তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব-৩৪+৩৫

0
1107

#তুমিময় নেশায় আসক্ত 🖤
#পর্ব- ৩৪
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অয়নের মরে যাওয়ার কথাটি কর্নে প্রবেশের সাথে সাথেই রিমির বুকের ভিতরে স্পন্দনে কম্পিত হলো
কাছের মানুষটিকে হারানোর ভয়ে। থেমে গেলো প্রঃশ্বাস। নেত্রকোণে জল এসে ছলছল করে দিলো মুহুর্তেই।অয়ন দূর্বোধ্য হাঁসলো। নিবিড়ভাবে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো তার রিমিপরীকে। রিমি কিছু একটা ভেবে অয়নের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে,কম্পিত গলায় প্রশ্ন করে,
‘ যে আপনাকে ভালোবাসে না। তাকে বন্দী করে কি লাভ? ভালোবাসার মানে বন্দী নয়,ভালোবাসা মানে
স্বাধীনতা। ভালোবাসার মানুষকে পাখির ন্যায় মুক্ত করিয়ে দিতে পারার মধ্যে এক আলাদা স্বার্থকতা আছে ডক্টর এয়ারসি। ‘

কথাটি বলে রিমি উঠে দাঁড়িয়ে অয়নের থেকে দূরত্ব বজিয়ে নদীর দিকে নিষ্প্রান দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
রাগটাকে ধমিয়ে, শীতল কন্ঠে অয়নে বলে উঠে,

‘ ভালোবাসার ভিন্ন প্রকৃতি রয়েছে রিমিপরী। সব ভালোবাসা মুক্তি দেয় না রিমিপরী। কিছু কিছু ভালোবাসা আজীবন আকড়ে ধরে। বন্দী করে রাখে ভালোবাসার মায়াজালে। আমিও আজীবন তোমাকে আকড়ে ধরে বেঁচে থাকবো। আজ ভালোবাসা দিবসে তোমাকে আমি ওয়াদা করলাম রিমিপরী। ‘

রিমি অয়নের কথা শুনে নিশব্দে চোখের জল ফেলে।
অয়নের প্রতিটা মোহনীয় কথা অয়নের প্রতি রিমিকে নিজের অজান্তেই দূর্বল করে তুলছে। প্রকৃতি নিস্তব্ধ শান্ত,নিবিড়। তাইতো এতোটা চুপচাপ প্রকৃতির মাঝে রিমির নিশব্দ কান্না উপলব্ধি করতে পারছে। অয়ন রিমির আখির দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ আমার প্রতি তোমার মনে খুব ক্ষোভ! খুব রাগ তাইনা রিমিপরী? তাইতো আমাকে প্রতিনিয়ত শাস্তি দিচ্ছো। তুমি জানো তোমার কান্না আমার বুকের ভিতরে তীরের মতো গিয়ে লাগে। রক্তক্ষরণ হয়। যার ফলে আমাকে কষ্ট দিতে, ইচ্ছে করে কাঁদো তুমি। কি অদ্ভুদ শাস্তির টেকনিক তোমার জাস্ট ওয়াও!’

‘ আমি ইচ্ছে করে কান্না করি? আমার কষ্ট হয় না বুঝি? ‘

অয়ন রিমির প্রশ্নের উত্তর দেয় না। হাত বাড়িয়ে পকেট থেকে টিস্যু বের করে রিমির চোখ মুছিয়ে পুনরায় রেখে দিলো। অতঃপরফোন বের করে গুতুগুতি শুরু করে দিলো। অফিসের বেশ কয়েকটি মিটিং শুধুমাত্র অয়নের জন্যে আটকে রয়েছে। অয়নকে ছাড়া সেসব মিটিং শুরু হবেনা। বলতে গেলে চৌধুরী কম্পানি অয়নকে ছাড়া বেশ অচল। কম্পানির সিইউ বলে কথা। কম্পানির এতো খারাপ অবস্হার জন্যেই তো রুহানা চৌধুরী পূর্বের ন্যায় অয়নের সাথে সম্পর্কটা ঠিক করার প্রচেষ্টা করছেন। কথাগুলো ভেবে তাচ্ছিল্যের হাঁসি ফুটে উঠে অয়নের অধরের কোণে। সত্যি আজকাল কাছের মানুষগুলোও ভালোবাসে না। তারা শুধু স্বার্থের পিছনে ছুটে বেড়ায়। অয়ন রিমিকে ভালো করে পরখ করে নিলো। মায়াভরা দৃষ্টিতে কি সুন্দরভাবে চেয়ে আছে নদীর দিকে। মেয়েটির মায়াভরা মুখশ্রী দেখলেই বুঝা যায়, মেয়েটি স্বার্থের জন্যে ভালোবাসবে না কখনো। মেয়েটির কাছে বিশুদ্ধ ভালোবাসা পাওয়া যাবে। তাইতো এমন অসাধরণ রমনীকে ঘিড়ে অয়নের যত ভয়। যদি এই স্বার্থপরের দুনিয়ায় রিমিপরীকে হারিয়ে ফেলে সে। অয়ন আর ভাবতে পারেনা। ফোনটা রেখে রিমির দিকে এগিয়ে, রিমির শক্ত করে চেপে ধরে। রিমিও কেন যেন বাঁধা দেয়না। অয়নের শার্ট খামচে ধরে নিবিড়ভাবে। অয়নের বুকে মাথা রাখলে এক অদ্ভুদ শান্তির দুনিযায় চলে যায় সে। এই শান্তি কোথাও পাওয়া যায় না। কোথাও না। অয়ন রিমিকে জড়িয়ে ধরেই,ঠোট কামড়ে প্রশ্নের সুরে বলে,

