তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব-৩৫

0
704

#তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা
#পর্ব:35
#Suraiya_Aayat

নূর আয়াশের পাশে শুয়ে আছে আর আয়াশ ও অন্য দিকে মুখ করে শুয়ে আছে দুজন কেউ কারোর সাথে কোন কথা বলছেনা একপ্রকার নিরবতা চলছে দুজনের মাঝে ৷ নূর শুয়ে আছে ঠিকই কিন্তু ঘুম আসছে না আর মাঝে রয়েছে একরাশ চঞ্চলতা ৷ আয়াশ নূরের চঞ্চলতা বুঝতে পেরে নূরকে বলে উঠলো
” আফু সোনা কোন সমস্যা ?”
নূর আয়াশের দিকে ঘুরে একবার তাকিয়ে তারপর আবার মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে শুয়ে পড়লো , আয়াশ একটুও অবাক হলো না কারন ও বুঝতে পারছে নূরের মনের মাঝে নিশ্চিত কোন না কোন দ্বন্দ চলছে যার দরুন নূরের এই ছটফটানি ৷ আয়াশ নূরের অসস্তি কাটাতে আর বিরক্তির মাত্রা কমাতে বলে উঠলো
” আমি তোমাকে একটা কাজ দিয়েছিলাম আফু সোনা তা কি তোমার মনে আছে ?”
নূর এবার ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো , এতখন এই বিষয়েই কথা বলতে চাইছিলো ও কিন্তু কিভাবে কথাটা বলবে বুঝতে পারছিলো না ওর মাঝে এক অদ্ভুত অসস্তি কাজ করছিলো ৷ নূর খানিকটা দ্বিধা নিয়ে মাথা নাড়িয়ে বলল
” হমম মনে আছে ৷”
আয়াশ মুচকি হাসলো তারপর নুরের দিকে তাকিয়ে বলল
” আমি ডিটেলসে তোমার কাছ থেকে সব শুনতে চাই আই মিন তোমার যাদের যাদের সাথে পরিচয় হয়েছে তাদেরকে কেমন লাগলো আর এতখন অবধি কি কি হয়েছে সবটুকু ৷”
নূর একটা সস্তির নিশ্বাস নিয়ে বলল
” আমি যতদুর জানি আর আপনি যতদূর বলেছেন তার ভিত্তিতে বলছি আপনার তো 4 টে মামি তার মধ্যে আপনার বড়ো মামি সে কি না অসুস্থ তাই তাকে এখনো দেখা হয়ে ওঠেনি আর বাকি রইলো আপনার তিন মামী, তারা অত্যন্ত মিশুকে প্রকৃতির কিন্তু তিনজেনর ব্যাবহার সমান নয় , মানে এই যেমন দেখুন আপনার মেজো মামি উনি একটূ চুপচাপ ধরনের প্রয়োজন ছাড়া কথা বলতে পছন্দ করেন না এমন , তারপর আপনার সেঝ মামি উনি মিশুকে হলেও একটু কর্তী ধরনের ভাব আছে ওনার মধ্যে যেমন ধরুন উনি সকলের ওপর নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে পছন্দ করেন এবং তিনি সফল ও হন এবং কাউকে খুব সহজে দমিয়ে ফেলার ক্ষমতা ওনার মাঝে আছে , একপপ্রকার আদর্শ জমিদার বাড়ির বউ কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওনার ব্যাবহার গুলো একটু নরম শরম হওয়া উচিত ৷ তারপর এলো আপনার ছোট মামি, তিনি খুবই মিশুকে আর প্রানোচ্ছল এবং সহজে আপন করার ক্ষমতা ওনার আছে
কিন্তু যেহেতু উনি এই বাড়ির ছোট বউ সেই কারনে হলেও উনি নিজেকে খানিকটা সংযত করে রাখেন ৷ তারপর বাড়ির বউদের কথা যদি বলি সবাই খুবই ভলো, আমাকে অনেক আপন করে নিয়েছে কিন্তু আলাদ করে সবার সাথে কথা বলার সুযোগ হয়ে ওঠেনি কিন্তু যার সাথে খানিকটা হলেও আমার সময় কেটেছে তিনি হলে সেঝো মামীর বড়ো বউ যিনি খুবই সচেতন এবং কঠোর, উনিও হয়তো সেঝো মামির ধারা পেতে চাইছেন ৷”

কথাটা বলে নূর থেমে গেল ৷ আয়াশ নূরের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল
” বেশ ভালোই নিজের দায়িত্ব পালন করছো দেখছি, তা প্রমোশন হিসাবে কি চাউ , আদর করি চলবে ?”

