তুমি অজান্তেই বেঁধেছ হৃদয় পর্ব-০৬

0
2

#তুমি_অজান্তেই_বেঁধেছ_হৃদয়
#পর্ব_৬
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
__________
ফুপিরা আজ চলে যাবে। অনুর তাই ভীষণ মন খারাপ। ওর থেকেও বেশি মন খারাপ সূর্যর। আবার কবে আসা হবে, কবে অনুর সাথে দেখা হবে সে নিজেও জানে না। ফোনেও কথা বলে না অনু। ফেসবুকে ম্যাসেজ দিলেও উত্তর দেয় না। কখনো কখনো আবার সীন করেও রেখে দেয়। বয়সে বড়ো বলে সূর্য কিছু বলতেও পারে না। সে এখন উঠানে বসে থাকা অনুকে দেখছে। মুখটা ভার করে বসে আছে অনু। ওর পাশেই বসে আছে রোমিও। কুকুরটারও বুঝি মন খারাপ। হওয়ারই কথা। মালকিনের মন খারাপ হলে, তারও মন খারাপ করেই বসে থাকা উচিত। অনু কুকুরটাকে নিয়ে যতটা সিরিয়াস তার এক পার্সেন্টও যদি সূর্যকে নিয়ে হতো, তাহলে নিজেকে ধন্য মনে করত সূর্য। এসব ভেবে ভেবেই দীর্ঘশ্বাস নিল সে। রায়ান সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার সময় সূর্যকে লক্ষ্য করেছে। কাছে এসে কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করল,

“এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”

সূর্য থতমত খেল। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

“তোমার জন্য ওয়েট করছিলাম, ভাইয়া।”

“ফুপিরা কোথায়?”

“বাড়ির বাইরে।”

“চল।”

উঠান পেরিয়ে যাওয়ার সময় অনুর দিকে একবার তাকাল রায়ান। এরপর ভাবলেশহীনভাবে বাইরে চলে গেল। সূর্য অনুর কাছে গিয়ে বলল,

“তুমি যাবে না?”

“কোথায়?” জানতে চাইল অনু।

“আমাদের এগিয়ে দিতে?”

“হুম।”

“এসো।”

অনু রোমিওকে সাথে নিয়ে সূর্যর সাথে বাইরে গেল। ছোটো ফুপি অনুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

“এতক্ষণ মন খারাপ করে কোথায় বসে ছিলি?”

অনু উদাস হয়ে বলল,

“ভেতরেই।”

বড়ো ফুপি বললেন,

“অনু, তুই বরং আমার সাথে চল। ক’টা দিন থেকে আসিস।”

সূর্যর মুখ ঝলমল করে উঠল তখন। অনুরও যেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু রায়ানের দিকে তাকিয়ে দমে গেল। চলে গেলে সে রায়ানকে দেখবে কী করে? ওকে অবশ্য কিছু বলতে হলো না। তাহমিনা বেগম নিজেই বললেন,

“এখন না। এখন তো ওর ক্লাস আছে। পরীক্ষা শেষ হলে পাঠিয়ে দেবো।”

পড়াশোনার কথা ভেবে বড়ো ফুপি আর জোর করলেন না। সূর্যর মুখটা আবার অন্ধকারে ছেঁয়ে গেল। ছোটো ফুপি বললেন,

“তাহলে আমাদের সাথে বাস স্টেশন পর্যন্ত যাক। পরে রায়ানের সাথে আবার ফিরে আসবেনে।”

রায়ান বাঁধ সেধে বলল,

“ওর যাওয়ার দরকার নেই। তোমাদের গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে আমি অফিসে যাব। ঐখানে কিছু কাজ আছে।”

“ওকে সাথে নিয়ে যাবি। সমস্যা কী? ও তো আর বাইরের লোক না।”

সূর্যও বলল,

“হ্যাঁ, আপু আসুক আমাদের সাথে।”

রায়ানের সঙ্গে কিছু সময় থাকতে পারবে ভেবেই খুশিতে অনু রাজি হয়ে গেল। রায়ান বিরক্ত হয়ে বলল,

“ওর কুকুরকে রেখে যেতে বলো।”

অনু বলল,

“আচ্ছা, রোমিওকে নেব না।”

অনু দ্রুত রুমে গিয়ে চটজলদি রেডি হয়ে এলো। ফুপুদের সাথে বাস স্টেশন গিয়ে ওদের গাড়িতে তুলে দিল। এখন যাবে রায়ান ভাইয়ের সাথে অফিসে। গাড়িতে রায়ান ভাই কোনো কথাই বলল না অনুর সাথে। চুপচাপ ড্রাইভ করেছে। অনুর দিকে ফিরেও তাকায়নি। এতটা কাঠখোট্টা স্বভাবেরও হয় কেউ?

অফিসে গিয়ে রিয়াদ ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলো। খুব ব্যস্ত ভঙ্গিতে কর্মচারীদের সাথে কথা বলছে। হয়তো গুরুত্বপূর্ণ কোনো আলোচনা চলছে। কিন্তু অনুকে দেখা মাত্রই তাদেরকে রেখে এগিয়ে এলো। হাসিমুখে বলল,

“আরে বাড়ির ছোটো প্রিন্সেস অফিসে যে! কী মনে করে?”

অনুও হাসিমুখে জবাব দিল,

“ফুপিদের এগিয়ে দিতে এসেছিলাম রায়ান ভাইয়ের সাথে।”

“ওহ আচ্ছা। আয় বোস। কী খাবি বল?”

