#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ৫২
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
রাতের শেষ প্রায়। রিমি আধো আধো চোখ খুলে অয়নকে নিজের পাশে দেখতে না পেয়ে তৎক্ষনাৎ উঠে পড়ে।সঙ্গে সঙ্গে কারো ভয়ংকর গর্জনে কেঁপে উঠে তার সর্বোঙ্গ। রিমি শাড়িটা ভালো করে শরীরে জড়িয়ে নেয়। অতঃপর শব্দের উৎস খুঁজতে ঘর থেকে বাইরে চলে যায়। বাইরে বেড়িয়ে সে স্তব্ধ প্রায়। অয়ন বন্ধুক তাঁক করে অনাবরত গুলি ছুড়ি যাচ্ছে যেখানে পারছে সেখানেই গুলি করছে। দেহরক্ষীগণ
নিজেদের বাঁচানোর প্রয়াসে যে যেমন পারছে ছুটে যাচ্ছে। অয়ন নিজের মাথা চেপে,ভয়ংকর ভাবে গর্জে উঠে বলে,
‘ আজ সবাইকে শেষ করে দিবো আমি। সবাইকে মেরে ফেলবো। আমি কিচ্ছু জানতে চাই যেখান থেকে পারিস আমার মেডিসিন নিয়ে আয়। নাহলে আমি সবাইকে মেরে পুঁতে দিবো। ‘
অয়নের হঠাৎ অদ্ভুদ আচরণে রিমি হতভম্ব হয়ে য়ায়। ইতিমধ্যে অনেক দেহরক্ষীদের গুলি করে দিয়েছে অয়ন। রাগে তার শরীর থরথর করে কাঁপছে। অয়ন তার হাতে থাকা বন্দুকের ট্রিগার পুনরায় চেপে ধরতেই, অয়নের বন্দুকের সামনে রিমি চলে আসে। অয়ন রক্তচক্ষু দিয়ে, রিমির দিকে তাকাতেই, রিমি ছলছলে দৃষ্টিতে অয়নের গালে হাত রেখে বলে,
‘ কি করছেন ডক্টর এয়ারসি? এইভাবে সবাইকে আহত করছেন কেন? কি হলো হঠাৎ আপনার? ‘
অয়ন রিমির হাত তৎক্ষনাৎ ছাড়িয়ে নেয়। রিমির বাহু চেপে ধরে, বজ্র কন্ঠে আদেশ করে,
‘ আমার সামনে এসো না রিমিপরী। জাস্ট গো ফর্ম এওয়ে। জাস্ট গো। নাহলে আমি কিন্তু তোমার ক্ষতি করে দিবো।’
রিমি এমন ভয়ংকর পরিস্হিতির মাঝে এক চিলতি হাসি দিয়ে বলে,
‘ আপনার ভালোবাসা ভয়ংকর কিন্তু তা কখনো আমাকে আঘাত করবে না। আমার বিশ্বাস আছে আমাদের ভালোবাসার উপর। ‘
অয়ন বন্দুক টা ফেলে দিয়ে, মাটিতে বসে পড়ে। অতঃপর মাথা চেপে ধরে। রিমি বুঝতে পারছে কোন এক কারণে অয়নের মাথায় কোন একটা ব্যাথা হচ্ছে। যা সহ্য করতে পারছে না অয়ন। অয়ন আর্তনাদের সুরে মাথা চেপে বলে,
‘ আহ আমি পারছি না রিমিপরী। প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছে।
আমার সহ্য করতে পারছি না। আমার মেডিসিন টা এখুনি লাগবে। ‘
অয়নের ব্যাথাতুর আর্তনাদে কেঁপে উঠে রিমির বুকটা। রিমির কাছে আজ অয়নকে পুরোপুরি অচেনা মনে হচ্ছে। তার ডক্টর এয়ারসি তো সামান্য আঘাতে আর্তনাদ করার মানুষ নয়, তার মানে অয়নের মাথায় মাত্রাধিক ব্যাথা হচ্ছে। রিমিও অয়নের কাছে গিয়ে বসে, অয়নের হাত ধরে অস্হির হয়ে বলে,
‘ আপনার কি খুব কষ্ট হচ্ছে ডক্টর এয়ারসি? আমাকে বলুন? কিসের মেডিসিনের কথা বলছেন আপনি? ‘
