তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব-৪৮

0
951

#তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা
#পর্ব:48
#Suraiya_Aayat

“ক্ষমা চাইছো কেন আজ তুমি আমার কাছে? আদতেও কি তুমি অনুতপ্ত নাকি আবার ছলনা করছো কোনটা ঠিক বলতে পারো?”

আরাফাত সাহেব অনুতপ্ত হওয়ার সুরে বললেন
“যা খুশি বলবে বলো কিন্তু আজ আমি কোন অভিযোগ করবো না কারন আমি জানি যে দোষটা আমারই ছিলো?”

নূরের মা বেশ কড়া কন্ঠে বললেন
“সেদিন যদি তুমি এই লোভ না করতে তাহলে আজ এই দুর্দশা কিছুই হতো না, না আমার আপু হারিয়ে যেতো আর না আমি আমার সন্তানের থেকে দূরে সরে যেতাম৷”

“তুমি তো জানো যে তখন আমার টাকার প্রয়োজন ছিলো৷”

নূরের মা ওনাকে থামিয়ে বললেন
“তোমাকে ভালোবেসে তোমার হাত ধরে পালিয়ে গিয়েছিলাম সেদিন,আমি ছিলাম জমিদারী বংশের মেয়ে আর তুমি ছিলে সাধারন এক মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে তবুও আমি আমাদের সম্পর্কের মাঝে কখনও অর্থ টেনে আনিনি৷ তোমার হাতে হাত রেখে পাড়ি দিয়েছিলাম অজানা এক ভবিষ্যতের দিকে৷ তবুও তুমি খুব ভালো ভাবে আমাদের সংসারটাকে গড়ে তুলেছিলে, তোমার যা ছিলো তা দিয়েই তুমি সুখের সংসার গড়ে তুলেছিলে তারপর কয়েক বছর পর যখন রেদোয়ান বড়ো হলো আর নূর ও বেশ বড়ো, সেই সময় তোমার ব্যাবসায় তীব্র সংকট দেখা যায়,বাবা মায়ের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলো ,তারা আমাকে ত্যায্য করেছিলো তাই তাদের কাছে আর ফেরার চৈষ্টা করিনি, প্রিয়ন্তি আপুও বোধহয় অনেক খোঁজার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু খুঁজে পাইনি আর পাবেই বা কি করে যে নিজে থেকে হারিয়ে যায় তাকে কি কখনও ফিরে পাওয়া যায়? যায়না!
তারপর তুমি একদিন বললে যে আমার নিজের পরিবারের কাছে ফিরে যেতে আর তোমরা নিজের ন্যায্য অধিকার ফিরে পেতে,আমি নারাজ ছিলাম কিন্তু সেদিন তুমি আমার কথা শুনতে বাধ্য ছিলে না কারন তোমার তো টাকার প্রয়োজন ছিলো তাইনা?”

রেদোয়ান সাহেব মাথা নীচু করে নিলেন,হয়তো ভীষনভাবে অনুতপ্ত তিনি৷ ওনাকে দমিয়ে দিয়ে নূরের মা পুনরায় বললেন
“আমি বাধ্য হয়ে নিজের বাড়িতে যায় কিন্তু গেট থেকেই আমাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয় তাই লজ্জায় আর ঘৃনার কখনো সেখান দুবার ফিরে যাওয়ার কথা ভাবিনি৷ তারা বলেছিলো যে তাদের নাকি কোন ছোট মেয়েই নেই৷ বেশ! কিন্তু তুমি তাতেও ক্ষান্ত হলে না তোমার এতোই টাকার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিলো যে না পেরে আমাকে প্রিয়ন্তি আপুর কাছে যেতে হয়েছিলো যেখানে তুমি আমার আত্মসম্মান উপেক্ষা করে এতো বছর পর কেবলমাত্র টাকার কারনে পুনরায় সম্পর্ক স্থাপন করতে বলেছিলে৷
বেশ তাই হলো তোমার কথা মতোই যোগাযোগ করলাম আপুর সাথে,কিন্তু আপুর সাথে তেহেরাত ভাইয়ার সম্পর্কের অবমনানার কথা শুনে টাকা চাওয়ার সাহস হয়নি তাই না পেরে বাধ্য হয়ে বলেছিলাম যে আপু যাতে একটু আমার বাবার বাসায় সবাইকে অনুরোধ করে যেন তারা আমাকে মেনে নেয়৷”

কথাটা বরে নিশ্বাস ছাড়লেন নূরের মা,আরাফাত সাহেব ও নিস্তব্ধ হয়ে বসে আছে,আজ আর বলার মতো মুখ নেই৷

