তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব-৫০+৫১

0
892

#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ৫০ (Weeding special)
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
রিমি অচেনা নাম্বার থেকে ফোনটি রিসিভ করতে নিলেই, পিছন থেকে কেউ রিমিকে পাজকোলে তুলে নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। রিমি হতভম্ব হয়ে গেলেও, ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখতে পায় অয়নকে। রিমি তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে পিছনের দিকে দেখতে পায়, ইশা এবং মেঘসহ সব মেয়েরা বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। রিমি খানিক্টা অস্বস্হি নিয়ে অয়নকে বারবার খুচিয়ে যাচ্ছে তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্যে, কিন্তু অয়ন কি আদোও রিমির কথা শুনার মতো পাত্র? সে একটা আলাদা ভাব নিয়ে পিছনে না ঘুড়েই বললো,

‘ আমার বিয়ে করা বউ, দেখতে ইচ্ছে করছিলো, তাই নিয়ে যাচ্ছি। তোমাদের কারো সমস্যা? ‘

মেয়েগুলো দ্রুত মাথা নাড়ায়। ইশা মুচকি হাসি দেয়।
অয়ন রিমিকে চোখ মেরে কোলে করে বাইরের দিকে নিয়ে যায়। রিমি লজ্জায় মাথা নিচু করে অয়নের শার্ট খামচে ধরে আছে। লোকটা এতোটা অসভ্য কেন বুঝতে পারে না সে। অয়ন রিমিকে আলতো করে নিজের রুমে এনে বসিয়ে দেয়। অতঃপর গালে হাত দিয়ে তৃপ্তি নিয়ে নিজের হলুদ পরীকে দেখতে থাকে। হলুদ রঙের তাঁতের শাড়ি সঙ্গে ফুলের গয়নায় সজ্জিত রিমি। অয়ন রিমিকে নিজের সামনে বসিয়ে রাখে কিছুক্ষন। রিমি কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থেকে,অস্হির হয়ে প্রশ্ন করে,

‘ আর কতক্ষন বসে থাকবো ডক্টর এয়ারসি?
কিছুক্ষন পর তো অনুষ্টান শুরু হয়ে যাবে। ‘

রিমি কথাটি বলেই, উঠতে নিলে তাতে বাধ সাধে অয়ন। রিমির হাতজোড়া শক্ত করে আকড়ে ধরে, রিমিকে নিজের কোলে বসিয়ে, ফিসফিস সুরে বলে,

‘ আধা ঘন্টার আগে ছাড়ছি না। এইটাই তোমার শাস্তি বুঝলে আমার পরী? তুমি কী বুঝো না তোমাকে দেখার জন্যে আমার পরাণপাখিটা সারাক্ষন ছটফট করে, কিন্তু তুমি অবুঝের মতো আমার ডাকে সাড়া দিচ্ছিলে না, তাইতো তুলে নিয়ে আসলাম একেবারে। এখন যেতে দিচ্ছি না সহজে। ‘

কথাটি বলেই রিমির গালে আলতো করে চুমু দিলো অয়ন। অনুষ্টানের শুরুর কিছুক্ষন এর মাঝেই, রিমিকে এক বিরাট পালকির মাঝে প্রবেশ করানো হলো। সেই পালকি দিয়ে রিমি হলুদের অনুষ্টানে প্রবেশ করবে। চৌধুরীর বাড়ির এক অন্যরকম নিয়ম যাকে বলে। নিয়মঅনুসারে বিরাট উৎসবের মতো রিমিকে প্রবেশ করানো হয়। রিমিকে স্টেজে প্রবেশ করার সাথে সাথে রিমিকে অয়ন পুনরায় কোলে তুলে পাশে থাকা গোলাপ ফুলের পাপড়ির পুলের মাঝখানে থাকা দোলনায় বসিয়ে দেয়। অতঃপর নিজেও রিমির পাশে বসে পড়ে। অয়নের গাঁয়ে হলুদ পাঞ্জাবি তার সাথে হলুদ কোর্ট। অয়ন তাদের সামনে থাকা৷ ছোট্ট টেবিল থেকে হলুদ দিয়ে রিমির দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ রঙ্গে যেমন আমার আগে কেউ আমার রিমিপরীকে
রঙ্গিন করে দিতে পারেনি, তেমনি আজ আমার হলুদপরীকে সর্বপ্রথম হলুদ আমিই লাগিয়ে দিবো।’

