#তুমিময় নেশায় আসক্ত 🖤
#পর্ব-৩২
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অয়নের শীতল কন্ঠে বলা কথাটি মস্তিষ্কে প্রবেশ করতেই,রিমি থমকে যায়।অয়ন রিমির ললাটে ধরে অধর ছুঁইয়ে দেয়। রিমি খামচে ধরে অয়নের ব্যান্ডিজ করা বলিষ্ট বাহু। রিমির নখের ধারালো খামচিতে ক্ষিন্ন ব্যাথা পেলেও, চোখ বুজে আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয় অয়ন। রিমির থুত্নি উঁচু করে, রিমির অশ্রুশিক্ত আখিজোড়ার দিকে তাকিয়ে অয়ন হাসিমুখে বলে,
‘ আমার প্রতি তোমার আকুলতা,তোমার ভিতরের তীব্র ব্যাথা আমাকে বড্ড তৃপ্তি দিচ্ছে রিমিপরী। বড্ড সুখী মনে হচ্ছে নিজেকে। ‘
অয়নের কথায় বেশ বড়ভাবে বিষ্মিত হলো রিমি। আমতা আমতা সুরে বললো,
‘ মানে! কি বলছেন আপনি? ‘
অয়নের মুখের হাঁসি প্রসস্ত হলো বেশ বডভাবে। রিমির কানের কাছে ফিসফিস সুরে বলতে লাগলো,
‘ তোমার ডক্টর এয়ারসিকে গুলি করবে, এমন সাধ্য কারো নেই রিমিপরী। আমি তো শুধু তোমার জীবনে নিজের গুরুত্বটা উপলব্ধি করার জন্যে, নিজেই নিজের হাতের বাহুতে গুলি করে দিয়েছি। ‘
রিমি সঙ্গে সঙ্গে পিছিয়ে গেলো। নেত্রকোনে জ্বলজ্বল করলো। চোখ চলে গেলো অয়নের বলিষ্ট বাহুর ব্যান্ডিজের দিকে। রক্তগুলো শুকিয়ে গিয়েছে। ক্ষতগুলো কিছুটা অস্পষ্ট! রিমি চোখ সরিয়ে নিলো।
গলা ফেঁটে কান্না চলে আসলো তার। লোকটা সত্যি পাগল।যাকে বলে সাইকো! নাহলে কেউ নিজের হাতে কেউ গুলি করে? হুট করেই রিমির মাঝে বেশ অভিমান এসে ভীর করতে লাগলো। রিমি হঠাৎ করেই অয়নের কলার চেপে ধরে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলতে থাকে,
‘ কেন করলেন? কেন নিজের ক্ষতি করলেন আপনি? এতো রক্ত ঝরিয়ে কি লাভ হলো? এতো পাগল কেন আপনি? ‘
‘ সামান্য রক্ত ঝরিয়ে যদি তোমার আখিঁতে নিজের প্রতি ভালোবাসা দেখা যায়,তাহলে আমি প্রতিবার রক্ত ঝরাবো। ‘
অয়নের পাগলামো কথায় ভরকে গেলো রিমি। কপাট রাগ দেখিয়ে বললো,
‘ আপনার শরীর থেকে রক্ত ঝরার ফলে আমার আপনার প্রতি যা কনসার্ন, সবকিছুই একজন মানুষ হিসেবে। আপনার প্রতি আমার কোন আলাদা ভালোবাসা নেই। ‘
রিমির কথা শুনে অয়নের তেমন প্রতিক্রিয়া হলো না। শান্তভাবে হাত ভাজ করে শান্ত দৃষ্টিতে রিমির পানে তাকিয়ে রইলো। অয়নের কাজে রিমি কিছুটা অবাক হলেও চুপ করে থাকে। অয়ন পুনরায় রিমির দিকে এগিয়ে যায়। অতঃপর রিমিকে পাজকোলে তুলে নেয়। রিমিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে, অয়ন রিমিকে ড্রাইনিং টেবিলে চুপটি করে বসিয়ে দেয়। অতঃপর হাটু গেড়ে বসে রিমির হাত দুটো শক্ত করে আকড়ে ধরে বললো,
‘ চুপটি করে বসে থাকো তো রিমিপরী। তোমায় পরান ভরে দেখি কিছুক্ষন৷ ‘
‘ সারাক্ষন তো দেখতেই থাকেন, তবে আজ আমাকে দেখার জন্যে এতোটা আকুল কেন হচ্ছেন আপনি?’