অয়ন উত্তর দেয় না। ব্যাথাতুর নয়নে রিমির হাতখানা শক্ত করে, ঢলে পড়ে রিমির কোলে। অয়নের অবস্হা দেখে রিমি মুখ চেপে কেঁদে দেয়। অয়নের নেত্রকোণা আবেশে বুজে ফেলে। রিমি অয়নের হাত ধরে পার্লস চেক করে, ধীর গতিতে চলছে। রিমির ভয় মস্তিষ্ক দ্বিগুনভাবে নাড়া দেয়। আতন্কে ললাটে জমে থাকে ঘাম। রিমি কাঁদতে কাঁদতে গার্ডদের এবং ড্রাইভারদের ডাকতে থাকে এবং তাদের আদেশ করে দ্রুত গাড়ি বের করতে। এখন রিমিকে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। তার স্বামীকে বাঁচাতে হবে। দেহরক্ষী কয়েকজন অয়নকে ধরে গাড়িতে শুয়িয়ে দেয়। রিমিও দ্রুত গাড়িতে উঠে পড়ে। কিছু গার্ডদের যাওয়ার সময় বলে যায়, আহতদের দ্রুত হসপিটালে ভর্তি করানোর জন্যে।
রিমিদের গাড়ি চৌধুরী বাড়ির গেট থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই, আড়াল থেকে একজন বিশাল দেহীর লম্বাটে শ্যাম বর্ন গড়নের যুবক বেড়িয়ে আসে। মুখে তার কুটিল হাসি। লোকটাকে বেড়িয়ে আসতে দেখে, কিছু সার্ভেন্ট তার কাছে যায়। একজন মাথা নিচু করে বলে,
‘ ইশান স্যার আপনার কথামতো, অয়ন স্যারের সমস্ত ওষুধ আমরা ফেলে দিয়েছি। ‘
ইশান হাত ভাজ করে পুনরায় হেসে বিড়বিড় করে বলে,
‘ গুড গুড, ভেইরি গুড। ‘
ইশান তাদের বলে দ্রুত সরে যেতে। তারাও চলে যায়।
‘ ইউর গেম ইজ ওভার নাও মিঃ অয়ন চৌধুরী। ‘
কথাটি বলে ইশান পকেট থেকে সিগারেট বের করে ঠোটে চেপে ধরে। আখিজোড়ায় তার উপচে পড়ছে প্রখোর প্রতিশোধের নেশা। যা শুধুমাত্র অয়নকে ঘিড়ে। বিষাক্ত এক অতীতে অয়নের জন্যে সে এই চৌধুরী বাড়ির মেঝ ছেলে অর্থাৎ রুজা চৌধুরী এবং আশরাফ চৌধুরীর বড় ছেলে হওয়া সত্ত্বেও সর্বদা অবহেলিত হয়েছে। ত্যাজ্য হয়েছে একপ্রকার। আমেরিকায় তাকে পরিবারের থেকে দূরে আলাদা থাকতে হয়েছে। সবকিছুর প্রতিশোধ নিবে ইশান। সেদিন অয়নের সবথেকে বড় দূর্বলতা রিমিকে মারতে চেয়েছিলো ইশান, কিন্তু রিমি হঠাৎ সেদিন জেগে যাওয়ায় ইশান তার উদ্দেশ্যে বিফল হয়ে যায়। ইশান দ্রুত স্হান ত্যাগ করে।
________________
ফারহানের মাথা কাজ করছে না, কে তার সুমাইয়াকে অপহরণ করলো। সানা তো থানায় তবে কে করলো? অন্য কেউ? কিন্ত কে তারা? যারা সুমাইয়াকে মারতে চেয়েছিলো? ফারহান আর কিচ্ছু ভাবতে পারছে না। হুট করে তার ফোন থেকে অজানা নাম্বার থেকে মেসেজ আসে। সেখানে লেখা,
‘ সুমাইয়ার সন্ধান চৌধুরী বাড়িতে পাবে, ঠিক রাত ১০টায়। চিন্তা করো না। সুমাইয়া ঠিক আছে।’
ফারহান মেসেজ টা পড়ে কিছুক্ষন স্তব্ধ থাকে। মুখে তার অজানা চিন্তা খুড়ে খাচ্ছে। কে হঠাৎ তাকে এমন বার্তা পাঠালো?
