#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ৫৬
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
নিজের স্বামীকে দেখতে না পেয়ে উৎকন্ঠা হয়ে চৌধুরী বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে রিমি। মনে তার ভয়ংকর ভয়, এই বুঝি অয়ন কোন ভয়ংকর কান্ড করে বসবে। রিমির পিছন পিছন সাদেক এবং ফারহান ও বেড়িয়ে আসে। সাদেক তার গাড়ির স্টেরিংএ লাথি মেরে রাগান্বিত সুরে বলে,
‘ আমার নিজের উপরেই রাগ হচ্ছে, আমি থাকতে ডক্টর এয়ারসি কীভাবে পারলো তিনজন মানুষকে একসাথে গাঁয়েব করতে। আম জাস্ট শকড। ‘
রিমি কম্পিত গলায় সায়েদের দিকে তাকিয়ে, অস্হির ভাবে বলে,
‘ এখন আমাদের এতো কিছু ভাবার সময় নেই অফিসার। আমাদের যে করেই হোক উনার কাছে পৌঁছাতে হবে, নাহলে উনি ভয়ংকর এক ধবংশলীলায় মেতে উঠবেন। ‘
ফারহান দ্রুত মাথা নাড়িয়ে সায় জানায় রিমির কথায়, তাদের এখুনি অয়নকে খুঁজে বের করতে হবে। সায়েদ তাদের ফোর্সদের ফোন করিয়ে জানিয়ে দেয়,যেন তারা অয়নের নাম্বার ট্রেস করে, অয়নের লোকেশনটা জানার প্রচেষ্টা করে, কিন্তু অয়নের নাম্বার বন্ধ, যার কারনে অয়নের লোকেশনটা ট্রেস করা সম্ভব হচ্ছে না। সায়েদ ফারহানদের জানায়, সে অয়নের জায়গার খুঁজ পেলে, তাদের জানিয়ে দিবে।
রিমি সায়েদের আশায় থাকে না, সে সায়েদকে জানায়,
‘ ততক্ষন আমার পক্ষে অপেক্ষা করা সম্ভব নয়, আপনারা আপ্নাদের মতো উনাকে খুঁজতে থাকুন, আমি আমার মতো করে উনাকে খুঁজে বের করবো। নাহলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। ‘
নিজেই গাড়ির ভিতরে ঢুকে, কোনরকম ড্রাইভ করে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। ফারহান রিমিকে চাইলেও আকটাতে পারে না। নিজেও আরেকটি গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। অপরদিকে সায়েদ অয়নের লোকেসন ট্রেস করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
অন্ধকার একটি ঘরের মাঝে ইশান, রুজা এবং আশরাফকে চেয়ারের সাথে শক্ত করে বেঁধে রাখা হয়েছে। ইশানের ঠোট ফেঁটে রক্ত বেয়ে পড়ছে অনাবরত। বসে থাকার শক্তিটুকুও নেই ইশানের মাঝে। কোনরকম চেয়ারে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছে। আরো কিছুক্ষন থাকলে বোধহয় বলিষ্ট দেহী বিশিষ্ট যুবক অজ্ঞানই হয়ে পড়বে। ছেলের করুণ অবস্হা
