তুই যখন ছুঁয়ে দিলি মন পর্ব-১৫+১৬

0
13

#তুই_যখন_ছুঁয়ে_দিলি_মন
কলমে: নিতু সরকার
পর্ব: ১৫

বিয়ে বাড়ির অন্দরমহল। তাতে হৈ চৈ হুল্লোড়ে ভরা বাতাবরণ। তাকে আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে একটা খবরই যথেষ্ট ছিল ‘কুসুম কাটা’ সিরিয়ালের জনপ্রিয় নায়িকা মধুপ্রিয়া দে এসেছে। সকলে যেন হুমড়ি খেয়ে পড়লো ভবনের হল রুমে। প্রায় চার বছর আগে টিভির পর্দায় কুসুম কাটা সিরিয়াল টা দারুন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে। এই সিরিয়ালের মুখ্য নারী চরিত্র ছিল অপু নামের এক অসহায় মেয়ে যে প্রতিনিয়ত সৎ মায়ের কাছে লাঞ্ছিত গঞ্জিত হতো। সৎ মা চক্রান্ত করে এক মাতালের সাথে তাকে জোর করে বিয়ে দিতে গেলে সে পালিয়ে যায়। তারপর তার দেখা হয় শহরের নামকরা ব্যবসায়ী প্রবাল সেনগুপ্তের সাথে। সে তার বাড়িতে আশ্রয় পায়। সেখান থেকেই তাদের প্রেম শুরু হয়। কাহিনী টা এতটাই জনপ্রিয় ছিল যে সিরিয়াল টা গত বছর শেষ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও মানুষ আজও তাকে মনে গেঁথে রেখেছে ভীষণ আবেগের সাথে। সেই অপুই হলো আজকের এই মধুপ্রিয়া দে।

আস্তে ধীরে মানুষের ভিড় ঠেলে মায়াবী চেহারার এক নারী অস্তিত্ব প্রবেশ করলো কমিউনিটি সেন্টারের হল রুমে। তাকে দুপাশ থেকে পাহারা দিয়ে ভেতরে নিয়ে এলো কালো পোশাকের দুটো পেশাদারী গার্ড। কমিউনিটি সেন্টার হওয়ায় মানুষের ভিড় মোটামুটি কমই ছিল। যার দরুন তাদের সামাল দিতে খুব বেশি ঝামেলা পোহাতে হলো না। মধুপ্রিয়া ওরফে অপু স্নিগ্ধ হাসি হেসে হাত জোড়া জোড় করে ভেতরে প্রবেশ করলো। ভিড়ের মাঝে অনেকেই এগিয়ে এলো তাকে আপ্যায়ন করতে। হলের একদম পেছনের দেওয়ালে সামান্য উঁচু মঞ্চ তৈরি করা। সেখানে কলাগাছ আর ফুলের মালা দিয়ে বিয়ের ছাদনাতলা বানানো হয়েছে। মঞ্চের একপাশে বড় একটা ডিভান রাখা যার উপরে বরের বেশে রঙ্গন বসে আছে। মঞ্চের আরেকপাশে বিয়ের জন্য রাখা প্রয়োজনীয় সামগ্রী আর উপকরণ। মঞ্চের সামনের গোটা হলঘর টা জুড়েই চেয়ার পেতে বসার ব্যবস্থা করা। সেখানেই দ্বিতীয় সারির চেয়ারে সায়ন কে কোলে নিয়ে বসে ছিল রিদিমা আর মিসেস চিত্রা। সমর দাঁড়িয়ে ছিল ঠিক তাদের সামনে। মধুপ্রিয়া কে ঢুকতে দেখে সহসা চোখ দুটোর চাহনিতে রঙ বদলে গেল সমরের। দাঁতের পাটিতে পিষে ধরলো দাঁত। উত্তপ্ত বিষাক্ত নিঃশ্বাস টা নিঃশব্দে ফেলে মুখ ঘুরিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো পেছন ফিরে। অতঃপর বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে গেল রঙ্গনের দিকে।

“ হোয়াট’স শী ডুইং হেয়ার?”
মিসাইলের তোপের মতো সমরের ঝড়ো প্রশ্নের মুখে পড়ে রঙ্গন মনে মনে গুটিয়ে গেল ভয়ে। চেহারায় স্পষ্ট পাংশুটে হাল। কতিপয় ঢোক গিলে শুকিয়ে যাওয়া গলাটা ভিজিয়ে রঙ্গন ফিস ফিস বলল,
“ ইয়ার বিশ্বাস কর আমি ওকে ইনভাইট করি নি। ও নিজে নিজে ইনভিটেশন নিয়েছে।”
“ মানে?”

