তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব-২৮+২৯

0
1138

#তুমিময় নেশায় আসক্ত 🖤
#পর্ব- ২৮
#Jannatul_ferdosi_rimi( লেখিকা)
মেয়েটার মুখশ্রীখানা দেখে এক পলকের জন্যে হতভম্ব হয়ে গেলো আমান। মেয়েটার হাসি কেমন একটা আমানের প্রাক্তন প্রেমিকার কথা স্বরং করিয়ে দেয়। আমান কষ্ট করে তার নেত্রপল্লব মেলে তাকিয়ে রইলো তার সামনে থাকা রমনীর দিকে। রমনীর গাঁয়ে
স্কুল ড্রেস। মুখে কি সুন্দর অমায়িক হাঁসি। যুবক হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো যুবতীর পানে। হাঁসিখানা একদম আমানের রিমিপাখির মতো উজ্জ্বল,সুন্দর। আমান শুকিয়ে যাওয়া কন্ঠে রমনীকে প্রশ্ন করে বসলো,

‘ কে আপনি? আমিই বা কোথায়? ‘

রমনী সঙ্গে সঙ্গে আমানের মুখ চেপে ধরে, ফিসফিস সুরে বলে,

‘ আমি মেঘলা চৌধুরী। অয়ন চৌধুরীর ছোট বোন।’

‘অয়নের ছোট বোন’ কথাটি শুনে আমান একপ্রকার উত্তেজিত হয়ে বলে,

‘ আপনি! আপনি কেন এসেছেন? ‘

মেঘ আমানের মুখ চেপে ধরেই, দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

‘ আপনি থামবেন? এতো প্রশ্ন করছেন কেন? একটু চুপ থাকুন তো। গার্ডসরা আমাদের খুঁজছে। খুঁজে পেলে আপনি তো মরবেনই। তার সাথে আমিও মরবো। ‘

আমান আর কিছু বলতে পারলো না। দেয়ালে হেলান দিয়ে আখিজোড়া বন্ধ করে ফেললো। অতঃপর মেঘের গায়ে একপ্রকার হেলে পড়লো।

________________

অয়ন রিমির হাত ধরে, রিমিকে তার বুকের সাথে মিশিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। রিমি ভিতু চোখে শুধু চেয়ে আছে অয়নের পানে। অয়নের ভিতরে ভিতরে রাগে একপ্রকার দগ্ধ হচ্ছে। যা রিমির বুঝতে বাকি থাকেনা। রিমি কিছু একটা ভেবে বলে,

‘ আপনি কি রেগে আছেন? ‘

অয়ন উত্তর দেয় না বরং চোয়াল শক্ত করে সামনের দিকে তাকিয়ে আপনমনে ড্রাইভ করতে থাকে। রিমি সুদীর্ঘ শ্বাস ফেলে। রিমির বুঝতে বাকি থাকেনা অয়নকে দ্বিতীয়বারের মতো ফাঁকি দিয়ে, হসপিটালে চলে যাওয়ায় অয়ন বেশ রেগে আছে। রিমি অয়নের বলিষ্ট হাতখানা ঝাকিয়ে বলতে থাকে,

‘ কি হলো শুনছেন আপনি? কথা বলছেন কেন? আপনি কি আবারোও রেগে আছেন? ‘

অয়ন জোরে গাড়ি ব্রেক কষে, রিমি ঝুঁকতে নিলে অয়ন রিমিকে শক্ত করে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে। অতঃপর নিজের থেকে রিমিকে ছাড়িয়ে, গাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। গাড়ি থেকে বেড়িয়ে আপনমনে সিগারেট ধরিয়ে নেয়। অতঃপর সিগারেটের ধোঁয়ায় তার ভিতরে থাকা কষ্ট এবং রাগগুলোকে উড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টায় থাকে। রিমি নিজেও গাড়ি থেকে বেড়িয়ে হন্তদন্ত হয়ে অয়নের কাছে ছুটে গিয়ে, একপ্রকার অস্হিরতার সুরে বলে,

