তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব-৩০+৩১

0
1174

#তুমিময় নেশায় আসক্ত 🖤
#পর্ব- ৩০
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অয়ন দূরত্ব ঘোচাতে চাইলো।ঘনিষ্ট হলো তার সামনে থাকা রমনীর সাথে।কপালে অধর ছুইয়ে দিয়ে নিবেশে কোলে তুলে নিলো তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে। কোলে তুলে নিজ কক্ষের দিকে পা বাড়ালো। রিমি ঘাবড়ে গেলো। মনে এসে হানা দিলো অজানা আতন্ক।ভয়ে নিমিয়ে গেলো। গলার শব্দগুলো রিমির সাথে হরতাল শুরু করে দিয়েছে। কিছুতেই বের হতে চাইছে না। রিমির বাজে একটা পরিস্হিতিতে রয়েছে একপ্রকার।সবকিছুই দমবন্ধ মনে হচ্ছে। অয়ন রিমিকে নিয়ে নিজ কক্ষে প্রবেশ করলো। অতঃপর রিমিকে পরম যত্নে সোফায় বসিয়ে দিয়ে দরজা খট করে বন্ধ করে দেয়। রিমি ভরকে যায়। বিস্ময়ে চেয়ে থাকে অয়নের পানে। অয়ন সমস্ত আলো নিভিয়ে দিলো। শার্টের বোতাম খুলে তা সহজেই খুলে ফেললো। রিমি তার বেহায়া আখিজোড়া দিয়ে তার সামনে থাকা বলিষ্ট দেহীর সুদর্শন যুবককে দেখে নিলো। লজ্জা কেমন একটা ঘিড়ে ধরলো তাকে। পরক্ষনেই রিমি চোখ সরিয়ে নিলো।
অয়ন রিমির দিকে ঝুঁকে বাঁকা হেসে বললো,

‘ আই নো! আম সো মাচ হট। তোমারই তো বর। যত ইচ্ছে দেখে নাও। কে মানা করেছে? হটের সাথে একটু নটি টাইপও হতে ইচ্ছে করছে। দেখবে নাকি? সাচ আ হটিনটি বয়। ‘

রিমি শুকনো ঢুগ গিললো। গাল তার টকটকে লাল হয়ে রয়েছে। কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে অয়নের লাগামহিন কথাবার্তায়। রিমি পিছিয়ে গেলো। অয়ন তাতে বাঁধা দিলো। রিমিকে পুনরায় কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়িয়ে দিলো। অতঃপর রিমি গলায় মুখ গুজে শীতল কন্ঠে বললো,

‘ আজকে আমাদের মাঝে সমস্ত দূরত্ব আমি দূর করে দিবো। তোমাকে আপন করে নিবো রিমিপরী। যেন কেউ চাইলেও তোমাকে আমার থেকে কেড়ে নিতে না পারে। ‘

অয়নের অবাধ্য অধরের স্পর্শ নিজের শরীরে টের পেতেই, পুরো শরীর কম্পন সৃষ্টি হলো মুহূর্তেই রিমির। ছটফটে মুরগীর ন্যায় ছটফট করতে লাগলো। সে তো অয়নকে এখনো মন থেকে মেনে নিতে পারেনি, তাহলে কী করে সে অয়নকে আপন করে নিবে? আচ্ছা সে তো অয়নের কাছে সময় চেয়েছিলো কিন্তু সেই সময়টুকু কি অয়ন তাকে দিবে না? রিমির ভাবনার মাঝেই, অয়ন রিমির হাতে নিজের হাতের ভাজে নিয়ে নিলো। অয়নের আখিঁজোড়া আজ শুধু একরাশ ভালোবাসার নেশা হাতছানি দিচ্ছে। যেই নেশার রেশ ধরে রিমি অন্য এক ভালোবাসার সমুদ্রে পদর্পন করবে। রিম হুট করেই সশব্দে কেঁদে উঠে। অয়ন থেমে যায়। হাত নাড়িয়ে রিমির গাল স্পর্শ করে। দ্রুত রিমির থেকে উঠে গিয়ে, রিমির গালে হাত দিয়ে অস্হির হয়ে বলে,

