#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ৫৪
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অয়ন গাড়িতে বের হয়েই, হাতে থাকা ব্লেজার টা নিয়ে তড়িৎ গতিতে চৌধুরী বাড়িতে প্রবেশ করে। রিমিও অয়নের পিছনে পিছনে চৌধুরী বাড়িতে যায়। অয়ন বাড়িতে ঢুকেই লাথি দিয়ে সমস্ত জিনিস ভেঙ্গে ফেলতে থাকে। অয়নের হঠাৎ এমন আচরণে ফারহান অবাক হয়ে, অয়নের কাধে হাত রেখে বলে,
‘ ভাই কি হয়েছে তোর? এমন করছিস কেন? ‘
অয়ন সঙ্গে সঙ্গে ফারহানের হাত ঝাঁটা দিয়ে ফেলে দেয়। অতঃপর হাক ছেড়ে সমস্ত সার্ভেন্টদের ডেকে পাঠায়। অয়নের আদেশে সমস্ত সার্ভেন্টরা জড়ো হয়ে আসে। অয়ন সোফায় গিয়ে, পায়ের উপর পা দিয়ে বসে বলে,
‘ আমার সাথে গেম খেলা? অয়ন চৌধুরীর সাথে গেম খেলা এতো সহজ? সৎ সাহস থাকলে এখুনি বল, কে আমার রুম থেকে মেডেসিন গুলো সরিয়েছিস। ‘
সার্ভেন্টরা সকলের থরথর করে কাঁপতে থাকে। রুজা এবং আশরাফ ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। মুখে তাদের একরাশ ভয়। অয়ন পকেট থেকে সেই ওষুধ টা বের করে খেয়ে নেয়।অতঃপর ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিয়ে নিজের রাগ সংযোতের প্রচেষ্টা করে। অয়ন তার সেক্রিটারিকে দিয়ে দ্রুত ড্রাগস আনিয়ে নিয়েছে।
অয়ন হাতে তালি বাজায়, সঙ্গে সঙ্গে কিছু দেহরক্ষীগণ বাইরে থেকে ইশানের রক্তাক্ত দেহটা ছুড়ে ফেলে মাটিতে। ইশান কোনরকম নিঃশ্বাস নিচ্ছে কেবলমাত্র। পুরো শরীরে মারের দাগ।
কপাল বেয়ে অনবরত রক্ত গড়াচ্ছে। নিজেদের ছেলের এতো করুণ পরিনতি দেখে আশরাফ এবং রুজা ইশানের কাছে ছুটে যেতে নিলে, হাত দিয়ে বাঁধা দেয় অয়ন। অয়নের বাঁধা পেয়ে থেমে যায় তারা। অয়ন পকেটে হাত ঢুকিয়ে, ইশানের কাছে ঝুঁকে, ইশানের গাল চেপে ধরে বলে,
‘ আমার সাথে গেম খেলবি তুই? তুই আমারই লোকদের দিয়ে আমার মেডিসিন সরিয়ে ফেলবি, আমারই জানের দিকে হাত বাড়াবি, আর আমি বসে থাকবো? তুই এবং তোর সো কলড বাবা -মা আমাকে কতটা বোকা মনে করিস? ‘
ইশান কোন কথার উত্তর দিতে পারে না। শুধু নিঃশ্বাস ফেলতে থাকে ঘন ঘন।
অয়নের কথায় রিমি বিচলিত হয়ে ইশানকে উদ্দেশ্য প্রশ্ন করে,
” আপনি কি বলতে চাইছেন ডক্টর এয়ারসি? ” উনিই বা কে? ”
অয়ন ইশানের পেটে লাথি মেরে, দ্বিগুন ক্ষোভ নিয়ে উত্তর দেয়, ” দুঃখজনক হচ্ছে এই রাস্কেলটা সম্পর্কে আমার ভাই হয়। যে ছোটবেলা থেকে আমার কন্টিনিউয়াসলি ক্ষতি করে যাচ্ছে। আজ যে আমি ড্রাগ এডেক্টেড শুধুমাত্র এদের জন্যে। ‘
