনিকা হাসলেন। তারও খুব ভালো লেগেছে সমর কে। ছেলেটা বড্ড অমায়িক। একটু কম কথা বলে। দীপ্তের মতো ততটা মিশুকে নয়। তবে ভীষণ দায়িত্ব বান।
____
প্রিয়ার মনের মধ্যে দমিয়ে রাখা ক্ষোভ টা যেন দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। কিছুতেই শান্ত করতে পারছে না সে নিজেকে। এত বড় সাহস মেয়েটার ওকে ইগনোর করে।
প্রিয়া নিজের প্রতি রাগে আফসোসে ফেঁটে ভেঙেচুরে পড়লো। সেদিনের সেই বাবার দোকান সামলানো ছেলেটা আজ চার বছরে এভাবে ঘুড়ে দাঁড়াবে যেটা সে স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেনি। প্রিয়া সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে কড়া দৃষ্টি ফেলল বাইরে। আজকাল মার্কেটে তার দাম ভীষণ কম। সিরিয়াল গুলো সব সময় নতুন মুখে চলে। পুরোনো মুখ গুলো তখন ডাস্টবিনের ড্রামে পড়ে থাকে। তার ওপর মাথার উপর তার কোনো গড ফাদার ও নেই যে তাকে নিজের টাকা দিয়ে প্রমোট করাবে। যেখানে একটা সাইড রোল পেতে গেলেও মাথার উপর কেউ থাকা লাগে। সেখানে ওর মতো একটা চালচুলোহীন সস্তা মেয়েকে তারা বিছানা গরম করার জন্য ছাড়া এমনি ডাকে না।
প্রিয়ার সেসব দিন গুলোর কথা আজকাল খুব করে মনে পড়ে। যেই দিন গুলো ও সমরের সাথে কাটিয়ে ছিল। কতো সুখের ছিল সেসব দিন। অথচ ও তার মূল্য বোঝেনি। একটা ফুটফুটে সন্তান ছিল ওর কোল জুড়ে সেটাও ফেলে দিয়ে এসেছিল এই অন্ধকারের টানে। প্রিয়া আবারো লম্বা টান দিলো ফুরিয়ে আসা সিগারেট টায়। এখন এই মুহূর্তে তার স্বামী আর সন্তান দুটো কেই চাই। যেভাবেই হোক না কেন সে সেটা ছিনিয়ে নেবেই। কোথাকার কোন মেয়ে হুট করে এসে নিজের করে নেবে আর সে আঙুল চুষবে! সেটা তো হবে না।
সে আর দেরি না করে আবারো রিদিমার ফোনে ফোন লাগালো। ফোনটা বাজার কিছুক্ষন পরেই রিসিভ হলো। সাথে সাথে নাকি কান্না জুড়ে দিলো প্রিয়া।
“ প্লীজ রিদিমা, আই বেগ অফ ইউ। আমাকে মাত্র একটা বার আমার ছেলেটার সাথে দেখা করার সুযোগ করে দাও। আমি কথা দিচ্ছি আর কোনো দিন তোমাকে জ্বালাতন করবো না।”
রিদিমা ওপাশ থেকে স্ট্রেটকাট বলে দিলো,
“ আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি পারবো না। আর হ্যাঁ আজকের পর থেকে আমাকে আর কল করে জ্বালাতন করবেন না দয়া করে।”
_____
চুমকির ঘুম উড়েছে চিন্তায়। কি করে এতবড় একটা ভুল ও করতে পারলো ভাবতেই গায়ে কাটা দিচ্ছে ওর। ওদিকে ফোনের ওপাশে থাকা মানুষটা হেসে বলল,
“ যদি আমার কথা না শুনিস তাহলে আমি তোর সব কিছু ফাঁস করে দেবো।”
চুমকি ভয় পেয়ে থর থর করে কেঁপে উঠলো।
“ না না দয়া করে এমন টা করবেন না। আমার এই পৃথিবীতে আপনজন বলতে কেউ নেই। সত্যিটা জানাজানি হলে ওরা আমায় বাড়ি থেকে বের করে দেবে। প্লীজ এমন টা করবেন না।”
ওপাশ থেকে খিল খিলে হাসির শব্দ ভেসে এলো। যা শুনে আতঙ্কের শীতল শিহরণে হিম হয়ে এলো চুমকির হৃদপিন্ড। ওপাশের মানুষটা হঠাৎ হাসি থামিয়ে বলল,
“ ঠিক আছে তাহলে আমি যেমন যেমন টা বলবো তুই শুধু তেমন তেমন টা করতে থাক। তাহলেই হবে।”
