#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ৪২ [Something special 💝]
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
‘ছেলেটি বিবাহিত জেনেও,তুই তাকে পাওয়ার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছিস?লজ্জা করেনা তোর? এইভাবে আমার মুখ পুড়াতে চাস তুই?’
উক্ত কথাটি বলেই সানার মা সানার গালে কষে থাপ্পড় মেরে দিলেন। আজ যখন সানাকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছিলো, তখন সানা স্পষ্ট জানিয়ে দেয় সে ফারহানকে ভালোবাসে।একদম কোনরকম জড়তা ছাড়াই সানা কথাটি বলেছিলো। কথাটি শুনে তরতর করে ঘামতে থাকে সানার মা। তার মেয়ে যে বিপথগামী হয়েছে তা তার বুঝতে মোটেও সময় লাগেনা। মায়ের থাপ্পড়ের বিপরীতে সানা ক্ষীন্ন হাসে শুধুমাত্র। কোনরুপ পতিক্রিয়া না করেই বলে,
‘ আমি ফারহান স্যারকে ভালোবাসি। ভালোবাসা কোন অন্যায় নয় মা। ‘
মেয়ের নিলর্জ্জ কথায়, সানার মা সানাকে টেনে তুলে, দাপটতার সহিত বলেন,
‘ তুই কি জানতি না? ফারহান বিবাহিত? ‘
‘ জানতাম, কিন্তু হুট করেই শুনি তার স্ত্রী নাকি বেঁচে আছে।আমি মানতে পারছি না মা। কিছুতেই মানতে পারছি ফারহান স্যার অন্য কারো।’
‘ নির্লজ্জ মেয়ে-ছেলে। তোর কি কোন লজ্জা অবশিষ্ট নেই? আরেকটা কথা বললে তোকে আমি মেরেই ফেলবো সানা। তুই জানিস আমি ভালোর ভালো, খারাপের খারাপ। আমি তোর বিয়ে ঠিক করে ফেলেছি। তোকে এইবার বিয়েটা করতেই হবে। ‘
কথাটি বলে গটগট পায়ে বেড়িয়ে যায় সানার মা।
‘যতই বিয়ে ঠিক করো, আমি কিছুতেই বিয়ে করবো না। আমি ফারহান স্যারকে ভালোবাসি। ‘
সানা মাথা চেপে ধরে বিড়বিড় করে আওড়াতে থাকে,
‘ ফারহান স্যার শুধুমাত্র আমার। হ্যা হ্যা আমার। স্যারকে পাওয়ার জন্যে সুমাইয়াকে মেরে ফেলবো আমি। ‘
‘ তার মানে সেদিন হসপিটালে আপনি সুমাইয়াকে মারতে এসেছিলেন মিসেস সানা। ‘
সানা তাকিয়ে দেখে ফারহান রক্তচক্ষু দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
______________
রিমির দেওয়ার চিরকুট টা পড়ে, আনমনে হাসে অয়ন। সযত্নে চিরকুট টা পকেটে ঢুকিয়ে, বাইরের দিকে চলে যায়। রিমি অয়নের দেওয়া মহিলা দেহরক্ষীদের সাথে গাড়িতে উঠছিলো,অয়নকে দেখে থেমে যায়। পার্সে থাকা মোবাইলটি বের করে, অয়নকে দ্রুত মেসেজ করে পাঠায়,
‘ আমি আপানার জন্যে অপেক্ষা করবো ডক্টর এয়ারসি। ‘
‘ যদি না আসি তবে? ‘
ঠাট্টা করে মেসেজ পাঠায় অয়ন। অয়নের মেসেজের বিপরীতে স্লান হেসে রিমি জবাব পাঠায়,
‘ তবুও আমি আপনার পথপানে চেয়ে শেষ রজনী অব্দি অপেক্ষা করে যাবো ডক্টর এয়ারসি। ‘
মেসেজটি পেয়ে এক চিলতি হাসি ফুটে উঠে অয়নের। যদিও অয়ন জানেনা রিমি আসলে চাইছে টা কী, কিন্তু তবুও সে তার রিমিপরীর অনুরোধ রক্ষা করবে। অয়নের অধরের কোণে লেগে থাকা মিষ্টি হাসিটি প্রমান করে দেয়, সে আজ রাত আসবে, মনের কুঠিরে জমে থাকা সমস্ত অভিমানকে দূর করে অয়ন আসবে। অয়নকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, রিমি চোখের ইশারায় জানিয়ে দেয়,সে বাসায় যাচ্ছে। অয়ন হাত নাড়িয়ে রিমিকে হাসিমুখে বিদায় জানায়। গাড়ি চলতে শুরু করে, রিমি গাড়িতে বসে ভাবতে থাকে, আজ তার সারপ্রাইজটি পেয়ে অয়নের পতিক্রিয়া কেমন হবে?