অয়নের কথায় চারদিকে আরেকদফা হাসিহাসি শুরু হয়। রুজা চৌধুরী মুখ চেপে হেসে বলেন,

‘ বাহ বাহ কি ভালোবাসা বউয়ের প্রতি। ‘

অয়ন ও প্রতিউত্তরে হেসে হলুদের বাটি থেকে হলুদ নিয়ে রিমির গালে লাগিয়ে দেয়। রিমিও দুষ্টু হেসে হলুদের বাটি থেকে হলুদ নিয়ে, অয়নের পুরো মুখে হলুদ লাগিয়ে দেয়। অয়ন হতভম্ব হয়ে রিমির দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই, রিমি কাচুমাচু মুখ নিয়ে বসে থাকে। রিমিকে সম্পূর্ন অবাক করে দিয়ে অয়নও রিমির মুখশ্রী হলুদ দিয়ে পুরো মাখিয়ে দেয়। রিমি ঠোট উল্টে, ক্ষিপ্ত গলায় বলে,

‘ এইটা কি করলেন আপনি? ‘

অয়ন রিমির দিকে ঝুঁকে অধরের কোণে অসাধারণ হাসি ঝুলিয়ে বাঁকা হেসে বলে,

‘ ইটস কলড রিভেঞ্জ বেইবস। ‘

রিমিও প্রতিউত্তরে মুচকি হাসি হেসে ফেলে। অয়ন এবং রিমির হলুদ মাখা-মাখির মতো চমৎকার মুহুর্তকে ক্যামেরাবন্দী করে ফেললেন আশেপাশে থাকা সমস্ত ক্যামেরাম্যানগণ।

___________________

সুমাইয়াকে আপাতত কেবিনে ভর্তি রাখা হয়েছে। জ্ঞান ফিরে আসলেও, সুমাইয়া বর্তমানে বেশ দূর্বল।
দীর্ঘদিন পর কোমা থেকে ফিরে এসেছে সে। তাই ফারহান ও সুমাইয়াকে অতীত নিয়ে কোনপ্রকার প্রশ্ন করে না। কয়েকটা দিন যাক। সুমাইয়া কিছুটা সুস্হ হলেই সবকিছু জেনে নিবে সুমাইয়ার থেকে। ফারহান সুমাইয়াকে রিমি এবং অয়নের বিয়ের কথা জানিয়েছে এবং এইটাও জানিয়েছে রিমি একপ্রকার ভুল বুঝেই, প্রতিশোধ নিতে এসেছে, প্রতিউত্তরে সুমাইয়া উৎকন্ঠা হয়ে প্রশ্ন করে,

‘ এখন কেমন আছে আমার জান্নাত? কীভাবে করছে সংসার? সব ঠিক আছে তো? ‘

প্রতিউত্তরে ফারহান জানায়, ‘ আপাতত সবকিছুই ঠিক আছে। রিমি তো প্রতিদিনই তোমার খবর নেয় এবং অনেকবার তোমাকে দেখেও গিয়েছে,কিন্তু তোমার অপারেশন ব্যাপারটা এখনো বলেনি।
আসলে অয়ন এবং রিমির পুনরায় বিয়ে হচ্ছে তো। বিয়েটা মিটে গেলেই রিমিকে একদম তোমার সামনে এনে, চমকে দিবো। ‘

ফারহানের কথায় সুমাইয়া একপ্রকার চমকে গিয়ে, ফারহানের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলে,

‘ পুনরায় বিয়ে মানে? রিমি কি তবে বিয়েটা মেনে নিয়েছে? ‘

ফারহান মুচকি হেসে সুমাইয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে অত্যান্ত তৃপ্তির সাথে বলে,