চুমকি সে কথার জবাব দিলো না। শুধু মাত্র কাঁদতে কাঁদতে বালিশ ভিজিয়ে ফেলল। কেন নিষিদ্ধ জানা সত্ত্বেও ওর মনের মধ্যে অনুভূতি তৈরি হয়েছিল সমরের প্রতি? কেন ওর অবাধ্য দৃষ্টি ছুটে চলে যেত মানুষটার তরে। আজ সেই অনুভূতি টুকুই যে ওর গলার ফাঁস হয়ে গেছে। ওর দুর্বলতা টুকুকে কুক্ষিগত করে মানুষটার ক্ষতি করতে চাইছে। ও কি করবে এখন? চুমকি বালিশে মুখ গুজে হাউমাউ করে কাঁদে। মনে পড়ে ফেলে আসা দিন গুলোর টুকরো টুকরো স্মৃতি। বাপের ছায়া বিহীন গরীব মায়ের সন্তান ছিল সে। কোনরকম পরের ঘরে কাজ কাম করে দিন গুজরান হতো মা সমেত তাদের চার বোনের। সে দিন গুলো ভীষণ কষ্টের ছিল। তাইতো মা যাকে পেয়েছে তার হাতেই সপে দিয়েছিল বোন গুলোকে। আর বোন গুলো কপাল গুণে ভালো বর পেলেও তার কপাল টা পুড়ে গেল। ভাগ্যের ফেরে এক মাতাল জুটলো। বিয়ের পর থেকেই শুরু হলো গালাগালি মারধর অত্যাচার। কত কষ্টে যে তিনটে বছর ওই মাতালের ঘর করেছিল শুধু সেই জানে।
চুমকির আজও মনে পড়ে সেই দিনটার কথা যেদিন অতিরিক্ত মারের কারণে ওর গর্ভপাত হয়েছিল। সে কি রক্ত! নিজের কারণে নিজের সন্তান কে মরতে দেখেও স্বামী নামক সেই জানোয়ারটার মনে এতটুকুও দয়া মায়া কাজ করে নি সেদিন। পাঁচ মাসের গর্ভ জাত সন্তানটা হারিয়ে সে যেন পাগল হয়ে গিয়েছিল। তারপর আর ওই জানোয়ারের সংসার করে নি ও। কিন্তু ভাগ্য তাকে স্বস্তি দিয়েছিল না। তার বাড়ি ফিরে আসার মাত্র একমাস পরই ওর মা কে কেড়ে নিয়েছিল। মাথার উপর থাকা একমাত্র সম্বল টুকুও হারিয়ে গিয়েছিল নিয়তির কাছে হার মেনে। সেদিন ওই সময় মিসেস চিত্রা তাকে যদি নিজের সাথে করে সেই সুদূর লাটাগুড়ি থেকে এখানে না নিয়ে আসতো, নিজের বাড়িতে না আশ্রয় দিতো তাহলে ওর যে কি হতো কেউ জানে না। মিসেস চিত্রার বাপের বাড়ির পাশেই ছিল ওদের ছোট্ট কুড়ে খানা। বাপের ঘরে ঘুরতে এসে অসহায় তাকে চোখে পড়ে। আর তারপর তাকে নিয়ে আসে এখানে। এবাড়িতে এসে ছোট্ট সায়নের মাঝে ও নিজের হারিয়ে যাওয়া সন্তান কে খুঁজে পায়। এবাড়ির আরাম আয়েশ অর্থ সম্পদ দেখে আস্তে আস্তে একসময় লোভ জাগে মনে। নিজেকেই একসময় প্রশ্ন করে, ইস্ এগুলো যদি তার হতো! তার উপর সুদর্শন সম্পদশালী পুরুষ সমর, যাকে দেখে হৃদয়ের মণিকোঠায় খেলে যায় এক অন্যরকম অনুভূতির ঢেউ। এই মানুষটার যেমন কেউ নেই ঠিক তেমন তারও তো কেউ নেই। যদি মানুষটা তাকে আপন করে নেয় তাহলে ক্ষতি কি! ও তো কতো সিনেমা সিরিয়ালে দেখেছে বাড়ির কাজের মেয়ের সাথে মালিকের প্রেম হতে। কিন্তু তার সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেল সেদিনের ঘটনায়। সমরের সাথে রিদিমার বিয়ে হয়ে যাওয়ায় সে মানুষিক ভাবে এতোটা ভেঙে পড়ে যা বলার বাইরে। তারপর পরই তো সে সেই ভুলটা করে ফেলল। চুমকি আফসোসের উত্তাপ ঝরা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। ও যদি কথা না শোনে তাহলে কি যে হবে ও জানে না।
____
রাতের মধ্যভাগ। বিছানায় এপাশওপাশ করেও এক মুহূর্তও ঘুম পেল না রিদিমার। লোকটার বুকে মাথা রেখে শোয়ার কি যে এক বাজে অভ্যাস হয়েছে আজ তা হাড়ে হাড়ে টের পেল মেয়েটা। ও ফোনটা হাতে নিয়ে কল করতে গিয়েও করতে পারলো না। রাত একটা বাজে। মানুষটা হয়তো ঘুমে বিভোর। শুধু শুধু জ্বালাতন করার মানেই হয় না। তবুও মন মানলো না। ও ছোট্ট করে একটা মেসেজ পাঠালো,
“ সায়নের পাপা আপনি জেগে আছেন?”
ওকে আশ্চর্য করে সাথে সাথে রিপ্লাই এলো।
“ কি করবো বলো, আজকাল সায়নের মামনি কে ছাড়া যে একটুও ঘুম আসে না।”
রিদিমা হাসলো। মুখ চাপা মুচকি হাসি। সে মজা করে লিখলো,
“ তাই নাকি?”
“ আর নয়তো কি? নরম তুলতুলে তুমি টা আমার বুকে নেই। বুঝতে পারছো কি নেই আমার কাছে।”
রিদিমা সমরের লেখা পড়ে লজ্জায় লাল হয়ে গেল। ওর বুঝতে বাকি নেই মানুষটা আসলে ইশারায় কি বুঝিয়েছে। ও লিখলো,
“ ঠিক আছে তাহলে চলে আসুন আমি ঘুম পাড়িয়ে দেবো।”
“ সত্যিই আসতে বলছো?”
“ একদম সত্যি!”
