#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ৬২ ( সময়ের পালাবদল)
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
রিমি পেটের ব্যাথায় জোড়ে চিৎকার করে উঠলো, রিমির চিৎকারে সকলে জোড় হয়ে গেলো মুহুর্তেই। রিমির পেট ধরে রেখে, ঠোট কামড়ে বসে আছে। আর্তনাদ করার শক্তিটুকুও পাচ্ছে না। সুমাইয়া এবং ফারহান দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসলো। সুমাইয়া রিমির মাথা নিজের কোলে নিয়ে, রিমির মাথায় আলতো ভাবে হাত বুলিয়ে কন্ঠে অস্হিরতার সুরে বলতে লাগলো,
‘ কি হয়েছে জান্নাত? তোর কি খুব খারাপ লাগছে? মানে পেট ব্যাথা করছে খুব? ‘
রিমি দাঁতে দাঁত চেপে মুখে দিয়ে ‘ আহ ‘ করে উঠে। সামান্যটুকু বাক্য তার মুখ থেকে নির্গত হচ্ছে না। রিমির করুণ অবস্হা দেখে রুহানা চৌধুরী জানান,
‘ আমার মনে হচ্ছে রিমির পেইন উঠেছে, হয়তো আজকেই ডেলিভারি হয়ে যাবে। তাই আমাদের দেরী করার উচিৎ নয়। ফারহান দাদুভাই এখুনি গাড়ি রেডি করো। ‘
ফারহান দ্রুত মাথা নাড়িয়ে, বাইরে চলে যায়। মেঘ এবং সুমাইয়া রিমিকে কোনরকম উঠিয়ে, রিমির হাত নিজেদের কাঁধে চাপিয়ে, আস্তেধীরে রিমিকে বাইরে নিয়ে যেতে থাকে। অন্যান্য মেয়ে সার্ভেন্টরাও রিমিকে ধরে। রিমিকে কোনরকম গাড়িতে বসিয়ে, মেঘ, সুমাইয়া এবং ফারহান গাড়িতে উঠে বসে। উদ্দেশ্য হসপিটাল। অয়নের হসপিটালেই রিমিকে নিয়ে আসা হয়েছে। রিমির অবস্হা বেগতিক দেখে ডাক্তারগণ রিমিকে জরুরীভাবে কেবিনে ভর্তি করায়। রিমি কেবিনে ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। নার্স এবং কিছু মহিলা ডক্টররা ভিতরে গিয়ে, চেষ্টা করছে রিমিকে নরমালভাবে ডেলিভারি করানোর জন্যে। রিমি বিছানার চাদর খামচে ধরে ব্যাথায় চিৎকার করে যাচ্ছে। ডক্টর এসে, রিমির হাত শক্ত করে ধরে, আশ্বাসের সুরে বললেন,
‘ মিসেস চৌধুরী আপনি ট্রাই করুন, আপনি পারবেন। প্রেশার, প্লিয ট্রাই! ‘
রিমি জোড়ে চিৎকার করে, কাঁদতে কাঁদতে বলে,
‘ আমি পারছি না। একদম পারছি না আমি। ডক্টর এয়ারসি। ডক্টর এয়ারসি….. ‘
রিমি আর কিছু বলতে পারেনা, পেটে হাত দিয়ে ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলে। বার বার শুধু বিড়বিড় করে ‘অয়নের ‘ নাম বলে যাচ্ছে। রিমির সমগ্র মুখস্রী ঘেমে একাকার হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে। ডক্টররাও বুঝতে পারলেন, এই মুহুর্তে অয়নের থাকাটা কতটা জরুরী। একজন মেয়ের এমন কঠিন পরিস্হিতিতে একজন স্বামীই পারে, তার স্ত্রীর মাথায় ভরসার হাত হয়ে, তার স্ত্রীকে সাহস শক্তি জোগাতে, কিন্তু আফসোস রিমি সেই ভরসাটুকু এই মুহুর্তে চাইলেও