‘ রিমিপরী! তুমি ঠিক আছো? এই পরী কাঁদছো কেন তুমি? ‘

রিমি কান্নায় থামায় না। সময়ের সাথে সাথে তার কান্নার তীব্রতা বেড়ে গেলো দ্বিগুনভাবে। অয়ন উত্তেজিত হয়ে গেলো তার রিমিপরীর কান্নায়। প্রিয়তমার কান্নার শব্দে তার ভিতরটা ছাড়খার হয়ে যাচ্ছে। অয়ন রিমিকে শান্ত করিয়ে বলে,

‘ কেঁদো না পরী। আমার বুকে বড্ড যন্ত্রনা হয়। ছাড়খার ছাড়খার লাগে সবকিছু। আমি তোমাকে ছুঁবো না প্রমিজ। তুমি একটু শান্ত হও। ‘

রিমির তার কান্নার গতি থামালো, কিন্তু ফুপানি কমছে না। সে ফুপিয়েই চলছে। অয়ন রিমিকে তার বুকে টেনে নিলো। রিমিও অয়নের বুকে মাথা গুজে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো। অয়ন রিমিকে তার বুকে নিয়ে পুনরায় শুয়ে পড়লো। অতঃপর ধীর কন্ঠে বললো,

‘ আমার বুকে শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ো রিমিপরী। কেঁদো না।’

রিমি নিশ্চিন্ত হলো খানিক্টা। অয়নের কথায় লেপ্টে রইলো অয়নের বুকে। একরাশ শান্তির ঘুম এসে মুহুর্তেই তার নেত্রকোনে ধরা দিলো। রিমিও ঘুমিয়ে গেলো। অয়ন রিমির মাথায় হাত বুলিয়ে, রিমির ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,

‘ তোমার অনুমতির অপেক্ষায় রইলাম রিমিপরী।
অনুমতি পেলেই তোমাকে গভীরভাবে ছুঁইয়ে দিবো। ‘

কথাটি বলে অয়ন রিমিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পরম শান্তিতে ঘুমের রাজ্যে পদর্পন করলো।

____________

মেঘ হসপিটাল থেকে এসেছে অনেক্ষন হয়েছে। মনটা কেমন কু ডাকছে তার মনে হচ্ছে এখুনি আমানের বড়সোড় ক্ষতি হয়ে যাবে। মেঘ দুশ্চিন্তা নিয়ে নিজের বিছানায় পড়লো। মেঘের ফোন বেজে উঠলো। মেঘ দ্রুত ফোন হাতড়ে ফোনটা রিসিভ করলো। অতঃপর চিন্তিত গলায় বললো,

‘ ড্রাইভার কাক্কু! কি হয়েছে আপনি এতো রাতে ফোন করেছেন কেন? ‘

‘ মেঘ মা! একটা বিরাট গন্ডগোল হইছে। ‘

মেঘের চিন্তা দ্বিগুনভাবে বেড়ে গেলো। মনে এসে হানা দিলো নানা কুরুচিপূর্ণ চিন্তাধারা। মেঘ উঠে দাঁড়িয়ে আস্তে করে বললো,

‘ মিঃ আমান শিকদার ঠিক আছো তো? ‘

‘ মা! তুমি এতো উত্তেজিত হয়ো না। স্যার একদম ঠিক আছে কিন্তু….’

‘ কিন্তু কি? ‘

‘ অয়ন স্যার জেনে গিয়েছে সব। তিনি জেনে গিয়েছেন আপনি আমানকে স্যারকে নিয়ে পালিয়ে এসে, হসপিটালে ভর্তি করিয়েছেন। ‘

মেঘ ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে। মাথা তার কাজ করছে না। তার ভাই জেনে গিয়েছে মানে সে নিশ্চই আমানের ক্ষতি করে ফেলবে কিন্তু অয়ন এখনো কেন শান্ত হয়ে রয়েছে? এতোক্ষন তো তার লংকাকান্ড বাঁধিয়ে ফেলার কথা। সেখানে একদম শান্ত হয়ে আছে। ব্যাপারটা বেশ সন্দেহের লাগলো মেঘের। তবুও তাতে গুরুত্ব না দিয়ে মেঘ চটজলদি বলে উঠলো,