‘ ডক্টর এয়ারসি! আপনি স্মোক করছেন? আপনি একজন ডক্টর জানেন না? স্মোক কতটা ক্ষতিকর শরীরের জন্যে। ‘

অয়ন তার হাতে থাকা সিগারেট টা ফেলে দিয়ে, তা পা দিয়ে পিষে রিমির বাহু চেপে ধরে, রোষপূর্ন গলায় বলে,

‘ আমার শরীর নিয়ে তোমাকে এতোটা কনর্সান দেখাতে হবে না। বুঝলে তুমি? একদম আমার বিষয়ে নাক গলাবে না তুমি। ‘

অয়নের ধমাকে কেঁপে উঠে রিমি। নেত্রকোনায় জল এসে আখিজোড়া ছলছলে হয়ে উঠে। রিমি মুখ ঘুড়িয়ে নেয়। অয়ন পুনরায় আরেকটি সিগারেট ধরিয়ে তাতে টান দিয়ে, দীর্ঘশ্বাস ফেলে। অতঃপর ধীর কন্ঠে বলে,

‘ একটা কথা কি জানো তো রিমিপরী? যার কাছে অভিমানের কোন মূল্য নেই। তার প্রতি মনের কুঠিরে অভিমান জমিয়ে রাখা বৃথা।’

অয়নের কথায় রিমি অবাক পানে অয়নের দিকে তাকায়। রিমির বুঝতে বাকি থাকে অয়ন তাকেই কথাগুলো উদ্দেশ্য করে বলেছে। অয়ন মুখ ফিরিয়ে গাড়ির দিকে পা বাড়িয়ে এগোতে থাকে। রিমিও হাত মুঠো করে নিয়ে গাড়ির দিকে পা বাড়ায়। অয়ন নামক যুবককে সে যেন বুঝতেই পারেনা। কখন কি বলতে চাচ্ছে তা রিমির ধারণার বাইরে, কিন্তু এইটুকু বুঝতে পারছে মানুষটার গভীর অভিমান জমেছে তার রিমিপরীর প্রতি। রিমির কেন যেন বড্ড কষ্ট হচ্ছে। রিমি চাইছে যেন তার প্রতি অয়নের ভিতরের অভিমানগুলো মুহুর্তেই উড়ে ছাই হয়ে যাক।

_________

মেঘের বুঝতে পারলো আমান অজ্ঞান হয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত মার খাওয়ার ফলে আমান বেশ দূর্বল হয়ে পড়েছে। তার জায়গায় জায়গা রক্ত জমাট বেধে গুরুতরভাবে ক্ষত হয়েছে।মেঘের মনে পড়ে যায় সকালের ঘটনাটি। সকালে যখন মেঘ তার রুমে স্কুলের যাওয়ার জন্যে তৈরি হচ্ছিলো, তখনি সে শুনতে পায় পাশের রুমে অয়ন কাউকে গম্ভীর কন্ঠে বলছিলো,

‘সবগুলোকে আমি মেরে ফেলবো জাস্ট। তোদের জন্যে পায়েল পালিয়ে গিয়েছে। এখন আমানকে নজরে রাখ যেন পালিয়ে যেতে না পারে। ও আমার রিমিপরীর দিকে হাত বাড়িয়েছিলো ওকে না মেরে আমি শান্ত হবো না। ‘

অয়নের গম্ভীর কন্ঠে বলা প্রতিটা শুনে মেঘের হৃদয়টা কেঁপে উঠছিলো। আমান নামক অপরিচিত যুবকটির জন্যে মেঘের মনের কুঠিরে এক অদ্ভুদ ভয় এসে হানা দিয়েছিলো। মেঘের মন-মস্তিষ্ক যেন বার বার বলছিলো,