সমরের চমকে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে রঙ্গন বলল,
“ গত পরশুর ঘটনা। আমি সীমন্তিনী কে নিয়ে সেনকো তে গেছিলাম বিয়ের জুয়েলারি কিনতে। সেখানেই হঠাৎ প্রিয়ার সাথে দেখা। ওখানে দাঁড়িয়েই টুকটাক আলাপ হচ্ছিল। সীমন্তিনী ওকে হুট করে দেখে আপ্লুত হয়ে পড়ে। বুঝিসই তো, এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও। এতটুকু ফ্যান ফলোয়ার তো ওর আছেই। চোখের সামনে তার নমুনা তো দেখতেই পাচ্ছিস। তারপর কথায় কথায় আমাদের বিয়ের খবর শুনে নিজেই জানালো ও আসবে।”

সমর রাগে গজগজ করতে করতে বলল,
“ ও আসবে আমাকে আগে বলিস নি কেন?”
“ আরে, আমি কি জানতাম নাকি ও সত্যি সত্যি আসবে। আমি তো ভেবেছিলাম ও মজা করে বলেছে।”

সমর চোখ বুজে বড় বড় দুটো নিঃশ্বাস ফেলল। কপাল চেপে ধরে বিড় বিড় করে মুখে দুটো কাঁচা গালি দিয়ে ধুপধাপ পা ফেলে চলে গেল সেখান থেকে।

*
“ বাহ্! তোমাকে তো দারুন লাগছে সীমন্তিনী।”

এতো বড় একজন সেলিব্রিটির মুখে নিজের প্রশংসা শুনে লজ্জায় গুটিয়ে গেল সীমা। মুখের আদলে ছেয়ে গেল আবির রঙা লালিমা। প্রিয়া একটা সুন্দর গিফ্ট বক্স সীমার হাতে তুলে দিয়ে বলল,
“ এই নাও এটা তোমার জন্য।”

সীমা গিফ্ট টা হাতে নিয়ে প্রণাম করে রেখে দিলো। প্রিয়া কিছুক্ষন বসে থেকে বেরিয়ে এলো বাইরে। সীমার বাবা মা মামা মামী ওর কাজিনরা ততক্ষণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তাকে আপ্যায়ন করতে। প্রিয়া তাদের কে সামলে আসেপাশে তাকালো। ঠিক তখনই চোখে পড়লো খানিক টা দূরে চেয়ারে বসা চিত্রা দেবী কে। সে আস্তে ধীরে হেঁটে এলো সেখানে। চিত্রা দেবীর পাশের চেয়ারে বসতে বসতে বলল,
“ কেমন আছেন মা?”
মিসেস চিত্রা স্মিত হেসে কন্ঠটা খাদে নামিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বললেন,
“ মা শব্দটা বড়ই পবিত্র। যেটা তোমার মতো প্রবঞ্চকের মুখে মানায় না। তাই সাবধান করে দিচ্ছি। নেক্সট টাইম এই নামে ডাকবে না আমায়।”

মিসেস চিত্রার কথায় হুট করেই যেন আধাঁর নামলো প্রিয়ার মুখমণ্ডলে। চোখে মুখে কাতর অসহায়ত্ব ফুটিয়ে বলল,
“ ঠিক আছে ডাকবো না। তবুও আরেক বার, শুধু মাত্র আরেকটা বার কি আমায় শেষ সুযোগ দেওয়া যায় না।”
“ এটা তোমার নাটকের মঞ্চ নয় যে ভুল হলে বারে বারে রিটেক দিয়ে শুধরে নেবে।”
“ আমি আমার স্বামী সন্তানের কাছে আবার ফিরে আসতে চাই।”

এ পর্যায়ে মিসেস চিত্রা শব্দ করেই হেসে ফেললেন।
“ যে শব্দ দুটো তুমি এই মাত্র উচ্চারণ করলে তার মর্মার্থ জানো? জানলে হয়তো তাদের ছেড়ে এভাবে চলে যেতে না।”

কথা শেষ হতেই মিসেস চিত্রা আর বসলেন না। উঠে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজলেন রিদিমাকে। হঠাৎ তাকে দেখতে পেলেন। বেশ কিছুটা দূরে রিদিমা সায়ন কে কোলে বসিয়ে কি যেন একটা খাওয়াচ্ছে। তার পাশে আরও দুটো মেয়ে বসা। মিসেস চিত্রা আর দাঁড়ালেন না। চলে এলেন টানা পায়ে হেঁটে। রিদিমার কাছে আসতেই রিনি তাড়াতাড়ি উঠে মিসেস চিত্রা কে চেয়ার এগিয়ে দিলো। মিষ্টি করে হেসে বলল,
“ আন্টি আপনি এখানে বসুন।”