পাইবে না। রিমি একপ্রকার হাল ছেড়ে দিয়ে, পিঠ ঠেকিয়ে শুয়ে রয়েছে। একজন ডক্টর হতাশ হয়ে বাইরে গিয়ে, জানালো সবাইকে। রিমি কিছুতেই ভরসা পাচ্ছে না নরমাল ডেলিভারিতে। তাই এমন অবস্হাতে তাদের সিজার করেই ডেলিভারি করতে হবে,নাহলে বেবীর ক্ষতি হয়ে যেতে পারে, কিন্তু সিজার করলে রিমির জীবনে ঝুঁকি রয়েছে। রিমির শরীর যেমন দূর্বল তেমন শরীরে রক্তশূন্যতা। এমন অবস্হায় ডেলিভারি করা মানে, রিমির জীবনের বিরাট এক ঝুঁকি। ডক্টরের কথা শুনে সকলে চিন্তিত হয়ে পড়লো।সুমাইয়ার কাছে এসে মেঘ বললো,
‘ ভাবি আমার মনে হয় আমাদের ইশা আপুর সাথে যোগাযোগ করা উচিৎ। যদি কোনভাবে রিমিপুর সাথে ভাইয়ার কথা বলানো যায়। ‘
‘ কিন্তু অয়নের তো এখন চিকিৎসা চলছে, অয়ন কি কথা বলতে পারবে আদোও? ‘
‘ আমাদের একবার চেস্টা তো করে দেখতেই হবে। ‘
মেঘের কথায় মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে,সুমাইয়া ইশাকে ফোন করে। ইশা নিজের রুমে বসে কফি খাচ্ছিলো। হুট করে ফোন বেজে উঠায়, ইশা উঠে দাঁড়িয়ে ফোনটা রিসিভ করে। সঙ্গে সঙ্গে অপাশ থেকে উত্তেজিত কন্ঠে সুমাইয়া বলে,
‘ ইশা কোনভাবে কি অয়নের সাথে রিমির কথা বলানো যাবে? আসলে রিমির পেইন উঠেছে। এই অবস্হায় রিমির সাথে অয়নের কথা বলাটা জরুরী। ‘
রিমির পেইন উঠেছে শুনে দ্রুত গতিতে উঠে পড়ে ইশা। অতঃপর চিন্তিত গলায় বলে,
‘ অয়নের তো চিকিৎসা চলছে, কারো সাথেই দেখা করতে দেয় না। আমি নিজেই তো ৮ মাস ধরে অয়নের সাথে দেখা করতে পারছি না। ‘
সুমাইয়া পুনরায় অনুরোধ করলো,
‘ কিছু কি করা যায় না? রিমির জীবনের ঝু্ঁকি রয়েছে। ‘
ইশা কিছুক্ষন ভেবে, বললো, ‘ আচ্ছা আমি দেখছি।
ইশা দাঁড়ালো দ্রুত গতিতে বেড়িয়ে গেলো। হসপিটালে গিয়ে অথোরিটির কাছ থেকে স্পেশাল পারমিশন নিয়ে, অয়নের সাথে দেখা করতে গেলো। অয়ন নিজের কেবিনে বসে, পাশের কিছু পেশেন্টদের সাথে গল্প করছিলো, আগের থেকে কিছুটা হলেও স্বাভাবিক হয়ে উঠছে অয়ন, যদিও ড্রাগস না পেলে, এখনো উত্তেজিত হয়ে পড়ে। ইশা অয়নকে গিয়ে সব জানায়। অয়ন সবকিছু শুনেই সবকিছু ছেড়ে, সুমাইয়াকে ফোন করে।
______________
(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমু)
রিমি জোড়ে জোড়ে চিৎকার করে যাচ্ছে, সুমাইয়া অয়নের ফোন পেয়ে দ্রুত কেবিনে প্রবেশ করে। ফোনের অপাশ থেকে রিমির আর্তনাদ শুনে, বুকে হাত দেয় অয়ন। বুকটা জ্ব/লে পু/ড়ে যাচ্ছে। নিজেকে সবথেকে অসহায় স্বামী মনে হচ্ছে, যে নিজের প্রিয়তমার এতোটা করুণ এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি মুহুর্তে সে তার রিমিপরীর পাশে নেই। সুমাইয়া গিয়ে, রিমির পাশে বসে, রিমির কানের কাছে গিয়ে ধরে গিয়ে বললো,