‘ যে করেই হোক একটা মানুষকে খুন হতে দেওয়া যাবে না। ‘

মনের কথা সায় দিয়ে, মেঘ সিদ্বান্ত নেয় সে যে করেই হোক আমানকে বাঁচাবে।
এমন নির্দোশ মানুষের প্রান অকালে তার ভাইয়ের পাগলামো ভালোবাসার জন্যে ঝড়ে পড়বে তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলো না মেঘ। সে অনুযায়ী মেঘ স্কুল থেকে একপ্রকার পালিয়ে, তার ড্রাইভারের সাহায্যে অয়নের ডেরায় পৌঁছে গিয়েছিলো। অয়নের ডেরার ঠিকানা সে ড্রাইভারের থেকেই জানতে পেরেছিলো। মেঘ সেখানে গিয়ে, গার্ডদের ফাঁকি দিয়ে, আমানকে পিছনের দরজা দিকে একপ্রকার টেনে হিচড়ে নিয়ে আসে। অয়নের দেহরক্ষীগুলো এখনো আমানকে খুঁজে চলেছে, তারা চলে যেতেই মেঘ তাএ ড্রাইভারকে ইশারা করে নিজের কাছে ডাকে আনে। ড্রাইভার ও মেঘের কাছে চলে আসে। মেঘ ফিসফিস করে বলে,

‘ ড্রাইভার কাকু! জলদি উনাকে ধরে গাড়িতে তুলুন। উনার অবস্হা ক্রমশ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ‘

‘ কিন্তু মা অয়ন বাবা জানলে কিন্তু…’

ড্রাইভারের কথায় বিঘ্ন ঘটিয়ে, মেঘ কিছুটা কপাট রাগ দেখিয়ে বলে,

‘ একটা মানুষের জীবন-মরনের বিষয় সেখানে আপনি অয়ন ভাইয়া কি বলবে তা নিয়ে পড়ে আছেন? অয়ন ভাইয়াকে যা বলার আমি বলবো। আপাতত আপনি উনাকে দ্রুত গাড়িতে তুলুন। ‘

মেঘের আদেশ শুনে, ড্রাইভার তড়িঘড়ি করে আমানকে উঠিয়ে গাড়ির দিকে নিয়ে যেতে থাকে। মেঘ ও তাদের পিছনে পিছনে যায়। মেঘের আপাতত অয়নের বিষয়টি মাথাতেও নেই। তার সমস্ত চিন্তা আপাতত আমান নামক যুবকটিকে ঘিড়ে।

_____________

অয়ন গাড়িটি চৌধুরী বাড়ির সামনে পার্ক করে। রিমি তার সিল্টবেল্টটা খুলে, বেড়িয়ে পড়ে। অয়ন বেড়োতে নিলে, তার ফোনের মেসেজের টংটা বেজে উঠে। অয়ন থেমে যায়। ফোনের মেসেজ দেখে বাঁকা হাসে। তারপর তা সযত্নে ফোনের পকেটে ঢুকিয়ে রেখে, রিমিকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘ আমার আসতে দেরী হতে পারে। তুমি সাবধানে থেকো। আমি তোমাকে ক্ষনে ক্ষনে ফোন করবো। গার্ডসরা তো রইলো। ‘

অয়ন কথাটি বলেই গাড়ি ঘুড়িয়ে তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রিমি থেমে যায়। অয়নের যাওয়ার পানে কিছুক্ষন চেয়ে থাকে উহু একজন স্ত্রী হয়ে নয়,তার দৃষ্টি ছিলো একজন প্রেমিকার ন্যায়। যে তার প্রেমিক পুরুষের যাওয়ার পানে নিষ্পলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।

____________

রিমি সদরদরজার কাছে যেতে নিলেই, তার চোখ যায় ফারহানের গাড়ির দিকে। ফারহান হয়তো সবেমাত্র হসপিটাল থেকে ফিরেছে। রিমি ফারহানের কাছে গিয়ে বলে,

‘ ফারহান ভাইয়া। ‘

রিমির ডাকে ফারহান রিমির দিকে তাকায়। অতঃপর শান্ত গলায় বলে,

‘ ওহ তুমি! আমি জানি আজকে তুমি জেনে গিয়েছো, সুমাইয়া বেঁচে আছে।

‘ কি হয়েছে সুমাইয়া আপুর? কিসের জন্যে আপনি সুমাইয়া আপুর অপারেশন ব্যাবস্হা করিয়েছিলেন?’

