তুমি আমার পর্ব-০৬

0
168

#তুমি_আমার (পর্ব ০৬)
#মেঘা_আফরোজ
·
·
·
কিছুদিন পর…..
মেঘা কলেজে এসে তানিশাকে নিয়ে লাইব্রেরিতে যায় একটা দরকারি বই নিতে। তানিশা মেঘাকে বললো
– মেঘা আমি বাইরে দাঁড়াচ্ছি তুই বইটা নিয়ে আয়।
মেঘা ভেতরে ঢুকে ওর প্রয়োজনীয় বইটা নিয়ে বেড়িয়ে আসতে নিলে কেউ পেছন থেকে বলে উঠলো
– হ্যালো নীলপরী।
মেঘা তাকালো না ভেবেছে হয়তো অন্য কাউকে ডাকছে,মেঘা পা বাড়ালো বেড়িয়ে আসার জন্য হঠাৎ ওর সামনে একটা ছেলে এসে দাড়াঁলো। ছেলেটিকে মেঘা আগে কখনো দেখেনি। মেঘা ভালো ভাবেই বললো
– কি ব্যাপার ভাইয়া সামনে দাঁড়ালেন যে! কিছু বলবেন?
ছেলেটি হেসে মেঘাকে দেখতে লাগলো তারপর বললো
– সত্যিই নীলপরীর মতোই লাগছে তোমাকে।
মেঘা এখন বুঝতে পারলো নীলপরী বলে ওকেই ডেকেছিলো কারন মেঘা আজ নীল একটা ড্রেস পড়ে এসেছে।
মেঘা একটু অস্বস্থি বোধ করছে ছেলেটিকে বললো
– ভাইয়া আমার ক্লাস আছে যেতে হবে আমাকে।
– হুম অবশ্যই যাবে। যাবার আগে তোমার নামটা বলে যাও।
– কেনো নাম জেনে কি করবেন আপনি?
– উমম না কিছুই করবো না আচ্ছা তুমি যাও,তোমাকে আমি নীলপরী বলেই নাহয় ডাকবো। ওহ আমার নামটা তো বলাই হলো না,,,আমি রাফিন আহমেদ।
মেঘা আর কথা বাড়ালো না অযথা ছেলেটির সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না এ কথা ভেবেই বেড়িয়ে আসলো লাইব্রেরি থেকে।

মেঘা বেড়িয়ে যেতেই রাফিন হেসে বললো…নীলপরী তোমাতে তো আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম গো। তোমার ওই চোখে যে আমি প্রথম দেখাতেই হারিয়ে গিয়েছি।

রাফিন মেঘার সামনে এসে দাড়িয়েছে ওর সাথে কি কথা বলেছে সবটাই রেহান দেখেছে এবং শুনেছে রেহান তখন লাইব্রেরির দিকেই এসেছিলো মেঘাকে দেখেই দরজায় দাড়িয়ে পড়েছিলো। রেহান রাফিন এর কথা গুলোতে তেমন কিছু না ভাবলেও ওর শেষের বলা কথাগুলো কিছুতেই মানতে পারছিলো না।
.
🌿
.
রেহান তানভিরকে সবটা বলেছে তানভির রেহানকে বললো
– রেহান তুই মেঘাকে প্রপোজ কর।
– কিভাবে সম্ভব মেঘা তো আমার দিকে ঠিক করে তাকাই না।
– তাকাবে ওর মনে তোকে জায়গা করে নিতে হবে এখন না হলে দেখবি মেঘাকে হারাবি তুই।
– আচ্ছা তানভির মেঘাকে কি আমি ভালোবাসি?
তানভির রেহানের দিকে তাকিয়ে থেকে শব্দ করে হেসে উঠলো।
– আরে তুই হাসছিস কেনো আমি কি এমন হাসির কথা বলেছি!
– হাসবো না! অন্য একটা ছেলে মেঘার সাথে একটু কথা বলেছে তাতেই তুই জেলাস আর তুই বলছিস ওকে তুই ভালোবাসিস কিনা।
– রাফিন শুধু ওর সাথে কথা বলেনি,ও মেঘাকে অন্য নজরে দেখেছে নিজের মুখে বলেছে ও মেঘাকে দেখে মুগ্ধ।
– হুম বুঝতে পারছি আমি। শোন রেহান তুই মেঘাকে ভালোবেসে ফেলেছিস কিন্তু বুঝতে পারছিস না। আজ রাফিন মেঘার সাথে কথা বলেছে দেখে তোর লুকানো অনুভূতিটা নাড়া দিয়ে উঠেছে। তাই বলছি আর এত না ভেবে মেঘাকে মনের কথা বলে দে।

