তুমি আছো মনের গহীনে পর্ব-৪০+৪১

0
2183

#তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
#পর্ব- ৪০
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)

মেহেভীন আরহামের কাঁধে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। চাঁদের উজ্জ্বল আলো এসে মেহেভীনের মায়াবী মুখশ্রীকে আরো উজ্জ্বল করে তুলছে। মেহেভীনের প্রতি আরহাম যেন দ্বিগুনভাবে মোহিত হয়ে উঠে।পূর্নিমার রাতের মুগ্ধতা যেন দ্বিগুন বাড়িতে তুলছে মেহেভীনের এরুপ মোহীত রুপ।আরহাম হাল্কা ফু দিয়ে মেহেভীমের কপালে লেপ্টে থাকা চুলগুলোকে উঁড়িয়ে দেয়। এতে মেহেভীন খানিক্টা নড়ে আরহামের শার্ট আলতো করে আকড়ে ধরে। আরহাম খানিক্টা স্মিত হেঁসে যত্নের সাথে তার ঘুমন্তি প্রেয়সীর ছবি একেঁ ফেললো। এতো সুন্দর একটা দৃশ্য না একেঁ কি থাকা যায়? আরহামও মেহেভীমনকে ডেকে,মেহেভীনকে আর বিরক্ত করেনি। আরহাম ও দোলনায় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

…………….
অভ্রকে মাতাল অবস্হায় ইশরা বেগম কোনরকম
অভ্রকে নিজের রুমে শুয়িয়ে দিয়ে দেন। অভ্র ঘুমের মাঝেই ‘মেহেভীন ‘বলে চিৎকার করতে থাকে। ইশরা
বেগম ছেলের এইরকম অবস্হা দেখতে পারছেন না,তিনি বেড়িয় যান ঘর থেকে। অভ্র তার পাশে থাকা
মেহেভীনের ছবির ফ্রেম টা কোনরকম হাতড়ে নিয়ে নেয়। অতিরিক্ত মদ খাওয়ার ফলে, অভ্র তেমন কিছু দেখতে পারছে না। শুধু তার চোখে মেহেভীনের ছবিটা ভাঁসছে। অভ্র কাঁচের ফ্রেম থেকে ছবিটা বের করতে নিলে, কাঁচ তার হাতেও ঢুকে যায়। রক্তপাত শুরু হয়ে যায়। অভ্র সেদিকে খেয়াল করেনা। অভ্র কাঁচের ফ্রেম টা ফেলে দিয়ে, মেহেভীনের ছবিখানা শক্ত করে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে খানিক্টা ধীর গলায় বলে,

‘মেহু রে! আমি কখনো তোর সাথে অন্যায় করতে চাইনি বিশ্বাস কর। আমি চাইনি। সত্যি বলছি যদি জানতাম তোকে এতোটা ভালোবাসবো,তোর শুন্যতা আমাকে এতোটা পুড়াবে, তাহলে কখনো তোর সাথে অন্যায় করতাম না। ভালোবাসার অনুভুতি যে বড্ড অদ্ভুদ! যখন -তখন হুটহাট যে কারো প্রতি চলে আসে। এই অনুভুতি যে আমাদের অতি কষ্টের দহনে
পুড়নোর জন্যে যথেষ্ট। যেই দহনটা আমার মনের ভিতরে হচ্ছে। ‘

অভ্রের চোখ থেকে নোনাজল গড়িয়ে পড়তে থাকে।
অভ্র রক্তমাখা হাত দিয়ে,মেহেভীনের ছবিখানা বুকের মাঝে আবদ্ধ করে রাখে। অভ্রের রক্ত দিয়ে পরিপূর্ন হয়ে যাচ্ছে মেহেভীনের ছবিখানা।

________

সকাল সকাল আরহাম মেহেভীনের জন্যে খাবার নিয়ে আসে। মেহেভীন ওয়াশরুম থেকে বেড়োতেই,
আরহাম মেহেভীনকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘ এইযে সব খাবার যেন ফিনিশ হওয়া চাই। স্টুপিডের মতো যেন আবার ফেলে না দেওয়া হয়। নাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে। সব শেষ করে ফেলবে। ‘