_______________
ফারহানকে এই মুহুর্তে নিজ কক্ষে উপস্হিত দেখে বেশ বিম্মিত হয়ে যায় সানা। সানা আমতা আমতা করে আওড়াতে থাকে,
‘ স্যা…র আপ..নি এই মুহুর্তে? ‘
ফারহান চোয়াল শক্ত করে আগুন্দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সানার দিকে এগোতে এগোতে বলে,
‘ সেদিন আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিলাম বিধায়, নিজের ভিতরে বেশ অনুশোচনা হতে লাগলো আমার। ভালোবাসা কোন অন্যায় কিন্তু অন্যায় হচ্ছে সে অন্যকারো জেনেও তাকে ক্রমাগত পাওয়ার জন্যে পসেসিভ হয়ে যাওয়া। আজকে এখানে না এলে তো জানতামই না আপনি একজন খুনি! ‘
‘খুনি ‘ শব্দটি কাটার মতো বিঁধে যায় সানার সর্বাঙ্গে। হ্যা সে চায় সুমাইয়াকে মেরে ফেলতে, কিন্তু সে তো খুন করেনি। তাহলে তাকে খুনি অপবাদ দিচ্ছে কেন ফারহান?
‘ আপনি সুমাইয়াকে নিজের পথের থেকে সরিয়ে ফেলার জন্যে, সেদিন হসপিটালে গিয়েছিলেন তাইনা? আমি ভাগ্যক্রমে চলে আসায় আপনি পালিয়ে যান। ‘
সানা ভয়ে থরথর করে কাপতে কাপতে বলে,
‘ হ্যা স্যার। আমি সুমাইয়াকে মারতে চাই,কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি সেদিন হসপিটালে যাইনি। আমি তো বাসা থেকেই বের হয় না এক সপ্তাহ ধরে। ‘
‘ জাস্ট সাট আপ মিস সানা। ‘
ফারহানের বজ্রে কন্ঠে বলে উঠা ধমকে থেমে গেলো সানা। নেত্রপল্লবে অবাধ্যের ন্যায় অশ্রু গড়াতে লাগলো। ফারহানের চিৎকার শুনে, সানার মা রান্নাঘর থেকে ছুটে আসেন। ফারহানকে দেখে প্রশ্ন করে বসেন,
‘ বাবা তুমি? তুমি এখানে কেন? ‘
ফারহান জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস ছাড়ে। রাগে কপালের মাঝবরাবর বেশ বড়সর ভাজ পড়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে। ফারহান সানার মায়ের দিকে তাকিয়ে, সানাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘ আপনার মেয়ে আমার ভালোবাসার দিকে হাত বাড়িয়েছে,কিন্তু আপনার মেয়ে জানেনা ফারহান চৌধুরীর ভালোবাসার দিকে হাত বাড়ানোর পরিনতি কতটা কঠিনতম। ‘
কথাটি বলেই পুলিশের নাম্বারে ডায়াল করে, ফোন দেয় ফারহান। সানা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে, তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তার ভালোবাসার মানুষটিই তাকে বিশ্বাস করছে না। কত সহজে ‘খুনির’ তকমা লাগিয়ে দিলো।
_____________
অয়ন গাড়ি পার্ক করে ড্রিম নাইট গাডেনের সামনে। একদম যথেষ্ট স্টাইল নিয়ে গাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে সে। পড়নে তার সাদা শার্ট তার সাথে ব্লাক ব্লেজার। ঘন সিল্কি চুলগুলো এক হাত দিয়ে নাড়িয়ে, অপর হাত দিয়ে সানগ্লাস টা বের করে পড়ে নিলো অয়ন। অতঃপর সামনের দিকে এগোতে থাকে। পুরো গাডেনের চারদিকে ঘোর অন্ধকার। কারো কোন সাডা শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। পাশেই দেহরক্ষীরা দাঁড়িয়ে ছিলো। দেহরক্ষীদের কাছে গিয়ে গম্ভীর সুরে অয়ন প্রশ্ন করে,
