#তুমিময় নেশায় আসক্ত 🖤
#পর্ব- ৩৮
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
রিমি উপস্হিত থাকা সত্ত্বেও তার স্বামীকে নিয়ে অন্য নারী মাতামাতি করছে। ইশা সর্বদা অয়নের সাথে একপ্রকার ঘেষে বসে কথা বলছে। বাড়িতে ঢুকার সঙ্গেই সঙ্গেই একপ্রকার অয়নের সাথে লেপ্টে রয়েছে। রিমির রাগে মাথায় আগুন ধরে যাচ্ছে। সিরির উপরে দাঁড়িয়ে রক্তচক্ষু নিয়ে বিশাল ড্রইং রুমের এককোণে সোফায় বসে থাকা অয়ন এবং ইশাকে পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছে। অয়ন ল্যাপটপে বসে কাজ করছে তার পাশেই ছোট একটা নাইট ড্রেস পড়ে অয়নের কাজ বারবার পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছে ইশা। ড্রেসের কি একটা বিচ্ছিরি অবস্হা! হাতা কাটা
তার মধ্যে ইশার ধবধবে সাদা পায়ের হাটু বেড়িয়ে রয়েছে। অয়নকে নানান কথা বলে নিজের দিকে আকর্ষিত করতে চাইছে ইশা,কিন্তু অয়ন নিষ্চুপ। সে ল্যাপটপে বসে অফিসের কাজগুলো করে যাচ্ছিলো। মাঝে মাঝে হু হা বলছে শুধু। অয়নের উদাসিনতায় ইশার রাগ হলেও, মুখে তা প্রকাশ করে না। কুটিল হেসে বিভিন্ন গল্প করতে থাকে সে। ইশা এবং অয়নের সামনে বরাবরই বসে আছেন রুজা চৌধুরী। তিনি চা খেতে খেতে একবার অয়ন এবং ইশাকে দেখছিলেন,একবার রিমির মুখশ্রী দেখে রিমির ভিতরের অবস্হা বুঝতে চাইছিলেন। রিমি যে বেশ ভালো ভাবেই রেগে আছে, তা রিমির মুখশ্রী দেখেই খুব ভালোভাবে টের পাচ্ছেন রুজা চৌধুরী।অয়নের হঠাৎ ফোন চলে আসায়, অয়ন ফোনটা হাতে নিয়ে বাইরের দিকে চলে যায়।
আগুন খানিক্টা ঘি ঢেলে দেওয়ার জন্যে, নেকামির সুরে ইশাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
‘ ইশা! জানো? তোমাকে এবং অয়নকে একসাথে দেখলে হৃদয়টা জুড়িয়ে যায়। কি সুন্দর মানায় তোমাদের। আমাদের হিরের টুকরো ছেলের সাথে তোমাকেই মানায় বুঝলে? কিন্তু কপাল দেখো। একটা সাধারণ মধ্যবিত্ত বাড়ির আশ্রিতা মেয়ে আমাদের চৌধুরীর বাড়ির বউ হয়েছে। ইসস আমার তো এখন আফসোস হচ্ছে। কয়েকদিন আগে যদি তুমি দেশে আসতে, তাহলে বোধহয়। থাক বাদ দাও সেসব কথা। ‘
শেষের কথাটি বেশ আফসোসের সুরেই বললেন রুজা চৌধুরী। রিমির মস্তিষ্কে রাগগুলো নিমিষেই হুট করে উধাও হয়ে যায়। মনের গহীনে ঠায় করে নেয় একগুচ্ছ বিষন্নতা। রুজা চৌধুরী বোধহয় রিমির মতো সাধামাটা মানুষ গ্রেট হার্ট সার্জন অয়ন রওযাক চৌধুরীর মতো মানুষের যোগ্য নয়। নিজের গায়ে থাকা নরমাল ফিনফিনে পাতলা ওড়নাটাকে গায়ে ভালো করে জড়িয়ে, রিমি নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালে নিলে, কোন ভারি কিছুর শব্দে থমকে যায়। পিছে ফিরে দেখে রুজা চৌধুরীর বরাবর সাদা কাচের দামি সোপিচের বলটির মাঝ বরাবর দাডালো চাকুটা একপ্রকার গেঁথে রয়েছে। রুজা চৌধুরী ঘাবড়ে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে, অয়ন স্বাভাবিক ভঙ্গিতে পকেটে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে।