মেহেভীন দ্রুততার সাথে মাথা ঝাকায়। যার মানে না সে কোন স্টুপিডের মতো কাজ করবে না। লক্ষী মেয়ের মতো নাস্তা সেরে ফেলবে। আরহাম মুচকি হেসে ‘গুড ‘ বলে চলে যেতে নিলে,কি ভেবে যেন থেমে যায়। পুনরায় মেহেভীনকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘ রেডি হয়ে নিও। আজকে তোমার ভার্সিটি যাওয়ার পথে, হসপিটালে নিয়ে গিয়ে আগে চেকাপ করিয়ে নিবো। ‘

‘ কিন্তু হঠাৎ হসপিটালে কেন? ‘

আরহাম মেহেভীনের কাছে এসে,মেহেভীনের নাক টেনে বললো,

‘ স্টুপিডের মতো ভূলে যাও কেন সব? ডক্টর যে বলেছে প্রেগ্ন্যাসির সময় এক মাস পর পর চেকাপ করাতে হবে। ভূলে গেলে সব? ‘

মেহেভীন জিব কাটে। সত্যিই আজ তার চেকাপের ডেট ছিলো,অথচ সে স্টুপিডের মতো সব ভূলে গেলো। মেহেভীন কানে হাত রেখে আরহাম ‘সরি’ বললো।

‘ হয়েছে ম্যাম আপনার আপনি তাড়াতাড়ি খেয়ে, রেডি হয়ে নীচে চলে আসুন। আমি নীচে অপেক্ষা করছি। ‘

আরহাম কথাটি বলেই, আলতো হেঁসে চলে যায়। মেহেভীন আরহামের হাঁসি দেখে কি মনে করে যেন লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। লোকটা সত্যিই তার কতটা খেয়াল করে। কতটা চিন্তা তার বেবীর জন্যে।
চেকাপের ডেট মেহেভীন ভূলে গেলেও,আরহাম ভূলে না। মেহেভীন আয়নার তোয়ালা দিয়ে, নিজের চুল মুছতে মুছতে আনমনে বলে উঠে,

‘ আরহাম সাহেবকে দেখলে আবারো ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে আবারোও প্রেমে পড়তে,কিন্তু অভ্রের দেওয়া সেই ক্ষতটা আমার মনে এমনভাবে ঝেঁকে বসেছে যে, আমি পারছি না ভালোবাসতে। ‘

‘ ভয়কে জয় করতে হবে রে মেহু। একটিবার ভালোবেসে দেখ, দেখবি ঠকবি না। আমার ভাই অন্তত তোকে কখনো ঠকাবে না। ‘

মেহেভীন আয়নায় তাকিয়ে আরিয়ান দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেহেভীন আরিয়ানের দিকে ঘুড়ে, শুকনো হেসে বলে,

‘একমুঠো সুখের আশায়, যাকে আমরা সবটুকু দিয়ে ভালোবাসা উজার করে দেই,সেই আমাদের শেষবেলায় এসে কাঁদিয়ে দিয়ে যায়। অভ্র আমাকে সুখ দিতে না পারলেও,আমাকে কান্না দিয়েছে। এক সমুদ্র সমান কষ্ট দিয়েছে। সমুদ্র কিন্তু বেশ বিশাল। তাহলে বুঝে দেখ অভ্রের দেওয়া কষ্টের পরিমানটা ঠিক কতটা বিশাল হতে পারে। সেই বিশাল কষ্টের ভয়টাকে জয় করা কি এতোটা সহজ আরিয়ান? ‘

