তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব-৪১

0
934

#তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা
#পর্ব:41
#Suraiya_Aayat

আয়াশ ওখান থেকে উঠে চলে গেল,নূর কিছুই বুঝতে পারছে না এদিকে ইফাও কিছু বলছে না দেখে নূর খানিকটা উঠে বসার চেষ্টা করে বলল
” কি হয়েছে বলবে তো ইফা ? সবকিছু ঠিকঠাক?”

ইফা এখনও কিছু বলছে না , মূচকি হাসছে ,নূর কাহিনীর কিছুই বুঝতে পারছে না, আবার জিজ্ঞাসা করতে গেলেই আয়াশের মা রুমে আসলো ৷সুপের বাটিটা টেবিলে রেখে নূরের পাশে বসতেই নূর ওনার দিকে তাকালো, ক্রমে ক্রমে নূরের চোখ জোড়া ছোট হয়ে আসছে,হয়তো ওনাকে এখনও চিনতে পারেননি ৷ উনি নূরের দৃষ্টি লক্ষ করে বললেন
” পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো অনুভূতি কি জানিস নুর?”

নূর এখনো আগের ন্যায় ওনার দিকে তাকিয়ে আছে, ওনি কি বললেন সেটা হয়তো নূর গুরুত্ব দিয়ে দেখেনি তাই কিছু উত্তর দিলোনা ওনার দিকেই তাকিয়ে রইলো ৷ নূর কিছু বলছে না অথচ ওনার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেখে উনি বললেন
” কি রে বুঝলিনা ?”

নূর এবার হতবাক হয়ে মাথা নাড়িয়ে বলল
” আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না ৷”

উনি এবার খানিকটা উচ্চস্বরে হেসে উঠে বললেন
” আমি আয়াশের মা মানে তোর ও মা ৷ আর আমার প্রশ্নের উত্তর তো তুই দিলিনা তাই আমিই দিই কেমন? আমার প্রশ্নের উত্তর হলো , পৃথিবীর সবচেয়ে সুখানুভূতি হলো মা হওয়ার অনুভূতি মানে মাতৃত্ব ৷”

কথাটা শোনার সাথে সাথে নূর আয়াশের মাকে জাপটে জড়িয়ে ধরলো, আয়াশের মা অবাক হলেন না, এমনটাই স্বাভাবিক ৷ উনিও নূরকে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরলেন ৷ একপ্রকার শান্তি অনুভব করছেন ৷ ইফাও মুচকি হাসছে ‌ ৷ ঘড়ির কাটা বেশ কয়েকবার 12 র ঘর অতিক্রম করছে কিন্তু নূর এখনও আয়াশের মা কে ছাড়ছে না দেখে উনি হালকা সুরে বলে উঠলেন
” কি রে , কি হলো ? একেবারে চুপ হয়ে গেলি দেখছি ৷ কি বিশ্বাস করতে পারছিস না নাকি ?”

নূর ওনাকে জড়িয়ে ধরেই মাথা নাড়িয়ে বলল
” হমম আমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে তুমি আমার সামনে আছো ৷”

কথাটা শুনেই ওনার হাসির শব্দটা বেশ উচ্চ হলো ৷ পাশ থেকে ইফা বলে উঠলো
” ভাবী তোমাকে বলা হলো কি আর তুমি করছো কি ?”

নূর একটু লজ্জা পেলো, নিজের প্রেগনেন্সির কথাটা ওর কানে যায়নি এমনটা নয়, ও শুনেছে তবে সব কিছু একসাথে যেন বিষয়টা একটু অবিশ্বাস্য হয়ে উঠেছে ওর কাছে ৷
খানিকটা লজ্জা পাচ্ছে ও ,ভাবলেই কেমন আলাদায় একপ্রকার অনুভূতি হচ্ছে মনে ৷
আয়াশের মা নূরকে ওনার কাছ সরিয়ে নূরকে সামনে এনে বলল
” কি রে লজ্জা পাচ্ছিস ?
নূর মাথা নীচু করে লজ্জা পেয়ে বলল
” নাহ….৷”