মিসেস চিত্রা মাথা নেড়ে বললেন,
“ না না আর বসবো না। এবার দুটো খাওয়া হলেই বাড়ি ফিরতে হবে। দাদুভাই এর দশটার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস। এক্ষুনি না খাওয়ালে ক্ষিদে পেটেই ঘুমিয়ে যাবে।”

সায়ন দুই পিস সসি চিকেন কাবাব খেয়ে মাথা নেড়ে বলল,
“ ও ম্যাম, আমি আর খাবোনা।”
“ ঠিক আছে।”

বলে রিদিমা টিস্যু দিয়ে মুখটা পরিষ্কার করে দিয়ে বাকি কাবাব গুলো নিজে খেতে আরম্ভ করলো। মিসেস চিত্রা অবাক চোখে তাকিয়ে দেখলেন বিষয়টা। রিদিমা মেয়েটা কি অদ্ভুত ভাবে বিনা সংকোচে এঁটো কাবাব গুলো খেতে খেতে টিস্যু দিয়ে সায়নের নাকের গড়িয়ে পড়া সর্দি যত্ন সহকারে মুছিয়ে দিচ্ছে। হঠাৎ করে কেমন যেন এক বিচিত্র ভাবনা তার মনটাকে হালকা করে দোলা দিয়ে গেল। কিন্তু তিনি সাথে সাথে নিজেকে সামলে নিলেন। নিজেকে বোঝালেন মনে মনে,
“ এমন অবাস্তব কল্পনা না করাই ভালো যা কোনো দিন সত্যি হবার নয়।”

“ আন্টি আপনি বসুন আমি এক্ষুনি দেখে আসছি নেক্সট ব্যাচ কখন বসবে।”

বলেই ছুটে গেল খাবার খাওয়ার ওখানে। ফিরে এলো পর পরই। বলল,
“ আন্টি মাটন সার্ভিং চলছে। আর বড়জোর পনেরো মিনিট।”

মিসেস চিত্রা স্মিত হাসলেন। রিদিমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“ আচ্ছা রিদিমা তোমার বান্ধবীদের সাথে তো পরিচয় করিয়ে দিলে না!”

*
দোতলার ছাদের শুনশান নীরবতায় একরাশ প্রশান্তির বাতাস বইছে। সেই বাতাসে গা ভিজিয়ে সিগারেট টানছে সমর। ধূমপান তার নিত্য দিনের নেশা নয়। তবুও যখন যখন তার হৃদয় পোড়ে সেও তখন নিজেকে পোড়ায় দগদগে আগুনের ছোঁয়ায়। মানুষের জীবন ঠিক যেন বহমান এক নদীর মতো। কখনও একূল ভাঙে তো কখনও ওকূল গড়ে। নদীর সাথে জীবনের এই ভাঙাগড়ার ব্যাকরণ টা বড্ড সমার্থক যেন। অদ্ভুত সাদৃশ্য রয়েছে উভয়ের মাঝে। সমর গাল ভরে ধোঁয়া টেনে বাতাসে ওরালো ঠোঁট গোল করে। সেই সাথে ভাসিয়ে দিলো স্মৃতি তে ভাসমান কিছু অব্যক্ত আকুতি। যা এক সময় ছিল কিন্তু আজ আর নেই। আজ সে নিজেকে সেই অপ্রাপ্তির বেড়াজাল থেকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। নিজেকে বেঁধেছে কঠোরতার এমন এক অদৃশ্য শৃংখলে যা ভেদ করে আর কোনো মোহ তাকে স্পর্শ করতে পারবে না। আর না পারবে দূর্বল করতে।

*
বার বার কল করে অবশেষে ব্যর্থ এক নিঃশ্বাস ছাড়লেন মিসেস চিত্রা। খাবার টেবিলে বসে সমানে ছেলের কাছে ফোন করে যাচ্ছেন অথচ ওপর দিক থেকে তার কোনো সাড়া শব্দ নেই। রিদিমা দূর থেকে সেটা লক্ষ্য করে হেঁটে এলো কাছে।
“ আন্টি কিছু লাগবে?”
মিসেস চিত্রা স্মিত হেসে বললেন,
“ দেখনা ছেলেটা কে সেই তখন থেকে ফোন করছি তুলছেই না।”
“ আপনার কিছু দরকার লাগলে আমাকে বলুন আমি এনে দিচ্ছি।”
মিসেস চিত্রা খানিক দ্বিধা নিয়ে বললেন,
“ আসলে আমার প্রেশারের ঔষধ টা ওর কাছে রয়েছে। মা গো তুমি একটু খুঁজে আনবে তাকে!”
রিদিমা কিছু একটা ভেবে বলল,
“ আচ্ছা ঠিক আছে আমি দেখছি। আপনি ততক্ষণ না হয় সায়ন কে খাওয়াতে থাকুন।”