অয়ন কথাটি বলে ইশানসহ, রুজা এবং আশরাফ চৌধুরীর দিকে ইশারা করে। রিমি এবং ফারহান বিস্ফোরিত নয়নে তাদের দিকে তাকায়। রুজা এবং আশরাফ একে-অপরের দিকে তাকায়। তরতর ঘামছেন তারা। এই বুঝি তাদের এতোদিনের পর তাদের সমস্ত চক্রান্ত কি ফাঁস হয়ে যাবে? অয়নের কথার মাঝেই, মাটিতে শুয়ে থেকে কোনরকম অপষ্ট গলায় ইশান বলে,
‘ যা করেছি বেশ করেছি আমি। হ্যা আমি তোর রিমিকে মারতে চেয়েছিলাম, আমিই তোর মেডিসিন সরিয়ে ফেলেছি,বিকজ আমি খুব ভালো করে জানি ড্রগস না নিলে, অয়ন ধীরে ধীরে একদম শেষ হয়ে যাবে। একজন মাদকাসক্ত মানুষ কখনোই ড্রাগস ছাড়া বাঁচতে পারে না এন্ড এইসব নিয়ে আমার কোন ক্ষোভ নেই। আমি যা করেছি বেশ করেছি। ‘
ফারহান এইবার নিজের ক্রোধ সামলাতে পারলো না। রাগে ক্ষোভে গিয়ে, ইশানের শার্টের কলার চেপে ধরে। ক্রোধান্তিত হয়ে প্রশ্ন ছুড়ে বলে,
‘ কেন করছিস এমন? কেন করলি? ‘
ইশান তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে। অতঃপর মুখস্রী শক্ত করে, কোনরকম হেলিয়ে শুয়ে উত্তর দেয়,
‘ আমি যা করেছি বেশ করেছি। আজ আমি কেন আমার পরিবারের থেকে দূরে থেকেছি? কেন আমি আজ ত্যাজ্য পুত্র হয়ে রয়েছি। শুধুমাত্র এই অয়ন রওযাক চৌধুরীর জন্যে। ‘
অয়ন ইশানের কথার বিপরীতে কিছু বলতে নিলে, সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে রুহানা চৌধুরী বলতে থাকে,
‘ তার জন্যে কি তুমি দায়ী নও ইশান? তোমার কি আদোও মনে আছে অতীতে করা তোমার কান্ডকলাপ? ‘
রুহানা চৌধুরীর মুখে অতীতের বিষাদময় স্মৃতি রক্তচড়া দিয়ে উঠে অয়নের। অয়ন মাথা চেপে বলতে থাকে সেই ভয়ংকর অতীতের কথা।
অয়নের বয়স তখন ১১ পেরিয়ে ১২ ছুইঁছুই করছে, তখন সদ্য সে তার বাবা – মাকে একসাথে হারায়। হাসজ্বল বালকটি তখন বাবা- মাকে হারিয়ে গভীর পাথরে পরিনত হয়। কাউকে সহ্য করতে পারতো না অয়ন। চোখের সামনে যা দেখতো তাই ছুড়ে ফেলে দিতো। খাবার দিলে খেতো না। সারাদিন ঘরবন্দী হয়ে বসে থাকতো। অয়নের অবস্হা বেগতিক দেখে, আশরাফ চৌধুরী এবং রুজা চৌধুরী অয়নের জন্যে মানুষিক রুগীর ডক্টর দেখালেন, তার কথামতো রুহানা চৌধুরী অয়নকে ওষুধ দিতো। অয়ন বাড়িতে একমাত্র রুহানা চৌধুরীর কথাই শুনতো, তাই বিনাবাক্যে ওষুধ খেয়ে নিতো, কিন্তু রুহানা চৌধুরী জানতো না সে নিজ হাতে ছোট্ট অয়নকে ড্রাগস দিচ্ছে।
ছোট বেলা থেকেই রুহানা চৌধুরীর বড্ড আদরের নাতী ছিলো অয়ন। তার কিছুটা প্রভাব পড়তো ইশানের উপর। ইশান এবং অয়ন বলতে গেলে প্রায় সমবয়সী। অয়নের প্রতি সবার এতো যত্ন, খেয়াল কেন যেন সহ্য হচ্ছিলো না ইশানের। তাইতো একদিন যখন ছাদে একা দাঁড়িয়ে ছিলো অয়ন,সেসময় অয়নকে ছাঁদ থেকে ধাক্কা মারার জন্যে ইশান হাত বাড়ায়, তখনি সেখানে হাজির হয়ে যায় রুহানা চৌধুরী। ব্যাস! তিনি সবকিছু বুঝে গেলেন। ইশান অয়নকে হিংসা করে,যাকে বলে ভয়ংকর হিংসা। তাই অয়নের জীবন রক্ষার্থে ইশানকে চৌধুরী বাড়ির থেকে দূরে পাঠিয়ে দেন তিনি। রুজা এবং আশরাফের আকুতি মিনিতিও মন গলাতে পারে নি রুহানা চৌধুরী, তিনি সেদিন নিজ সিধান্তে অটল ছিলেন।
