#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব-৫৮
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ভয়ংকর নিস্তব্ধতা চারপাশে। এলোমেলো হয়ে বিধস্ত অবস্হায় রাস্তার এক কোণে দাঁড়িয়ে মাথা খামচে অনবরত মদের বোতল থেকে মদ্যমান করছে অয়ন। বুকটা চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করছে বার বার। অয়নের মনে হচ্ছে,তার রিমিপরী ঠিক নেই। কোন ভয়ংকর এক বিপদের মাঝে রয়েছে। রিমির নেত্রকোণে লেপ্টে থাকা জলে বিনষ্ট হওয়া কাজল বার বার যেন ছু/রিঘাত করছে অয়নের হৃদয়কে। অয়ন নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে অবশেষে সিধান্ত নিলো, সে আর যাই হোক তার রিমিপরীর প্রতি অভিমান করে, নিজেকে কিংবা তার প্রেয়সীকে কষ্ট দিবে না। সে এখুনি ছুটে চলে যাবে রিমির দারপ্রান্তে। শক্ত করে হাতখানা ধরে মুছিয়ে দিবে রিমির ভিতরের কষ্টগুলো। অয়ন অপেক্ষা করলো না এক মুহুর্ত। দ্রুত পায়ে গাড়িতে বসে রওনা দিলো সেই ফার্ম হাউজের উদ্দেশ্যে। যেখানে অয়ন রিমিকে রেখে দিয়ে এসেছিলো।অয়নের একজন সার্ভেন্ট উপর থেকে রিমির কোনপ্রকার সারাশব্দ না পেয়ে দ্রুত গতিতে উপরে চলে এলো। উপরে এসে দেখতে পেলো রিমি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে একপ্রকার লুটিয়ে পরেছে এবং রিমির র/ক্তাক্ত পা থেকে অনাবরত র/ক্তপাত হচ্ছে। সার্ভেন্ট মুখে হাত দিয়ে চিৎকার করে উঠে। অয়ন সবেমাত্র গাড়ি পার্ক করে, সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছিলো, সার্ভেন্টের চিৎকার করে, একপ্রকার দৌড়ে নিজের কক্ষে গিয়ে একপ্রকার স্তব্ধ হয়ে যায়। নিজের প্রাণের থেকেও অধিক প্রিয় প্রিয়তমা স্ত্রীর এমন করুণ অবস্হা দেখে মাথা কাজ করে দেয় অয়নের। অয়ন দৌড়ে গিয়ে রিমির পাশে বসে, রিমির মাথা নিজের কোলে রেখে, রিমির গালে আলতো থাপ্প/ড় মেরে চিৎকার করে ডাকতে থাকে,
‘ রিমিপরী কি হয়েছো তোমার? নিজের সাইকোর উপর রাগ করে কি তুমি উঠছো না? একবার উঠে পরো আমার পরী। প্রমিজ কখনো এমন ভুল করবে না, তোমার সাইকো। একবার উঠে পরো আমার ভিষন কষ্ট হচ্ছে,তোমাকে দেখে। ‘
আফসোস অয়নের আকুল আর্যি রিমির কান অব্ধি পৌঁছালো না,সে অচেতন অবস্হায় শুয়ে আছে। অয়ন রিমির হাতের পার্লস চেক করলো, খুব ধীর গতিতে চলছে। অয়নের মাথা বিঘড়ে গেলো। মনে হানা দিলো প্রেয়সীকে হারানো ভয়। অয়ন রিমিকে কোলে নিয়ে ছুটে নীচে চলে যেতে লাগলো। অতঃপর রিমিকে গাড়িতে শুইয়ে, হসপিটালের দিকে রওনা হলো। সারারাস্তায় রিমিকে বার বার ডেকেছে অয়ন, সে জানে অচেতন অবস্হায় রিমি কোনপ্রকার উত্তর দিবে না, তবুও অবাধ্য মনে বার বার ডেকেছে অয়ন রিমিকে, কিন্তু রিমি নিষ্চুপ।