“ মজা করছো না তো! আমি কিন্তু সত্যি সত্যিই চলে আসবো শ্যামলতা।”
রিদিমা জানে সমর এতো রাতে কখনই আসবে না। তাই ও মজা করে একটু জোর দিয়েই লিখলো,
“ সত্যিই একদমই মজা করছি না। চলে আসুন আমি অপেক্ষা করছি।”
সমর সত্যি সত্যিই আজ সেই পাগলামো টা করে দেখালো। রাত তখন প্রায় দেড়টা বাজে রিদিমা দের বাড়ির গেটে এসে ফোন লাগালো। রিদিমা ফোন রিসিভ করে ঘুম ঘুম কণ্ঠে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে সমর বলল,
“ দরজা খুলুন ম্যাডাম আপনার স্বামী দেবতা এসেছে সেবা নিতে।”
রিদিমা কয়েক মুহূর্ত হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো মোবাইলের স্ক্রিনে।
“ এতো রাতে মজা না করে ঘুমান তো। আমার ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমালাম।”
“ হেই ওয়েট আমি মোটেও মজা করছি না। সত্যিই এসেছি। আচ্ছা বিশ্বাস না হলে জানলা খুলে দেখো।”
রিদিমা সত্যি সত্যি জানলা খুললো। ওপাশে স্ট্রিট লাইটের আলোয় সাদা গাড়িটা দাঁড়িয়ে দেখে ওর হুশ ফিরে এলো। রিদিমা একপ্রকার চেঁচিয়েই উঠলো,
“ একি আপনি সত্যি সত্যিই চলে এসেছেন।”
“ হুম্। দরজা খুলবে নাকি আমি চলে যাবো।”
“ এই না না আমি আসছি।”
রিদিমা আজ ওর সেই বিয়ের আগের হাঁটু পর্যন্ত প্লাজো আর ঢিলে হাত কাটা টিশার্ট পরে ছিল। ও ওভাবেই ছুটে বেরিয়ে গেল।
বাড়ির চারিদিক তখন নিস্তব্দ। রিদিমা বড় সংকোচে পা টিপে টিপে বাড়ির মেন গেট খুলে বেরিয়ে এলো বাইরে। তালা খুলে গেট খুলতেই বাড়ির টিশার্ট আর ট্রাউজার পরা এলেমেলো চুলের মানুষটাকে দেখে মনটা হঠাৎ কেমন যেন করে উঠলো। সমর গাড়ি ভালো করে লক করে এগিয়ে এলো। রিদিমার এলো মেলো রুপ দেখে থমকে গেল একেবারে। কিন্তু সেটা বাইরে প্রকাশ করলো না। রিদিমা বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“ পাগল নাকি আপনি? এই ভাবে এত রাতে আসার কোনো মানে হয়?”
সমর ঘরের দিকে যেতে যেতে বলল,
“ সব দোষ তোমার শ্যামলতা। আমাকে ওমন করে ডাকলে বলেই তো চলে আসতে বাধ্য হলাম।”
“ তাহলে আমি এখন চলে যেতে বলছি। ইস্, কি লজ্জা। কেউ যদি এতো রাতে আপনাকে দেখে ফেলে কি ভাববে বলুন তো।”
সমর ভ্রূ কুঁচকে ওখানেই দাঁড়িয়ে পড়লো। রিদিমার কথা গুলো সরাসরি ওর সম্মানে আঘাত করলো। ওর এবার মনে হলো একটু বেশিই ছ্যাবলামী করে ফেলেছে আজকে। ও পা ঘুরিয়ে ফিরে এসে দাঁড়ালো রিদিমার সামনে। বলল,
“ এতো রাতে আমার সাথে থাকতে তোমার লজ্জা লাগছে।”
“ আর নয়তো কি? বাবা কিম্বা মা যদি দেখে আমি কি জবাব দেবো তাদের।”
সমর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলো রিদিমার চেহারায় ফুটে ওঠা বিরক্তির ছাপ গুলো। সমর আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না। সরি বলেই হেঁটে বেরিয়ে গেল সেখান থেকে।
চলবে….
#তুই_যখন_ছুঁয়ে_দিলি_মন
পর্ব (৩৯)
৩৯)
সরি বলেই আর এক মুহূর্তও দেরি করলো না সমর। ধুপধাপ পা ফেলে বেরিয়ে গেল সেখান থেকে। রিদিমা কিছু বলবে তার আগেই গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সোজা বেরিয়ে গেল সেখান থেকে। রিদিমা অত রাতে গলা ফেড়ে ডাকতেও পারলো না। মেয়েটা অসহায়ের মতো ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে মানুষটার চলে যাওয়া দেখলো শুধু।
“ রিদিমা, এতো রাতে বাইরে কি করছো?”
আচমকা দীপ্তর কণ্ঠ শুনে চমকে উঠে ধ্যানে ফিরল রিদিমা। ও পেছন ঘুরে তাকিয়ে দেখল দীপ্ত দাঁড়িয়ে দরজায়। দীপ্ত বাইরে বেরিয়ে এলো। আসেপাশে নজর বুলিয়ে বলল,
“ কেউ কি আসবে?
রিদিমা মাথা নেড়ে বলল,
“ না!”
“ তাহলে এতো রাতে বাইরে কি করছো?”
রিদিমা দীপ্ত কে বরাবরই বড় দাদার মতো সম্মান করে। তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল,
“ উনি এসেছিলেন।”
“ উনি মানে সমর দা!”
রিদিমা মাথা নেড়ে সম্মতি জানাতেই সে বলল,
“ তাই নাকি! তা কোথায় সে?”
“ চলে গেছে!”
বলেই রিদিমা মাথা নুইয়ে নিলো। দীপ্ত রিদিমার নুইয়ে রাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“ চলে গেছে মানে ঠিক বুঝলাম না। এতো রাতে এলেন আবার বাড়ির ভেতরে না ঢুকেই চলে গেলেন। কোনো দরকারে এসেছিলেন বুঝি?”