‘ একটু আগে বললে না? তুমি আমাকে ভালোবাসো না। তাইতো আমার থেকে মুক্তি চাইছো তুমি। তাইনা?

রিমি অয়নের প্রশ্নে দ্রুত অয়নের থেকে সরে আসে। কি বলবে ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। তার আর এই মুহুর্তে
দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে না। অয়নের প্রশ্নগুলো সহজতর হলেও বেশ কঠিন। যার উত্তর এই মুহুর্তে কি হওয়া উচিৎ তা নিয়ে বেশ দিদ্ধায় পড়ে যাচ্ছে রিমি। হুট করেই অয়ন নদীর পাশে দাঁড়িয়ে হাত ছড়িয়ে চিৎকার করে বলতে থাকে,

‘ তুমি না বাসলেও, আমি বাসি। খুব ভালোবাসি তোমাকে। শুনতে পারছো রিমিপরী। খুব ভালোবাসি তোমায়। আজীবন ভালোবেসে যাবো।’

রিমি স্তব্ধ হয়ে যায়। নদীর স্রোতের শব্দের সাথে সাথে বার বার বারি খেয়ে প্রতিধ্বনি হয়ে রিমির কর্নে অয়নের বলা ‘ ভালোবাসি ‘ শব্দটি। অয়ন রিমিকে ভালোবাসে তার প্রমান অয়নের বিভিন্ন কাজেই,পাগলামোতে প্রমান উপলব্ধি করেছিলো রিমি,কিন্তু অয়ন আজ প্রথম রিমিকে গভীরভাবে ভালোবাসি শব্দটি বললো। রিমির পক্ষে স্হীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। মুখে লাজুকতা এসে লাল বর্ন ধারন করলো। রিমি ছুটে গিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে পড়লো। অয়ন ও মুচকি হেসে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো।

__________________

সানা উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে। কেবিনে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে ফারহানের কষ্ট, আর্তনাদ,কান্না। যা তার শুধু প্রেয়সী সুমাইয়াকেই ঘিড়ে। সানার কষ্ট হতে লাগলো। বুকে ব্যাথা অনুভব করলো প্রখরভাবে। কেন ফারহান সকলের থেকে সুমাইয়ার বেঁচে থাকার বিষয়টি গোপন করলো? কেন করলো? তাহলে তো সানা ফারহানকে নিয়ে এতো স্বপ্ন দেখতো না। ভাবতেই ভাবতেই দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো সানা হসপিটাল থেকে। রাগ হচ্ছে তার। হ্যা রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। ফারহানের জন্যে সমস্ত অপেক্ষা তার আজ বৃথা। সানার শুধু মনে হচ্ছে কেন সুমাইয়া বেঁচে গেলো?আজ সুমাইয়া বেঁচে গেলে হয়তো ফারহানকে সে নিজের করে পেতো সম্পূর্ন রুপে। অপরদিকে, ফারহান সুমাইয়ার মাথায় অতি যত্নের সহিত হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ফারহানের শুধু মনে হচ্ছে কবে সুমাইয়া ঠিক হবে? কবে আবারোও সুমাইয়ার মুখে ভালোবাসি ডাকটি শুনতে পারবে ফারহান? ফারহান সুদীর্ঘশ্বাস ফেলে সুমাইয়ার কপালে ভালোবাসার পরশ একেঁ দেয়। ফারহান মাথায় শুধু একটা কথায় বার বার ঘুডপাক খেতে থাকে। সুমাইয়া সুস্হ হলেই সে জানতে পারবে কারা সুমাইয়াকে মারতে চেয়েছিলো। ঠিক কোন কারনে? তাদের খুঁজে বের করে যোগ্য শাস্তি দিবে ফারহান।