_______________
অয়ন রিমিকে তার হসপিটালে নিয়ে এসে শিফট করেছে একটি কেবিনে। ইশা এবং ডক্টরদের সাথে নিয়ে রিমির চিকিৎসা করছে। ইশার থেকে রিমির অবস্হা সম্পর্কে জেনে, ফারহান ,সুমাইয়া, মেঘ ছুটে এসেছে হসপিটালে। অয়ন কিছুক্ষনের মাঝেই বেড়িয়ে আসে। বাইরে বেড়িয়ে সবাইকে দেখে কোনরুপ প্রতিক্রিয়া না করে, নিজের কেবিনে চলে যায়। কিছুক্ষন পরে ইশাও বেড়িয়ে আসে। ইশাকে দেখে সুমাইয়া তড়িৎ গতিতে অস্হিরতা নিয়ে প্রশ্ন করে,
‘ কি হয়েছে আমার বোনের? ও ঠিক আছে তো? ‘
ইশা সুমাইয়াকে আশ্বাস দিয়ে বললো,
‘ তুমি চিন্তা করো না ভাবি। অতিরিক্ত র/ক্ত/পাত হওয়ার ফলে, রিমি দূর্বল হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলো শুধু, কিন্তু অয়ন তো পুরো হসপিটালের
ডক্টরদের ডেকে পাঠালো, শুধুমাত্র তার বউয়ের জ্ঞান ফিরানোর জন্যে, বুঝে দেখো আমার বন্ধু কতটা পাগল প্রেমিক! ‘
ইশার কথার বিপরীতে, সুমাইয়া ক্ষীন্ন হাসলোও তার মনের সংশয় রয়ে গেলো। রিমির এমন অবস্হা অয়নের পাগলামির জন্যেই হয়েছে, তা বুঝতে সুমাইয়া সময় নিলো না।
‘ রিমিপুর জ্ঞান কখন ফিরবে? ‘
মেঘের প্রশ্নে, ইশা বললেন,
‘ কিছুক্ষনের মাঝেই ফিরবে, চিন্তা করো না। ‘
মেঘ মাথা নাড়ায়। ফারহান কি মনে করে যেন, অয়নের কেবিনের দিকে যায়। অয়ন নিজের কেবিনে বসে তার উপরে থাকা সিলিং ফ্যানটার দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। নেত্রকোণ ছলছল। অপরাধীর ন্যায় মাথা নিচু রয়েছে তার। শুধু মনে হচ্ছে আজকে তার জন্যেই, তার পরী এতো কষ্ট পাচ্ছে। আজ যদি রিমির কিছু হতো, তাহলে কি হতো অয়নের? কথাটি ভেবেই পুনরায় ড্রাগসের প্যাকেট থেকে, ড্রাগস নিয়ে নেয়।
‘ ভালোবাসলে, ভালোবাসার মানুষকে হারানোর ভয় সর্বদা বিরাজমান থাকবে, নাহলে ভালোবাসলে কোথায় তাকে? তাইনা? ‘
ফারহান কথাটি বলেই সাদা ফকফকা দাঁতের মিষ্টি হাসি উপহার দিলো। ফারহানকে দেখে ভ্রু কুচকে,
অয়ন উঠে চলে যেতে নিলে, ফারহানের একটি কথা শুনে থেমে গেলো,
‘ পারলে এই ড্রাগসের নেশাকে পরিত্যাাগ কর, নাহলে জীবনের নেশাকে হারিয়ে ফেলবি। ‘
ফারহানের কথা অয়ন কি বুঝলো কে জানে? সে দ্রুত গতিতে রিমির কেবিনে ছুটে এলো। রিমির সবেমাত্র জ্ঞান ফিরেছিলো, অয়নকে দেখে দ্রুত মুখ সরিয়ে নিলো। স্ত্রী রুপী প্রেমিকার অভিমান বুঝতে সময় নিলো না অয়ন। নার্সদের হাতের ইশারায় বেড়িয়ে যেতে বললো। নার্সরাও বেড়িয়ে গেলো। অয়ন রিমির পাশে বসে রিমির অগোছালো চুলে সযত্নে হাত বুলিয়ে দিলো। রিমি অভিমানে অয়নের হাতখানা শক্ত করে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো, কিন্তু ব্যর্থ সে। অয়নের মতো বলিষ্ট দেহী অধিকারের যুবকের সাথে কি সে পেরে উঠবে। অয়ন জোড় খাটিয়ে, রিমির হাতের উপর নিজের হাত চেপে, রিমির ললাটে গভীর চুম্বন করলো।অতঃপর ভেজা গলায় আলতো সুরে বললো,