দেখে শব্দ করে কেঁদে উঠলো রুজা চৌধুরী। আশরাফ সাহেব মাথা নিচু করে আছেন। নিজেকে ব্যর্থ বাবার উপাধি দিতে ইচ্ছে করছে, সে এতোই অক্ষম যে ছেলের করুন অবস্হা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা ছাডা আর কোন উপায় নেই তার হাতে। কারো পায়ের বিকট শব্দে কেঁপে উঠে তিনজনে একসাথে। তাদের বুঝতে বাকি থাকে অয়ন এসেছে। অয়ন পকেটে হাত ঢুকিয়ে রুজা, আশরাফ এবং ইশানের সামনে দাঁড়ায়। চাহনী তার স্হীর। ফর্সা মুখস্রী অতী শান্ত। বাঘ যেমন তার শিকারকে শিকার করার সময়,
শান্ত থাকে ঠিক তেমনি অয়ন শান্ত হয়ে রয়েছে। অয়নের গাঁয়ে ডক্টরের এপ্রোন। অয়ন হাতের ইশারা দেয়। হাতের ইশারা পেয়ে কিছু দেহরক্ষীগণ একটি সুবিশাল কাঠের উচু চেয়ার নিয়ে আসে। অয়ন বসে ঝিমিয়ে থাকা ইশানের বুক বরাবর পা দিয়ে লাথি মেরে, ইশান তৎক্ষনাৎ অয়নের পায়ের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। অয়ন ইশানের মুখ চেপে ধরে ঠেস লাগিয়ে চেয়ারে বসায়। অতঃপর ইশানের সামনে বরাবর চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে,সিগারেট ঠোটে চেপে বাতাস ছাড়তে ছাড়তে বলে,
‘ অয়ন চৌধুরীর সাথে শত্রুতা করতে চেয়েছিলে, অথচ তার সাথে কথা বলার সময় নেতিয়ে যাচ্ছিস কেন? তোদের মতো খেলোয়ারদের সাথে খেলে লাভ নেই, কেন জানিস? ‘
ইশান অয়নের মুখের দিকে ভিতু নয়নে তাকাতেই,অয়ন সিগারেট টা ফেলে শান্ত গলায় বলে,
‘ গেম খেলতে হয় লেভেলে লেভেলে, খেলায় সহজেই খেলোয়ার যদি অধিক শক্তিশালী হয় তবে গেমে হেরে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে বেশি, কিন্তু
খেলোয়ার যদি নিজের থেকে কম শক্তিশালী হয় তবে, গেম খেলার কোন ইন্টারেস্ট নেই। ‘
ইশান চোখ বন্ধ করে হাত মুঠো করে শ্রবণ করতে থাকে অয়নের প্রতিটি বাক্য, এছাড়া আর কোন উপায়ও যে নেই তার। অয়ন এইবার রুজা এবং আশরাফ চৌধুরীর দিকে ভয়ংকরভাবে দৃষ্টিপাত করে। অয়নের ভয়ংকর চাহনী দেখে থমকে যায় তারা। অয়ন উঠে দাঁড়িয়ে পাশে থাকা একটা ড্রয়ার থেকে ধারালো ছুড়ি খানা বের করে, অতঃপর তাতে পরম যত্নের সাথে হাত লাগাতে লাগাতে বলে,
‘ আগের বার পায়েলকে আস্ত খেতে কিছুটা কষ্ট হয়েছিলো আমার টাইগারের কিন্তু এইবার আমি তাকে সেই কষ্ট করতে দিবো না। সে যাতে আপনাদের তিনজনকে পরম শান্তিতে খেতে পারে, সেই ব্যবস্হা করবো আমি এখন। ‘
অয়নের হাতের ধারালো অস্ত্রটা দেখে ইশান, রুজা এবং আশরাফের বুঝতে বাকি থাকে না অয়নের পরিকল্পনা সম্পর্কে। বাইরে থেকে ক্ষুধার্ত বাঘের ভয়ংকর গর্জনে কেঁপে উঠে তারা তিনজনই। রুজা চৌধুরী কাঁপতে কাঁপতে বলে,
‘ এই ছেলে তো বদ্ধ উম্মাদ, এতো আমাদের কেটে টুকরো টুকরো করে বাঘের পেটে দিয়ে দিবে। কি করবো আমরা এখন?’