রিমির প্রশ্নে ফারহান নীচের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ গাড়ি এক্সিডেন্ট করে সুমাইয়া কোমায় চলে গিয়েছে। আসলে ডক্টর বলেছিলো অপারেশন করলে নাকি সুমাইয়া পুনরায় সুস্হ হয়ে উঠতে পারে। আজকেই সেই অপারেশন হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু আজ হসপিটালে ঝামেলা হওয়ায় তার ব্যাঘাট ঘটে।’

রিমি পাল্টা প্রশ্ন করে বলে,

‘ সুৃমাইয়া আপু যে জীবিত রয়েছে সে বিষয়টি সবার থেকে কেন লুকিয়েছিলেন? ‘

চলবে…..কী?

#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ২৯
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
দাম্ভিকতা নিয়ে গাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়লো অয়ন। সঙ্গে সঙ্গে সকল দেহরক্ষী ভয়ে অয়নের সামনে এসে দাঁড়ালো। অয়ন তার পকেটে থাকা মেশিং গানটি বের করে, সাদেকের কপাল বরাবর ঠেকালো। সাদেক ভয়ে ঝিমিয়ে নীচে তাকালো। মৃত্যু নামক অজানা ভয়ে তার শরীরটা কেমন দুলে উঠলো। ঠোট ভিজিয়ে ভয়ার্থ গলায় অয়নের পা ধরে বললো,

‘ ভাই! ক্ষমা করুন আমাকে। বিশ্বাস করুন ভাই। আমি যদি থাকতাম তাহলে আমানকে নিয়ে পালিয়ে যেতে পারতো না। ‘
অয়ন সাদেককে বুক বরাবর লাত্থি দিয়ে মাটিতে ফেলো। মাথায় একপ্রকার রক্তচড়ে যাচ্ছে তার। আজ তারই লোকদের বেপরোয়া কাজের জন্যে
পায়েল এবং আমান দুজনেই অয়নের হাত থেকে পালিয়েছে। যাদের অয়ন নিজ হাতে শাস্তি দিতে চেয়েছিলো। অয়ন যখন রিমিকে নিয়ে চৌধুরী বাড়িতে ঢুকছিলো, তখনি অয়নের ফোনে মেসেজ আসে, আমান পালিয়েছে। কথাটি শুনে যতটা বেশি রাগ হয়েছিলো অয়ন তার থেকেও বেশি অবাক হয়েছিলো যখন সে জানতে পারে মেঘ আমানকে নিয়ে পালিয়েছিলো। মেঘের এমন অদ্ভদ সাহসীকতায় অয়ন হেসেছিলো। বিড়বিড় করে বললো,

‘ নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনলো। স্টুপিড মেয়ে একটা। ‘

মেঘের কথা মস্তিষ্কে এসে নাড়া দিয়ে প্রবলভাবে নাড়া দিয়ে উঠতেই, অয়ন সাদেককে উঠিয়ে, সাদেকের কপাল চেপে ধরে দাঁতে দাঁতে চেপে বলে,

‘ আমি ওদের চাই! যেকোন মূল্যেই আমি ওদের চাই।
একদম সুস্হ চাই। ওরা আমার থেকে আমার রিমিপরীকে কেড়ে নিতে চেয়েছিলো, তাই ওদের আমি নিজ হাতে মারবো। ‘

[লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]

সাদেক দ্রুত মাথা নাড়ায়। অয়ন সাদেককে ছেড়ে দেয়। একজন কালো পোষাক পরিহিত লোক এসে খবর দেয় মেঘ আপাতত আমানকে নিয়ে হসপিটালে রয়েছে। কথাটি অয়নের কানে আসা মাত্রই অয়ন পুনরায় তার গাড়িতে গিয়ে বসে পড়ে। সাদেক ও অয়নের কাছে এসে বলে,

‘ ভাই! আমরা কি তাহলে হসপিটালের দিকে যাবো?’,

‘ উহু! আমরা আজকে হসপিটালের দিকে যাবো
না।’