‘ ড্রাইভাদ কাক্কু! আপনি এখুনি গাড়ি বের করেন। ‘

‘ কিন্তু কেন মা? ‘

মেঘ কিছুক্ষন চুপ থেকে গম্ভীর গলায় বললো,

‘ আমি মিঃ আমানকে নিয়ে আমার ফ্রামহাউজে যাবো। যা গত বার্থডেতে গ্রেন্ডমা আমাকে দিয়েছিলো। আশা করি ভাইয়া সেখানে আমাদের খুঁজে পাবে না। ‘

‘ কখন বের হবে? ‘

‘ কালকে সকালের দিকে। বাড়িতে বলে যাবো কয়েকদিনের ট্যাুরে যাচ্ছি। ‘

ড্রাইভার হয়তো আর কিছু বলতে চেয়েছিলেন কিন্তু মেঘের গম্ভীর আদেশে তিনি থেমে গেলেন। মন–মস্তুষ্কে তার নানা চিন্তা এসে জটলা পাঁকাচ্ছে। তিনি বুঝতে পারছেন না মেঘের মতো এইটুকু একটা মেয়ের কেন এতো দুশ্চিন্তা অপরিচিত এক যুবকের জন্যে? কিন্তু ড্রাইভার একটা বিষয় খুব ভালো করেই বুঝতে পারছেন মেঘ আপাতত আগুন নিয়ে খেলছে।

______________
প্রকৃতি খুলেছে তার দখিনা দুয়ার। ফাগুন হাওয়ায় ফুটেছে অশোক-পলাশ; দল মেলেছে নানা রঙের নানা ফুল। ফুলে-ফুলে, ঢলে-ঢলে প্রকৃতিতে ঋতুরাজ বসন্তের আগমন বার্তা। রিমি এবং জয়িতা হসপিটালের পাশের হেটে চলেছে। জয়িতা ভয়ে ভয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। অয়নকে সে যথেষ্ট ভয় পায়। রিমির থেকে সে যথেষ্ট দূরত্ব নিয়ে হেটে চলেছে। যদি আবারোও সেদিনের মতো এসে অয়ন তার দিকে ছুড়ি তাক করে? তখন কি হবে? কথাটি ভেবেই শুকনো ঢুগ গিলে। রিমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে। অয়ন সবার ভিতরে এমন এক আতন্ক সৃষ্টি করে দিয়েছে,যার ফলে সবাই এখন রিমির সাথে তেমন একটা মিশেও না। নিরবতা ভেঙ্গে সর্বপ্রথম জয়িতা মুখ খুললো। রিমির দিকে প্রশ্ন নিক্ষেপ করে বললো,

‘ আচ্ছা রিমি! কালকে তো ভেলেন্টাইন ডে। তোর কি কোন প্ল্যান আছে নাকি সাইকো জিজুর সাথে? মানে
আমার তো মনে সাইকো জিজু তোকে একটা বিরাট বড় বাড়ি গিফ্ট করবে দ্যান বলবে রিমিপরী তোমার বাইরে যাওয়ার দরকার নেই। শুধু শুধু লোকের নজর পড়বে। তার থেকে ভালো তুমি বরং এই বাড়িতেই বন্দী থাকো।’

কথাটি বলেই হু হা করে হেসে দিলো। রিমি বিরক্ত নিয়ে বললো,

‘ খুবই বাজে জোক ছিলো। ‘

‘ তাহলে এর অপরাধে তোর সাইকো জামাই কি আমার হাত কেটে দিবে? ‘

রিমি জয়িতার কথার প্রেক্ষিতে কিছু বলবে তার আগেই থেমে গেলো। ফোনটা বেজে উঠলো তার তৎক্ষনাৎ। ফোন রিসিভ করে শুনতে পেলো অপরপাশ থেকে কেউ বলছে,

‘ ভাবি! অয়ন ভাইকে কেউ গুলি করেছে। ভাইয়ের অবস্হা ভালো না।’