আরিয়ানের মন ক্ষুন্ন হয়ে গেলো। সত্যি অভ্রের করা প্রতারণার স্বীকার হয়ে,মেহেভীনের মনটা ভালোবাসা নামক অধ্যায় থেকে নিজেকে ঢেকে রাখার প্রচেষ্টায় আছে,যদিও আরিয়ান জানে আরহামের ভালোবাসায়, মেহেভীনের মন গলে যাবেই। আরিয়ানের ভাবনার মাঝেই, আরহামের মা রুমে ঢুকেন। আরহামকে মাকে দেখে পুনরায় মাথা নিচু করে ফেলে মেহেভীন। আরহামের মা তা দেখে মুচকি হেসে, মেহেভীনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

‘ আমার উপরে রাগ করেছো বুঝি? ‘

আরহামের মায়ের কথায়, মেহেভীম আরহামের মায়ের দিকে অবাক পানে তাকাতেই, আরহামের মা আরেকদফা হেসে বললেন,

‘ কালকে যা যা বলেছি তার জন্যে আমার উপর রেগে থেকো না। আমি কালকে অভ্রের কথা শুনে কিছু না বুঝেই তোমাকে বকা দিয়ে বসেছি। ‘

মেহেভীন সঙ্গে সঙ্গে বললো,

‘এমা! আমি কিচ্ছু মনে করিনি। আপনার জায়গায় যে কেউ হলে এমনটি করতো মা মানে আন্টি। ‘

আরহামের ম মেহেভীনের ললাটে ধরে বললেন,

‘ আমাকে এতোদিন মা বলতে না? এখনো বলবে। আরহাম আমার এবং আরহামের বাবার সাথে আলাদাভাবে কথা বলেছে। আরহামের কথা শুনে আমরা বুঝলাম। তোমার জায়গায় যে কেউ হলে এমনটি করতো নিজের সন্তানের নিরাপত্তার জন্যে। আমিও তো একজন মা আমিও বুঝি তোমার অবস্হাটা। তাছাড়া অভ্র এবং ইশরা যা করেছে, তাতে তোমার কখনোই ওই বাড়িতে যাওয়াটা ঠিক হবেনা। ‘

মেহেভীন আরহামের মায়ের কথা শুনে প্রশান্তির হাসি দেয়। মানুষটা কতটা ভালো। বলতে গেলে আরহামের পুরো পরিবারটাই ভালো। আরহামের মা আবারোও বললেন,

‘ । তাছাড়া তোমার গর্ভে যে সন্তান বেড়ে উঠছে,সে তো আমাদের বংশের সন্তান। অভ্রকে যতই আমরা দূরে ঠেলে দেইনা না কেন তার সন্তানকে তো আমরা সবসময় আগলে রাখবো। তুমি এই বাড়ি ছেড়ে আরহামকে ছেড়ে কোথাও যেও না মা।আরহাম ও বাচ্ছাটাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে। তুমি তো জানো আমার ছেলে তোমাকেও কতটা ভালোবাসে।’

মেহেভীন এইবার খানিক্টা অস্বস্হিতে পড়ে যায়। তার অস্বস্হি দূর করে আরহাম প্রবেশ করে এবং বলে,

‘ মেহেভীন তুমি এখানে? এখনো নাস্তাটা ফিনিশ করো নি? কি করছো এখনো? তাড়াতাড়ি করে নাও।’

মেহেভীন নাস্তা করে নিয়ে, আরহামের সাথেই বেড়িয়ে যায়। দুজনকে একসাথে যেতে দেখে, আরহামের মা মুচকি হেসে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ দুজনকে বড্ড মানায় তাইনা রে? ‘

‘ তা বলতে? একদম রাব নে বানাদি জোড়ি। ‘

‘ আমি ভাবছি বাচ্ছাটা পৃথিবীতে চলে আসলেই, মেহেভীন এবং আরহামের বিয়েটা দিয়ে দিবো। মেহেভীনকে একেবারে সত্যিকারের বউ করে নিয়ে আসবো আমার বাড়িতে। ‘

আরিয়ান তার মায়ের কথা শুনে, খুশি হয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,