‘ রিমিপরী কোথায়? ‘
দেহরক্ষীরা জানিয়েছে, রিমির তাদের সাথেই গাডেনে প্রবেশ করলোও, বাকিটুকু পথ রিমি একাই কোথায় যেন চলে গেছে। অয়ন ফোন বের করে রিমিকে ফোন করে যাচ্ছে, কিন্তু রিসিভ করছে না। অয়নের মেজাজ গরম হয়ে যাচ্ছে, তার রিমিপরী কোথায়? গাডেনে কোথায় দেখা যাচ্ছে না কেন? তবে কি তার রিমিপরীর কোন বিপদ হলো? অয়নকে চিন্তিত দেখে,একজন দেহরক্ষী এগিয়ে এসে বললেন,
‘ স্যার! ম্যাম বোধহয় ভিতরে আছেন। আপনি আরেকটু ভিতরে যান। ‘
দেহরক্ষীর কথায় অয়ন ভিতরের দিকে যায়। সামনেই দেখতে পায় সুবিশাল সুইমিংপুল। চাঁদের আলো এসে সুইমিংপুলটাকে উজ্জ্বল করে তুলেছে। এখানে অন্ধকার নয়, বরং চারদিকে ক্যান্ডিলের আলোয় পরিপূর্ন আলোকিত হয়ে রয়েছে। চারপাশে ছোট ছোট টেবিলে ছড়িয়ে আছে। সাদা পর্দায় মুড়িয়ে আছে টেবিলের উপরটা।
সবমিলিয়ে অসাধারণ এক পরিবেশ। অয়ন মুগ্ধ হয়ে, চারপাশের পরিবেশ এক পলক তাকিয়ে, রিমিকে হাক ছেড়ে ডাকতে থাকে,কিন্তু রিমির সাড়া নেই। সামনের দিকে এগোতে নিলে, পাশেই ছোট্ট সাদা টেবিলে রঙ্গিন কাগজে মোড়ানো এক চিরকুট পায় অয়ন। তাতে লেখা,
‘ আরেকটু এগিয়ে আসুন ডক্টর এয়ারসি। ‘
চিরকুট টা পড়ে সামনের দিকে এগোতেই, থমকে যায় অয়ন।
বকুলের মালা শুকাবে
রেখে দিবো তার সুরভী
দিন গিয়ে রাতে লুকাবে
মুছো নাকো আমারি ছবি
আমি মিনতি করে গেলাম
তুমি চোখের আড়াল হও
কাছে কি’বা দূরে রও
মনে রেখো আমিও ছিলাম
এই মন তোমাকে দিলাম
এই প্রেম তোমাকে দিলাম
সুইমিংপুলের পাশে ছোট্ট সাদা ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে, রিমি বেলি ফুলের গাজরা নিজের খোপায় পড়ছিলো এবং উক্ত গানটি গাইছিলো। অয়ন এগিয়ে এসে, পিছন থেকে রিমির খোপায় আলতো করে ভালো করে গাজরাটি লাগিয়ে দিতে দিতে গাইতে থাকে,
ভালোবেসে আমি বারে বার
তোমারি ওই মনে হারাবো
এ জীবনে আমি যে তোমার
মরনেও তোমারি রবো
তুমি ভুলোনা আমার নাম
তুমি চোখের আড়াল হও
কাছে কি’বা দূরে রও
মনে রেখো আমিও ছিলাম
এই মন তোমাকে দিলাম
এই প্রেম তোমাকে দিলাম।
গানটি গেঁয়ে অয়ন রিমিকে নিজের দিকে ঘুড়ায়। রিমি লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলে। অয়ন প্রতিদিনের তুলনায় আজ খানিকটা দ্বিগুনভাবে ভালোবাসাড সহিত তার রিমিপরীকে দেখছে। রিমির পড়নে কালো সুতির শাড়ি। গাঁয়ে হাল্কা গয়না। মুখে নেই কোন আলাদা সাঁজ। ফর্সা মুখশ্রীর আখিঁজোড়া জায়গায় করে নিয়েছে ঘন কালো কাজল। তাতেই কি স্নিগ্ধ লাগছে অয়নের রিমিপরীকে। অয়ন রিমির হাত ধরে মুগ্ধতা নিয়ে বলে,
‘ ওহে মায়াবতী কন্যা, তোমার আখিজোড়ায় কাজল দিও না। আমার বড্ড মায়া হয়। তোমার কাজল কালো আখিজোড়ার মায়াতে মরে যেতে ইচ্ছে করে বারংবার, প্রতিনিয়ত। ‘
চলবে……কী?