অয়নের কথায় বেশ চমকে উঠলো সাদেক। যাকে বলে বেশ বড়ভাবে। সাদেক মুখের ভাবভঙ্গি দেখে,অয়ন গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে বসে বলে,

‘ অয়ন চৌধুরীর বোন হয়ে অয়ন চৌধুরীর সাথেই গেম খেলতে চাইছে মেঘ। যাক গে যত ইচ্ছে খেলুক।
বাচ্চ মানুষ তো। আমিও দেখবো বাচ্চা কতদূর গেম খেলতে পারে। ‘

অয়নের কথায় কিছু বুঝে উঠার আগেই, অয়ন গাড়ি ঘুড়ালো। সাদেক দ্রুত সরে গেলো। অয়ন অজানা গন্তব্যের দিকে রওনা হলো।

________

রিমির প্রশ্নে ফারহান তার হাতের ব্লেজার টা গায়ে ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে, বাগানের দিকে অগ্রোসর হলো। রিমিও ফারহানের পিছনে যেতে লাগলো। তার মনে আজ সব প্রশ্নগুলো উঁকি দিচ্ছে, যার উত্তর তাকে পেতেই হবে। ফারহান বাগানের একটি টেবিলের পাশে থাকা চেয়ারে বসে পড়লো। রিমিকেও চোখের ইশারায় বসতে বললো। ফারহান টেবিল থেকে চায়ের কাপ নিয়ে তাতে চাপ ঢালতে ঢালতে বললো,

‘ চা খাবে তো জান্নাত? চা খেতে খেতে না হয় সব শুনবে। ‘

রিমি চারপাশের দিকে একপলক তাকালো। দেহরক্ষীগুলো আপাতত নেই, কিন্তু তবুও ভয় করছে রিমির। অয়নকে খুব ভালো করেই চিনে সে। যদি জানতে পারে রিমি ফারহানের সাথে একান্তে কথা বলেছে, তাহলে লন্কাকান্ড বাধিয়ে ছাড়বে। রিমি ফোস করে নিঃশ্বাস নিলো। অতঃপর কাচুমাচু হয়ে বললো,

‘ কেউ দেখে ফেললে উল্টা পাল্টা ভাবতে পারে। ফারহান ভাইয়া আপনি যদি তাড়াতাড়ি বলতেন তাহলে ভালো হবে। আপনি তো চিনেন আপনার ভাইকে। ‘

ফারহান চায়ের কাপে চুমুক দিলো। অতীতের কালো অধ্যায়ে পুনরায় স্মৃতিচরণ করলো। অতঃপর ধীর কন্ঠে বললো,

‘ আমরা যখন পালিয়ে বিয়ে করে আসি তখন গ্রেন্ডমা মানে রুহানা চৌধুরী সম্মান রক্ষার্থে আমাদের বিয়েটা মেনে নেয় কিন্তু মনে মনে তিনি বেশ ক্ষিপ্ত ছিলেন। সুমাইয়া বাড়িতে আসার পর থেকেই, সুমাইয়াকে তিনি নানাভাবেই অপমান করতেন। সবসময় ছোট করতে চাইছেন। সুমাইয়াও সবসময় সহ্য করতো। দিনের পর দিন যত যাচ্ছিলো সুমাইয়ার উপর টর্চার যেন বেড়েই চলছিলো আমি অনেকবার সুমাইয়াকে প্রটেস্ট করতাম কিন্তু আমি তো অফিসে থাকতাম। তাই সবসময় সুমাইয়ার পাশে থাকতে পারতাম না। তখন অয়নও ডাক্তারি পড়াশোনা খুব ব্যস্ত ছিলো বিধায় কম্পানির সব দায়িত্ব আমার কাঁধেই ছিলো। সারাদিন অফিস করে, সুমাইয়াকে তেমন একটা সময়ও দিতে পারতাম না। বুঝতে পারছিলাম সুমাইয়া এবং আমার মাঝে একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে এবং সুমাইয়া ভিতরে ভিতরে একপ্রকার গুমড়ে মরছে। একদিন সকালে উঠেই দেখি সুমাইয়া কাউকে না বলেই গাড়ি নিয়ে কোথায় যেন একটা বেড়িয়ে গিয়েছিলো। হঠাৎ করে একটা হসপিটাল থেকে ফোন আসে সুমাইয়াকে নাকি হসপিটালে ভর্তি করানো হয়েছে। সুমাইয়ার এক্সিডেন্ট হয়েছে। সুমাইয়ার অবস্হা ছিলো গুরুত্বর। আমিও বুঝতে পারছিলাম সুমাইয়ার এক্সিডেন্ট টা স্বাভাবিক ছিলো না। কেউ ইচ্ছে করে তা করিয়েছে। কেননা পুলিশের তথ্যমেত সুমাইয়ার গাড়ির ব্রেকফেল করানো হয়েছিলো
তাইতো চিকিৎসক দিয়ে সুমাইয়াকে মৃত্যু ঘোষনা করি। আমি জানতাম যারা সুমাইয়াকে মারতে চেয়েছিলো,তারা নিশ্চই সুমাইয়া বেঁচে আছে জানলে সুমাইয়াকে পুনরায় মারতে চাইবে। ‘