বলেই বেরিয়ে এলো হল ঘরে। রিদিমা গোটা হলঘর ভালো করে খুঁজলো কিন্তু সমর কে কোথাও দেখতে পেল না। সে সাবধানে শাড়ির কুচি সামলে নিচে নেমে এলো। গেটের সামনে অনেকেই দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছে। রিদিমা সেখানে সমর কে দেখতে না পেয়ে উপরে উঠে এলো। মিসেস চিত্রার কাছে যাওয়ার আগে কি যেন একটু ভেবে সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেল ভবনের ছাদের উপরে।

রিদিমা দুহাতে শাড়ি খামচে আস্তে আস্তে সিঁড়ি বেয়ে উঠে এলো। নির্জন নীরব ছাদে প্রায়শই মাতাল আর বখাটেদের আড্ডা দিতে দেখা যায়। তাই মনে মনে ভয় পেলেও একবুক সাহস নিয়ে এসে দাঁড়ালো সিঁড়ির দরজায়। কিন্তু ছাদে আসতেই ওর ধারণা বদলে গেল। গোটা ছাদ পুরোপুরি নীরব। ছাদের রেলিং ঘেঁষে লাগানো হয়েছে হরেক রকম রঙের মরিচ বাতির মালা। জোনাকির মতো টুপটাপ করে জ্বলছে আর নিভছে। দেখে মনে হচ্ছে গোটা ছাদে যেন আলোর মেলা বসেছে। রিদিমা এক পা দু পা করে এগিয়ে এসে ছাদের মেঝেতে পা রাখলো। ঠিক তখনই চোখে পড়লো একটা চওড়া পিঠের আদল। ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। দু আঙুলের ফাঁকে জ্বলছে আস্ত এক সিগারেট। সেই সাথে বাতাসে উড়ছে রাশি রাশি ধোঁয়া আর তামাক পোড়া গন্ধ। এই নির্জন রাতে আলো আঁধারির খেলার মাঝে রিদিমা বোধ হয় অবয়ব টাকে দেখে চিনতে পারলো। তাই আর ভয় না পেয়ে পা বাড়িয়ে আরো দুপা এগিয়ে ডেকে উঠলো সেই চির চেনা নামে..
“ মিষ্টার সমর..!”

হুট করেই ভাবনা চিন্তায় ইতি ঘটলো সমরের। পরিচিত ডাকে চমকে উঠে পেছন ঘুরে তাকালো সে। আবছা আলোয় রিদিমাকে হঠাৎ ছাদে দেখে তড়িঘড়ি হাতের সিগারেট টা চেপে ধরলো রেলিং এর গায়ে অতঃপর ছুঁড়ে ফেলল অনতি দূরে। রিদিমা মেয়েলি মিষ্ট গলায় বলল,
“ আপনি এখানে, আর আমি আপনাকে গোটা ভবন খুঁজে এলাম। এনি ওয়ে আপনার ফোন টা কোথায়?”

পর পর নিজের কাজের খতিয়ান জানিয়ে হঠাৎ প্রশ্ন করায় খানিক থমকে গেল সমর। তবুও কুছ পরোয়া নেই ভাব দেখিয়ে দুই পকেটে হাত ঢুকিয়ে সুদৃঢ় ভঙ্গিতে টান টান হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
“ কেন? আমার ফোন দিয়ে আপনার কি কাজ?”
“ কাজ টা আমার নয় আপনার মায়ের।”

এ কথায় ভ্রূ কুঁচকে গেল সমরের।
“ মানে?”