মেঘা কলেজ ছুটির পর গেটের বাইরে এসে রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। রাফিন মেঘার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো
– হেই নীলপরী কারো জন্য অপেক্ষা করছো নাকি?
মেঘা রাফিনের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো কথা বলার ইচ্ছে না থাকা শর্তেও বললো
– রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে আছি।
– ওও আচ্ছা। এই দুপুরে রিক্সা পাওয়া তো মুশকিল! তুমি যদি কিছু মনে না করো আমি তোমাকে পৌছে দিতে পারি।
মেঘা বিরক্তি নিয়ে বললো
– নো থ্যাংকস ভাইয়া আমি চলে যেতে পারবো।
– ওকেই,আচ্ছা তুমি দাঁড়াও আমি রিক্সা নিয়ে আসছি।

মেঘা কিছু বলবে তার আগেই রাফিন চলে গেলো।
মেঘা নিজে নিজেই বলতে লাগলো…এই ছেলেটা পিছু নিলো কেনো হঠাৎ কি মতলব এর?

রেহান রাফিনকে আবারো মেঘার সাথে কথা বলতে দেখে রাগে ফুসছিলো। রেহান জানে মেঘাকে বাইকে যেতে বললে ও যাবে না তাই তাড়াতাড়ি একটা রিক্সা ডেকে মেঘার সামনে আসলো। এসেই মেঘাকে তাড়া দিয়ে বললো
– মেঘা এই রিক্সাতে যাও।
মেঘা অবাক চোখে তাকিয়ে বললো
– ভাইয়া আপনি কেনো রিক্সা নিয়ে আসলেন?
– কেনো সেটা পরে জেনে নিও এখন কথা না বাড়িয়ে উঠে পড়ো,ফাস্ট।
মেঘা ভাবলো এখন আর কথা না বলে চলে যাওয়াই ভালো অন্তত ওই রাফিনের হাত থেকে তো বাঁচা যাবে। মেঘা রিক্সায় উঠে একটু হেসে রেহানের দিকে তাকিয়ে বললো
– ধন্যবাদ ভাইয়া।
মেঘার মুখে ভাইয়া ডাকটা পছন্দ হলো না রেহানের চরম বিরক্ত হয়ে বললো
– এত ভাইয়া ভাইয়া না করলেও চলবে। এই মামা যাও তো ওকে সাবধানে পৌছে দিয়ো। রিক্সা ওয়ালাকে বললো।
মেঘা রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া দিতে গেলে রিক্সা ওয়ালা নিলো না বলেছে ভাড়া নাকি আগেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
.
🌿
.
মেঘা বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাতের আকাশ দেখছে। ওর ভাবনাতে এখন রেহান আছে। মেঘা দুপুর থেকেই একটা বিষয়ে ক্লিয়ার হতে পারছে না তা হলো রেহান ওকে কেনো ফলো করছে। মেঘা মনে মনে ভাবছে…রেহান ভাইয়া সেই প্রথম থেকেই আমার সাথে অন্যরকম ভাবে কথা বলে কই তানিশা বা অনুর সাথে তো এমন করে না। আজ আমি রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছিলাম উনি কি করে বুঝলো আর কেনোই বা ভাইয়া ডাকাতে উনি বিরক্ত হলেন? নাহ বাবা আমার এত ভেবে কাজ নেই আমি নিজে সেভ থাকলেই হলো।