‘ তুমি বড্ড পাষাণ প্রেমিকা,বড্ড নির্দয় যার মনে মায়া নেই। আছে শুধু একরাশ অভিমান। সেই অভিমানে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে হৃদয়টা। বড্ড বেদনা দেয় ভালোবাসার দূরত্ব। ‘
রিমি ফুপিয়ে কেঁদে দিলো, অয়নের মতো নির্দয় প্রেমিকের আখিতেও আজ অশ্রু তার প্রেমিকার জন্যে।
‘ আপনি স্বাভাবিক হয়ে উঠুন এইবার ডক্টর এয়ারসি। আপনার এইসব পাগলামো, আপনার ড্রাগস আমাদের মাঝে শুধু দূরত্ব সৃষ্টি করছে। ‘
ড্রাগস ছেড়ে দেওয়ার কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে অয়ন উঠে দাঁড়ালো। রিমির কথার বিপরীতে সে কোনরুপ উত্তর দিতে পারলো না। কীভাবে পারবে সে? পারার তো কোনপ্রকার অবকাশ নেই। ড্রাগস সে ছাড়তে পারবে না, কোনমতেই নয়। ড্রাগস না নিলে, তার মাথায় অদ্ভুদ যন্ত্রণা হয়। কষ্ট হয় ভিষন, কিন্তু রিমির মতো সাধারণ মানুষের পক্ষে তো তা বুঝা সম্ভব নয়। তাই অয়ন কথা বাড়ালো না। বেড়িয়ে গেলো।
অয়নকে বেড়িয়ে যেতে দেখে, রিমি আরেকদফা কেঁদে উঠলো ঠোট চেপে। রিমির মাথায় হাত বুলিয়ে সুমাইয়া রিমির পাশে বসলো। এতোবছর পর নিজের বোনের স্পর্শ পেয়ে আলতো হাসলো রিমি শুধু। কোনপ্রকার কথা বলার শক্তিটুকু নেই তার মাঝে। সুমাইয়া সুদীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
‘ অয়নকে স্বাভাবিক করাটা খুব জরুরী বোন। আজকে যা হলো, তা ঠিক হলো না। ‘
‘ আমিও চাই, আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো উনিও স্বাভাবিক ভাবে বাঁচুক। উনি একজন ডক্টর হয়েও বুঝতে পারছেন না, উনার শরীর ড্রাগস প্রবেশ করছে,এতে উনি যেমন অস্বাভাবিক হয়ে পড়েছে, ঠিক তেমনি মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছেন। ‘
‘ একটা উপায়ই আছে শুধুমাত্র। ‘
‘ কিন্তু কি? ‘
রিমির পাল্টা প্রশ্নের জবাবে, ইশা বললো,
‘ মালেয়েশিয়াতে বিশ্বের বেস্ট একটি মাদক নিরাময়
কেন্দ্র আছে, অয়নকে সেখানেই পাঠাতে হবে। কয়েকটা বছর লাগবে কিন্তু অয়ন পুরোপুরি সু্স্হ হয়ে উঠবে। এখন অয়নকে রাজি করানোটাই হচ্ছে মূল সমস্যা। ‘
রিমি ইশার কথা শুনে চুপ হয়ে রইলো। রিমিকে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে। আপাতত সে আগের তুলনায় বেশ সুস্হ রয়েছে, তার মস্তিষ্কে শুধু ইশার কথাগুলো ঘুড়পাক খাচ্ছে। অয়ন যদি মালেশিয়া চলে যায়, তাহলে সে কীভাবে থাকবে,? কিন্তু অয়নের স্বাভাবিক জীবনের জন্যে, এখন দূরত্ব শ্রেয়।
চলবে…কী? 🙂
#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ৫৯
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