দীপ্তর এই প্রশ্নের উত্তর মেয়েটা দিতে পারলো না। এক সূক্ষ্ম অপরাধ বোধে ততক্ষনে জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে হৃদয় টা। দীপ্ত প্রশ্ন বোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল রিদিমার দিকে। তবে জবাবের পরিবর্তে ইতঃস্তত হয়ে হাত কচলাতে দেখে বোধ হয় ব্যাপার টা বুঝে ফেলল সে। তাই গলা ঝেড়ে হাসি চেপে বলল,
“ আচ্ছা বুঝলাম। বউ রেখে থাকতে পারছিল না বেচারা। তাই ছুটে এসেছিল। কিন্তু উনি এলো অথচ বাড়িতে ঢুকলো না কেন? এতো রাতে এসে আবার চলে যাবার কি দরকার ছিল।”
“ আমি চলে যেতে বলেছি।”
রিদিমা মিন মিনিয়ে বলতেই দীপ্ত ভ্রূ কুঁচকে বলল,
“ কেন?”
“ লজ্জায়।”
কথাটা বলতে গিয়ে আরও গুটিয়ে গেল রিদিমা।
“ সকালে উঠে যখন সবাই জিজ্ঞেস করতো জামাই কখন এলো কি জবাব দিতাম আমি! তাই চলে যেতে বলেছি।”
দীপ্ত বিস্ময়ে থ হয়ে বলল,
“ এই মেয়ে পাগল নাকি তুমি! মানুষ টা এতো রাতে উতলা হয়ে এলো আর তুমি তাকে তাড়িয়ে দিলে! এটা তুমি মোটেও ঠিক করো নি রিদিমা।”
“ এই তোমরা এতো রাতে বাইরে কি করছো?”
পরমার ঘুমু ঘুমু কণ্ঠ শুনে রিদিমা আর দীপ্ত উভয়েই দৃষ্টি ফেলল দরজায়। দীপ্ত পরমার দিকে এগিয়ে এসে বলল,
“ তোমার বোন কি কান্ড করেছে দেখো।”
“ কি করেছে ও?”
“ সমর দা এসেছিল। তোমার বোন লজ্জা পাবার ভয়ে তাকে রিটার্ন বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে।”
“ কিহ্ !”
“ তবে আর বলছি কি! ছিঃ ছিঃ! কি ভাবলো বলোতো মানুষটা।”
পরমা রাগী চোখে তাকিয়ে ধেয়ে এলো বোনের কাছে। ধমক লাগিয়ে বলল,
“ এই মেয়ে পাগল নাকি তুই! সে তোর লিগ্যাল হাসবেন্ড তার উপর সে আবার এবাড়ির নতুন জামাই। কি করে তাকে এভাবে বাড়ি চলে বললি। তোর কি কাণ্ড জ্ঞান নেই!”
রিদিমা অপরাধী চোখে মাথা নুইয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। পরমা রিদিমার থুতনী ধরে উপরে তুলে বলল,
“ এই তুই সত্যি করে বলতো, সমর বাবুকে স্বামী হিসেবে মন থেকে মেনে নিয়েছিস তো?”
রিদিমার এবার হুট করে খুব কান্না পেল। স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছে মানে কি! সে তো মানুষটা কে রীতিমত মন দিয়ে ফেলেছে। তাহলে এমন প্রশ্ন আসবে কেন? রিদিমা নিজেকে প্রশ্ন করলো,
আচ্ছা! সে কি নিজের অজান্তেই মানুষটাকে অপমান করে ফেলল! মনটা সাথে সাথে বলে উঠলো, হ্যাঁ অবশ্যই তুই তার ভালোবাসা কে অপমান করেছিস। সহসা ধেয়ে আসা অপরাধ বোধের গ্লানিতে রিদিমার বুকের ভেতর টা কেমন যেন তোলপাড় করে উঠলো। ও পরমার হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে ঘরে ঢুকে গেল। রুমের দরজা আটকে কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনের লক খুলল। তার পর ডায়াল করলো সমরের নম্বর।
প্রত্যাখ্যান এমন এক সূক্ষ্ম অনুভূতি যা মনের দেওয়ালে চিড় ধরিয়ে দেয়। অতঃপর ধীরে ধীরে সেখান থেকেই শুরু হয় ভাঙন। রিদিমা কে আপন করে জীবনে দ্বিতীয় দফায় প্রেম নামক হেমলক বিষ সুধা ভেবে পান করেছিল সমর। আবারো মেতে উঠেছিল সেই অল্প বয়সী বাঁধন হারা পাগলামো তে। তবে রিদিমার এ হেন প্রত্যাখ্যানে যেন হুশ ফিরল সমরের। রাত তখন প্রায় আড়াইটে বাজে। নিস্তব্ধ জনহীন সড়কে ধূম্রের মতো কুয়াশা জমেছে। মাঝে মাঝে ছুটে বেরিয়ে যাচ্ছে দূরপাল্লার যানবাহন। খালের উপর নির্মিত ব্রীজ টা এই মুহূর্তে জনহীন। ল্যাম্প পোস্টের লালচে আলোয় বহমান খালের জল চকচক করছে। সমর ব্রীজের একপাশে এসে দাঁড়ালো। ঠোঁটের ফাঁকে সিগারেট জ্বেলে ধোঁয়া উড়িয়ে ভাবতে লাগলো বিগত দিন গুলোর কথা। এক সময় কতো পাগলামো করেছে প্রিয়া কে পাবার জন্য। যখন তাদের মধ্যে এক অলিখিত বিচ্ছেদ হয়ে ছিল। রাতের পর রাত ওর বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতো। ও যেখানে যেত সেখানে চলে যেত বিনা সংকোচে। ওর জন্য হাত কেটেছিল। বাউন্ডুলে হয়ে ঘুরে বেরিয়েছিল। বাবা মায়ের সাথে অযথা অশান্তি করেছিল। দিনের পর দিন মাতাল হয়ে ফুটপাথে রাত কাটিয়েছিল। অথচ শেষ পর্যন্ত সে কি পেল!
