#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ৪৮
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অয়ন রিমির হাত ধরে একপ্রকার টেনে -হিচড়ে রিমিকে ঘরে নিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়। রিমি হতভম্ব হয়ে অয়নের পানে তাকিয়ে থাকে। অয়ন রিমির হাত ধরে বিছানায় বসে দিয়ে, মেহেদী পরা হাতের দিকে তাকিয়ে, অস্হির হয়ে বলে, ‘ রিমিপরী তুমি চিন্তা করো না। আমার নামের অস্তিত্ব কেউ কখনো যেন তোমার হাত থেকে বিলিন করার সাহসটুকু না পায়, সেই ব্যবস্হা আমি এখন করবো।’
অয়নের সম্পূর্ন কথাটুকু বুঝতে বেশ অসুবিধা হলো রিমির। অয়ন তার পাশের স্টাডি রুমে চলে গেলো। কিছুক্ষন এর মাঝেই ফিরে এলো। হাতে তার নাম পারমানেন্ট করার যন্ত্র! রিমির যন্ত্রটি দেখে বুঝতে অসুবিধা হলো না, আসলে অয়ন কী চাইছে। কথাটি ভেবেই ভয়ে হাত-পা কাঁপতে শুরু হয়ে গেলো। অয়ন রিমির হাতখানা নিজের হাতে রেখে রিমির চোখের দিকে তাকিয়ে অদ্ভুদ ভাবে বললো,
‘ আজীবনের জন্যে আমার নাম তোমার হাতে লিপিবদ্ধ করে দিবো, যেন কেউ চাইলেও, তোমার হাত থেকে আমার নাম সরাতে না পারে। ‘
কথাটি বলেই, অয়ন রিমির হাতের বাহুতে যন্ত্রটি বসিয়ে, অয়নের নামটি লিখে দিলো। রিমির হাত বেয়ে, রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। রিমি ব্যাথায় আর্তনাদ করে না, চুপটি করে বসে থাকে। অয়নের চোখে উপচে পড়ছে এক অন্যরকম আনন্দ। রিমির হাতে ‘অয়ন ‘ নামটি লিপিবদ্ধ হয়ে যায় আজীবনের জন্যে। যন্ত্রটি রেখে অয়ন রিমির হাতে নিজের নাম দেখে বিশ্বজয়ের হাসি হাঁসলো। রিমি কিছুক্ষন স্হীর হয়ে বসে রইলো অপলক ভাবে। অয়ন কিছুক্ষন চুপ করে বসে থেকে পরক্ষনেই রিমির হাতের দিকে তাকিয়ে ছলছলে চোখে তাকিয়ে বললো,
‘ তুমি খুব ব্যাথা পেয়েছো তাইনা রিমিপরী? কিন্তু..’
অয়নের কথাটুকু সম্পূর্ন করতে না দিয়ে, রিমি অয়নের হাতে নিজের হাতে রেখে, আলতো হেসে উত্তর দিলো,
‘ আপনার আকাশ সমতল্য খুশির থেকে আমার সামান্য ব্যাথা বড় নয় ডক্টর এয়ারসি, কিন্তু একটা কথা কি জানেন? নাম লিপিবদ্ধ করার জন্যে, কোনরকম যন্ত্রের প্রয়োজন হয় না , আপনার নাম তো আমার মনের কুঠিরে সুপ্তভাবে লিপিবদ্ধ করা আছে, কেউ চাইলেও আমার মন থেকে আমার ডক্টর এয়ারসির নাম কেউ কখনো মুছে ফেলতে পারবে না। ‘
রিমির কথায় রিমিকে শক্তকরে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে, ললাটে ধরে অধর ছুইয়ে, ভয়ংকর ভাবে বাকা হেসে ,অতি ঠান্ডা গলায় অয়ন বলে,
‘ কেউ যদি তা করার সামান্যটুকু স্পর্ধা কেউ করার চেস্টা করে তবে তাকেই মুছে দিবে তোমার ডক্টর এয়ারসি। ‘
রিমি অয়নের ভয়ংকর কথার বিপরীতে কিছুটি বললো না, বুকে লেপ্টে রইলো চুপটি করে। বুকচিরে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে তার।
