#তুমিময় বসন্ত
১৯.
#writer_Mousumi_Akter
আমার সামনে বরাবর শান্তশিষ্ট মেজাজে থাকা ছেলেটা হঠাত ই বদলে গেলো।আমার মুখের কথা বের হতে হতে তার মুখের রং বদলে গেলো।আমি ঠিক বুঝতেছি না সে কি করতে চাইছে।ঘাড়ের শিরা ভেষে উঠেছে তার।তার রেগে যাওয়া দেখে নিজেই ভয় পেয়ে গেলাম।ভীত চোখে আমি আয়াসের দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বললাম,
‘এত রাতে কোথায় যাবো আমরা।’
আয়াস দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
‘না গেলে আমার ঘুম হবেনা মুগ্ধতা।প্লিজ চলো আমার সাথে।’
‘যাবো বাট জায়গার নাম নেই।’
আমার মুখের কথা মুখে থাকতেই আয়াস আমায় পাজা কোলে তুলেই নিচে নামলো।আমি যেনো হঠাত কোনো হোচট খেলাম।অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছে গেলাম আমি।তার কোলে উঠে তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম আমি।তার চোখে মুখে ভীষণ রাগ।চোখ সামনে রেখে সোজা হাঁটছে।পড়ে যাবার ভয়ে গলা জড়িয়ে ধরে রাখলাম শক্তভাবে।মানুষ টা এই আমায় চুমু খাচ্ছে এই আমায় কোলে তুলছে সব কিছু হুট হাট করেই করছে।সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামার পরে আমাকে নামিয়ে দিয়ে অয়ন কে ফোন দিয়ে বললো দরজা লাগিয়ে দিতে।
আয়াস কে বললাম,
‘ কি হলো আপনার কি করছেন কি?এত রেগেই বা গেলেন কেনো?’
‘দেখো মুগ্ধতা আজ আমি বুঝতে পারছি মানুষের উপকার করতে নেই।ওই মহিলার উপকার যদি অয়ন না করতো তাহলে কি তোমাকে এত খারাপ কথা শোনাতে পারতো।উনার বাসায় আমি তোমাকে নিয়ে যাবো আর এটার কইফত চাইবো কেনো তোমাকে এত মারাত্মক একটা কথা বলেছে।’
‘আচ্ছা শুনুন না থাক না যা হবার হয়েছে।’
‘না থাকবে না।কেউ তোমাকে অপমান করবে কষ্ট দিবে আমি বেঁ*চে থাকতে তো কখনোই না।’
‘এইভাবে কারো বাসায় যাওয়া ঠিক হবেনা।’
‘মুগ্ধতা উনি তোমায় কষ্ট দিয়েছেন।তোমার মন খারাপ হয়েছে।তোমার মন খারাপ আমি সহ্য করতে পারবোনা।তোমার মনের উপর ডিপেন্ড করে আমার মনের ভালো থাকা।’
‘উনি উনার জামাই এর বাসায় গিয়েছেন।সেখানে গিয়ে উনাকে কিছু বলাটা কি ঠিক হবে।উনার মেয়ের জামাই আছেন।উনার মেয়েকে কথা শোনাবেন।তিল থেকে তাল হতে পারে বুঝতে পারছেন না।’
‘উনার কি হলো আই ডোন্ট কেয়ার মুগ্ধতা। তুমি কষ্ট পেয়েছো এটা আমি মানতে পারবোনা।’
‘এখন কোনো কষ্ট নেই আমার।’
‘তুমি মিথ্যা বলছো।’
‘সত্যি না,কোনো মিথ্যা বলছিনা।’
‘প্রুভ করতে পারবে?’
‘কি।’
‘মিথ্যা বলছো না।যদি প্রুভ করতে পারো তাহলে এখন উনার জামাই এর বাসায় যাবোনা ঠিক তবে আমি উনাকে কিছুই বলবো না এই কথা দিতে পারছিনা।’
‘হুম পারবো।’
‘না পারলে কিন্তু ওই মহিলার বাসায় যাবো।অপশন দুইটা হয় তোমার মন খারাপ নয় সেটা প্রুভ করো না হয় ওই মহিলার বাসায় চলো।৫ সেকেন্ডের মাঝে ডিসিশন নাও। ‘
‘পারবো বললাম তো।’
‘এক্ষুনি মানে এক্ষুনি আমাকে জড়িয়ে ধরবে।আমি যেনো ফিল করতে পারি তুমি আমার মাঝে মিশে গিয়েছো।জড়িয়ে ধরে কিস দিতে হবে পারবে?’
