তুমিময় বসন্ত পর্ব-২০

0
547

#তুমিময় বসন্ত
২০.
#writer_Mousumi_Akter

–ভোর পাঁচটায় এলার্ম বাজতেই আয়াস উঠে পড়লো।এলার্ম এর শব্দে আমার ও ঘুম ভেঙে গেলো।রেগুলার ই ঘুম থেকে উঠে দেখি আমাদের মাঝের কোলবালিস নেই।হয় আমি তার সাথে মিশে আছি না হয় সে আমাকে জড়িয়ে ধরে সুয়ে আছে।আগে অস্বস্তি হলেও এখন যেনো ধীরে ধীরে তার সব কিছুই আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাচ্ছে।আজ ও ঘুম থেকে উঠে দেখি আয়াসের হাতের উপর মাথা রেখে সুয়ে আছি। আয়াস রেগুলার ই ভোর পাঁচটায় ওঠে, ওর সাথে আমিও উঠি।আর দুজনে এক সাথেই ফজরের নামাজ পড়ি।এটাও একটা রোজকার রুটিনে পরিণত হয়েছে আমাদের।আজ ও তাই হলো আমিও উঠে পড়লাম।ওজু করে দুজনেই নামাজ পড়ে নিলাম।নামাজ শেষ করেই আয়াস গ্যাসে পানি দিয়ে বললো,

‘মুগ্ধতা আজ তোমায় আয়াস স্পেশাল কফি খাওয়াবো।যে কফি খেয়ে ঘুম চলে যাবে আর মন দিয়ে বই পড়তে পারবে।’

‘তার দিকে তাকিয়ে বললাম,আয়াস স্পেশাল কফি টা কি।’

‘ভয় পেওনা কফিতে চিনি মেশাবো চুমু নয়।’

‘এই আপনি এত ফাজিল কেনো বলুন তো।কফিতে যে চুমু মেশানো যায়না সেটা আমিও ভালো করে জানি।’

‘আমার রোমান্টিকতা কে ফাজিল বলছো।শোনো আমি কোনো ফাজিল টাজিল না।আমি হলাম প্রচুর রোমান্টিক হ্যান্ডসাম একটা ছেলে।তুমি কিন্তু ভীষণ লাকি আমার মতো রোমান্টিক একটা জামাই পেয়েছো।আমার প্রেম কখনোই ফুরাবে না। ‘

‘আপনি রোমান্স নিয়ে গবেষনা করুণ আমার ঘুম পাচ্ছে ঘুমোবো।’

‘ঘুমোবে যখন আমাকেও সাথে নাও।এক সাথেই ঘুমোয়।’

‘বিছানা তো আছেই যান না গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন।’

‘তুমি আগে যাও বিছানায় একটা রোমাঞ্চকর সকাল হয়ে যাক।শোনো আমি কিন্তু হাগ টাগ করার আগে প্রচুর চুমু খাবো।তোমাকে চুমু খেতে প্রচুর ভাল লাগে আমার।’

‘আয়াসের দিকে চোখ রাঙিয়ে বললাম,অয়ন আছে কিন্তু শুনে ফেললে কি ভাববে বলুন তো।একেবারেই যা তা মার্কা লোক কিন্তু আপনি।’

‘শুনলেও খেয়াল করবে না।আমার ভাই আমার মতোই ট্যালেন্ট বুঝতে পারবে ব্যাপার টা।’

আয়াসের কথা শুনে সোফায় কাত হয়ে আবার চোখ বুজলাম আমি।ভয়ানক ঘুম চোখে জড় সড় হয়ে এসছে।সকালে ভোরের দিকে আমার সব থেকে বেশী ঘুম আসে।কিন্তু আয়াস বলে রেগুলার নাকি সূর্যদ্বয় দেখা ভালো।সকালের মৃদু হাওয়া গায়ে লাগানো ভালো।সকালের মিষ্টি রোদ গায়ে মাখা ভালো।এইসব ভালোর মাঝে আমার কাছে ঘুমকেই বেশী ভালো মনে হয়।সোফায় কাত হয়ে আবার ঘুমিয়ে গেলাম।আয়াস এসে কফিতে চুমুক দিয়ে আমায় ডেকে বললো,