‘ কিন্তু কারা মারতে চেয়েছিলো আপুকে? কিবা
কারণ থাকতে পারে? ‘

‘ সেইটা তো সুমাইয়া সুস্হ হলেই আমরা জানতে পারবো।’

ফারহানের কথায় রিমি মাথা নিচু করে সায় দেয়। নিজের কাছেই নিজেকে ছোট মনে হচ্ছে তার। সে ভেবেছিলো তার বোনের হত্যাকারী স্বয়ং ফারহান।তাইতো চৌধুরী বাড়িতে এসে ফারহানের বিরুদ্ধে সমস্ত প্রমান-তথ্য জোগাড় করতে এসেছিলো রিমি। ফারহান তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,

‘ আমি বুঝতে পারছি তোমার মনের অবস্হাটা জান্নাত। সুমাইয়ার মেসেজে তুমি আমাকে ভুল বুঝেছিলে। একটা কথা কী জানো? গ্রেন্ডমা সবসময় নিজের সিদ্বান্ত সবার উপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তাইতো আজ আমার সুমাইয়া আমার থেকে এতোটা দূরে। আমার ইচ্ছে করে এই বাড়িটা ছেড়ে চলে যেতে কিন্তু বাবা-মায়ের স্মৃতি রয়েছে এই বাড়িতে। তাই কষ্ট করে হলেও থাকতে হয়। ‘

রিমি ফারহানের পানে তাকিয়ে দেখে ফারহানের নেত্রকোণে স্পষ্ট জল বিদ্যমান। তার কষ্টগুলো যেন সে চাইলেও প্রকাশ করতে পারছে না। ফারহান চলে যেতে গিয়েও, কিছু একটা ভেবে থেমে যায়। অতঃপর রিমির কাছে এসে বলে,

‘ আমার ভাইটাকে পারলে একটু ভালোবেসে দেখো।
আমার ভাইটা মানুষটা খারাপ নয়। আজ পরিস্হিতির চাপে অয়ন এমন এগ্রোসিভ হয়ে উঠেছে।আমার ভাইয়াটা কিন্তু এমন ছিলো না। ‘

ফারহান কথাটি বলেই স্হান ত্যাগ করলো। রিমি মাথায় হাত দিয়ে ফারহানের কথাটি ভাবতে লাগলো।

________________

আমানকে সবেমাত্র মেঘ হসপিটালে এন ভর্তি করিয়েছে। আমান অজ্ঞান অবস্হায় কেবিনে শুয়ে আছে। মেঘ বাইরে পাইচারি করে যাচ্ছে অনবরত বাইরে। ড্রাইভার মেঘের দিকে এগিয়ে এসে চিন্তিত সুরে বলে,

‘ মেঘ মা! তোমার তো এখন বাসায় যেতে হবে নাহলে কিন্তু বাসায় সবাই চিন্তা করবে। রুজা ম্যাম আমাকে বার বার ফোন করছে। ‘