–আমি ডান গালে হাত দিয়ে মাথা কাত করে তার দিকে তাকালাম করুণ দৃষ্টিতে। আমাকে এইভাবে মাইনকার চিপায় ফাঁসায় দিলেন।তার প্রস্তাব শুনে আমি এখন মহাশূন্য অবস্থান করছি।দুনিয়াতে কি প্রুভ করার মতো আর কিছুই নেই।জড়িয়ে ধরে চুমু দিয়েই প্রুভ করতে হবে।মুগ্ধতা জামাই একটা পেয়েছিস ঠু মাছ রোমান্টিক।যার শর্ত হিসাবেও থাকে রোমাঞ্চকর প্রস্তাব।
আমাকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো,
‘বুঝেছি তুমি পারবেনা।চলো উনাদের বাসায়।আজ সিরিয়াসলি কি করবো আমি জানিনা আর কি বলবো।গো ফার্স্ট কুইক।’
অন্যকে হেনস্হা করার থেকে নিজের স্বামির সাথে রোমাঞ্চ করাটায় বোধহয় বেটার।লজ্জায় মাথা নিচু করে বললাম,
‘এখানেই?’
‘না রাস্তা দিয়ে লোকজন যাচ্ছে এখানেই না।বাসার পেছনে বিশাল বড় দুইটা কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে।অনেক জায়গা জুড়ে ছায়া হয় সে গাছের।গাছের নিচে দেখলে মনে হয় পুষ্পসজ্জা।সেখানে সচরাচর কেউ যায় না।জায়গা টা ভীষণ নিরিবিলি। চলো পুষ্পবিছানায় সুয়ে দুজনে চাঁদ দেখবো ভীষণ ভালো লাগবে।’
‘মৌন ভাবে সম্মতি জানালাম।’
পাঁচ মিনিটের মাঝে আয়াসের সাথে সেই বিশাল বড় দুইটা গাছের নিচে দাঁড়ালাম।পূর্ণ পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় কৃষ্ণচূড়া ফুল গুলো চিকচিক করছে।গাছের তলায় যেনো ফুলের বৃষ্টি। আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি।
আয়াস আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ভালো লাগছে তোমার।’
মাটিতে পড়ে থাকা ফুলের দিকে তাকিয়ে থেকেই বললাম,
‘ভীষণ সুন্দর লাগছে।এখান থেকে আর কখনো যাবোনা।’
‘গাছ থেকে পড়া এই ফুল দেখে যদি তুমি এতটা মুগ্ধ হও তাহলে বোঝো আমি কতটা মুগ্ধ তোমাকে দেখে।আমার চোখে এই ফুলের থেকেও অনেক বেশী সুন্দর দেখতে তুমি।তোমার দিকেও আমি ঠিক এইভাবেই মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি।তোমাকে দেখাটাও যেনো নেশা হয়ে গিয়েছে।যখন প্রথমবার তোমায় দেখেছিলাম বসন্ত উৎসবে তারপর আর আমাদের নিয়ম করে দেখা হয়নি দুজনে একসাথে হয়তো স্বপ্ন বুনিনি।তবে রোজ তোমায় দেখতাম আমার কল্পনায়।একটা কথা কি জানো যে যাকে ভালবাসে তাকে বাস্তবে না দেখলেও কল্পনাতে অজস্র বার দেখে।কল্পনার তুমিটার সাথে সারাক্ষণ কথা বলে।বাস্তবে মানুষটার সাথে অনেক কিছুই ভেবে রেখেও লজ্জায় বলা হয়ে ওঠে না কিন্তু কল্পনায় আসা মানুষ টার কাছে সম্পূর্ণ ভালবাসা প্রকাশ করা যায়। লজ্জা কাজ করে না মোটেও।এইযে তোমার সাথে কল্পনায় কতকিছু বলেছি কিন্তু তুমি আমার সামনে থেকেও বলতে পারিনি আমি।কিন্তু আমি বাস্তবেই বলতে চাই কল্পনায় বলা সেসব অনুভূতির কথা গুলো।’
ঠোঁটে মৃদু হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছি তার দিকে।তার কথা শুনলে এখন আর আমার রাগ হয়না।তার কথাগুলো ম্যাজিকের মতো আকৃষ্ট করে তার দিকে।তার মুখ দিয়ে যায় বের হয় তাই মধুর লাগে শুনতে।আমাকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আয়াস বললো,
‘শর্ত পূরণ করো।’
নিচে দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘লজ্জা লাগছে আমার।আমি পারবো না।’
‘শিখিয়ে দিবো আমি।’
‘না।’