সমস্ত অতীত শুনে মুখ চেপে কেঁদে উঠে রিমি। অয়নের আজ এমন করুণ অবস্হার জন্যে নিজের আপন চাচা- চাচীই দায়ী? ছোট্ট একজন বালকের হাতে ড্রাগস দিতে তাদের লজ্জা লাগলো না? অয়ন হাত মুঠো করে, নিজের রাগকে কোনরকম নিয়ন্ত্রন করে বলে,
‘ যত দিন যাচ্ছিলো আমি বুঝদার হয়ে উঠছিলাম, আমি বুঝতে পারছিলাম আমি কোন নরমাল মেডিসিন নিচ্ছি না। একটা সময় আমি বুঝে গেলাম আমি আসলে ড্রাগস এডেক্টড, কিন্তু
আমি জানি কোনভাবে এখন আমি আমার নেশাটাকে কাটাতে পারবো না। বিকজ ড্রাগস না নিলে, আমি নিজের মাঝে থাকিই না। আমি এইটাও জানতাম আমাকে ওষুধ টা গ্রেন্ডমা দিলেও, গ্রেন্ডমা এইসব বিষয়ে কিছুই জানেনা, গ্রেন্ডমার মাধ্যমে, অন্য কেউ আমার ক্ষতি করতে চাইছে।’
রিমি অয়নের কথার বিপরীতে তেমন কিছু বলে না। রুজা এবং আশরাফ চৌধুরীর কাছে গিয়ে ঘৃণার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
‘ কেন করলেন এমন জঘন্যতম অপরাধ? কিসের জন্যে বলুন আপনারা? ‘
‘ এই মেয়ে এই মেয়ে! তুমি কি এখন আমাদের জ্ঞান দিবে? আমরা কি করবো না করবো তা তোমাকে বলে দিতে হবে? ‘
রুজা চৌধুরীর কথা শেষ হতে না হতেই, পিছন থেকে কাচের বোতল দিয়ে ইশানের হাতের বরাবর ঢুকিয়ে দেয়। ব্যাথায় কাতড়ে উঠে ইশান। রুজা চৌধুরী চিৎকার করে বলে,
‘ অয়ন ভালো হবেনা বলে না বলে দিচ্ছি, আমার ছেলের গাঁয়ে আরেকটা ক্ষতি করলে, আমি কিন্তু। ‘
‘ কি করবেন আপনি?কি এমন ক্ষমতা আপনার? আপনি তো শুধু পিছন দিয়ে, আঘাত করতে পারেন, পারলে সামনে দিয়ে আঘাত করে দেখুন মিসেস রুজা চৌধুরী। ‘
কথাটি বলতে না বলতেই, অয়ন ইশানের আরেক হাত ধরে বাঁকা হেসে বলে,।
‘ এই হাত দিয়ে সেদিন তুই আমার রিমিপরীর দিকে হাত বাড়িয়েছিলি না? ‘,
ইশান কেঁপে উঠে। অয়নবরাবর কাঁচটি ঢুকিয়ে দেয়। রিমি নেত্রপল্লব বন্ধ করে নেয়, সে বুঝতে পারছে অয়ন নিজের মাঝে নেই, অয়নকে আটকাতে হবে, কিন্ন্রু কি করে আটকাবে রিমি? অয়ন ইশানের হাত থেকে কাঁচটি একটানে খুলে, রুজা চৌধুরীর কাছে গিয়ে, রুজার গালে ইশানের রক্ত লাগিয়ে বলে,
‘ দেখুন রুজা চৌধুরী, আপনার সামনেই আপনার ছেলের রক্ত আপনার গাঁয়ে লাগিয়ে দিলাম, কিন্তু আপ্নারা কেউ কিচ্ছু করতে পারলেন না। ‘
রুজা চৌধুরী তড়িৎ গতিতে অয়নের থেকে সরে আসে। অতঃপর কাঁদতে কাঁদতে আশরাফের কলার চেপে বলে,