উনি নূরের কপালে চুমু একে বলল
” শোন, এটা হলো পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র অনুভূতি হলো মাতৃত্বের অনুভূতি , এখন থেকে তুই ও কারোর অস্তিত্ব বহন করছিস তাই সবসময় নিজের খেয়াল রাখবি আর তার তোদের সেই ছোট্ট পরিবারের কথা ভাববি ৷”
নূর মাথা নীচু করে শুনছে সব ৷
নুরের লাজুক ভাব দেখে ইফা বলে উঠলো
” নাও আর লজ্জায় লাল হতে হবে না, আমরা তো আমরাই ৷”

নূর মাথা তুলে ইফার দিকে তাকাতে গেলেই আয়াশ রুমে ঢুকলো ৷ আয়াশ রুমে ঢুকতেই নূরের মুখটা আরও লজ্জায় লাল হয়ে গেল ৷আয়াশ নুরের দিকে একবার তাকিয়ে দেখলো,নূর ভীষনরকম লজ্জায় পড়ে গেছে ৷ আয়াশ এবার ওর দৃষ্টি সরিয়ে ওর মা কে বলল
” আম্মু ভাইয়াকে ফোন করেছিলাম, ভাইয়া টিকিট কেটেছে ,পরশু চলে আসবে ৷”

উনি আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে বললেন
” কতো বছর ছেলেটা কে দেখিনা, ভিডিও কলে আর চোখের জল আটকে রাখতে পারলাম না ৷ ”
আয়াশ ওর মায়ের কাধে হাত রেখে বলল
” আম্মু stop crying….ভাইয়া আসলে না হয় মন খুলে কেঁদো ৷ ”

উনি মুচকি হেসে বলল
” তা ওকে তুই ওই খুশির খবরটা দিয়েছিস?”

আয়াশ মুচকি হেসে বলল
” ইফা আগেই সব ভাইয়াকে জানিয়ে দিয়েছে ৷”

ইফা উৎসাহের সাথে বলল
” হমম ওনার সাথে যখন সকালে কথা হলো তখন তো ডক্টর ছিলো বাসায় তাই ওনাকে জানিয়ে দিয়েছিলাম ৷ আয়াশ খানিকখন ইফার দিকে তাকিয়ে রইলো তারপর ইফার থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল
” যাই হোক আমি ভাইয়াকে এয়ারপোর্ট থেকে পিক করতে যাবো ৷”

কথাটা বলে টেবিলের ওপর সুপটার দিকে তাকিয়ে বলল
” আম্মু এটা কি ঠান্ডা হয়ে গেছে?”

কথাটা শুনতেই প্রিয়ন্তি বলে উঠলেন
” নাহ ওটা ঠান্ডা হয়নি এখনও, আমি তো সবে গরম করে নিয়ে আসলাম এখনও খাওয়ানো হয়নি ৷”

কথাটা শুনে আয়াশ বলে উঠলো
” আচ্ছা ঠিক আছে ওটা এখানে থাক, আমি ওকে খাইয়ে দিচ্ছি ৷”

উনি মুচকি হেসে নূরের কপালে চুমু দিয়ে বেরিয়ে যেতে নিলেই নূর খানিকটা লজ্জা আর ভয়ের খাতিরে একটু থতমত হয়ে বলল
” তুমিও থাকো মামনি ৷”

উনি আয়াশের দিকে তাকিয়ে আবার বলে উঠলো
” আমার একটু কাজ আছে, তুই খেয়ে নে আমি আসছি, তাছাড়া আয়াশ তো আছে ৷ ইফা চল আমরা যায় ৷”

নূর আয়াশের দিকে তাকালো, মুখে দুষ্টুমির রেশ ৷ নূর আর কিছু বলতে পারলো না , মাথা নীচু করে বসে রইলো ৷
ইফা একটা হাসি দিয়ে বেরিয়ে যেতে নিলেই আয়াশ থামিয়ে বলে উঠলো
” ইফা শোন ৷”

ইফা পিছন ঘুরে বলল
” হমম ভাইয়া বলো ৷”

” ভাইয়ার সাথে তোর কথা হয় ?”