আশরাফ চৌধুরী দাঁতে দাঁতে চেপে রুজা চৌধুরীকে বললেন,
‘ অয়নের এই অবস্হার জন্যে তো আমরাই দায়ী। ‘
অয়ন ছুড়িটি নিয়েই প্রথমে আশরাফে হাতে ঢুকিয়ে দেয়। ব্যাথায় কাতরাতে থাকে আশরাফ।রক্ত গুলো মেঝেতে গড়িয়ে পড়তে থাকে। স্বামীর দুদর্দশা দেখে
নেত্রকোণা বন্ধ করে নিরবে জল ফেলতে থাকে, রুজা।
অয়ন শক্ত করে চাকুটা হাত বরাবর ঢুকাতে ঢুকাতে পৈচাশিক হাসি দিয়ে বলে,
‘ মনে আছে আশরাফ চৌধুরী? এই হাত দিয়ে আপনি আমার মাকে ভুল ওষুধ দিয়ে মেরে ফেলেছিলেন, কিছু মনে পড়ছে?’
আশরাফ উত্তর দিতে পারে না, তার পূর্বেই রুজা চৌধুরীর আঙ্গুল বরাবর চাকু লাগিয়ে অয়ন শক্ত করে চেপে ধরে রুজা চৌধুরীর হাত। রুজা চৌধুরী বড় বড় চোখ করে চেয়ে থাকে। ব্যাথা টাই এতোটাই তীব্র যে সে চিৎকার টুকু করার সাহস টুকু পাচ্ছে না।
অয়ন পুনরায় শয়তানী হাঁসি হেসে বলে,
‘, কি হলো রুজা চৌধুরী আপনার নিশ্চয় মনে পড়ছে তাইনা? এই জঘন্য হাত দিয়ে সেই ছোট্ট বালকটিকে নিজ হাতে ড্রাগস সেবন করিয়েছিলেন, কি মনে পড়ছে। ‘
রুজা চৌধুরী ঢলে পড়ে চেয়ারে। তাদের রক্তে ফ্লোর যেন ভিজে যাচ্ছে প্রতিমুহূর্তে।
অয়ন রক্তমাখা ছুড়িখানা নিয়ে, রক্তের দিকে তাকিয়ে হু হা করে হেসে উঠে। তাদের প্রতিটি রক্ত যেন তার বাবা- মায়ের মৃত্যুর কথা মনে পড়িয়ে দিচ্ছে। আজ রুজা এবং আশরাফের মতো জঘন্য মানুষের লোভের শিকার হয়ে, অয়ন তার বাবা- মাকে হারিয়েছে, তার শৈশব হারিয়েছে। প্রতিটা মুহুর্তে দগ্ধ হয়েছে ড্রাগসের নেশায়। অয়ন হাসতে হাসতে হুট করে কেঁদে ফেলে। চাকুটা নিজের হাতে শক্ত করে চেপে, হুংকার ছুড়ে রক্তচোখে বলে,
‘ সামান্য পুলিশের কাছে তো আমি আর আপনাদের
তুলে দিতে পারি না, আপ্নাদের তিনজন আজ নিকৃষ্টতম মৃত্যু দিয়ে নিজের বাবা- মায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিবো আমি আজ। ‘
অয়ন কথাটি বলে চাকুটা হাতে নিয়ে আশরাফ চৌধুরীর গলা বরাবর ধরতে নিলে, পিছন থেকে রিমির কন্ঠস্বর শুনে থমকে যায়। রিমি পিছন থেকে বলে উঠে,
‘ উনাদের মারবেন না, ডক্টর এয়ারসি। দয়া করে আর কোন খুন করবেন না আপনি। ‘
প্রতিশোধ নেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ এক কাজে বিঘ্ন ঘটানোর মতো অপরাধ করায়, চাকুটা হাতে নিয়ে রিমির দিকে একপ্রকার তেড়ে, দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
‘ কেন এসেছো রিমিপরী? কেন এলে তুমি? এখুনি বেড়িয়ে যাও তুমি। আমার কাজে বিঘ্ন ঘটানোর দুর্সাহস দেখাবে না। এখুনি বেড়িয়ে যাও, নাহলে ফল ভালো হবে না। ‘
রিমি অয়নের কথায় গুরুত্ব না দিয়ে, অয়নের হাত থেকে ছুড়িটা একপ্রকার কেড়ে ফেলে দিয়ে চিৎকার করে বলে,
‘ আজ যাই হয়ে যাক ডক্টর এয়ারসি, আমি আপনাকে আর কোন খুন করতে দিবো না।’
অয়ন তা দেখে ক্রোধান্তিত চাহনীতে রিমির দিকে তাকায়। রাগে থরথর করে শরীর কাঁপছে তার। অয়ন রাগে হাত উচু করে……..