___________
আমানের গাড়ি এয়ারপোর্টে এসে পোঁছে যায়। এখন প্রায় রাত সারে ২টা বাজে। ৩টার দিকে আমানের ফ্লাইট। মেঘের গাড়িও আমানের গাড়ির পিছনে থেমে যায়। মেঘ তড়িৎ গতিতে নেমে যায়। আমান লাগেজ হাতে চেক পোস্টের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। মেঘও দ্রুত দৌড়ে এয়ারপোর্টের সামনে যেতে থাকে, আমান যদি চেক পোস্ট পেরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে, তবে মেঘ চাইলেও তার কথাগুলো আমানকে বলতে পারবে। আমানের জিনিসপত্র চেক করা শেষে, এয়ারপোর্টের লোকটি বলে আমানকে ভিতরে প্রবেশ করার জন্যে। আমানকে ভিতরে যেতে দেখে, মেঘ আগের থেকেও দ্বিগুন বেগে দৌড়ায়, কিন্তু দৌড়াতে গিয়ে কিছু একটার সাথে পা লেগে সে পড়ে যায়। ব্যাথাকে পরোয়া না করে, পুনরায় মেঘ উঠে দাঁড়ায়।
পা খুড়িয়ে খুড়িয়েই, জোড় গলায় হাক ছেড়ে ডাকলো,
‘ মিঃ আমান শিকদার একটু দাঁড়ান, কিছু বলতে চাই আপনাকে। ‘
আমান প্রায় ভিতরে প্রবেশ করেই ফেলেছিলো, কিন্তু মেঘের আওয়াজ পেয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখে মেঘ দাঁড়িয়ে আছে। বিয়ের সাজসোজ্জা এখনো তার গাঁয়ে। মেঘকে দেখে ভিতর থেকে বাহিরে চলে আসে আমান। মেঘের কাছে দ্রুত গিয়ে, মেঘের দিকে তাকিয়ে অবাকের সুরে বলে,
‘ তুমি এখানে? কি করে এলে? কেন এসেছো তুমি?’
মেঘ আমানের প্রশ্নের বিপরীতে সামান্য হেসে, উত্তর দেয়,
‘ এতো প্রশ্ন একসাথে করলে, কোনটার উত্তর দিবো বলুন? ‘
আমান চুপ হয়ে যায়। মেঘও চুপ থাকে। অনেক্ষন যাবত তাদের মাঝে পিনপিন নিরবতা চলে। নিরবতা ভেঙ্গে সর্বপ্রথম মেঘ আমানকে প্রশ্ন করে,
‘ আমাকে এইভাবে অবহেলা করছেন কেন? আপনার অবহেলা আমাকে অন্তরটাকে প্রতিনিয়ত পীড়িত করে তুলে। ‘
আমান মেঘের প্রশ্নের বিপরীতে কঠোর গলায় উত্তর দেয়,
‘ মেঘ তুমি এখনো অনেক ছোট। আমি জানি এইসব কিছুই তোমার আবেগ। আবেগকে প্রশয় দেওয়ার কোন মানেই হয় না। তুমি এখন ফিরে যাও। ‘
আমান কথাটি বলে পিছনে ঘুড়তে নিলে, মেঘ আমানের হাত শক্ত করে ধরে, কাঁদতে কাঁদতে বলে,
‘ আমার নেত্রপল্লবের অশ্রু দেখতে পারছেন আমান? সব অস্রু তো আপনাকেই ঘিড়ে। আমার ভালোবাসা কোন আবেগ নয়, আমার ভালোবাসা সুপ্ত অনুভুতির ন্যায় শুদ্ধ। এখন তা না বুঝলেও একদিন আপনি ঠিক অনুভব করবেন। ‘
আমান মেঘের হাত ছাড়িয়ে দ্রুত পায়ে ভেতরের দিকে হাটতে থাকে, তখনি তার কানে আসে মেঘের আরেকটি কথা,
‘ আমাকে ফেলে চলে যাচ্ছেন তো? একটা কথা মনে রাখবেন আমান শিকদার। যেদিন আমার ভালোবাসা গভীরভাবে উপলব্ধি করবেন,সেদিন আপনি ফিরে আসতে বাধ্য। আমি আপনাকে ভালোবাসা, খুব ভালোবাসি। ‘
আমান একপলক মেঘের দিকে তাকিয়ে ভিতরে চলে যায়। মেঘ তার নেত্রকোনে জমে থাকা অস্রু মুছে ফেলে। বিড়বিড় করে আওড়াতে থাকে,
‘ অপেক্ষা করবো জীবনের শেষ প্রহর অব্দি। আমি জানি আপনি ফিরে আসবেন একদিন। ‘
___________________
রিমি অয়নকে অয়নের হসপিটালেই দ্রুত নিয়ে এসেছেন। এখানে কিছু অভিজ্ঞ ডক্টররা অয়নের চেকাপ করছে। রিমি বাইরে পাইচারি করছে। নানা খারাপ চিন্তা তাকে খুড়ে খাচ্ছে। রিমির ভাবনার মাঝেই, একজন ডক্টর বেড়িয়ে বলেন,
‘ আমরা ডক্টর এয়ারসির কিছু টেস্ট করিয়েছি। রিপোর্ট আসলেই, সব বলতে পারবো। ‘
ডক্টরের কথার মাঝে, অয়ন পুনরায়…….