#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ৪৩
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ভালোবাসার মানুষটিকে পাওয়ার জন্যে ফারহানের স্ত্রীকে খুন করতে চাওয়ার মতো জঘন্য প্রচেষ্টা করেছে সানা। সানার প্রতি ঘৃনায় শরীরটা রি রি করে উঠছে ফারহানের। সানা দৃষ্টি নত করে দাঁড়িয়ে আছে। ইতিমধ্যে পুলিশ ও চলে এসেছে। ফারহানের অভিযোগ শুনে পুলিশ তদন্তের জন্যে সানাকে নিয়ে যেতে চাইছে। সানার মা স্পষ্ট করে বুঝিয়ে যাচ্ছেন, তার মেয়ে এতোটা ঘৃণ্য কাজ করতে পারে না,কিন্তু কেউ তার কথা শুনলো না। সানা নির্বিকার হয়ে ফারহানকে দেখে যাচ্ছে একদৃষ্টিতে। সে দেখতে পারছে তার ভালোবাসার মানুষটির চোখে কতটা ঘৃণা শুধুমাত্র তারই জন্যে। ভালোবাসার মানুসষটির চোখে নিজের জন্যে ঘৃণা দেখতে পাওয়া কতটা যে বেদনাদায়ক তা হারে হারে উপলব্ধি করতে পারছে সানা। কয়েকজন মহিলা কন্সটেবল সানাকে ধরে নিয়ে যায়। সানাও প্রতিবাদ করেনা শুধুমাত্র চলে যাওয়ার আগে, আক্ষেপের সুরে বলে,
‘ আজ না হয় কাল, আপনাকে আফসোসের মতো কঠিনতম গ্লানি বয়ে বেড়াতে হবে। ‘
ফারহান সানার কথাটি গুরুত্ব দেয় না। সানাকে পাশ কাটিয়ে চলে যায় অতিদ্রুত।
__________________
নিজের স্বামীকে ভালোবাসা কথাটি বলতে গিয়েও,একপ্রকার জড়তা কাজ করছে রিমির মাঝে। অয়ন হাত ভাজ করে, রিমির দিকে ঝুঁকে অধরের কোণে আলতো হাসি ফুটিয়ে প্রশ্ন করে,
‘ এতো আয়োজনের উৎস তো কি রিমিপরী? আজকে কি স্পেশাল কিছু? ‘
রিমি তার শাড়ির আচলটা বার বার নাড়াতে থাকে। লজ্জায় লাল টুকটকে হয়ে উঠেছে তার স্নিগ্ধ মায়াবী মুখশ্রী। অয়ন নামক যুবক তার প্রেয়সীর স্নিগ্ধ মায়াবী চেহারার প্রেমে আরেকদফা পড়ে যায়। হাত নাড়িয়ে রিমিকে ছুঁতে চাইলে, রিমি দূরে সরে আসে। নিঃশ্বাস ঘন ঘন হতে থাকে প্রতিক্ষনে, সেই নিঃশ্বাসের শব্দ ঠিকই ঠাওর করতে পারছে অয়ন। রিমি নিজের মধ্যে ক্ষীন্ন সাহস জুগিয়ে অয়নের দিকে এগোতে এগোতে বলে,
‘ ভালোবাসা দুই ধরনের। নিজের ভালোবাসাকে পাখির মতো উড়তে দাও,নাহলে তাকে বন্দিনী করে আজীবন নিজের কাছে আকড়ে ধরে বাঁচো। ‘
অয়ন রিমির কথা শুনে, রিমির দিকে ভ্রু কুচকে তাকাতেই, রিমি পুনরায় মাথা নত করে বলে,
‘ আমি সবসময় চাইতাম পাখির মতো স্বাধীনতা নিয়ে উড়তে। আপনার অতিরিক্ত ভালোবাসা আমাকে কষ্ট দিচ্ছিলো প্রতিনিয়ত ডক্টর এয়ারসি,কিন্তু একটা সময় আমি উপলব্ধি করি আপনার সমস্ত পাগলামো,সব তো আমাকেই ঘিড়ে। আমাকে হারানোর ভয় সবসময় আপনাকে তাড়া করে, তাইতো এতোটা পসিসিভ আপনি তো আমার জন্যেই হয়ে উঠেছেন, এবং একটা সত্যি কথা কি জানেন ডক্টর এয়ারসি? আপনার উম্মাদময় ভালোবাসার প্রেমেই আমি পড়ে গিয়েছি। ‘
অয়ন হতবাক হয়ে শ্রবণ করে যাচ্ছে রিমির প্রতিটা কথা।