___________________

গাড়িতে রিমি এবং অয়ন বসে আছে। অয়ন কিছু একটা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করছে তা অয়নের গাম্ভীর্যপূর্ন মুখশ্রী দেখলেই বুঝা যায়। অয়নের ফোন বার বার বেজে যাচ্ছে। অয়ন ফোনটা ধরছে না। কয়েকবার বাজার পর, বিরক্ত হয়ে কেটেই দিচ্ছে। রিমি লুকিয়ে দেখতে পেরেছে অয়নের সেক্রিটারি
সাদেক ফোন করছে, কিন্তু অয়ন কিছুতেই ধরছে না। একটা সময় অয়ন ফোন সুইচঅফ করে দেয়। রিমি সেবিষয়ে মাথা ঘামায় না। আজকে কেন যেন অয়নের মুখ থেকে ‘ভালোবাসি ‘ শব্দটি শ্রবণ করার পর থেকেই মন মেজাজ কেমন একটা ফুরফুরে হয়ে উঠেছে। তবে কি রিমিও তার সাইকো বরের প্রেমে পড়লো? জানেনা রিমি,কিন্তু তার সবকিছুই ভালো লাগছে। অপরদিকে অয়ন চোখ ছোট ছোট করে বেশ রাগ নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। ললাটের মাঝ বরাবর বেশ বড় ধরনের চিন্তার ভাজ পড়ে আছে।অয়ন রিমিকে চৌধুরীর বাড়িতে নামিয়ে, কাজের উদ্দেশ্য বেড়িয়ে যায়। রিমিও চুপচাপ বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। প্রবেশ করার সাথে সাথেই রিমি চমকে উঠে। কেননা বাড়ির সমস্ত সার্ভেন্ট রিমিকে দেখা মাত্র মাথা নিচু করে কর্নিশ জানায়। রিমি অবাক দৃষ্টিতে
সার্ভেন্টদের দিকে তাকিয়ে থাকে।

‘ এতো অবাক হওয়ার কিছুই নি। একজন চৌধুরী বাডির বউকে যেভাবে সম্মান জানানো হয়। তেমনি
তোমাকেও সম্মান জানানো হচ্ছে। ‘

কথাটি বলতে বলতে রুহানা চৌধুরী সিড়ি বেয়ে নীচে নামে। রিমি পূর্বের ন্যায় অবাক হয়েই বলে,

‘ আমি কিন্তু এখনো বুঝেনি। ‘,

‘ খুবই সিম্পল ব্যাপার। আগে আমরা কয়েকজন জানতাম যে তুমি এই চৌধুরীর বাড়ির বউ। কিন্তু এখন থেকে সবাই জানবে। টিভির দিকে তাঁকাও একবার। ‘

রুহানা চৌধুরীর কথা অনুসরন করে রিমি টিভির দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।

_________________

আমান কফির কাপটা রেখে দিলো। মেঘের থেকে সবকিছুই শুনলো সে। শুনলো বটে একপ্রকার অবাকের শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছে। এইটুকু একটা মেয়ে নিজের ভাইয়ের বিরুদ্ধে এতো কান্ড ঘটালো! কিন্তু কেন? প্রশ্ন জাগলো আমানের মনে। সেই প্রশ্নের সমাধান দিতে মেঘ মুখ খুললো,

‘ আপনার মতো অপরিচিত ব্যক্তির জন্যে হুট করেই মনের গহীন থেকে অদ্ভুদ টান অনুভব করছিলাম মি আমান শিকদার। শুধু মনে হচ্ছিলো আপনার ক্ষতি হতে দেওয়া যাবে না। তাইতো নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, ভাইয়ের বিরুদ্ধে গিয়ে আপনাকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসলাম। ‘

আমান কিছু বলবে তার আগেই, বাইরে গাড়ির হর্নের শব্দ পাওয়া যায়। মেঘ দ্রত ছুটে গিয়ে জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখতে পায়, অয়ন এবং তার গার্ডসরা দাঁড়িয়ে আছে।