চলবে কী?
#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ৫৩
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ডক্টরের কথার মাঝেই, অয়নের চিৎকার শুনতে পায় বাহির থেকে রিমি। রিমি দ্রুত ভিতরের কেবিনে চলে যায়, সেখানে গিয়ে দেখতে পায় অয়ন মাথায় হাত দিয়ে সমস্ত জিনিসপত্র ফেলে দিচ্ছে। নার্সরা চাইলেও সামলাতে পারছে না। অয়ন রাগে চিৎকার করে বলে যাচ্ছে,
‘ আমার মেডিসিন টা এখুনি নিয়ে আসা হোক। নাহলে আমি সব কিছু শেষ করে দিবো। ‘
রিমির নেত্রকোণ বেয়ে টুপটুপ করে জল বেয়ে পড়ছে। গলা ভারি হয়ে আসছে। চোখের সামনে নিজের ভালোবাসার মানুষটার আর্তনাদ, অসহায়ত্ব রিমিকে পুড়াচ্ছে, ব্যাথিত করে তুলছে। অয়ন মাথার ব্যাথা নিয়েই, রিমির দিকে এগিয়ে যায়। হাতের ইশারায় নার্সদের বেড়িয়ে যেতে বলে। নার্সরাও বেড়িয়ে যায়। অয়ন রিমির থুত্নি উচু করে, রিমির আখিজোড়ায় চুমু খায়। রিমি আবেশে নেত্রপল্লবে বন্ধ করে নেয়। অয়ন রিমির ললাটে নিজের কপাল ঠেকিয়ে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
‘ কাঁদলে তোমাকে মায়াবতী লাগে রিমিপরী। আরো কিছুক্ষন কাঁদো। আমি প্রানভরে চেয়ে থাকি। তোমার নেত্রপল্লবের অশ্রুও যে আমাকে সুখ দেয়, যখন সেই অশ্রুতে আমি নিজের প্রতি ভালোবাসা দেখতে পাই। ‘
অয়নের কথাতে অবাক না হয়ে পারলো না রিমি। লোকটা সত্যিই পাগল, নাহলে এতোটা যন্ত্রণার মাঝেও এমন কথা বলতে পারে? রিমির ভাবনার মাঝেই পুনরায় ব্যাথায় কাতরে উঠে অয়ন। মাথা চেপে দেয়ালে অনাবরত ঘুষি দিতে দিতে বলে,
‘ আমি সত্যি পারছি না পরী। আমার মেডিসিন টা যেখান থেকে পারো, এনে দাও। ‘
রিমি অয়নের কাছে গিয়ে, অস্হির হয়ে চিন্তিত গলায় প্রশ্ন করে,
‘ আপনি কি সেই ওষুধের কথা বলছেন ডক্টর এয়ারসি? যে ওষুধ আপনি প্রায় খেতেন। কিসের ওষুধ ছিলো সেইটা? আমাকে বলুন। ‘
অয়নের মুখে অন্ধকার এসে হানা দেয়। চুপসে যায় মুখখানা। রিমির অয়নের মুখের হঠাৎ পরিবর্তন দেখে সন্দেহ খানিক্টা বেড়ে যায়। তার মানে অয়ন তার থেকে কোন ভয়ংকর সত্য লুকাচ্ছে। অয়ন বিছানায় মাথা চেপে বসে থাকে। রিমির প্রশ্নের উত্তর
দেয় না। এড়িয়ে যায় একপ্রকার। রিমি অয়নকে প্রশ্ন করতে নিলে, পিছন থেকে বয়স্ক ডাক্তার বলেন,
‘ মিসেস চৌধুরী, আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো। আমার কেবিনে আসুন। ‘
রিমি একপলক অয়নের দিকে তাকিয়ে, ডক্টরের সাথে চলে যায়। রিমি বেড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই, অয়ন তার পাশে থাকা ব্লেজার টা হাতে নিয়ে, একপ্রকার পাগলের ন্যায় ছুটে কেবিন থেকে বেড়িয়ে যায়। নার্সরাও চাইলেও আটকাতে পারে না অয়নকে। রিমি ডক্টরের কেবিনের গিয়ে বসে পড়ে। ডক্টরও নিজের চেয়ার টেনে বসে পড়ে। অতঃপর গলা খাকারি দিয়ে বলতে থাকেন,