‘ শুধু কি তাই? প্রতিশোধ নিতে এসে তোমার বোন তো আমার ভাইকে ভালোবেসে ফেলেছে,যাকে বলে মাত্রাধিক ভালোবাসা। ‘

সুমাইয়াও মুচকি হাসে প্রতিউত্তরে। যাক অবশেষে তার ছোট্ট বোনটারও সুখের সংসার হবে। সুমাইয়া মনে মনে দোয়া করে কোনপ্রকার ঝর যেন তার ছোট্ট বোনটার জীবনে হানা না দেয়। ফারহানের দরকারি কাজে ফোন আসে বিধায় ফারহান ফোনটা হাতে নিয়ে, সুমাইয়ার কপালে ভালেবাসার স্পর্শ দিয়ে, চলে যায় বাইরে। সুমাইয়াও হেলান দিয়ে শুয়ে পরে, তখনি হুট করে সমস্ত জায়গা অন্ধকারে আচ্চাদিত হয়ে পরে। অর্থাৎ লোডশেডিং হয়।

অপরদিকে সায়েদ সানার কেসটি নিয়ে বেশ ঘাটাঘাটি করছে, তার মনে হচ্ছে কোথাও, একটা ঘাপলা আছে। সে সানাকে অনেক্ষন জিজ্ঞাসাবাধ করেছে, কিন্তু প্রতিবারই তার একরোখা জবাব। সায়েদ পুনরায় সানাকে যে লকাবে রাখা হয়েছে, সেখানে যায়। কালকে সানাকে কোর্টে পেশ করা হবে। সানা উপরের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছিলো।

সায়েদ সানার কাছে গিয়ে কিছুটা শান্ত গলায় বললো,

‘ দেখুন মিস সানা, কালকে আপনাকে কোর্টে চালান করে হবে, তখন কিন্তু চাইলেও আপনি নিজেকে সেফ করতে পারবেন না। তাই বলছি দয়া করে সত্যিটা বলুন। ‘

সানা অত্যান্ত শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, নিচু গলায় বললো,

‘ আমি চাই আমার শাস্তি হোক। কেননা আমি শাস্তি পাইলে আমার ভালোবাসার মানুষটার যে বড্ড তৃপ্তি হবে। তার থেকে ভালোবাসা না পাই, তার থেকে পাওয়া শাস্তি তো আমি পেয়েছি। এইটাই আমার জীবনের স্বার্থকতা। ‘

সানার কথাটি গভীরভাবে দাগ কাটে সায়েদের মন বেশ গভীরভাবে দাগ কাটে। সানার নেত্রকোণে জমে থাকা জলটুকু স্পষ্ট বলে দিচ্ছে তা ভিতরে থাকা গভীর অভিমানে ভরা ক্ষতগুলো। সায়েদ কিছুক্ষন চুপ থেকে পরক্ষনে বলে,

‘ যে আপনার অভিমানের মূল্য দিতে পারে না, তার প্রতি মনের অন্তরালে অভিমান পুষে রাখা মানে, নিজের অনুভুতির অপমান করা। ‘

সায়েদের কথায় সানা নিষ্প্রান দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। সায়েদ বেড়িয়ে যায় । সানা ধপ করে নীচে বসে পরে। ভাবতে থাকে তার জীবনের গতি নিয়ে।

______________

রিমিকে ওহাইয়াট এবং গোল্ড মিশ্রিত ডায়মন্ড সেটের গয়নায় সাঁজানো হয়েছে। পড়নে লেহেংগা। লেহেংগাটা গোলাপি গাউনের।
নেট এর উপর পাথর এবং পুথির কারচুপির সম্পুর্ন কাজ। সবমিলিয়ে অন্যান্য লাগছে রিমিকে। নববধূ রিমিকে ধীরে ধীরে ইশা এবং মেঘ গাড়ির ভিতরে নিয়ে যায়। ইশা রিমিকে বার বার খুচিয়ে বলে যাচ্ছে,

‘ আজকে আমার বন্ধু নিশ্চিত হার্ট ফ্রেল করবে। কি বলো মেঘ? ‘
মেঘ শুধু হাসে। উত্তর দেয় না। তার মনে অন্য এক চিন্তা বিরাজমান। আমান তো আজকে চলে যাবে। তার সাথে শেষবারের মতোও দেখা হবে না মেঘের?