‘রোমাঞ্চ না হয় আপাতত হরতালে থাক কিন্তু কয়েকদিন পরে এডমিশন তোমার এখন অন্তত ফাঁকি দিও না লেখাপড়ায়।আমি তোমাকে কিছুতেই ঘুমোতে দিবোনা।একটু পরেই অয়নের সাথে গল্প জুড়ে দিবা, তারপর টিভি দেখবা তারপর শ্বাশুড়ির সাথে ফোনে গল্প করবা তারপর কুসুম ভাবির কাছে গিয়ে আড্ডা দিবা ব্যাস হয়ে গেলো।’

আমি আয়াসের দিকে ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে বললাম,

‘প্রমিজ কাল থেকে ভোরেই পড়া শুরু করবো এখন আমাকে ঘুমোতেই হবে।কোনো আয়াস স্পেশাল কফি আমি খাবোনা।’

‘তারমানে তুমি ঘুমোবেই তাইতো মুগ্ধতা।’

‘হু,গুড নাইট এগেইন।’

‘ওকে ফাইন তুমি ঘুমোও অনেকদিন হলো মর্ণিং ওয়াক এ যায় না।সারিকা ও ফোন দিচ্ছে। যায় দুজনে মর্নিং ওয়ার্ক করতে পারবো গল্প ও করতে পারবো।বলেই আয়াস আলমারি থেকে কালো ট্রাউজার আর কালো গেঞ্জি বের করে পরে বেরিয়ে গেলো।’

সারিকার সাথে হাঁটাহাঁটি করতে যাবে শুনেই আমার ঘুম উধাও হয়ে গেলো।আমি এক লাফে সোফা থেকে নেমে দৌড়ে নিচে গেলাম।

আয়াস আমাকে দেখে অবাক হয়ে বললো,

‘মুগ্ধতা তুমি?’

আমি তার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বললাম,

‘আমিও যাবো।’

‘কোথায় যাবা ডারলিং।’

‘মর্ণিং ওয়াক এ।’

‘সিরিয়াসলি।’

‘হুম।’

‘ঘুম কোথায় গেলো?’

‘ঘুম টুম নেই চলুন।’

‘যাও বেবি ঘুমোও তুমি।তোমার না প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।’

‘না পাচ্ছেনা।’

‘তাই বেবি ঘুম নেই।’

‘না নেই।’

‘তোমার হঠাত ঘুম উধাও কাহিনী কি?’

‘কাহিনী ফাহিনী কিছুই না।আপনার বান্ধবী সারিকা কোথায়?’

‘আসছে?’

এরই মাঝে দেখলাম সারিকা আসছে।সারিকা কে দেখে বললাম,

‘এই নির্লজ্জ মেয়ের সাথে আপনি ইচ্ছা করেই হাঁটাহাটি করতে বেরোন তাইনা?’

‘নির্লজ্জ? ‘আয়াস অশ্চর্যজনক ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে বললো।

‘তো তাই ছাড়া কি।দেখুন গায়ে ওড়না নেই।গেঞ্জি আর প্যান্ট পরে কেউ পর পুরুষদের সাথে বের হয়।’

‘কেনো খারাপ কি ভীষণ হট লাগছে।আমার কাছে তো হট মেয়ে ওয়াও লাগে।’

‘আয়াসের দিকে ভয়ানক রাগি চোখ তাকিয়ে বললাম কি বললেন।’

‘না মানে ওই আরকি।’

‘আপনি বাসায় চলুন,কোনো মর্নিং ওয়াক করা লাগবে না।আয়াসের গেঞ্জি টেনে ধরে টানতে টানতে বাসার ভেতরে নিয়ে এলাম।আয়াস নিজে তো ভীষণ অবাক সাথে সারিকা ও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।বাসার ভেতরে এনে বললাম,এই সারিকা যদি এসে দরজা নক করে আমি কিন্তু দরজা খুলবো না সোজা কথা।’

আয়াস কপাল টানটান করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘আহ!জেলাসি চারদিকে জেলাসি প্রচুর জেলাসি।’

‘কার জেলাসি।’

‘বললাম জিলাপি,খাবে তুমি।’

‘জিলেপি খাওয়াচ্ছি আপনাকে।’