চলবে কী?
#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত
#পর্ব- ৫৭ [ ভালোবাসায় দূরত্ব]
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অয়ন হাত উচুঁ করে রিমিকে মা/রতে গিয়েও,কিছু একটা ভেবে থেমে যায়। রিমি নেত্রকোন বন্ধ করে নেয়। অয়ন লাত্থি দিয়ে রাগে চেয়ারটি ফেলে দিয়ে, পুনরায় ছু/রিখানা নিতে গেলে, রিমি ছু/রি খানা নিয়ে নিজের গলায় বসিয়ে,অয়নের দিকে তাকিয়ে,কম্পিত গলায় বলে,
‘ আপনি যদি আজকে খু/ন করেন তবে আমার ম/রা
মুখ আপনি আজকে দেখবেন। আমার লা/শের উপর দিয়ে আপনাকে আজকে খু/ন করতে হবে। ‘
নিজের জীবনের থেকেও প্রিয় স্ত্রীর ম/রার কথা শুনে, মাথা কাজ করে দেয় অয়নের। অয়ন বিচলিত হয়ে রিমির দিকে এগিয়ে আসতে নিলে, দ্রুত পিছনে সরে গিয়ে, হুমকির সুরে অয়নকে রিমি বলে,
‘ একদম এগোবেন না ডক্টর এয়ারসি। আমি কিন্তু নিজের গলায় ছুরি/ঘাত করে ফেলবো। ‘
অয়ন দাঁতে দাঁত চেপে রাগে থরথর করে কাঁপে। রিমির সাহস কী করে হলো নিজের ক্ষ/তি করতে চাওয়ার? তাও আবার তাদের জন্যে যাদের জন্যে অয়ন নিজের বাবা- মাকে হারিয়েছে। নিজের শৈশব হারিয়েছে। অয়নের ভাবনার মাঝেই, রিমি কিছুটা নরম কন্ঠে, ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
‘ আমি জানি আপনি কি ভাবছেন, আমি জানি উনারা যা করেছে, তা অন্যায়। আজকে আপনি স্বাভাবিক নন, শুধুমাত্র উনাদেরই জন্যে, কিন্তু আপনিও একটা কথা ভেবে দেখুন ডক্টর এয়ারসি, আপনি যদি আজকে উনাদের নিজ হাতে খু/ন করেন, তবে তাদের এবং আপনার মাঝে কি তফাৎ রইলো? অনেক খুন/ধব্বংশলীলা ঘটেছে ডক্টর এয়ারসি। আমি চাইনা আপনি আর কোন খু/ন করে,
সমাজে একজন খু/নী হিসেবে বেঁচে থাকুন। ‘
অয়ন যেন রিমির কথায় ভাবান্তর হলো না। অত্যান্ত ক্ষোভ নিয়ে, রিমির দিকে এগোতে গিয়েও থেমে গেলো। নিজের ভালোবাসার মানুষটির কোনপ্রকার ক্ষ/তি অয়ন সহ্য করতে পারবে না। রিমি অয়নকে থেমে যেতে গিয়ে, আলতো হেঁসে। সে জানে সে অয়নকে একপ্রকার ব্লেকমেইল করছে, কিন্তু এছাড়া তো তার কোন উপায় নেই। অয়নকে এছাড়া আর কোন উপায় নেই। রিমি হাক ছেড়ে পুলিশদের ডেকে পাঠায়,৷ ফারহান এবং সায়েদসহ অন্যান্য পুলিশেরা ভিতরে প্রবেশ করে। অয়ন ভয়ংকর দৃষ্টিপাত নিক্ষেপ করলো তাদের দিকে। রিমি অয়নের সেই দৃষ্টিপাতকে একপ্রকার অগাহ্য করে বলে,