রিমির প্রশ্নে আরেকদফা মুচকি হাঁসে। রিমির চুলে হাত দিয়ে, কানে গুজে দিতে দিতে বলে,
‘হাজারো বছর দেখিলেও তোমাকে দেখার প্রখর তৃষ্ণা নিবারণ হবে না রিমিপরী। ‘
রিমি থমকালো। শুকনো ঠোটজোড়া ভিজিয়ে নিলো। মাথা ঝিম ধরে গেলো। বসে থাকতে ইচ্ছে করলো না তার। মন চাইছে ছুটে গিয়ে কোথাও লুকিয়ে বসে থাকতে। তাহলে বোধহয় তার লজ্জাটা কিছুটা হলেও কমতো, কিন্তু তা কি আদোও সম্ভব? রিমি দেখতে পারছে অয়ন কতটা শান্ত হয়ে মুগ্ধতা নিয়ে বসে আছে তার রিমিপরীর দিকে। লোকটার যত পাগলামি সব তো তার প্রিয়সী তার স্ত্রীকে ঘিড়েই। বাচ্চা ছেলে যেমন তার পছন্দের খেলনা পেয়ে গেলে শান্ত হয়ে যায়, তেমনি অয়নও তার রিমিপরীকে পেয়ে একদম শান্ত, একদম নির্বিকার হয়ে রয়েছে।
______________
গাছ থেকে ঝরে পড়ছে পুরাতনি যতো ধূসর পাতা। আর তার জায়গা বদল করছে সবুজ কিশলয়। আচানক কোথাও ডেকে উঠছে কোকিল। রঙে-বেরঙের ফুলে ভরে উঠছে বাগানগুলো। দীর্ঘ শীতের কুয়াশা মোড়ানো প্রান্তর পাড়ি দিয়ে অবশেষে আমাদের দোরগোড়ায় এসেছে ফাল্গুন। এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত! আজ শুধুই কি বসন্ত? উহু আজ ভালোবাসা দিবসও বটে।মানব-মানবীর চিরন্তন ভালোবাসা উড়ছে রঙিন প্রজাপতি হয়ে।
অন্যান্য যুবক যুবতীর মতো আজ সানার জীবনেও ভালোবাসার রঙ্গে রঙ্গিন হয়ে উঠেছে। আজকে সানা
শাড়ি পড়েছে শুধুমাত্র ফারহানের জন্যে। আজ ভালোবাসা দিবসেও সানা ফারহানকে মনের কথা খুলে ফেলবে। সানা শাড়ি পড়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে। অফিসে যাওয়ার পথেই সানা দেখতে পায়, ফারহানের গাড়ি একটি হসপিটালের সামনে থেমে রয়েছে। ফারহানের গাড়ি হঠাৎ হসপিটালের সামনে কেন? প্রশ্ন জাগে সানার মনে। সেই প্রশ্নের উদঘাটন করতে, সানা এগিয়ে যায় হসপিটালের উদ্দেশ্যে। সেখানে গিয়ে দেখতে পায় ফারহান একটি কেবিনের ভিতরে প্রবেশ করছে হাতে তার টকটকে লাল গোলাপ। সানার বেশ খটকা লাগে। ফারহান কার জন্যে গোলাপ নিয়ে গেলো। সানাও এগিয়ে গেলো কেবিনের উদ্দেশ্যে। কেবিনে গিয়েই ফারহানের কান্নার আওয়াজ কানে আসতেই,একপ্রকার থমকে যায় সানা। ফারহান কাঁদতে কাঁদতে তার সামনে থাকা রমনীর হাতজোড়া আকড়ে ধরে বলে,
‘ হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন ডে মাই লাভ। আজকের দিনটা তোমাকে ছাড়া আমি কাটাতেই পারছিলাম না। তাইতো ছুটে এলাম তোমার দারপ্রান্তে। দেখো তোমার প্রিয় গোলাপ ফুলটাও নিয়ে এসেছি। এই সুমু! কথা বলো না? তুমি কি এখনো আমার উপর অভিমান করে থাকবে? ‘
অপাশ থেকে কোনপ্রকার উত্তর এলো না। উত্তর আসবে কি করে? কোমায় থাকা মানুষ কি কখনো কথা বলতে পারে?ফারহান আশাহত হলো।
সানা ধপ করে বসে পড়লো। মুখ চেপে কান্না সংযত করার প্রয়াস করতে লাগলো। সে তো জেনেছিলো সুমাইয়া বেঁচে নেই তাহলে সে কী করে জীবিত রয়েছে?