ইফা বেশ সাবলীল ভাবে বলল
” হ্যাঁ, ওনার সাথে তো রোজ ই কথা হয় ৷”

আয়াশ মাথা নাড়িয়ে বলল
” আচ্ছা তুই যা ৷”

কথাটা বলার সাথে সাথে ইফা চলে গেল ৷ নূর হয়তো আয়াশের কথার মানে বুঝতে পারলো ৷”

নূর চুপ করে আছে, তারপর আয়াশ নূরের সামনে বসলো ৷
নূর মাথা নীচু করে আছে দেখে আয়াশ ও মাথা ঝুকে নূরের দিকে তাকিয়ে বেশ সুরেলা কন্ঠে বলল
” আফু,,,,,সোনা ৷”

কন্ঠটা শুনতেই নূরের বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো ৷ গলা শুকিয়ে আসছে,মানুষটার অস্তিত্ব ও নিজের মাঝে বহন করছে এখন কি বলবে ও ৷

আয়াশ এবার ওর শার্টের একটা বোতাম খুলে নূরের দিকে এগিয়ে যেতেই নূর চমকে উঠে বলল
” কিইইই…জ্বিইইই বলুন ৷”
আয়াশ নূরের দিকে আরও খানিকটা এগিয়ে গিয়ে বলল
” ভয় পাচ্ছো ৷”

নূর একটু পিছিয়ে গেল, তারপর তুতলিয়ে বলল
” কই না তো ?”

আয়াশ দেখলো নূর ভয় পাচ্ছে তার কারনটাও জানে ৷ নূর হয়তো ভাবছে বেবিটার জন্য আয়াশ এখন কোন ঝামেলা করবে সেই ভয় পাচ্ছে নূর আর আয়াশ বুঝতে পারলো ,তাই নূরকে আরও খানিকটা ভয় দূখানোর জন্য বলল
” কি করেছো তুমি এটা ?”

ভয়ে নূর কুঁচকে গেল , আয়াশের দিকে তাকিয়ে বলল
” কি করেছি মানে?”

আয়াশ একটু গম্ভীর কন্ঠে বলল
” কি করেছো বুঝতে পারছো না নাকি বুঝতে চাইছো না কোনটা ?”

নূর এবার কেঁদে ফেলবে এমন , ভয় পেয়ে বলল
” আমি কিছু করিনি ৷”

আয়াশের হাসি পাচ্ছে খুব তবুও হাসি আটকে বলল
” তুমি না করলে তাহলে কে করেছে?”

নূর এবার ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো ৷ আয়াশ হো হো করে হেসে নূরকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলল
” আরে পাগলি, কাঁদছো কেন? আমি তো মজা করছিলাম ৷ তুমি কি জানো তুমি আমার জন্য ঠিক কতোটা হ্যাপিনেস বহন করছো?”
নূর চোখ মুছে বলল
” প্লিজ বাচ্চাটা নষ্ট করতে বলবেন না, আমি পারবো না ৷”

আয়াশ নূরকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল
” এসব কি কথা আফুসোনা ? আর কখনও এমন বলবেনা ৷”

নূর চুপটি করে রইলো আয়াশ নূরকে সরিয়ে নূরের ঠোঁটে আঙুল দিয়ে আলতো স্লাইড করে বলল
” আমার মন এখন অনেক কিছু চাইছে, অনেক কিছু করতে, অনেক কিছু বলতে ৷”

নূর লজ্জা পেয়ে বলল
” ধ্যাত ৷”

কথাটা বলে বিছানা থেকে নামতে গেলেই আয়াশ হাত ধরে নিলো
” সব সময় সব বাঁধা আমি মানতে পারবো না আফুসোনা, তাই আজ ও পারবো না ৷”
কাথাটা বলে হাত ধরে কাছে টেনে আনলো ৷ নূর আয়াশের চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস পাচ্ছে না, লজ্জায় আয়াশের বুকে মুখ লুকালো ৷

আয়াশের আর কি….কেল্লাফতে😉

#চলবে,,,