‘ কথা বল, অয়ন ফোন করেছে। ‘
অয়নের নাম শুনে রিমি ব্যাথার মধ্যেও, আস্তে করে ধীর কন্ঠে বলে,
‘ হ্যালো! ডক্টর এয়ারসি। ‘
কথাটি বলেই রিমি ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। অয়ন ভেজা গলায় বলে,
‘ ডোন্ট ক্রাই মাই লেডি! স্টে স্ট্রং। আমাদের লিটেল চ্যাম্পের জন্যে তোমাকে স্ট্রং থাকতেই হবে। ওর দায়িত্ব কিন্তু আমি তোমার উপর রেখে গিয়েছিলাম। প্রেশার! ইউ কেন ডু দিজ। ‘
অয়নের কথায় ভরসা পেয়ে, বিছানার চাঁদর শক্ত করে চেপে ধরলো রিমি। আলতো সুরে বললো,
‘ আমি পারবো ডক্টর এয়ারসি। আমি পারবো। ‘
চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়লো রিমির হাত থেকে ফোনটা বিছানায় পড়ে গেলো। সুমাইয়া ফোনটি হাতে নিয়ে বেড়িয়ে এলো। কিছুক্ষনের মাঝেই বাচ্চার কান্নার আওয়াজ ফোনের অপাশ থেকে শুনতে পেলো অয়ন। সঙ্গে সঙ্গে নেত্রকোণে তার ভীর করলো গভীর জল। উহু দুঃখের না পৃথিবীর শ্রেষ্টতম এক সুখের কান্না। আজ যে অয়ন বাবা হয়েছে। বাচ্চার কান্নার আওয়াজে অয়ন মাটিতে ধপ করে বসে পড়ে। সুমাইয়া খুশি হয়ে বলে,
‘ অয়ন তোমার ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে। ‘
অয়ন চোখের জল মুছে ফেলে দ্রুত। অতঃপর ঠোটে আলতো হাসি ফুটিয়ে বলে,
‘ আলহামদুলিল্লাহ! ‘ অতঃপর ইশার কাছে গিয়ে, ইশার হাত ধরে চিৎকার করে বললো,
‘ ইশা শুনতে পেরেছিস? আমি বাবা হয়েছি। আমার এবং রিমিপরীর কোল আলো করে ছোট্ট একটা প্রিন্সেস এসেছে। ইয়াহু! ‘
অয়নের কান্ডে ইশা হেসে ফেলে।অয়ন গিয়ে হসপিটালের কাছে সকলের কাছে বলতে থাকে তার বাবা হওয়ার আনন্দের কথা,যদিও তার বুকে রয়েছে অজস্র ব্যাথা। নিজের মেয়েটিকে স্পর্শ করতে পারছে না। অনুভব করতে পারছে না। প্রিয়তমার স্ত্রীর ললাটে চুমু একেঁ বলতে পারছে না,
‘ প্রেয়সী ভয় পেয়ো না, আমি আছি তো পাশে। ‘
কথাটি ভেবেই তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে সে। সে এখন চাইছে তাড়াতাড়ি সুস্হ হয়ে নিজের এবং প্রিয়তমা স্ত্রীর কাছে পৌঁছে যেতে।
_____________
অপরদিকে রিমির পাশে তার ছোট্ট মেয়েটাকে শুয়ানো হয়। রিমি তার মেয়েটাকে নিজের বক্ষে মিশিয়ে, অসংখ্য চুমু খায়। কেঁদে উঠে ফুপিয়ে। এই মেয়ে যে তার ডক্টর এয়ারসি এবং তার অংশ।