‘ আমি বুঝতে পারছি না ডক্টর এয়ারসি এতো বড় একজন হার্ট সার্জন হয়ে, এতো বড় ভুল করলো কি করে? ‘
ডক্টরের কথায় ভ্রু কুচকে তাকায় রিমি। ভুল বলতে কি বুঝাচ্ছেন ডক্টর? রিমি ডক্টরের দিকে অস্হির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, প্রশ্ন করলো,
‘ আপনি কি বলতে চাইছেন ডক্টর? আমাকে পরিষ্কার করে বলুন। ‘
ডক্টর কিছুক্ষন চুপ থেকে চশমা টা খুলে, হতাশার সুরে বললেন,
‘ অত্যান্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে ডক্টর এয়ারসি ড্রাগ এডিক্টেড। ‘
ডক্টরের কথাটি বিষ্ফোরণের মতো রিমির কানে গিয়ে লাগলো। থরথর করে কাঁপতে লাগলো শরীর। ললাটে বিন্দু বিন্দু ঘামে পরিপূর্ন হয়ে গেলো। শরীরটা যেন নিজের গতিবেগ হারিয়ে ফেলছে সময়ের সাথে সাথে। রিমিকে নিরব থাকতে দেখে, ডক্টর পুনরায় বললেন,
‘ আমি বুঝতে পারছি আপনার মনের অবস্হা মিসেস চৌধুরী কিন্তু তিক্ত হলেও সত্যি যে ডক্টর এয়ারসি মাদকাসক্ত। শুধু আজ থেকে নয় দীর্ঘ ১৪বছর ধরে উনার শরীরে ড্রাগস কোনভাবে প্রবেশ করছে। যার ফলে অয়ন চৌধুরী ধীরে ধীরে মানুষিক রুগীতে পরিনত হচ্ছেন। ‘
রিমি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। তার মানে অয়ন যে ওষুধ টা সেবন করে তা একপ্রকার ড্রাগস। যার জন্যে অয়ন অস্বাভাবিক। কিন্তু অয়ন কি ইচ্ছে করে এতোবছর ধরে ড্রাগস নিচ্ছে, নাকি এর পিছনে অন্য কারো হাত রয়েছে। রিমি আর কিছু ভাবতে পারছে না। নিজের স্বামীর এতো বড় একটা সত্যি জানার পর, নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না সে। অসহায় লাগছে তার। রিমির ভাবনার মাঝেই,
রিমির ভাবনার মাঝেই নার্সগুলো হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে। অতঃপর হাপাতে হাপাতে রিমিকে জানায়, অয়ন কীভাবে উত্তেজিত হয়ে হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে গিয়েছে। ডক্টর টেবিলে হাত বারি দিয়ে চিৎকার করে বলে,
” উনি চলে গেলো আর তোমরা যেতে দিলে? ডক্টর এয়ারসি এখন নিজের মধ্যে নেই। ড্রাগ এডেক্টেড একজন লোক যতক্ষন না ড্রাগ নিতে পারছে, সে তত ভয়ংকর এবং হিংস্র হয়ে উঠে। ‘
সবকিছু শুনে রিমির মাথায় যেন বাজ পড়ে। সে বুঝতে পারছে অয়নের বড় কোন বিপদ হতে চলেছে। সেই বিপদ থেকে অয়নকে যে করেই হোক বাঁচাতে হবে। রিমি হন্তদন্ত হয়ে বেড়িয়ে যায় দ্রুত হসপিটাল থেকে। অপরদিকে অয়ন লাগামহীন ভাবে গাড়ি চালাচ্ছে। সামনে কোন কিচ্ছু দেখতে পারছে না সে। তাকে যে করেই হোক চৌধুরী বাড়িতে পৌঁছাতে হবে।