এরই মাঝে অয়ন ঘুম থেকে উঠে এলো।অয়ন কে দেখে থেমে গেলাম দুজন।দুপুরে অয়ন বাসায় খেয়ে আরহীকে পিক করতে চলে গেলো।আরহীর নাম্বার দিয়ে দিয়েছি অয়নের কাছে।অয়ন বেরিয়ে গেলে মনে মনে ভাবলাম আয়াসের তাহলে গেঞ্জি পরা মেয়ে ভালো লাগে।প্লাজুর উপর আয়াসের একটা গেঞ্জি পরলাম।গেঞ্জিটা বেশ বড়।নিজের ও ভীষণ লজ্জা লাগছে তবে লজ্জা করলে হবেনা মুগ্ধতা।নিজের জামাই কন্ট্রোল করতে এসব লজ্জা ফজ্জা ধুয়ে মুছে দিতে হবে।আয়াস অফিসে যাবে মাত্রই বেরোবে।এরই মাঝে আমাকে এমন রুপে দেখে হা করে তাকিয়ে আছে।যেনো পৃথিবীর বুকে প্রথম কোনো আশ্চর্যজনক জিনিস দেখলো।আয়াস কে বললাম এটা পরেই নিচে যাচ্ছি আমি। আমার একটু কাজ আছে।

আয়াস এবার চটজলদী বলে উঠলো,

‘এই না না মুগ্ধতা প্লিজ না।’

‘না আমি যাবোই।মানুষ আমাকেও হট বলবে না।’

“ওহ নো!মানুষ আমার বউ কে এইভাবে দেখুক আমি বেঁচে থাকতে না।’

‘আপনি অন্য মেয়েদের হট বলেন কেনো?সে বেলায় কিচ্ছু না তাইনা।আপনার তো গেঞ্জি পরা মেয়ে পছন্দ। ”

‘তোমাকে রাগানোর জন্য বলেছিলাম সত্যি বলছি।এই কান ধরলাম আর বলবো না জীবনেও না।সারিকা কি পরে থাকে আমি সত্যি খেয়াল দেই না।আমার মন পড়ে থাকে তোমার কাছে মুগ্ধপরী।আর আমার মোটেও গেঞ্জি পরা মেয়ে পছন্দ নয়।আমার তো সারাক্ষণ অগোছালো শাড়ি পরে থাকা মুগ্ধতাকে পছন্দ বুঝোনা তুমি।’

আমি আয়াসের কথায় মৌন রইলাম।এবার আয়াস বললো,

‘বাই দ্যা ওয়ে এত জেলাস কেনো তুমি।আমায় তো আর ভালো টালো বাসোনা তাইনা?’

মনে মনে বললাম,সব যেনো বলা লাগে।সব বোঝে আর এটুক বোঝে না। অসহ্য মানুষ একটা।আমি কেনো বলতে যাবো ভালবাসি।নিজের দাম আমি কমাবো না।আয়াস কে বললাম অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে যান আপনি।

বিকালে সব রান্না শেষ করে অপেক্ষা করছি আরহীর জন্য।কতদিন দেখিনা আরহীকে।কিন্তু এত লেট হচ্ছে কেনো?আরো দু’ঘন্টা আগে আসার কথা ছিলো।বারবার বারান্দায় যাচ্ছি আর রুমে আসছি।এরই মাঝে দেখি অয়ন আর আরহী গেট দিয়ে বাসায় প্রবেশ করলো।আরহী আমাকে দেখেই এসে জোরে জড়িয়ে ধরলো।অয়ন বাঁকা চোখে তাকালো আরহীর দিকে তারপর অয়ন তার হাতের ব্যাগ টা জোরে ফেলে বললো,

“মেয়ে মানুষ এত ফাজিল হয় ভাবি আগে জানতাম না।শুধু একটা লেজ ই নেই তোমার বোনের।লেজ থাকলে আজ ষ্টেশনে সবাই বা* দর দেখতে পেতো’

‘আমি বিস্মিত হয়ে বললাম কাহিনী কী অয়ন?’

‘ভাবি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখো।গরমে মুখের কি অবস্থা। সব তোমার বোনের জন্য।কি মহিলা যে তোমার বোন আমার আড়াই ঘুল্লি দিয়ে ছেড়েছে।’

“অয়নের শার্ট ঘামে ভিজে গিয়েছে।মুখ লাল হয়ে গিয়েছে।আমি অয়ন কে বললাম দ্রুত যাও গোসল করে ফ্যানের নিচে বসো।তোমার ভাইয়া এত কিপটা কেনো এত এসি তো কিনতে পারে।’

‘ভাবি তুমি বলতে পারোনা।’

আরহীর দিকে তাকিয়ে দেখি হেসে যচ্ছে।সিওর আমার সাদাসিধা দেবরের সাথে কিছু না কিছু করেছে।

চলবে..?