#তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
#পর্ব- ২৮ [কাহানী মে আয়া টুইস্ট]
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অভ্র আরহামকে এসেই জড়িয়ে ধরে। নিজের পাক্তনকে এইভাবে দেখে স্হীর হয়ে দাড়িয়ে যায় মেহেভীন। মেহেভীন বুঝতে পারছে না অভ্র এখানে কি করে এলো?অভ্রকে আরহাম কিংবা আরিয়ান কেউই আশা করেনি, তা তাদের চোখ-মুখেই স্পষ্ট। মেহেভীন ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। তার মনে অনেক প্রশ্নের বিস্তার ঘটতে থাকে। আরহামকে অভ্র এসে জড়িয়ে ধরলো কেন? তাহলে কী আরহাম ও অভ্র পূর্বপরিচিত? অভ্র আরহামকে জড়িয়ে ধরেই বললো,
‘ এইসব কি ব্রো? এখনো নিজের ভাইয়ের থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকবি? সেই একটা বিষয় নিয়ে এখনো এতো রাগ পুষে রেখেছিস? এখন তো এইসব ছাড় প্লিয। ‘
আরহাম কোন প্রতিক্রিয়া করলো না। অভ্র এইবার আরিয়ানের কাছে গিয়ে বললো,
‘ কি হলো? সবসময় তো আমাকে দেখে তুই সবার আগে এসে, টাইট করে হাগ করিস। আজ কি হলো?
বুঝেছি অভিমান হয়েছে। ওকে আমিই করে নিচ্ছি। ‘
অভ্র কথাটি বলে আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরে। মেহেভীন অবাকের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে গেলো। অভ্র আরহাম ও আরিয়ানের ভাই? কীভাবে সম্ভব? মেহেভীনকে কখনো তো আরহাম কিংবা আরিয়ান বলেনি তাদের অভ্র নামক কোন ভাই আছে।
অভ্র আরিয়ানকেও ছেড়ে দিলো। অভ্র তার দুই চাচাতো ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ কখনো ভাবেনি চট্টগ্রামে এসে এইভাবে তোদের সাথে দেখা হয়ে যাবে। কিরে ভাই তোরা এখনো চুপ করে থাকবি? আমি বুঝতে পারছি না। বড়দের মধ্যে যা হোক, কিন্তু আমরা কেন আমাদের মধ্যে এইভাবে দূরত্ব বাড়িয়ে চলবো বলতো? ‘
‘ দূরত্ব সবসময় তোর পক্ষ থেকেই ছিলো অভ্র। আমরা কখনো তোর সাথে দূরত্ব বাড়াতে চাইনি। ‘
আরহাম কাঠকাঠ গলায় অভ্রের প্রশ্নের উত্তর দিলো।
অভ্র স্মিত হেসে বলল, ‘ তা আমি জানি। তোরা আমাকে কতটা ভালোবাসিস। সেইটাও জানি,কিন্তু
আমিই বা কি করবো? আমি বাধ্য হয়েই একপ্রকার এইভাবে দূরত্ব বাড়িয়েছি।তোরা তো জানিস মা কে আমি কতটা ভালোবাসি।
মায়ের জন্যে যে আমি কত কিছু করেছি,তা শুধু আমিই জানি। ‘
শেষের কথাটি অভ্র আস্তে করেই বললো।
আরিয়ান ভ্রু কুচকে বললো,
‘ কি বললি ভাইয়া তুই? ‘
‘ না মানে আসলে আমি বলতে চাইছিলাম যে,আমি পরে তোদের সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছিলাম,কিন্তু পারেনি। আচ্ছা এইবার তো বাদ দে এইসব অভিমান ইয়ার। লেটস গো বাদ্রারস গিভ মি সাম হাগস। ‘