‘ তুমি কী এখনো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবে? তোমার সামনেই আমাদের ছেলেটাকে একপ্রকার মেরে ফেলছে, আর তুমি দাঁড়িয়ে আছো? ‘
আশরাফ ইশানের দিকে করুনভাবে তাকিয়ে হাত মুঠো করে শক্ত করে দাঁড়িয়ে থাকে। আজকে চাইলেও তিনি কিচ্ছু করতে পারবেন না, কেনমা তিমি যে আজ বড্ড অসহায়। অয়ন পুনরায় সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে, সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলে,
‘ চোখের সামনে ছেলের মৃত্যু দেখা ছাড়া আর কোন পথ নেই আপনাদের হাতে, কিচ্ছু করতে পারবেন না আপ্নারা। ‘
‘ নিজেদের স্বার্থের জন্যে উনারা যে কতটা নিকৃষ্ট হতে পারে, তা তোমার ধারণাতেও নেই অয়ন। ‘
পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে রিমি এবং ফারহান উভয়েই পিছনে ঘুড়ে দেখতে পায় সদর দরজায় স্বয়ং সুমাইয়া দাঁড়িয়ে আছে।
চলবে কি?
#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ৫৫ [ রহস্য সমধান]
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ফারহানের মৃত্যু স্ত্রীকে জীবিত দেখে অনেকেই হতভম্ব হয়ে যায়। যাকে এতোদিন মৃত্যু জেনে আসা হয়েছে সে আসলে জীবিত একজন মানুষ। মেঘ এবং ইশাসহ সকলের মুখেই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তারা সকলেই আশ্চর্যের চরম শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছে।
সুমাইয়াকে দেখে ফারহান দৌড়ে গিয়ে ঝাপটে ধরে
সুমাইয়াকে। সুমাইয়ার সারা মুখে চুমু দিয়ে বলে,
‘ কোথায় গিয়েছিলে সুমু? কে বা কারা তোমার অপহরণ করেছিলো। সব বলো আমায়। ‘
উত্তেজিত ফারহানের মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে শান্ত করে সুমাইয়ার। অতঃপর শান্ত গলায় বলে,
‘ শান্ত হও ফারহান। আমি একদম ঠিক আছি। সবকিছু বলবো একটু শান্ত হও। ‘
ড্রইং রুমের সর্বস্হান জুড়ে রয়েছে এসির আনাগনা। তবুও তরতর করে ঘামছে রুজা এবং আশরাফ।
রিমি সুমাইয়ার কাছে গিয়ে সুমাইয়াকে আলতো ভাবে ছুঁইয়ে দেয়। নিজের বোনকে সুস্হ অবস্হায় দেখে, রিমি নিজেকে সামলাতে পারলো না জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে। সুমাইয়াও নিজের জান্নাতকে জড়িয়ে ধরে, মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। রিমি সুমাইয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেই, কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলে,
‘ তুমি ঠিক আছো তো আপু? তুমি আবারোও ঠিক হয়ে গিয়েছো, আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না। ‘
সুমাইয়া রিমির আখিজোড়ায় লেপ্টে থাকা অশ্রু সযত্নে মুছে দিয়ে, ঘাড় ঘুড়িয়ে ফারহানের দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতার সুরে বলে,