_________________________
সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সময়ের পালাবদলে ৫বছর কেটে গিয়েছে ইতিমধ্যে। রিমি একজন সফল ডক্টর হয়েছে। অয়নের হসপিটালের সমস্ত ভার নিজ কাঁধে নিয়েছে। সময়ের কাছে অনেককিছুই পরিবর্তন হয়েছে, রিমি এখনো অয়নের পথপানে চেয়ে থাকে। সেদিনের পর থেকে আর কথা হয়নি অয়নের সাথে। অয়নের চিকিৎসা এখনো চলছে। ইশার থেকেই টুকটাক খবর পায় সে। রিমি প্রতিটা রাতে উপন্যাসের লিখতে গিয়ে ভাবে,কবে তার উপন্যাসের সমাপ্তি ঘটবে। রিমি তার কেবিনে বসে রুগীদের চেকাপ করছিলো। কিছুক্ষনের মাঝেই, তার নাম্বারে ফোন আসে। রিমি ফোন পেয়ে, তা রিসিভ করে। ফোনের অপাশ থেকে, একজন গার্ড বলে,
‘ ম্যাম! অয়রি ম্যাম হুট করে বায়না ধরেছে, যেন আপনি এসে তাকে স্কুল থেকে নিয়ে যান। ‘
রিমি মুচকি হাসে। মেয়ের সব বায়না তো শুধু কার কাছেই। আজ অয়রি প্রথমবার স্কুলে গিয়েছে। যদিও কাজের চাপের জন্যে রিমি অয়রিকে স্কুলে দিয়ে আসতে পারেনি, কিন্তু সে কথা দিয়েছিলো স্কুল থেকে অয়রিকে নিয়ে আসবে।
______________
রিমি হসপিটাক থেকে বেড়িয়ে, গাড়ির ভিতরে গিয়ে
অয়রির স্কুলে রওনা দেয়। অয়রির কাছে স্কুলে এসে পৌঁছাতেই, অয়রি স্কুল ড্রেসে ছোট্ট ছোট্ট পায়ে নিজের মাকে দেখে দ্রুত দৌড়ে জড়িয়ে ধরে। রিমিও তার মেয়েকে শক্ত করে ধরে চুমু খায় কপালে। অয়রি খুশি হয়ে বলে,
‘ আমি জানতাম মাম্মা তুমি আসবে। ‘
রিমি মুচকি হেসে বলে, ‘ আমার অরু আবদার করেছে, আমি না শুনে কীভাবে থাকবো বলো? ‘
অয়রিও হেসে পরক্ষনে মন খারাপ করে ফেলে। মন খারাপের সুরে বলে,
‘ জানো মাম্মাম? এখানে অনেকের বাবাও এসেছে আজকে, কিন্তু আমার পাপা আসেনি। আমার পাপা কি কখনো আমাকে নিতে আসবে না মাম্মাম? ‘
নিজের মেয়ের অবুজ প্রশ্নে রিমি কি জবাব দিবে বুঝতে পারছে না। অয়রির মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে, রিমি স্নেহের সহিত বলে,
‘ আসবে মা!একদিন তোমারই পাপা এসে তোমাকে স্কুল থেকে রিসিভ করবে। সেদিন আমরা তিনজন হাতে হাত ধরে একসঙ্গে হেঁটে বাড়িতে যাবো। ‘
‘ কিন্তু কবে মাম্মাম? ‘
অয়রির প্রশ্নে রিমি চুপ হয়ে থাকে। তার মতো তার ছোট্ট মেয়েটিও যে অয়নের অপেক্ষায় পথ অপেক্ষার প্রহর গুনে চলেছে।
অপরদিকে, কিছুক্ষনের মাঝেই এয়ারপোর্টে একটি পাইব্রেট প্লেন ল্যান্ড করে। সেখান থেকে কালো পোষাক পরিহিত ফরমাল ড্রেসাপে, একজন সুদর্শন পুরুষ বেড়িয়ে আসে। কালো পোষাক পরিহিত দেহরক্ষীগন তাকে দেখেই, সঙ্গে সঙ্গে বন্দুক নামিয়ে, মাথা ঝুকিয়ে রাখে। ইশাও যুবকটির পিছনে বেড়িয়ে আসে। অতঃপর যুবকটির কাঁধে চাপড় মেরে বললো,
‘ অবশেষে প্রায় পাঁচ বছর পর আমরা আমাদের দেশে ফিরে আসলাম। ‘
অয়ন অধরের কোণে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বললো,
‘ লেট’স গো। ‘