অভ্র কথাটি বলেই আরহাম ও আরিয়ানকে একসাথে জড়িয়ে ধরলো। আরহাম ও আরিয়ানও আর রাগ করে থাকতে পারলো না, তারাও জড়িয়ে ধরলো তাদের ভাইকে। অভ্র জড়িয়ে ধরতেই, তার চোখ গেলো তার অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষটির দিকে। যার জন্যে সে এতোদিন ধরে ছটফট করছিলো। মেহেভীন বুঝতে পেরেছে, অভ্র তাকে দেখে ফেলেছো। মেহেভীনের পক্ষে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। অভ্র আরহাম ও আরিয়ানকে ছেড়ে দিয়ে ধীর গলায় বলে,
‘ মেহেভীন? ‘
অভ্রের কথা শুনে আরহাম ও আরিয়ান মেহেভীনের দিকে তাকায়। মায়রাও ততক্ষনে চলে আসে। আরিয়ান মেহেভীনের কাছে গিয়ে, মেহেভীনকে নিয়ে এসে অভ্রের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলে,
‘ তুই মেহেভীনকে কি করে চিনিস ভাই? ‘
‘ কিন্তু তার আগে বল? মেহেভীন তোদের কি হয়? ‘
মেহেভীনের সাথে আরহামকে দেখেই মায়রা চিনে ফেললো, আরহাম একবার ভার্সিটিতেও এসেছিলো। এখন তার মনে পড়লো অভ্রের ফোনে সে একবার আরহামের ছবি দেখেছিলো, তাই সেদিন আরহামকে তার চেনা মনে হচ্ছিলো। অভ্র আবারো মেহেভীনের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ কি হলো বললি না যে, মেহেভীনকে কি করে চিনিস তোরা? ‘
মেহেভীনের তো জান যায় যায় অবস্হা । মেহেভীন আরহামের দিকে তাকিয়ে থাকে। আরহামের প্রতিক্রিয়া জানার জন্যে।
এখন কি বলবে আরহাম?আরহাম সবাইকে অবাক করে দিয়ে, মেহেভীনের হাত ধরে হাঁসিমুখে বললো,
‘ আমার ওয়াইফ। মিসেস মেহেভীন আরহাম হাসান তালুকদার। ‘
আরহামের কথাটা শুনেই পরিবেশটা কেমন যেন থমথমে হয়ে যায়। মায়রারও বিশ্বাস হতে কষ্ট হচ্ছে যে মেহেভীনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। যদিও তার বেশ খুশি লাগছে। অভ্র শুধু নিষ্পলকভাবে মেহেভীনের দিকে তাকিয়ে আছে। তার কানে এখনো আরহামের কথাটি বেজে চলেছে। মেহেভীন জানে অভ্র এখন তার উত্তরের আশায় অপেক্ষার প্রহর গুনছে। মেহেভীনও আরহামের হাতটা শক্ত করে ধরে বলে,
‘ হুম আমি এখন মিসেস আরহাম হাসান তালুকদার। এইটাই আমার পরিচয়। ‘
রুশা ও তাহসানরাও ততক্ষনে ফিরে আসলো হোটেলে। রুশার কানে কথাটি আসতেই, সে স্তব্ধ হয়ে রইলো।
মেহেভীন খেয়াল করলো অভ্র ঠিক কাঁদছে না। তার চোখ ছলছল হয়ে রয়েছে। আরিয়ানের চোখ এইবার মায়রার দিকে গেলো। আরিয়ান মায়রার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না যে? ‘
মায়রা স্মিত হেসে জবাব দিলো,
‘ আমি হচ্ছি মিসেস অভ্র আহমেদ। ‘
আরিয়ান হাত তালি দিয়ে বললো,
‘ বাহ কতটা দূরত্ব হয়ে গেলো যে, অভ্র ভাই তু্ই বিয়ে করলি অথচ আমরাও জানি না। ‘
অভ্র দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
‘ আরহাম ও যে বিয়ে করেছে সেই খবরও তো আমরা পেলাম না। ‘