রিমি তার কথা শেষে হাটু গেড়ে বসে পড়ে রিমি। অতঃপর টকটকে লাল গোলাপ টা বের করে, অয়নের সামনে ধরে নিয়ে খানিকটা ধীর কন্ঠে বললো,
‘ আপনি বলেছিলেন গোলাপের থেকে সুন্দর আমি, আজ আমি বলছি গোলাপের থেকেও অধিক সুন্দর আপনার বিশুদ্ধ ভালোবাসা। যে ভালোবাসা অন্যন্য, অন্যতম। ভালোবাসার সঠিক ব্যাখা আমার কাছে নেই তবে, আমার কাছে ভালোবাসা মানেই আপনি ডক্টর এয়ারসি। ভালোবাসি। ‘
রিমির ‘ ভালোবাসি ‘ শব্দটির সাথে মিশে ছিলো এক সুমদ্র আবেগ, এক সমুদ্র ভালোবাসা, এক সমুদ্র অনুভুতি। অয়ন কিছুক্ষন অনুভুতিশূন্য হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। নেত্রজোড়া তার অনিমেষ,পলকহীন। মুখস্রীতে ফুটে উঠেছে দাম্ভিকতা। রিমির মনে নাড়া দিয়ে উঠলো অদ্ভুদ ভয়। তবে কি অয়ন তার ভালোবাসা প্রত্যাখান করবে? রিমির ভয়ার্থ মুখশ্রী অয়নকে বড্ড তৃপ্তি দিচ্ছে। রিমির মুখে নিজের প্রতি ‘ভালোবাসি’ শব্দটি যেন অয়নকে পৃথিবীর সমস্ত সুখ এনে দিচ্ছে। এই দিনটির অপেক্ষাতেই তো ছিলো অয়ন। অয়নকে আরেকদফা চমকে দিয়ে, রিমি হাটু গেড়েই কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
‘ ইউল ইউ মেরি মে এগেইন? ‘
অয়ন যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না, তার রিমিপরী তাকে বিয়ের প্রস্তাব নিজ থেকে দিচ্ছে। অয়ন রিমির থেকে ফুলখানা নিয়েই, রিমিকে পাজকোলে তুলে উচ্ছসিত হয়ে, অত্যাধিক আনন্দের সাথে রিমিকে কোলে তুলে ঘুড়তে ঘুড়তে বলে,
‘ ইয়েস রিমিপরী! আই ইউল মেরি ইউ! ‘
রিমিও হেসে উঠে। অয়নের মুখে উপচে পড়ছে বিশ্বজয় করা আনন্দ। অয়নের আনন্দে রিমির চোখদুটোও ভরে উঠে। অয়ন রিমিকে কোলে নিয়ে, সুইমিংপুলের পাশের সোফায় আলতো করে বসিয়ে দিয়। অতঃপর রিমির হাতে গভীরভাবে চুমু খেয়ে কৃতজ্ঞতার সুরে বলে,
‘ থ্যাংকস রিমিপরী। আজকের দিনটা এতোটা স্পেশাল করে তুলে দেওয়ার জন্যে। ‘
‘ এর বদলে আমারোও তো গিফট পাওনা রয়ে যায়। আমার গিফট দিন এখন। ‘
কিছুটা মজের ছলে বলে রিমি। অয়ন কিছু একটা ভেবে,রিমির দিকে ঝুঁকে নেশাক্ত গলায় বলে,
‘ আমার রিমিপরী আমার কাছে চেয়েছি, আমাকে তো এখন দিতেই হবে। ‘
রিমিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে, অয়ন রিমিকে নিজের মাঝে টেনে নেয়। অতঃপর রিমির অধরে গভীরভাবে ভালোবাসার পরশ দিতে থাকে, রিমিও শক্ত করে আকড়ে ধরে অয়নের ব্লেজার। চাঁদের আলোয় উজ্জ্বলিত হয়ে উঠেছে চারপাশের পরিবেশের। অয়ন খানিক্টা অবাধ্য হতে চাইলো, কাছে টেনে নিতে চাইলো নিজ স্ত্রীকে ঘনিষ্টভাবে। রিমি অয়নের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে,দ্রুত অয়নের থেকে দূরে সরে গিয়ে উঠে দাঁড়ায়। অয়ন রিমির দিকে এগোতে এগোতে দুষ্টু হেসে বলে,
‘ আজকে তবে কি আমার থেকে দূরে সরে থাকতে পারবে তুমি রিমিপরী?’