‘ তোদের সকলের দোয়া এবং আমার স্বামীর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আজ আমি আল্লাহর রহমতে সুস্হ হয়ে তোদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, কিন্তু এইবার আসি আসল কথায়।’
সুমাইয়া মুচকি হেসে রুজা এবং আশরাফের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘, কি হলো আমাকে বুঝি এইসময় আপনারা আশা করেন নি তাই না? ‘
রুজা চৌধুরী এবং আশরাফ নিরত্তর। কথা বলবেই বা কি করে তাদের সমস্ত রহস্য তো ফাঁস হয়ে গিয়েছে। এখন তারা চাইলেও নিজেদের বাঁচাতে পারবে না। দুজনকে নিরব দেখে ক্ষীন্ন হাসেন রুহানা চৌধুরী। অতি আফসোসের সাথে বলে,
‘ কথা বলবে কী করে? ওদের কি কিছু বলার ভাষা রয়েছে? যাকে মারার জন্যে ওদের এতো আয়োজন সে তো স্বয়ং চলে এসেছে। এইবার কি করে বাঁচবে ওরা? ‘
রুহানা চৌধুরীর কথায় অয়ন বাদে সকলের ভ্রু কুচকে হতভম্ব হয়ে তাকায় রুহানার দিকে। সুমাইয়া সকলের দিকে ঘুড়ে বলতে থাকে,
‘ হ্যা রুজা এবং আশরাফ চৌধুরী মিলে আমাকে মারতে চেয়েছিলেন। আসলে আমি তাদের সমস্ত কৃর্তিকলাপ জেনে গিয়েছিলাম, তাই আমাকে পথের কাটা ভেবে, তারা সরিয়ে দিতে চেয়েছিলো। ‘
‘ কিসের কৃর্তিকলাপের কথা বলছো সুমু? ‘
ফারহানের প্রশ্নে সুমাইয়া উত্তর দেয়,
‘ বলছি, সব বলছি। তোমার মনে আছে একদিন তুমি অফিসের কাজে বাইরে গিয়েছিলে? ‘
‘ হ্যা তো? ‘
‘ সেদিন রাতে হুট করে আমার ঘুম টা ভেঙ্গে যায়, আমি বাইরে কয়েকজনের কথা শুনতে পারি।’
সুমাইয়া সম্পূর্ন অতীত বলতে শুরু করলো, তার ভাষ্যমতে, সেদিন রুজা চৌধুরী এবং আশরাফ নিজেদের রুমে একজন উকিলের সাথে কথা বলছিলো সম্পত্তির ব্যাপারে। আশরাফ উকিলের দিকে তাকিয়ে বলেন,
‘ ফারহানকে নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই, সব সমস্যা হচ্ছে অয়নকে নিয়ে। মায়ের আদরের নাতী অয়ন। মায়ের অবর্তমানে সবকিছু তো অয়নই পাবে।’
রুজা চৌধুরী আশরাফের বিপরীতে বললেন,
‘ তুমি এতো চিন্তা করছো কেন বাপু? অয়নকে ছোট বেলা থেকে আমি ড্রাগস দিচ্ছি, ও একেবারে পাগল হয়ে যাবে। তখন চৌধুরী বাড়ির সবকিছুই তো আমাদের। ‘
উকিল সাহেব কাগজ দেখতে দেখতে বললেন,
‘ আপনারা কোন চিন্তা করবেন না, ডক্টর এয়ারসি পথ থেকে সরে গেলেই, সবকিছুই আপনাদের। ‘