‘ মানুষের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে গেলে, অনেক কিছুই গোপনীয় থেকে যায়। বিয়ের বিষয়টাও তার মধ্যে অন্যতম। ‘
আরহামের কথায় অভ্র আর কিছু বললো না। অভ্র কখনো ভাবতে পারেনি মেহেভীন তার ভাইয়ের বউ হবে। মেহেভীন কিছু একটা ভেবে আনমনে হাসে। যা কারো নজরে পড়লো না। অভ্র স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে মেহেভীনের চোখে ঘৃণা উপচে পড়ছে তার জন্যে। মেহেভীন ইচ্ছে করেই আরহামের হাতটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘ আমার না শরীরটা ভালো লাগছে না। আমি এখন রুমে যাবো। ‘
রুশা নিষ্প্রানের মতো দাড়িয়ে আছে।তাহসান রুশার অবস্হা বুঝতে পেরে, এগিয়ে এসে বললো,
‘ আরহাম তুই বলছিস টা কি? আমাকে একটু খুলে বলবি তো? ‘
আরহাম তাহসানকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
‘ তোকে যা বলার আমি পরে বলছি। আগে মেহেভীনকে ঘরে দিয়ে আসি। তারপর তোকে যা বলার বলবো। আমার বউ সবার আগে। যতই হোক একটা মাত্র বউ আমার। নকল হলেও বউ তো।’
শেষের কথা আরহাম ঠাট্টার সুরে আস্তে করে মেহেভীনের কানে বললো। মেহেভীন হেসে দেয়। আরহাম মেহভীনের হাত ধরে সকলের সামনে উপরে নিয়ে যায়। রুশা মুখ চেপে দৌড়ে নিজের রুমের দিকে যায়। তাহসান রুশার পিছন পিছন চলে যায়। অভ্রের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে যেন। সে কিছুতেই হজম করতে পারছে না ব্যাপারটা।
________
আরহাম মেহেভীনকে রুমে এনে, ওষুধের বক্স থেকে একটা ওষুধ বের করে মেহেভীনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
‘ জাস্ট স্টুপিড মেয়ে একটা তুমি। টাইম মতো ওষুধ টাও খেতে পারো না। ‘
কথাটা বলেই আরহাম বক্সটা বেডের এক পাশে রাখে। মেহেভীন ওষুধ টা খেয়ে নেয়। মেহেভীন আরহামের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ আরহাম সাহেব আপনি আছেন না সবসময়ই? আমার যত্ন নেওয়ার মানুষ। আমার নিজের যত্ন নেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। ‘
মেহেভীনের কথায় আরহাম মেহেভীনের দিকে তাকাতেই, মেহেভীন গলাটা খাকারি দিয়ে বললো,
‘ মানে বলছিলাম কি মায়রা আপু আমাদের ভার্সিটির সিনিয়র সেই সুবাধে অভ্র ভাইয়াকে প্রায় আমাদের ভার্সিটিতে দেখিছিলাম,কিন্তু অভ্র নামক যে আপনাদের কোন ভাই আছে, তা জানতাম না তো। ‘
আরহাম খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে মেহেভীনের মনে হাজারো প্রশ্ন এসে ঝটলা পাঁকাচ্ছে। সেসব প্রশ্ন সব অভ্রকে ঘিড়েই৷ আরহাম ধীর গলায় বললো,