‘ আমি অন্যায়ের সাথে আজ কোনপ্রকার আপোষ করবো না ডক্টর এয়ারসি। উনাদের সকলকে আইনের হাতে তুলে দিন। অফিসার উনাদের অ্যারেস্ট করুন। ‘
সায়েদ কৃতজ্ঞতার দিকে রিমির দিকে তাকিয়ে, আহত ইশান, রুজা এবং আশরাফকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। অয়ন সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকার ঘরটির মধ্যে ভাঙ্গচুড় করে। রিমি ভয়ে ভয়ে অয়নের দিকে এগোতে নিলে, অয়ন হাত থামিয়ে রিমিকে থেমে যেতে বলে। পকেট থেকে ড্রাগসের ওষুধটা বের করে চটজলদি খেয়ে নেয়। রিমি তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে। ফারহানও অসহায় হয়ে তাকিয়ে থাকে। নিজের ছোট ভাইটি চোখের সামনে ড্রাগস সেবন করতে কারই ভালো লাগে না।অয়ন রিমির হাত ধরেই, ফারহানকে একপ্রকার এড়িয়ে নিয়ে যায় বাইরের দিকে। অতঃপর রিমিকে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও বসে পড়ে। গাড়ি চলতে থাকে নিজ গতিতে। অয়ন রক্তচক্ষু নিয়ে সামনের দিকে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে, রিমি পরখ করে নিলো তার নির্দয় প্রেমিক পুরুষকে। সারা রাস্তায় কোনপ্রকার প্রতিক্রিয়া কিংবা কথা বললো না অয়ন রিমির সাথে। রিমির মনে ক্ষুন্ন অভিমানের উৎপত্তি ঘটলেও, তা নিরবে সয়ে নিলো। অভিমানে বিক্ষিপ্ত হলো হৃদয়। মনে রয়ে গেলো অতি গোপন অভিমান, যা হয়তো অয়নের মনের কুঠিরেও বিরাজমান।
[ গল্পের আসল লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]
_________
পর্দা থেকে আবছা আবছা আলো ঘরে টুকটুক করে প্রবেশ করছে অন্ধকার কক্ষে। পিনপিন নিরবতা বিরাজমান। বিশাল কক্ষের একটি কোণে হাটু গেড়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে মেঘ। বাবা- মা এবং ভাইয়ের এমন জঘন্য অপরাধ সম্পর্কে জানার পর থেকে ভিতরে ভিতরে মরণ জ্বালায় প্রতিনিয়ত পীড়িত হচ্ছে। রুহানা চৌধুরী অনেকবার এসে ডেকে গিয়েছেন, কিন্তু কোনরুপ প্রতিক্রিয়া করেনি মেঘ। মেঘের কিছুক্ষন একা থাকার প্রয়োজন বোধ করে নিরবে চলে গিয়েছেন রুহানা চৌধুরী। মেঘের ফোন বেজে উঠে হঠাৎ। পাশে থাকা টেবিলে হাত দিয়ে ফোনটি নিয়ে চোখের জলটুকু মুছে, ‘ আমান সাহেব’
নামটি দেখে কিছুক্ষনের জন্যে স্হীর হয়ে থাকে মেঘ। সময়ের কোনরুপ বিনষ্ট না করে, রিসিভ করে ফেলে ফোনটি। সাথে সাথে অপরপাশ থেকে উত্তেজিত কন্ঠে আমান প্রশ্ন করে,
‘ আমি সবকিছুই শুনেছি মেঘ, তুমি ঠিক আছো তো?