‘ সত্যি মা?তাহলে তো অনেকগুলো ভালো হবে। ইউ আর বেস্ট মা। ‘

আরহামের মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,

‘ মেহেভীন মেয়েটা ভারী ভালো। মেয়েটা নিজের জীবনে কম কষ্ট সহ্য করেনি। আমি জানি মেয়েটার কষ্টটাকে দূর করে সুখের পথ একমাত্র আমার আরহামই দেখাতে পারবে। ‘

আমাদের দেশে এমন অনেক মেহেভীন আছে,যারা দিনের পর দিন কষ্ট সহ্য করে যাচ্ছে,কিন্তু আমাদের দেশে আরহামের মতো মানুষের বড্ড অভাব,যারা মেহেভীনের মতো মেয়েদের আগলে রাখবে। জীবনে নতুনভাবে পথ চলতে শিখাবে। নিয়ে যাবে সুখের রাজ্যে।

……..

ডক্টরের কেবিনে বসে আছে আরহাম। কিছুক্ষন আগেই ডক্টর মেহেভীনকে চেকাপ করেছে। মেহেভীন এখনো চেকাপ রুমে। ডক্টর খানিক্টা মুখ কালো করে বসে আছে। ডক্টরকে এইভাবে দেখে আরহামের দুশ্চিন্তা শুরু হয়ে যায়। ডক্টর কিছুক্ষন পরে বললেন,

‘ মেহেভীনকে আমি দেখলাম,কিন্তু একটা খারাপ খবর আছে? ‘

ডক্টরের কথা শুনে আরহাম কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। সে ভয়ার্থ গলায় বলে,

‘ কি খারাপ খবর ডক্টর? ‘

…….চলবে কি?

#তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
#পর্ব- ৪১
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
আরহামের কথায় ডক্টরের চোখ-মুখে আবারো ঘোর অন্ধকার এসে হানা দিলো। যেন ডক্টর আপতত আরহামকে সেই খারাপ খবরটি বলতে ইচ্ছুক নয়। ডক্টরের এমন আচরণে আরহামের দুশ্চিন্তাকে দ্বিগুনভাবে বাড়িতে তুলছে সময়ের সাথে সাথে। আরহাম ঠোট ভিজিয়ে,চিন্তুিত হয়ে বললো, ‘ ডক্টর প্লিয বলুন না কি খারাপ খবর? ” ডক্টর কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,
‘ আমি মেহেভীনের চেকাপ করে যা বুঝেছি,তা হলো বেবী আপাতত মেহেভীনের গর্ভে খুব একটা ভালো পজিশনে অবস্হান করছে না। যা ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে মা এবং বেবী দুজনেরই। আমার যতটুকু মনে হয়, ডেলাভারির সময় মেহেভীনের লাইফের অনেক রিস্ক থাকবে। বেবীর পজিশনটা ভালো নয়। ‘

ডক্টরের কথা শুনে আরহামের ভয়ে কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়তে থাকে। মেহেভীন এবং বেবীর দুজনেই অনিরপত্তায় রয়েছে,দুজনেরই বেশ জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। কথাটা ভাবলেই, আরহামের মনে খারাপ ভাবনা ঝেঁকে বসছে। বেবী কিংবা মেহেভীনের কিছু হয়ে গেলে,সে কী করবে তখন? আরহামের ভাবনার মাঝেই,ডক্টর আবারোও বললেন,

‘ মিঃ আরহাম খুব দুঃখের সাথে আমাকে বলতে হচ্ছে যে, এই অবস্হার জন্যে মেহেভীনের মানষিক অবস্হা দায়ী। মেহেভীন কোন একটা বিষয় নিয়ে,ভিতরে ভিতরে গুমরে মরতো।যার ইফেক্ট বাচ্ছার উপরেও পড়েছে। আপনি বুঝতে পারছেন তো মিঃ আরহাম? ‘

আরহাম মাথা নাড়ায়। প্রেগন্যান্ট অবস্হায় মেহেভীন যে খুবই মানুষিক অবস্হার মধ্যে গিয়েছে এবং এখনো যাচ্ছে যা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে আরহাম। আরহাম খবরটি শুনে, একপ্রকার ছন্নছাড়া হয়ে যায়। বুক ফেটে কান্না আসে তার।
বেবী এবং মেহেভীন এখন তার জীবনের সব থেকে বড় অংশে পরিনিত হয়ে গিয়েছে,তাদের কিছু হলে আরহাম কী করে থাকবে?