চলবে…..কী?
#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ৩৫
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
‘অয়ন চৌধুরী অর্থাৎ ডক্টর এয়ারসি তার প্রাক্তন প্রেমিকাকে রেখে অন্য একটি মেয়ের সাথে সম্পর্কে লিপিবদ্ধ হয়েছেন। সে মেয়েটি ডক্টর এয়ারসির সাথে চৌধুরী বাড়িতেই থাকেন। আমাদের তথ্যঅনুসারে জানা গিয়েছে মেয়েটি ডক্টর এয়ারসির হসপিটালেরএকজন স্টুডেন্ট। কিন্তু ডক্টর এয়ারসি এবং মেয়েটি কি আদোও একে-অপরের প্রফেসর এবং স্টুডেন্ট?না তা একদমই নয়। তাদের মধ্যে আরো গভীর সম্পর্ক রয়েছে। তা আপনারা আমাদের কিছুক্ষন আগের তোলা ছবিতেই স্পষ্ট দেখতে পারবেন। ‘

সাংবাদিক মেয়েটি স্টুডিওতে বসে কথাগুলো একনাগাড়ে বলে থামলো। অতঃপর টিভির স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করে ভেঁসে উঠলো রিমি এবং অয়নের
একে অপরের জড়িয়ে ধরার ছবিখানা। রিমির মনে পড়ে গেলো কিছুক্ষন আগের ঘটনা,কিছুক্ষন আগে অয়ন তাকে জড়িয়ে ধরেছিলো। সেই ছবিটাই কোন এক সাংবাদিক ছবি তুলেছে। যা এখন খবরে পরিনত হয়ে, ব্রেকিং নিউজ হচ্ছে। সাংবাদিক মেয়েটি অত্যান্ত দাপটতার সাথে নিজের গাঁয়ের কোর্টটা ঠিক করে, কলম দিয়ে কাগজে কিছু একটা লিখে, একের অপর এক কাগজ বের করে বলতে লাগলো,

‘ বিখ্যাত মডেল পায়েল রুজানাকে পাওয়া যাচ্ছে না। সেদিকে কোন খেয়াল নেই অয়ন চৌধুরীর। তিনি তো তার ছাত্রীকে নিয়ে অন্তরঙ্গ মুহুর্ত কাটাচ্ছেন। ‘

রিমির পক্ষে এই নিউজটি আর দেখা সম্ভব হলো না। ধপ করে বসে পড়লো সোফায়। মিডিয়ার লোকেরা একটা খবর পাওয়া মাত্রই সেই সম্পর্কে না জেনেই
একপ্রকার যাতা খবর বানিয়ে ফেলেছে। রিমি এবং অয়নের সম্পর্ককে নোংরা এবং কুরুচিপূর্ণ একটি বিষয়ের রুপান্তরিত করে ফেলেছে। খবরের লোকগুলো তো প্রায় এমনই হয়, কিছু না জেনেই নিউজ তৈরি করে ফেলে, অথচ সেই খবরের পিছনের গল্পটা তারা কখনোই জেনে নেওয়ার প্রচেষ্টা করেনা। কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে,চটজলদি নেত্রপল্লবে এসে ভীর করা জলগুলোকে মুছে নেয় রিমি। রিমি তাকিয়ে দেখে রুহানা চৌধুরী তার কাধে হাত রেখে, তার পাশে বসে আছেন। তিনি অত্যান্ত স্নেহের সহিত রিমির মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। অতঃপর নরম সুরে বলেন,

‘ আজকে তোমার এবং অয়নের চরিত্র নিয়ে মিডিয়া যত কথা হচ্ছে তার পিছনে আমি দায়ী। হ্যা আমারই দোষ। আমি যদি তোমাকে মেনে নিতাম, তাহলে আজ সকলে জেনে যেতো তোমরা স্বামী এবং স্ত্রী। তোমাদের স্বামী-স্ত্রীর পবিত্র সম্পর্কে এমন নোংরা মন্তব্য করার কেউ সাহস পেতো না তখন। ‘

রিমি মাথা নিচু করে ফেলে। মিডিয়াতে তাকে নিয়ে এমন বাজে মন্তব্য করায় তার যেমন খারাপ লাগছে,তেমনি অস্বস্হিও হচ্ছে দ্বিগুনভাবে। রুহানা চৌধুরী পূর্বের ন্যায় নরম সুরে বললেন,

‘ ভুল যখন আমার। সেই ভুলটাকে আমিই শুধরাবো।’

