তুমিময় মোহ পর্ব-০৪

0
40

তুমিময়_মোহ [৪]

অতীতের কাহিনীগুলো যেভাবে সুন্দর করে মানুষজন বর্ণনা করে। ঠিক সেভাবে তার সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনাগুলো রাধিকাকে বর্ণনা করে শোনালো। পরিশেষে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো দুই বান্ধবী। সামাইরা শেষে সরু নিশ্বাস ফেলে জানতে চাইলো,
‘কি ভাবছিস?’
রাধিকা ভাবনার ভঙ্গিতে বলল,
‘ভাবছি উষ্ঠা খেয়েও মানুষ কিডন্যাপ হয়।’
এত কষ্টের পরিস্থিতির মাঝেও নিজের হাসিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না। ফিক করে হেসে দিলো সামাইরা। রাধিকা বিরক্ত হয়ে বাঁকা চোখে তাকালো। সামাইরা হাসি থামিয়ে বলল,
‘স্যরি।’
রাধিকা তবুও তাকিয়ে আছে। ফের সামাইরা শুধায়,
‘কি?’
‘এখনো বিয়ে করার শখ আছে তোর তাই না?’
‘একদমই না।’
‘তাহলে বিয়ের লেহেঙ্গা ও সাজ নিয়ে কি যাত্রাপালায় যাবি?’
‘আমি তার দেয়া জামা-কাপড় পড়ব না।’ কিছুটা চ্যাঁচিয়ে বলল।
‘খাবার তো গিলেছিস?’
সামাইরা আমতা আমতা করে জানালো,
‘আমার সরল মনে কোনো গরম নেই। রাতে তেমন খাইনি। এজন্য খুদা নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। শুধু খাবারই খেয়েছি। তুই কি বলতে চাইছিস না খেয়ে মরে যাব?’
‘না। করলে সব কর। না করলে একটাও না।’ মাথা ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে বলল।
‘রাগ করে না রাধুনি, তোকে খাওয়াবো বেগুনি।’ রাধিকাকে মানাতে মানাতে বলল।
চোখ পাকিয়ে তাকালো রাধিকা। সে একটু রাগ করলেই এই ডায়লগটি নিক্ষেপ করে। যার ফলে তার রাগ আরো বাড়ে। কপট রাগ নিয়ে বলল,
‘সিরিয়াস মুডে আছি। চুপ কর।’
‘দেখ, এখান থেকে পালাতে হলে শক্তি প্রয়োজন। শক্তির জন্য খাবার প্রয়োজন। এজন্য খেয়েছি।’
‘পালানোর জন্য ড্রেস পাল্টানো অতি জরুরি। এসব পড়ে পালাতে পারবি না। আমি চাই না তোকে নিয়ে পালাতে গেলে কোনো বিপদে পড়ি।’
‘আচ্ছা, পাল্টে নিচ্ছি। এখন শোন। লোকটাকে আমার সুবিধার মনে হচ্ছে না।’
‘অসুবিধারও ঠেকছে না কেন জানি।’ আনমনে বলল রাধিকা।
‘আরে কেমন মাফিয়া টাইপের।’
‘তোকে কিডন্যাপ করেছে ভালো কথা। আমায় কেন করলো?’
‘তোকেও বিয়েটিয়ে করবে না তো?’ উৎসুক হয়ে বলল।
‘করলে আমি রাজি আছি।’ লজ্জা ভঙ্গিতে দু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বলল রাধিকা।
‘সিরিয়াস মুডে ফাজলামো বন্ধ কর।’
রাধিকা লজ্জাভাব কাটিয়ে বলল,
‘এখান থেকে পালাবো কিভাবে? বিন্দুমাত্র স্থান নেই ফাঁকা। দরজা জানালা সব বন্ধ।’
‘তুই আগে এই খইলত্তা(লেহেঙ্গা) পাল্টা।’
‘যাচ্ছি। তুই উপায় ভাব। আর খুঁজতে থাক পালানোর রাস্তা।’
‘যাহ!’