রিমিদের গাড়ি একটি বিরাট পার্টি সেন্টারের সামনে থামে। প্রথমে ইশা এবং মেঘ নেমে যায়। রিমি নেমে যাওয়ার পূর্বে সমস্ত প্রেস -মিডিয়া একপ্রকার ঝাপিয়ে পড়ে। গার্ডরা কোনরকম সামলায় শুধু। একটি ফুলের রাস্তা দিয়ে অয়ন ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে এগিয়ে আসে রিমির দিকে। রিমি এক মুহুর্তের জন্যে থমকে যায় তার ডক্টর এয়ারসিকে দেখে। বরের বেশে গোল্ডেন শেরওয়ানী পরে, তোলয়ার হাত নেমে যায় অয়ন গাড়ি থেকে। অতঃপর রিমির হাত ধরে গাড়িতে উঠিয়ে নেয়। চারদিকে আতশবাজি ফুটতে শুরু হয়ে যায়। আকাশে বড় বড় অক্ষরে লেখা উঠে,

‘ রিয়ন। ‘

অয়ন রিমিকে হাত ধরে বিয়ের আসরে বসিয়ে দেয়। অতঃপর নিজেও বসে পড়ে। দুজনের সামনে বিরাট এক পর্দা টানানো হয়। কাজি সাহেব প্রথমে অয়নকে বলে কবুল বলতে কিন্তু তখনি রুহানা চৌধুরী।

চলবে কী?

#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ৫১
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
কবুল বলার আগ মুহুর্তে বিয়ের আসরে অয়নকে বাঁধা দেয় রুহানা চৌধুরী। রুহানা চৌধুরীর বাঁধা পেয়ে থেমে যায় অয়ন। অবাক হয়ে রুহানা চৌধুরীর দিকে তাকাতেই, রুহানা চৌধুরী স্টেজের সামনে গিয়ে, সকলের উদ্দেশ্যে বলেন,
‘ আজ আমার সবথেকে প্রিয় নাতী অয়নের বিয়ে। তার জীবনের স্পেশাল একটা দিনে আমি চাই,তার বিয়েটাকে আরেটকু স্পেশাল করতে একটি বিশেষ সারপ্রাইজের মাধ্যমে। ‘
সারপ্রাইজের কথা শুনে রুজা চৌধুরী এবং
আশরাফ চৌধুরী তৎক্ষনাৎ একে-অপরের দিকে তাকায়। তারা বুঝতে পারছে না কি এমন সারপ্রাইজের কথা বলছেন রুহানা চৌধুরী। রুহানা চৌধুরী তার একজন সেক্রেটারিকে ডেকে পাঠান। রুহানা চৌধুরীর আদেশ পাওয়া মাত্র একজন সেক্রেটারি কিছু কাগজপত্র রুহানা চৌধুরীর হাতে এসে দিয়ে যায়। রুহানা চৌধুরী কাগজটা হাতে নিয়ে অয়নের হাতে তুলে দেন। চোখের ইশারায় ফাইলটা দেখতে বলেন। অয়ন ফাইলটা দেখে হতভম্ব হয়ে যায়। হতভম্ব হয়ে রুহানা চৌধুরীর দিকে তাকাতেই, রুহানা চৌধুরী মাইক হাতে নিয়ে অয়নের কাঁধে হাত রেখে বললেন,

‘ মিট আউয়ার নিউ সিউ অফ চৌধুরী ফ্যাশন, অয়ন রওযাক চৌধুরী। ‘

রুহানা চৌধুরীর মুখে থেকে নির্গত বানী বিস্ফোরনের মতো লাগে সমস্ত পরিবেশে। রুহানা চৌধুরীর কথায় সমস্ত প্রেস -মিডিয়া সমস্ত ক্যামেরা রুহানা এবং অয়নের সামনে তাঁক করে। রুজা চৌধুরী চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ে। আশরাফ চৌধুরীও হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন। তিনি বুঝতে পারছেন না তাকে না জানিয়ে, এতো বড় একটা সিধান্ত নিবেন রুহানা চৌধুরী। অয়ন তার হাতে থাকা ফাইলটাকে ফেলে দিয়ে, পিছন থেকে এসে রুহানা চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে,গম্ভীর সুরে বলে,