মনে পাথর নামক বস্তুটি রেখে,নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে অবশেষে একটা সিধান্ত গ্রহণ করলো রিমি।অয়নের ঘরে গিয়ে,খট করে দরজা বন্ধ করে দিলো। অয়ন বারান্দায় দাঁড়িয়ে আপনমনে ঠোটে সিগারেট চেপে, উপরের দিকে ধোঁয়া ছাড়ছিলো অয়ন। রিমিকে দেখে,ভ্রু কুচকে তাকায়। রিমি তার ওড়নায় আঙ্গুল পেঁচিয়ে বারংবার অয়নের দিকে ভিতু নয়নে আড়চোখে তাকাচ্ছে। অয়নকে কী করে মালেয়িশার কথার বলবে, রিমি বুঝতে পারছে না। শান্ত নিরব পরিবেশ, কিন্তু রিমির মনে বইছে উত্তাল ঝড়। গলা ফাটিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। অয়নকে নিজের থেকে দূরে রিমিও, যেতে দিতে চাইনা, কিন্তু অয়নের ভালোর জন্য হলেও, অয়নকে রাজি করাতে হবে। রিমির ভাবনার মাঝেই, ইশা বিনা অনুমতি কক্ষে প্রবেশ করে বলতে শুরু করে,
‘ রিমি তোমার কথামতো অয়নের প্লেনের টিকিট বুক করে ফেলেছি। কালকেই অয়নকে তাদের সাথে যেতে হবে। ‘
ইশা কথাটি বলেই অয়নকে দেখে বেশ বড়ভাবে চমকে যায়। ইশা হয়তো অয়নকে খেয়াল না করেই কথাগুলো বলে ফেলেছে, তা তার চোখমুখ দেখলেই স্পষ্ট বুঝা যায়। অয়ন তীক্ন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, রিমির পানে চেয়ে, অস্হির হয়ে বলে,
‘ কিসের বুকিং? আমার অনুমতি ব্যাতীত তুমি কি করেছো রিমিপরী? স্পষ্ট করে বলো। আন্সার মি পরী। ‘
অয়ন শেষের কথাটি চিৎকার করেই বললো। রিমি বুঝতে পারছে না,অয়নকে কি করে বলবে। রিমিকে দ্বিধায় পড়ে যেতে দেখে, ইশা নিজেই বললো,
‘ দেখ অয়ন, তুই আগেই রাগ করিস না। আগে একটু ভালো করে ভেবে, তারপর যা বলার বলবি। রিমি এবং আমরা সবাই তোর ভালো চাই। আমরা চাই, তুই আরো কয়েয়কজন মানুষের মতো স্বাভাবিক ভাবে যেন বাঁচতে পারিস। তাই কয়েকটা বছরের জন্যে তোকে মালেয়েশিয়া যেতে হবে। তুই তো নিজেও ডক্টর হয়ে বুঝতে পারছিস, এইসব ড্রাগসের জন্যে তুই ধীরে ধীরে মৃ/ত্যুর পথে চলে যাচ্ছিস। ‘
অয়ন ইশাকে হাতের ইশারা দিয়ে থামতে বলে। যে যা বুঝার বুঝতে পেরেছে, অয়ন রক্তচক্ষু নিয়ে রিমির দিকে এগিয়ে আসে। এসি চললেও, অনাবরত ঘেমে চলেছে রিমি। ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলছে রিমি। রিমিকে একপ্রকার এড়িয়ে, বারান্দায় গিয়ে শান্তভাবে বসে পড়ে অয়ন। অতঃপর পুনরায় সিগারেটে টান দিয়ে, পাশে থাকা ফলের ছু/ড়ি খানা দিকে তাকিয়ে, কঠোর বানী শুনিয়ে বলে,
‘ অয়ন চৌধুরীর লাইফে অন্য কেউ ডিসিশন নিবে এখন? ওয়াট দ্যা..যাই হোক। আমি কোথাও যাচ্ছি না,এন্ড দ্বিতীয়বার যেন, এ কথা না বলা হয়। ‘
‘ কিন্তু ডক্টর এয়ারসি। ‘
রিমি তার কথা বলার পূর্বেই, অয়ন তাকে থামিয়ে দিয়ে, গম্ভীর ভাবে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
‘ আমি আর একটাও বাজে কথাও শুনতে চাইনা। আমি কোথাও যাচ্ছি না। ‘