‘ অভ্র সম্পর্কে আমার ছোট চাচার ছেলে হয়। মানে আমার চাচাতো ভাই। ছোট চাচা এক্সিডেন্টে মারা যাওয়ার পরে,কোন এক কারণে ছোট মা অর্থাৎ অভ্রের মা আমাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। কোন একটা কারণে ছোট মা আমাদের পুরো পরিবারকে ঘৃণা করে। কিন্তু কেন কে জানে? অভ্র এবং আমি সমবয়সী ছিলাম। অভ্র ছোটবেলা থেকেই বিদেশ থেকে পড়াশোনা করতো। অভ্র একপ্রকার লুকিয়েই আমাদের সাথে যোগাযোগ করতো, কিন্তু ছোট মা দুবছর আগে যখন আমাদের মধ্যে এখনো সম্পর্ক আছে কথাটি জেনে যায়। তখন অভ্রকে বাধ্য করে যেন আমাদের সাথে যোগাযোগ না করে। অভ্র ও আমাদের সাথে সম্পুর্ন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তাই আমরাও আর যোগাযোগ রাখিনা। আজ ভাগ্যক্রমে চট্টগ্রামে অভ্রকে দেখে আমরা আর নিজেদের অভিমানটাকে ধরে রাখতে পারলাম না। ‘
মেহেভীন এইবার আস্তে ধীরে সবটা বুঝতে পারলো। তার খালামনি অর্থাৎ আরহামের ছোট মা তালুকদার বাড়ি থেকে কোন এক কারণে বেড়িয়ে, তার বাড়িতে মেহেভীনকে আশ্রয় দিয়েছিলো। এতোটা বছর ধরে তার খালা তার শ্বশুড় বাড়ির কথাও কখনো বলেনি এমনকি মেহেভীন জানতেও চাইনি। যদিও মেহেভীন জানতো অভ্রের দুই চাচাতো ভাই আছে, কিন্তু তাদের নাম যে আরহাম এবং আরিয়ান সে সম্পর্কে তার অবগতি ছিলো না। এমনকি মেহেভীন তার অতীতের কথা আরহাম ও আরিয়ানের কথা বললেও, অভ্রের নাম একবারও উচ্চারণ করেনি। তাই অভ্র যে মেহেভীনের প্রাক্তন তা আরহাম কিংবা আরিয়ান কেউই জানে না। আরহামের ফোন বেজে উঠায়, সে বাইরে চলে গেলো। মেহেভীনের মনে পড়ে গেলো কিচ্ছুক্ষন আগের কথা যখন আরহাম তাকে সকলের সামনে তার বউয়ের মর্যাদা দিয়েছে। মেহেভীনের অধরের কোণে এতো কিছুর পরেও, প্রাপ্তির হাঁসির ফুটে উঠলো। সে কখনো আশা করেনি আরহাম তাকে এইরকম একটা সম্মান দিবে। সত্যি আরহাম এবং অভ্র দুই ভাই হয়েও, তাদের মধ্যে কত তফাৎ। একজন শুধু কষ্ট দিতে পারে আরেকজন নিয়ে যেতে পারে সুখের রাজ্যে। এতোদিন পরে অভ্রকে দেখে মেহেভীনের মনে পড়ে গেলো সেই ভয়ংকর অতীত।
মেহেভীন আয়নার সামনে দাড়িয়ে আপনমনে বিড়বিড় করতে লাগলো,
‘ মিসেস আরহাম হাসান তালুকদার। নাইস নেম! ‘
মেহেভীন মাথায় ভয়ংকর এক খেলার ভূত চেপে বসলো। যার পরিণতি ঠিক কি হবে জানেনা মেহেভীন। তখনি মেহেভীন শুনতে পায় দরজা বন্ধ করার আওয়াজ। মেহেভীন পিছনে ঘুড়ে দেখে……
চলবে……কী?
#তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
#পর্ব-২৯
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অভ্র দরজা বন্ধ করে দিয়ে, এক এক পা করে মেহেভীনের দিকে এগিয়ে যায়। মেহেভীন বুঝতে পারছে না অভ্র হঠাৎ তার রুমে কোন উদ্দেশ্য এসেছে। অভ্রকে এগিয়ে আসতে দেখে মেহেভীন শুকনো ঢুগ গিলতে থাকে। তবুও পিছায় না। ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে নিজের স্হানে। অভ্র মেহেভীনের কাছে গিয়ে বলে,
‘ তুই আদোও বিয়ে করেছিস মেহু?