_______
আমান বেড়িয়ে যেতে নিলে দেখতে পায়, মেঘ তার দিকে তাকিয়ে আছে। আমান মেঘকে দেখে কিছু ঘাবড়ে গিয়ে বলে,
‘ তুমি এখানে? ‘
‘ সেই প্রশ্ন আমার আপনাকে করার উচিৎ। আপনি এখানে কেন? ‘
মেঘের প্রশ্ন আমান কিচ্ছুটি বলে না। আমানের নিরবতায় মেঘের বুঝতে বাকি থাকে না, আমান রিমির জন্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসেছে মরণকূপে।
মেঘ নেত্রকোণে জলটুকু মুছে পিছনে ঘুড়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে,
‘ পরশু রিমিপু আর অয়ন ভাইয়ের বিয়ে, আর আপনি এখন রিমিপুর জন্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলে এসেছেন? কেন করছেন এমন? কেন ভুলতে পারছেন না রিমিপুকে? ‘
‘ সেই উত্তর তোমাকে আমিও আগে দিয়েছি মেঘ..’
আমানের কথা সম্পূর্ন করতে দিলো না আমান। তীব্র ক্ষোভ নিয়ে আমানের শার্টের কলার আকড়ে ধরে, ক্ষিপ্ত সুরে বলে,
‘কিচ্ছু বুঝতে চাইনা আমি। আমি আপনাকে ভালোবাসি বুঝলেন? আমার সহ্য হয় না আপনার মুখে অন্য মেয়ের জন্যে ভালোবাসি কথাটি শুনতে, কজ আই লাভ ইউ লট মিঃ শিকদার। সহ্য করতে পারি না আমি।’
কথাটি বলেই কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে উপরের দিকে চলে যায়। আমান স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তার মস্তিষ্কে শুধু মেঘের মুখে ‘ ভালেবাসি ‘ কথাটি ঘুড়পাক খাচ্ছে।
___________
(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
রুহানা চৌধুরী কফি হাতে বসে নিজের রুমে কিছু ফাইল পাল্টে দেখছেন। রুজা চৌধুরী কোনপ্রকার অনুমতি ব্যাতীত রুহানা চৌধুরীর রুমে প্রবেশ করলেন। এতো রাতে রুজা চৌধুরী নিজ কক্ষে দেখে ললাটে জুড়ে গম্ভীর ভাজ পড়লো রুহানা চৌধুরীর। রুজা চৌধুরীর গাঁয়ে এখনো অনুষ্টানের পোষাক। রুজা চৌধুরী কিছু বলার পূর্বেই, রুহানা চৌধুরী তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
‘ আমি জানি তুমি কী বলবে। কিন্তু যা বলার আমি অয়নের বিয়ের দিনেই বলবো। আর কিচ্ছুটি শুনতে চাইনা আমি। ‘
রুজা চৌধুরীর চিন্তা বাড়লো। রুহানা চৌধুরী তাকে এবং আশরাফ চৌধুরীকে জানিয়েছে অয়নের বিয়ের দিন এক বিশাল রহস্যের উদঘাটন করবেন তিনি, কিন্তু কি এমন রহস্য? বুঝতে পারছেন না তিনি। রুজা চৌধুরীর ভাবনার মাঝেই বিঘ্ন ঘটিয়ে রুজা চৌধুরী বললেন,
‘ কি হয়েছে? এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেন? ‘
তিনি অতি চালাকির সহিত জিজ্ঞাসা করলেন,
‘ আপনি বলেছেন অয়নকে নাকি কি একটা সারপ্রাইজ দিবেন, কিন্তু কি সেই সারপ্রাইজ? মানে আগে থেকে জানা থাকলে ভালো হতো। ‘
‘ সারপ্রাইজ বলে দিলে কি আর সারপ্রাইজ থাকে? ‘
রুহানা চৌধুরী কথার বিপরীতে কোনরুপ প্রতিক্রিয়া করতে পারলেন না রুজা চৌধুরী। রুহানা চৌধুরী হাতে থাকা ফাইলগুলো ড্রয়ারে রেখে, মুখে হাত দিয়ে