চলবে……
#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব-৩১
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
রিমি একমুহুর্তের জন্যে থমকে গেলো। অয়নকে কেউ গুলি করেছে কথাটি কানে আসতেই তার হিতাহিতজ্ঞান শূন্যের কৌঠায় পৌঁছে গিয়েছে। রিমিকে অস্হির হতে দেখে জয়িতার ললাটের মাঝ বরাবর বলিরেখায় ধারণ করে বেশ চিন্তার ভাঁজ। জয়িতা রিমির দিকে এগিয়ে যায়। রিমি এখনো হাতে ফোন নিয়ে কান পেতে রয়েছে স্হীর হয়ে। জয়িতা রিমিকে ঝাঁকিয়ে বলে,
‘ এইভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন তুই?
জয়িতার ডাকে রিমির হুশ ফিরে। কম্পিত গলায় মিনমিন করে বলে উঠে,

‘ উনাকে কেউ গুলি করেছে। ‘

‘ মানে! কি বলছিস তুই? কে ফোন করেছিলো তোকে?’

জয়িতার প্রশ্নে রিমি কিছুক্ষন চুপ থেকে পুনরায় উত্তেজিত হয়ে বলতে থাকে,

‘ উনাকে কেউ গুলি করেছে। আমাকে এখুনি যেতে হবে। জয়িতা আমার মাথা কাজ করছে না। উনি ঠিক আছেন তো? ‘

জয়িতা অবাক নয়নে রিমির পানে তাকিয়ে আছে। রিমির নেত্রকোণে স্পষ্ট জল চকচক করছে মুক্তার ন্যায়। রিমির কন্ঠে আজ ভয়। নিজের কাছের মানুষকে হারানোর ভয়। তবে কি অয়নও রিমির জীবনের কাছের মানুষে রুপান্তরিত হয়ে গেলো রিমির অজান্তেই? রিমি আবারোও সেই ডায়ালকৃত নাম্বারে ফোন দিলো যেই নাম্বার থেকে তাকে ফোন করা হয়েছিলো। সাদেক একটি চেয়ারে বসে ছিলো। ফোনের স্ক্রিনে ‘ Vabi ‘ নামখানা জ্বলজ্বল করে ভেঁসে উঠতেই দ্রুত গতিতে সাদেক ফোনটা রিসিভ করলো। অনুনয়ের সুরে বললো,

‘ ভাবি বলুন। ‘

রিমির অস্হির হয়ে জিজ্ঞাসা করে, ‘ আপনি তো কিছুক্ষন আগে আমাকে ফোন করে জানালেন, ডক্টর এয়ারসিকে কেউ নাকি গুলি করেছে। এখন উনি কোথায়? উনি ঠিক আছেন তো? কি হলো বলছেন না কেন?’

রিমির এতো প্রশ্ন একসাথে করায় হতভম্ব হয়ে গেলে সাদেক। সে কোনটার প্রশ্ন আগে দিবে তা নিয়ে বেশ দ্বিধায় পড়ে গেলো। সাদেক গলা খাকড়ি দিয়ে বললো,

‘ ভাবি আপনি বরং আমার মেসেজ ঠিকানা দেওয়ার জায়গাটি চলে আসুন। সেখানেই ভাই আছে। আপনার সব প্রশ্নের উত্তর এখানে আসলেই পেয়ে যাবেন। ‘

রিমি কিছু বলতে পারলো না। তার আগেই সাদেক ফোনটা কেটে দিলো। রিমি সাদেকের মেসেজ করা ঠিকানার উদ্দেশ্য রওনা দিলো। সাদেক ফোনটা কেটে পকেটে ঢুকিয়ে তার সামনে থাকা অয়নের দিকে তাকালো। স্লিভ কটনের সাদা শার্ট পড়ে আছে অয়ন। ফর্সা দেহে তা বেশ ভালোই খাপ খায়িয়ে গিয়েছে। বেশ সুদর্শন লাগছে অয়নকে। অয়নের বাম হাতের বাহুতে ব্যান্ডিজ করা। গুলিটা বের করে তাতে ব্যান্ডিজ করা হয়েছে। অয়ন সুবিশাল রুমের খাটে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। তারই বিপরীত চেয়ারে সাদেক গম্ভীর মুখে কিছুটা ভয় নিয়ে বসে আছে। ভয়টা হচ্ছে রিমি যখন অয়নের কথা জানতে পারবে তখন কি হবে তার প্রতিক্রিয়া? ভেবেই তরতর করে ঘামছে কিন্তু অয়ন! তার কি আদোও তা নিয়ে চিন্তা আছে? উহু একদমি নয়। তাইতো দিব্যি নিজের মনে হেঁসে চলেছে প্রতিনিয়ত। নিরবতা ভেঙ্গে সাদেক অয়নের দিকে প্রশ্ন নিক্ষেপ করে বলো,