রুজা চৌধুরী ভয়ে শুকনো ঢুগ গিলে। চাকুটা একটুর জন্যেই তার গলা বরাবর বসে যেতো। অয়নের দৃষ্টি শান্ত হলেও, তাতে ভয়ংকর রাগ উপচে পড়ছে। অয়ন গটগট পায়ে বলটির থেকে চাকুটি নিয়ে রুজা চৌধুরীর গলা বরাবর ধরে। ইশা তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়ায় অবাক হয়ে। রুজা চৌধুরী একপ্রকার ভয়ে ভয়ে কান্নার সুরে বলে,
[লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]
‘ কি করছো তুমি অয়ন? চাকুটা নামাও। আমার গলায় লেগে যাবে। ‘
অয়ন রুজা চৌধুরীর কথার মাঝেই, চাকু দিয়ে সামান্য আচর দিয়ে দেয় রুজা চৌধুরীর গলা বরাবর। সঙ্গে সঙ্গে ফিনকি রক্ত বেড়িয়ে যায়।রুজা চৌধুরী ব্যাথায় চিৎকার করে কুকড়ে উঠে,কিন্তু তবুও তার শব্দ দেয়ালে গিয়ে বারি খায় না। কেননা অয়ন তার মুখ চেপে ধরে রেখেছে। অয়ন রুজা চৌধুরীর গলার দিকে তাকিয়ে ভয়ংকরভাবে বাঁকা হেসে বলে,
‘ আমার রিমিপরীর চোখের জলের মূল্য দিলাম। হাউ ডেয়ার ইউ? আমার রিমিপরীকে অপমান করার সাহস কে দিয়েছে আপনাকে? ‘
অয়নের হুংকারে পুরো চৌধুরীর বাডির প্রতিটা সদস্য থেকে শুরু করে সমস্ত সার্ভেন্টস,দেহরক্ষীরা কেঁপে উঠে।
‘ যেই গলা দিয়ে আপনি আমার রিমিপরীকে আমার অযোগ্য দাবী করেছেন সেই গলাটা যদি না থাকে, তখন কি হবে রুজা চৌধুরী? ‘
অয়নের কথায় ভয়ে তরতর করে কাঁপতে থাকে। ললাটে জমে থাকে অনিশ্চিত মৃত্যুর চিন্তার রেশ। অয়নকে দিয়ে ভরসা নেই। উম্মাদ ছেলে সে। যখন সে যা ইচ্ছে করে ফেলতে পারে। রিমি অবস্হা বেগতিক দেখে অয়নের কাছে ছুটে গিয়ে, অয়নের হাত থেকে ছুড়িটা ফেলে দেয়। অতঃপর অয়নকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে উত্তেজিত হয়ে বলে,
‘ আপনি কি করছেন কি? আপনি কি আদোও তা জানেন? উনি আপনার কাকি হয়। তাকে আপনি মেরে ফেলতে চাইছেন? সামান্য একটা কারণে। ‘
অয়ন দ্বিগুন চিৎকার করে বলতে থাকে,
‘ সামান্য ব্যাপার মানে? তুমি কী আমার জন্যে সাধারণ রিমিপরী? তুমি আমার কাছে কি আমি তা মুখের ভাষায় কখনো বুঝাতে পারবো না। ‘
রিমি অয়নের কথায় মাথা নিচু করে ফেলে। অয়ন কিছুক্ষন রাগে ফুশফুশ করতে থাকে। অতঃপর শীতল কন্ঠে বলে,
‘ তুমি সাধারণ নও প্রেয়সী। তুমি হাজারো সাধারণ ফুলের মাঝে তুমি এক টকটকে সদ্য ফুটে উঠা অসাধারণ এক গোলাপ ফুল। ‘
রিমির ঠোটের কোণে এক চিলতে হাঁসি ফুঠে উঠে অজান্তেই। রুজা চৌধুরী গলায় হাত দিয়ে কোনরকম দৌড়ে উপরে চলে যায়। এতোক্ষন ধরে নিরব দর্শকের ন্যায় সবকিছু দেখে যাচ্ছিলো ইশা।
________________
আমানকে দেখে তড়িৎ গতিতে উঠে দাড়ায় মেঘ। তার সামনেই আমান দাঁড়িয়ে আছে। সাদা একটা ফরমাল শার্ট। কনুই পর্যন্ত ফ্লড করা। ফর্সা মুখস্রীর চারদিকে ক্ষতের দাগ স্পষ্ট। চুলগুলো অগছালো। হাতে ব্যান্ডিজ। তবুও কি স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে আমানকে।
আমান হাটু গেড়ে বসে, নীচে থাকা বইগুলো সযত্নে হাতে তুলে নেয়। অতঃপর মেঘের হাতে ধরিয়ে দিয়ে, কৃতজ্ঞতার সুরে বলে,