বিছানায় বসে অতঃপর চোখে থাকা চশমা টা খুলে, রুজা চৌধুরীর উদ্দেশ্য বললেন,
‘ এইবার তুমি আসতে পারো। কালকে রং খেলা অনেক কাজ আছে। এখন গিয়ে ঘুমিয়ে পরো। ‘
রুজা চৌধুরী হতাশ হয়ে কক্ষ ত্যাগ করলেন।
_________________
আজ রিমি এবং অয়নের বিয়ে উপলক্ষে অয়নের বাড়ির বাগানে বিশাল অংশজুড়ে রং খেলার আয়োজন করা হয়েছে। চারদিকে দেহরক্ষীগণ ঘিড়ে রয়েছে। আগের থেকেও দ্বিগুন দেহরক্ষী বাড়ির প্রতিটা কোণায় কোণায় নিযুক্ত করছে অয়ন। চারদিকে রয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। বিশেষ করে রিমির রুমের আশেপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা বেশি রয়েছে। রিমিকে সাজানো জন্যে পার্লারের লোকেদের বাসাতেই আনিয়েছেন রুহানা চৌধুরী।
রিমিকে সাঁজানো শেষে বাইরে রং খেলার জন্যে মেয়েরা নিয়ে আসে। স্টেজে গিয়ে রিমিকে বসায়। অয়ন ফোনে হাতে নিয়ে, হসপিটালের বিষয়ে কথা বলছিলো। কিছু মেয়েরা আড়চোখে দেখে যাচ্ছিলো, আজ অয়নকে সাদা পাঞ্জাবিতে মাত্রাধিক সুদর্শন লাগছে। পাঞ্জাবির হাতা ফ্লড করে স্টেজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো অয়ন, কিন্তু হুট করে রিমিকে দেখে একপ্রকার থমকে যায়।
রিমি তাঁতের টিয়া রংয়ের শাড়ি পরিধান করেছে। যা রিমির দেহের সাথে ভালোভাবে লেপ্টে রয়েছে। চুলগুলো এক পাশ দিয়ে বেনি করা। ফর্সা মুখশ্রী গুটি কয়েক চুল এসে বার বার উপচে পড়ছে। সবমিলিয়ে রিমিকে অদ্ভুদ মায়াবী পরী মনে হচ্ছে অয়নের কাছে। অয়ন তার বুকে হাত দিয়ে ধীর কন্ঠে বলে,
‘ আমার মায়াবী রিমিপরী। যার মায়ায় আসক্ত হয়ে উঠছি আমি প্রতিক্ষনে। ‘
অয়নের ভাবনার মাঝেই, একটি ছোট্ট বাচ্চা রিমির কোলে গিয়ে বসে পড়ে। একদম নিবিড় ভাবে। সম্পর্কে অয়নের দুস্পর্কের বোনের ছেলে। ছেলেটি রিমির হাত ধরে আদো গলায় বলতে থাকে,
‘ আন্তি তুমি না খুব তুন্দর। ‘
অয়ন স্টেজে উঠছিলো ছেলেটির কথা শুনে, দাঁড়িয়ে যায়। তীক্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ছেলেটির দিকে।
রিমি মিস্টি হেসে ছেলেটির গাল টেনে বলে,
‘ তুমিও অনেক কিউট বেবি। ‘
বাচ্চা ছেলেটা রিমির কোলে বসে পরায় রাগে নাকের ঢগা লাল হয়ে যায় অয়নের। এইভাবে তার বউকে অন্য কেউ সুন্দর বলছে কেন? কেনই বা এতো ঘেষে বসে আছে। অয়নের সহ্য হলো না। অয়ন এগিয়ে গিয়ে, বাচ্চাটির দিকে এগিয়ে এসে, হাত বাড়িয়ে বলে,
‘ বাবু তুমি আমার কোলে আসবে না? এসো। ‘
ছেলেটি ভ্রু কুচকে রিমির দিকে ঘেসে বসে বললো,
‘ না আমি আন্তির কাছে বসবো। ‘
ছেলেটির কথায় আরেকদফা রেগে গেলো অয়ন।
রিমি কিছু বলতে নিলে, চোখ রাঙ্গিয়ে তাকায় অয়ন। রিমি থেমে যায়।
‘ না তুমি আমার কাছে আসো। আমি তোমাকে চকলেট দিবো। ‘