উপেক্ষা! প্রবঞ্চনা! আর চূড়ান্ত অবজ্ঞা!
অতীত কে ভাবতে ভাবতে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো সমর, ওকি আগের মতো আবারো সেই একই ভুল করে ফেলছে? আবারো কি একটু বেশিই বিশ্বাস করে ফেলছে ধূর্ত নারীজাতির উপর? নাকি ওর দুর্বলতা গুলো বুঝতে পেরে রিদিমা ইচ্ছে করে ওকে অবজ্ঞা করছে?
নাক মুখ দিয়ে বেরোনো ধোঁয়ার কুণ্ডলী টা বাতাসে উড়িয়ে দূর আকাশের বুকে চেয়ে থাকলো সমর। মনের অন্তরালে ভেসে বেড়ালো হাজার হাজার প্রশ্ন। তাদের জবাব খুঁজতে পোড়ালো একের পর এক সিগারেট। শুনশান সড়কের নিস্তব্ধতার ভিড়ে মনের বিষন্নতা মিলে মিশে একাকার হয়ে গেল। অথচ উত্তর খুঁজে পেল না। এদিকে গাড়ির সিটে অবহেলায় পড়ে থাকা মুঠো ফোন টা অনবরত বেজে চলল। ফোনের স্ক্রিন ভাসিয়ে বার বার হারিয়ে গেল শ্যামলতা নাম খানা।
ভোরের কুয়াশা ডিঙিয়ে সমরের গাড়িটা তখন সদ্য আবাসনের গেটে এসে দাঁড়িয়েছে। লালচে স্ট্রিট লাইটের আলোয় আলোকিত চারপাশ। গোটা শহর তখনও ঘুমের চাদরে জড়িয়ে। কোথাও কোথাও কয়লার আঁচের ঘোলাটে ধোঁয়া বাতাসে উড়ছে চায়ের দোকানের সামনে। মাথার যন্ত্রণায় ক্লান্ত সমর নিষ্প্রভ চোখে তাকালো। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হর্ন বাজিয়ে জানান দিলো নিজের উপস্থিতির। দারোয়ান আওয়াজ পেয়ে দরজা খুলতেই গাড়ি টেনে সোজা পার্কিং এ ঢুকলো সে। অতঃপর গাড়ি পার্ক করে দরজা খুলে বেরোতেই কোথা থেকে যেন উত্তুরে হাওয়ার মতো ছুটে এলো রিদিমা। চোখে মুখে রাশি রাশি ভয় আর উদ্বেগ ছড়িয়ে বলে উঠলো,
“ এই আপনি কোথায় ছিলেন এতক্ষণ?”
এই কাকডাকা ভোরে রিদিমাকে এখানে দেখে বিস্ময় হতভম্ব সমর। ভ্রূ জোড়া কুঁচকে গেল বিস্ময়ে। ওর যেন নিজের চোখ কে বিশ্বাসই হলো না রিদিমার উপস্থিতি নিয়ে। ওদিকে সমর কে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রিদিমা আবারো ঝাঁঝে ফেঁটে পড়লো। সুর চড়িয়ে ঝাঁঝালো গলায় বলল,
“ এই, ফোন কোথায় আপনার?”
সমর আবারো আরেক দফা চমকালো। রিদিমার ঝাঁঝালো গলার স্বর শুনে এবারে সত্যি সত্যি ওর বিশ্বাস হলো, নাহ্ তাহলে মেয়েটা সত্যি সত্যিই এসেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো এতো ভোরে মেয়েটা এখানে কি করছে! সমর কে চুপ করে হাবুলের মতো নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিদিমা আরও দুপা এগিয়ে এলো। রাগে উত্তপ্ত চোখে চেয়ে বলল,
“ কি হলো বলুন ফোন কোথায় আপনার?”
“ সেটা জেনে তোমার কি দরকার?”
পাল্টা প্রশ্নে রিদিমা যেন থমকে গেল একেবারে। সমর আজকের আগে কখনই তার সাথে এমন ভাবে কথা বলেনি। সমর গাড়ির দরজা লক করে সোজা লিফ্ট এর দিকে হাঁটা ধরতেই রিদিমার চোখ দুটো ভিজে উঠলো অবজ্ঞায়। তখনই ওর বিবেক চিৎকার করে বলে উঠলো,
“ দেখেছিস গতকাল রাতে ঠিক এই ভাবেই তুইও মানুষটাকে অবজ্ঞা করে ছিলি। ঠিক এতটাই কষ্ট পেয়েছিল মানুষটা যেভাবে তুই পাচ্ছিস।”
রিদিমা দু পা পিছিয়ে গাড়ির আড়ালে চলে গেল। মুখে ওড়না চেপে কেঁদে ফেলল নিঃশব্দে। ওদিকে সমর হেঁটে লিফ্ট এর কাছে আসতেই দেখা হলো দীপ্তর সাথে। বেচারা বাইক চালিয়ে এই ভোরে শালি কে নিয়ে হাজির হয়েছে তার বর মহাশয়ের মান ভঞ্জন করতে। কি কপাল তার!! দীপ্ত কে দেখে সমর ওখানেই দাঁড়িয়ে গেল। অবাক হয়ে বলল,
“ আরে দীপ্ত তুমি এখানে?”
দীপ্ত হালকা হেসে ইতঃস্তত হয়ে বলল,
“ ওই মানে রিদিমা কে নিয়ে এলাম আর কি। আসলে আপনার ফোন রিসিভ না করায় এমন অস্থির হয়ে পড়েছিল যে কি আর বলবো। সে তো ওই রাতেই কেঁদে মেদে একাকার। তাই তো একে বারে বাধ্য হয়েই মাঝ রাতে ঘুম টুম ফেলে ছুটে আসতে হলো! তা বলছি যে আপনার সাথে দেখা হয়েছে রিদিমার? ও তো ওদিকেই গেল।”
সমর ভ্রূ কুঁচকে কিছু একটা ভাবলো। অতঃপর পকেট হাতড়ে ফোন বার করে লক খুলতেই বিস্ময়ে যেন চোখ দুটো ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইলো। নিজেই নিজেকে মনে মনে বলে উঠলো, ওহ্ মাই গড!