মেঘার ফোনের রিংটন বেজে উঠলো,মেঘা বারান্দা থেকে উঠে এসে ফোনটা হাতে নিলো নাম্বারটা অচেনা। মেঘা ফোনটা নিয়ে আবারো বারান্দায় এসে দাড়ালো রিসিভ করে সালাম দিলো। ওপাশ থেকে একটা ছেলের কন্ঠ ভেসে আসলো সে সালামের উত্তর নিয়ে বললো
– কেমন আছো মেঘা?
– জ্বি ভালো আছি। কে বলছেন আপনি?
– পরিচয়টা না হয় অজানাই থাক,শুধু জেনে রাখো আমি সব সময় তোমার আশে পাশেই থাকি।
– শুনুন আমি অপরিচিত কারো সাথে কথা বলি না রাখছি আমি।
– আরে আরে মেঘা ফোন রেখো না শোনো…
মেঘা ফোন কেটে দিতেই আবারো কল আসছে বার বার মেঘা বিরক্ত হয়ে ধরে বললো
– নিজের পরিচয়টা যদি দিতে পারেন তাহলে কল দিবেন না হলে দিবেন না।
– মেঘা তুমি বিরক্ত হতেও জানো! বাহ তোমার মাঝে বিরক্ত রাগ এগুলো খুবই আনকমন ব্যাপার। তবে যাই বলো না কেনো বিরক্ত হলে তোমাকে দেখতে ভালোই লাগে।
– মানে! কি সব বলছেন আপনি?
– মেঘা প্লিজ এভাবে ভ্রু জোড়া কুঁচকে রেখো না।
মেঘা একটু নড়েচড়ে উঠলো নিজেকে স্বাভাবিক করে এদিক ওদিকে তাকালো। ফোনের ওপাশ থেকে হাসির শব্দ ভেসে আসলো।
– একি হাসছেন কেনো আপনি?
– কি ভেবেছো এদিক ওদিকে তাকালে খুজে পাবে আমাকে! উহুম পাবে না। শুধু শুধু খুজে লাভ নেই পাবে না আমি খুব তাড়াতাড়ি তোমার সামনে আসবো। অবশ্য তুমি আমাকে চেনো আমাকে অনেকবার দেখেছো তুমি।
– দেখেছি আপনাকে কোথায় কি ভাবে!
– তোমার ছোট মাথায় এখনি এত কিছু ঢুকাতে হবে না অনেক রাত হয়েছে যাও ঘুমিয়ে পড়ো। আর একটা কথা,,,রাফিনের থেকে দুরে থেকো ও যদি কথা বলতে আসে তুমি এড়িয়ে যাবে রাফিনকে। গুডনাইট,বাই।

মেঘাকে কিছু বলতে না দিয়ে ফোনটা কেটে গেলো। মেঘা হা করে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে…..কে এই ছেলে! রাফিন তো ওই ছেলেটা যার সাথে লাইব্রেরিতে আবার কলেজের বাইরে দেখা হলো। কিন্তু এই ছেলেটি কে? কি করে জানলো? তারমানে আমাকে সব সময় কেউ ফলো করে এমনকি এখনো তার নজর আছে আমার ওপর! আচ্ছা এটা রেহান ভাইয়া নয়তো? ধুর কি ভাবছি আমি উনি কেনো আমার আশেপাশে থাকবেন।

রেহান মেঘাদের বাড়ির সামনে একতলা বাড়িটার ছাদ থেকে মেঘাকে এতক্ষণ দেখছিলো,আর ফোনটা ও রেহানি করেছিলো মেঘাকে। রেহান হেসে বললো
– মেঘা আমি কখনো ভাবিনি তোমার মত একটি মেয়ের প্রেমে পড়বো আমি। সত্যি আজ আমি উপলব্ধি করতে পারছি রুহি ছিলো শুধুই আমার আবেগ আর ভালোলাগা। মন থেকে ওকে ভালোবাসি নি আমি। তোমার জন্য যে অনুভূতি টা হয় আমার রুহির জন্য তা কখনো হয়নি। তোমাকে মন থেকে ভালোবেসে ফেলেছি মেঘা, খুব শীঘ্রই আমার মনের কথা বলবো তোমাকে।
·
·
·
চলবে……………..