__________________
রুহানা চৌধুরী বার বার অয়নের নাম্বারে অনবরত ফোন করে যাচ্ছে,কিন্তু বরাবরের মতো তার নাম্বার বন্ধ! রুহানা চৌধুরীর ঠিক সামনেই বসে রয়েছে রুজা চৌধুরী এবং আশরাফ চৌধুরী। আশরাফ চৌধুরী বিরক্ত হয়ে তিক্ত মেজাজে রেগে বললেন,
‘ মা! জানো তো অয়ন তোমার ফোন ধরবে না। তাহলে কেন এতো ফোন দিচ্ছো। ‘
রুহানা চৌধুরী পায়ের উপর পা তুলে বলে,
‘ অয়নের সাথে খুব জরুরী কথা আছে আমার। ‘
‘ কি এমন জরুরী কথা? ‘
রুজার প্রশ্নে রুহানা খুব সাধারন ভাবেই বললেন,
‘ আমার আদরের নাতী আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই আমার এখন অয়নের সাথে পুনরায় সম্পর্কটা ঠিক করতে হবে। ‘
‘ কিন্তু কি করে তা সম্ভব? ‘
রুজা এবং আশরাফ একসাথে প্রশ্ন ছুড়ে মারে রুহানা চৌধিরীর উদ্দেশ্যে। রুহানা চৌধুরী সামান্য হাসে মাত্র।
______
অয়নের পুরো ফার্ম হাউজে শুনশান নিরবতা। আজ অয়ন ঠিক করেছে রিমি এবং সে আজকে ফার্ম হাউজেই কাটিয়ে রাতটি কাটিয়ে দিবে। ফার্ম হাউজে
চারদিকে শুধু দেহরক্ষীদের ছড়াছড়ি। তারা বন্দুক হাতে পাহারা দিয়ে চলেছেন প্রতিনিয়ত। রিমির কাছে দমবন্ধ লাগছে ব্যাপারটা। আজকে ভালোবাসা দিবস উপলক্ষ্যে যেখানে সকল প্রেমিক প্রেমিকা ভালোবাসায় রঙ্গিন হয়ে উঠছে সেখানে রিমি বন্দী জীবন পার করছে। রিমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে। হয়তো তার ভাগ্যে সাধারণ মানুষের মতো জীবম-যাপন লেখা নেই। রিমির ভাবনার মাঝেই, অয়ন পিছন দিয়ে রিমিকে জড়িয়ে ধরে। রিমি কেঁপে উঠে। অয়ন রিমিকে জড়িয়ে ধরেই বলে,
‘ রিমিপরী তোমার নিরবতা আমাকে বড্ড কষ্ট দেয়। কি হয়েছে খুলে বলো আমাকে? ‘
‘ আজকে তো ভ্যালেন্টাইন ডে। একটা গিফট চাইবো দিবেন আমাকে? ‘
রিমির প্রশ্নে অয়ন কিছুটা অবাক হলেও, পরক্ষনে খুশি হয়ে বলে,
‘ কি চাই বলো রিমিপরী? তুমি যা চাইবে তাই দিবো। একবার শুধু চেয়ে দেখো। সবকিছু দিবো। এখনি বলো ড্রেস চাই? গয়না চাই? কি চাই একবার বলো?’