ডক্টর আরহামের অবস্হা বুঝতে পেরে,খানিক্টা নরম সুরে বললেন,

‘ মিঃ আরহাম আপনি বেশি চিন্তিত হয়ে পড়বেন না। আপনি যদি এইসময় শক্ত না থাকেন,তাহলে তো আরো সমস্যা হবে। আপনি যথাসম্ভব চেস্টা করবেন যেন মেহেভীন হাঁসি-খুশি থাকার চেস্টা করে। সব থেকে বড় কথা এখন মেহেভীন এখন রিস্কি জোনে আছে,তাই মেহেভীনকে অনেকটা নিরাপদভাবে চলাফেরা করতে হবে,নাহলে একটু উনিশ-বিশ হলেই সব শেষ। আপনি শুনতে পারছেন তো মিঃ হাসান তালুকদার? ‘

আরহাম মাথা নিচু করে ছিলো, ডক্টরের কথা শুনে সে সঙ্গে সঙ্গে মাথা উচু করে,নিজেকে শক্ত করে বললো,
‘জ্বী আচ্ছা ডক্টর। আমি মেহেভীনের আগের থেকেও বেশি খেয়াল রাখবো। কোন প্রকার দুঃখকে ছুঁতে দিবো না আমার মেহেভীনকে। ‘

ডক্টর মুচকি হেসে বলে, ‘ দ্যাটস গুড। ‘

আরহাম বেড়িয়ে যায় ডক্টরের চেম্বার থেকে। মেহেভীন বাইরে অপেক্ষা করছিলো, আরহামকে বেড়োতে দেখে সে উঠতে চাইলে,তৎক্ষনাক মেহেভীনকে বাঁধা দিয়ে, আরহাম মেহেভীনের হাত ধরে আস্তে করে উঠায়। মেহেভীন ও আস্তে করে উঠে যায়। আরহাম মেহেভীনের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ এখন থেকে সবার হেল্প নিয়ে উঠবে। একা একদম চলাফেরা করবে না। এইসময়টায় একটু সাবধানে থাকতে হবে। ‘

আরহামের মুখ শুকনো দেখে,মেহেভীন আরহামকে প্রশ্ন ছুড়ে বলে,

‘ কিন্তু আপনি এইভাবে শুকনো মুখে কথা বলছেন কেন? ডক্টর কি আপনাকে কিছু বলেছে?’

মেহেভীনকে ডক্টরের বলা কথাগুলো কিছুতেই বলা যাবেনা,নাহলে মেহেভীনের মনে ভয় ঝেঁকে বসবে, যা মেহেভীনের শরীরের জন্যে এমদমই ঠিক হবেনা। আরহাম কথা ঘুড়িয়ে বলে,

‘তেমন কিছু না। সবকিছুই ঠিক আছে, শুধুমাত্র এই কয়েকটা মাস তোমাকে শুধু সাবধানে থাকবে হবে,দ্যাটস ইট। ‘

মেহেভীন নিশ্চিন্ত হয় আরহামের কথায়। আরহাম কিছু একটা ভেবে বলে,

‘ চলো আমরা বরং আজ শপিং এ যাই কেমন? ‘

‘ হঠাৎ কেন? ‘

‘ বেবী তো আর মাত্র কয়েকটা মাস পরেই চলে আসবে। এখন থেকেই তো জামা-কাপড় কিনতে হবে তাইনা? ‘