নূর খানিকটা লজ্জা পেলো আয়াশের কথা শুনে কিন্তু তা চোখে মুখে প্রকাশ করলো না নাহলে আয়াশ এক্ষুনি শুরু হয়ে যাবে ৷ নূর আয়াশের কথাতে কোনরকম রেসপন্স না করে বলল
” সব চাইতে একটা বিষয়ে অবাক হয়েছি আমি , কি জানেন ?”
আয়াশ নূরকে কাছে টেনে বলল
” তুমি না বললে জানবো কি করে আফু সোনা বলোতো ৷”
নূর ওর কোমর থেকে আয়াশের হাতটা ছড়ানোর চেষ্টা করে বলল
” ছাড়ুন না, সবসময় এতো রোমান্টিকতা কোথা থেকে আসে আপনার , আমাকে ছাড়ুন নাহলে কিন্তু বলবো না কিছু ৷”

আয়াশ আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল
” না বললে না বলবে কিন্তু আমি ছাড়বো না এটা জেনে রেখো ৷”
নূর বিরক্ত হয়ে বলল
” বুঝেছি আপনি বড্ড ঘাড় ত্যাড়া,যাই হোক ৷ এই বাসাতে একটা ঘর আছে যেখানে একজন মনাসিক রোগী থাকে তার কন্ঠস্বর শুনে মহিলার কন্ঠ বলে মনে হলো কিন্তু তাকে আমি দেখিনি কেবল তার ঘরের বাইরে থেকে তার গলার আওয়াজ শুনেছি এবং তাকে একটা বউ খাবার দিতে আসে যাকে কিনা আমি আগে দেখিনি মানে বাড়ির সব বউগুলোর সাথে দেখিনি, হয়তো মেয়েটা বাড়ির কাজের লোক কিন্তু পোশাক দেখে তা মনে হয়না ৷ ঘরটাতে কে থাকে আমি জানার জন্য চেষ্টা করলাম কিন্তু তার আগেই সেঝো মামীর বড়ো বউ এলেন এবং খানিকটা ধমকের সুরে আমাকে সতর্ক করেছেন যে আমি যেন সেই ঘরে দ্বিতীয়বার আর না যাই ৷ তখন আমি তার ব্যাবহারে বুঝলাম যে অনেকটা সেঝো মামির মতোই , খানিকটা রুগ্ন ৷”
কথাটা বলে নূর লম্বা একটা নিশ্বাস নিলো ৷ আয়াশ তখনই ধপ করে নূরকে বিছানায় ফেলে নূরের ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ালো আর নূরকে বুঝতে দিলো না যে নূরের বলা কথাগুলো ওর কি পরিমান উপকার বা অপকারে লেগেছে বা ওকে কতোটা সাহায্য করেছে , কারন নুরকে জানানোর সঠিক সময় এখনো আসেনি ৷ আচমকায় এমন কিছু হওয়াতে নূর বেশ চমকালো আর আয়াশের চুলের মুঠি ধরে আছে ও , আয়াশ ছাড়ছে না হয়তো মনে মনে নূর ও আয়াশকে ছড়তে চাইনা ৷ কিছুখন পর আয়াশ নূরের থেকে সরে আসতেই আয়াশ বললো
” তোমাকে অক্সিজেন দিলাম , দেখলাম তুমি হাপাচ্ছো ৷”
নূর রাগী চোখে আয়াশের দিকে তাকিয়ে বলল
” এটা কোন ওয়ে?”

আয়াশ মুচকি হেসে বলল
” শেখার কোন বয়স নেই আফু সোনা , এগুলো হলে আমার ডেভলি টাইপ এর ট্রিকস, শিখে নাও পরে কাজে লাগবে ৷”
কথাটা বলে আয়াশ নূরকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো ৷ নূর ঠোঁটটা মুছে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো ‌৷

___

গায়ে একটা সবুজ রঙের পাঞ্জবী পরে আছে আয়াশ, চুলে জেল দিয়ে চুলটা সেট করে আর গায়ে একটা ফ্রেঞ্চ পারফিউম লাগাচ্ছে আয়াশ, পাশে নূর চুল আচড়াতে আচড়াতে আয়াশের দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে ৷ আয়াশের এত রঙ্গ ভঙ্গিমায় সাজতে দেখে নূরের শরীর তিরতির করে জ্বলে উঠলো তারপর চিরুনিটা ফেলে দিয়ে আয়াশের কাছে দিয়ে পাঞ্জাবীটা ধরে বললো
” এতো পারফিউম লাগালেন কেন হ্যাঁ? মেয়ে পটানোর ধান্দা? পরকীয়া করবেন? বংশের ধারা বজায় রাখবেন ? আমিতে চলছে না বুঝি ৷”