রিমি অয়নের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গলায় গম্ভীরতা নিয়ে এসে বলে,
‘ এইসব গয়না দামি গিফটের প্রতি আমার কোনদিনই আকর্ষন ছিলো না। আপনি জানেন ডক্টর এয়ারসি। ‘
‘ তাহলে কি চাই বলো?’
‘ মুক্তি চাই আমার……..’
চলবে….কী?
#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত
#পর্ব-৩৩
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
‘মুক্তি চাই’ শব্দটির সাথে ডিভোর্স নামক তিক্তমাখা শব্দটি মস্তিষ্কে প্রবেশের পূর্বেই সমস্ত মুখস্রীতে লাল বর্ন ধারন করলো অয়নের। অয়ন হাত বাড়িয়ে রিমির বাহু আকড়ে ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। রিমি ব্যাথা পেলেও টু শব্দ টাও মুখ থেকে বের করেনা। স্হির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। অয়ন রাগে ফুশফুশ করছে। স্হীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা তার পক্ষে মুশকিল হয়ে উঠেছে। তার রিমিপরীকে ভালোবাসার কোন কমতি তো সেই রাখেনি তাহলে কেন তার রিমিপরী তার কাছে মুক্তি চাইছে কেন? অয়নের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয়। রিমি থেকে দূরত্ব বজিয়ে রুমের জিনিসপত্র ভাঙ্গচুর শুরু করে দেয়। তবুও যেন রাগ কমেনা তার। পকেটে হাত ঢুকিয়ে ওষুধ বের করতে নিয়ে ওষুধ টা খেয়ে নিলো। বিছানায় চুল খামচে ধরে বসলো। রাগ কমছে না।
সময়ের সাথে সাথে বেড়েই চলছে প্রখরভাবে। অয়নের ইচ্ছে করছে রিমিকে কোন কঠিনতম শাস্তি দিতে,যেন সে দ্বিতীয়বারের মতো ভুল না করে,কিন্তু অয়ন তো তার ভালোবাসার কাছে অসহায়। চাইলেও কিচ্ছুটি করতে পারবে না সে তার রিমিপরীকে। অয়ন তার ওষুধটা পকেটে রেখে দিতে চাইলে, রিমি অয়নের হাত হুট করে ধরে ফেলে। ওষুধের দিকে তাকিয়ে সংদেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
‘ এই ওষুধ টা খান কেন আপনি? কি আছে এই ওষুধে? ‘
অয়ন একপ্রকার ঘাবড়ে গিয়েই দ্রুততার সঙ্গে পকেটে ওষুধটা রেখে দিলো। অতঃপর গলার স্বর শক্ত করে কপাট রাগ দেখিয়ে বললো,
‘ তার আগে তুমি বলো আমাকে। কেন তুমি মুক্তির কথা তুললে। কোন সাহসে বললে তুমি? ‘
রিমি নিরব রইলো।অয়ন ওষুধের বিষয়টি নিরবে দমিয়ে দিলো। তবুও অয়ন নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারছে না। রিমি কিছুটা সাহস সংচয় করে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
‘ আমিও তো মানুষ অয়ন চৌধুরী। আমারোও তো ইচ্ছে করে আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো বেঁচে থাকতে।আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো প্রিয় মানুষটার সাথে রাস্তায় হাতে হাত ধরে হাঁটতে। আমারোও তো ইচ্ছে করে অন্য মেয়েদের মতো প্রেমিকা হয়ে প্রেমিকের থেকে গোলাপ ফুল পেতে।
আমার দামি গিফট চাই না। আমি সাধারণ মানুষের মতো বেঁচে থাকতে চাই। আমার বন্দী জীবনটা ভালো লাগছে না ডক্টর এয়ারসি। ‘
রিমির গভীর আকুতি আদোও কি অয়ন শ্রবণ করলো?কিংবা অয়নের মন মস্তিষ্কে প্রবেশ করলো?