রিদিমা আরেকটু এগিয়ে এসে একদম সমরের মুখোমুখি দাঁড়ালো।
“ আন্টির প্রেশারের ঔষধ টা নাকি আপনার কাছে আছে।”

সমরের তখনই মনে পড়লো ঔষধ টা সে গাড়িতে রেখেছিল। ওহ্ শিট বলে এগুতে নিলেই রিদিমা আবারো তাকে ডেকে উঠলো…
“ মিষ্টার সমর!”
এগোনো পা টা ফট থেমে গেল সমরের। সে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকাতেই রিদিমা দৃষ্টি নত করে বলল,
“ থ্যাংকস! সেদিন আপনি না থাকলে যে আমার সাথে কি হতো আমি সত্যিই জানি না। আপনি সেদিন আমাকে শুধু মৃত্যুর হাত থেকেই বাঁচান নি আমাকে বেসিক সাপোর্ট টুকুও দিয়েছিলেন। আপনাকে আমি বলে বোঝাতে পারবো না কি ভীষণ মানসিক চাপের মধ্যে ছিলাম আমি সেদিন। ইনফ্যাক্ট এখনও আছি।”

সমর এবার সামনা সামনি দাঁড়ালো। রিদিমার নত হওয়া মুখের তাকিয়ে ঠাড় গলায় বলল,
“ সেই বখাটে টা কি এখনও আপনাকে জ্বালাতন করে?”

রিদিমা মুখ তুলে তাকালো অদ্ভুত চোখে সমরের দিকে। তারপর হেসে বলল,
“ ও বখাটে নয় আমার পরিবারের পছন্দ করা পাত্র।’
“ হোয়াট!”
“ ওর নাম তৃপ্তীশ। আমার মায়ের পছন্দের পাত্র। কিন্তু আমার নয়। ঝামেলা টা এই নিয়েই। বাড়িতে রোজ এসব নিয়ে অশান্তি চলে। সেদিনও হয়েছিল। তাই নিয়ে ভীষণ টেন্সড ছিলাম আমি।”

সমর ফুস করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। সেদিন ছেলেটার ব্যাপারে খোঁজ খবর না নিয়ে গায়ে হাত তোলাটা একদমই উচিত হয় নি। কিন্তু সেই বা কি করতো। ছেলেটাই এমন ভাবে অভদ্রতা শুরু করে দিলো যে শেষমেশ.. ! সমর আর দাঁড়াতে চাইল না সেখানে। নিচে যাবার উদ্দেশ্যে সামনে পা বাড়িয়ে বলল,
“ ইটস ওকে। আসুন। নিচে সবাই অপেক্ষা করছে।”

“ আয়ায়া য়া য়া আ……!”
রিদিমার ভয়ার্ত কন্ঠের আর্তনাদ শুনে পেছনে ঘুরতেই মেয়েটা হাওয়ার বেগে ছুটে এসে আছড়ে পড়লো সমরের বুকে। কোথা থেকে কি হলো তা বুঝে ওঠার আগেই ব্যালেন্স হড়কে রিদিমা কে নিয়ে ঠাস্ করে পড়লো ছাদের মেঝেতে।

চলবে…

#তুই_যখন_ছুঁয়ে_দিলি_মন
কলমে: নিতু সরকার
পর্ব:১৬

লজ্জায় একশা হয়ে সমরের উপর থেকে উঠে দাঁড়ালো রিদিমা। সমর ও কোনো মতে নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো হাত পা ঝাড়তে ঝাড়তে। তারপর হুট করেই রেগে মেগে চেঁচিয়ে উঠলো,

“ হোয়াট দ্যা হেল! পাগল নাকি আপনি?”

লজ্জায় অধোবদন হয়ে হাঁসফাঁস করে উঠলো রিদিমা। অপরাধী কণ্ঠে বিনয় ঢেলে বলল,
“ আমি ভীষণ ভাবে দুঃখিত মিস্টার সমর। আসলে, কি একটা যেন হুট করে আমার কাঁধে এসে পড়েছিল। তাই আমি ভয় পেয়ে ওভাবে..! প্লীজ দয়া করে ক্ষমা করবেন। আমি ইচ্ছে করে এসব করি নি।”

রিদিমা আর দাঁড়ালো না। দুহাতে শাড়ি খামচে ছুটে পালিয়ে গেল সেখান থেকে। মেয়েটা যে মারাত্মক ভাবে লজ্জা পেয়েছে তা বুঝতে পারলো সমর। তাইতো তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আটকে রইলো মেয়েটার ছুটে যাওয়ার দিকে।
কি এক বাজে অবস্থা! তাদের যখনই দেখা হয় তখনই একটা না একটা বাজে পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। সমর দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। বিরক্তিতে তেতো হয়ে উঠলো মুখ। মনে হলো একগ্লাস নিম পাতার রস কেউ জোর করে খাইয়ে দিয়েছে ওকে। এটা যেন এক অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে মনে হচ্ছে। যখনই তারা পরস্পরের কাছাকাছি আসে তখনই কোনো না কোনো অঘটন ঘটে যায়। পরিস্থিতি এমন একটা জায়গায় গিয়ে দাঁড়ায় যা বলে বোঝানো সম্ভব হয় না।
সমর মাথার চুল গুলো খামচে টেনে ধরলো। রাগের চোটে চশমা খুলে পা ছুঁড়ে লাথি মারলো অদৃশ্য এক বস্তুতে। দাঁতে দাঁত চিবিয়ে চ্যাহ করে কিছু দেশীয় গালি ছুঁড়তে ছুঁড়তে নেমে এলো নিচে। মায়ের প্রেশারের ঔষধ টা নিতে হবে। ছেলের বোধ হয় এতক্ষণে খাওয়া শেষ। নিশ্চয়ই ঘুমোবে বলে বায়না ধরেছে। সমর ব্যস্ত পায়ে ছুটে গেল গাড়ির দিকে। যেতে যেতে নিজেকে পুনরায় সামলালো। বোঝালো; ফেলে আসা অতীত কে গুরুত্ব দেওয়া একপ্রকার বোকামি। তাতে বর্তমান আর ভবিষ্যত উভয়েই ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