কথাটি বলেই, বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে স্টেজ থেকে নেমে, বাচ্চাটির গালে জোড়ে টেনে অয়ন কোনরকম জোড় করে হেসে বলে,
‘ অনেক কিউট তো তুমি। মানুষের বউয়ের পাশে বসে থাকো কেন? এইসব একদম ঠিক নয়। বুঝলে? ‘
‘ কেন? আন্তি টা অনেক ভালো। আমি কেন যাবো না আন্তেল? ‘
অয়ন বাচ্চাটির প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে, একটি বড় চকলেট বাড়িয়ে, আরেকদফা গাল টেনে বলে,
‘ ওই আন্টির কাছে একদম যাবে না বুঝলে? রাত হয়ে গেলেই আন্টিটা ভুত হয়ে যায়। বাচ্চাদের খেয়ে ফেলে। ‘
ভুতের কথা শুনে বাচ্চাটি ভীত সুরে বলে,
‘ আত্তা আমি তাবো না। ‘
অয়ন মুচকি হেসে বাচ্চাটির গালে চুমু খেয়ে বলে,
‘ গুড বয়। ‘
কিছুক্ষনের মাঝেই রং খেলা শুরু হয়ে যাবে। অয়নকে দেখতে পারছে না রিমি। রিমি স্টেজ থেকে নীচে নামে। উদ্দেশ্য অয়নকে খুঁজে বের করা। রিমি পা বাড়াতে নিলে, সকলের আড়ালে রিমির হাত ধরে কেউ রিমিকে পাশের স্টোর রুমে নিয়ে আসে। ঘটনাটি এতোটাই দ্রুত ঘটে গিয়েছে যে রিমি ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলে সামনের দিকে অয়নকে দেখে
শান্ত হয়ে যায়। রিমি অয়নকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করে,
‘ আপনি আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছেন? বাইরে তো রং খেলা শুরু হয়ে গিয়েছে। ‘
‘ হ্যা আমরা যাবো, কিন্তু তোমাকে যেন আমার আগে যেনকেউ রং মাখাতে না পারে তাই নিয়ে এসেছি। ‘
কথাটি বলেই, পিছন থেকে গোলাপি রং নিজের গালে মিশিয়ে, নিজের গাল রিমির গালে আলতো করে মিশিয়ে নেশাক্ত সুরে বলে,
‘ তোমার আঙ্গিনায় আমার ভালোবাসার সমগ্র রং উজাড় করে দিলাম। ভালোবাসি৷ ‘
রিমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অয়নকে।
চলবে…..কী?
#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ৪৯
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
মাঝরাতে কোন অপরিচিত ঠান্ড হাতের স্পর্শে কেঁপে উঠলো রিমির সর্বাঙ্গ। তৎক্ষনাৎ তড়িৎ গতিতে উঠে পরলো রিমি। দেয়ালে দেখতে পেলো কারো অবয়। অবয়ের ছায়া মানবের শারীরিক গঠন দেখে, কেমন একটা অয়নের মতো মনে হলো রিমির। রিমি কিছুটা ভীত গলায় হাক ছেড়ে ডাকে,
‘ ডক্টর এয়ারসি, আপনি কি এখানে আছেন? কি হলো উত্তর দিচ্ছেন না কেন? ‘
রিমির ডাকে অন্ধকারে থাকা অবয়টি কোথায় যেন মিলিয়ে গেলো। রিমি মুখ চেপে দ্রুত রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে নিলে, অয়ন এসে পড়ে রিমির সামনে।
অয়নকে দেখে ভয় পেয়ে দ্রুত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, উৎকন্ঠার সহিত রিমি আওড়াতে থাকে,
‘ জানেন ডক্টর এয়ারসি? কেউ ছিলো। আমার রুমে..’