হয়তো করেছে।হয়তো নয়। অয়নের মেজাজ তুঙ্গে উঠে গেলো সঙ্গে সঙ্গে। বার বার কেন রিমি নিজেকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে তুলনা করছে? রিমি তো সাধারণ নয়। যাকে বলে এক অসাধারণ এক রমনী। তাইতো অয়ন চৌধুরী রিমিতে মন দিয়ে বসেছে। বদ্ধ উম্মাদে পরিনত হয়েছে। অয়ন রিমির গালে হাত দিয়ে নিষ্প্রান দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে থাকে। রিমি হেচকি তুলে কাঁদছে। উজ্জ্বল মুখস্রী কেমন একটা ফ্যাকাশে হয়ে উঠেছে মুহুর্তেই। অয়ন রিমিকে কাঁদতে দেখে, অয়ন অসহায় পানে তাকিয়ে রইলো।
হাত বাড়িয়ে রিমির আখিজোড়া থেকে চোখের জলটুকু নিমিষেই, মুছে দিলো। রিমি স্হীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অয়ন রিমির হাত ধরে রিমিকে বাইরের দিকে নিয়ে যায়। অতঃপর রিমিকে গাড়িতে বসিয়ে, নিজেও বসে পড়ে। গাড়ি নিজ গতিতে চলতে শুরু করে।রিমি অয়নকে প্রশ্ন করার সাহসটুকু পায় না। অয়নের ফর্সা মুখস্রীতে ললাটের বেশ খানিক্টা অংশ জুড়ে ঠায় নিয়েছে তার অবাধ্য ঘন লেপ্টে থাকা চুলগুলো। অসম্ভব সুন্দর লাগছে অয়নকে। অয়ন গাড়ি চালানোর মাঝে মাঝে বাম হাতের কালো শার্টের হাতা টা গুটিয়ে নিচ্ছে। বাম হাতে গুলি লেগে থাকায়, অয়ন সাবধানতার সাথে ডান হাত দিয়েই ড্রাইভ করে যাচ্ছে। রিমি অন্যমসষ্ক তার পাশে বসে থাকা সুদর্শন ব্যক্তিকে পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছে। ভাবতেই অবাক লাগে এমন সুদর্শন মানুষটা তাকে ভালোবাস। যাকে বলে পাগলের মতো ভালোবাসা।
আফসোস এই পাগল ভালোবাসাটাই রিমির জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ালো।
___________________
মেঘ আমানের বেডের পাশে একটি চেয়ারে বসে মাথা নিচু করে বসে আছে। চোখে তার রাজ্যের ঘুম। তবুও ঘুমাচ্ছে না। আমানের ঘুম ভেঙ্গে গেলে যদি তার কিছু লাগে তখন? তাই মেঘ ঠিক করেছে ঘুমাবে না। মেঘ তার অবাধ্য চুলগুলো একটা কাকড়া নিয়ে
বেঁধে ফেলে উচু করে। মুখ হাত দিয়ে বার বার ঘুম তাড়ানোর প্রচেষ্টায় থাকে। তবুও অবাধ্য ঘুম তাকে বশে নিয়ে আসছে মুহুর্তের মাঝেই মেঘের চোখ-মুখে ধরা দেয় একরাজ্যের ঘুম। আমানের চোখ মুখ কুচকে উঠে। ঘুমের ওষুধের কাজ বোধহয় এতোক্ষনে শেষ হয়ে গিয়েছে। আমান উঠে বসলো বিছানার চাদর সরিয়ে। নিজেকে একটি অপরিচিত জায়গায় আবিষ্কার করলো। রুম টা অন্ধকার হলেও আশে-পাশে মোমের আলো দিয়ে আলোকিত হয়ে উঠেছে। আমান ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখতে পায় মেঘ মাথা ঘুমিয়ে পড়েছে। গাঁয়ে স্কুলের ড্রেস। শ্যামবর্ন মুখশ্রীতে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। আমান মেঘকে দেখেই চিনে ফেললো, মেঘ অয়নের বোন হয় সম্পর্কে,কিন্তু মেঘ এবং সে একই রুমে কেন? সে আপাতত কোথায় অবস্হান করছে? মষ্তিষ্কে প্রশ্নটি ঝটলা পাঁকাতেই আমান হাক ছেড়ে ডাকে,