মানে তোমার কি খুব কষ্ট হচ্ছে?’
আমানের এমন প্রশ্নে অবাক হয়ে, পাল্টা প্রশ্ন করে মেঘ। শুধোয়,
‘ আপনি হঠাৎ আমার জন্যে এতো চিন্তিত কেন আমান সাহেব? আপনি তো আমাকে ভালোবাসেন না। ‘
আমান ব্যর্থ নিঃশ্বাস ফেলে। অল্প বয়সী মেয়ে কোন কিছু কি এতো গভীর ভাবে ভাবতে পারে? মেয়েটা অল্পদিনেই তার মনে আলদা একটি জায়গা তৈরি করে নিয়েছে, তা ভালোবাসা নয় কিন্তু অন্যরকম অনুভুতি। হয়তো ভালোলাগা, যা আস্তে আস্তে ভালোবাসাতে পরিনত হবে। তাইতো মেয়েটার জন্যে বিদেশ থেকেও এতোটা চিন্তিত আমান।
______________________
সানাকে জেল থেকে সম্মানে সায়েদ বের করিয়ে এনেছে। সানাকে একটি রেস্টুরেন্টে বসিয়ে রেখেছে সায়েদ। সানা বুঝতে পারছে না, তাকে বাসায় না যেতে দিয়ে কেন রেস্টুরেন্টে ডেকে পাঠালো। কিছুক্ষনের মাঝে সায়েদ ফিরে এলো, তবে একা নয়
সঙ্গে ছিলো সুমাইয়া এবং ফারহান। তাদের দেখে সানা দাঁড়িয়ে গেলো। ফারহান মাথা নিচু করে ছিলো অপরাধীর ন্যায়। সায়েদ তা দেখে সানাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘ মিঃ ফারহান প্রতিনিয়ত অপরাধীর ন্যায় দগ্ধে পিড়িত হচ্ছিলো, তাই নিয়ে এলাম। আপনার সাথে উনাদের দেখা করাটা খুব জরুরী ছিলো। ‘
সায়েদের বলার মাঝেই, ফারহান দ্রুততার সাথে নিচু গলায় বললো,
‘ আমাকে ক্ষমা করুন মিস সানা। আমি আপনাকে ভুল বুঝে, অনেক বড় ভুল করেছি। আমি সত্যি ক্ষমাপ্রার্থী। আমি জানি আমি যা করেছ, তার কোন ক্ষমা হয় না, কিন্তু একটা সুযোগ তো আমার প্রাপ্য। ‘
সুমাইয়াও সানার কাছে এসে, সানার হাত ধরে অনুনয়ের সুরে বলে,
‘ ফারহানকে ক্ষমা করে দাও বোন। আসলে ফারহান তখন নিজের মাঝে ছিলো না। তুমি না ক্ষমা করলে, আমরা কেউই শান্তি পাবো না। ‘
সুমাইয়ার কথার প্রেক্ষিতে সানা মুচকি হাসি শুধু। সায়েদের দিকে তাকিয়ে নিষ্প্রান কন্ঠে বলে,
‘ ক্ষমা? তা তো আমি অনেক আগেই করে ফেলেছি।
এই কয়েকদিন জেলে থেকে অনেক নতুন অভিজ্ঞতার সাথে পরিচয় হয়েছি, অনেক নতুন মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছি। পেয়েছি বেঁচে থাকার
এক নতুন প্রেরণা। তার জন্যে ফারহান স্যারের উপর আমি কৃতজ্ঞ। ‘
সানার কথা সায়েদ ঠিক বুঝলো না। ললাটে জুড়ে ভ্রু কুচকে চিন্তিত হয়ে তাকিয়ে রইলো। তা দেখে সানা আরেকপলক হাঁসলো। তাতে যেন থমকে গেলো সায়েদের হৃদস্পন্দন। মেয়েটার হাসি এতো সুন্দর কেন?