রিমির কথাকে সম্পূণ করতে না দিয়ে, রিমির মাথায় পরম যত্নের সহিত মাথা হাত বুলিয়ে দিতে দিতে অয়ন বললো,
‘ কেউ ছিলো না রিমিপরী। আমার এতো কড়া পাহারের মধ্যে কারো সাহস হবে না, তোমার রুমে প্রবেশ করার। আমি এসেছিলাম রিমিপরী। তোমাকে দেখার জন্যে মনটা ছটফট করছিলো, তাই তোমার রুমে সামনে এসেছিলাম। ‘
অয়নের কথায় পূর্বের ন্যায় মুখে বিষন্নতা মুখে দাঁড়িয়ে থাকে। একরাশ ভয় এসে রিমির মুখশ্রীতে হানা দিয়েছিলো। নেত্রকোণে স্হীর নয়, অনরবত দুশ্চিন্তায় টলমল করছে, অদ্ভুদ এক দুশ্চিন্তা অদ্ভুদ এক ভয়। সবমিলিয়ে রিমির মন-মস্তিষ্কে অস্হিরতা বিরাজমান। অয়ন বুঝলো রিমির মনের অবস্হা। রিমি কোন একটা বিষয় নিয়ে বেশ চিন্তায় আছে। অয়ন কিছু একটা ভেবে রিমিকে পাজকোলে তুলে নিলো। রিমি হতভম্ব হয়ে প্রশ্ন করলো,
‘ কি করছেন ডক্টর এয়ারসি। ‘
অয়ন রিমির প্রশ্নের উত্তরে জবাব দিলো না। রিমিকে কোলে নিয়েই উপরের দিকে চলে গেলো। উপরের ছাদে এসে রিমিকে নিয়ে, ছাদের মাঝখানে থাকা দোলনায় পরম যত্নের সাথে বসিয়ে দিলো। অয়নও বসে পড়লো।
ছাদের বিশাল অংশজুড়ে বিভিন্ন দেশি বিদেশি ফুল গাছের ছড়াছড়ি। রিমি রাতের আকাশের দিকে তাকায় যেখানে রাতভর তারারা খেলা করে, জানান দেয় তাদের উপস্থিতি, ঔজ্জ্বল্য দিয়ে ভরে তোলে রিমির হৃদয়। নানা রঙের তারকারাজি ঘিরে থাকে চাদকে আর চাদ তার শুভ্রতা নিয়ে এক মায়াচ্ছন্ন চাদর বিছিয়ে দেয় সারা প্রকৃতিতে।
মৃদ্যু বাতাস এসে অয়নের উষকষ্ক চুলগুলো উড়তে লাগলো লাগামহীন। রিমি হাত নাড়িয়ে অয়নের সিল্কি চুলগুলো ছুইয়ে দিলো। অয়ন চোখ বন্ধ করে,রিমির কোলে নিজের মাথা হেলিয়ে দিয়ে। রিমি মুচকি হেসে অয়নের চুলগুলো নিয়ে খেলা করতে থাকে। মানুষটা সাথে থাকলে তার সমস্ত ভয় নিমিষেই দূর হয়ে যাবে। বিশাল এক ভরসা জায়গায় অয়ন রিমির। যাকে চোখ বুজে বিশ্বাস করা যায়। অয়ন আখিজোড়া বন্ধ রেখেই তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
‘ জানো রিমিপরী? তোমার অধরের কোণে লেগে থাকা মুচকি হাসিটুকুর দেখার জন্যে জন্যে হাজারো রজনী তোমার পাশে দিব্বি কাটিয়ে দিতে পারবো। ‘
রিমিও অয়নের কথার প্রেক্ষিতে, পাল্টা উত্তর দিয়ে বলে,
‘ যদি সময় পেরিয়ে যায়? ‘
‘ আজীবন তোমার সাথে কাটিয়ে দিলেও, সময় পেরিয়ে যাবে না।’
কথাটি বলেই অয়ন উঠে দাঁড়িয়ে রিমির ললাটে নিজের ঠোট ছুইয়ে, রিমির অধরে ভালোবাসার স্পর্শে পরিপূর্ন করে তুলে। অতঃপর রিমির দিকে তাকাতেই, রিমি লজ্জায় অয়নের বুকে মাথা রেখে আখিজোড়া বন্ধ করে, ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলতে থাকে। অয়ন তার লজ্জারাঙ্গা বউয়ের দিকে তাকিয়ে, খানিক্টা দুষ্টু হেসে বলে,