“কিছু না।”

রায়ান ভাই আর ওদের কথার মাঝে না থেকে সেই লোকগুলোর কাছে চলে গেল। অনুরও সমস্ত মনোযোগ চলে গেল সেদিকে। রিয়াদ ভাই ওকে বসিয়ে রেখে নিজে চা বানিয়ে নিয়ে এলো। সাথে বিস্কুট। সেন্টার টেবিলের ওপর রেখে বলল,

“এখনো অফিস চালু করিনি তো তাই চা বানানোর লোক রাখা হয়নি। নিজেরাই বানিয়ে খাই।”

অনু সবিস্ময়ে বলল,

“আপনি চা বানাতে পারেন?”

“মোটামুটি। খেয়ে বল তো কেমন হয়েছে?”

অনু চায়ে চুমুক দিয়ে বলল,

“দারুণ!”

রিয়াদ ভাই হেসে বলল,

“খাওয়া শেষ হলে তুই অফিস ঘুরে ঘুরে দেখ। আমি কাজ করি।”

“আচ্ছা।”

চায়ের মধ্যে বিস্কুট ডুবিয়ে খাচ্ছে অনু। আসলেই রিয়াদ ভাই চা ভালো বানায়। রায়ান ভাই তখন কিছু কাগজপত্র নিয়ে ওর পাশে এসে বসল। অনু সতর্কতার সাথে চায়ের কাপটা সরিয়ে নিল। ভুলেও যদি কাগজের ওপর পড়ে তাহলে রায়ান ভাই এখানেই ওকে মে’রে পুঁতে রেখে চলে যাবে। কয়েকটা কাগজ দেখে অনুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

“ধর তো।”

অনু চায়ের কাপ ফ্লোরে রেখে কাগজগুলো হাতে তুলে নিল। রায়ান ভাই বাকি কাগজগুলো দেখা শেষ করে সবগুলো গুছিয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়াল। অনু তখন জিজ্ঞেস করল,

“আমরা বাড়িতে যাব কখন?”

“একটুপর ভাইয়া দিয়ে আসবে তোকে।”

“আপনি যাবেন না?”

“আমার দেরি হবে।”

অনু মনে মনে বলল,

“হোক দেরি। তবুও আমি আপনার সাথেই যেতে চাই।”

কিন্তু মুখে সে এসবের কিছুই বলতে পারল না। রায়ান ততক্ষণে আবার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল। অনু ঘুরে ঘুরে অফিসটা দেখছে। তখন দেখল রিয়াদ ভাই ব্যস্ত হয়ে ফোনে কথা বলতে বলতে সিঁড়ির দিকে এগোচ্ছে। অনু রায়ানের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,

“রিয়াদ ভাই কি চলে গেল?”

রায়ান গম্ভীর হয়ে বলল,

“হু।”

“তাহলে আমি যাব কীভাবে?”

“আমার সাথে।”

অনু মনে মনে খুশি হলেও মুখে কিছু বলল না। সে মনের আনন্দে এখন প্রজাপতির মতো উড়ছে আর ঘুরছে। এক পর্যায়ে রায়ান বলেই ফেলল,

“লাফাচ্ছিস কেন এত?”

“লাফাচ্ছি না তো! অফিস দেখছি।”

“শান্ত হয়ে দেখ! এটা বাড়ি না।”

অনু মাথা নাড়িয়ে বলল,

“আচ্ছা।”

সে হাঁটতে হাঁটতে এবার করিডোরের শেষ প্রান্তে চলে গেল। এখানে একজন লোক টবে অনেকগুলো গাছ লাগাচ্ছে। অনু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গাছগুলো দেখল কিছুক্ষণ। ফুলগুলো ছুঁয়ে দিল। লোকটাকে জিজ্ঞেস করল,

“আমি কি আপনাকে সাহায্য করব?”

তিনি হেসে বললেন,

“না, না মা। লাগব না।”

অনু আর কিছু বলল না। মিনিট পাঁচেক থেকে চলে আসছিল ভেতরে। দরজার কাছে এসে মুখোমুখি হলো রায়ান ভাইয়ের। দুজন একসাথে সামনে পড়ে যাওয়াতে ধাক্কা লেগে গেছে। অনুর জুতা ফ্লোরে স্লিপ কাটার জন্য সে প্রায় পড়েই যাচ্ছিল। তখন সাপোর্ট হিসেবে বাম হাতে দরজার হাতল ধরতে গিয়েও নাগাল পেল না। ঐসময়ে ওর বাম হাত ধরল রায়ান। ডান হাতে অনু রায়ান ভাইয়ের বুকের কাছে শার্ট খাঁমচি দিয়ে ধরেছে। অন্য হাতে অনুকে সামলে নিয়েছে রায়ান। অনু চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে দেখল, রায়ান ভাইয়ের দৃষ্টি থেকে রাগের স্ফুলিঙ্গ ঝড়ে পড়ছে। রায়ান ভাই এখনই বুঝি সবার সামনে ধমক দেবে। মান-সম্মান আর কিছুই থাকবে না অনুর। কিন্তু রায়ান ভাই ওকে ধমক দিল না। সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিল। অনুর হাতের মুঠোয় তখনো রায়ানের শার্ট ধরে রাখা। রায়ান ভাই রাশভারী কণ্ঠে বলল,

“শার্ট ছাড়!”

অনু তড়িঘড়ি করে শার্ট ছাড়তে গিয়ে দেখল, রায়ান ভাইয়ের বুকে নখের আঁচড়ের দাগ! ভয়ে কলিজা শুকিয়ে গেল সঙ্গে সঙ্গে। ফাঁকা ঢোক গিলল অনু। আজ তো সে শেষ! অনু ভয় পেয়ে দৌঁড় দিল। ঠিক তখনই অনুর হাত চেপে ধরেছে রায়ান ভাই।

চলবে…