মায়ের শরীর খারাপের বাহানা দিয়ে কোন মতে সবাই কে ম্যানেজ করে তক্ষুনি বাড়ি ফিরে এলো রিদিমা। অস্বস্তি আর বিরক্তির চোটে ভালো করে দুটো খেতেও পারলো না বেচারী। কপিল ওকে বাইকে করে পৌঁছে দিয়ে গেল। সবে মাত্র কাপড় পালটে কানের দুল খুলছে রিদিমা ঠিক তখনই দরজায় টোকা পড়লো। হাতের দুল জোড়া ড্রেসিং টেবিলে রেখে দরজা খুলতেই অবাক হয়ে গেল রিদিমা। পরমা ঘরে ঢুকে কোন রকম নেতিবাচক অভিব্যক্তি ছাড়াই বড় শান্ত সুরে বলল,
“ কি করছিস বনু?”

রিদিমা আচমকাই চমকে উঠলো। দিদিকে দেখে যতোটা না অবাক হলো তার চেয়ে বেশি বিস্মিত হলো তার স্বাভাবিক কন্ঠের বলা কথা গুলো শুনে। ও জানতো না পরমা আজ বাড়িতে এসেছে। আসলে না জানাটাই স্বাভাবিক। সেই সকালে বেরিয়ে সবে ফিরেছে সে। তাছাড়া আজকাল বাড়িতে বাবার সাথে ছাড়া আর কারো সাথে তেমন একটা কথা হয় না তার। কেউ ওর সাথে কথা বলে না। বলতে গেলে সেই ঘটনার পর থেকে সবাই যতোটা পারে ওকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। রিদিমাকে ওভাবে হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে পরমার খুব খারাপ লাগলো। আসলে খারাপ লাগাটা আজকের নতুন নয়। যেদিন গায়ে হাত তুলেছিল সেদিন থেকেই খারাপ লাগা টা শুরু হয়েছিল। কিন্তু বাড়ির পরিস্থিতির কারণে বোনটার কাছে একবারও আসা হয় নি। তাছাড়া মায়ের অসুস্থতা দেখে ভীষণ ভয়ও পেয়েছিল সে। তাই রাগ টা সামলে রাখতে পারে নি সেদিন। আরমায়ের দেখাশুনা করতে করতে এ কদিনে একবারও আসা হয় নি তার কাছে। রিদিমাকে ওভাবে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,
“ কি রে জবাব দিচ্ছিস না যে? রাগ করেছিস আমার উপর! দেখ বনু, সেদিনের ওই ব্যবহারের জন্য যদি তুই রাগ করে থাকিস তবে আমি মোটেও তোর কাছে ক্ষমা চাইবো না। কারণ, মায়ের শরীর খারাপ থেকে শুরু করে আমার শ্বশুর বাড়িতে হওয়া এক একটা অশান্তির সব চেয়ে বড় কারন টা যে তুই সেটা তুইও ভালো করেই জানিস। তাই..”

“ আমি তৃপ্তীশ কে বিয়ে করতে রাজি।”
বলেই পেছন ঘুরে দাঁড়ালো রিদিমা। চোখ দুটো জ্বলে উঠলো বুক ফাটা কষ্টে। পরমা যেন শুনতে পায় নি ঠিক এমন ভাবে বলল,
“ কিকিকি কি বললি তুই, আরেক বার বল!”