‘ ভাই! ভাবি যদি জানে? ‘

‘ জানি রিমিপরী কষ্ট পাবে কিন্তু আমার বেশ ভালো লাগছে। হ্যা এই প্র‍থম রিমিপরীর কষ্টে, রিমিপরীর অস্হিরতা আমাকে তৃপ্তি দিচ্ছে। আনন্দিত করে তুলছে প্রতিনিয়ত। কেননা সেই কষ্টের কেন্দ্রবিন্দু আমি। রিমিপরীর জীবনের সব কষ্ট সব সুখ সব ভালোবাসা শুধু এই অয়ন চৌধুরীর। ‘

কথাটি বলেই আরেকপলক হাঁসলো অয়ন। সাদেক ভরকে গেলো। লোক ঠিকই বলে রিমির ভালোবাসায় অয়ন এক বদ্ধ উম্মাদে পরিনত হয়েছে। একজন লোক কতটা পাগল হলে নিজেকে গুলি করতে দুইবার ভাবেনা। কিছুক্ষন আগের কথা মাথায় চওড়া দিয়ে উঠতেই ভয়ে কেঁপে উঠে। সাদেক অফিসের কিছু কাগজ নিয়ে অয়নের সাথে দেখা করতে, অয়নের ফার্ম হাউজে এসেছিলো। অয়ন প্রায় অনেকটাসময় তার ফার্ম হাউজে সময় কাটায়। আজকেও হসপিটাল থেকে এসে সোজা নিজের ফার্ম হাউজে চলে এসেছিলো অয়ন। তাই সাদেকও অয়নের সাথে দেখা করতে ফার্ম হাউজে আসে। এসেই দেখতে পায় অয়ন তার ওয়াইনের গ্লাস একটার পর একটা ভেঙ্গে চুড়মার করে ফেলছে এবং প্রচন্ড তেজি গলায় বিড়বিড় করে বলছে,

‘ কেন! কেন রিমিপরী আমাকে ভালোবাসে না? আমি কি খুব খারাপ?যেই আখিতে আমি নিজের জন্যে অশ্রু দেখতে চেয়েছিলাম। সেই আখি আজ অন্যের অশ্রুে পরিপূর্ন। কেন রিমিপরী তুমি আমাকে ভালোবাসো না? ‘

অয়নের কষ্টেও সাদেকের ভিতরেও চিনচিনে ব্যাথা করে। সে অয়নকে খুব ভালো করেই জানে। মানুষটা খারাপ নয়, তাকে কেউ খারাপ বানিয়ে তুলছে প্রতিনিয়ত। সাদেক এগিয়ে এসে বলে,

‘ ভাই আপনি হয়তো ভুল বুঝছেন ভাবিকে। ভাবিও আপনাকে অনেক ভালোবাসে। দেখবেন কালকে যদি আপনার কিছু হয়, তাহলে ভাবিই সর্বপ্রথম কাঁদতে কাঁদতে আপনার কাছে দৌড়ে চলে আসবে। ‘

সাদেকের কথাটি কানে আসতেই, অয়ন পিছনে ঘুড়ে সাদেকের বাহু চেপে ধরে উৎফল্ল হয়ে বলে,

‘, কি বললে সাদেক? আজ যদি আমার কিছু হয় তাহলে রিমিপরী কষ্ট পাবে তাইনা? আর মানুষ তো তখনি কষ্ট পায় যখন তার প্রিয় কারোর ক্ষতি হয়। তার মানে রিমিপরী যদি আমার জন্যে কষ্ট পায়,তাহলে প্রমান হয়ে যাবে রিমিপরীও আমাকে ভালোবাসে। অনেক ভালোবাসে। ‘

কথাটি বলেই অয়ন নিজের পকেট থেকে নিজের বন্দুকটা বের করে,নিজের হাতের বাহু বরাবর গুলি করে। চমকে উঠে সাদেক। চিৎকার করে বলে,

‘ ভাই……’