অয়ন শান্তভাবেই একপ্রকার শাসিয়ে কথাগুলো বলে থামলো। ইশা হতাশ হলো, সে জানতো অয়নের থেকে প্রতাক্ষানই পেতে হবে। তাই সে বেড়িয়ে গেলো। রিমি ইশার পথপানে তাকিয়ে, অয়নের দিকে
তাকালো। অয়ন হুট করে এগিয়ে, রিমির হাত ধরে, রিমিকে নিজের কোলে বসিয়ে, রিমির কাঁধে নিজের থুত্নি রেখে, রিমির হাতে নিজের হাত পুরে বলতে লাগলো,
‘ রিমিপরী তোমার সাইকোর থেকে, তুমি নিজেকে কখনোই দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে না। মাইন্ড ইট। ‘
রিমি বিপরীতে অয়নের বুকে নিজের পিঠ ঠেকিয়ে দিলো। অবুঝ অয়নের অভিমানী কথার বিপরীতে খুবই শান্তভাবে জবাব দিলো,
‘ অনেক সময় সুন্দর ভবিষ্যৎ এর জন্যে, কিছু বর্তমানকে নষ্ট করতে হয় ডক্টর এয়ারসি। আর দূরত্বের কথা বলছেন? দূরত্ব তো মনের উপর নির্ভর করে, শত চেষ্টা করেও কেউ আমার হৃদয় থেকে আপনার নাম মুছে ফেলতে পারবে, কখনোই না। আপনার রিমিপরী সবসময়, আপনার কাছেই থাকবে। ‘
রিমি কথা বলতে বলতে খেয়াল করে, অয়ন আখিজোড়া বন্ধ করে ঘুমের দেশে তলিয়ে গিয়েছে একপ্রকার, কথার মাঝেই। রিমি জানে সবকিছুই ড্রাগসের প্রভাব। রিমিকে দ্রুতই কঠোর ব্যবস্হা নিতে হবে, অয়নের ভালোর জন্যে। রিমি অয়নের বুকে মাথা ঠেকিয়ে নেত্রকোণা বন্ধ করে, ঘুমাইতে চাইলো না, কিন্তু তার ঘুম যেন আজ তার সাথে অভিমান করেছে, কিছুতেই ধরা দিচ্ছে না। রিমি চোখ বুঝেই, ফুপিয়ে কেঁদে ফেলে অজান্তেই। নিজের ভালোবাসার মানুষটার বুকে কালকে আদোও ঠাই হবে কিনা, তার নিশ্চয়তা নেই, তাই রিমি ঘুমালো না। অয়নের বুকে মাথা রেখেই, সারারাত প্রানভরে নির্দয় নিষ্ঠুর প্রেমিক পুরুষকে দেখে নিলো, যদিও রিমির মনে হয় শত শত যুগ পার হয়ে গেলেও, তার আখিজোড়া তৃপ্তি পাবে না।
________________
ভোরের আলো ধীরে ধীরে ফুটতে শুরু হলো। সকালের সূচনা হলো নতুন কোন আশার আলোর সাথে। হয়তো নতুন কোন সূচনার শুরু হতে যাচ্ছে। অয়ন ধীরে ধীরে আখিজোড়া খুলে দেখে, রিমি অয়নের বুকে মাথা রেখে নিষ্পলক অয়নকে দেখে যাচ্ছে। অয়নকে দেখে মিষ্টি হেসে বললো,
‘ শুপ্রভাত ডক্টর এয়ারসি। ‘
অয়ন অবাক হয়ে, মুখে হাত দিয়ে বলে,
‘ রিমিপরী তুমি ঘুমাও নি? ‘
রিমির দ্রুত মাথা নাড়িয়ে বললো, ‘ উহু! সামনে আপনার মতো সুর্দশন প্রেমিক থাকলে কি ঘুমাতে ইচ্ছে করে? তখন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে ইছে করে। ‘
প্রেয়সীর ঠাট্টা বুঝতে পেরে, অয়ন ভ্রু কুচকে বলে,
‘ তাহলে তো বেশ বড় অপরাধ করে ফেলেছো তুমি। ইউ নিড টু পানিস্টমেন্ট রাইট নাউ। আমার মতো অবলা ছেলেকে সারারাত চোখ দিয়ে গিলেছো, ইউ নিট টু পে ফর দিজ। ‘
কথাটি বলেই অয়ন অধরজোড়া রিমির দিকে এগিয়ে নিয়ে এলে, রিমি অয়ন বুকে আলতো ধাক্কা মেরে, উঠে যেতে নিলে, পিছন থেকে অয়ন রিমির হাত ধরে, রিমিকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে, রিমির উপর আধশোয়া অবস্হায় দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে,