‘কি দেখছিস আহিল?’ কান থেকে ব্লুটুথ সরিয়ে আহিল হেসে দেয়। জোহায় কপাল কুঁচকে ফেলে। তাঁদের বন্ধুদের মাঝে আহিল সামাইরার বিষয়টি জানতো। এজন্য জোহানকে সাহায্য করেছে। কিছুক্ষণ আগেই এই ফ্ল্যাটে এসে সামাইরা ও রাধিকার কথপোকথন শুনেছে। সে খুব বিনোদিত। জোহানকে ব্লুটুথ এগিয়ে দিয়ে আহিল আগের ফুটেছ চালু করে দেখতে দেয় মনিটরে। দুই বান্ধবীর কথন শুনে জোহান স্থির হয়ে চেয়ে থাকে। পরপরই আহিলের পানে চেয়ে মুচকি হাসলো।
‘ফানি ক্যারেক্টর সামাইরা।’
‘রাধিকাও কম নয়। বাট খইলত্তা কি?’
‘আই ডোন্ট নো।’
‘মেবি লেহেঙ্গাকে বলেছে। যাক, বাকিগুলো লাইভ দেখ।’
দুই বন্ধু মিলে তাঁদের বাকি কথন শুনতে আরম্ভ করে।

‘তোকে খাবার কখন দিয়ে গেছে সারু?’
‘জোহান চলে যাবার পরপরই ড্রেস ও খাবার দিয়ে গেছে একটি লোক।’
‘বাহ! ড্রেস তো ফিটফাট হয়েছে।’
‘এটা দেখার সময় না। কি ভাবলি সেটা বল।’
‘যতক্ষণ না জোহান ভাইয়ার আমাদের সাথে দেখা করতে আসতে, ততক্ষণ ভাবনা বন্ধ।’
‘এতো ভালোবেসে ভাইয়া বলতে হবে না। নামের পাশে খ চ্চ র টাইটেল লাগা।’ দাঁতে পিষে বলল সামাইরা।
‘আহ সারু! রাগ করে না বাবু।’
‘আমি পাগল হয়ে যাব। এক মসিবত থেকে বাঁচিয়ে আরেক মরসিবের কাছে সঁপে দিয়েছে।’
‘একদিক থেকে ভালো হয়েছে তোকে কিডন্যাপ করে। বিয়েটা তো হয়নি।’
‘আঁটকেও রয় নি দেখ গিয়ে। আমি ফিরলেই বিয়ে দিতে চাইবে আবার।’
‘তাহলে আর ফিরিস না।’
‘মজা নিস না। আমি আব্বুর কথা ভাবছি। তার অবস্থাটা আমি অনুভব করি।’ শান্ত গলায় বলল।
‘একটু আন্টির কথাও ভাব।’ ব্যঙ্গ করে বলল রাধিকা।
সামাইরা বাঁকা চোখে তাকালো। রাধিকা সিরিয়াস হয়ে বলল,
‘সবাই ঠিক আছে। শুধু তুই ঠিক নেই। আই মিন ওখানে নেই।’
‘আমি কাউকেই বিয়ে করতে চাই না।’
‘জোহান তোকে ধুয়ে ধুয়ে পানি খাবার জন্য নিয়ে আসেনি। বিয়ে করার জন্যই এখানে বন্দি করে রেখেছে।’
‘তার সমস্যা কি? দুনিয়াতে এত মেয়ে থাকতে আমিই কেন?’
‘ঐ যে ভালো ফ্ল্যাটের জন্য।’
‘ইউ মিন ভালো-বাসা?’ চোখ কুঁচকে বলল।
‘উচ্চারণ করিস না। ঘিন্না লাগে।’ নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল।