রিমি রুহানা চৌধুরীর দিকে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাঁকাতেই, রুহানা চৌধুরী স্মিত হেসে বললেন,

‘ আমি তোমার এবং অয়নের বিয়ে দিবো পুনরায়। একদম ধুমধাম করে। সবাইকে জানিয়ে দিবো, তোমাদের সম্পর্কের কথা। ‘

রিমি কথাটি শুনেই উঠে দাঁড়ায়। তার মাথা ঘুড়ে যাওয়ার উপক্রম। যেই রুহানা চৌধুরী তার এবং অয়নের ডিভোর্স দেওয়ার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছিলো। সে আজ রিমি এবং অয়নের বিয়ে নিজ থেকে দিতে চাইছে কিন্তু কেন? এর পিছনে উনার কি স্বার্থ থাকতে পারে? রিমির মনে বার বার প্রশ্নের উৎপত্তি ঘটছে। রুহানা চৌধুরী সেসব প্রশ্নের সমাধানে বললেন,

‘ আমি বুঝেছি আমার নাতী আমার থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছে। তাই অয়ন যার সাথে সুখে থাকে, আমি তার সাথেই ওর বিয়ে দিবো। আমি জানি নিজের স্বার্থের জন্যে আমি আমার নাতীকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে ফেলেছি। তাই আমি ঠিক করেছি তোমার সাথে অয়নের পুনরায় বিয়ে দিবো। একদম ঘটা করে। কেমন? ‘

কথাটি বলেই রুহানা চৌধুরী রিমির গালে হাত রেখে মুচকি হাঁসে। রিমি বিস্মি নয়নে চেয়ে থাকেন রুহানা চৌধুরীর দিকে। মহিলাটাকে তার বেশ রহস্যময়ী এবং অদ্ভুদ মনে হয়। যাকে তিনি সহ্য করতেই পারেন না, তার সাথে অয়নের পুনরায় বিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন। বেশ অদ্ভুদ ব্যাপার!

_________________

অয়ন এবং তার গার্ডসরা মেঘের ফার্ম হাউজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অধরের কোণে তার অদ্ভুদ হাঁসি ঝুলে রয়েছে। ঠোট প্রশ্রস্ত করে হেসে অয়ন পকেটে হাত ঢুকিয়ে, মেঘ যেখানে দাঁড়িয়ে থেকে দেখছে সেই জানালার বরাবর তাকিয়ে অয়ন বিড়বিড়িয়ে বলে,

‘ মাই ডিয়ার সিস্টার! অনেক তো হলো লুকোচুরি খেলা। নাউ ইটস টাইম টু ফিনিশড দ্যা গেম। ‘

অয়নের বলার মাঝেই, সাদেক কোথা থেকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসলো। অতঃপর হাপাতে লাগলো। অয়ন পুনরায় বিরক্ত হলো। সাদেক অনেক্ষন ধরেই তাকে অনাবরত ফোন করে যাচ্ছিলো, কিন্ত সে ইচ্ছে করেই ধরেনি। তার একটাই কারণ সে আপাতত কাজের মধ্যে অন্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছুক নয়। সাদেক অস্হির হয়ে বললো,

‘ ভাই আপনি আমার ফোন ধরছিলেন না। তাই ছুটে এসেছি। ‘

‘ সাদেক আপাতত তুমি যাও। আমি মোটেও তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক নই। ‘

অয়নের কথায় বিঘ্ন ঘটিয়ে, সাদেক ফোন বের করে একটি নিউজ অয়নকে দেখায়। নিউজটি দেখেই অয়নের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। বলিষ্ট হাতের মুঠো
শক্ত হয়ে উঠে। অয়নের ইচ্ছে করছে নিউজ চ্যানেলটাকেই শেষ করে দিতে। তার রিমিপরীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন করেছে। তার শাস্তি পেতেই হবে ওদের। অয়ন গর্জে উঠা কন্ঠে চেচিয়ে উঠে বলল,

‘ এখুনি এইসব নিউজ বন্ধ করিয়ে দাও। সবগুলোকে শেষ করে দিবো আমি। আমার রিমিপরীর চরিত্র নিয়ে কথা বলার জন্যে ওদের পস্তাতে হবে। জাস্ট ২৪ ঘন্টা সময় দিলাম। এর মাঝে ওই নিউজ চ্যানেলগুলো বন্ধ করিয়ে দিবে সাদেক! গট ইট? ‘