আয়াশ ওর পাঞ্জাবীর কলার থেকে নূরের হাতটা সরিয়ে বলল
” আফু সোনা নেক্সট টাইম এভাবে হূঠ করে আমার জামার কলার ধরে কথা বলার সাহস দেখাবেনা, আই হেট ইট ৷ আর কাজে যাচ্ছি একটা অযথা কথা বাড়িওনা ৷”
কথাটা বলে আয়াশ বেরিয়ে গেল ৷ আয়াশের এমন হঠাৎ পরিবর্তে নূর থ হয়ে গেল, কি বলবে বুঝছে না ৷ আসলেই মানুষটাকে বুঝে ওঠা মুশকিল ৷ এই ভালো তো এই খারাপ ৷ নূরের মনটা খারাপ হয়ে গেল ৷ সন্ধ্য৷ নেমেছে অনেক আগেই আর এখন আয়াশ কোথায় যাবে নূর জানে না আর এই গ্রামে ভর সন্ধ্যায় যাওয়ার মতো জায়গায় বা কোথায় আছে সেটাই নূর বুঝতে পারছে না ৷ কথাটা ভেবে চুলটা হাত খোটা করে মাথায় ঘোমটা টেনে ঘর থেকে বেরোতেই একটা মেয়ে বেশ জোরে জোরে দৌড়াতে দৗড়াতে কোথায় যেন চলে গেল ৷ নুর বেশ অবাক হলো, কারন এটা তো সেই মেয়েটা যে দুপুর বেলা ওই ঘরটাতে খাবার নিয়ে গিয়ে ছিলো ৷ মেয়েটার দৌড়ানোর গতি বেশ, নুর ভাবলো যে ওর পিছু পিছু যাবে যে মেয়েটা কোথায় যাচ্ছে, তাই মেয়েটার পিছু পিছু পা চালালো কিন্তু এভাবে পা চালালেও ধরতে পরাবে না তাই নূর ও মেয়েটার পিছু পিছু ছুটলো ৷

____

উকিল সাহেব বসে আছেন বাড়ির বড়ো হল ঘরে , তার সামনে বসে আছে আয়াশ আর ওর মামা ৷ ওর মামা গাল থেকে হাতটা নামিয়ে উকিলকে উদ্দেশ্য করে বলল
” আমি আমার বাবার একমাত্র সন্তান আর আমার বোন ছিলো যে মারা গেছে প্রায় 8 বছর হলো তাই তার বা তার পরিবারের কোন দাবিদাবা আছে কিনা আমি জানতে চাই ৷”

কথাটা বলে আয়াশের দিকে তাকিয়ে বললেন
” তোমার কি কিছু দাবি দাওয়া আছে?’

আয়াশ মুচকি হেসে গাঢ় কন্ঠে বলল
” লুকিয়ে শিকার করে শেয়াল, রাতের অন্ধকারে নিস্তব্ধে আর বাঘ কখনো গোপনে শিকার করে না, সে বীরের মতোই সকলের সামনে শিকার করে , আর আমি সেই প্রকার কাপুরুষ নয় যে কি অন্যর সম্পত্তি আত্মসাৎ করার চেষ্টা করবো ৷ তাই আমার কোন দবিদাওয়া নেই ৷”

আয়াশের মামা তার হাতটা মুঠিবদ্ধ করলেন তারপর বললেন
” খালি হাতে এসেছো তাহলে খালি হাতেই ফিরতে হবে এটা মনে রেখো ৷”

আয়াশ মুচকি হাসলো তারপর বলল
” সবসময় যে অন্যর চাওয়া পাওয়াকে গুরুত্ব দিতে হবে তা কোথাও লেখা নেই ৷ খালি হাতে এসেছি ঠিকই কিন্তু খালি হাতে ফিরবো নাকি হাত ভরে ফিরবো কে বলতে পারে !”

ওনাদের দুজনের কথা শুনে উকিল ঘাবড়ে গিয়ে বললেন
” কোন সমস্যা ?”

আয়াশ নাহ বলে সেখান থেকে উঠে চলে এলো ৷
আয়াশের মামু আযয়াশের যাওয়ার পানে চেয়ে রইলেন ৷

#চলবে,,,, Suraiya Aayat Ariya