‘ আপনি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, নিজের ভাইয়ের বিরুদ্ধে গিয়ে আমার জীবন বাঁচালেন। আপনি সত্যি সাহসী এক কিশোরী বটে। আপনাকে ধন্যবাদ জানানো হয়নি। তাই ধন্যবাদ জানাতে ছুটে এলাম আপনার কাছে। ‘
‘ এতো রাতে? ধন্যবাদ জানানোর জন্যে? ‘
মেঘের প্রশ্নে কিঞ্চিত হেসে আমান উত্তর দেয়,
‘ আপনার ভাইয়ের জন্যে লুকিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। দিনে তো সম্ভব নয়। তাই ধন্যবাদ জানাতে রাতেই চলে এলাম। তাছাডাও এক সপ্তাহের মধ্যে আমি অস্ট্রেলিয়া চলে যাচ্ছি। ‘
আমান চলে যাবে কথাটি শ্রবন করার সঙ্গে সঙ্গেই বুকটা ভারি হয়ে আসে মেঘের। নেত্রকোণ হয়ে উঠে টলমলে। মেঘ কোনরকম বলে,
‘ চলে যাবেন আপনি? ‘
‘ থেকে কি করবো বলুন? যাকে পাওয়ার জন্যে ছুটে এলাম। তাকেই তো পেলাম না আমি। আফসোস!’
____________________________
রুহানা চৌধুরী সোফায় বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন, তারই সামনে মুখ কালো করে বসে আছে রুজা চৌধুরী। গলায় তার বেশ ব্যাথা। ছুড়িটা ছিলো বেশ ধারালো। সামান্য আচ দিতেই, রক্তপাত শুরু হয়ে গিয়েছিলো। রুজা চৌধুরী কান্নার সুরে বললে,
‘ মা! আপনি কি এখনো কিচ্ছুটি বলবেন না? অয়ন আমাকে আঘাত করলো। আরেকটু হলেই মেরেই ফেলতো তবুও আপনি চুপ করে থাকবেন? এবারো আদরের নাত্নীর পক্ষ নিবেন? ‘
রুহানা বিরষ মুখে শুধালেন,
‘ উফফ কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করো না তো। তোমারও দোষ আছে। ‘
কথাটি বলেই রুহানা চৌধুরী হাক ছেডে রিমিকে ডাকলেন। রিমি এবং ইশা রুহানার ডাক শুনে নীচে নামলো। অয়নও সবেমাত্র হসপিটাল থেকে ফিরেছিলো। অয়নকে দেখেই রুহানা চৌধুরী এগিয়ে গিয়ে, অয়নের কাধ রেখে অপরাধির ন্যায় বললেন,
‘ আমি জানি দাদুভাই। আমি অনেক ভুল করেছি। যার জন্যে আমি সত্যি অনুতপ্ত। আমি সেই ভুলটাকে সংশোধন করতে চাই। তোমার এবং রিমির পুনরায় বিয়েটা দিয়ে। ‘
বিয়ের কথা শুনে ইশার মুখে ঘোর অন্ধকার এসে হানা দিলো। যা রিমির নজরে ঠিকই পড়লো।
চলবে….কী?🙂
#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত
#পর্ব- ৩৯
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ভালোবাসার মানুষটি বিবাহিত থাকা সত্ত্বেও, তাকে
অঢেলা ভালোবাসা অন্যায়। শুধু অন্যায় নয়,তা এক জঘন্য পাপ। সানা স্পষ্ট জানে ফারহানের স্ত্রী জীবিত রয়েছে, তবুও ফারহানকে ভালোবাসার মতো পাপ করে বসেছে সানা। সানা ধীর পায়ে হেটে টেবিলে পাশে থাকা চেয়ারে ধপ করে বসে। পাশেই ফারহানের ছবিখানা সাদা ফ্রেমে বাধাই করা। কালো ফরমাল পোষাক পরিহিত ২৮বছরের যুবকের প্রেমে বার বার পড়ে যাচ্ছে সানা। মানুষটা বোধহয় প্রেমের জাদু করে ফেলেছে সানা,নাহলে এতো মানুষ থাকা সত্ত্বেও সানার কেন এতো আকর্ষন ফারহান নামক যুবকটির প্রতি? অনুরুপভাবে ফারহানেরও কেন এতো আকর্ষন তার অসুস্হ স্ত্রী সুমাইয়ার প্রতি?