‘কিন্তু আপনি তো কিনেছেন। ‘

‘ কিন্তু তুমি তো বেবীর আম্মু। আজ বরং তুমি পছন্দ করে কিনে নাও। কেমন হবে? ‘

মেহেভীন সায় দিয়ে বলে, ‘ ভালোই হবে চলুন তাহলে। ‘

আরহাম মেহেভীনের মনটাকে ভালো করার জন্যে মেহেভীনকে শপিং এ নিয়ে যাবে। বেবীর জামা-কাপড় কিনতে কিনতে মেহেভীনের মনটাও উৎফল্লে ভরপুর হয়ে উঠবে।মেহেভীন ভাবলো তার ভার্সিটিতে ছোট্ট একটা টেস্ট এক্সাম আছে,তাও বারোটার দিকে। এখন কেবল দশটা বাজে এখন শপিং এ যাওয়াই যায়।

আরহাম এবং মেহেভীন গাড়ি করে শপিং মলের দিকে গেলো।

.______
অভ্র মেহেভীনের সাথে দেখা করবে আজ। মেহেভীনকে সব সত্যি কথা বলে দিবে সে। সে নিশ্চিত পুরো সত্যিটা জানার পরে,তার মেহু নিশ্চয় তাএ সাথে রাগ করে থাকতে পারবে না। ঠিক তার মেহু তার কাছে ফিরে আসবে,কথাটি ভেবে অভ্র মৃদ্যু হেসে বেড়িয়ে যায়। ছেলেকে এইভাবে হাঁসি খুশিভাবে বেড়িয়ে যেতে দেখে চিন্তায় পড়ে যান ইশরা। তার ছেলের মাথায় নিশ্চয় কিছু চলছে।

._______

আরহাম মেহেভীনকে নিয়ে, শপিং মলে ঢুকে বিভিন্ন বাচ্ছাদের স্টোরে নিয়ে গিয়ে, অনেক শপিং করে। মেহেভীন ও খুব আনন্দের সাথে শপিং করতে থাকে।
শপিং ব্যাগ দিয়ে, আরহাম নিজের হাত ভরপুর করে ফেলেছে। আরহামকে দেখে মেহেভীন মুচকি হাঁসে।লোকটা কতটা খুশি মনে শপিং করেছে। যেমনটা মানুষ নিজের সন্তানের জন্যে করে। সত্যি লোকটা দেখে মেহেভীন শুধু প্রতিবার মুগ্ধ হয়। আরহাম শপিং ব্যাগ নিয়ে হাতে নিয়ে এগোতে এগোতে খেয়াল করে, মেহেভীন হাটছে না,বরং দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আনমনে মুচকি হাঁসছে। আরহাম মেহেভীনের কানের কাছে গিয়ে, ফিসফিস করে বলে,

‘ আমাকে নিয়ে ভাবার অনেক সময় পাবে,এখন আপাতত চলো। ‘

আরহামের কথা শুনে, মেহেভীনের ফর্সা গালগুলো টকটকে লাল হয়ে গেলো লজ্জায়। লোকটা কি করে জানলো? সে তার কথা ভাবছিলো।
আরহাম স্মিত হাঁসলো। মেহেভীনকে লজ্জা পেলে কতটা মোহনীয় সুন্দরী হয়ে উঠে। যার মায়ায় আরহাম বার বার পড়ে যায়। মেহেভীন দ্রুত গতিতে হাটা শুরু করে দেয়। আরহাম মেহেভীনকে নিয়ে, একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে যায়। রেস্টুরেন্টে নিয়ে আসায়, মেহেভীন অবাক হয়ে আরহামের দিকে তাকাতেই,আরহাম মুচকি হেসে বলে,

‘ আজকে তোমার পছন্দের লাচ্ছি খেলে কেমন হয়? প্রতিদিন তো দুধ খেতে খেতে তুমি বোর হয়ে যাচ্ছো?
আজ না হয় অন্যকিছু ট্রাই করা যাক? কি বলো? ‘

মেহেভীন আরহামের কথা শুনে খুশি হয়ে যায়। লাচ্ছি সে অনেক পছন্দ করে,কিন্তু আরহাম কী করে জানলো? সে লাচ্ছি পছন্দ করে।

‘ ভালোবাসার মানুষটার পছন্দ সম্পর্ক একটু-আকটু ধারনা আছে আমার ম্যাম বুঝলেন?’