মেঘ কেবিনে শুয়ে থাকা অসুস্হ আমানকে একপলক দেখে নিলো। বলিষ্ট দেহটা কেমন নিতিয়ে পড়েছে তার। ফর্সা মুখশ্রীতে আঘাতের দাগটি স্পষ্ট।
মেঘের বুকটা ধক করে উঠলো। যেতে ইচ্ছে করলো না। মনে হলো সে চলে গেলেই মানুষটার সাথে তার আর দেখা হবেনা। মেঘ চলে গিয়েও থেমে গেলো। আমানের কেবিনের দিকে এগিয়ে গেলো। বিড়বির করে আওরাতে লাগলো,

‘ আপনি নামক এক বিষাদ অসুখে আমার ভিতরটা ছাড়খাড় হয়ে যাচ্ছে। আপনার নামে আমার মামলা করা উচিৎ। ‘

_____________

রাত গভীরতা সময়ের সাথে বেড়ে চলেছে। রাতের আকাশের মেঘ একে অপরের সাথে অভিমান করে নিজেদের থেকে দূরে সরে গিয়ে, চাঁদকে আগমন করে তাদের জায়গায় বসে, গোটা পৃথিবীকে আলোকিত করার জন্যে। চাঁদ মামাও চুপটি করে এসে তাদের আগমনে তার মনোরম আলোতে পৃথিবীকে আলোকিত করে তুলে।
সময়ের সাথে সাথে বেড়ে চলেছে রিমির ভিতরের অস্হিরতা। অয়ন এসেছে প্রায় অনেক্ষন হয়েছে কিন্তু অয়নের দেখা নেই। অয়ন বাড়িতে এলেই সর্বোপ্রথম রিমিকে এসে জড়িয়ে ধরে কিন্তু আজ এলো না। রিমির মনের অজান্তেই অয়নের প্রতি ক্ষীন্ন
অভিমান এসে জমাট বাঁধে।

_________

অয়ন তার রুমের পাশে থাকা বেয়ারের ক্লাবে ওয়াইনের গ্লাস হাতে নিয়ে, কিছু একটা ভেবে চলেছে। ঢগঢগ করে পান করে তার পছন্দের জামুন ওয়াইনের বোতলটি। অতঃপর টেবিলে সজোড়ে বারি বোতলটি ভেঙ্গে ফেলে। বিকট শব্দ তৈরি হয় মুহুর্তেই। অয়ন উঠে দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তার মনে এক অদ্ভুদ ভয় এসে হানা দিচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ তার থেকে তার রিমিপরীরকে কেড়ে নিবে। কথাটি মস্তিষ্কে এসে প্রখরভাবে হানা দিতেই, অয়ন দ্রুত পায়ে রিমির ঘরের দিকে রওনা দেয়। রিমি জানালার দিকে আনমনে তাকিয়ে ছিলো। ঘন কালো চুলগুলো কোমড় ছুইছুই করছে তার। রিমির মুখস্রীতে এসে চাঁদের কিরণ এসে রিমির মুখস্রীতে অন্যরকম উজ্জ্বলতা নিয়ে এসেছে। অয়ন রিমির ঘরের সামনে এসে একপ্রকার থমকে দাঁড়ালো। তার রিমিপরীকে আজ অন্যদিনের তুলনায় অন্যরকম লাগছে। একদম অন্যান্য এক মায়াবতীর ন্যায়। অয়ন এগোলে সামনের দিকে। ঘরে অন্ধকার বিদ্যমান। শুধুমাত্র চন্দ্রের আলো এসে ঘরটাকে আলোকিত করে তুলেছে। অয়ন রিমির সামনে এসে রিমির গালে হাত রাখে। অয়নের হস্তের শীতল স্পর্শ পেয়ে রিমি আখিজোড়া বন্ধ করে ফেলে। অয়ন রিমির কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,

‘ সৌন্দর্যের ব্যাখা আমার কাছে নেই কিন্তু আমার কাছে সৌন্দর্য মানেই তুমি রিমিপরী।’

______চলবে……কী?