অয়ন এয়ারপোর্ট থেকে বেড়োতেই, সকলেই ডক্টর এয়ারসিকে দেখে একপ্রকার চমকে যায়। মেয়েরা এবং বাকী স্টাফরা বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকে। আগের থেকেও দ্বিগুন সৌন্দর্যের অধিকারী হয়েছে অয়ন। অয়ন সোজা গাড়িতে উঠে বসে। ইশাও সঙ্গে সঙ্গে বসে পড়ে। অয়ন গাড়িতে বসেই, সর্বপ্রথমে নিজের ল্যাপ্টপ বের করে, তা চালু করে দেখতে পায় রিমি এবং অয়রির কার্যক্রম। অয়ন সর্বধিক থেকে নিজের লোকেদের দিয়ে রিমি এবং অয়রির উপর নজর রেখে চলেছে, দেশে ল্যান্ড করার পর থেকে। ইশা উৎসাহের সহিত বলে,
‘ আচ্ছা অয়ন আমরা তো কাউকে বলিনি, তুই ফিরেছিস। আমরা যখন চৌধুরী বাড়িতে গিয়ে সবাইকে চমকে দিবো, তখন সবার রিয়েকশনটা কেমন হবে? আই মিন! বিশেষ করে অরু এবং রিমির অবস্হাটা। ‘
‘ নো ‘
অয়নের না শুনে ভ্রু কুচকে তাকায় ইশা। অয়ন তড়িৎ গতিতে বলে,
‘ গার্ডস! এখুনি গাড়িটা আমার লিটেল প্রিন্সেসের স্কুলের সামনে নিয়ে চলো। ‘
অয়নের আদেশে গাড়ি অয়রির স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। রিমি অয়রিকে গাড়িতে বসিয়ে, অয়রির জন্যে পাশের দোকান থেকে দুইটি চকলেট নিলো। রিমিকে দেখে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা কিছু বখাটে ছেলে লালসার নজরে বাজে ভাবে তাকালো, যদিও রিমি তাদের দেখনি। রিমি গাড়িতে উঠতেই, সঙ্গে সঙ্গে পিছন থেকে একটি ছু/রি এসে তাদের হাত বরবর লেগে যায়।
(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
চলবে কি?
#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ৬৩
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ললাটে জুড়ে কোন পরিচিত পুরুষের অধরের স্পর্শ পেতেই,পিটপিট করে আখিজোড়া খুলে তাকায় রিমি, কিন্তু কেউ নেই। রিমি ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলে। রিমি অনুভব করতে পারছে কেউ রয়েছে তার কক্ষে। খুব কাছের কেউ সে, কিন্তু তাকে রিমি দেখতে পারছে না। রিমি বিছানা ছেড়ে দ্রুত জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো,কিন্তু বাইরেও কেউ নেই। রিমি হতাশ হয়ে বিছানায় বসে পড়লো। পাশে অয়রি গভীট নিদ্রায় রয়েছে। রিমির মনে হচ্ছে এক মুহুর্তের জন্যে হলেও অয়ন তার কাছে এসেছিলো, কিন্তু অয়ন কী করে ফিরবে? সে তো সদূর বিদেশে। অয়নের কথা মনে পড়তেই, পরক্ষনেই রিমির নেত্রকোণে অশ্রু জমাট বাঁধলো। বক্ষ হলো ক্ষ/ত/বি/ক্ষ/ত। কি বিচ্ছিরি এক পরিস্হিতি। চাইলেও রিমি কাঁদতে পারছে না। অয়নকে ছাড়া রিমি দিনশেষে একা! সম্পূূর্ন একা। রিমিকে দূর থেকে কেউ পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছে, যা রিমিও উপলব্ধি করতে পারছে কিন্তু সে তো জানে অয়ন এখানে থাকতে পারে না এখন। যাকে বলে অসম্ভব ব্যাপার!