সাদেক দ্রুত মাথা নাড়িয়ে স্হান ত্যাগ করে। সাদেক চলে যাওয়া মাত্রই অয়ন তার পকেট থেকে ভারি চকচকে বন্দুকটা সোজা তাঁক করে জানালার বরাবর গুলি করে। কেঁপে উঠে মেঘ। ছিটকে সূরে সরে আসে দ্রুত জানালা থেকে। আমানও চমকে উঠে। মেঘ আমানের কাছে এসে বলতে থাকে,

‘ ভাইয়া চলে এসেছে। আপনি দ্রুত পালিয়ে যান। আপনাকে পেলে ভাইয়া জীবিত রাখবে না। মেরে ফেলবে। ‘

আমান চোখমুখ শক্ত করে একরোখা জবাব দেয়,

‘ আমি তো কোন দোষ করেনি। আমি কেন পালাবো?
আমি রিমিপাখিকে ভালোবাসি। আমার মনে হয় না আমি কোন অন্যায় করেছি। ‘

‘আমান রিমিকে ভালোবাসে ‘কথাটি কর্নে পৌঁছাতেই
মেঘের বুকের ভিতর ছেদ করে উঠলো। যেন কথাটি পৃথিবীর সবথেকে ভারি কথাটি অয়ন তাকে বলেছে। মেঘ ঠোট কামড়ে কান্না সংযত করে, অনুনয়ের সুরে আমানকে অনুরোধ করলো,

‘ দয়া করে আপনি এখান থেকে চলে যান। আপনাকে অনেক কষ্টে আমি বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছি। আমার কষ্ট আপনি এইভাবে বিফলে যেতে দিবেন না। দয়া করে পালিয়ে যান। ‘

আমানের কেন যেন মেঘের প্রতি বেশ মায়া হলো। এইটুকু একটা মেয়ে কেন তার জন্যে নিজের ভাইয়ের বিরুদ্ধে গিয়েছে? এই কথাটি বুঝতে পারছে না আমান। আমান মেঘের অনুরোধ ফেলতে পারেনা।
দ্রুত বেড়িয়ে যায় রুম থেকে। ফার্মের পিছনের জংগল দিয়ে সহজেই পালিয়ে যেতে পারবে আমান।

____________

আমান চলে যাওয়ার সাথে সাথে আমান প্রবেশ করে
রুমে। আমানকে না দেখে মাথায় রক্ত চড়ে উঠে অয়নের। রাগে ফুসফুসিয়ে উঠে একপ্রকার। বন্দুক বের করে মেঘের মাথায় ঠেকিয়ে, তীব্র ক্ষোভে চেচিয়ে উঠে,

‘ কোথায় ওই ব্লাডি আমান? এখুনি ওর ঠিকানা বলে দাও মেঘ। নাহলে আমি কিন্তু তোমার ক্ষতি করে দিবো। ‘

‘ কি করবে তুমি? নিজ হাতে নিজের বোনকে গুলি করে খুন করবে? করো! দেখি তুমি কতটা নিষ্টুর হতে পারো। কিন্তু আমি মুখ খুলবো না কিছুতেই। ‘

অয়ন তার হাতে থাকা বন্দুকটা ফেলে দেয়। রাগে দেয়ালে ঘুষি মেরে, একজন গার্ডকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘ এই স্টুপিড মেয়েটা এখুনি বাড়িতে দিয়ে আসো।
ওই ব্লাডি আমানকে তো আমি খুঁজে বের করবোই।’

কথাটি বলেই অয়ন বেড়িয়ে যায়। মেঘের ঠোটের কোণে আলতো হাঁসি ফুঠে উঠে। সে জানে তার ভাই তার থেকে যত দূরেই থাকুক না কেন, তার প্রতি সুপ্ত এক ভালোবাসা অয়নের মনে আছে। যতই হোক ভাই তো।

_________________

রিমি হসপিটালের করিডোরে দাঁড়িয়ে বই হাতে পড়ছিলো। একটা বিষয় তার কিছুতেই মাথা ঢুকছে না। তাই রিমি ঠিক করেছে অয়নের কাছে গিয়ে বুঝে নিবে। রিমির ভাবনার মাঝেই অয়ন প্রবেশ করে হসপিটালে গাড়ি দিয়ে। অয়ন বের হওয়ার সাথে সাথে কোথা থেকে একটি মেয়ে এসে পিছন থেকে অয়নকে জড়িয়ে ধরে।
চলবে….কী?