গলা বেয়ে উগরে আসা কষ্ট টাকে গিলে নিয়ে রিদিমা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো পরমার দিকে। নিঃশব্দে বড় করে নিঃশ্বাস টেনে বলল,
“ বললাম আমি তৃপ্তীশ কে বিয়ে করতে রাজি। আমার আর কোন অমত নেই তোদের পছন্দের পাত্র কে বিয়ে করতে।”

পরমা যেন খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল রিদিমার স্বীকারোক্তি শুনে। তবুও দাম্ভিক মুখটায় ক্ষোভের আভা ছড়িয়ে বলল,
“ তোর কি মনে হয়, তোর অমত নেই বলে কি তাদের অমত নেই নাকি! তাছাড়া আমরা কোন মুখে ভাঙা সম্বন্ধ জোড়া লাগাতে যাবো বলতো? সেই জায়গা কি রেখেছিস তুই? যাগ্গে, বাদ দে এসব। তুই তোর জায়গায় ঠিক আর আমরা সবাই ভুল মেনেই তো নিয়েছি। শুধু মাত্র একটাই অনুরোধ, এবার আর এমন কিছু করিস না যাতে মা আবার অসুস্থ হয়ে যায়। জানিসই তো, ডাক্তার বার বার করে বলে দিয়েছে এবার যদি আঘাত পায় তাহলে বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে মায়ের।”

পরমা আস্তে ধীরে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। রিদিমা ওভাবেই ধপ করে বসে পড়লো ফ্লোরে। আস্তে ধীরে মাথাটা এলিয়ে দিলো বিছানায়। তারপর একসময় চোখের কোণ ভরে গড়িয়ে পড়ল উষ্ণ অশ্রুর ধারারা। এ অশ্রু আত্ম বিসর্জনের, এক নির্মম বাস্তবতার সঙ্গে একটু একটু করে মিশে শেষ যাওয়ার। মানুষ যখন নিজের সাথে লড়াই করতে করতে সংযম হারিয়ে ফেলে, তখন সে এতটাই ভঙ্গুর হয়ে যায় যে নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও নীরবে চুমুক দেয় বিষের পেয়ালায়।

ওভাবেই কান্না গুলোকে সঙ্গী করে রিদিমা একসময় পাড়ি জমালো ঘুমের ঠিকানায়। মনের সেই চিরন্তন ধুলো পড়া কোনটায় বড় অযত্নে পড়ে রইলো তার ক্লান্ত হৃদয়ের অব্যক্ত বোঝাপড়া গুলো। ডানা মেলে আকাশে উড়ে বেড়ানোর স্বপ্ন গুলো। আর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সেই সীমাহীন আকাঙ্ক্ষা গুলো।
____

“ শুনলাম নাকি তুই তৃপ্তীশ কে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিস?”

সকাল সকাল বসার ঘরে সুতপা কে দেখে পা জোড়া জমে গেল রিদিমার। কাল পরমার কথা গুলো শুনে একবারও ভাবনায় আসে নি এতো তাড়াতাড়ি তাকে সবার সামনে জবাব দিহি করতে হবে। সুতপা রিদিমার দিকে তেরছা চোখে তাকিয়ে আবারো প্রশ্ন ছুড়লো,
“ কি রে মুখ বন্ধ করে ওভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”

রিদিমাকে তখনও চুপ দেখে মনিকা তেঁতে উঠলো।
“ দোষ টা আসলে আমারই। বেয়াদপ জন্ম দিয়েছি যে।”

মায়ের বিষাক্ত কথাটা যেন আবারো তীক্ষ্ণ সুচের মতো করে ঢুকে গেল রিদিমার হৃদয় এফোঁড় ওফোঁড় করে। সাথে সাথে অস্পষ্ট এক শুকনো ঢোক গিললো মেয়েটা। সুতপা মনিকার হাতে হাত রেখে চোখে ইশারা করে থামতে বলল। রিদিমার দিকে এক পলক তাকিয়ে হতাশার সুরে বলল,
“ কাল ছেলেটা অভয়ের সাথে দেখা করতে এসেছিল বাড়িতে। এতো অমায়িক ছেলেটা কি আর বলবো তোকে। এতো এতো জঘন্য কাহিনী হয়ে যাওয়ার পরও কি স্বাভাবিক ভাবে কথা বলল আমার সাথে। আমি তো আগ বাড়িয়েই বললাম বাবা মনে কোনো রাগ রেখো না। আসলে মেয়েটা অবুঝ। তাছাড়া বাড়ির ছোট তো তাই একটু অমন জেদি। তা শুনে কি বলল জানিস। আন্টি সেদিনের ঘটনায় রিদিমার আসলেই কোনো দোষ নেই। আমিই অজান্তেই বেয়াদপি করে ফেলেছিলাম ওর সাথে। ভাব, কতো ভালো ছেলে।”

