#তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা
#পর্ব:40
#Suraiya_Aayat
আয়াশের মামাকে জেলে নিয়ে যাওয়া হলো ৷ আয়াশের মামী হুইল চেয়ারে বসে আছেন তার মুখ দেখে মনের অবস্থা বোঝার উপায় নেয় ৷আয়াশের মা এবার হামলে পড়লো আয়াশের বুকে, ছেলেকে কাছে পেয়ে হাউহাউ করে কেঁদে উঠলেন ৷ আয়াশ ওর মা কে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে ৷ কৌসরের বউ কৌসরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে ,আজ কোন বাঁধা বিপত্তি নেই আর৷ আয়াশ প্রিয়ন্তির কপালে চুমু দিয়ে বলল
” Did u miss me?”
আয়াশের মা বেশ শব্দ করে কেঁদে উঠে আয়াশের দিকে তাকালো ৷ তারপর আবার আয়াশের বুকে হামলে পড়লো ৷ আয়াশ ওর মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ৷উনি আবেগে আত্মহারা ৷
____
” কোথায় পালাচ্ছেন আপনি?”
পিছন থেকে খানিকটা গম্ভীর স্বরে উঠলো প্রিয়ন্তি মোস্তাফা ৷ হঠাৎ কোন মেয়েলি কন্ঠ শুনেই থেমে গেলেন মেজ মামী ৷ ওনার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে এসেছে পিছন ঘুরে দেখার সাহস পাচ্ছেন না ৷ তারপর কোনক্রমে অনেক সাহসের সাথে ঘুরে বললেন
” কি হয়েছে?”
পিছনে তাকাতেই খানিকটা চমকে গেলেন উনি ৷ পিছনে আয়াশ সহ প্রিয়ন্তি মুস্তাফা,বড়ো বউ, কৌসর সবাই দাঁড়িয়ে আছে আর তাদের পিছনে রয়েছে পুলিশ ৷ সবাইকে একসাথে থেকে উনি অনেক বেশি ঘাবড়ে গেলেন ,আমতা আমতা করে বললেন
” কি হয়েছে?”
আয়াশ মুচকি হেসে বলল
” কোথায় যাচ্ছো মামী এতো ব্যাস্ত হয়ে ৷”
উনি আয়াশের দিকে বেশ রুগ্ন কন্ঠে তাকিয়ে বললেন
” এটা কেমন কথা? আর আমি কোথায় ই বা যাবো?”
আয়াশ এবার ওনার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল
” না মানে তোমার যাওয়ার তো আবার অনেক জায়গা আছে তাই আরকি ৷”
উনি এবার রেগে বললেন
” আর কিছু বলবে তোমরা? নাকি আমি এখন যেতে পারি ? ”
হঠাৎ প্রিয়ন্তি মোস্তফা বললেন
” ভাইয়া ওরফে তোমার স্বামী এতো বড়ো একটা কাজ করেছে তা তুমি কিছু জানতে না?”
উনি থতমত খেয়ে বললেন
” আমি কি করে জানবো এসব তাড়া উনি আমাকে কখনো এমন কোন কথায় বলেননি ৷”
আয়াশ বলে উঠলো
” ওহহ,,,তাই ! যাই হোক তা কোথায় যাচ্ছো শুনি?”
উনি ওনার শাড়ির আঁচলটা শক্ত অরে ধরে বললেন
” কোথাও না ৷”
তা এই বড়িতে টহলদারি করছো বুঝি ?”
উনি আরোও রেগে বললেন
” বুঝেছি তোমরা অকারনে আমাকে আটকে রেখেছো , আমি আসছি ৷”
কথাটা বলে উনি পা বাড়াতে গেলেই পুলিশ বলে উঠলো
” ইউ আর আন্ডার এরেস্ট, আর এক পা ও নড়াবেন না আপনি ৷”
কথাটা শুনতেই ওনার বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো, পিছন ঘুরের বলল
” আমি আছু করিনি তাই আমাকে এরেস্ট করার কোন মানে হয় না ৷”
কথাটা বলে দ্রুত গতিতে পা বাড়াতে গেলেই দুজন মহিলা কনস্টেবল ওনাকে আটক করলেন ৷ উনি নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রান চেষ্টা করছেন ৷ ছাড়াতে না পেরে বললেন
” এটা কেমন, আর আপনারা জানেন আপনারা কাকে আটক করেছেন আর এর শাস্তি হিসাবে আপনাদের কি কি হতে পারে ৷”
কৌসর বলে উঠলো
” চোরের বউয়ের বড়ো গলা ৷ তুমি কি অন্যায় করেছো তা কি তুমি বুঝতে পারছো না?’