“তারপর আপু তাদের কাছে আমার হয়ে কথা বললে আপুর ওপর ভাইয়া রেগে যান কারন তিনি কখনোই চাইতেন না যে তার সম্পত্তিতে কেও ভাগ বসাক যদিও পৌতৃক সম্পত্তিতে মেয়েদের একটা অধিকার থাকে তা বোধহয় উনি ভুলেই গিয়েছিলেন৷ ভাইয়া রাগ করে সিদ্ধান্ত নিলেন যে আপুকে সব সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার আর তা ওনার একার পক্ষে সম্ভব ছিলো না তাই তিনি হঠাৎই একদিন আমার সাথে যোগাযোগ করেন আর আপুকে তার পথ থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা বলেন এবং পরিবর্তিতে সম্পত্তির ভাগ না দিলেও কিছু টাকা দেওয়ার লোভ দেখান যদিও আমি তাতে গলিনি তুমি লোভে পড়ে রাজী হয়ে গিয়েছিলে৷ যে মানুষটা আসলেই তোমার কখনো কোন ক্ষতি চাইনি তুমি তাকেই সরিয়ে দিতে চেয়েছিলে৷ লজ্জার বিষয়! আমি তোমার এই কথা সবার সামনে ফাঁস করে দিতে চাইলে তুমি আমাকে বিচ্ছেদের ভয় পায় যদিও আমি ভয় পাইনি অবশেষে তুমি আমার নূরকে আর রেদোয়ানকে মেরে ফেলার হুমকি দাও,আমি দমে যাই তারপর হার মেনে নিই৷ আপু ডায়েরি লিখতেন সেখানে তিনি তার নিঁখোজ হওয়ার খানিকটা হলেও ভবিষ্যৎ বানী করেছিলেন তা তিনি তার ডায়েরি তে লিখেছিলেন আর সেটা কোনভাবেই আয়াশ হাতে পায় তারপর আমাকেও নিঁখোজ হতে হয় আয়াশের কাছে, আয়াশ আমাকে কখনো কোন অসুবিধা রাখেনি, ওকে আমি নিজের ছেলের মতোই ভালোবাসি৷”

আরাফাত সাহেব প্রশ্ন করে উঠলেন
” তাতে আয়াশের স্বার্থ কি ছিলো?”

“স্বার্থ খুবই সহজ,তার মা কে খুঁজে বার করা৷এখন যদি প্রশ্ন করো যে এতো বছর অপেক্ষা করেছে কেন তাহলে তার উত্তর ও আমার কাছে আছে৷”

“কি?”

“আয়াশের এক্সপেরিমেন্টের জন্য,আয়াশ এমন একটা জিনিস আবিষ্কার করতে চাইতো যাতে মানুষের যৌবনের সৌন্দর্যটা সবসময় ধরে রাখা যায় আর তাতে মানুষের বয়স বাড়লেও শরীরে যেন বয়স বাড়ার কোন চিন্হ না আসে, আর আয়াশ বানিয়েছেও আর এর জন্য ও পাবে কোটি কোটি টাকা, তোমার টাকা লাগলে তুমি তাকে বলতে পারো সে তোমার মুখে টাকা ছুঁড়ে মারবে৷”

কথাটা বলে নূরের মা উঠে গিয়ে জানালার পাশে দাঁড়ালেন, আরাফাত সাহেব বললেন
” আর একটা প্রশ্ন করবো?”

উনি কোন উত্তর দিলেন না,নিরবতা সম্মতির লক্ষন ৷

“আয়াশ নূরকে বিয়ে করলো কেন?আর তোমাকেই বা এতোদিন লুকিয়ে রেখেছিলো তার ফলাফল কি হলো?”

উনি গর্জে উঠে বললেন
” আয়াশ তোমার মতো লোভী নয় যে টাকার জন্য কাওকে বিয়ে করবে বা মানসিক অত্যাচার করবে৷সে নূরকে ভালোবাসে,নূরকে সে চায় তাই বিয়ে করেছে তার ভালোবাসা নিসার্থ৷ আয়াশ আমাকে মারার অভিনয় ও করেছিলো কারন শক্রপক্ষ জানতে পেরেছিলো যে আমি এখনও বেঁচে আছি তাই তারা মারতে চেয়েছিল তাই অয়াশ আমাকে মাঝ রাতে রাস্তার মাঝে গুলি মারার জন্য বন্দুক তাক করে আর আমি যদি আয়াশকে সব সত্যি কথা বলে দিই সেই কারনে পিছন থেকে ভাইয়ার পাঠানো একজন আমাকে গুলি মারে যাতে আয়াশ কখনো তার মায়ের হদিশ না পায় কারন ভাইয়ার ধারনা ছিলো যে আমি এতোদিন নিজেই লুকিয়ে ছিলাম আর আয়াশ আমাকে হাতে নাতে ধরে ফেলেছে৷গুলিটা আমার গায়ে লাগতেই আয়াশ পিছন ঘুরে তাকিয়ে দেখেছিলো একজন পালাচ্ছে আয়াশ ও তখন তাকে যেতে দেয় কারন এতে আমদের সুবিধা হতো,আয়াশ আমাকে হসপিটাল নিয়ে যায় , চিকিৎসা করায়,আপু ফিরে আসে পরিকল্পনা মাফিক৷ এবার বলো তোমার শাস্তি কি হওয়া উচিত?”

আরাফাত সাহেব ধপ করে বিছানায় বসে পড়লেন,ওনার একটু টাকার প্রয়োজনের খাতিরে এতো কিছু হতে পারে তা উনি ধারনাতেও আনেননি,বুকের ভিতর হালকা চিনচিন ব্যাথা অনুভব করছেন,ব্যাথাটা বাড়ছে,নূরের মা চোখের জল মুছে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলেন হঠাৎ পিছন থেকে আহ করে শব্দ আসতেই ঘুরে দেখলেন আরাফাত সাহেব বুকের ব্যাথায় কাতরাচ্ছেন,উনি দৌড়ে ছুটে গেলেন৷

#চলবে,,,,