‘ এখুনি এই অবস্হা? কালকে কি করবে তাহলে রিমিপরী? অনেক তো দূরে দূরে থেকেছো, কালকে কি করবে? ‘
অয়নের লাগামহীন কথায় চোখ বড় বড় করে রিমি উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বিড়বিড় করে আওড়াতে থাকে,
‘ অসভ্য, বড্ড অসভ্য লোক। ‘
অয়নও উঠে ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে বলতে থাকে,
‘ সে তুমি অসভ্য বলো, আর যাই বলো। কালকে আমাদের ভালোবাসা পূর্নতা পাবে। গোটা দুনিয়া যানবে তুমি শুধুমাত্র ডক্টর অয়ন রওযাক চৌধুরীর বউ। আমার রিমিপরী। একান্তই আমার। ‘
রিমি পা বাড়িয়ে ছাদ থেকে চলে যেতে নিলে, অয়নের কথাটি শুনে থেমে যায়। অয়নও আনমনে গাইতে থাকে,
.. তোমায় ছোঁবো সেখানে,
ও.. ভালোবাসো এখনি
হো.. পরে কি হয় কে জানে ।
সারাটা দিন
ঘিরে আছো তুমি এত রঙ্গিন
হয়নি কখনো মন,
সারাটা রাত
আসছে না ঘুম ধরেছি হাত
থাকবো সারাজীবন।
অয়ন গানটি গুনগুন করে গাইতে গাইতে, রিমিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। অয়ন এবং রিমির ঘনিষ্ট মুহুর্তকে দূর থেকে কেউ পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছে। মুখে তার অদ্ভুদ কুটিল হাসি। সে ফোন করে কাউকে ফোন কর, ফিসফিস কন্ঠে বলতে থাকে,
‘ সব ব্যাবস্হা হয়ে গিয়েছে তো? ‘
ফোনের অপর পাশ থেকে উত্তর আসে,
‘ জ্বে সব ব্যাবস্হা হয়ে গেছে। ‘
_____________________
প্রায় ভোর হয়ে গিয়েছে।দুইদিন হতে চললো সুমাইয়ার জ্ঞান ফিরছে না। তা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তার মধ্যে আছে ফারহান। দুইদিন ধরে সে অফিসে ও যাইনি কিংবা বাসাতেও যাইনি। সুমাইয়ার পাশে নিরব হয়ে দুইরাত কাটিয়ে দিয়েছে ফারহান। ফারহান ঠিক আজ রাতের ফ্লাইটে সুমাইয়াকে নিয়ে
মালেশিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিবে, আর সে তার সুমাইয়াকে ফেলে রাখবে না। সুমাইয়ার জন্যে সে যতপ্রকার বেস্ট চিকিৎসা সবকিছু করাবে। ভাবতে ভাবতে ফারহানের ফোন বেজে উঠে। ফারহানের ফোনের দিকে তাকিয়ে সুদীর্ঘ শ্বাস ফেলে, ফোন টা হাতে নিয়ে কেটে দেয়। তাকে বাইরে বের হতে হবে। অনেক গুছগাছ আছে। সবকিছু আজকের মধ্যে পেকিং করে ম্যালেশিয়ার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়তে হবে। ফারহান সুমাইয়ার ঘুমন্ত মুখখানার দিকে তাকিয়ে, ক্লান্ত গলায় বলে,