____________________
অয়ন রিমিকে তার ফার্ম হাউজে নিয়ে এসেছে। একটা কথাও বলেনি রিমির সাথে। রিমির খারাপ লাগলেও চুপ করে ছিলো। মানুষটার অবহেলা তার একটুও সহ্য হয় না। অয়ন নিজের ল্যাপটপ নিয়ে বসেছিলো কাজ করতে, কিন্তু কাজে তার মন বসছে না। বার বার শুধু মস্তিষ্কে নাড়া দিচ্ছে, সে তার মায়ের খু/নিদের শা/স্তি দিতে পারে নি। ব্যর্থ সে। ব্যর্থ সন্তান। কথাটি ভেবেই,পাশে থাকা ফলের ছু/রি টি নিয়ে নিজের হাতে আ/ঘাত করতে থাকে অয়ন। অয়নের মন ভালো করার জন্যে অয়নের পছন্দের ব্লাক কফি নিয়ে এসেছিলো রিমি, কিন্তু অয়নের কান্ডে সে থমকে যায়। দ্রুত এগিয়ে গিয়ে, অয়নের হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে অস্হির হয়ে বলে,
‘ কি করছেন ডক্টর এয়ারসি? কেন করছেন এইসব?
ফেলে দিন। এখুনি। কত র/ক্ত পরছে! ‘
অয়ন রিমির হাত ঝাঁটা দিয়ে, বজ্রকন্ঠে রিমিকে একপ্রকার শাষিয়ে বলে,
‘ ডোন্ট টাচ মি রিমিপরী! জাস্ট ডোন্ট। আমার শরীরের র/ক্তখনন তোমার চোখে পরছে, অথচ আমার ভিতরে যে প্রতিনিয়ত র/ক্তখনন হচ্ছে, তা তোমার চোখে পরছে না? বলো কেন করলে এমন? কেন? ‘
শেষের কথাটি জোড়ে চিৎকার করে বললো অয়ন। রিমি মেঝের দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলতে থাকে। অয়নের ভিতরটা রিমির নেত্রকোণে জমে থাকা অশ্রুকনা জ্বালিয়ে শেষ করে দিচ্ছে, তবুও ক্ষোভে অজানা অভিমানে রিমির দিকে এগিয়ে অন্যদিনের মতো নেত্রকোণের জলটুকু মুছিয়ে দিলো না। বললো না ‘ কেঁদো না পরী। তোমার সাইকোর কষ্ট হয়। ‘
অয়ন গটগট পায়ে সবকিছু ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে বেড়িয়ে গেলো। রিমি নির্দয় অয়নের কান্ড চুপটি করে দেখে নিলো শুধু। কান্নার বেগ সময়ের সাথে বেড়েই চললো তার, আজ তাদের মাঝে বিশাল এক দূরত্ব। তাইতো
আজ চোখের জলটুকুও মুছিয়ে দিতে এগিয়ে এলো না অয়ন। রিমির কি হলো কে জানে? হুট করে পায়ে বেশ ব্যাথা অনুভব করলো। খেয়াল করে দেখলো পা থেকে অনবরত রক্ত গড়াচ্ছে। অয়ন কাচের টেবিল ভেঙ্গে ফেলায়, তা থেকে বিশাল একটি কাচের টুকরো রিমির পায়ে ঢুকেছে, রিমির অজান্তেই। রিমি হাত নাড়িয়ে কাচটা উপড়ে ফেলতো পারলো না। ভিষণ যন্ত্রনা নিয়ে,দূর্বল শরীরে কাঁদতেই কাঁদতেই মাটিতে লুটিয়ে পরলো, কিন্তু তার সেই আর্তনাদ কি অয়ন অব্দি পৌঁছালো আদোও?
চলবে কী?