৫৯৩ টা মিসড কল আর প্রায় শ খানেক মেসেজ। প্রতিটা মেসেজেই একই কথা ইনিয়ে বিনিয়ে লেখা।
“ সরি সরি সরি। আমার ভুল হয়ে গেছে। প্লীজ ক্ষমা করে দিয়ে ফিরে আসুন।”
“ এই আপনি কল রিসিভ করছেন না কেন?”
“ আমার খুব চিন্তা হচ্ছে কিন্তু।”
“ প্লীজ ক্ষমা করে দিন।”
“ সায়ুর পাপা ফোন রিসিভ করুন না প্লীজ!”
“ আপনি কি বাড়িতে পৌঁছে গেছেন?”
“ শুধু একটা বার ফোন রিসিভ করুন প্লীজ।”
এরকম অসংখ্য মেসেজে ভরে গেছে তার ইনবক্সের খালি স্টোর। সমরের আচমকা বুকটা কেঁপে উঠলো। ও গোটা রাত মেয়েটা কে নিয়ে না জানি কতো খারাপ খারাপ ভেবেছে। অথচ মেয়েটা ওর সামান্য ফোন না তোলায় মাঝ রাতে অস্থির হয়ে ছুটে এসেছে! ভাবতেই হৃদয় জুড়ে শীতল বাতাস খেলে গেল যেন। সমর আর এক মিনিট ও দাঁড়ালো না। ও পা ঘুরিয়ে প্রায় ছুটেই এলো পার্কিংয়ে। বিশাল জায়গার এদিক ওদিক চোখ ঘুরিয়ে খুঁজলো রিদিমাকে। কিন্তু পেল না। সমর উৎকণ্ঠা নিয়ে গলা হাঁকিয়ে ডাকলো।
“ রিদিমা!”
রিদিমা ডাকের সাড়া দিলো না। শুনশান নীরব পার্কিংয়ের চারপাশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়লো সমরের সেই গম্ভীর স্বরের ডাক খানা। সমর আবারো এলো মেলো নজর ফেলল। হাঁটতে হাঁটতে কপালে আঙুল চেপে উদ্বিগ্ন কন্ঠে আওড়ালো,
“ শিট!”
তারপর হঠাৎ দূর থেকে ওড়নার আঁচল দেখতে পেয়ে ছুটে এলো। দেখলো পিলারের আড়ালে চুপ চাপ মাথা নুইয়ে থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা। তার উজ্জ্বল শ্যামলা গাল দুটো বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অবিরাম বারি ধারা। সমরের রিদিমার ওই অশ্রু সিক্ত চোখ দুটো আর এক মুহূর্তও সহ্য হলো না। এক ছুটে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো বুকে। দুই হাতের শক্ত বন্ধনে আবদ্ধ করে অসংখ্য আদর দিতে দিতে অপরাধী গলায় বলে চলল,
“ আম রিয়েলী ভেরি ভেরি সরি শ্যামলতা। আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি আসলেই বুঝিনি আমি তোমার লাইফে এতটা ইমপর্ট্যান্ট একজন মানুষ। আমি খুব খুব খুব সরি রিদিমা।”
এতক্ষণে সমরের আদরে রিদিমার নীরব কান্না বাঁধ ভাঙলো যেন। হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতেই হৃদয়ের সবটুকু উজাড় করে সেও দুহাতে আঁকড়ে ধরলো মনের মানুষটাকে। অর্ধাঙ্গের বুকে মুখ গুঁজে বিনা বাক্যে জানান দিলো অন্তরের গভীরে জমা সীমাহীন আপরাধ বোধ টুকু। সমর ওভাবেই রিদিমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে তৃপ্তির হাসি হাসলো। কপালে কপাল ঠেকিয়ে অনুভূতি তে ভেজা গাঢ় কণ্ঠে ডাকলো,
“ শ্যামলতা….!”
প্রাণ প্রিয় মানুষটার ডাক শোনা মাত্রই রিদিমার বুকের ভেতর টা আচমকা দমকা হাওয়ার মতো কেঁপে উঠলো। হৃদয়ের কোণে কোণে ছড়িয়ে পড়লো মানুষটার স্নিগ্ধ পরশ। সমর দু হাতে রিদিমার মুখটা তুলে চোখে চোখ রাখলো। অতঃপর হৃদয়ের সবটুকু নিংড়ে ফিস ফিসে কণ্ঠে বলে উঠলো,
“ আমাকে ভালোবাসো?”
রিদিমা থমকালো। চোখে মুখে বিস্ময় নিয়ে তাকালো অর্ধাঙ্গের দিকে।মেয়েটা যেন চমকের আকস্মিকতায় কান্না ভুলে গেছে নিমেষে। সমর রিদিমার ভেজা গাল দুটো যত্ন নিয়ে মুছে দিলো। তারপর ধৈর্যের সাথে আওড়াল সেই একই প্রশ্ন …
“ কি হলো বলো! ভালোবাসো আমায়?”