আশরাফ চৌধুরী বিকট শব্দে কুৎসিত হাসি দেয়। বিরাট চৌধুরীর ফ্যাশনের সমস্ত কিছু নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিবে আশরাফ। চৌধুরী ফ্যাশন সর্বপ্রথম রুহানা চৌধুরী তৈরি করলেও,অয়নের বাবা তুষার নিজ হাতে গড়েছিলেন চৌধুরী ফ্যাশনকে। ভাইয়ের ব্যাবসার প্রতি বরাবরই লোভ ছিলো আশরাফের। তুষার যখন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়, তখন স্বামীর শোকে অয়নের মা লামিয়া অসুস্হ হয়ে পড়ে, তখন লামিয়াকেও ইচ্ছে করে ভুল ওষুধ খায়িয়ে মেরে ফেলে আশরাফ। কেননা তুষারের অবর্তমানে লামিসার কাছে ক্ষমতা চলে যাবে। যদিও লামিসার মৃত্যু সকলে স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছিলো।
সুমাইয়া সেদিন আশরাফ চৌধুরীর সমস্ত কুকৃর্তীর কথা জেনে গিয়েছিলো। সুমাইয়া যখন মুখ চেপে নিজের ঘরের দিকে চলে যাচ্ছিলো, তখন বাইরে এসে রুজা চৌধুরী সুমাইয়াকে দেখে নেয়, তার বুঝতে বাকি থাকে না, সুমাইয়া সব জেনে গিয়েছে। তাই তারা সুমাইয়াকেও মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়।
সুমাইয়া সে রাতের পর থেকে ফারহানের সাথে তেমন কথা বলতো না। মন মরা হয়ে থাকতো, ফারহান লক্ষ্য করলেও তেমন গুরুত্ব দিতো না। সুমাইয়া একদিন ঠিক করলো ফারহানকে না জানিয়েই, থানায় গিয়ে সবকিছু খুলে বলবে। তাই সকালে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে গেয়েছিলো, কিন্তু আশরাফ চৌধুরী সেদিন সুমাইয়ার গাড়ির ব্রেক ফেল করায়,যেন সুমাইয়ার এক্সিডেন্টে মারা যায় এবং সুমাইয়ার ফোনে একটি মেসেজ রেখে দেয় ফারহান সম্পর্কে, যদি কেউ কখনো সুমাইয়ার মৃত্যু নিয়ে ঘাটাঘাটি করে, তাহলে যেন ফারহানকে সংদেহ করে, সে অনুযায়ী সুমাইয়ার মেসেজ দেখে রিমিও ফারহানকে সুমাইয়ার খুনি ভাবেছিলো, কিন্তু রুজা এবং আশরাফ যখন লোক লাগিয়ে জানতে পারলো সুমাইয়া বেঁচে আছে এবং সম্পূর্ন সুস্হ হয়ে উঠছে তখন তারা সুমাইয়াকে মেরে ফেলার জন্যে পুনরায় চেস্টা করে।
‘ তার মানে সেদিন সানা নয়? রুজা চৌধুরী তোমাকে মারতে গিয়েছিলো? ‘
ফারহানের প্রশ্নে সুমাইয়া মাথা নাড়িয়ে সায় জানিয়ে উত্তর দেয়,
‘ হ্যা, শুধু তাই নয়। আমাকে অপহরণও করেছিলো,
উনারা, কিন্তু গ্রেন্ডমা আমাকে সঠিক সময়ে বাঁচিয়ে নেয়। আমাকে যখন অপহরণ করা হয়, তখন খাবারের সময় আমার হাত- মুখের বাঁধন খুলে দেওয়া হয়েছিলো, তখন আমি কৌশলে
কোনভাবে লুকিয়ে কিডন্যাপদের কাছ থেকে ফোন নিয়ে, গ্রেন্ডমাকে ফোন দিয়ে অর্ধেক কথা জানায়। কেননা আমি জানতাম তখন ফারহানের অবস্হা ছিলো করুন। ‘
সুমাইয়ার কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই, রুহানা চৌধুরী সাম্নের দিকে এগিয়ে বললেন,
‘ তাই আমি অফিসার সায়েদকে দিয়ে আশরাফের লোকেদের অগোচরে সুমাইয়াকে উদ্ধার করেছি। ‘
ফারহান রুহানা চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে, কৃতজ্ঞতার সুরে বলে,