‘কেন শুনতে পেলে না? নীচে আরহাম কি বললো? আজকাল কি তুমি কানেও কম শুনছো অভ্র? ‘
মেহেভীনের প্রশ্নে থতমত খেয়ে যায় অভ্র। অভ্র বললো,
‘ দেখ মেহু…’
অভ্রের কথার মাঝে ফড়ন কেটে, মেহেভীন গলায় বিরক্তির সুর এনে বললো,
‘ কল মি ভাবি মিঃ অভ্র আহমেদ। ভূলে যাবেন না আমি আপনার এখন প্রাক্তন স্ত্রী কিংবা কাজিন নই। আমি এখন থেকে সম্পর্কে আপনার বড় ভাবি হই। আমি যতটুকু জানি আরহাম সাহেব আপনার থেকে
দুই -তিনমাসের বড়। সে হিসেবে আপনি এখন আমার দেবর এবং আমি আপনার ভাবি। আমি আশা করবো আরিয়ানের মতো আপনিও আমাকে ভাবির সম্মানটুকু দিবেন। মিঃ অভ্র আহমেদ ওরফে আমার দেবরজ্বী। ‘
অভ্রের রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে।
তার এতোই রাগ হচ্ছে সে পারলে এখন মেহেভীনের গলাটাই টিপে দেয়। অভ্র নিজের রাগটুকু সংযত করতে না পেরে, মেহেভীনের বাহু শক্ত করে চেপে ধরে বলে,
‘ তুই জানতি আরহাম আমার ভাই হয় তাইনা? ইচ্ছে করে বিয়ে করেছিস বদলা নিতে চাস তুই আমার কাছে মেহেভীন? ঠিক চাইছিস টা কি তুই? আমাকে বলবি? ‘
অভ্রের করা এইসব রাগ দেখেই মনে মনে পৌচাশিক আনন্দ পাচ্ছে মেহেভীন। মেহেভীন ঠোটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটে উঠে। মেহেভীন কিছু একটা ভেবে ‘ আহ মাগো ‘ বলে চিৎকার করে উঠে। সঙ্গে সঙ্গে অভ্র মেহেভীনকে ছেড়ে দেয়। আরহাম ও আরিয়ান ও রুমে ঢুকে। আরহাম মেহেভীনের কাছে গিয়ে বলে উঠে,
‘ মেহেভীন তুমি ঠিক আছো তো? কোথায় ব্যাথা করছে আমায় বলো তো? ‘
মেহেভীন আরহামের হাত খানা শক্ত করে চেপে ধরে বলে,
‘আমার না পেটে হুট করেই ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে। ‘
আরহাম সঙ্গে সঙ্গে বাজখায় গলায় উত্তর দিয়ে বললো,
‘ স্টুপিডের মতো সারাদিন অনিয়ম করলে তো পেটে ব্যাথা করবেই। প্রেগন্যান্সির সময়টায় অন্ত্যন্ত তো সর্তক থাকতে পারো। ‘
আরহামের কথায় অভ্র আরেকদফা চমকে উঠলো। প্রেগ্ন্যাসির সময় মানে? অভ্র মেহেভীনের দিকে তাকাতেই, মেহেভীন লজ্জামাখা কন্ঠে বললো,
‘ অভ্র ভাই আপনি হয়তো জানেন না আপনি এখন চাচ্চু ও হতে চলেছেন। ‘
তাহসান রুমে ঢুকে এইসব শুনে বলে,
‘ কিরে ভাই আরহাম? তুই এতো ফাস্ট যে বিয়েও করে ফেললি আবার বাচ্ছাও? ‘
আরিয়ান তার ভাইয়ের কাঁধে হাত রেখে বললো,
‘ বুঝতে হবে না? ইনি হচ্ছে আরহাম হাসান তালুকদার সব কিছুতেই উনি একটু বেশিই ফাস্ট। তাইনা ভাই? ‘
আরহাম আরিয়ানের দিকে চোখ গরম করে তাকাতেই, আরিয়ান তার মুখ বন্ধ করে ফেললো।