রিমির ওড়না ধরে কেউ টান দিতেই, রিমি পাশ ফিরে ঘুড়ে তাকায়। অয়রি হাত দিয়ে চোখ কচলিয়ে,প্রশ্ন করে,
‘ মাম্মাম! তুমি এখনো ঘুমাও নি? ‘
রিমি অয়রির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, ‘ না, মাম্মাম! আসলে ঘুম আসছিলো না, তুমি ঘুমিয়ে পরো।সকালে তোমার স্কুল আছে তো। ‘
অয়রি তার ছোট্ট ছোট্ট চুলে বাঁধা ঝুটিজোড়া নাড়িয়ে বলে,
‘ উহু! তোমাকেও ঘুমাতে হবে। তোমারও তো কালকে চেম্বার আছে, আর মাম্মাম তুমিই তো বলেছিলে, গুড গার্লরা সবসময় আর্লি ঘুমিয়ে পরে। আমার মাম্মামও গুড গার্ল তাই আমার মাম্মাম ও তাড়াতাড়ি ঘুমাবে। ‘
রিমি গালে হাত দিয়ে হেসে বলে, আমার পাঁকা বুড়ি মা যখন বলেছে তখন তো আমার তার হুকুম মানতেই হবে,কিন্তু আমার যে ঘুম আসছে না। তার বেলায় কি করবো? ‘
অয়ন গালে তার ছোট্ট ছোট্ট আঙ্গুল দিয়ে নিজের গালে কিছুক্ষন ভাবলো, অতঃপর রিমিকে নিজের কোলে মাথা রাখতে বললো। রিমি কিছুটা অবাক হলেও, নিজের মেয়ের অনুরোধে বিনা বাক্যে ছোট্ট অয়রির কোলে মাথা রাখলো। অয়ন তার ছোট্ট ছোট্ট ফরসা হাতজোড়া দিয়ে, রিমির মাথায় হাত বুলিয়ে ছন্দের সুরে বলতে থাকে,
‘ আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা, যাদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা, আমার মাম্মাম যাতে ঘুমিয়ে যায়।’
অয়রির ছন্দ শুনে রিমি হেসে ফেলে, মেয়েটা তাকে এমন ভাবে ঘুম পাড়াচ্ছে, যেন সে মেয়ে এবং অয়রি তার মা। অয়রিও তার ফোকলা দাঁতে হেসে বলে,
‘ মাম্মাম! দেখবে এখন তোমার ঘুম চলে আসবে। ‘
রিমি তার মেয়ের হাসির দিকে মুগ্ধ পানে তাকিয়ে থাকে। অয়রির হাসিটি একদম অয়নের মতো মনমুগ্ধকর। অয়ন যেমন ভাবে হাসতো, ঠিক তেমনিই অয়রি হাসে। আখিজোড়া রিমির তো ডাগর ডাগর গভীর। যে কেউ দেখলেই সহজেই মায়ায় পরে যাবে। এতোটাই নিষ্পাপ দেখতে অয়রি। মা এবং মেয়ের সুন্দর মুহুর্তটি ফ্রেমবন্দী করে নিলো অয়ন। অতঃপর বারান্দা দিয়েই, পাইপ বেয়ে দ্রুত নীচে নেমে, পড়নে থাকা কালো ব্লেজার টা হাতে নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে পরলো। রাতের ঘোর অন্ধকারে সকলের অগোচরে নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীকে এবং নিজের মেয়েটাকে দেখার লোভ সামলাতে পারলো না অয়ন। তাইতো ছুটে এসেছে। ইশা গাড়িতে বসে আপনমনে ফোন গুতাচ্ছিলো। অয়ন ইশার পাশেই বললো,