আরহামের কথা শুনে মেহেভীন মাথা নাড়িয়ে হাঁসে। যার মানে হ্যা সে খুব ভালো করেই বুঝেছে।

………..

আরহাম মেহেভীনকে নিয়ে গাড়ি করে বাড়ি নিয়ে যেতে চাইলে,তাতে বাধ সাঁধে মেহেভীন। জানায় আজকে জরুরী টেস্ট এক্সাম আছে ভার্সিটিতে। সেই পরীক্ষাটা দিতেই হবে। আরহামের মনে আজ সকাল থেকেই কেমন কু ডাকছে তাই আরহাম মেহেভীনকে ভার্সিটিতে যেতে দিতে না চাইলেও, বাধ্য হয়ে নিয়ে যায়। কেননা এক্সাম টা অনেক জরুরী। আরহাম ঠিক করেছে ভার্সিটির বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকবে যতক্ষন মেহেভীন এক্সাম দিবে,কিন্তু হুট করে আরহামের জরুরী মিটিং চলে আসে, কিন্তু আরহাম যেতে চায়না। মেহেভীন বুঝায় আরহামের মিটিং শেষ হতে হতে মেহেভীন এইদিকে পরীক্ষা দিয়ে দিবে। আরহাম যেন মিটিংটা করে তাকে এসে,নিয়ে যায়। সে পরীক্ষা দিয়ে ভার্সিটিতেই থাকবে। আরহাম কিছুটা চিন্তিত হয়ে বললো,

‘ আমি না আসা পর্যন্ত হোল থেকে একদম বেড়োবে না। ওকে? ‘

মেহেভীন মাথা নাডিয়ে বলে,

‘ আপনি একদম নিশ্চিন্ত থাকুন আরহাম সাহেব! আমি বেড়োচ্ছি না। ‘

আরহাম কথাটা শুনে কিছুটা ভরসা পেলেও,কেমন একটা অস্হিরতা কাজ করছে। না যেতে চাইলেও, চলে যায়। এমনিতেই মনটা কেমন খচখচ করছে,মেহেভীনকে এইভাবে একা রেখে যাওয়ার জন্যে।

মেহেভীন এক্সামের হোলে ঢুকে, অভ্র দাঁড়িয়ে আছে।
অভ্রকে দেখে মেহেভীন একপ্রকার পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে,অভ্র তাতে বাঁধ সাধে, বলে,

‘ তোর সাথে কিছু কথা আছে। যা আজ তোকে শুনতেই হবে। ‘

‘ আমার কোন কথা নেই আপনার সাথে। আমি পরীক্ষা আছে। ‘

‘ওহ তাহলে পরীক্ষার পরে বলবো। তুই নিশ্চিন্তে গিয়ে পরীক্ষা দে। আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি। ‘

মেহেভীনের এইবার রাগ হয়। সে ক্ষিপ্ত গলায় বলে,
‘ আপনি এতো বেহায়া কেন মিঃ অভ্র আহমেদ? এতোগুলো থাপ্পড় খেয়েও কি শিক্ষা হয়নি আপনার? ‘

‘ ভালোবাসলে একটু বেহায়া হতে হয় বুঝলি? ‘

চোখ টিপ দিয়ে অভ্র কথাটি বললো। মেহেভীনের ইচ্ছে হলো কিছু কড়া কথা শুনিয়ে দিতে অভ্রকে,কিন্তু সে তা করলো না। এক্সাম শুরু হয়ে যাবে একটু পর। মেহেভীন হোলে ঢুকে যায়।

_________

মেহেভীনের এক্সাম ভালো করেই শেষ হলো। সবাই নিজেদের মতো চলে গেলো। মেহেভীন হোলে বসে আরহামের জন্যে অপেক্ষা করছে, তখনি কেউ তার মুখ চেপে ধরে।

……চলবে….কী?