মেহেভীন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে অভ্রের এই খবরটি একদমই হজম করতে পারেনি। অভ্রের চোখে একপ্রকার কষ্ট দেখতে পাচ্ছে মেহেভীন। অভ্রের এই কষ্ট মেহেভীনের মনের ক্ষতটাকে যেন একটু লাঘব করে দিচ্ছে।
মেহেভীনের মনে পড়ে যাচ্ছে তার অতীতের সেই বিষাদময় স্মৃতি, যা অভ্র তাকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলো। অভ্র আজ যেই কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা একদিন মেহেভীন ও সহ্য করেছিলো দ্বীগুনভাবে।
অভ্র বেড়িয়ে যেতে নিলে, আরহাম বললো,
‘ অভ্র তুই কেন এসেছিলে? ‘
অভ্র শুকনো মুখে জবাব দিলো, ‘ আসলে তোকে খুঁজতে এসেছিলাম। আমার না এখন একটা কাজের কথা মনে পড়ে গেলো। আমি আসছি। তোরা থাক। ‘
অভ্র আর এক দন্ড ও দাঁড়ালো না গটগট করে বেডিয়ে গেলো। অভ্রকে এইভাবে চলে যেতে দেখে কপালের কিছুটা চিন্তার রেশ ফুটে উঠলো আরহামের।
[লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]
_________
অভ্র নিজের রুমে ঢুকেই দেখে, মায়রা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গুন গুন করছে, আর নিজের মতো সেঁজে চলেছে। আজ মায়রার ঠোটের কোণে আলতো হাসি বিরাজমান রয়েছে, যা এতোদিন ছিলোই না বলতে গেলে। অভ্রকে ঢুকতে দেখে মায়রা অভ্রের সামনে গিয়ে বললো,
‘ কি হলো অভ্র? তোমাকে এতোটা আপসেট দেখাচ্ছে কেন? তোমার তো হ্যাপি থাকার কথা বিকজ যাকে নিয়ে, তোমার এতো চিন্তা সে এখন তোমার নিজের চাচাতো ভাইয়ের বউ। তাই আমার মনে হয় তোমার ভাই মেহেভীনের খেয়াল ভালোই রাখতে পারবে। ‘
অভ্র সঙ্গে সঙ্গে মায়রার হাত চেপে ধরে বলে,
‘ আর ইউ কিডিং? মজা নিচ্ছো তুমি আমার সাথে? এইটাই বলতে চাইছো তাইতো যে, যেই মেহেভীনকে একসময় আমি ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলাম সেই মেহেভীনই আমার ভাইয়ের বউ তাইনা? ‘
মায়রার নিজের হাত খানা অভ্রের হাত থেকে ছাড়িয়ে বলে,
‘ কোন মজা নিচ্ছি না আমি অভ্র। আমি শুধু এইটুকুই বলছি যার জন্যে তুমি আমাদের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করেছো,সে কিন্তু খুবই সুখে আছে এখন তোমার ভাইয়ের সাথে। এমনকি যা শুনলাম এখন সে তোমার ভাইয়ের সন্তানের মাও হতে চলেছে। দেখলে মেহেভীনের মনেও তোমার জন্যে কোন ভালোবাসা ছিলো না,তাহলে কেন তুমি এইরকম করছো অভ্র? কেন বুঝতে পারছো না যে মেহেভীন…’
মায়রা আর কিছু বলার সুযোগটুকু পেলো না, তার আগেই অভ্র মায়রার মুখ চেপে ধরে বলে,
‘ অনেককিছু বলে ফেলেছো তুমি। এইবার যা বুঝার আমি বুঝবো। ‘
অভ্র মায়রাকে ছেড়ে দিয়ে,বেডের এক কোণে বসে থাকে। তার মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না মেহেভীন বিয়েও করে ফেললো, তার মধ্যে আবার আরহামের সন্তানের মা ও হতে চলেছে?কিছু তো একটা গন্ডগল আছে এর মধ্যে।