‘ তুমি জানো গ্রেন্ডমা। আমার এইসব বিসনেজে কখনোই কোন ইন্টেরেস্ট ছিলো না। আমি শুধুমাত্র তোমার কথায় কম্পানিতে যোগ দিয়েছিলাম, তাছাড়া আমি এইসব কম্পানির কোনপ্রকার দায়িত্ব নিতে পারবো না। ‘

অয়নের বারণে রুহানা চৌধুরী অয়নের হাত ধরে করুন চোখে বললেন,

‘ আমাকে মানা করো না অয়ন। এই কম্পানিটা আমার বড় কষ্টের। এই কম্পানির জন্যে অনেক সম্পর্ক আমি নষ্ট করে ফেলেছি। তুমিও আমার থেকে দূরে সরে গিয়েছিলে। আমি আর কাউকে হারাতে চাই না। তাই এই কম্পানির দায়িত্বভার তোমার কাঁধে অর্পিত করলাম, আমি জানি তুমি পারবে আমার বাচ্চা। ‘

অয়ন রুহানা চৌধুরীর কথার বিপক্ষে কিছু বলতে চাইছিলো কিন্তু রুহানা চৌধুরীর অসহায় মুখস্রীর দিকে তাকিয়ে থেমে গেলো। রুহানা চৌধুরী অয়নের হাত ধরে বিয়ের আসরে বসিয়ে দিলেন। রিমি পর্দার আড়াল থেকেই, চোখের ইশারায় বুঝিয়ে দিলো অয়ন যেন নিজের উপর ভরসা রাখে। রিমির ভরসা পেয়ে অয়নও ভরসা পায়। কাজি সাহেব রিমিকে কবুল বলতে বলে। রিমি কিছুক্ষন স্হীর হয়ে বসে থেকে, নিজের ফোনের স্ক্রিনে থাকা অয়নের হাসজ্জ্বল মুখস্রীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে কবুল বলে ফেলে। অয়নের পর্দার আড়ালে থেকেই রিমির মুচকি হাসি দেখে, তৃপ্তির হাসি দেয়। কাজি সাহেব অয়নকে কবুল বলতে বলে, অয়নও ফটফট করে কবুল বলে ফেলে। দ্বিতীয়বারের মতো বিয়ের মতো পবিত্র বন্ধনে আজীবনের মতো আবদ্ধ হয়ে পড়ে রিমি এবং অয়ন। অয়নের কবুল বলার কিছুক্ষন এর মাঝেই, আকাশে বড় বড় আতশ বাজি ফুটতে শুরু করে। ফানুশে রঙ্গিন হয়ে উঠে আকাশে। ফানুশে প্রতিটি জায়গায় বড় বড় লেখা, ‘ রিয়ন। ‘

আমানের চৌধুরীর বাড়ির সেন্টারের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো। এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলো আমান। আকাশে থাকা ফানুশ দেখে গাড়ি থামাতে বলে। ফানুশের দিকে একপলক তাকিয়ে, নেত্রকোণে জমে থাকা জলটুকু মুছে বিড়বিড় করে আওড়াতে থাকে,

‘ ভালো থেকে রিমিপাখি। খুব সুখে থেকো। জীবনের এক বড় আক্ষেপের জায়গা হয়ে আজীবন তুমি আমার মনের গহীনে থেকে যাবে। ভালোবাসি। ‘