‘ তোমার ঘুমন্ত মুখশ্রী আমার বড্ড অপ্রিয় প্রেয়সী। আমি ক্লান্ত হয়ে উঠেছি তোমার হাসিজ্বল মুখস্রী দেখার তীব্র অপেক্ষায়। কবে এই অপেক্ষার অবসান ঘটবে প্রেয়সী? অপেক্ষা যে বড্ড পোড়ায়। ‘
ফারহানের কথার বিপরীতে কোনরুপ উত্তর আসে না। ফারহান নেত্রকোণে জলটুকু মুছতে গিয়েও পারে না। হতাশ হয়ে বিনা উত্তরে বেড়িয়ে আসে। হুট করে সুমাইয়ার হাতজোড়া আস্তে আস্তে নড়ে উঠে। পাশে আখিজোড়া মৃদ্যুভাবে কাঁপতে থাকে। পাশে থাকা যন্ত্রে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সুমাইয়ার হার্টব্রিট সময়ের সাথে সাথে তড়িৎ গতিতে বেড়ে চলেছে। সুমাইয়ার আখিজোড়া ধীরে ধীরে খুলে যায়। নার্স একজন সবেমাত্র ভিতরে ঢুকছিলো, সুমাইয়ার চোখের পাতা নড়তে দেখে, চিৎকার করে হাক ছেড়ে ডেকে বলে,
‘ সবাই কে কোথায় আছেন ? দেখুন মিসেস চৌধুরীর জ্ঞান ফিরেছে। ‘
ফারহান বেড়িয়ে যাচ্ছিলো, নার্সের কথা শুনে একপ্রকার থমকে যায়। দ্রুত দৌড়ে এসে সুমাইয়ার কেবিনে এসে দেখতে পায়, সুমাইয়া আখিজোড়া মেলে তাকিয়ে আছে ফারহানের দিকে। হাত বাড়িয়ে ধীর গতিতে ফারহানকে নিজের কাছে ডাকে। ফারহান দৌড়ে সুমাইয়ার কাছে গিয়ে,সুমাইয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। অতঃপর সুমাইয়ার সমস্ত মুখশ্রীতে ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে, খুশিতে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
‘ আমার প্রেয়সী তুমি অবশেষে আমার অপেক্ষার অসমাপ্তি করলে তবে? ‘
সুমাইয়া উত্তর দেয় না। আলতো করে ফারহানকে জড়িয়ে, নিরবে অশ্রু বিসর্জন দেয়।
______________
আজ চৌধুরী বাড়িতে লেগেছে বিয়ের ধুম। আজ অয়ন চৌধুরী এবং রিমির শুভ পরিনয়। সকাল থেকেই সকলে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিছুক্ষন এর মাঝেই রিমি এবং গাঁয়ে হুলুদের অনুষ্টান শুরু হবে।
রিমিকে হলুদ শাড়িতে এবং ফুলের গয়নায় সাজিয়ে রাখা হয়েছে। মুখে লজ্জার আভাস। অয়ন বার বার ফোন দিচ্ছে, রিমিকে একপলক দেখার জন্যে। রিমি লজ্জায় অয়নের ফোন ধরেনি। তাছাড়াও অয়নের বাকি কাজিনরাও নানাভাবে অয়নের পাগল করা ভালোবাসা নিয়ে রিমির সাথে হাসি ঠাট্টা করছে। শুধুমাত্র মেঘ ব্যতিত। মেঘের মুখে আজ অন্যান্য দিনের তুলনায় নেই কোন হাসি। কালকে থেকে কোনপ্রকার যোগাযোগ করতে পারছে না আমানের সাথে। আমান তার ফোন ধরছে না। ভিষন ভয় হচ্ছে মেঘের, আমান কি তাকে ভুল বুঝলো। রিমির ফোন হুট করে পুনরায় বেজে উঠলো। রিমি দেখতে পেলো অচেনা নাম্বার থেকে….
চলবে…কী?