উনি খানিকটা চেঁচিয়ে বললেন
” কৌসর,মুখ সামলে কথা বলো ,ভুলে যেওনা আমি তোমার থেকে বয়সে অনেক বড়ো ৷”
কৌসরকে উনি ওনার কথাতে দমিয়ে দিতে পারলেও আয়াশকে পারলেন না, আয়াশ বলে উঠলো
” আপনি যে এতোদিন ধরে বড়ো মামীকে ভুল ওষুধ খাবারের সাথে মিশিয়ে দিতেন , সেটা কি ঠিক? মুরব্বিদের কাছ থেকে আমরা এবার থেকে কি এগুলো শিখবো যে কি করে কাউকে মেরে ফেলতে হয় ৷”
কথাটা শুনতেই ওনার মুখে আতঙ্কের ছাপ দেখা গেল তবুও উনি হার স্বীকার করলেন না, রেগে গিয়ে বললেন
” মিথ্যা দোষারোপ করা হচ্ছে অফিসার আমার প্রতি , বিশ্বাস করুন আমি কিছু করিনি, সে নিজে ইচ্ছা করে মরার নাটক করে আমাকে ফাসাতে চেয়েছে ৷”
পুলিশ বলে উঠলো
” ওনার পেট থেকে পয়জন পাওয়া গেছে, এতদিন ধরে পয়জন পেটে জমতে জমতে উনি মারন রোগে আক্রান্ত ৷ আর আপনাকে সেই অপরাধে কারাদন্ড দেওয়া হবে ৷ ওনাকে নিয়ে যান ৷”
কথাটা বলার শেষ হতে না হতেই হঠাৎ সেঝ মামী হেসে উঠলেন উচ্চস্বরে তারপর বললেন
” বাহ, এটাই তো আমি চেয়েছিলাম যে সে মারা যাক, অবশেষে আমার ইচ্ছা পূরন হলো ৷ কেবল ওর জন্য আমি আমার সমস্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছিলাম , সব ৷
ও না থাকলে সব আমার, সব আমার ৷
খানিকটা পাগলামো ভঙ্গিতে কথাগুলো বললেই পুলিশ আবার হুকুম দিলেন
” ওনাকে নিয়ে যান ৷”
ওনাকে নিয়ে যাওয়া হলো ৷ আয়াশ মুচকি হেসে বলল
“ধন্যবাদ অফিসার আমাদের সাথে কোঅপারেট করার জন্য ৷”
পুলিশটাও মুচকি হেসে বলল
” আপনি সত্যিই জিনিয়াস মিঃ আয়াশ,প্রাউড অফ ইউ ৷ আপনি এতো সুন্দর করে ছক না কষলে বোধহয় এতো কিছু পসিবল হতো না ৷ ধন্যবাদ ৷”
কথাটা বলে অফিসার চলে গেলেন ৷ আয়াশ ওর আম্মুর দিকে তাকিয়ে বলল
” আম্মু খুশি তো তুমি ?”
আয়াশের মা আয়াশের বুকে মাথা রেখে কেঁদে দিলো ৷ আয়াশ ওর মায়ের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল
” বাবার সাথে দেখা করবে না তুমি ? বাবা বাইরে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে ৷”
উনি ওনার চোখের জলটা মুছে নিরব হয়ে রইলেন , কিছু বললেন না ৷ আয়াশ ও আর বেশি কথা বাড়ালো না, চুপ করে রইলো হয়তো ওনার মনের অবস্থাটা বুজছে ৷
___
নূর শুয়ে আছে, পাশে বসে আছে আয়াশ ৷ বেশ কিছুখন আগে নুরের একটু জ্ঞান ফিরেছিলো তারপর আবার ডক্টর ইনজেকশান দেওয়াই আবার কিছুখন ঘুমিয়ে ছিলো ৷ আয়াশের মা উনি নূরের জন্য খাবার আনতে গেছেন, আয়াশের বাবা আজকেও নিজেকে ঘর বন্দী করেছেন কিন্তু আজকের দিনে এমন ঘরবন্দির কারনটা সবার কাছেই অজানা ৷ হঠাৎ নূর খানিকটা নড়ে উঠতেই ইফা বলে উঠলো
“ভাইয়া ভাবীর জ্ঞান ফিরেছে ৷”
আয়াশ ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে পড়লো , নূর উঠে বসতে গেলেই আয়াশ ধমক দিলো
“এই মেয়ে বসো , উঠতে বলেছি তোমাকে ?”
নূর চমকে উঠলো হঠাৎ কঠিন স্বরের ধমক শুনে ৷ইফা বলে উঠলো
” কি শুরু করলে ভাইয়া, ভাবীর সবে জ্ঞান ফিরলো আর এখনই বকা ঝকা শুরু করে দিলে !”
আয়াশ ও ইফার ঠান্ডা ধমক শুনে বেশ শান্ত কন্ঠে বলল
” উঠবে না তুমি , যেমন ভাবে শুয়ে আছো তেমনভাবেই থাকো ৷”
ইফা খানিকটা মুচকি হেসে বলল
” ভাবী তোমার এখন খালি রেস্ট নেওয়ার সময় আর তুমি একদম ব্যাতিব্যাস্ত হবে না ৷”
নূর অবাক হয়ে বলল
” কেন ?”
আয়াশের মুখভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে কি নূর জানে না তবে ইফা মুচকি মুচকি হাসছে ৷”
#চলবে,,,,