রিমি অয়নের থেকে পিছাতে পিছাতে বলে,
‘ এতো সহজে আপনাকে ধরা দিচ্ছি না আমি হু। ‘
কথাটি বলে খিলখিলিয়ে হেসে উঠে রিমি। অয়নও হাসতে থাকে, তার রিমিপরীর মিষ্টি হাসিখানা। দূর থেকে অয়নের এবং রিমির এমন সুন্দর মুহুর্ত দেখে যাচ্ছিলো আমান। বুকটা যেন তার ফেঁটে যাচ্ছে প্রতিমুহূর্তে। রাতের আধারে নাইট ড্রিম গার্ডেনে নিজের অজান্তেই চলে এসেছিলো আমান। দূর থেকে অয়ন এবং রিমিকে দেখে সে থমকে যায় আমান। বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে। ঠোটের কোণে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠে, অবশেষে তার রিমিপাখিও ভালোবেসে ফেললো অয়ন চৌধুরীকে। আমানের অজান্তেই আরেকজনও ক্ষুদ্ধ দৃষ্টিতে অয়ন এবং রিমিকে পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছে। সে আর কেউ নয় পায়েল। পায়েল দ্রুত বেড়িয়ে যায় সেখান থেকে।
______________
সুমাইয়াকে সবেমাত্র অপারেশন থিয়েটারে ঢুকানো হয়েছে। বাইরে থেকে বিখ্যাত ডক্টরদের আনানো হয়েছে সুমাইয়ার জন্যে। ফারহান বাইরে পাইচারি করে যাচ্ছে অনবরত। তার মনে শুধু এক্টাই ভয়, তার সুমাইয়ার জীবনে কোনপ্রকার ঝুঁকি হবে না তো? প্রায় পাঁচঘন্টা যাবত অপারেশন চললো। অপারেশন শেষে, ডক্টর হাসিমুখে বেড়িয়ে ফারহানের কাধে চাপড় মেরে বললেন,
‘ অভিনন্দন ফারহান চৌধুরী। অপারেশন সাকসেসফুল। ‘
কথাটি শুনে ফারহানের নেত্রপল্লবে জল চলে আসে। সে বিশ্বাসই করতে পারছে না, তার সুমাইয়া সুস্হ হয়ে উঠেছে, আগের মতো ফারহানের সাথে কথা বলবে, আগের মতো ভালোবাসবে। ফারহান হাটু গেড়ে বসে পড়ে, আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া জানায়। ডক্টর জানান, সুমাইয়াকে আপাতত কেবিনে শিফট করা হয়েছে। ২৪ ঘন্টার আগে তার জ্ঞান ফিরবে না।
_________________
অয়নকে একপ্রকার না জানিয়েই, ইশার অনুরোধে রিমি এবং ইশা বিয়ের কয়েকটি শাড়ি কেনাকাটা করতে শপিং এ এসেছে। রিমির কিছুটা ভয় করছে বটে, দেহরক্ষীকে না নিয়ে আসায় অয়ন যদি রাগ করে? তখন?
‘ রিমি সামনে চলো। সামনে অনেক গুলো শাড়ির কালেকশন আছে। ‘
রিমি চলে যেতে নিলে, পিছন থেকে তার হাত কেউ ধরে ফেলে। রিমি পিছনে ঘুড়ে দেখে অয়ন দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে ইশা এবং রিমির দিকে তাকিয়ে আছে। রিমিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই, রিমির হাত ধরে একপ্রকার টানতে টানতে রিমিকে নিয়ে শপিং মল থেকে বেড়িয়ে যায়।
চলবে…কী?