সানা তো দেখতে বড্ড সুন্দর। হ্যা রুপের দিক থেকে
সুমাইয়ার থেকে বেশ কয়েকধাপ এগিয়ে সানা।
কলেজ জীবনে হাজারো যুবকের রাতের ঘুম কেড়ে নিতো সানা। শুধু রুপেই এগিয়ে? উহু একদমই নয়। সানা একজন ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট বটে,যার ফলে আজ সে বড় কম্পানির বড় একটি পদে চাকরী করছে। সানা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে নিজেকে পর্যবেক্ষন করতে লাগলো, নিজের খুঁত খুজতে চাইলো, কিন্তু পেলো না। সানার মনে হলো সে যোগ্য ফারহানের, সুমাইয়া নয়। রাগে মাথায় আগুন ধরে গেলো পরক্ষনেই। সানা মাথা চেপে ধরে বিড়বিড় করে আওড়াতে লাগলো,
‘ মেরে ফেলবো আমি সুমাইয়াকে। একদম শেষ করে দিবো। সুমাইয়া স্যারের যোগ্য নয়। ‘
_____________
রুহানা চৌধুরীর কথায় অয়নের ললাটের বলিরেখায় বেশ সুক্ষ্ম চিন্তার রেশ পড়ে গেলো। রুহানা চৌধুরীর চোখ-মুখে উপচে পড়ছে অনুতাপের ছাঁয়া। রুহানা চৌধুরী বেশ আফসোসের সুরেই বললেন,
‘ আমি নিজের কম্পানির স্বার্থে তোমাকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম অয়ন। পায়েলের সাথে তোমার বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম, তোমার অনিচ্ছা সত্ত্বেও,কিন্তু এখন আমি বুঝতে পেরেছি আমি কতটা ভুল ছিলাম। ‘
অয়ন কোনরুপ জবাব দিলো। শক্তমুখে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে, রুহানা চৌধুরীকে পাশ কাটাতে নিলে, রুহানা চৌধুরী অয়ন কাধে হাত রেখে নিচু গলায় বললেন,
‘ আমি যখন উপলব্ধি করতে পারলাম আমার নিজের স্বার্থের জন্যে, আমার নাতী আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে তখন আমি ঠিক করি তোমাদের আমি পুনরায় বিয়ে দিবো। অনেক ধুমধাম করে। আমি আর কয়েকটা দিন বাঁচবো বলো দাদুভাই? মরে যাওয়ার আগে তোমাদের সুখে দেখি চলে যেতে যাই। ‘
কথাটি বলেই নেত্রপল্লবে জমে থাকা জলগুলো মুছে নিলেন রুহানা চৌধুরী। অয়ন রুহানা চৌধুরীর শেষের কথাটি শুনে নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারেনা। পিছনে ঘুড়ে রুহানা চৌধুরীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। যতই হোক বাবা -মায়ের পর তো রুহানা চৌধুরীকেই সবথেকে বেশি ভালোবাসে অয়ন। রুহানা চৌধুরী কাঁদতে কাঁদতে অয়নকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। রুজা চৌধুরী গলায় হাত দিয়ে এমন দৃশ্য দেখে ক্রোধান্তিত হয়ে উপরে চলে যায়। রিমি ইশার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে, অয়ন এবং রুহানা চৌধুরীকে দেখে মুচকি হাসে। অবশেষে মান-অভিমান এবং সমস্ত ঝগড়ার সমপ্তি হলো নাতী এবং দাদুর মাঝে। রিমির বেশ ভালো লাগলো দৃশ্যটি। রুহানা চৌধুরী অয়নকে ছাড়িয়ে, রিমিকে উদ্দেশ্য করে কাছে ডাকলো। রিমিও ধীর পায়ে রুহানা চৌধুরী সামনে দাঁড়ালো। রুহানা চৌধুরী রিমিকে অয়নের পাশে দাঁড় করিয়ে, তৃপ্তির সুরে বললেন,