আমান এক মুহুর্ত ও অপেক্ষা করলো না। ড্রাইভারকে বললো গাড়ি চালাতে। ড্রাইভার গাড়ি চালানো শুরু করলো। মেঘ কোন একটা কাজে সবেমাত্র বের হচ্ছিলো, আমানের গাড়ি দেখে সে দ্রুত তার নিজের গাড়িতে উঠে যায়। ড্রাইভারকে বলে আমানের পিছনে পিছনে যেতে। সে জানে আমান আজকে চলে যাবে। চলে যাওয়ার আগে কিছু কথা যে আমানকে বলতেই হবে তাকে।

_________________

অপরদিকে, ফারহান চলে যাওয়ার পর পরেই সুমাইয়ার কেবিনে লোড শেডিং হয়ে যায়। সুমাইয়া কিছু বুঝার পূর্বেই কেউ পিছন থেকে সুমাইয়ার মুখ চেপে ধরে, একপ্রকার বাইরের দিকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যেতে থাকে। সমস্ত হসপিটালে লোডশেডিং হওয়ায় ফারহান ভ্রু কুচকায়। হুট করে কি এমন হলো হসপিটালে? ফারহানের ভাবনার মাঝেই, সঙ্গে সঙ্গে বিদুৎ চলে আসে। ফারহান ভাবতে পারছে না, হসপিটালে হলো কি। একজন নার্সের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে, তিনি জানান,

‘ হুট করে কি হলো আমরা নিজেও বুঝলাম না। ‘

নার্সের কথায় কোনপ্রকার পতিক্রিয়া না করে, ফারহান সুমাইয়ার কেবিনের সামনে যায়। সুমাইয়ার কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে স্তব্ধ হয়ে যায়। চারপাশে জিনিসপত্র ছড়ানো। সুমাইয়া নেই। ফারহান কিছু একটা ভেবে দৌড়ে বাইরে এসে, হাক ছেড়ে সুমাইয়াকে ডাকতে থাকে। ফারহানের চিৎকারে নার্স-ডক্টর সকলে উপস্হিত হয়। ডক্টর প্রশ্ন করেন,

‘ কোন সমস্যা মিঃ ফারহান চৌধুর? ‘

ডক্টরের প্রশ্নে উত্তর দেয় না ফারহান। ধপ করে মাটিতে বসে পড়ে। মস্তিষ্ক শূন্য লাগছে তার। সে ইতিমধ্যে বুঝতে পেরেছে তার সুমাইয়াকে কেউ অপহরণ করেছে।

______________________

অয়ন ও রিমির বিয়ের শেষ পর্যায়ে, অয়ন সমস্ত পর্দাকে হাতের ইশারায় উঠাতে বলে। পর্দা উঠে যায়।
পর্দার আড়াল থেকে নিজের সদ্য বিবাহিত লাল টুকটুকে বউকে দেখতে পায় অয়ন। বিয়ের সাঁজে স্টেজে লজ্জারাঙ্গা মুখস্রীতে বসে আছে রিমি। অয়ন এগিয়ে গিয়ে, হুট করে সকলের সামনে রিমিকে কোলে তুলে নেয়। রিমিও কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে, অয়নের গলা জড়িয়ে ধরে। রিমিকে কোলে তুলে স্টেজ থেকে নামতে নামতে গাইতে থাকে,

Sun meri shehzadi

Main hoon tera shehzada
Bahon mein leke tujhe
Main karta hoon waada

Sun meri shehzadi
Main hoon tera shehzada
Bahon mein leke tujhe
Main karta hoon waada

Aay-ye jane tamanha meri
Mein khake kasam teri
Karta hoon ikraar

গানটি গাইতে গাইতে রিমির ললাটে চুমু খায় অয়ন। রিমিও মুচকি হেসে অয়নের বুকে মাথা ঠেকায়। ফুলে সজ্জিত হয়ে উঠে তাদের পথ। সমস্ত আলো এসে ঘিড়ে ধরে তাকে। অয়ন রিমির কানে ফিসফিস করে ধীর কন্ঠে বলে,

‘ গোলাপ যেমন সুন্দর, তেমন গোলাপ ফুলের মাঝে হাজারো কাটা থাকবে, কিন্তু সেই একটি কাটাও তোমাকে স্পর্শ করতে দিবো না। তোমার ডক্টর এয়ারসি প্রমিজ আজকের বিশেষ দিনে। ‘