_________________
অন্যদিকে মেহেভীন বিছানায় বসে গভীর ছক কষছে। অভ্রের চোখে আজ যে কষ্ট দেখেছে, সেই কষ্টকে সে আরো দ্বিগুন করে বাড়িয়ে তুলবে সে। অতীতের সব কষ্ট দে অভ্রকে ফিরত দিবে। মেহেভীন আনমনে বলে উঠলো,
‘ মেহেভীন থুরি মিসেস আরহাম হাসান তালুকদার কারো ধার রাখেনা। এইবার আমি তোমাকে তোমার দেওয়া সকলে কষ্ট ফিরত দিবো মিঃ দেবরজ্বী।’
মেহেভীন আরেকদফা মুচকি হাসলো। আরহাম তখনি ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে, আয়নায় জেল দিয়ে নিজের চুল সেট করতে থাকে। মেহেভীন অপলক তাকিয়ে থাকে। লোকটা বড্ড সুন্দর! চোখ ফিরানো যে কারো পক্ষে মুশকিল। আরহাম আয়নার দিকে তাকাতেই, মেহেভীন নিজের আখিঁজোড়া সরিয়ে ফেললো। যেহুতু সবাই জেনে গেছে মেহেভীন আরহামের স্ত্রী, তা মেহেভীনকে এখন আরহামের ঘরেই থাকতে হচ্ছে। আরহাম আয়নার দিকে তাকিয়েই বললো,
‘ আমি এখন আমার অফিসের কলিগদের সাথে কালকের জরুরী প্রযেক্ট নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি। এসে যেন দেখি চুপচাপ ঘুমিয়ে গেছো। একদম স্টুপিডের মতো জেগে থাকবে না। এইসময় তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাওয়াটা ভালো। ‘
মেহেভীন ভদ্র মেয়ের মতো মাথা নাড়ায়। আরহাম বেড়িয়ে যায়।
_______
আরহাম হোটেলের স্পেশাল রুমে তার অফিস কলিগদের সাথে কালকের তাদের জরুরী প্রযেক্ট নিয়ে জরুরী মিটিং করছে। সবাই আরহামের সাথে প্রযেক্টটা নিয়েও কথা বললেও, রুশা এক কোণে চুপ হয়ে বসে থাকে। রুশাকে চুপ থাকতে দেখে আরহাম বলে উঠে,
‘ মিস রুশা আপনি কিছু বলছেন না যে? এই প্রযেক্ট নিয়েই তো আমি আপনাকে হেড় করেছিলাম। আপনিই যদি কথা না বলেন, তাহলে আমরা এগোবো কীভাবে? ‘
রুশা উঠে দাড়িয়ে কান্নাভেজা গলায় বললো,
‘ স্যার আমি তো অনেক কিছু্ই বলতে চাই,কিন্তু সেসব শুনার সময়টুকু আদোও আপনার আছে?
আপনার সময়ের অভাবে আমার কথাগুলোও বলা হলো না বলে, আজ আমি শূণ্য হয়ে গেলাম। ‘
রুশার কথা শুনে অফিসের সবার আর কিছু বুঝতে বাকি রইলো না যে, রুশা আসলে কি বলতে চাইছে। কেননা সবাই জানে রুশার মনে আরহামকে নিয়ে কিরকম অনুভুতি আছে।
আরহাম গম্ভীর সুর গলায় এনে বলে,
‘ মিস রুশা আপনি আসলে বলতে কি চাইছেন? ‘
‘ আমার মনে হয় কিছুক্ষন যদি আপনার সাথে একা কথা বলতে পারতাম, তাহলে বোধহয় ভালো হতো। ‘
রুশার কথা শুনে তাহসান সবাইকে ইশারা করে, রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে। তাহসানের ইশরায় সকলে বেড়িয়ে যায়। সকলে বেড়িয়ে যেতেই, রুশা…….
চলবে.. কী 🐸