‘ আহা কি সুন্দর লাগছে দুটিকে। কি বলো ইশা? ‘
ইশার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিতেই,ইশার ধ্যান ফিরে। সে যেন অন্য এক জগতে বিভোর ছিলো এতোক্ষনে। প্রশ্নের সমক্ষীন হতেই, চটজলদি অধরের কোণে জোড় করে হাসি টেনে, উত্তর দিয়ে বলে,
‘ হ্যা, হ্যা! অনেক সুন্দর মানিয়েছে। ‘
‘ হ্যা এইবার দুটির চারহাত এক করতে পারলেই আমি নিশ্চিন্ত।’
কথাটি বলেই রুহানা চৌধুরী অয়নের হাতের উপর হাত রেখে দেয়। অয়নও শক্ত করে রিমির হাত ধরে, রিমির কানের কাছে গিয়ে আলতো সুরে বলে,
‘ এইযে তোমার হাতখানা ধরে রাখলাম। আজীবন শক্ত করে ধরে রাখবো তোমার হাতটা। তুমি চাইলেও কখনো ছাড়বো না। ‘
‘ মানুষের জীবন পরিবর্তনশীল ডক্টর এয়ারসি। জীবনের মোড় হুট করে বদলে যেতে পারে, কখনো হয়তো আমার হাত আপনিই ছেড়ে যাবেন পরিস্হিতির স্বীকার হয়ে। ‘
‘ জীবনে হাজারো কঠিন পরিস্হিতি আসবে রিমিপরী, হয়তো সাময়িক সময়ের জন্যে আমরা আলাদা হয়ে গেলেও, ঠিকই আবার এক হয়ে যাবো।
দিনশেষে রিমিপরীকে অয়নের দারপ্রান্তে এসেই দাঁড়াতে হবে। মনে রেখো। ‘
অয়নের কথায় অবাক না হয়ে পারলো না রিমি। লোকটাকে সে তাদের আলাদা হয়ে যাওয়ার কথা বললো, তবুও লোকটা আগের মতো রেগে না গিয়ে, শান্তভাবে তাকে উত্তর দিয়ে দিলো। রিমি খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করেছে, পুনরায় বিয়ের কথা শুনে অয়নের চোখমুখে আলাদা এক আনন্দ কাজ করছে, কিন্তু রিমি? সে কি আদোও খুশি?
[ লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]
___________________
আমানের কথায় মেঘের বুঝতে বাকি রইলো না, আমান তার অপ্রাপ্তিময় ভালোবাসার কথা উল্লেখ করেছে। আমান এখনো রিমিকে তীব্রভাবে ভালোবাসে, তা আমানের কথায় স্পষ্ট। মেঘ কাঁপাকাঁপা গলায় বলে,
‘ আপনি কি এখনো রিমিপুকে ভালোবাসেন? ‘
‘ হ্যা। এখনো ভালোবাসি। আজীবন ভালোবেসে যাবো। ‘
আমানের নিসংকচ জবাব। মেঘের ভিতরটা যেন পুড়ে ছাড়খাড় হয়ে যাচ্ছে। কান্না পাচ্ছে কিশোরীর। কিশোরী বয়সে প্রথম ভালোলাগার মানুষটি হচ্ছে আমান, কিন্তু সেই ভালো লাগার মানুষটির মনে অন্য কারো প্রতি ভালোবাসা দেখে বেশ রাগ হয় কিশোরীর। কিশোরী বেশ রাগ নিয়েই বলে,
‘ যে এখন অন্যকারো, তাকে ভালোবাসা কি অন্যায় নয়? আপনার উচিৎ তাকে ভুলে যাওয়া।”
মেঘের কথায় অদ্ভুদ ভাবে বিদ্রুপে হাসি হাসলো আমান। তা দেখে রাগ নাকের ঢগার চলে গেলো মেঘের। আমান আলতো হেসে শরীর হেলিয়ে বললো,
‘ তুমি এখনো বেশ ছোট মেঘ। তাই এমন কথা বলছো। ‘
‘ আমি ছোট নই। বেশ বড় হয়েছি আমি। ১৬ তে পা দিলাম, আর দুইবছর পর বিয়ের উপযোগী হয়ে যাবো। ‘