মনিকা একথা শুনে হতাশ হয়ে পড়লো। তার মনের কষ্ট গুলো জ্বলজ্বল করে ফুটে উঠলো তার চেহারাতে। সুতপা মনিকাকে আরেকটু জ্বালাতে বললো,
“ জানিস আমাদের টুকু আছে না। শুনলাম ওর সাথে নাকি বিয়ের কথা বার্তা শুরু হয়েছে।”

মনিকা যেন এই খবরে একদম ভেঙেচুরে গুড়িয়ে একাকার হয়ে গেল। বিস্ফারিত চোখে চেয়ে “ কিহ্!” বলেই জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো। পরমা আর রিদিমা মায়ের অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে ছুটে এলো কাছে। সুতপা ও যারপরনাই ভয়ে শিউরে উঠলো মনে মনে। ডাক্তার বার বার করে বলে দিয়েছিল পেশেন্ট কে যেন বিন্দু মাত্রও স্ট্রেস না দেওয়া হয়।

“ ওমা! তুমি শান্ত হও প্লীজ। ওমা, দয়া করে শান্ত হও।”

রিদিমা পরমা দুবোন মায়ের বুকে পিঠে হাত ঘষতে ঘষতে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। মনিকা মেয়েদের কান্না দেখে কোনোমতে নিজেকে সামলে নিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে এলো। সুতপা বোন কে স্বাভাবিক হতে দেখে মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেও তেজ দেখাতে ছাড়লো না।

“ সব তোর জন্য হয়েছে। এই সব কিছুর জন্য দায়ী একমাত্র তুই। আজ আমার বোন টার যদি কিছু হয়ে যায়, তার জন্য কিন্তু কোনোদিন তোকে ক্ষমা করবো না আমি। এ কথা মনে রাখিস তুই সুনু।”

“ কি হচ্ছে টা কি এখানে?”

বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে বাড়িতে ঢুকতেই কথা গুলো কানে এসেছে তপন বাবুর। বড় শালী যে নিজের সংসার বাদ দিয়ে বোনের সংসার নিয়ে বরাবরই একটু বেশি আগ্রহী সেটা তার চেয়ে বেশি বোধ হয় আর কেউ জানে না। এর আগেও এই মহিলার জন্য তার সংসারে অনেক অশান্তি হয়েছে। দিনের পর দিন ঝগড়া হয়ে কথা বন্ধ হয়েছে দুজনের। তবুও এই তৃতীয় ব্যক্তির উপস্থিতি নস্যাৎ করতে পারেন নি তিনি। এনিয়ে মনিকা কে হাজার বার বারণ করা সত্ত্বেও সে স্বামীর কথায় কর্ণপাত করে নি। বরং উল্টে আমার বাপের বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে একটা কথাও বলবে না বলে বার বার চুপ করিয়ে দিয়েছে তাকে। যাইহোক, কথা গুলো শুনে তপন বাবু বড়ো বড়ো পা ফেলে ভেতরে ঢুকে এগিয়ে এলেন কাছে। সবার মুখের দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বলে উঠলেন,
“ আমি বলেছি না, এ বিষয়ে বাড়িতে আর নতুন করে কোনো রকম আলোচনা হবে না। তাহলে.!
“ বাবাহ..!”

মেয়ের জমাট বাঁধা কন্ঠের ডাক শুনে চমকে উঠলেন তপন বাবু। তার পিতৃ হৃদয়টা ছারখার হয়ে গেল মেয়েটার চোখে টলমলে জল দেখে। হাজার টনের ওজন সমান কষ্ট টাকে কোনোমতে গিলে রিদিমা বলল,
“ বাবা, আমি তোমাকে আগেই জানিয়েছি তৃপ্তীশ কে বিয়ে করতে আমার আর কোন আপত্তি নেই। এ ছাড়াও সেদনের ঘটনার জন্য আমি মন থেকে ক্ষমা চাইছি। তোমরা চাইলে তৃপ্তীশ এর পা ধরেও ক্ষমা চাইবো। প্লীজ, এ নিয়ে আর কথা বাড়িও না।”

রিদিমা মায়ের হাত দুটো মুঠোয় চেপে ধরে বলল,
“ মা প্লীজ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি কথা দিচ্ছি তুমি যাকে যে অবস্থায় বলবে আমি বিনা সংকোচে বিনা বাঁধায় তাকে বিয়ে করে নেবো। তবুও তুমি প্লীজ স্ট্রেস নিও না।”

মনিকা মনে মনে খুশি হলেও মুখে প্রকাশ করলো না। শুধু মাত্র এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মেয়ের মুখের দিকে।

চলবে…