আমি গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আর তাকে দেখছি।মানুষ বলে ভালবাসার জন্য নাকি একটা মুহুর্ত যথেষ্ট।আজ সেটা সত্য বলে মনে হচ্ছে।গতকাল মনে হয়েছিলো অভি ছাড়া কাউকে মেনে নিতে পারবো না।কিন্তু আজ মনে হচ্ছে অভির সাথে কেনো জড়িয়েছিলাম আমি।কেনো এই মানুষ টা আমার জীবনে আগেই আসেনি।একটা মুহুর্তের মাঝে মনে হচ্ছে আমি তাকে ভালবেসে ফেলেছি।আমি তার মায়ায় আটকে গিয়েছি।কি হয়েছে জানিনা আমার,অদ্ভুত এক টানে আয়াসের কাছে চলে গেলাম।তাকে জড়িয়ে ধরলাম।নিজের সব টা দিয়ে তাকে আপন করে নিলাম।তার বুকে মাথা রেখে হার্টবিট এর স্পন্দন শুনছি।সে আমাকে তার দুই হাতের বাঁধনে জড়িয়ে নিলো।ভালবাসার অনুভূতি আমার ভেতরে জেগে উঠলো। তাকে জড়িয়ে ধরে যেনো মানসিক শান্তি পেলাম।চোখ বন্ধ করে তার বুকে মাথা দিয়ে অন্যরকম কিছু অনুভব করছি।দুজন দুজনকে আলিঙ্গন এর পর মুহুর্তে আয়াস নিজেই তার ওষ্ট আমার ওষ্টের সাথে মেলালো।দু’মিনিট পরে ভীষণ লজ্জা পেয়ে তাকে ধাক্কা মারলাম।তার চোখে মুখে ভীষণ দুষ্টমি আমি লজ্জায় দুইহাতে মুখ ঢাকলাম।আয়াস আবার আমার কাছে এসে পুনঃরায় ওষ্টের সাথে ওষ্ট মেলালো।আকাশের চাঁদ আর দাঁড়িয়ে থাকা কৃষ্ণচূড়া গাছ সাক্ষী হলো দুজন মানব-মানবীর কাছে আসার।
আয়াসের হাতের উপর মাথা রেখে ফুলে বিছানো মাটিতে দুজন সুয়ে রইলাম।আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি দুজন।সময় টা ভীষণ সুন্দর। কিছুটা লজ্জা,কিছুটা জড়তা, কিছুটা ভালো লাগা।
আয়াস আকাশের দিকে তাকিয়েই আমাকে ডাকলো,
‘মুগ্ধতা।’
‘হুম।’
‘তুমি এত সুন্দর কেনো?’
‘কই সুন্দর। ‘
‘এত সুন্দর মেয়ে আমি আগে দেখিনি।’
‘এটা মিথ্যা কথা।আমার থেকে অনেক সুন্দর মেয়ে আছে।আমি অতটাও সুন্দরী না।’
‘তুমি কত সুন্দর আইডিয়া নেই তোমার।একজন স্ট্রং আর্মি অফিসার কে দূর্বল করে ফেলেছো।’
‘আমি কি দূর্বল হতে বলেছি।তুমি বলোনি তবুও হয়েছি।কিছু জিনিস কি বলা লাগে বালিকা।এই যে ধরো তোমাকে কেউ কিছু বললে আমার ভেতরে আগুন হয়ে যায়।’
‘আজ তো দেখলাম।’
‘ট্রাস্ট মি!আমি তোমায় জোর করে বিয়ে করলেও ভালবেসে বিয়ে করেছি।তোমায় ভালো রাখতে।’
আমি এবার হাসলাম।সে আমার হাসি দেখে বললো,
‘এইভাবে হেসোনা প্লিজ তাহলে অনর্থ হয়ে যাবে।’
‘কি অনর্থ।’
‘বুঝোনি না বুঝলে বুঝায়।’
‘বুঝেছি আপনি এত অসভ্য কেনো?’
‘মাঝে মাঝে অসভ্য হলে ক্ষতি কি।’
‘মুগ্ধতা।’
‘হুম।’
‘আমায় চুমু দেওয়ার কথা ছিলো দাও নি কিন্তু।আমরা কি আরেকবার চুমু খেতে পারি।’
‘না,মোটেও না।আমি চুমু দেই নি মানে।
কিছুক্ষণ আগে কি হলো।’
‘সে তো আমি করেছিলাম।এবার তোমার পালা।’
‘আপনি বাসায় চলুন তো!’
‘বাসায় গেলে কি পাবো।’
‘আজ আর না।’
‘তুমি কি ওষুধের মতো চুমু দিতে চাও নাকি।আজ আর না।’
‘এটাও তো ওষুধ অফিসার।’
আর কিছুক্ষণ সেখানে থেকে বাসায় ফিরে এলাম।
পরের দিন আমার রেজাল্ট দিলো।রেজাল্ট খুব একটা ভালো না।এ গ্রেড হয়েছে।আয়াস তাতেই ভীষণ খুশি। সবাই কে মিষ্টি খাওয়ালো।যেনো তার বউ ভয়ানক রেজাল্ট করেছে।আরহী আসতে চেয়েও আসেনি।কেটে গেলো পনেরো দিন।ধীরে ধীরে একটু একটু করে আয়াস আর আমি কাছাকাছি আসছি।অয়ন আর আমার রিলেশন টা সব থেকে সুন্দর। দেবর হলেও ভাই এর মতো।এতদিন পরে আগামিকাল আরহী আসছে।কাল আয়াস এর অফিস আছে।অয়ন ই তাকে পিক করতে যাবে।
চলবে?…