‘ ট্রাস্ট মি ইশা! রিমিপরীর মায়াবী মুখশ্রীর মতোই আমার লিটেল প্রিন্সেস হয়েছে। আমার এক মুহুর্তের জন্যে মনে হচ্ছিলো, দুইটা পরী যেন আমার কক্ষে সর্বস্হান জুড়ে বসবাস করছে। ‘
ইশা অয়নকে দেখেই বিরক্তির সহিত বললো,
‘ আচ্ছা অয়ন আমরা কেন লুকিয়ে বেড়াচ্ছি? বাড়ির সবাই, তোর বউ, মেয়ে সবাই তোর জন্যে কত বছর ধরে অপেক্ষা করছে, কিন্তু তুই সেই সুস্হ হয়ে দেশে ফিরার পরেও লুকিয়ে বেড়াচ্ছিস। হুয়াই? ‘
শেষের কথাটি ক্ষোভ নিয়ে জানালার দিকে তাকালো ইশা। অয়ন তা দেখে ক্ষীন্ন হাসলো। ইশার প্রশ্নের বিপরীতে, সিটে হেলান দিয়ে আয়েশের সাথে বসে বললো,
‘ কালকের দিনটির অপেক্ষা শুধু, তুই সব প্রশ্নের উত্তর কালকেই পেয়ে যাবি। ‘
ইশা হতাশ হলো। অয়ন পরক্ষনে প্রশ্ন করলো,
‘ ছেলেগুলোর কি অবস্হা এখন? ‘
ইশা কিছুটা রাগান্বিত সুরে বললো,
‘ রিমির দিকে শুধু তাকিয়েছিলো বলে, ওদের চোখের মনির মধ্যেই তুই ছু/রি মেরে দিলে, তোর অভ্যাস আর ঠিক হলো না তাইনা? ‘
অয়ন অধরের কোণে ভয়ংকর ভাবে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বললো, ‘ কিছু কিছু ভয়ংকর অভ্যাস চাইলেও বদলানো যায়, তা থেকে যায় অত্যান্তকাল। আমার রিমিপরীর দিকে চোখ তুলে তাকালেই, তা আমি উপড়ে দিবো। লেট’স গো নাও। ‘
অয়ন কথাটি বলেই গাড়ির ইঞ্জিন চালু করে, গাড়ি ঘুড়িয়ে নিলো।
_________________
সুমাইয়া মুখ ভার করে, শপিং মলের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ফারহান অসহায় মুখ করে সুমাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। সুমাইয়া ভেংচি কেটে ঘুড়ে গেলো। ফারহান হতাশার সুরে বললো,
‘ সুমু! ও সুমু! তুমি কি এখনো রাগ করে থাকবে আমার উপর? ‘
সুমাইয়া উত্তর দিলো না। মুখ ফুলিয়েই রাখলো। ফারহান সুমাইয়ার গালে হাত রেখে, সুমাইয়ার গাল টানতে টানতে বললো,
‘ আমার গুলুমুলু বউটাকে রাগলে হেব্বি লাগে। ‘
সুমাইয়া সঙ্গে সঙ্গে ফারহানের হাত ঝাটা মেরে সরিয়ে দিলো। ফারহান পড়েছে মহাবিপদে। সুমাইয়া এখন ৭মাসের প্রেগনেন্ট। সুমাইয়ার মন আজকাল খারাপ থাকে, মুড সুইং এর জন্যে।তাই ফারহান ঠিক করেছে, সুমাইয়াকে শপিং এ নিয়ে এসে, সুমাইয়ার মন ভালো করে দিবে, কিন্তু শপিং এ এসে সুমাইয়া একটা জামা পছন্দ হয়, কিন্তু গর্ভবতীর কারণে সুমাইয়ার শরীরটা কিছুটা ফুলে যাওয়ায়, ফারহান সুমাইয়াকে ‘মোটু’ বলে ক্ষেপায়। যার ফল স্বরুপ সুমাইয়া রাগ করে ফারহানের সাথে কথা বলছে না।