রিদিমা এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারলো না। তবে হৃদয়ের অনুভূতি টুকু চোখের কোণ ঘেঁষে ঝরে পড়লো রাশি রাশি তপ্ত বিন্দু হয়ে। যার প্রতিটা ফোঁটা জানান দিচ্ছিল হ্যাঁ সে ভালোবাসে। হৃদয়ের সবটুকু উজাড় করে পাগলের মতো করে ভালোবাসে সে এই মানুষটাকে। সমর বোধ হয় রিদিমার হৃদয়ের ওই নির্বাক স্বীকারোক্তি টুকু অনায়াসে বুঝে নিলো হৃদয় দিয়েই। তাইতো ঠোঁট ছড়িয়ে তৃপ্তিতে আবারো স্মিত হাসলো সে। তারপর মেয়েটাকে বুকের মাঝে পিষে ধরে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে অবলীলায় বলে উঠলো,
“ ভালোবাসি শ্যামলতা, আমার হৃদয়ের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে তোমায় ভালোবাসি।”
রিদিমা আবারো ডুকরে কেঁদে উঠলো প্রিয় মানুষটার বুকে মুখ গুঁজে দিয়ে। সরু হাত দুটো দিয়ে প্রাণ পণে নিজের সাথে বেঁধে নিতে চাইলো মানুষটাকে সে। সমর তাতে সায় নিজেই এগিয়ে এলো এলো। নিজেকে সবটুকু দিয়ে রিদিমার সাথে জুড়ে দিয়ে দুজন দুজনায় একাত্ম হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো চুপটি করে। দীপ্ত দূর থেকে এই ভালোবাসাময় মুহূর্ত টুকুর এক ঝলক দেখেই পেছন ঘুরে দাঁড়ালো। অতঃপর ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিদায় নিলো সেখান থেকে। আর সেই নিরিবিলি আঁধারে ডোবা জনহীন পার্কিং, সেটা যেন সেই মুহূর্তে দুটো ভালোবাসার মানুষের স্বীকারোক্তির নীরব সাক্ষী হয়ে রইলো সকলে অলক্ষ্যে।
তখন সকাল সাড়ে সাতটা। মনিকা আর তপন বাবু সদ্য প্রতকালীন কাজ সেরে বসার ঘরে বসেছেন। পরমা গরম গরম ধোঁয়া ওঠা চা আর বিস্কুট ভরা প্লেট ট্রে তে করে সাজিয়ে নিয়ে এনে রাখলো টেবিলে। মনিকা রিদিমার ঘরের দরজার দিকে তাকিয়ে বলল,
“ সুনু কোথায়? ওকে ডাক। কতদিন হয়ে গেল মেয়েটার সাথে দুটো কথা বলা হয় না।”
পরমা মায়ের কথা শুনে ফিক করে হেসে ফেললো। চায়ের কাপ টা এগিয়ে দিয়ে বলল,
“ তোমার মেয়ে বাড়িতে নেই।”
মনিকা আর তপন বাবু ভ্রূ কুঁচকে বললেন,
“ বাড়িতে নেই মানে? কোথায় গেছে?”
“ চিন্তা করো না। তার যেখানে যাওয়ার সেখানেই গেছে।”
বলেই বাবার দিকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে নিজের কাপ টা হাতে তুলে ধপ করে বসে পড়লো। মনিকা মেয়ের হেঁয়ালি কথা বুঝতে না পেরে বলল,
“ পেঁচিয়ে ঘুচিয়ে কথা না বলে সোজা করে বলতে পারিস না! সুনু কোথায় স্পষ্ট করে বল!”
পরমা চায়ের কাপে আয়েশি চুমুক দিয়ে মুচকি হাসতে হাসতে বলল,
“ আমি মোটেও পেঁচিয়ে ঘুচিয়ে বলছি না। বরং তুমিই পেঁচিয়ে ঘুচিয়ে ভাবছো। তোমার মেয়ে এখন তার স্বামীর কাছে আছে। বিশ্বাস না হলে ফোন করে দেখতে পারো।”
পরমার কথা শুনে মনিকা আর তপন বাবু দুজনে যেন আকাশ থেকে পড়লো। বিস্ময়ে অবাক চোখে তাকিয়ে তপন বাবু বললেন,
“ সে কি কথা! হঠাৎ এতো ভোরে ও বাড়িতে যেতে হলো যে। ও বাড়িতে সব কিছু ঠিক আছে তো!”
পরমা বাবার কথায় ওভাবেই হেসে বলল,
“ ও বাড়ির সবাই ঠিক আছে শুধু তোমার মেয়ে জামাই বাদে।”
তপন বাবু বোধ হয় কিছু বুঝলেন। তাই আর ফিরতি প্রশ্ন করলেন না। তবে মনিকা বুঝলেন না। তাই ভীত কন্ঠে বললেন,
“ মানে! কি হয়েছে সুনুর আর জামাইয়ের?”
“ প্রেম রোগ হয়েছে তোমার মেয়ে জামাইয়ের।”
কথাটা মুখে এলেও বাবার সামনে বলতে পারলো না পরমা। শুধু ঠোঁট টিপে মিটি মিটি হেসে গেল অনবরত। তপন বাবু মেয়ের হাসি দেখে তড়িঘড়ি চা শেষ করে উঠে দাঁড়ালেন। বললেন,
“ মনি আমি বাজারে গেলাম। আজ দুপুরে আমার দুই মেয়ে জামাই কে একটু ভালো মন্দ খাওয়াবো ভাবছি।”
বলেই বেড়িয়ে পড়লেন। ওদিকে বাবা চলে যেতেই পরমা কাল রাতের গোটা ঘটনা মনিকা কে খুলে বলল। সাথে এও জানালো তার ছোট কন্যা এবং তার জামাই দুজন দুজনের প্রেম মারাত্মক ভাবে হাবুডুবু খাচ্ছে। মনিকা প্রথম দফায় শুনে কিছুটা অবাক হলেও মনে মনে খুবই খুশি হলেন। যাক, মেয়েটা তার তাহলে ভাগ্যের গুণে স্বামী সোহাগী হয়েছে। ঈশ্বর যে সবার অগোচরে এতো এতো পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন এদের কে এক করার জন্য ভাবতেই চোখ দুটো ভিজে উঠলো কৃতজ্ঞতায়। মনিকা আস্তে করে চোখের কোণ মুছলো। খুশি হয়ে ঈশ্বরের কাছে আর্জি জানালো,
“ হে ঈশ্বর! তুমি আমার মেয়ে দুটো কে এভাবেই স্বামী সোহাগী করে রেখো আজীবন।”
বেলা তখন প্রায় সাড়ে নয়টা। গাঢ় ঘুমের চাদরে লেপ্টে দুটো অনাবৃত দেহ। একে অপরের বাহু মাঝে অচেতন হয়ে আছে প্রগাঢ় ঘুমে বিভোর হয়ে। এসির দ্রিম দ্রিম আওয়াজ ভাসছে হরিণ গোটা রুমে। ওদিকে নিচে খাবার টেবিলে বসে মিসেস চিত্রা নাতিকে নিয়ে বসে। তার মুখে খাবার তুলে দিতে দিতে চুমকি কে জিজ্ঞেস করলেন,
“ কি রে বাবু কখন বেরোলো জানিস কিছু!”