‘ অয়ন রওযাক চৌধুরীর সাথে ফ্লাইটিং? উহু তোমাকে আমি এখন ছাড়ছি না। শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে। ‘
রিমি অয়নের বুকে ধাক্কা দিয়েও রেহাই পায়। গাল ফুলিয়ে, অবশেষে অয়নের কাছে হার মেনে নেয়। অয়ন মুচকি হেসে, রিমির ললাটে অধর ছুইয়ে দিয়ে বলে,
‘ পরী কিছুক্ষন নিরব হয়ে থাকো, আমিও তোমায় প্রানভরে দেখে, অন্তরের তৃপ্তি সাধন করি। ‘
‘ কতক্ষন তাকিয়ে থাকবেন? ‘
‘ গোটা জীবন তাকিয়ে পার করে দিবো। ‘
______________________
অয়ন কিছু ফাইল চেক করতে করতে বের হচ্ছিলো, ড্রইং রুমে হসপিটালের ইউনিফর্মে থাকা কিছু লোকদের দেখতে পেলো। রুহানা, ইশা, মেঘ, ফারহান এবং সুমাইয়াও ছিলো। অয়নের তাদের ইউনিফর্ম দেখে বুঝতে অসুবিধা হলো না,উনারা আসলে সাইকোথেরাপিস্ট।
অয়ন তাদের দেখেই প্রশ্ন করলো,
‘ উনারা এখানে কেন? ‘
উনাদের মধ্যে একজন উত্তর দিলো,
‘ ডক্টর এয়ারসি, আপনাকে আমার সাথে যেতে হবে। ‘
অয়ন সঙ্গে সঙ্গে ইশার দিকে একপ্রকার তেড়ে গিয়ে, চিৎকার করতে করতে বললো,
‘ তোকে আমি মানা করেছিলাম না? আমার অনুমতি ব্যাতিত কোন কাজ না করতেও, তাও তুই সেই একি কাজ করলি? গার্ডস! এখুনি উনাদের বের করো। ‘
‘ গার্ডসদের ডেকে লাভ নেই। ইশা আপুর কোন দোষ নেই, ডক্টর এয়ারসি। আমি উনাদের ডেকে পাঠিয়েছি ডক্টর এয়ারসি এবং আপনাকে উনাদের সাথেই যেতেই হবে। ‘
রিমি সিড়ি থেকে নামতে নামতে অয়নের প্রশ্নের বিপরীতে কড়া উত্তর দিলো। একজন অয়নের দিকে এগিয়ে আসতে নিলে, অয়ন সঙ্গে সঙ্গে পকেট থেকে ব/ন্দুক বের করে তার হাতে গু/লি করে দিলো এবং ব/ন্দুক হাতে নিয়েই রাগে বেড়িয়ে গেলো। সকলে হতভম্ব! রিমি বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,
‘ আমাকে এখুনি ডক্টর এয়ারসিকে আটকাতে হবে, এট এনি কস্ট। আমাকে উনাকে আটকাতেই হবে। ‘
রিমি এক মুহুর্তও অপেক্ষা করলো না অয়নের পিছন পিছন বেড়িয়ে গেলো। অয়ন গাড়ি নিয়ে সবেমাত্র বেড়িয়েছে, রিমিও অয়নের পিছনে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো। অয়ন দ্রুততার সাথে গাড়ি চালাচ্ছে, রাস্তায় কাউকে পরোয় করছে না। সবকিছু ক্রস করে সে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে, রিমিও তার গাড়ির স্প্রিড বাডিয়ে দিলো। অয়ন গাড়িটি একটি পুরোনো বাড়ির সামনে রাখে এবং গটগট করে বাড়ির ভিতরে ঢুকে যায়। রিমিও দ্রুত পায়ে অয়নের পিছন পিছন বাড়িতে ঢুকে পড়ে। রিমি প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে সদরদরজা বন্ধ হয়ে যায়। উচ্চস্বরে হেসে উঠে অয়ন। পিছন থেকে…….
চলবে কী?