‘এই মেয়েকে যে বিয়ে করবে তার জীবন অর্ধেক ড্রামা দেখতে দেখতে অন্তিম হবে।’
‘এভাবে বলিস না জোহান।’
‘ইউ লাইক হার?’
‘থোরা থোরা!’ কিঞ্চিৎ লজ্জাবোধ নিয়ে জানালো আহিল।
জোহান বিরক্ত হয়ে বিড়বিড় করে বলল,
‘অর্ধ পাগল।’
‘চুপ।’
__
মিরান লামিমকে নিয়ে সামাইরার বাড়িতে এসেছে। হুমাইরা বানুর পারমিশন নিয়ে সামাইরার রুমটি তল্লাশি করছে। অবশ্য পুলিশ ইতিমধ্যেই করেছে। তবুও সে গুঁতিয়ে দেখার জন্য এসেছে। রুম চেক করে বারান্দায় এসে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে সব। হঠাৎ সেখানে কালো রঙের একটি বোতামের দেখা মিলে। মাঝারি আঁকারের ছিল বোতামটি। সেটি পর্যবেক্ষণ করে পকেটে পুরে বেরিয়ে এলো। টেইলারের দোকানে এসে বোতামটি দেখিয়ে একজন কর্মরত লোককে জিজ্ঞেস করল,
‘এটি কিসের বেতাম হতে পারে বলতে পারেন।’
‘এটি কোটের বোতাম।’ লোকটি বিনয়ী স্বরে উত্তর দিলো।
‘আচ্ছা ধন্যবাদ।’
‘ওয়েলকাম স্যার।’
দোকান থেকে বেরিয়ে এলো মিরান। লামিম এতক্ষণ তার সঙ্গেই ছিল। এক দৃষ্টিতে শূন্যে তাকিয়ে মিরান বোঝার চেষ্টা করছে কে হতে পারে। তাদের মাঝে অনেকেই কোট পরিধান করে গিয়েছিল বরযাত্রীতে। সবার বাড়িতে খোঁজ নেয়া সম্ভব না। তবুও সে খোঁজ নিবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। রাতে বারে দেখা করার আমন্ত্রণ জানায় সব ফ্রেন্ডদেন মিরান। হোয়াটসঅ্যাপের টেক্সটের মাধ্যমে বার্তা পৌঁছে যায় সবার কাছে।
দিনেদুপুরে ইমরান মদ খেয়ে বাড়ি ফিরে মাতলামি করছিল দেখে মিরান দ্রুত বাড়ি ফিরে। এবং ইমরানকে সামলানোর চেষ্টা করছে।

রাতে ক্লাবে দেখা করে সব বন্ধুরা। তাদের সামনে সেই কোটের বোতামটি রাখে মিরান। এবং গম্ভীর গলায় জানতে চায়,
‘খেয়াল করে দেখে বল, এটি কার কোটের হতে পারে।’
‘আমি, জোহান বাদে আরো অনেকেই পড়েছিল কোট।’ আহিল কথাটা বলল কনফিডেন্স নিয়ে।
‘সবার কথা মাথায় আছে। দেখে বল। আমার আত্মীয়দের কারো সাথে দেখা হয়েছে? যারা এরকম বোতাম লাগানো কোট পড়েছিল?’
জোহান মিরারের পানে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। মিরান জোহানের চাহনি উপেক্ষা করে ইনিয়েবিনিয়ে বলল,
‘আমি তোদের সন্দেহ করছি না। সাহায্য অন্তত করতে পারিস আমায়।’
লামিম বলল,
‘সন্দেহর কথা না৷ জোহান এসেছে সবার পরে। ওর কথা বাদ দিলে ভালো হয়।’
‘তবে কি আমি?’ আহিল অর্ধকথন বলে থামলো।
‘চেতে যাচ্ছিস কেন? তোকে সন্দেহ করা হয়নি আহিল। আমরা একটা সিরিয়াস টপিকে আছি। আশা করি সবাই কোপেরেট করবি।’ আরমান কথাটা বলে সবার পানে নজন বুলালো।
জোহান বোতামটি হাতে নিলো। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সেটি দেখছে। সবার দৃষ্টিপাত তার উপর। সেকেন্ড কয়েক পর টেবিলের উপর রেখে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
‘চেক করতে হবে এটি আমার কোটের কি-না।’
জোহান বিষয়টি সহজভাবে নিয়েছে দেখে সকলে হাপ ছেড়ে বাঁচলো যেন। সবার ধারণা আছে জোহানের রাগের সম্পর্কে। এজন্য জোহানের সঙ্গে উল্টোপাল্টা বিহেভিয়ার কেউ এখন অব্ধি করেনি। বন্ধু হিসেবে জোহানকে সবাই বেশি গুরুত্ব দেয়। মিরানের সন্দেহর তীর আহিলের উপর কিঞ্চিৎ। তবে সে পুরোপুরি ভাবে শিওর না। জোহানকে সে কোনোক্রমেই সন্দেহ করছে না। পরেও করবে না। দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে জোহানের উপর।
.
.
চলবে?

®সুমাইয়া মনি