ফারহানদের ঝগড়ার মাঝেই, দূর থেকে কেউ তাদের হাক ছেড়ে ডাকে। ফারহান এবং সুমাইয়া দুজনেই পিছনে ঘুড়ে দেখতে পায়, সানা এবং সায়েদ। সানা এবং সায়েদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক একটি সময় ভালোবাসায় রুপান্তরিত হয়, যার কারণে সায়েদ এবং সানার ভালোবাসার প্রনয় ঘটে ৫ বছর আগে। তাছাড়াও তাদের ৪বছরের ফুটফুটে ছেলে সন্তানও রয়েছে। সানা এবং সায়েদ এগিয়ে আসলোদুজনকে একসাথে দেখে, ফারহান প্রশ্ন করলো,
‘ সানা তুমি এতোদিন পর ঢাকায়? আমি তো শুনেছিলাম, বিয়ের পর তুমি সায়েদের সাথে চট্টগ্রাম চলে গিয়েছিলে। ‘
সানা মুচকি হেসে বলে, ‘ হ্যা স্যার। সায়েদের বদলি হওয়ায় আমরা চট্রগ্রাম চলে গিয়েছিলাম, কিন্তু সায়েদের পুনরায় আবার ঢাকায় শিপটিং হয়েছে, তাই আমরা ঢাকায় এসেছি। এসেছিলাম শপিং করতে, কিন্তু আপনাদের দেখে ভাবলাম আপনাদের সাথে দেখা করা যায়। ‘
সুমাইয়াও পরক্ষনে মুচকি হেসে প্রশ্ন দিলো,
‘ সানা শুনেছিলাম তোমাদের ছেলে হয়েছে, সে কোথায়? ‘
সায়েদ মাথা চুলিয়ে উত্তর দিলো, ‘ আমাদের ছেলে আবার ভারি দুষ্টু। তাকে নিয়ে কি আর শপিং করা যায় ঠিকমতো, করা যায়। তার মধ্যে সামনে ইদ। ‘
‘ যাক গে সবশেষে তোমরা যে সুখী আছো, এইটাই অনেক। ‘
সুমাইয়ার কথায়, সানা মুচকি হাসে। হ্যা সে সত্যি ভাগ্যবান সায়েদের মতো স্বামী পেয়ে। সায়েদের জন্যেই নিজের ভয়ংকর অতীতকে ভুলতে পেরেছিলো সে।
_________________
অপরদিকে রিমির কাজের মাঝে, নিজের গাঁয়ে থাকা এপ্রোন খানা খুলে, জানালার কাছে দাঁড়ায়। বিষন্ন লাগছে সবকিছু। অয়নের ছবিখানা বের করে বক্ষে জড়িয়ে নেয়। আকাশে ঘন কালো মেঘ জমতে শুরু করলো। কিছুক্ষনের মাঝেই ধরনীতে বৃষ্টিপাত শুরু হলো। রিমি ছুইয়ে দেখলো সেই পানি। তার নেত্রকোণে ভীর করে জল। রিমি ভেজা গলায় গাইতে থাকে,
ওগো বৃষ্টি আমার চোখের পাতা ছুঁয়ো না
ওগো বৃষ্টি আমার চোখের পাতা ছুঁয়ো না
আমার এতো সাধের কান্নার দাগ ধুয়ো না
সে যেন এসে দেখে
পথ চেয়ে তার কেমন করে কেঁদেছি
ওগো বৃষ্টি আমার চোখের পাতা ছুঁয়ো না
ওগো বৃষ্টি আমার চোখের পাতা ছুঁয়ো না
রিমি গানটি গাইতে গাইতে কেঁদে দেয়। হুট করে একজন দেহরক্ষী এসে জানায়, অয়রিকে পাওয়া যাচ্ছে না। অয়রী নিরর্দেশ!
চলবে কি?