গাল ফুলিয়ে বেশ রাগ নিয়েই কথাটি বললো মেঘ। আমান পুনরায় হেসে, আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ প্রথম প্রেম এবং প্রথম ভালোবাসা পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর এক অনুভুতি। প্রথম ভালোবাসাকে কখনোই ভুলে থাকা যায় না, তাকে মনের গহীনে সুপ্ত করে লুকিয়ে রাখতে হয়। প্রথম ভালোবাসা অসমাপ্তি নামক গল্পের পাতায় নাম লেখালেও, তা এক সুন্দর অনুভুতি হিসেবেই আজীবন থেকে যায়। ‘
আমানের কথাটি শুনে মুহুর্তেই সব রাগ উবে গিয়ে, একরাশ মুগ্ধতা ঘিড়ে ধরলো মেঘকে। কথাগুলো সত্যিই বড্ড মোহনীয়। মেঘ আনমনে প্রশ্ন করে বসলো,
‘ আপনি কি কাউকে জীবনে দ্বিতীয়বারের মতো ভালোবাসবেন না? ‘
আমান খুব বিচক্ষন্নতার সহিত বললো,
‘ মানুষ বার বার প্রেমে পড়বে, এইটাই স্বাভাবিক। হয়তো আমার জীবনেও দ্বিতীয়বারের প্রেম আসবে,কিন্তু প্রথম প্রেমকে কখনো ভুলবো না আমি। ‘
কথাটি বলেই চলে যায় আমান। মেঘ ও তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে হাটতে শুরু করে। আমানের কথায় প্রথমে রাগ হলেও, বেশ মুগ্ধতা কাজ করছে মেঘের।
_____________
রিমি তার ঘরে কাপড় ভাজ করছে। ঘড়িতে প্রায় রাত দশটা ছুইঁছুই। এখনো অয়নের আসার নাম নেই। সেই সাতটার দিকে ইশাকে সঙ্গে নেই কোথায় যেন বেড়িয়ে গিয়েছিলো এখনো আসেনি। রিমির রাগ হচ্ছে, যা সময়ের সাথে প্রখরভাবে বেড়েই চলছে। রিমিকে না বলেই ইশার সাথে বেড়িয়ে গেলো অয়ন অথচ রিমিকে বলার প্রয়োজন করলো না। সময় গড়াচ্ছে তার সাথে বেড়ে চলছে রিমির ভিতরের অস্হিরতা। এখন ঘড়িতে রাত প্রায় ১টা ছুইছুই। এখনো অয়ন আসেনি। অন্য একটি মেয়ের সাথে এতোক্ষন বাইরে করছে টা কী অয়ন? প্রশ্নটি মাথায় ঘুড়পাক খেতেই, রিমি গলা ফাটিয়ে কান্না আসে। সঙ্গে সঙ্গে মনে দখল করে নেয় একদল অভিমান। পরক্ষনে রিমি নিজের কাছে নিজেই প্রশ্ন করে বসে,
‘ আচ্ছা! আমি তো ডক্টর এয়ারসিকে ভালোবাসি না। তবে কেন এতো রাগ হচ্ছে আমার? কেন এতো অভিমান হচ্ছে আমার? ‘
রিমির প্রশ্নের মাঝেই, অয়ন প্রবেশ করে। গলার টায় নাড়াতে নাড়াতে, রিমির কাছে এসে। অতঃপর রিমির গাল ধরে, আড়ষ্ট কন্ঠে জিজ্ঞাসা করে,
‘ রিমিপরী তুমি খেয়েছো? আমি সার্ভেন্টকে বলে দিয়েছিলাম, তুমি যেন সময়মতো খেয়ে নাও। আমার আজকে দেরী হবে। তুমি তো আবার আমার বকা না খেলে ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করো না। ‘
রিমি অয়নের কথায় হাতের কাপড়গুলো বিছানায় রাখতে রাখতে অভিমানের সুরে বলে,
‘ বেলা পেরিয়ে যাওয়ার পরে, আমি খেয়েছি কিনা জিজ্ঞাসা করতে এসেছেন? এতোক্ষন তো ইশার আপুর সাথেই ছিলে। এখন আমার খবর নিতে এসেছেন কেন?’
অয়ন খানিক্ষন চুপ থেকে আনমনে হেসে, রিমিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘ বেলা পেরিয়ে গেলেও, বেলা শেষে আমি তোমারই হয়ে থাকবো রিমিপরী। ‘
………চলবে কী?