অন্ধকার একটি ঘরের মাঝে পড়ে আছে সুমাইয়া। হাত-পা মুখ তার বাঁধা। মুখে রয়েছে টেপ। সে বার বার চাইছে কাউকে সাহায্যের জন্যে ডাকতে কিন্তু সে ব্যার্থ। সুমাইয়া জানে এই কাজটি কার। সে সুমাইয়াকে মেরে ফেলার জন্যে সুমাইয়াকে
অপহরণ করে নিয়ে এসেছে।
সানাকে জেল থেকে কয়েকজন মহিলা কন্সটেবল বের করে নিয়ে আসে। তারা সানাকে সায়েদের কেবিনে বসিয়ে দিয়ে চলে যায়। সানা বুঝতে পারছে না হঠাৎ তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসার মানে কি? কি কারণে সায়েদ তাকে ডেকেছে? সায়েদ প্রবেশ করে সানাকে নিজের কক্ষে দেখে আলতো হাসে। টেবিলে থাকা পিস্তলখানা হাতে নিয়ে সানার দিকে আলতো হেসে বলে,
‘ মিস সানা আপনি আমার কেবিনে কিছুক্ষনের জন্যে বসুন। আর কিছুক্ষন, তারপর আপনার মুক্তি। ‘
সায়েদের কথায় ভ্রু কুচকে তাকায় সানা। সে বুঝতে পারছে না সায়েদের কথা।
সায়েদ সানার দিকে ঝুঁকে, তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে, ভরসার সহিত বলে,
‘ সানা ম্যাম, এই সায়েদ কখনো নির্দোশ কাউকে বিনা অপরাধে শাস্তি পেতে দেয় না। আমি যখন আপনাকে কথা দিয়েছি, মুক্ত করবো, তার মানে করবোই। জেলে নয়, পাখির ন্যায় মুক্ত আকাশে আপনি উড়বেন। আপনার একজন শুভাকাঙ্ক্ষীর ওয়াদা রইলো। ‘
‘ কেন করছেন আমার জন্যে এতোকিছু? ‘
সানার প্রশ্নে পুনরায় সায়েদ হাসে। যাকে বলে খিলখিলে হাসি। সানা তব্দা খেয়ে যায়। সে হাসির মতো আদোও কিছু বলেছে কি? সায়েদ সানার কানে কানে বলে,
‘ অদ্ভদ এক মায়ার টানে। যে মায়া প্রতিনিয়ত আমাকে আপনার দিকে আর্কষিত করে। আপনি আমার এক অদ্ভুদ মায়া। ‘
সায়েদ কথাটি বলেই বেড়িয়ে গেলো। সানা চেয়ারে বসে রইলো। সায়েদের কথা কিছুই বুঝতে পারছে না সে। লোকটা চাইছে কি?
_______________
সুমাইয়ার ভাবনার মাঝেই, অন্ধকারের মাঝে কেউ এসে সুমাইয়ার হাত পায়ের বাঁধন খুলে দেয়। অতঃপর ধীর গলায় বলে,
‘ একদম চিৎকার করবেন না ম্যাম। আমার সাথে আসুন। আপনাকে চৌধুরী বাড়িতে নিয়ে যাবো।’
‘ কিন্তু কে আপনি? কেন এসেছেন? ‘
সুমাইয়ার প্রশ্নে অগান্গক ব্যক্তিটি অনুরোধের সুরে বলে,
‘ কোন প্রশ্ন করবেন না ম্যাম। আমাদের যে করেই হোক। এখন বের হতে হবে। ‘
সুমাইয়া কথা বাড়ায় না। লোকটার কথামতো পিছন দিয়ে কোনরকম বেড়িয়ে যায়।
________________( লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
ফারহান মেসেজে অনুযায়ী চৌধুরী বাড়িতে চলে আসে। রুজা এবং আশরাফ ফারহানকে দেখে উঠে দাঁড়ায়।
অপরদিকে চৌধুরী বাড়ির সামনে গাড়ি থামিয়ে দেয় অয়ন। রিমির গাড়িও অয়নের গাড়ির পিছনে থেমে যায়। অতঃপর….
..তারপর…
চলবে কী?🙂