চুমকি রান্না ঘরে কাজ করতে করতেই বলল,
“ তখন অনেক রাত। আমি দেখলাম দাদাভাই কোথায় যেন বেরোচ্ছে। গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই আমাকে বলল শুয়ে পড়তে। সে দরজা অটোলক করে বেরোচ্ছে। সকালেই ফিরে আসবে।”
“ ওহ্!”
মিসেস চিত্রা ঠিকই আন্দাজ করে ফেললেন ছেলে তার অত রাতে কোথায় যেতে পারে। তিনি মনে মনে খুশি হয়ে সুখের হাসি হাসলেন। যাক ছেলেটা তার শেষ পর্যন্ত একাকীত্বের জীবন ভুলে একটা সুন্দর সুখের সংসার পেল। ঠিক তখনই পাশে রাখা ফোনটা বেজে উঠলো শব্দ তুলে। স্ক্রিনে তপন বাবুর নাম ভাসতে দেখে রিসিভ করে কানে চাপলেন। ওপাশ থেকে শুভেচ্ছা বিনিময় করে তপন বাবু বললেন,
“ দিদিভাই আজ আপনার ছেলে বৌমা কে নিয়ে দুপুরের ডাল ভাত টুকু গ্রহণের নিবেদন জানাচ্ছি। দয়া করে না করবেন না প্লীজ।”
মিসেস চিত্রা ফিরতি শুভেচ্ছা জানিয়ে হেসে বললেন,
“ আরে দাদা আমাকে আবার কেন। বাবু আর বৌমা আপনার ওখানে আছে তো ওরাই না হয় থাকুক। আমি এই ভারী শরীরটা নিয়ে আবার এতদূর যাবো।”
তপন বাবু নাছোড়বান্দার মতো করে বললেন,
“ না না দিদিভাই, আপনাকে ওদের সাথে আসতেই হবে। তাছাড়া আমার দাদুভাই এই প্রথম বার তার দিদুন বাড়ি আসবে। আপনার কোনো নাই আমি শুনছি না।”
তপন বাবুর এতো আন্তরিকতা দেখে নাকচ করতে পারলেন না মিসেস চিত্রা। শেষ মেষ রাজি হলেন। ঠিক তখনই তপন বাবু বললেন,
“ ইয়ে মানে বলছি কি, ওদের কে নিয়ে একটু তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করবেন দিদিভাই। ভেবেছি একটু সময় নিয়ে গল্প গুজব করবো আর কি। বোঝেনই তো বিয়েটা যেভাবে হলো! তাছাড়া বিগত কয়েকদিন যেভাবে দৌড়ের উপর কাটলো তাতে করে ছেলেটার সাথে দুদন্ড আলাপের সুযোগ পাই নি।
মিসেস চিত্রা আপ্লুত হেসে সম্মতি জানিয়ে ফোন রাখলেন। আর মনে মনে কিছু একটা চিন্তা করে ফোন লাগালেন ছেলের নম্বরে।
সমর তখন গাঢ় ঘুমে আচ্ছন্ন রিদিমার নরম শরীর টা বুকের সাথে মিশিয়ে। ঠিক তখনই জোরালো শব্দে ফোন টা বেজে উঠলো। সমর কোনো রকমে হাতড়ে রিসিভ করে ঘুম ঘুম কণ্ঠে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে মায়ের কণ্ঠ শুনে চোখ মেলে তাকালো।
“ কি রে তুই বাড়ি কখন ফিরলি?”
“ এই তো ভোর বেলায়।”
“ বৌমা তোর সাথে নাকি…!”
“ হুম্!”
ছেলের একটা জবাবে যা বোঝার বুঝে ফেললেন তিনি। ফোনটা কাটার আগে তপন বাবুর কথা গুলো বলে বললেন,
“ একটু তাড়াতাড়ি উঠে আয়। দাদুভাই তোকে আর বৌমা কে সকাল থেকেই খুঁজছে।”
সমর আচ্ছা বলে ফোন কেটে টেবিলে রাখলো। অতঃপর বুকের মাঝে ঘুমন্ত সুখ পাখিটা কে মন ভরে দেখতে দেখতে মনে মনে বলে উঠলো,
“ তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ রিদিমা আমার এই শূন্যতায় ভরা জীবনে এসে পূর্ণতায় ভরিয়ে দেওয়ার জন্য। আমি সারাজীবন তোমাকে ঠিক এমনি ভাবেই আগলে রাখবো। কোনোদিন হারিয়ে যেতে দেবো না। এটা আমার নিজের সাথেই নিজের প্রমিজ রইলো।””
চলবে….