রিমিও অয়নের বুকে মাথা রেখে নিচু সুরে বললো,

‘ আমিও প্রতিজ্ঞা করছি, আমার জীবনের রাস্তায় যতই কাটা থাকুক না কেন, আজীবন আপনার হাত শক্ত করে ধরে, সেই পথ অতিক্রম করবো। ‘

______________________

ফুলসজ্জিত বাসরঘরে বসে আছে রিমি। অয়নের বউয়ের মর্যাদা পেয়ে সে অয়নের ঘরে রয়েছে। হ্যা এমন একটি দিন রিমির জীবনে আরো একবার এসেছিলো, কিন্তু সেদিন রিমি মন থেকে বিয়েটা মানেনি, কিন্তু আজ ভালোবেসে সে তার ডক্টর এয়ারসিকে বিয়ে করেছে। রিমি অনেক্ষন যাবত অপেক্ষা করছে, কিন্তু এখনো অয়নের আসছে না। খানিক্টা অভিমানে রিমি গাল ফুলিয়ে বসে থাকে।
হুট করে একটা চিরকুট জানালা দিয়ে কেউ ছুড়ে ফেলে। রিমি পিছনে ঘুড়ে তাকিয়ে দেখে, ইটের সাথে একটি ছোট্ট চিরকুট পায়। রিমি চিরকুট টা হাতে নিৈ দেখে, অয়নের হাতের লেখা। রিমি মুচকি হাসে। দ্রুত তার বিছানার পাশে দেখতে পায় কালো একটি তাতের শাড়ি। রিমি হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।

পুলের চারিপাশে অজস্র ক্যান্ডেল লাইট দিয়ে পরিবেশ টা মুখরিত হয়ে রয়েছে। রিমি বাগানের শেষ অংশে চলে আসে। সেখানে বিশাল অংশ জুড়ে একটি পুল রয়েছে। রিমি কালো শাড়িটি পড়ে, সামনের দিকে এগিয়ে যায়। পিছন থেকে কেউ ফিসফিস করে সুধায়,

‘ ইউ লুক সো মাচ চার্মিন। মাই লেডি। ‘

রিমি পিছনে না ঘুড়েও দিব্যি বুঝতে পারে, পিছনে অয়ন দাঁড়িয়ে। অয়নের ঘন ঘন নিঃশ্বাস রিমির পিঠে উপচে পড়ছে। রিমির পিঠে চুল ছুইছুই করছে। অয়ন রিমির চুলগুলো সরিয়ে, নিজের থুত্নি রিমির কাধে রেখে, দুষ্টু হেসে বলে,

‘ আজ আমার ভালোবাসায় পরিপূর্ন করে তুলবো আমাদের সম্পর্ক,কিন্তু আমার অফুরন্ত ভালোবাসায় কিন্তু বিষাক্তের ছোঁয়া রয়েছে। সহ্য করতে পারবে তো রিমিপরী? ‘

রিমি পিছনে না ঘুড়েই, তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে উত্তর দেয়,

‘ আপনার প্রতি আমার ভালোবাসা এতোটাই তীব্র যে, আপনার বিষাক্ত ভালোবাসার বিষ আমি সাধরে গ্রহণ করবো। ‘

অয়ন রিমিকে তৎক্ষনাৎ রিমিকে কোলে নিয়ে, পাশে থাকা ছোট্ট রুমে নিয়ে যায়। অতঃপর রিমিকে সজ্জিত বিছানায় শুয়িয়ে দেয়। রিমির হাত আলতো করে চেপে ধরে, ললাটে ভালোবাসার স্পর্শ একেঁ দেয়। সময়ের সাথে সাথে নিঃশ্বাস ঘন হতে থাকে।পূর্নতার রেশ অবশেষে ঘিড়ে ধরলো রিমি এবং অয়নকে। তাদের মিষ্টি পূর্নতায় স্বয়ং চাঁদ মুখ লুকিয়ে ফেললো, কিন্তু হঠাৎ রাতে….

চলবে কী?