‘ তার মানে তুমি আমাকে সেদিন মেসেজ দিয়েছিলে গ্রেন্ডমা? ‘
রুহানা চৌধুরী মাথা নাড়ায়। ফারহান গিয়ে রুহানা চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে। কৃতজ্ঞতার তার নেত্রপল্লব জলে পরিপূর্ন হয়ে উঠেছে। রুহানাও তার নাতীকে শক্ত করে জড়িয়ে, নিজের থেকে ছাড়িয়ে, ফারহানের কাঁধে হাত রেখে অপরাধীর ন্যায় বললেন,
‘ আমাকে ধন্যবাদ দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই বাচ্চা। আমি আমার পাপের পাশ্চিত্ব করেছি শুধু। নিজের জেদের জন্যে আমি তো কম অন্যায় করে নি সুমাইয়ার সাথে। ‘
কথাটি বলে শেষ করে রুহানা চৌধুরী হাক ছেড়ে ডেকে উঠেন,
‘ অফিসার ভিতরে আসেন। ‘
সঙ্গে সঙ্গে সাদেক প্রবেশ করে, রুহানা চৌধুরীর কথায় সাদেক গিয়ে সুমাইয়াকে উদ্ধার করে, এমনকি আশরাফের লোকেদের গ্রেফতার করে ফেলে। রিমি সবকিছু শুনে ঘৃণাতে মাথা নিচু করে ফেলে। চোখ ছলছল হয়ে উঠে পরক্ষনেই তার। আশরাফ এবং রুজার লোভের জন্যে ছোট্টবেলা থেকে কষ্ট পেয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত অয়ন। আজ অয়নও সকলের মতো স্বাভাবিক হতো কিন্তু আফসোস!
রিমি একপলক নিষ্প্রান দৃষ্টিতে অয়নের দিকে একপলক তাকায়। অয়নের মধ্যে কোনপ্রকার রাগের ছিটাফোটা নেই, অয়ন জানে তার মায়ের মৃত্যুর পিছনে তার নিজের চাচা স্বয়ং দায়ী তবুও তার মাঝে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। সে নিশ্চিন্তে ফোন গুতাচ্ছে, যেন এখানে তেমন কিছুই হয় নি। অয়নের শান্ত রুপটাই রিমিকে আরো বেশি ভাবাচ্ছে। অয়নের মতো মানুষের তো শান্ত থাকা কথা নয়। এ যেন ঝড়ের পূর্বভাস। আশরাফ এবং রুজা চৌধুরী মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে, এখন তারা চাইলেও কিচ্ছুটি করতে পারবে না। নিজের বাবা- মা এবং ভাইয়ের ঘৃণিত কাজের বর্ননা শুনে, রাগে- দুঃখে লজ্জায় কাঁদতে কাঁদতে উপরে চলে যায় মেঘ। সাদেক কনস্টেবলকে আদেশ দেয় গ্রেফতার করার জন্যে, কিন্তু তার পূর্বেই অয়ন তাদের থামিয়ে দেয়। অধরের কোণে ভয়ংকর হাসি ফুটিয়ে বলে,
‘ অন্যায় যখন আমার সাথে করা হয়েছে, সেই শাস্তি স্বয়ং আমি নিজ হাতেই দিবো। ‘
অয়নের কথার শেষ হতে না হতেই ড্রইং রুমের সমস্ত লাইট অফ হয়ে যায়। সকলে উত্তেজিত হয়ে পড়ে। কিছুক্ষন এর মাঝেই লাইট চলে আসে, কিন্তু ইশান, রুজা এবং আশরাফ কেউ নেই। সকলে যেন মুহুর্তেই উধাও। অয়নকেও কোথাও দেখা যাচ্ছে না। সকলের বুঝার বাকি থাকে না অয়ন আসলে চাইছে টা কী?
রিমি দ্রুত ফারহানের কাছে গিয়ে কম্পিত গলায় বলে,
‘ ভাইয়া আমাদের এখুনি উনাকে আটকাতে হবে, উনাকে আর কোনপ্রকার খুন করতে দেওয়া যাবে না। ‘
চলবে কি? 🙂