‘ এইযস শুনছেন আপনি? শুনছেন? ‘
মেঘ সবেমাত্র ঘুমের মাঝে আখিঁজোড়া বন্ধ করে রেখেছিলো,আমানের ডাকে হন্তদন্ত হয়ে আখিঁজোড়া খুলে ফেলে। আমানকে বসে থাকতে দেখে অস্হির হয়ে মেঘ দ্রুত উঠে যায়। অতঃপর নিচু হয়ে বলে,
‘ আপনার শরীরের অবস্হা কেমন? আপনি সুস্হ আছেন তো? ‘
আমান সুদীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
‘ হ্যা! আমি ঠিক আছি আপাতত, কিন্তু আমি এখানে এলাম কী করে? ‘
মেঘ কিছু না বলে তার পাশে থাকা কফির কাপটি হাতে নিয়ে পাশের রান্নাঘরে চলে যায়। অতঃপর বিকালের কফিটা গরম করে, কাপে ঢেলে নেয়। সেই কফি আমানের রুমে এনে, আমানের হাতের দিকে বাডিয়ে পূর্বের ন্যায় নিচু গলায় বলে,
‘ আপনি কফিটা খেয়ে নিন। আমি আপনাকে সব বলছি। শুরু থেকে। ‘
আমানও বসে পড়ে। মেঘ চেয়ার নিয়ে আমানের সামনসামনি বসে পড়ে। অতঃপর শুরু থেকে সকল ঘটনা খুলে বলে। সে কীভাবে অয়নের হাত থেকে আমানকে বাঁচিয়ে ফ্রাম হাউজে নিয়ে এসেছে।
____________________
ভরা পর্ণিমার রাতে নিটোল চাদ তার ঝলমলে আলাের পসরা নিয়ে উপর আকাশে আবির্ভূত হয়।
এ রাতে প্রকতি মায়াবী রূপ-মাধুর্যে ভরে ওঠে। পূর্ণিমা নিশিতে নির্জন অরণ্যের আলো-ছায়া জড়ানাে পথে একসাথে হাতে হাত ধরে হেঁটে চলেছে অয়ন এবং রিমি। পাশে বয়ে চলেছে নদীর স্রোত। শীতের রাতে মৃদ্যু বাতাসে রিমির শরীর ভালোলাগার স্রোত বয়ে চলেছে। পাশেই নদীর স্রোতের মৃদ্যু শব্দ। সবমিলিয়ে মোনরম একটি পরিবেশ। প্রেয়সীর আবদারে মানতেই, অয়ন এতোদূর ছুটে এসেছে মধ্যরাতে। অয়নকে রিমিকে নিয়ে শহর থেকে দূরে একটি নির্ঝন জায়গায় নিয়ে এসেছে। রিমি বেশ উপভোগ করছে পরিবেশটা। রিমি কখনো ভাবেনি,তার আবদার পূরনে অয়ন তাকে এতোদূর নিয়ে আসবে। রিমির প্রথম মনে হচ্ছে সে অয়নের স্ত্রী নয়। একজন প্রেমিকা। তাইতো প্রেমিক পুরুষের ন্যায় অয়ন রিমির আবদার পূরন করেছে,কিন্তু অয়নের মুখে গম্ভীর্য। হঠাৎই অয়ন রিমিকে আকড়ে ধরে পাশের ব্যান্চেতে বসিয়ে দেয়। অতঃপর গলার স্বর উঁচু করে বলে,
‘ তখন কি যেন বলেছিলো। তোমার মুক্তি চাই তাইনা? ‘
রিমি নিষ্চুপ হয়ে থাকে। অয়ন হাটু গেড়ে রিমির কোলে মাথা গুজে ভেজা গলায় বিড়বিড় করে আওড়াতে থাকে,
‘ মুক্তি তুমি কখনোই পাবে না রিমিপরী। অয়ন চৌধুরীর বন্দিনী হয়েই তোমাকে আজীবন কাটাতে হবে। ভেবে না আমার মৃত্যুর পর তুমি মুক্তি পেয়ে যাবে। আমি মরে গেলেও তোমার সঙ্গ ত্যাগ করবো না রিমিপরী। সর্বদা তোমার অস্হিত্বে মিশে রইবে তোমার সাইকো। ‘
চলবে……..কী?