অয়ন উচ্চসুরে হেঁসে উঠে। হাত থেকে অনবরত রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।অয়নের ডাকে অতীত থেকে ফিরে আসে সাদেক। অয়ন হাই তুলতে তুলতে বলে,

‘ রিমিপরী এলে আমার রুমে পাঠিয়ে দিবি। ‘

সাদেক মাথা নাড়িয়ে বেড়িয়ে যায়।

______________

মেঘ আমানের ঘুমন্ত মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে আছে। মানুষটা বড্ড সরল এবং গম্ভীর প্রকৃতির। মুখে কেমন একটা নিষ্পাপ এবং সরলতা লেপ্টে রয়েছে। মেঘ আমানের চুলগুলো হাত নাড়িয়ে ছুঁইয়ে দেয়। সামান্য নরে উঠে আমান। অপাশ হয়ে শুয়ে পড়ে। মুচকি হাঁসি দেয় মেঘ। মেঘ আমানের দিকে তাকিয়ে গালে হাত দিয়ে বললো,

‘ ওহে যুবক শুনছেন? আমার মনখানা পাচ্ছি না। বোধহয় চুরি হয়ে গিয়েছে। আপনার সরলতায় ভরপুর মুখস্রী আমার মন চুরি করে ফেলেছে। এখন কি আপনাম নামে আমার থানায় মামলা করা উচিৎ?’

অপাশ থেকে জবাব এলো না। আসবে কি করে? আমান তো ঘুমে রয়েছে। যাকে বলে গভীর ঘুম। ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছে আমানকে। আগামীকাল সকালের আগে আমানের ঘুম ভাঙ্গবে না। আমানকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়েই, হসপিটাল থেকে ড্রাইভারের সাহায্যে নিজের ফার্ম হাউজে নিয়ে এসেছে মেঘ,কিন্তু কালকে যখন আমানের ঘুম ভাঙ্গবে তখন কিরকম হবে তার প্রতিক্রিয়া? সে তো আদোও জানেনা সে এখন মেঘের ফার্ম হাউজে।

_______________

রিমি সাদেকের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী পৌঁছে যায় অয়নের ফার্ম হাউজে। গোটা রাস্তায় সে কতটা দুশ্চিন্তা পার করেছে তা তার টলমল করে নেত্রজোড়া এবং চিন্তিত মুখস্রীর দিকে তাঁকালেই বুঝা যায়। সাদেক রিমিকে দেখেই উঠে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে বলে,

‘ ভাবি! ভাই উপরে আছেন। ‘

‘ উনি ঠিক আছেন তো?’

রিমির প্রশ্নে সাদেক পূর্বের ন্যায় মাথা নিচু করেই জবাব দেয়, ‘ উপরে গেলেই বুঝতে পারবেন। ‘

রিমি এক মুহুর্তের জন্যে অপেক্ষা করেনা। দ্রুত এগিয়ে যায় অয়নের রুমের দিকে। অয়ন বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিলো আপনমনে। রিমির ডাকে দ্রুত সিগারেট ফেলে দেয়। রিমি হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে একপ্রকার। হাক ছেড়ে ডাকে,

‘ ডক্টর এয়ারসি আপনি ঠিক আছেন তো? ‘

অয়ন পিছে ঘুড়ে তাঁকায়। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে
তার কাঙ্ক্ষিত রমনী তার প্রিয় মানুষটি। যার জন্যে হাসতে হাসতে মরে যেতেও প্রস্তুত অয়ন। অয়নের বাম হাতে ব্যান্ডিজ দেখে তড়িৎ গতিতে এগিয়ে এসে,অয়ন হাত ধরে বলে,

‘ কে গুলি করলো আপনাকে? কীভাবে গুলি লাগলো আপনার হাতে? নিজের একটু খেয়ালও কি রাখতে পারেন না আপনি? ‘

অয়ন স্পষ্ট দেখতে পারছে তার রিমিপরীর চোখে অশ্রু। কন্ঠে তীব্র ভয়। যা শুধুমাত্র অয়নের জন্যে। অয়ন রিমির ললাটে অধর ছুঁইয়ে বলে,

‘ শান্ত হয়ে চুপটি করে বসো তো রিমিপরী। তোমাকে খানিক্ষন দেখে চক্ষের তৃষ্ণা নিবারণ করি। ‘

চলবে…..কী?